পোস্টগুলি

2015 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে
ছবি

সাম্প্রতিক পৌরনির্বাচন,বিএনপি-আওয়ামী লীগের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ----- ========================= পুরাতন বছরের ক্রান্তিকাল নতুন বছরের শুরুতে মহা বিজয়ের স্বাধ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৬ ইং সালের প্রথম কায্য দিবস শুরু করবে ইনশাল্লাহ। জাতির জনকের কন্যার অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রশ্নাতীত দেশপ্রেম,ইস্পাত কঠিন দৃডতা,দুসাহষী কর্মযজ্ঞ এনে দিয়েছে আস্থাহীন স্থানীয় নেতাদের বিজয়ের গৌরব। আমাদের স্থানীয় নেতাদের অধিকাংশের ধারনায় ছিলনা বর্তমান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা '৭৫ পরবর্তি যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে।আস্থার সংকটের কারনে নির্বাচনে অনেকেই জোর খাটানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে দেশরত্ম শেখ হাসিনার শাষনের গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা করেছিলেন।নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত আইন শৃংখলা বাহিনী কঠোর হস্তে তাঁদের কায্যক্রম নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়েছেন।নির্বাচন কমিশন,আইনশৃংখলা বাহিনী সবাই নিরপেক্ষ ভুমিকা রাখার আপ্রান চেষ্টা করে সফল নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ায় দেশবাসির সুনাম কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন।তবে সত্যিকার অর্থে স্থানীয় সম্মানীত নেতৃবৃন্দ নীজেদের কর্মকান্ড এবং সত্যিকার জনসেবার উপর আস্থা রাখতে পারলে নির্বাচন আরো সুন্দর নির্ভেজাল হতে পারতো। দ:এশিয়ার অন্য যে কোন দেশের স্থানীয় নির্বাচন থেকে বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হয়েছে নির্দ্ধিদায় বলা যায়।মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভাই ও এমনটি মন্তব্য করেছেন।বাংলাদেশের অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় এই নির্বাচনটি নিরপেক্ষ, অবাধ সুষ্ঠ।যারা আমার এই মতের বিরুধীতা করার ইচ্ছা পোষন করবেন, তাঁদেরকে আগেই অনুরুধ জানাব-- আয়নায় নীজের চেহারাটুকু দেখে আসেন,তখনকার সময়ের পত্রিকার পাতাটা আবার উলটে পালটে দেখে তাঁরপর মন্তব্য করবেন। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, সকল সময়ের সকল নির্বাচনে,সকল গনতান্ত্রিক দেশেই প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর সমর্থন তুলনা মুলক অতি কম হলে, শক্তিশালি জনসমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকেরা কেন্দ্রে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করবেই।ইহা শুধু বাংলাদেশে নয়,বিশ্বের দেশে দেশে একই চিত্র দেখা যায়। যারা নীতিবাক্য ব্যয় করে সারাক্ষন টি,ভি পর্দায় ভোটের চুলচেরা বিশ্লেষন করছেন, তাঁদের কে সবিনয় অনুরুধ করতে চাই, নীজ দেশের প্রথম দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচনের সমালোচনা করার আগে শত বছরের পুরাতন গনতন্ত্রচর্চাকারি প্রতিবেশি দেশের স্থানীয় নির্বাচনের পরিসংখ্যান তুলে ধরুন আগে, তার পর বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলুন, অভিমত দিন,সমালোচনা করুন আপর্ত্তি থাকবেনা। আমাদের স্মরনে রাখা প্রয়োজন,স্বাধীনতার ৪৪বছর পরেও যে দেশটির রাজনৈতিক দল গুলির নেতৃত্ব নির্বাচনে কর্মিদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়না,দলিয় নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটের বাধ্যবাধকতার প্রচলন করা যায়নি,সে দেশের স্থানীয় নির্বাচন এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে,কিভাবে হতে পারে,আমার সাধারন জ্ঞানে আসেনা। অকারনে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা আমাদের দেশের সুশীলদের অভ্যেসে পরিনত হয়ে গেছে,এই অভ্যেসের গোলামী থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।যে সমস্ত কেন্দ্রে গোলযোগ হয়েছে,সে সমস্ত কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছেন নির্বাচন কমিশন,আইন শৃংখলা বাহিনীর হাত থেকে সরকারি দলের প্রার্থী ও অপদস্ত হওয়া থেকে রক্ষা পায়নি,কবে কখন,কোন নির্বাচনে এমনতর ভুমিকা রাখতে পেরেছিল নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মিরা?জেলের অভ্যন্তরে থেকে বিএনপি প্রার্থী জিতেছেন, নিরপেক্ষ সুষ্ঠ,অবাধ নির্বাচনের অন্তরীকতা না থাকলে সরকারের এইরুপ কি আদৌ সম্ভব হত? আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি, স্থানীয় নেতাদের জনগনের মানষিকতা পরিবর্তনের উপর আস্থা বিশ্বাসের ঘাটতি থাকার কারনে কিছু বিশৃংখল অনাকাংখিত দু:খজনক ঘটনা ঘটেছে।এই সমস্ত ঘটনার জন্য কোন অবস্থায় সরকারকে দোষ দেয়া যায়না। আমাদের রাজনৈতিক দল সমুহের নেতা কর্মিদের ও যথেষ্ট দোষ রয়েছে।সর্বাজ্ঞে আমি বলব,আদর্শিক কর্মির অভাবে এই রুপ ঘটনা সমুহের সম্মুখীন আমরা বার বার হচ্ছি। দলের প্রতি আনুগত্যহীনতা,অল্পতে নার্ভাস অনুভব করা,দৃড মনোবলের অভাব নেতাকর্মিদের মাঝে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।প্রত্যেক রাজনৈতিক দলে প্রথমে গনতন্ত্রের চর্চার অভ্যেস করতে হবে,দলে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের প্রথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।আদর্শিক কর্মিবাহিনী সৃষ্টির প্রতি মনোযোগী হতে হবে।ভালছাত্রদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে,মেধা সম্পন্ন নেতার উত্থান কন্টকমুক্ত করতে হবে,তবেইতো গনতন্ত্রের স্বাধ উপভোগ করা যাবে। তাঁর আগে অন্য সমস্ত দেশের অনুসরনে আমাদের দেশের নির্বাচন ও প্রশ্নবিদ্ধ হতেই থাকবে। সরকারের একশভাগ আন্তরীকতা থাকলেও শতভাগ নির্ভেজাল নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হবেনা,আমি দৃডভাবেই বিশ্বাস করি। প্রত্যেক দল এই সমস্যা সমুহ দূর না করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের দোষ দিয়ে লাভ হবেনা।নীজেরা যাহাতে অভ্যস্থ নই,তাহাতে সরকার কিভাবে অভ্যস্ত হবে আমার বোধগম্যতায় আসেনা।সরকার কি আলাদা কোন জগতের প্রানী?? জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখহাসিনা

ছবি

জিয়া পরিবারের বিচারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে

ছবি

খোলা আবেদন =================== বরাবর, বেগম খালেদা জিয়া। চেয়ারপার্সন, বাংলাদেশ জাতীয়তা বাদী দল(বিএনপি) বিষয়:- জঙ্গী সম্পর্কিত বিষয়ে ধারনা ও শহীদদের সংখ্যায় বিতর্ক প্রসঙ্গে। জনাবা, যথাবিহীত সম্মানপুর্বক নিবেদন এই,আপনি বাংলাদেশের একজন প্রথম কাতারের রাজনীতিবীদ,বৃহত্তর গনসংগঠন জাতীয়তাবাদি দলের চেয়ারপার্সন,অনুন্নত বাংলাদেশের সাবেক তিন বারের প্রধান মন্ত্রী,সাবেক বিরুদী দলের নেতৃত্বে ছিলেন। ১/১১ এর ঘটনা বহুল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপনি ও বর্তমান প্রধান মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একত্রে আলাদা আলাদা গৃহে কারাওন্তরালে ছিলেন।রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের জন্য জেল খানা দ্বিতীয় বাড়ী এতে কিছুই যায় আসে না।বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও জীবনের অধিকাংশ সময় জেল খানায় কাটিয়েছেন।কথিত আছে তাঁর জন্য সব সময়ে জেল খানার সরঞ্জাম সহ একটি বাক্স প্রস্তুত করে রাখা হত।সেই সময়ের ব্যাপারটি মানুষ মেনে নিতে পারেনি বলে বিজাতীয় পাঞ্জাবী পাঠানদের বিতাড়িত করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জনগন একতাবদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল। মাননীয় নেত্রী, আপনি যদিও অশিক্ষিত হন ভাগ্যদেবী আপনাকে তখনকার সময়ের একজন শিক্ষিত তরুন সামরীক অফিসার কে বরাদ্ধ করেছিলেন বিদায়, আপনার আচার আচরন চলাপেরায় শিক্ষিত মার্জিত একজন গৃহবধুর ভাবমুর্তি সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠতে দেরী হয়নি।রাজনীতির জন্য বা দেশ পরিচালনার জন্য খুব বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন হয়না, তার প্রকৃষ্ট প্রমান আপনি রেখেছেন।কিন্তু অতীব দু:খ্যের সঙ্গে লক্ষ করছি" মহিলারা সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট থাকা তাঁদের ধর্ম" এই পুরুষালী তপ্ত বাক্য থেকে আপনি মুক্ত হতে পারেননি।যাঁর ফলে মেজর জিয়ার মৃত্যুকালে কোন সম্পদ রেখে না গেলেও আপনি তিনবার প্রধান মন্ত্রীত্বের সুযোগ পেয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবারের সদস্য হয়ে,দেশের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করা সর্তেও লুটপাট করে সম্পদ আহরন করা কোনমতেই নীতিনৈতিকতার মধ্যে পড়েনা।যাক আপনি অর্জিত সম্পদ রক্ষা এবং আপনার পরিবারকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সর্বপুরি আপনার"অস্থিমর্জ্জায় লালিত পাকিপ্রেমের অন্ধনুভুতি"কে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার মানসে ন্যাক্কার জনকভাবে মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচারের বিরুধীতা করতেও আপনি কুণ্ঠাবোধ করেননি। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মানবতা বিরুধী সংগঠন জামায়াতের সংগে জোট বেঁধে তাঁদের নেতৃত্ব আপনি গ্রহন করে রাজনীতির সকল সংজ্ঞা বিবর্জিত কর্মকান্ড (জ্বালাও পোড়াও আগুন সন্ত্রাস লুটপাট) পরিচালনা করতেও দ্বিধাবোধ করেননি।এমনতর অবস্থায় দেশকে পৌছে দেয়ার চেষ্টা করেছেন, মধ্যযুগীয় বর্বর যুগে(যাহা থেকে হয়তো আপনিও রক্ষা পাওয়ার কোন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারতেননা)।যেমন পারেননি জাসদ ১৯৭৫ ইং সালে। আপনি বাংলাদেশের গনতান্ত্রীক ধারা, আপনার স্বামী প্রতিষ্ঠিত দল,এবং আপনার রাজনৈতিক ভবিষ্যতকেও অন্ধকারে ঠেলে দিতে উদ্যোগি হয়েছিলেন। আপনার সকল প্রচেষ্টা নস্যাৎ হওয়ার পর, প্রকাশ্য ঘোষনা দিয়ে বলেছিলেন, আপনি আর হিংসাত্বক রাজনীতি করবেন না,যদি কোন দিন সরকারে আসতে পারেন প্রতিশোধ গ্রহন করবেননা। প্রথম বাক্যটি যদিও আপনার রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ফেরৎ আসার ইঙ্গিত বহন করে -দ্বিতীয় বাক্যটি আপনি কেন বলছেন তা অনেকেই না বুঝলেও রাজনীতি সচেতন নাগরিকেরা ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছেন।তাঁর আগেও তাঁদের প্রতি স্পষ্ট উষ্মা প্রকাশ করে প্রকাশ্য বলেছিলেন, "সেনাবাহিনী বেঈমান"।তাঁরা আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে মর্মে ওয়াদা করেও ওয়াদা রক্ষা না করার লজ্জায় ঘৃনায় আপনি এখন পয্যন্ত অবরোধ হরতাল প্রত্যাহারেরঘোষনা দিতে পারেননি।আপনার সেই কর্মসুচি চলমান থাকায় আপনার মিত্রদেশ আমেরীকা ও লজ্জায় ঘৃনায় তাঁদের জারী করা রেড এলার্ট প্রত্যাহার করতে পারছেন না।দুই দেশের দুই রাজনৈতিক ভরসার কারনে আন্তজাতিক ভাবে বাংলাদেশ বহু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ও হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।আপনিই বলুন আপনার হরতাল অবরোধ কি এখন ওবহাল আছে?আপনি ও আপনার দল বা জোট কি এখনও তা পালন করছেন? এমনতর পরিস্থিতিতে আপনার দল যখন বহু খন্ডে বিভক্ত হওয়ার উপক্রম,বহুদলীয় গনতন্ত্র হুমকির সম্মুখ্যিন,(,শক্তিশালী বিরুদি দলের অস্তিত্ব থাকা গনতন্ত্রের মুলভিত্তি) গনতন্ত্রের সংজ্ঞার চরম ব্যত্যায়ের উপক্রম,দলে দলে নেতাদের ভীন্ন দলে যোগদান করে নীজেদের রাজনৈতিক ধারা রক্ষায় নিমগ্ন তখন ও আপনি ব্যাস্ত সুদুর লন্ডনে আপনার অথর্ব সন্তান তারেক এবং দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারিদের সাথে বৈঠকে। "ঐ সময়ে আপনাদের দুই নেত্রী জেলখানায় যে আন্তরিকতা গড়ে উঠেছিল, সেই আন্তরীকতার বহি:প্রকাশ ঘটালেন জাতির জনকের কন্যা, বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা।তিনি গনতন্ত্রের স্বার্থে,শক্তিশালী বিরুদী দলের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে, দেশের সমৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে,প্রকাশ্য ঘোষনা দিলেন, "একজন নেতা কর্মিকেও আওয়ামী লীগে যোগদান করতে দেয়া হবেনা".।দেশরত্মের ঘোষনায় নিসন্দেহে আপনার দল ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেয়েছে,রক্ষা পেয়েছে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের দলত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক থেকে। শেখ হাসিনার এই উদারতা দেশের মানুষ তৎক্ষনাৎ বুঝতে না পারলেও সচেতন রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ঠিকই বুঝেছেন।আপনার ভক্ত শুসীল সমাজের আলোচনা থেকে সেই দিনের পর রাজনৈতিক দলের গনতন্ত্রের চর্চার বিষয়টি উধাও হয়ে গেছে।এই বদন্যতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই দেখাতে পেরেছেন।এইখানেই সামরিক সরকারের সৃষ্ট দল আর জনগনের আন্দোলন সংগ্রামে সৃষ্ট দলের পার্থক্য।এই জায়গা টুকুতেই শিক্ষিত নেতা আর অশিক্ষিত নেতার পার্থক্য।"এইখানেই বুঝা যায় কে গনতন্ত্রের পুজারি কে গনতন্ত্রধ্বংশকারী।কে ক্ষমতালোভী কে রাজনীতি লোভী।কে দেশের উন্নয়ন অগ্রগিতি চায়,কে ধ্বংশ আর অরাজগতা চায়।"" মাননীয় নেত্রী, আপনি যুদ্ধচলাকালিন পাঞ্জাবীদের সাথে ক্যান্টনমেন্টে নিরাপদে আনন্দঘন সময় অতিবাহিত করেছেন।পাঞ্জাবী সেনা কর্মকর্তাদের প্রত্যহিক সৌয্যবীয্যের আলোচনাই শুনেছেন।বিপরীত কোন আলোচনা সমালোচনা শুনার সুযোগ আপনার ছিলনা।এইখানে আপনার দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই।আপনি যাহা চেয়েছিলেন তাহা পাননি।মানুষ যা চায়, তা কি সবসময়ে পায়?তাঁদের সাথে বসবাসের কারনে আপনি তাঁদের প্রতি আন্তরীক এতেও আমি দোষের কিছু দেখিনা।জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু আপনাকে গ্রহন করার জন্য জিয়াউর রহমানকে বাধ্য করেছে,ইহাও দোষের নয়।বঙ্গবন্ধু বহুজনের ঘর সংসার রক্ষা করে দিয়েছেন।বহু নির্যাতিত নারীকে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন। অনেকেই আজ স্বাবলম্বি,কোটিপতির খাতায় ও অনেকের নাম জ্বল জ্বল করে জ্বলছে।আপনার প্রতি ভাগ্যদেবী অধিকতর দুর্বল, তা নাহলে কি আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন? ভাঙ্গা সুটকেষ থেকে কি হাজার হাজার কোটি টাকা বের হতে পারে?আলাদীনের চেরাগের কাহিনীকে হার মানিয়েছে আপনার ভাগ্যের কাহিনী।ইহা কি আমি সত্য বলি নাই মাননীয় নেত্রী? যাক, স্বাধীনতার ৪৫ বছরে বাংলাদেশ আর কিছু দিনের মধ্যে পা দিবে।এমনি সময়ে বিজয়ের মাসের আনন্দ ঘন মহুর্তে শহিদের সংখ্যা বিতর্ক কেন তুলেছেন মাননীয় দেশনেত্রী।আপনি যদি সত্যিকার ভাবে দেশনেত্রী হয়ে থাকেন(আপনার নেতা কর্মিরা এখনও সম্বোধন করে)তবে কি আপনার মুখে বিতর্কটি শোভা পায়?আপনি যাদের রক্ষা করার জন্য নিজের দলের অস্তিত্ব বিপন্ন করার জোকি গ্রহন করেছিলেন, তাঁদের দিয়ে এই সামান্য বিতর্কটি কি উত্থাপন করানো যেতনা?বিতর্কটি উত্থাপিত আপনার মুখে হওয়ার কারনে দেশের মানুষ, মুক্তিযুদ্ধে আপনার আশ্রয়দাতা এবং আপনার আনন্দমুখর দিনগুলীর অতীত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতেও দ্বিধাবোধ করছেনা।একজন সাবেক প্রধান মন্ত্রীর এই রুপ সমালোচনা যদিও বিবেকবর্জিত সমালোচনা তার পরও না করে পারছেনা।দেশের মানুষ আপনার এই মন্তব্যে রাগে ক্ষোভে দু:খ্যে যারপরনাই জ্ঞানশুন্য।কি বলতে কি বলছেন হয়তো নীজেরাও জানেনা। অনেকেই এমনতর মন্তব্য করতেও পিছপা হয়নি যে,আপনি নাকি সে দিন বেশি মাত্রায় মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। মাননীয় দেশনেত্রী, আপনার মুখে প্রায়শ:শুনতে পাওয়া যায়, দেশের ছেলে পেলে গুলোকে পুলিশ অযথা ধরে নিয়ে জঙ্গী সাজাচ্ছে।আপনি আবার বলেন বাংলাদেশে জঙ্গীর উপস্থিতি আছে।জঙ্গী কি ভীন গ্রহের কোন অশরীরি জীব? না অন্য দেশের পুশইন হওয়া কোন সন্ত্রাসী ধর্মীয় উগ্রব্যাক্তিবর্গ বিশেষের সংগঠিত দল? মিরপুরে একটানা ১৮/১৯ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করে যাদের ধরা হল তাঁরাতো বাংলাদেশের ছেলে পেলে? আপনি কি বুঝাতে চান মাননীয় নেত্রী পরিস্কার করে বলে দিন না।সরকার কে সেই মতে ব্যাবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নিতে সাহায্য করুন।আপনার বক্তব্যে পরিস্কার বুঝা যায় তাঁদের আপনি চিনেন।দেশ এবং জনগন সর্বপুরি আমাদের উদার ধর্ম ইসলামের শত্রু এই ধর্মীয় জঙ্গীরা, এটাতো সত্যি।ইসলামতো কখনই উগ্রতা পছন্দ করেনা।যারা ধরা পড়েছে তাঁরা ছাত্র শিবিরের নেতা কর্মী।এরাই কি আই এস আই?বাংলাদেশের নাগরীক কোন দেশের শাষন কায়েম করার জন্য আই এস আই হয়েছেন? মাননীয় দেশনেত্রী, রাজনৈতিক শুন্যতায় বাংলাদেশের বহু অরাজনৈতিক ব্যাক্তি,সেনা সদস্য,ব্যাবসায়ী রাজনীতিবীদ হতে পেরেছেন। রাজনৈতিক শুন্যতা সৃষ্টি না হলে এরাই রাজনীতিবীদদের তল্পিতল্পা বহন করতেন।ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বাংলাদেশের, জাতির জনকের নির্মম হত্যাকান্ডের পর দেশ পাহারাদারদের শাষনেও আমাদের থাকতে হয়েছে।আপনারমত গৃহবধূ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ একাধিকবার অলংকৃত করতে পেরেছেন।অনেক সেনা কর্মকর্তা এমপি মন্ত্রী হতে পেরেছেন।তাতে কোন দু:খ্য নেই,তাঁরা বাংলাদেশের সচেতন নাগরীক। দু:খ্য হয় যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি,মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে অস্ত্রহাতে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল,যাঁরা আমাদের মা বোনদেরকে পাঞ্জাবি পাঠান খাঁনসেনাদের মনোরঞ্জনের খোরাকে পরিনত করেছিল, যারা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ করে বাংলাকে পোড়ামাটিতে রুপান্তরে সহযোগিতা করেছিল,ক্ষেত্র বিশেষে নীজেরাও সম্পৃত্ত হয়েছিল,যারা নতুন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শুন্য করে রাখার সুদুরপ্রসারী লরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষে শত শত বুদ্ধিজীবিকে হত্যা করেছে তাঁদের হাতেও আপনি বাংলাদেশের রক্তে রাঙানো পতাকা তুলে দিয়েছিলেন।তাঁদেরকে আপনার স্বামী মামলা প্রত্যাহার করে জেল থেকে মুক্ত করে দিয়েছিল।অনেককে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ফেরৎ দিয়েছিল।তাঁদেরকে অবাধে ব্যাবসা বানিজ্য করার লাইসেন্স দিয়ে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।আপনি আর ও একধাপ এগিয়ে তাঁদের কে আপনার সরকারের মন্ত্রী বানিয়ে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা তাঁদের গাড়িতে ব্যাবহার করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। লাখো শহিদের প্রানের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অপদস্ত করতেও আপনি দ্বিধাবোধ করেননি। বাংলাদেশের জনগনের প্রানের দাবী যুদ্ধপরাধীদের বিচার। আপনি সেই বিচারের বিপক্ষে অবস্থান করে সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলের সন্ধি করে ব্যর্থ হয়েছেন।এখন শহিদের সংখ্যা বিভ্রান্তি করে ৪৪বছরের প্রতিষ্ঠিত সত্যকে বিতর্কে জড়িয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।আপনার এহেন কর্মকান্ড বাংলাদেশের নতুন প্রজর্ম কোনমতেই সহ্য করবে না।আপনি আপনার রাজনৈতিক পথে নীজেই নীজের কাঁটা বিছিয়ে দিলেন,এই কাঁটা আপনাকেই পরিষ্কার করে রাজপথে নামতে হবে।দেশরত্ম সদয় হয়ে আপনার দল বাঁচিয়ে রাজনীতি করার প্লাটফরম রক্ষা করে দিয়েছেন, রাজপথে নেমে রাজনীতি করার গ্যারান্টি দিতে পারবেনা।আপনি যেমন কয়েক সন্ত্রাসী মাস্তান দিয়ে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করতে প্ররোচিত করেছেন,শেখ হাসিনা তেমন প্ররোচিত হয়তো করবেন না, কিন্তু কোন মুক্তি যুদ্ধের চেতনা সম্পন্ন ব্যাক্তিকে বারন ও করতে পারবেন না।নতুন প্রজর্মের তরুন মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত আপনার দেশ বিরুদী কর্মকান্ডের সমুচিত জবাব রাজপথেই দেয়া হবে ইনশাল্লাহ। মাননীয় দেশনেত্রী-বিনীত প্রার্থনা, এখন ও সময় আছে, জাতির নিকট ক্ষমা চেয়ে নিন, নীজকে জাতীয় নেতার মায্যদায় উন্নিত করুন,বিবেকের জ্বালা থেকে দেশবাসিকে মুক্তি দিন।সকল প্রকার ষড়যন্ত্র পরিহার করে গনতন্ত্রের স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসুন,দেশ ও জাতিকে রক্ষা করুন।বৃহৎ দলের নেত্রী হিসেবে দায় আপনাকেই নিতে হবে।দেশ আপনার খালি স্যুটকেস পুরে দিয়েছে,বাংলাদেশের সর্বউচ্চ সম্মান প্রধান মন্ত্রী বানিয়েছে,এখনও রাজনীতি করে সময় কাটানোর মত বিরক্তিকর ইস্যু থেকে রক্ষা করে চলেছে।আপনিও দেশের জন্য, গনতন্ত্রের জন্য,উন্নতি অগ্রগতির জন্য এখন ও অনেক কিছুই করতে পারেন,অনেক কিছুই দেয়ার আছে।আপনি আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার আকুল আবেদন জানিয়ে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। খোদা হাফেজ। আপনার অনুগত একজন সাধারন নাগরীক। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখহাসিনা

জেলহত্যা দিবসের স্মৃতিকথা তোফায়েল আহমেদ বিডিনিউজ২৪.কম ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর মানব সভ্যতার ইতিহাসকে ম্লান করে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতা– সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আমি ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী। কি দুঃসহ জীবন তখন আমাদের। ময়মনসিংহ কারাগারের কনডেম সেলে (ফাঁসির আসামীকে যেখানে রাখা হয়) আমাকে রাখা হয়েছিল। সহকারাবন্দী ছিলেন “দি পিপল” পত্রিকার এডিটর জনাব আবিদুর রহমান। কিছুদিন আগে যিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। আমরা দু’জন দু’টি কক্ষে ফাঁসির আসামীর মতো জীবন কাটিয়েছি। হঠাৎ খবর এলো, কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারের সকলে এবং কারারক্ষীরা সতর্ক। ময়মনসিংহ কারাগারের জেল সুপার ছিলেন শ্রী নির্মলেন্দু রায়। চমৎকার মানুষ তিনি। কারাগারে আমরা যারা বন্দী, তাদের প্রতি তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল। বঙ্গবন্ধুও তাকে খুব স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধু যখন বারবার কারাগারে বন্দী ছিলেন, নির্মলেন্দু রায় তখন কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হয়ে নির্মলেন্দু রায়কে কাছে টেনে সবসময় আদর করতেন। সেদিন গভীর রাতে হঠাৎ নির্মলেন্দু রায় আমার সেলে এসে বলেন, “ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এতো রাতে কেন? তিনি বললেন, “ঢাকা কারাগারে আপনাদের প্রিয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কারাগারের চতুর্দিক পুলিশ দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছি, জেল পুলিশ ঘিরে রেখেছে। এসপি সাহেব এসেছেন আপনাকে নিয়ে যেতে।” আমি বললাম, না, এভাবে তো যাওয়ার নিয়ম নেই। আমাকে যদি হত্যাও করা হয়, আমি এখান থেকে এভাবে যাব না। পরবর্তীকালে শুনেছি সেনাবাহিনীর একজন মেজর সেদিন কারাগারে প্রবেশের চেষ্টা করে। নির্মলেন্দু রায় তাকে বলেছিল, “আমি অস্ত্র নিয়ে কাউকে কারাগারে প্রবেশ করতে দেবো না।” কারাগারের চতুর্পার্শ্বে আমাকে রক্ষা করার জন্য সেদিন যারা ডিউটি করছিলেন তাদের মধ্যে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী ওদুদ সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছিল কারাগারকে রক্ষা করার জন্য। নির্মলেন্দু রায়ের কাছে আমি ঋণী। জেলখানার এই নিষ্ঠুর হত্যার খবরে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অতীতের অনেক কথাই ভাবতে শুরু করি। ছাত্র জীবন থেকে আমি জাতীয় চার নেতাকে নিবিড়ভাবে দেখেছি। তাঁদের আদর-স্নেহে আর রাজনৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়ে জীবন আমার ধন্য হয়েছে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট যেদিন জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়, আমরা সেদিন নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জাতীয় চার নেতাসহ আমরা ছিলাম গৃহবন্দী। ১৫ আগস্টের পরদিন আমার বাসভবনে খুনীরা এসে আমাকে তুলে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যায়। সেখানে আমার উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। পরবর্তীতে জেনারেল শফিউল্লাহ এবং আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সদ্যপ্রয়াত কর্নেল শাফায়াত জামিল– তিনি তখন ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার– তাদের প্রচেষ্টায় রেডিও স্টেশন থেকে আমাকে বাড়ীতে আমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মায়ের কথা আজ ভীষণভাবে মনে পড়ে। আমাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মা বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন। মায়ের শরীরের উপর দিয়েই আমাকে টেনে নেয় ঘাতকের দল। আগস্টের ২২ তারিখ জাতীয় চার নেতাসহ আমাদের অনেক বরেণ্য নেতাকে গ্রেফতার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়েছিল গুলী করে হত্যা করার জন্য। যেকোন কারণেই হোক শেষ পর্যন্ত হত্যা করে নি। পরে নেতৃবৃন্দকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের উপর যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল তা উপেক্ষা করে আমরা খুনী মোশতাকের সকল প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। গৃহবন্দী অবস্থা থেকে জিল্লুর রহমান, আমাকে ও জনাব আবদুর রাজ্জাককে একই দিনে গ্রেফতার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কোণে অবস্থিত পুলিশ কন্ট্রোলরুমে ৬ দিন বন্দী রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এরপর আমাকে ও আবিদুর রহমানকে ময়মনসিংহ কারাগারে এবং জিল্লুর রহমান ও প্রিয় নেতা রাজ্জাক ভাইকে কুমিল্লা কারাগারে নিয়ে যায়। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতীয় চার নেতার কতো স্মৃতি। ’৬৬তে বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা দেন, তখন তাজউদ্দীন ভাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক। ছয় দফা দেওয়ার পর মার্চের ১৮, ১৯ ও ২০ তারিখ হোটেল ইডেনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু মুজিব সভাপতি এবং তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু মানুষ চিনতে ভুল করতেন না। তিনি যোগ্য লোককে যোগ্যস্থানে বসাতেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রথম সহসভাপতি, মনসুর আলী সাহেবকে অন্যতম সহসভাপতি, কামারুজ্জামান সাহেবকে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাজউদ্দীন ভাই পরমনিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। বঙ্গবন্ধু সারা বাংলাদেশে ছয় দফার সমর্থনে জনসভা করেন এবং যেখানেই যান সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে থামাতে পারেনি। মে’র ৮ তারিখ নারায়ণগঞ্জের জনসভা শেষে ধানমণ্ডির বাসভবনে ফেরামাত্রই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরপরই তাজউদ্দীন ভাইসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতিবাদে ৭ জুন আমরা সফল হরতাল পালন করি। হরতাল শেষে এক বিশাল জনসভায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছয় দফা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে অপূর্ব সুন্দর বক্তৃতা করেছিলেন। তিনি অনলবর্ষী বক্তা ছিলেন। তাজউদ্দীন ভাই দক্ষ সংগঠক ছিলেন এবং এএইচএম কামারুজ্জামান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের এমএনএ হিসেবে পার্লামেন্টে বাঙালির পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে সোচ্চার ছিলেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের এই জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বারংবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন অপূর্ব দক্ষতার সাথে। ’৬৯-এর গণআন্দোলনে তাজউদ্দীন ভাইসহ অধিকাংশ নেতাই কারাগারে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাইরে ছিলেন। জানুয়ারির ১ম সপ্তাহে মরহুম আহমেদুল কবীরের বাসভবনে ডাকের সভা চলছিল। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ১১ দফা দাবী নিয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে গিয়েছিলাম। নেতৃবৃন্দের কাছে যখন ১১ দফা ব্যাখ্যা করি, তখন ন্যাপ নেতা মাহমুদুল হক কাসুরি বলেছিলেন, ”You have included Sheikh Mujib’s six points in to, so questions of acceptance does not come.” তাঁর এই বক্তব্যের পর বলেছিলাম, আমরা বাঙালি, কিভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয় আমরা জানি। আপনারা সমর্থন না করলেও এই ১১ দফা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আমরা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রিয়নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কারাগার থেকে মুক্ত করবো। এই দৃপ্ত উচ্চারণের পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম আমাকে বুকে টেনে আদর করে বলেছিলেন, “তোমার বক্তব্যে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।” মহৎ হৃদয়ের অধিকারী নেতৃবৃন্দদের যার যা প্রাপ্য, বঙ্গবন্ধু তাদের তা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনি তৃণমূলের কর্মীকে নেতা বানিয়েছেন; ইউনিয়নের নেতাকে থানার নেতা; থানার নেতাকে জেলার নেতা; জেলার নেতাকে কেন্দ্রের নেতা এবং কেন্দ্রীয় নেতাকে জাতীয় নেতা বানিয়ে নিজে হয়েছিলেন জাতির পিতা। তাঁর কাছে কর্মীদের কাজের, দক্ষতার এবং যোগ্যতার মূল্য ছিল। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এবং এএইচএম কামারুজ্জামান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কে কোন পদে পদায়িত হবেন বঙ্গবন্ধু তা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। ’৭০-এর নির্বাচনে মাত্র ২৭ বছর বয়সে আমি এমএনএ হয়েছিলাম। ’৭১-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টারী পার্টির মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু সংসদীয় দলের নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপনেতা এবং এএইচএম কামারুজ্জামান সচিব, ইউসুফ আলী চীফ হুইপ, আবদুল মান্নান এবং আমিরুল ইসলাম হুইপ নির্বাচিত হন। প্রাদেশিক পরিষদ নেতা নির্বাচিত হন মনসুর আলী। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে মনসুর আলী হবেন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী। এজন্য মনসুর আলীকে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সেটআপ করা ছিল। ’৭১-এর ১ মার্চ পূর্বঘোষিত জাতীয় পরিষদ অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিত হলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম পর্ব। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে সর্বাত্মক স্বাধীনতা ঘোষণার পর শুরু হয় অসহযোগের দ্বিতীয় পর্ব। বিশ্বে এমন অসহযোগ কখনো দেখে নি কেউ। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সুচারুরূপে পরিচালনা করেছে অসহযোগের প্রতিটি দিন। এ সময় লালমাটিয়ায় আমাদের প্রয়াত নেতা খুলনার মোহসীন সাহেবের বাসভবনে বসে আমরা সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন জাতীয় চার নেতার সাথে পরামর্শক্রমে। বঙ্গবন্ধু এমন এক নেতা ছিলেন যে, তাঁর অবর্তমানে কে কোথায় কী কাজ করবেন এটি আগেই নির্ধারণ করতেন। ২৫ মার্চ রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার পর যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়, তখন জাতীয় চার নেতাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দক্ষতার সাথে মুজিবনগর সরকার পরিচালনা করেন। মুজিবনগর সরকারে বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রী কামারুজ্জামান সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে ’৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর দেশকে হানাদার মুক্ত করেন। আজকে স্বাধীনতার ইতিহাস অনেকেই বিকৃত করে। অথচ কি সুন্দর পরিকল্পনা নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। ’৭১-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের চারজন– শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক এবং আমাকে বঙ্গবন্ধু ডাকেন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে। বঙ্গবন্ধু আমাদের বলেন, “পড়ো, মুখস্থ করো।” আমরা মুখস্থ করলাম একটি ঠিকানা– “২১, রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা।” বলেছিলেন, “এইখানে হবে তোমাদের জায়গা। ভুট্টো-ইয়াহিয়া ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। পাকিস্তানীরা বাঙালিদের ক্ষমতা দেবে না। আমি নিশ্চিত ওরা আক্রমণ করবে। আক্রান্ত হলে এখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করবে।” বঙ্গবন্ধু সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। সদ্য নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য চিত্তরঞ্জন সুতারকে আগেই কলকাতায় প্রেরণ করেছিলেন। ডাক্তার আবু হেনা প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য। তাকেও বঙ্গবন্ধু আগেই পাঠিয়েছিলেন অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে। যে পথে আবু হেনা গিয়েছিলেন, সেই একই পথে তিনি মনসুর আলী, কামারুজ্জামান, মণি ভাই এবং আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাজেন্দ্র রোডে আমরা অবস্থান করতাম। ৮ নং থিয়েটার রোডে অবস্থান করতেন জাতীয় চার নেতা। নেতৃবৃন্দের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। কতোবার তাজউদ্দীন ভাইয়ের সাথে বর্ডারে রণাঙ্গনে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুজিববাহিনীর সাথে মুজিবনগর সরকারের ভুল বোঝাবুঝির চেষ্টা হয়েছিল। জাতীয় নেতৃবৃন্দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সকল ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রিয় মাতৃভূমিকে আমরা স্বাধীন করেছি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর আমি এবং রাজ্জাক ভাই দেশে আসি ১৮ ডিসেম্বর। ২২ ডিসেম্বর চার নেতা ফিরেন; বঙ্গবন্ধু এলেন ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি। ডিসেম্বরের ২২ তারিখ আমরা বিমানবন্দরে মুজিবনগর সরকারের জাতীয় চার নেতাকে অভ্যর্থনা জানাই। ’৭২-এর ১১ জানুয়ারি তাজউদ্দীন ভাইয়ের বাসভবনে বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাবেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন বঙ্গবন্ধু মুজিব স্বয়ং; সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিল্পমন্ত্রী; তাজউদ্দীন আহমেদ অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী; ক্যাপ্টেন মনসুর আলী যোগাযোগমন্ত্রী এবং কামারুজ্জামান ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৪ জানুয়ারি মাত্র ২৯ বছর বয়সে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হবার। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর কাছে থেকেছি শেষদিন পর্যন্ত। ’৬৯-এর পর থেকে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার অফুরন্ত স্নেহ-আদর-ভালোবাসা এবং সাহচর্য পেয়েছি। যা কোনদিন ভুলবার নয়। ’৭৪-এর ২৬ অক্টোবর, তাজউদ্দীন ভাইকে মন্ত্রীসভা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রতিদিন তাজউদ্দীন ভাইয়ের বাসায় যেতাম। তাজউদ্দীন ভাই আমায় বলতেন, “দেখো তোফায়েল, সারা জীবন যা কিছু করেছি, তার সবই মুজিব ভাইয়ের খাতায় জমা রেখেছি। আমার নিজের খাতায় কিছুই রাখি নি। যে কোন মূল্যে মুজিব ভাইকে বাঁচাতে হবে। মুজিব ভাইকে বাঁচাতে না পারলে আমরা কেউ-ই বাঁচতে পারবো না। এই স্বাধীনতা সবকিছু অর্থহীন হয়ে যাবে।” ভাবতে অবাক লাগে, তাজউদ্দীন ভাই মন্ত্রীসভায় ছিলেন না- সরকারে ছিলেন না, অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করে গেছেন!

ছবি

ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল আইনি কাঠামো কোথায়??? ============================ তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান বাংলাদেশ, নতুন প্রজর্ম্মের ছেলে মেয়েদের নিকট অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে -পেইজ বুক সহ অন্য সব সামাজিক সাইট গুলি। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যাবহার সর্বসাধারন হয়ে উঠার বয়স কিন্তু একেবারেই কম।কম হলেও বেশিরভাগ যুবক যুবতি যে হারে আসক্ত হয়ে পড়েছে অন্য পুরাতন ব্যাবহারকারি দেশ সমুহের ছেলে মেয়েরা সমহারে আসক্ত হয়নি।অন্যভাবে বলা যায় আমাদের তরুন প্রজর্ম্ম প্রযুক্তিটি যত বেশি আগ্রহ সহকারে গ্রহন করেছে উন্নত দেশ সমুহের যুবক যুবতিরা তত আগ্রহ সহকারে গ্রহন করেনি।আমাদের অনেকেই ব্যাবহার করে সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে আবার বেশ কিছু মানুষ আছেন বিনোদনের উপকরন হিসেবে গ্রহন করে সর্বক্ষন পর্ণোসাইট গুলি ঘুরে বেড়ান।খুব কম সংখ্যক মানুষ আছেন যারা প্রয়োজনীয় কাজে এই প্রযুক্তি কাজে লাগান।উন্নত দেশ সমুহের নতুন প্রজর্ম বা যুবক যুবতিদের বেশির ভাগই কিন্তু আমাদের বিপরীতে অবস্থান। তাঁরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যাবহার করে বেশির ভাগ জ্ঞান অর্জন করছে,অনেকেই টাকা রুজির হাতিয়ার বানিয়ে সঙ্গি করেছে জীবনের। ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার মাননীয় প্রধান মন্ত্রী প্রযুক্তিটি যত দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন, তত দ্রুত এর নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থাপনা আয়ত্ব করা জনশক্তি আবিষ্কার করতে পারেননি। '৯৬ ইং সালে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পয্যায় ক্ষমতা গ্রহন করে প্রযুক্তিটি সর্বসাধরনের ব্যাবহার করার সুযোগ সৃষ্টি করে মোবাইল কোম্পেনি গুলির মনোপলি ব্যাবসা ভেঙ্গে দিয়ে অবাধ করে দিয়েছিল,সাথে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর তরুন প্রজর্ম গড়ে তোলার উদ্দেশ্য প্রতিটি জেলাতে একটি করে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।সেই মোতাবেক বেশ কয়টি জেলায় তদ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে বাদ বাকি জেলাগুলোতেও প্রলিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত আছে। সরকার প্রযুক্তিটি নিয়ন্ত্রন, ব্যাবহার,সফলতা অর্জনের আগেই দেখা যাচ্ছে যারা বিজ্ঞানের উন্নতি বা প্রযুক্তির ব্যাবহার একেবারেই সহ্য করেননা তদীয় শ্রেনীর সামান্য একটি অংশ (কোনভাবেই পার্সেন্টেজের হিসেবে আসেনা) ডিজিটাল প্রযুক্তিটির আরো উন্নত সংস্করন ব্যাবহার করে নাশকতার কাজে ব্যাবহারে উৎসাহ বোধ করছেন বা নিরাপদ মনে করছেন। আরামদায়ক বলে গন্য করে যথেচ্ছ ব্যাবহার করে দেশে অরাজগতা, নাশকতায় ইন্দন দেয়ার হাতিয়ারে রুপান্তরীত করেছেন।উন্নত দেশের ছেলেমেয়েরা ব্যাবহার করে তাঁদের সভ্যতার নিদর্শনকে অনূকরনীয় অনুসরনীয় করে তুলছেন বিশ্ববাসির নিকট।তারা যখন প্রযুক্তি বিক্রি করে,সাইট ভাড়া দিয়ে ডলার আয় করে জীবনের স্বাচ্ছন্দ আনছেন -তখন আমরা ব্যাবহার করে আনছি ধ্বংশ, অরাজগতা,নাশকতা। বিশ্বের বহু দেশে পেইজ বুক বন্ধ থাকলেও তাঁদের দেশের ব্যাবহারকারিরা সরকারের সমালোচনা করেনা বা ব্যাঙ্গ করে, কাটুন একে উষ্মা প্রকাশ করে না।আমরা নতুন ব্যাবহারকারি হলেও কয়েকদিন বন্ধ করার পর বহু জন বহু ভাবে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।যিনি উষ্মা প্রকাশ করে ব্যাঙ্গ চিত্র আপলোড করছেন তিনি কস্মিনকালেও চিন্তা করেন নাই রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করে বিকল্প উপায়ে সামাজিক সাইট গুলি নিয়মিত ব্যাবহার করছেন। অথছ ফ্রান্সের মত সভ্য একটা দেশ আমাদের একই সময়ে বন্ধকরে এখন পয্যন্ত পেইজ বুক বা অন্য সামাজিক সাইট গুলি চালানোর অনুমতি দেননি। তাঁরা তো কই সব গেছে বলে হায়হুতাস করেছে তেমনটি দেখা যায়না।যারা এই সমস্ত অপকর্ম, ব্যাঙ্গচিত্র একেছেন, হায় হুতাস করেছেন তাঁরাই জঙ্গিদের সমর্থক আমি মনে করি।ভেবে দেখার দরকার ছিল আপনাদের সরকার বিনা খরছে সাইবার ক্যাবল পাওয়া সর্তেও তা গ্রহন না করে দেশকে কতদুর পিছনে ঠেলে দিয়েছিল। এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই, ২০০৫ সালে যেখানে মাত্র ১১৫ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতো সেখানে ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী সেই সংখ্যা ২৯২ কোটি, ৫২ লাখ, ৪৯ হাজার ৩৫৫ ওঠেছে। ২০১৫ সালে বিশ্বের ৩২০ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বাংলাদেশে হঠাৎ করেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৪ সালের শেষের দিকে ছিল প্রায় ৪.৮৪ কোটি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী যা ছিলো (মাত্র ১২ লাখ) এখন সেটি তার চাইতে বহু গুণ বেশি। এর পেছনে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইদথের দাম কমা, ইন্টারনেটে প্রয়োজনীয় কনটেন্টস পাওয়া এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্ক ও ব্লগিং এর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। যে কেউ এখন দেশের সকল প্রান্তের বিপুল পরিমাণ মানুষকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হওয়া অবস্থায় দেখতে পারেন, বা ভাব বিনিময় করতে পারেন। এক সময়ে যা কেবলমাত্র কিছুসংখ্যক মানুষের সাময়িক কার্যকলাপ হিসেবে গণ্য হতো এখন সেটি দেশের প্রায় সকল এলাকার মানুষেরই প্রাত্যহিক ক্রিয়া-কর্মে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ধরনের মাইলফলক । বিএনপি বা চার দলিয় জোট সরকার ২০০৬ সালে সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে দেশটিকে যুক্ত করে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে ব্যর্থ হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের সরকার সেই অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন করেছে। এই খাতকে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের যুক্ত হওয়াটাও নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের সফলতা। একই সাথে বিগত কয়েক বছরে মোবাইলের সংযোগের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ার বিষয়টিও ইতিবাচক। মোবাইলের সংযোগ বৃদ্ধি, থ্রিজির আগমন এবং মোবাইল কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতা মুলক একে অপরের প্রতি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভাবে ইন্টারনেট কানেকশন বাজারজাত করার ফলেও ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। ডিজিটাল অপরাধের একটি বড় ক্ষেত্র হচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ফেইজবুক,টুইটার,ম্যাসেঞ্জিং এর মত প্রকাশ মাধ্যমগুলি। এই মিডিয়া গুলি গত দুই বছর তিন বছরের অবস্থায় এখন আর নেই, আগের পরিধিতেও নেই। বরং ইন্টারনেট প্রচলিত মিডিয়াকে কেমন করে বদলে দিয়েছে এবং মিডিয়ার ডিজিটাল রূপান্তর কতোটা করে পেলেছে সেটি উপলব্ধি,অনুভব করার বিষয়। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, আমলা, ওলেমা মাশায়েখ, ডাকতার,ইঞ্জিনিয়ার বা সাধারণ মানুষের পক্ষে দেশের ডিজিটাল মিডিয়ার জগৎটা সম্পর্কে ধারণা করা সহজ ছিল না। তাদের কেউ সম্ভবত বিষয়টিকে কখনও গুরুত্ব দিয়ে আমলে নিয়ে চিন্তা করে দেখেননি। মিডিয়ার রূপান্তরটি কত ভিন্নমাত্রার হয়েছে তাঁর ব্যাখ্যা একেক জন একেক ভাবে করলেও উপলব্দি অনুভবের ক্ষেত্রে প্রায় সবাইর বেলায় সামান্য তারতম্য পরিলক্ষিত হলেও সহমত পোষন করেন। সামান্য একটু উদাহরন দিলে ব্যাপারটি বুঝার জন্য আরও সহজ হবে বলে মনে করি। যেমন বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকার সর্বোচ্চ সার্কুলেশন হতে পারে ৩/৪ লাখ, যদিও বেশির ভাগেরই প্রচার সংখ্যা শ' বা হাজারের কোঠায়। কাগজে ছাপা সকল পত্রিকার পাঠক সংখ্যা হতে পারে সর্বোচ্চ ৩৫/৪০ লাখ। অন্যদিকে অনলাইনে এসব পত্রিকার পাঠকসংখ্যা প্রায় ৫/৭ গুণ বেশি এবং দেশের প্রায় ৭/৭'৫০ কোটি লোক এখন অনলাইনে যুক্ত থাকে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ কোন না কোনভাবে অনলাইনে খবর সংগ্রহ করে থাকে,যুৎসই খবরটি নীজ টাইমলাইনে আপলোড করে। দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সকলেই কোন না কোনভাবে খবরটি পাঠ করে থাকে। এর পাশাপাশি বিশেষায়িত অংশগুলোর কথাও বলা যায়। শুধু ফেসবুকে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোক যুক্ত রয়েছে। অনলাইনে একজন ব্যক্তির যোগাযোগ ক্ষমতা কতটা বেড়েছে তার হিসাবটা আমি নিজের হিসাব থেকে দিতে পারি। ১৮জুলাই২০১৫ (সকাল ১০'৩০ মিনিট) সময়কালে আমার ফেসবুক বন্ধু ছিল ২৮৬০ জন। আজকে ১৮ ই ডিসেমম্বর ৪৯০২ জন। একবার ভাবুন কত দ্রুত বন্ধুর সংখ্যা বেড়েছে আর কতজনের চোখে আমার পোষটি পড়েছে।আমার পেইজ আছে সাতটি।বন্ধু আছে সবগুলি মিলিয়ে প্রায় ১৩/১৪ হাজার,আবার আমি অনেকগুলো গ্রুপের সদস্য। এসব গ্রুপে কয়েক লাখ ইউজার যুক্ত আছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাথেও যুক্ত হতে পারি। এর মানে হচ্ছে আমি দেশের সকল পত্রিকার পাঠক সংখ্যার সমান মানুষের কাছে তো একাই যেতে পারি। তারপরেও আছে গুগুল,টুইটার সং্যুক্ত বন্ধুরা।একা একজন কত মানুষের সাথে সংযুক্ত আমি।একটু ভাবুনত এই মানুষেরা কিন্তু বিশ্বের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আরও একটি বিষয় সকলের উপলব্ধি করার আছে। এমনকি কাগজের পত্রিকাগুলোরও অনলাইনের দাপট অপ লাইন থেকে অনেক বেশি। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যাবহার কারির সংখ্যা প্রতি সেকেন্ড বাড়ছে এবং তা দ্রুততার সঙ্গেই। ২০১৩ সালে ব্লগার কতৃক ইসলাম ধর্মের অবমাননার সূত্র ধরে সন্ত্রাস, ফেসবুকে পেজ খুলে ইসলাম ধর্মের নামে সন্ত্রাসের প্রসার, ব্লগারদেরকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে খুনিদেরকে লেলিয়ে দেয়া ও খুন করার মধ্য দিয়ে দেশে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের অপকর্মের কাজটিও করা হচ্ছে। আমাদের জন্য এই সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় শঙ্কাটি হচ্ছে, বাংলাদেশটিকে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর জন্য জঙ্গিরা ডিজিটাল মিডিয়াকে নিরাপদ ভাবে ব্যবহার করে যাওয়া। সরকার নিরাপদকে আপদে পরিনত করতে গেলেই তাদের সমর্থক কতৃক ব্যাঙ্গাত্বকভাবে সমালোচনায় অংশ নিয়ে দেশের মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার অপপ্রয়াসে যুক্ত হওয়া।কেবল অনলাইন মিডিয়া নয় অপ লাইনের মিডিয়া- কাগজের গুলিও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বিএনপির মুখপত্র আমার দেশ পত্রিকা এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসের যোগান দিয়ে নাশকতায় উৎসাহিত করেছে। সরকার আমার দেশের সম্পাদককে আটক না করলে সম্ভবত সেটি চরম বিপর্যয় ডেকে এনে সরকারের পতন পয্যন্ত হতে পারতো। ডিজিটালাইজেসনের সুবিধা গ্রহন করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি ফাঁস,বিচারকের টেলিফোন আলাপে আড়িপাতা, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী আপলোড করে অপপ্রচারের কথাও উল্লেখ করতে পারি। ২০১৩ সালের কথা এত তাড়াতাড়ি আমি মনে করি কারো স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়নি। সেই সময়ে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন, হেফাজতে ইসলাম ও গণজাগরণ মঞ্চ কর্তৃক পরস্পরবিরোধী অবস্থান গ্রহণ দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল সকলেই অবগত আছেন। রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকসহ সকলেরই তখন আলোচ্য বিষয় ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম ডিজিটাল সন্ত্রাসের ভয়াবয়হতা সম্পর্কিত। ডিজিটাল সন্ত্রাসকে ভিত্তি করে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা, হত্যা, গুম, আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ,স্বর্ন দোকান লুট,পবিত্র কোরানে আগুন দেয়া ইত্যাদি এতো ব্যাপকতা পেয়েছিল, এর আগে এদেশে কখনও এমনভাবে তা আর কখনই দেখা যায়নি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে টেলিভিশনের টকশো ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলে চা দোকানের আড্ডায় সর্বত্রই এর ব্যাপকতা মানুষের মুখে মুখে আলোচনার উপজিব্য ছিল। বর্বরতম আর একটি ব্যাপার উল্লেখ করা দরকার যে, এসব ডিজিটাল সন্ত্রাসের পাশাপাশি ইভ টিজিং, নারীর প্রতি সহিংসতা, ডিজিটাল পর্ণোগ্রাফি, মানি লন্ডারিং, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, স্প্যামিং, হ্যাকিং ইত্যাদির মাত্রা প্রতিনিয়ত ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই,তর্কের ও কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। পুরাতন আইন দিয়ে নতুন সমস্যার সমাধান করা যায়না।যুগের সাথে তালমিলিয়ে,উন্নত প্রযুক্তির ব্যাবহার করে সন্ত্রাসিরা ডিজিটাল সন্ত্রাসে লিপ্ত হচ্ছে,সেই ডিজিটাল সন্ত্রাস মোকাবেলা করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত প্রজর্ম্ম গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনি কাঠামোর মধ্যেও ডিজিটালাইজেসনের ব্যাবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।ডিজিটাল সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রথমেই প্রয়োজন ডিজিটাল আইন প্রয়োগকারি সংস্থা। আইন সৃজন করে তা সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য পুর্বক সংযোজন করা সময়ের দাবি। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন

ছবি

যুদ্ধাপরাধের বিচার নুরেমবার্গ থেকে ঢাকা: ঐতিহাসিক বিশ্লেষণশাহরিয়ার কবিরদৈনিক জনকন্ঠে চার খন্ডে প্রকাশিত হয়েছিলকেউ কোন অপরাধ করলে তার বিচার হতে হবে সমাজের এই নিয়ম সভ্যতার বোধের অন্তর্গত। হত্যা, নির্যাতন, সম্পদ লুণ্ঠন বা সম্পদহানি প্রাচীনকাল থেকেই মানব সমাজে অপরাধ হিসেবে গণ্য। এ সব অপরাধের বিচার ওশাস্তির বিধান ভারত, চীন, মেসোপটেমিয়া, গ্রীস ও মিসরের প্রাচীন ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে।যুদ্ধের সময় বিবদমান উভয় পক্ষকে কিছু নিয়ম বা রীতি মান্য করার বিধান মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম গৃহীত হয়েছে প্রাচীন ভারতবর্ষে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়। এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল পাঁচ হাজার বছরের আগে। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ‘মহাভারত’-এ এই যুদ্ধের কারণ, বিবরণ, যুদ্ধের অস্ত্র, কলাকৌশল, কূটনীতি প্রভৃতির পাশাপাশি যুদ্ধের আইনের উল্লেখ রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বিবদমান পা-ব ও কৌরবরা কতগুলো নিয়ম বা আইন মান্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে যুদ্ধের সময় উভয় পক্ষই এসব আইন ভঙ্গ করে যুদ্ধাপরাধ করেছিল। সেই সময় যুদ্ধাপরাধের জন্য জাগতিক শাস্তির বিধান ছিল না। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আইন লঙ্ঘনকারীরা যুদ্ধাপরাধের জন্য ঐশ্বরিক শাস্তি ভোগ করেছিলেন, যে শাস্তি থেকে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরও রেহাই পাননি। তাঁর অপরাধ ছিল প্রতিপক্ষকে অর্ধসত্য বলে প্রতারণার।কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর চীন, মেসোপটেমিয়া, মিসর ও গ্রীসে যুদ্ধের নিয়ম বা আইনের উল্লেখ সামরিক ইতিহাসে পাওয়া যাবে। আইন ও বিচারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছিল প্রাচীন গ্রীসে। এথেন্সের ক্ষমতাবান শাসক ও সমরনায়ক এ্যালিবিয়াদিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০-৪০৪)-এর বিচার হয়েছিল সিসিলির বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান পরিচালনাকালে যুদ্ধের আইন ভঙ্গের জন্য। এথেন্সের আদালতে তারঅনুপস্থিতিতে বিচার হয় এবং তাঁকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। পরে সিসিলি জয় করে ফিরে আসার পর এথেন্সবাসী তাকে বীর হিসেবে বরণ করে এবং আদালত শাস্তি প্রত্যাহার করে নেয়।বিশ শতকের আগে যুদ্ধকালে সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন প্রভৃতি অপরাধের জন্য বিচারের কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছি ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্বে। ঐতিহাসিক বাসিয়োনির মতেযুদ্ধাপরাধের জন্য প্রথম বিচারের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে ইতালি থেকে। ১২৬৮ সালে নেপলস-এর কনরাডিন ভন হোহেনস্টেফানের বিচার হয়েছিল যুদ্ধের আইন ভঙ্গের জন্য এবং তাকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছিল। এর এগারো বছর পর ১২৭৯ সালে ইংল্যান্ডে ‘ওয়েস্টমিন্স্টার আইন’ (স্ট্যাটিউট অব ওয়েস্টমিন্স্টার) পাস হয়, যেখানে আইন ভঙ্গের জন্য সেনাবাহিনীর বিচারের ক্ষমতা রাজাকে দেয়া হয়েছে। এই আইনের অধীনে ১৩০৫ সালে স্কটল্যান্ডের স্যার উইলিয়াম ওয়ালেসের (১২৭২-১৩০৫) বিচার হয়। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের। এ ছাড়াও ওয়ালেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যুদ্ধের সময় বয়স ও নারীপুরুষ নির্বিশেষে গণহত্যার জন্য। ইংল্যান্ডের আদালত তাঁকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করলেও স্কটল্যান্ডে স্যার উইলিয়াম ওয়ালেস স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক ও জাতীয় বীর হিসেবে আজও সম্মানিত।ইতালিতে হোহেনস্টেফান এবং ইংল্যান্ডে উইলিয়াম ওয়ালেসের বিচার হয়েছিল সেই সব দেশের রাজার আইনে, যাছিল নির্দিষ্ট দেশের জন্য প্রযোজ্য। তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালত স্থাপনের প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে অস্ট্রিয়া ১৪৭৪ সালে স্যার পিটার ভন হাগেনবাখের (১৪২০-১৪৭৪) বিচারের ক্ষেত্রে। বার্গান্ডির ডিউক চার্লস (যিনি ‘চার্লস দি টেরিবল’ নামে বেশি পরিচিত) ব্রেইসাখের শাসক নিযুক্ত করেছিলেন হাগেনবাখকে। অস্ট্রিয়া তখন রোমান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। ব্রেইসাখের শাসক হিসেবে হাগেনবাখ হত্যা ও নির্যাতনের বিভীষিকাময় রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। হাগেনবাখের দখল থেকে ব্রেইসাখকে মুক্ত করে অস্ট্রিয়া ও তার মিত্ররা। হাগেনবাখকে বিচারের নির্দেশ দেন রোম সম্রাট। এই বিচারের জন্য রোমান সাম্রাজ্যের ২৮টি দেশ থেকে বাছাই করা ২৮ জন বিচারকের সমন্বয়ে একটি বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছিল। এই আদালতে হাগেনবাখের বিচার হয়েছিল ঈশ্বর ও প্রকৃতির আইন লঙ্ঘনের জন্য। তার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, অবৈধ কর আদায়, সম্পত্তি দখল ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছিল। হাগেনবাখ অবশ্য আদালতে বলেছেন, তিনি সবই করেছেন তার নিয়োগদাতা বার্গান্ডির ডিউকের নির্দেশে। এই বিচারকার্য শুরুর এক বছর আগে ডিউক চার্লস মারা গিয়েছিলেন। আদালত হাগেনবাখের যুক্তি খারিজ করে তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে। রায়ে তার নাইট উপাধি বাতিল করে তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। ৯ মে ১৪৭৪ তারিখে শিরñেদের মাধ্যমে হাগেনবাখের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। হাগেনবাখের এই বিচারের মাধ্যমে যুদ্ধআইনে ‘অধিনায়কের দায়বদ্ধতা’র (কমান্ড রেসপনসিবিলিটি) ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়,যা পরবর্তীকালে এ ধরনের বিচারের সূত্র হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। একই সঙ্গে এই বিচার ‘আন্তর্জাতিক আদালত’-এর ধারণাও প্রতিষ্ঠা করেছে।বিশ শতকের আগে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে একটি বহুল আলোচিত মামলা হচ্ছে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন হেনরি রীযের বিচার। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় (১৮৬১-১৮৬৫) হেনরি একটি কারাগারের দায়িত্বে ছিলেন। এই গৃহযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল ৩,৫৯,৫২৮। কারাগারে আটক যুদ্ধবন্দী মৃত্যুর সংখ্যা ২৪,৮৬৬। ক্যাপ্টেন হেনরির বিরুদ্ধে ১৩টি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল, যার ভেতর হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও আঘাত অন্যতম। ক্যাপ্টেন হেনরির বিচার হয়েছিল সামরিক আদালতে, যার প্রধান বিচারকছিলেন মেজর জেনারেল লিউ ওয়ালেস (‘বেনহুর’ উপন্যাসের রচয়িতা)। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটা ছিল প্রথম যুদ্ধাপরাধের বিচার। বিচারে ক্যাপ্টেন হেনরিকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।যুদ্ধের ব্যাপক নিষ্ঠুরতা, হত্যা ও নির্যাতনের বিভীষিকা গত শতাব্দীতে আমরা প্রথম প্রত্যক্ষ করি প্রথম মহাযুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৮)। চার বছরের এই মহাযুদ্ধ মানব জাতির বিবেককে প্রচ-ভাবে আলোড়িত করেছিল। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য জার্মানিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই।ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স যুদ্ধ চলাকালে পৃথকভাবে দাবি করেছে- যারা স্থলে ও সমুদ্রে যুদ্ধ ও মানবতার আইন লঙ্ঘন করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। ১৯১৮ সালে ৫ অক্টোবর ফরাসী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল- আন্তর্জাতিক আইন ও মানব সভ্যতার মূলনীতি অগ্রাহ্য করে যারা যুদ্ধ করেছে তারা শাস্তি থেকে অব্যাহতি পেতে পারে না। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী লুই বারথু ১৯১৭ সালের ৩ নবেম্বর বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি পেতেই হবে এবং এটা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।১৯১৮ সালের ১১ নবেম্বর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইংল্যান্ডের লর্ড হাই চ্যান্সেলর ভাইকাউন্ট বিরকেনহেড দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির দায়িত্ব ছিল ১ম বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের ঘটনা সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রণয়ন করা। এরপর ভার্সাইতে মিত্রশক্তির সঙ্গে জার্মানির বৈঠকে ঐতিহাসিক ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯১৯ সালের ২৮ জুন। এই চুক্তি সম্পর্কে জার্মানি পরে বলেছে তাদের এতে স্বাক্ষর প্রদানে বাধ্য করা হয়েছিল।ভার্সাই চুক্তির ৪৪০টি অনুচ্ছেদের ভেতর জার্মানির প্রতি শাস্তিমূলক বহু ধারা রয়েছে। এই চুক্তির সপ্তম পর্বে ২২৭, ২২৮ ও ২২৯ অনুচ্ছেদে জার্মানির সম্রাট দ্বিতীয় উইলিয়াম হোহেনযোলেনসহ তদন্তে অভিযুক্ত সকল জার্মান যুদ্ধাপরাধীকে সামরিক আদালতে বিচারের কথা বলা হয়েছে।ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী মিত্রশক্তি প্রথমে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ১৯ হাজার ব্যক্তির তালিকা তৈরি করেছিল। এই তালিকা বলা বাহুল্য জার্মানির কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। জার্মান প্রতিনিধিরা বলেছেন এত বেশি ব্যক্তির বিচারের যেমন সমস্যা রয়েছে- এই বিচার শুরু হলে জার্মানিতে গৃহযুদ্ধ বাধতে পারে। মিত্রশক্তি এই যুক্তি মেনে নিয়ে যাচাই বাছাই করে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৯৫ জন এবং শেষে চূড়ান্তভাবে ৪৫ জন যুদ্ধাপরাধীর একটি তালিকা জার্মানিকে প্রদান করে।জার্মানির কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম যুদ্ধে পরাজয়ের পর নেদারল্যান্ডে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নেদারল্যান্ডস নিরপেক্ষ ছিল। এ ছাড়া কাইজার উইলিয়াম আত্মীয়তার সূত্রে নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। সেই সময় ইউরোপের অধিকাংশ রাজ পরিবার একটি অপরটির সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ ছিল।মিত্রশক্তি আশা করেছিল কাইজারের বিচার সম্ভব না হলেও ৪৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার জার্মানি করবে। কিন্তু সমস্যা ছিল বিচারের আইন ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে এবং জার্মান সরকারের সদিচ্ছার। জার্মানির আইন এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও আমেরিকার আইন এক নয়। এ ছাড়া বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে জার্মান ভাষায়, মিত্রশক্তির সাক্ষীদের জন্য যা ছিল অস্বস্তিকর ও বিরক্তিকর। বিচারে জার্মান সরকারের আগ্রহও আন্তরিকতার অভাব লক্ষ্য করে কিছু ব্রিটিশ সাক্ষী শেষ পর্যন্ত লাইপযিগের আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।জার্মান সুপ্রীমকোর্ট শেষ পর্যন্ত মাত্র ২২ জন যুদ্ধবন্দীর বিচার করেছিল যাদের ভেতর সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল তিন বছর কারাদন্ড যার এই শাস্তি হয়েছে তার অপরাধ ছিল সে মিত্রশক্তির একটি সমুদ্রগামী হাসপাতাল জাহাজ টর্পেডোর আঘাতে ডুবিয়ে দিয়েছিল- যে জাহাজে দুই শতাধিক আহত ও অসুস্থ সৈন্য এবং সাধারণ রোগী ছিল। ঠান্ডা মাথায় দুই শতাধিক নিরস্ত্র, আহত ও অসুস্থ মানুষকে হত্যার জন্য ওবেরলেফট্যানেন্ট সি প্যাটজিগকে মাত্র তিন বছরের কারাদ- প্রদান করে ‘লাইপজিগ ট্রায়াল’ ন্যায়বিচারের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।মানব জাতির ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যা, নির্যাতন, ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) সময়। জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি বাহিনী, ইতালিতে মুসোলিনির ফ্যাসিস্টবাহিনী এবং প্রাচ্যে জেনারেল তোজোর রাজকীয় জাপানী বাহিনীর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কথা বিশ্ববাসী কখনও ভুলবে না। হিটলারের নাৎসি বাহিনী এবং তাদের সহযোগী গেস্টাপোও অন্যান্য বাহিনী যেভাবে ইহুদি, কমিউনিস্ট ও অজার্মানদের হত্যা করেছে সভ্যতার ইতিহাসে তার কোনও নজির নেই। যুদ্ধের ইতিহাসবিদরা নাৎসিদের এই নৃশংসতাকে আখ্যায়িত করেছেন ‘হলোকস্ট’ বা ‘শোয়াহ্’ নামেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মিত্রশক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা প্রদান করে। ১৯৪৩ সালে ৩০ অক্টোবর ঐতিহাসিক ‘মস্কো ঘোষণা’ স্বাক্ষরিত হয়। এতে বলাহয়েছে, অক্ষশক্তির যে সব রাজনৈতিক নেতা ও সমর অধিনায়কদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের গ্রেফতার করে বিচার করা হবে। মস্কো ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৪৫ সালের ৪-১১ ফেব্রুয়ারি ইয়াল্টা কনফারেন্সে মিলিত হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল এবং সোভিয়েত রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্টালিন। এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় বিজয়ের পর মিত্রশক্তি সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে। শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে তিন দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা সম্মিলিতভাবে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করবে।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ইয়াল্টা সম্মেলনে চার্চিল বলেছিলেন, যুদ্ধজয়ের পর দেরিনা করে পরাজিত সব নাৎসি নেতাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে। স্টালিন বলেছিলেন আমাদের দেশে আমরা কাউকে বিচার না করে শাস্তি দিই না। বিরক্ত চার্চিল বলেছিলেন, আমরা বিচার করেই তাদের ফাঁসিতে ঝোলাব।ইয়াল্টা সম্মেলনের পর মিত্রশক্তি যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা ও প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। তাদের সামনে ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতা- প্রয়োজনীয় আইন এবং আন্তরিকতার অভাব ঘটলে কিভাবে যুদ্ধাপরাধীরা বিচার ও শাস্তি থেকে অব্যাহতি লাভ করে। ১৯৪৫ সালের ৮ আগস্ট মিত্রশক্তি ‘লন্ডন চুক্তি’ স্বাক্ষর করে। এতে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল’-এ। ট্রাইব্যুনালের নীতি ও কার্যবিধি এই চুক্তির ভেতর অনুমোদন করা হয়। এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন জাস্টিস এইচ জ্যাকসন, ফ্রান্সের অস্থায়ী সরকারের পক্ষে রবার্ট ফ্যালকো, যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সরকারের পক্ষে জোউইট সি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকারের পক্ষে আই নিকিশেঙ্কো ও এ ট্রাইনিন।এই চুক্তি অনুযায়ী মিত্রশক্তির চারটি দেশ ট্রাইব্যুনালের জন্য নিজ নিজ দেশের আইনজীবী ও বিচারক নিয়োগ চূড়ান্ত করে। যুক্তরাষ্ট্র ‘আন্তর্জাতিক সামরিক আদালত’ (আইএমটি)-এর প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি রবার্ট এইচ জ্যাকসনকে নিয়োগ করে।২০ নবেম্বর ১৯৪৫ তারিখে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম আরম্ভ হয়। এর আগে ১৮-১৯ অক্টোবর মিশ্রশক্তির আইনজীবীরা ‘আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতে’ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২৪ জন শীর্ষস্থানীয় নাৎসি নেতা ও সমরনায়ক এবং ৭টি সংগঠনকে সুপরিকল্পিতভাবে লাখ লাখ মানুষ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে ৬৫ পৃষ্ঠার অভিযোগনামা পেশ করেন। বিচার শুরু হওয়ার আগে নাৎসি পার্টির প্রধান হিটলারএবং তার দুই শীর্ষ সহযোগী হিমলার ও গোয়েবলস আত্মহত্যা করার জন্য বিচার থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। অভিযুক্তদের তালিকায় ১ নম্বর আসামি ছিলেন ডেপুটি ফুয়েরার মার্টিন বোরমান। গ্রেফতারের আগেই তিনি আত্মগোপন করেছিলেন।১৯টি তদন্ত দল অভিযুক্ত নাৎসি নেতাদের দুষ্কর্ম সম্পর্কে তদন্ত করেছেন। নাৎসি সরকারের দলিল, চিঠিপত্র, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র সংগ্রহ করা ছাড়াও তারা অনেক বন্দী নির্যাতন শিবির পরিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের জবানবন্দী নথিবদ্ধ করেছিলেন।ব্যক্তির বিচারের পাশাপাশি নুরেমবার্গে ৭টি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কর্মকা- সম্পর্কে তদন্ত ও বিচার হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে- ১) নাৎসি পার্টির নেতৃত্ব, ২) রাইখ সরকারের মন্ত্রিসভা, ৩) এসএস, ৪) গেস্টাপো ৫) এসডি, ৬) এসএ এবং ৭) জার্মান হাই কমান্ড। বিচারে ৪টি সংগঠন দোষী প্রমাণিত হয়েছেএবং রায়ে এদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য ৭টি নীতি বা ধারা প্রণয়ন করা হয়েছিল। ৬ নং ধারায় বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক আইনে যে সব অপরাধ শাস্তিযোগ্য বলে নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ক) শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, খ) যুদ্ধাপরাধ ও গ) মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এরপর এই তিনটি অপরাধের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর আগে এত নির্দিষ্টভাবে এই সব অপরাধ আইনশাস্ত্রে বিধিবদ্ধ হয়নি। নুরেমবার্গ নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানও অব্যাহতি পাবেন না। এই নীতিমালার ভিত্তিতেই প্রস্তুত করা হয়েছিল অভিযোগনামা।প্রত্যেক দেশের বিচার ব্যবস্থার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পশ্চিমে প্রধানত দুই ধরনের বিচার পদ্ধতিঅনুসরণ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তিদের ভেতর আমেরিকা ও বৃটেন অনুসরণ করে ‘দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি’ (অফাবৎংধৎরধষ ঝুংঃবস)। অন্যদিকে ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়ন অনুসরণ করে ‘অনুসন্ধানমূলক পদ্ধতি’ (ওহয়ঁরংরঃরাব ঝুংঃবস)। আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থার উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের দেশে আদালতে বিচারক থাকেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। সাধারণত দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে তারই ভিত্তিতে তিনি রায় দেন। অন্যদিকে ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশের আদালত প্রধানত বিচারককেন্দ্রিক। বিচারক নিজেও বাদী ও বিবাদীকে প্রশ্ন করতে পারেন, দুই পক্ষের আইনজীবীদেরও জেরা করতে পারেন এবং নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রায় দেন।লন্ডনে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের নীতি প্রণয়নের সময় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর কিছু পরিমার্জনসহ ‘দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি’ গ্রহণ করা হয়। এরপর প্রশ্ন উঠেছিল নতুন নীতিমালার ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা (জবঃৎড়ংঢ়বপঃরাব বভভবপঃ) সম্পর্কে। কোন অপরাধের বিচারের সময় বাদী পক্ষের আইনজীবীকে আদালতে বলতে হয় সেই অপরাধ আইনের কোন কোন ধারায় দন্ড যোগ্য। অপরাধ যখন সংঘটিত হয় তখন যে আইন বলবৎ ছিল সেই আইনে অপরাধীর বিচার হয়। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের নীতি ও আইন প্রণয়নের সময় মিত্রশক্তির আইনপ্রণয়নকারীদের এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হয়েছেজ্জ তারা নতুন কোন আইন তৈরি করতে যাচ্ছেন না যা আইনশাস্ত্রে ইতিপূবে বর্ণিত হয়নি। নুরেমবার্গে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ ও ‘শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধে’র বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রথমবারের মতো সূত্রবদ্ধ করা হলেও হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, বাধ্যতামূলক শ্রম, যৌনদাসত্ব, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতি প্রভৃতি বহু আগে থেকেই অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। জাস্টিস জ্যাকসন লন্ডন বৈঠকের শুরুতেই মিত্রশক্তির সহযোগীদের বলেছিলেন, আমরা এমন সব কর্মকান্ডের বিচার করতে যাচ্ছি যা আদিকাল থেকে অপরাধ হিসেবে পরিগণিত এবং প্রতিটি সভ্য দেশে যার বিচার করা হয়।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের নীতি ও কার্যবিধি প্রণয়নের সময় মিত্রপক্ষের আইনজীবীরা সম্ভাব্য সকল চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। জাস্টিস জ্যাকসন তার উদ্বোধনী ও সমাপনী ভাষণে প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য সমালোচনা ও বিরুদ্ধ যুক্তি অত্যন্ত মেধা ও দক্ষতার সঙ্গে খন্ডন করেছেন। একটি সমালোচনা নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এটি ছিল ‘বিজয়ীর বিচার’ (ঠরপঃড়ৎ’ং ঔঁংঃরপব)।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের উদ্বোধনী ভাষণে জাস্টিস জ্যাকসন এ বিষয়ে বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় এইযে, আদালত গঠন সহ আইনজীবী ও বিচারক সবই নিয়োগ করতে হয়েছে যুদ্ধে বিজয়ী মিত্রশক্তিকে পরাজিত অক্ষশক্তির অপরাধের বিচারের জন্য। অভিযুক্তদের বিশ্বব্যাপী আগ্রাসনের কারণে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ কেউ নেই বললেই চলে, যারা এই বিচারে আগ্রহী হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হয় পরাজিতদের বিচার করতে হবে বিজয়ীদের, নয় তো পরাজিতদের অপরাধের বিচারের ভার তাদের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়টির অকার্যকারিতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অপরাধীদের বিচার কার্যক্রম থেকে।অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের আপিলের সুযোগ নেই, এমনকি বিচারকদের সম্পর্কে আপত্তি উত্থাপনেরও কোন সুযোগ কার্যবিধিতে রাখা হয়নি। এ বিষয়ে অক্সফোর্ডের অধ্যাপক এ এল গুডহার্ট লিখেছেন, ‘তত্ত্বগতভাবে এই যুক্তি আকর্ষণীয় মনে হতে পারে, তবেতা যে কোন দেশের বিচারব্যবস্থার পরিপন্থী। এই যুক্তি মানতে হলে কোন দেশ গুপ্তচরদের বিচার করতে পারবে না। কারণ যে দেশের আদালতে সেই গুপ্তচরের বিচার হবে সেখানকার বিচারক তার শত্রুদেশের। এ ক্ষেত্রে কেউ নিরপেক্ষতার কথা বলতে পারে না। বন্দি গুপ্তচর বিচারকদের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতে পারে কিন্তু কোন অবস্থায় তাদের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে না। (ক্রমশ.)লর্ড রিট যেমন বলেছেন একই নীতি সাধারণ ফৌজদারি আইনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। একজন চোর নিশ্চয়ই অভিযোগ করতে পারে না তার বিচার কেন সৎ লোকেরা করছে।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে জাস্টিস জ্যাকসনের উদ্বোধনী ভাষণের মতোই আকর্ষণীয় ছিল তাঁর সমাপনী ভাষণ। ১৯৪৫-এর ২৬ জুলাই-এ প্রদত্ত এই ভাষণের উপসংহারে শেক্সপিয়ারের ‘রিচার্ড দি থার্ড’ নাটকেরএকটি উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ... অভিযুক্তরা বলছেন তারা হত্যা, হত্যার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের এই দীর্ঘ তালিকায় বর্ণিত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তারা এই বিচারের সামনে এমনভাবে নিজেদের দাঁড় করিয়েছেন যেভাবে রক্তরঞ্জিত গ্লচেস্টার দাঁড়িয়েছিলেন তার নিহত রাজার লাশের সামনে। এদের মতো গ্লচেস্টারও বিধবা রানীকে বলেছিলেন, আমি হত্যা করিনি। রানী জবাবে বলেছিলেন, ‘তাহলে বল তারা নিহত হয়নি, কিন্তু তারা মৃত।’ যদি এদের (অভিযুক্তদের) সম্পর্কে বলা হয় এরা নিরাপরাধ, তাহলে তা এমনই সত্য হবে যুদ্ধ বলে কিছু হয়নি, কেউ নিহত হয়নি, কোন অপরাধের ঘটনাও ঘটেনি।’অভিযুক্তরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় সকল অপরাধের দায় হিটলার, হিমলার ও গোয়েবলস-এর উপর চাপিয়েছিলেন, যারা জার্মানির আত্মসমর্পণের আগেই বার্লিনে ২৫ ফুট মাটির নিচে বাঙ্কারে সপরিবারে আত্মহত্যা করেছিলেন। এ বিষয়ে ব্রিটেনের প্রধান কৌঁসুলি স্যার হার্টলি শকরস তাঁর সমাপনী বক্তব্যেবলেছিলেন, ‘কেউ হয়ত অন্যদের চেয়ে বেশি অপরাধ করতে পারে, হতে পারে কেউ অপরাধ সংঘটনে অন্যদের চেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকায় ছিল । কিন্তু অপরাধ যদি গণহত্যা, দাসত্ব, বিশ্বযুদ্ধদুই কোটি মানুষের প্রাণহানির মতো গুরুতর হয়, যদি একটি মহাদেশ ধ্বংসের মতো এবং বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত দুঃখক্লেশ ও বেদনার কারণ হয় তখন কে কম অপরাধ করেছে আর কে বেশি করেছে তাতে এই ক্ষত মিটবে না। কেউ কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী, কেউ দায়ী কয়েক লক্ষের মৃত্যুর জন্য, এতে অপরাধের কোন তারতম্য ঘটছে না।’নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রক্রিয়া এবং এর মান সম্পর্কে অনেকে তখন অনেক কথা বলেছেন। নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের উকিলরা বলেছিলেন এই ট্রাইব্যুনালে তারা ন্যায় বিচার পাবেন না। তারপরও বিচার চলাকালে কয়েকজন শীর্ষ নাৎসি নেতা এই ট্রাইবুনালকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। নাৎসি নেতা হ্যান্স ফ্র্যাঙ্ক ছিলেন অধিকৃত পোল্যান্ডের গবর্নর জেনারেল। তিনি বলেছেন, ‘আমার বিবেচনায় এই বিচার হচ্ছেঈশ্বরের ইচ্ছাধীন আদালতে, যেখানে এডলফ হিটলারের আমলের দুঃসহ যাতনার পর্যালোচনা ও সমাপ্তি ঘটবে।’ হিটলারের যুদ্ধসামগ্রী নির্মাণ মন্ত্রী এ্যালবার্ট স্পিয়ার বলেছেন, ‘এই বিচার জরুরী। এমনকি একটি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রেও এসব ভয়াবহ অপরাধের সম্মিলিত দায় থাকে।’ অভিযুক্তদের একজন আইনজীবী ড. থিয়োডর ক্লেফিশ লিখেছেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া ও রায় সর্বোচ্চ পক্ষপাতহীনতা, বিশ্বস্ততা ও ন্যায়বোধ দাবি করে। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল এই সব দাবি মর্যাদার সঙ্গে পূরণ করেছে।এই বিশাল বিচারযজ্ঞের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সত্য ও ন্যায় অনুসন্ধান ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যাতেকারও ভেতর কোন সন্দেহ না থাকে।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে ৪টি মিত্র দেশের ৮ জন বিচারক ছিলেন যাদের একজন পূর্ণ সদস্য অপরজন বিকল্প সদস্য। বিচারকমন্ডলীর সভাপতি ছিলেন ইংল্যান্ডের লর্ড জাস্টিস জিওফ্রে লরেন্স। ৪টি দেশের ৫২ জন আইনজীবী ছিলেন সরকারের পক্ষে। প্রত্যেক দেশের এক মুখ্য আইনজীবী এবং কয়েকজন আইনজীবী ও সহকারী আইনজীবী ছিলেন, তবে সরকারি আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আদালতে সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস জ্যাকসন। তাঁর এই দুটি দীর্ঘ ভাষণ আন্তর্জাতিক আইনশাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে গণ্য করা হয়।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের একটি সচিবালয় ছিল। বিভিন্ন বিভাগে মোট ১৮ জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম দফা বিচারকালে ৬ জন ছিলেন সচিব, ২ জন মার্শাল, অনুবাদ বিভাগের প্রধান ছিলেন ৩ জন, প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান ১ জন, সাক্ষীদের তলব ও সাক্ষ্য প্রমাণ বিভাগের ১ জন প্রধান, অভিযুক্তদের তথ্য বিভাগের প্রধান ১ জন, দলিল ও রেকর্ডের বিভাগের দায়িত্বে ১ জন, রেকর্ড সম্পাদক ১ জন এবং মুদ্রণ বিভাগের পরিচালক ১ জন। এই সচিবালয়ের বিভিন্ন বিভাগে তিন শতাধিক কর্মচারী ছিলেন। জনশক্তির বিবেচনায় নুরেমবার্গ ট্রায়ালের দ্বিতীয় উদাহরণ বিচারের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। এই বিচারকার্যের বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণের জন্যআমেরিকা থেকে ৬৪০ জন সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তি নুরেমবার্গ এসেছিলেন যাদের ভেতর ১৫০ জন ছিলেন আইনজীবী।নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করলেও নুরেমবার্গ ট্রায়ালের রেকর্ড কখনও ভাঙা যাবে না। বিচার চলাকালে কয়েক শ’ সৈন্য ৭৫ মি.মি. কামান সমেত প্যালেস অব জাস্টিসের চতুর্দিকে টহল দিত। শতাধিক মিলিটারি পুলিস আদালত ভবনের ভেতরে টহল দিত। ১৯৪৬-এর ৩০ সেপ্টেম্বর সেদিন আদালতের রায় ঘোষণা করা হয় সেদিন অতিরিক্ত ১০০০ সৈন্য নিরাপত্তার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল।১৯৪৯ সালের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আদালত বার্লিনে স্থানান্তর করা হয়। অন্যান্য মিত্র দেশের আদালতেও ১৬০০ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে, যারা পরে ধরা পড়েছেন।ট্রাইব্যুনালে ৪টি ভাষায় (ইংরেজী, ফরাসী, রুশ ও জার্মান) বিচারিক কার্য সম্পাদিত হয়েছে। আদালতের৪০৩টি প্রকাশ্য অধিবেশনে দুই শতাধিক সাক্ষী উপস্থিত হয়ে অভিযুক্তদের পক্ষে ও বিপক্ষে মৌখিক সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। ১৮০৯ জন সাক্ষীর এফিডেভিট আদালতে প্রদান করা হয়েছে। ১৫৫০০০ ব্যক্তির স্বাক্ষরকৃত ৩৮ হাজার এফিডেভিট প্রদান করা হয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে। এসএসদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে ১৩৬২১৩টি এফিডেভিট। ১০,০০০ এসএ-র পক্ষে, ৭,০০০ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এবং ২,০০০ এফিডেভিট গেস্টাপোদের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে। প্রায় তিশ লাখ ফুট প্রামাণ্যচিত্রের ফিল্ম পরীক্ষা করে এক লাখ ফুট নুরেমবার্গে আনা হয়েছিল। ২৫,০০০-এরও বেশি আলোকচিত্র প্রমাণ হিসেবে নুরেমবার্গে আনা হয়েছিল। এর ভেতর ১৮,০০০ আলোকচিত্র ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মিত্রপক্ষের আইনজীবীরা তিন হাজার টন রেকর্ড আদালতে প্রদান করেছিলেন।নুরেমবার্গের আদালতে ৪০০ দর্শনার্থী/পর্যবেক্ষককে অনুমতি দেয়া হয়েছিল প্রাত্যহিক বিচারকার্য প্রত্যক্ষ করার জন্য।পর্যবেক্ষকদের তালিকায় মন্ত্রী, বিচারক, আমলা, আইনপ্রণেতা ও মানবাধিকার কর্মীরা ছিলেন। এ ছাড়া ২৩টি দেশ থেকে ৩২৫ জন সাংবাদিক প্রতিদিন উপস্থিত থেকে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার করেছেন।জাস্টিস জ্যাকসন পরে বলেছিলেন, প্রাথমিকভাবে তিনি প্রমাণের জন্য নির্ভর করেছেন নাৎসি নেতাদের লিখিত বক্তব্য, সরকারী দলিল এবং পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ওপর। তিনি সাক্ষীর ওপর বেশি নির্ভর করেননি এ কারণে যে, প্রতিপক্ষ বলতে পারে সাক্ষীদের প্রভাবিত করে শিখিয়ে-পড়িয়ে আনা হয়েছে। (ক্রমশ.)ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে আমরা বিস্তারিত জেনেছি অসউইজসহ বিভিন্ন বন্দীশিবিরে কী নৃশংসভাবে ইহুদি বন্দীদের গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।১ অক্টোবর ১৯৪৬ সালে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে প্রথম পর্যায়ে শীর্ষস্থানীয় ২৪ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারে ১২ জনকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। ৩ জনকে যাবজ্জীবন, ২ জনকে ২০ বছর, ১ জনকে ১৫ বছর এবং ১ জনকে ১০ বছর কারাদ- প্রদান করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩ জন খালাস পায়। অভিযুক্ত বাকি দুজনের ভেতর জার্মান শ্রমিক ফ্রন্ট ডিএএফ-এর প্রধান গুস্তাভ ক্রুপকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য মেডিকেল বোর্ড বিচারের সম্মুখীন হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করে। অপর অভিযুক্ত ডাঃ রবার্ট লাই বিচার শুরুহওয়ার আগে ২৫ অক্টোবর ১৯৪৫ তারিখে আত্মহত্যা করেন। নাৎসি পার্টির সেক্রেটারি, ডেপুটি ফুয়েরার মার্টিন বোরমানের অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছিল এবং তাঁকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়।নুরেমবার্গ ট্রায়াল বলতে সাধারণভাবে প্যালেস অব জাস্টিসে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনালে’র প্রথম বিচারকে গণ্য করা হয়, যার সময়কাল ছিল ১০ মাস। ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত নুরেমবার্গের প্যালেস অব জাস্টিসে আরও ১২টি মামলার বিচার হয়েছিল যেখানে ২০০ জন নাৎসি রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা ও পেশাজীবীর বিচার হয়েছিল। এদের ভেতর ২৪ জনকে প্রথমে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল, পরে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। অবশিষ্টদের ২০ জনকে যাবজ্জীবন এবং ৯৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩৫ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। গুরুতর অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে ৪ জনকে বিচার থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ৪ জন বিচার চলাকালে আত্মহত্যা করেছিলেন।উপরোক্ত ১২টি মামলা ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল’-এ হয়নি। কারণ প্রথম ২৪ জনের মামলা চলাকালে চার মিত্রশক্তির ভেতর বিভিন্ন বিষয়ে গুরুতর মতপার্থক্য ঘটেছিল। ১৯৪৫-এর ৩০ আগস্ট পরাজিতজার্মানির রাষ্ট্রীয় কর্মকা- পরিচালনার জন্য যখন মিত্রশক্তির কন্ট্রোল কাউন্সিল (এসিসি) গঠিত হয় তখনও বিচারের পদ্ধতি সম্পর্কে শরিকদের ভেতর মতপার্থক্য যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। এসিসির নীতিমালায় বলা হয়েছে শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্মিলিতভাবে করা হলেও যারা পরে যার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ধরা পড়বে সেই দেশ তাদের বিচার করবে। ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইবুনালে’ (আইএমটি) ২৪ জন শীর্ষ নাৎসি নেতার বিচার শেষ হওয়ার পর ‘আইএমটি’র বিলুপ্তি ঘটে। একই ভবনে আমেরিকা গঠন করে ‘নুরেমবার্গ মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল (এনএমটি)।এই ট্রাইব্যুনালে নিম্নোক্ত ১২টি মামলা হয়েছিল১। ডক্টর্স ট্রায়াল (৯ ডিসেম্বর ১৯৪৬২০ আগস্ট ১৯৪৭) : বিচার হয়েছিল ২৪ জনের, ২। মিল্চ্ ট্রায়াল (২ জানুয়ারি১৬ এপ্রিল ১৯৪৭) : বিচার হয়েছিল ১ জনের, ৩। জাজেস ট্রায়াল (৫ মার্চ৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭): বিচার হয়েছিল ১৬ জনের, ৪। পল ট্রায়াল (৮ এপ্রিল ৩ নবেম্বর ১৯৪৭) : বিচার হয়েছিল ১৮ জনের, ৫। ফ্লিক ট্রায়াল (১৯ এপ্রিল ২২ ডিসেম্বর ১৯৪৭) : বিচার হয়েছিল ৬ জনের, ৬। আই জি ফারবেন ট্রায়াল (২৭ আগস্ট ১৯৪৭ ৩০ জুলাই ১৯৪৮) : বিচার হয়েছিল ২৪ জনের, ৭। হস্টেজেস ট্রায়াল (৮ জুলাই ১৯৪৭ ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮) : বিচার হয়েছিল ১২ জনের, ৮। রুশা বা রাশিয়া ট্রায়াল (২০ অক্টোবর ১৯৪৭ ১০ মার্চ১৯৪৮) : বিচার হয়েছিল ১৫ জনের, ৯। আইনসাজ গ্রুপেন ট্রায়াল (২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ ১০ এপ্রিল ১৯৪৮): বিচার হয়েছিল ২৭ জনের, ১০। ক্রুপ ট্রায়াল (৮ ডিসেম্বর ১৯৪৭ ৩১ জুলাই ১৯৪৮) : বিচার হয়েছিল ১২ জনের, ১১। মিনিস্ট্রিজ ট্রায়াল (৬ জানুয়ারি ১৯৪৮ ১৩ এপ্রিল ১৯৪৯) : বিচার হয়েছিল ২১ জনের, ১২। হাই কমান্ড ট্রায়াল (৩০ ডিসেম্বর ১৯৪৭ ২৮ অক্টোবর ১৯৪৮) : বিচার হয়েছিল ১৪ জনের।উপরোক্ত ১২টি মামলাসহ আমেরিকান মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল ১৯৪৫ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ইউরোপ, জাপান ওদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ৮০৯টি মামলা পরিচালনা করেছে যেখানে বিচার হয়েছে ১৬০০ জন আসামির। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ৯৩৭ জনের বিচার করেছে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স করেছে ২১০৭ জনের বিচার ।আমেরিকা ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্স ও ব্রিটেন তাদের অধিকৃত জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। এসব বিচারের ভেতর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১) ডাচাউ ট্রায়ালস, ২) অসউইজ ট্রায়াল, ৩) বেলসেন ট্রায়াল, ৪) ফ্র্যাঙ্কফুর্ট-অসউইজ ট্রায়াল, ৫) বুখেনওয়াল্ড ট্রায়াল এবং ৬) নেউয়েনগামে ট্রায়াল। এই ৬টি মামলায় ১০৯ নাৎসি যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও শাস্তি হয়েছে। সবচেয়েঅধিকসংখ্যক নাৎসির বিচার হয়েছে অসউইজ ট্রায়ালে। এই মামলায় ৩৯ জন অভিযুক্তের ভেতর ২০ জনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। এর বাইরে নাৎসিদের সহযোগীদেরও বিচার হয়েছে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, রুমানিয়া, ফ্রান্স, পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।নুরেমবার্গ ট্রায়াল সম্পর্কে বলা হয় আইন শাস্ত্রের ইতিহাসে এত বড় বিচার কখনও হয়নি। এই বিচার আন্তর্জাতিক আইনকে সমৃদ্ধ করেছে, সভ্যতার ইতিহাসে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার ও শাস্তির বোধ প্রতিষ্ঠা এবং দেশে দেশে অনুরূপ অপরাধ বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর আগে বা পরে কোন দেশের ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থানকারী সামরিক-অসামরিক নেতৃবৃন্দকে কখনও আদালতের কাঠগড়ায় এভাবে দল বেঁধে দাঁড়াতে হয়নি যেমনটি হয়েছে নুরেমবার্গে। একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিমন্ডলী কিংবা কোন দল বা সংগঠন যত শক্তিশালী ও ক্ষমতাসম্পন্ন হোক না কেন কেউই আইনের উর্ধে নয় নুরেমবার্গের বিচার এই বোধটিও প্রতিষ্ঠা করেছে।টোকিও ট্রাইব্যুনাল আয়োজন ও আড়ম্বরের দিক থেকে নুরেমবার্গের কাছাকাছি হলেও রাজনৈতিক কারণে, বিশেষভাবে আমেরিকার প্রয়োজনে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচার না করায় এই বিচার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইতিহাসে নতুন কোন মাত্রা যুক্ত করতে পারেনি। এরপর ম্যানিলা, বসনিয়া, রুয়ান্ডা, যুগোসøাভিয়া, সিয়েরা লিওন, কম্বোডিয়া ও ইস্ট তিমুরে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধও যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালত গঠন করা হয়েছে কিংবা পূর্বে গঠিত আন্তর্জাতিক আদালতে এসবের বিচার হয়েছে।এসব বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের রায়ে অপরাধের বৈশিষ্ট্য এবং বিচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিবেচনা ও বিচারপদ্ধতি নিঃসন্দেহে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারণা ও মাত্রা সংযোজিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা সমৃদ্ধ হয়েছে। একাধিক কারণে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার জাতীয় ওআন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায়ও গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা সংযোজন করেছে।নুরেমবার্গের ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইবুনাল’ (আইএমটি)-এর সঙ্গে ঢাকার ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনাল’ (আইসিটি)-এর প্রধান মিল হচ্ছে ন্যায়বিচারের দর্শন ও চেতনাগত। আমরা যদি মনেকরি ‘গণহত্যা’ ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ ‘শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ’, ‘যুদ্ধাপরাধ’ প্রভৃতি সাধারণ হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুন্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞের চেয়ে অনেক ভয়াবহ ও গুরুতর অপরাধ তাহলে অপরাধীদের অবশ্যই বিচার করতে হবে যুদ্ধের ভিকটিমদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের স্বার্থে, ভবিষ্যতে মানবজাতিকে গণহত্যা ও যুদ্ধের অভিশাপ থেকে মুক্তি প্রদান এবং সভ্যতার বোধ নির্মাণের প্রয়োজনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রশক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সরকার এই উদ্দেশ্যে বিশেষ আইন প্রণয়ন করে বিশেষ ট্রাইবুনালে এসব অপরাধের বিচারের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠাকরেছে। নুরেমবার্গের ‘আইএমটি’-র সঙ্গে ঢাকার ‘আইসিটি’-র পার্থক্য হচ্ছে প্রথমটি ছিল আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল এবং দ্বিতীয়টি জাতীয় বা দেশীয় ট্রাইবুনাল। এছাড়া প্রথমটি ছিল সামরিক আদালত, দ্বিতীয়টি অসামরিক আদালত। (ক্রমশ)পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশ, আমেরিকা, কানাডা, রাশিয়া, ইসরাইল ও আরও কয়েকটি দেশ যুদ্ধাপরাধ সহ মানবতাবিরোধী বহু কর্মকান্ড যা আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির পরিপন্থী সেসব তাদের দেশীয় আইনে সংজ্ঞায়িত করে বিচারের ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে। নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালে ‘গণহত্যা’ স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়নি। ঢাকার ট্রাইবুনাল গণহত্যাকে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে এবংএই ট্রাইবুনালে অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রথম রায়ে এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের আগে কোনও দেশের নিজস্ব আইনে গণহত্যা (মবহড়পরফব)-কেঅপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।ইংরেজিতে দুটি শব্দ সধংং শরষষরহম ও মবহড়পরফব-এর বাংলা গণহত্যা, কিন্তু দুটির অর্থ এক নয়। সধংং শরষষরহম হচ্ছে নির্বিচারে হত্যা, যা বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের পর। কিন্তু এই সধংং শরষষরহম দ্রুত মবহড়পরফব-এ রূপান্তরিত হয়েছে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় বিশেষভাবে হিন্দুরা। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং স্বাধীনতার পক্ষের বাঙালি জাতি। একটি নৃগোষ্ঠী, সম্প্রদায় ও জাতিকে যখন সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে হত্যা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় নিশ্চিহ্নকরণের উদ্যোগ নেয়া হয় সেটা মবহড়পরফব. গণহত্যা বিশেষজ্ঞ মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আর জে রুমেল এই ধরনের গণহত্যাকে আরও বিভাজন করেছেন। একটি হচ্ছে সরকার বা রাষ্ট্র কর্তৃক, অপরটি হচ্ছে সরকারের বাইরের কোন গোষ্ঠী, দল বা সম্প্রদায় কর্তৃক। সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে রুমেল অভিহিত করেছেন ফবসড়পরফব হিসেবে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে সধংং শরষষরহম, মবহড়পরফব, ঢ়ড়ষরঃরপরফব ও ফবসড়পরফব সব ধরনের হত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আইএমটির চেয়ে আইসিটির অবস্থান স্বচ্ছ এবং নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। দেশীয় আইন ও দেশীয় আদালতে গণহত্যার বিচার করে বাংলাদেশ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, গত শতাব্দীতে গণহত্যার শিকার অথচ বিচারবঞ্চিত এমন বহু দেশের জন্য তা অনুকরণযোগ্য বিবেচিত হবে।যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল যে বিশাল আয়োজনের পাশাপাশি আইনী লড়াইয়ের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আইএমটির প্রতিদিনের ধারাবিবরণী পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় বিশ্বের বিচারব্যবস্থায় তা এক অনন্য অধ্যায়, অতীতে যেমনটি দেখা যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশে আইসিটির আয়োজন আইএমটির আয়োজনের তুলনায় কিছুই নয়। কিন্তু যে সীমিত সম্পদ, লোকবল ও রসদ সম্বল করে ঢাকার ট্রাইব্যুনাল যাত্রা শুরু করেছে, দশ মাসের ভেতর একটি মামলার শুনানি শেষ করে রায় দিয়েছে তাতে সংশ্লিষ্টদের দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃঢ়তা প্রতিফলিত হয়েছে।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছিল অপরাধ সংগঠনের অব্যবহিত পরে অথচ বাংলাদেশে বিচার শুরু হয়েছে প্রায় চল্লিশ বছর পর। সময়ের ব্যবধানে বহু প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীমৃত্যুবরণ করেছেন, বহু তথ্যপ্রমাণও হারিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে অধিকাংশ সময় ক্ষমতায়ছিল ’৭১-এর গণহত্যাকারীরা এবং তাদের সহযোগীরা। ক্ষমতায় থাকার সুযোগে তারা বহু তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছে এবং পাঠ্যপুস্তক ও প্রচার মাধ্যম থেকে ’৭১-এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ শুধু নয় সমগ্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলতে চেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাহীনতার এক অন্ধকার সময়ের ভেতর। যাদের অনেকে পাকিস্তানী লেখক এবং তাদের বাংলাদেশী দোসরদের মিথ্যাচারের শিকার। তার মনে করে ’৭১-এ তিরিশ লাখ মানুষের গণহত্যা, সোয়াচার লাখ নারীর পাশবিক নির্যাতন ইত্যাদি পরিসংখ্যান অতিরঞ্জিত। তারা মনে করে ’৭১-এ কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, পশ্চিম পাকিস্তানের ভাইদের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের ভাইদের কিছু রাজনৈতিক বিষয়ে মতপার্থক্যকে হিন্দু ভারত গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত করেছে এবং এই গৃহযুদ্ধের সুযোগে ভারত পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ ভারতের এই চক্রান্তের প্রধান সহযোগী ছিল এবংএখনও ভারতের স্বার্থে কাজ করছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে এদেশের মানুষের অনন্যসাধারণ ত্যাগ, জীবনদান, শৌর্যবীর্যের পাশাপাশি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা নৃশংসতম গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ যেমন সংঘটিত হয়েছে, গণহত্যার একই নৃশংসতায় হত্যা করা হয়েছে ইতিহাসের এই অমোঘ সত্য। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঢাকায় আইসিটি যে রায় দিয়েছে তা ইতিহাসের বহু বিস্মৃত সত্যকে মিথ্যার অন্ধকার বিবর থেকে মুক্ত করেছে।আইসিটির প্রথম রায়ে গণহত্যার নৃশংসতা উপলব্ধির জন্য বাচ্চু রাজাকারের কয়েকটি হত্যা, ধর্মান্তকরণ ও ধর্ষণের উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাচ্চু রাজাকার যাদের হত্যা করা হয়েছে ধর্মীয় পরিচয়ে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের। রাজাকারদের গণহত্যার যে পদ্ধতি ফরিদপুরের নগরকান্দায় অনুসৃত হয়েছে সারা দেশের চিত্র তারই সমার্থক। এই রায়ের সমালোচনা করতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কিছু ভাড়াটেগণমাধ্যম, পেশাজীবী ও মানবাধিকার সংগঠন মন্তব্য করেছে অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন ধর্মপ্রচারক, ইসলামীচিন্তাবিদ তার বিচারের অর্থ হচ্ছে ইসলামকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, তার মৃত্যুদ- সরকারের ইসলামবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ ইত্যাদি। এরা মনে করেহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন প্রভৃতি অপরাধ ইসলামের সমার্থক। ১৯৭১ সালে ইসলামের দোহাই দিয়েই জামায়াতে ইসলামী গণহত্যা ও নারীধর্ষণ সহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী নৃশংস অপরাধকে বৈধতা দিয়েছিল। একজন ধর্মপ্রচারক কিভাবে ভিন্ন ধর্মের অনুসারী বস্তু জগৎ ও পার্থিব স্বার্থের বিপরীতে আধ্যাত্মিক জগতের অনুসারী আটজন সাধু সন্ন্যাসীকে হত্যা করতে পারে এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রয়োজন তারা মনে করে না। হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্মান্তরকরণের মতো নিষ্ঠুরতা কিভাবে অনুমোদন করা যায়? অঞ্জলী সাহাকে যেভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে, যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, যেভাবে তাকে দাহ করতে বাধা দেয়া হয়েছেএ ধরনের নৃশংসতার ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্টের পর পৃথিবীর কোথাও ঘটেনি। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর চেয়ে তাদের সহযোগীদের অপরাধের নৃশংসতা কোনও অংশে কম ছিল না। ঢাকার ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ বিষয়টি যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।নুরেমবার্গ ও টোকিও ট্রাইব্যুনাল চরিত্রগতভাবে ছিল সামরিক আদালত। আদালতের রায় ছিল চূড়ান্ত। এর বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়নি। ঢাকার ‘আইসিটি’র আইনে অভিযুক্তকে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি মানবাধিকারের বিবেচনায় নুরেমবার্গ ও টোকিওর চেয়ে মানসম্পন্ন।নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের যখন বিচার হয় তখন সমগ্র জার্মানি যুদ্ধবিধ্বস্থ। পৃথিবীর কোথাও অভিযুক্ত নাৎসিদের প্রতি সহানুভূতি জানাবার মতো কেউ ছিল না। ’৭১-এর গণহত্যার সময় সৌদি আরব তথা মুসলিম উম্মাহ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের বাঙালি সহযোগীদের পক্ষে ছিল। আমেরিকা, চীন, আফ্রিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের বহু দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের গণহত্যাকেসমর্থন করেছে। ২০০৯ সালে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী ও গণহত্যাকারীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণের পর পরই অপরাধীদের প্রধান দল জামায়াতে ইসলামী বিচার প্রশ্নবিদ্ধ ও বিঘিœত করাবার জন্য শত শত কোটি টাকাব্যয় করে তাদের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগ করেছে, তাদের পক্ষে বহু গণমাধ্যম কর্মী, মানবাধিকার কর্মী এবংবিভিন্ন সংগঠনকে ভাড়া করেছে এই বিচার সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য। আইসিটির ভেতরেও তাদের অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল অবগত রয়েছেন। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালকে এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বহু কারণেই নুরেমবার্গে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের তুলনায় অনেক বেশি জটিল। নাৎসি দর্শনের একনিষ্ঠ অনুসারী জামায়াতে ইসলামীর মিত্র যেমন দেশের ভেতরে আছে তার চেয়ে বেশি আছে দেশের বাইরে। পাকিস্তানসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জামায়াতের কোন প্রভু বা বন্ধুরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারের বিরোধিতা না করলেও কয়েকটি দেশ ও সেসব দেশের আল কায়দার সহযোগীরা অনানুষ্ঠানিক ও পরোক্ষভাবে এই বিচার সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে অপপ্রচার ও নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করছে যে সুযোগ নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ছিল না।নুরেমবার্গে ২২ জন অভিযুক্ত ও ৭টি সংগঠনের বিরুদ্ধে মামলার রায় একসঙ্গে দেয়া হয়েছে। আইসিটি প্রতিটি অভিযুক্তের জন্য পৃথক অভিযোগনামা প্রণয়নের পাশাপাশি শুনানি করেছে পৃথকভাবে এবং রায় প্রদানও শুরু হয়েছে পৃথকভাবে। এতে অভিযুক্তরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ বেশি পেয়েছেন। নুরেমবার্গেপ্রথম মামলার রায় পরবর্তী পর্যায়ের বিচারের ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। ঢাকার আইসিটির প্রথম রায়ের একাধিক পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য পরবর্তী মামলাসমূহের রায় কিছুটা সহজ করে দিয়েছে। যদিও বাচ্চু রাজাকারের বিচার হয়েছে তার অনুপস্থিতিতে, তার নিজস্ব আইনজীবী ছিলেন না, রাষ্ট্র তার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেছে, পলাতক থাকার কারণে তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আপিলেরও সুযোগ নেই যা অন্যদের আছে; তা সত্ত্বেও ‘প্রধান প্রসিকিউটর বনাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু (পলাতক)’ শীর্ষক মামলার রায়ে যেভাবে ‘ঐতিহাসিক পটভূমিকা’, ‘ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার’, ‘অভিযোগ প্রমাণের দায়’, ‘পটভূমি ও প্রসঙ্গ’, ‘ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর দায়মুক্তি’ ‘অপরাধের সংজ্ঞা ও উপাদান’, ‘অভিযোগের বিচার’, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ভূখন্ডে বিরাজমান প্রেক্ষিত’ প্রভৃতি অনুচ্ছেদে এমন কিছু মন্তব্য রয়েছে যা বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে।দেশীয় আইনে এবং দেশীয় আদালতে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দুরূহ কাজ। এ ক্ষেত্রে ট্রাইবুনালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী, প্রশাসনিক বিভাগ ও বিচারকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, কিন্তু তাদের সামনে ছিল নুরেমবার্গ, টোকিও ও ম্যানিলা থেকে আরম্ভ করে চলমান কম্বোডিয়ার বিচারের ইতিহাস ও কার্যক্রম; এসব বিচারের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়সমূহ। ঢাকার ট্রাইবুনালের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা পড়াশোনা করেছেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন এবং নিজেদের কর্মক্ষেত্রের বিশাল অভিজ্ঞতার আলোকে ’৭১-এর গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মামলার প্রথম রায় প্রদান করেছেন।নুরেমবার্গ থেকে আরম্ভ করে কম্বোডিয়া পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অপরাধে ঘটনার দীর্ঘ চল্লিশ বছরের ব্যবধানে বিচার একমাত্র বাংলাদেশেই আরম্ভ হয়েছে। এই বিচার ও প্রথম রায় প্রমাণ করেছে দেশের জনগণ ও সরকার যদি চায় অপরাধ যত অতীতেই ঘটুক না কেন স্বজনহারাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে তাদের দুঃসহ বেদনা সম্পূর্ণ উপশম না হোক লাঘব করা সম্ভব।এই বিচার যাতে অব্যাহত থাকে এখনই প্রয়োজন আইন প্রণয়ন করে অস্থায়ী ট্রাইবুনালকে স্থায়ী ট্রাইবুনালে রূপ দেয়া। আরও প্রয়োজন বিচার বিলম্বিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচাল করবার যাবতীয় ষড়যন্ত্র,সহিংসতা ও অন্তর্ঘাত প্রতিহতকরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান গ্রহণ। এসব ষড়যন্ত্র ও অন্তর্ঘাত দেশের ভেতর মোকাবেলা করতে হবে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনগতভাবে এবং দেশের বাইরে করতে হবে সর্বাত্মক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে।আমরা আরও চাই নুরেমবার্গের মতো ঢাকার ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’ ভবন একদিন জাদুঘরে পরিণত হবে। ‘গণহত্যা’, ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’, ‘শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ’ ও ‘যুদ্ধাপরাধের’ স্থান জাদুঘরের বাইরে আর কোথাও হওয়া উচিৎ নয়। সকল দেশের সকল অপরাধীর বিচার ও শাস্তির মাধ্যমে এই প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব। বাংলাদেশ সেই প্রত্যাশা তখনই পূরণ করতে পারবে যেদিন ঢাকার আইসিটি শেষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকা

ছবি

বুদ্ধিজীবি হত্যা মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়----- ================ আজ ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিনে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে,সারা বাংলা উল্লাসে মাতোয়ারা,দখলদার বাহিনীকে ঢাকায় অবরুদ্ধ করে সারেন্ডার করার জন্য মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে- ঠিক সেই সময় পরাজয় নিশ্চিত জেনে' পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসকদের হত্যা করে বাঙালি জাতির ওপর চরম আঘাত হানে। সুপরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী দিকপাল মানুষদের বাড়ি থেকে ধরে এনে ঢাকার রায়েরবাজার, কাটাসুর ও মিরপুরসহ দেশের অসংখ্য বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে নির্মম পৈশাচিকতার সঙ্গে হত্যা করে। এ দিনে আমরা ওই সব বুদ্ধিজীবীকে স্মরণ করি বিনম্র চিত্তে গভীর শোক ও শ্রদ্ধায়। দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন পাকিস্তানি শাসকচক্রের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে দিকনির্দেশক এবং সোচ্চার কণ্ঠ।মুক্তমনা এই সমস্ত বুদ্ধিজীবিগন অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ সর্বোপরি একটি সুখী-সমৃদ্ধ প্রগতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আখাংকা তারা লালন করতেন মনের গভীরে। পাকিস্তানি কুচক্রী ও এ দেশীয় দোসর ধর্মান্ধগোষ্ঠী যখন আঁচ করতে পারলো,মিত্র বাহিনী তাঁদেরকে চতুর্দিকে অবরুদ্ধ করে পেলেছে,পরাজয় সময়ের দ্বারপ্রান্তে,বাঙালির স্বাধীনতা সমাসন্ন, তখন তারা জাতির দিকপালদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তড়িগড়ি তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিল। যেন বাঙালি জাতিসৃজনশীতা, মানবিক গুন প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে ফেলে।যেন সদ্যস্বাধীন দেশটি সুস্থ চেতনা ও বিচার বুদ্ধির পথভ্রষ্ট হয়ে নিঃস্ব, দুর্বল ও দিক নির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে। দেশ স্বাধীনের পরও অব্যাহত থাকে কুচক্রীদের সেই ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই একাত্তরের পরাজিত শক্তি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাহায্যে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক,সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার চেতনার নেতৃত্ব সমূলে বিনাশ করার লক্ষ্যে জেলের ভেতর হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী,প্রবাসি মুজিব নগর সরকারের দিকপাল, চার জাতীয় নেতাকে। পরিণামে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদের যে চেতনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আপামর বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ছিল, নয় মাসব্যাপি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, স্বাধীন দেশে সে অর্জন থেকে দিনে দিনে আমরা অনেকদুর পিছিয়ে যাই।পিছিয়ে যাই প্রগতির ধারা থেকে। একাত্তরের ঘাতক আলবদর, আলশামস, রাজাকাররা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার পর্যন্ত হতে পেরেছিল। তবে দেরিতে হলেও বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে। জাতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আয়োজন করেছে। একে একে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা দণ্ডিত হচ্ছে, তাদের ফাঁসি হচ্ছে বাংলার মাটিতে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধিদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামি ফাঁসির রায়ে দন্ডিত হয়ে যুদ্ধ অপরাধের দায় স্বীকার করে সাজা মওকুপের আবেদন ও করেছেন।মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মহাজোট সরকার সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে ধীরে হলেও গনমানুষের প্রানের দাবি পুরন করার জন্য নিয়ন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনা জাতিকে বিচারহীনতার কবল থেকে মুক্ত করার জন্য বদ্ধপরিকর।ইতিমধ্যে অনেকের রায় কায্যকর করে তাঁর সরকারের সদিচ্ছার সেই স্বাক্ষর ও রেখেছেন।আশা করি সকল যুদ্ধ অপরাধির বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে বাঙ্গালি জাতিকে অচিরেই কলংকমুক্ত করবেন,জাতি সেই আশাই করে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যার নিকট।পরিশেষে আজকের দিনের দেশের বরেন্য ব্যাক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, তাঁদের আত্মার মাগফেরাৎ কামনা করি মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট। জয়বাঙলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা।

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়--- ========================= বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধী এবং ভারতের জনগন বাঙালির দু:সময়ে যদি সহযোগিতার হাত না বাড়াতেন তাহলে ইতিহাস অন্য কোন ভাবে তাঁর গতিপথ নির্ণয় করতে বাধ্য হত। জর্জ হ্যারিসন,বাংলাদেশের মানুষের মনের মধ্যে নামটি চিরজাগরুক হয়ে আছে,থাকবেন অনন্তকাল।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই গুনী শিল্পি সাহায্যের হাত প্রসারীত করেছিলেন,তাঁর নিজস্ব সম্পদ কণ্ঠকে ব্যাবহার করে।তাঁর অবদান বাঙালীর দু:সময়ে মুক্তিযুদ্ধাদের মনে প্রেরনা জুগিয়েছিল নি:সন্দেহে।বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র সমুহের প্রধানগন যদিও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন,কিন্তু তাঁদের মুক্তিকামি প্রজাসাধারন, মুক্তিকামী বাঙ্গালীর পক্ষেই ছিল উহাই প্রমানীত হয় ওবালের সেদিনের টিকেট বিক্রির হারের দিকে তাকালেই।বিজয়ের মাসে সেইসব বন্ধুদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই,যারা আমাদের পাশে এসে বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতার হাত প্রসারীত করেছিলেন। জর্জ হ্যারিসনের বিখ্যাত "কনসার্ট ফর বাংলাদশ"-এর কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু ওভালের ‘গুডবাই সামার’ কনসার্টের কথা আমাদের অনেকেরই জানা নাই। সেই কনসার্টের পোস্টার এটি। কি দারুণ এক পোস্টার...বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে ১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ওভালে ‘গুডবাই সামার’ নামের এই কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়েছিলো। সেদিন সেই কনসার্টের টিকেটের দাম ধরা হয়েছিলো সোয়া এক পাউন্ড করে। বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট করে লেখা ছিলো বাংলাদেশের শরণার্থীদের কথা। অফিসিয়ালি ৩১,০০০ দর্শক থাকলেও আয়োজকদের মতে সংখ্যাটা ৩৫,০০০ ছাড়িয়ে যায়। সেই কনসার্ট থেকে আয় হয়েছিলো ১৫,০০০ পাউন্ড!! আমরা পরিষ্কারভাবে আমাদের মনের গহীন থেকে তাঁদের কে বার্তা পৌঁছে দিতে চাই,হ্যাঁ বন্ধুরা আপনাদের সেই উদার মনের আন্তরীক সমর্থন বৃথা যায়নি।যাদের কাছ থেকে আমরা বাঙ্গালীরা স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে ব্যাপৃত ছিলাম-যাদের অত্যাচার,অনাচার, জুলুমের চিত্র দেখে আপনাদের বিবেক নাড়া দিয়েছিল।হাজার মাইল দূরে থেকেও সমর্থন দিয়েছিলেন, সাহায্য করেছিলেন,ব্যাথায় আপনাদের মন কুঁকড়ে গিয়েছিল।সেই বর্বর পাকিরা আজও বর্বরই রয়ে গেছে।তাঁরা এখনও বলতে চায় তাঁরা আমাদের উপর কোন অন্যায় করেনি-,তবে আমাদের যুদ্ধ কার সাথে হল,কারা আমাদের মা বোন নির্য্যাতন করলো। কারা আমাদের বাবা,ভাই,বন্ধুদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল??? অসভ্য,বর্বর চাড়া কেউ কি মিথ্যা, চলচাতুরী আর উগ্রতার এমন পরাকাষ্টা দেখাতে পারে?? আমাদের সম্পদে পোদ্দারী করেছিল তাঁরা --তার প্রমান বাংলাদেশ মাত্র ৪৪ বছরে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরীত হয়ে প্রমান করেছে বিশ্বদরবারে।তাঁরা তখন যেখানে ছিল এখন তাঁর চেয়ে আরো অনেক পিছনে চলে গেছে।আমরা সাহায্যকারি দেশে রুপান্তরীত হয়েছি,তাঁরা এখনও ভিক্ষার জন্য আমেরীকার দালালি করে।ভিক্ষা করে বোমা বানায়,সন্ত্রাসি লালন করে, বিশ্ব মুসলিম দেশ সমুহের কপালে কলংকের তিলক পরায়।আমরা গনতন্ত্রের চর্চায় অনেক দূর এগিয়ে গেছি,আমাদের স্কুল, কলেজ পাড়া মহল্লার ক্লাবেও গনতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রতিনীধিরা নেতৃত্ব করে। প্রকারান্তরে তাঁদের দেশে এখনও জংলী কাপড় পরা কিছু লোক আছে,যাঁদের ভরন পোষন করে জনগন নীজেদের পাহারা দেয়ার জন্য,তাঁরাই কর্তা সেজে এখনও সেই জনগনকে শাষন করে,সামান্য অজুহাতে ক্ষমতার মসনদ দখল করে বসে থাকে। তাঁদের পালিত কুকুরের দল এখনও গৌরবের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে মাঝে মাঝে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করে।মাঝখানে ৭৫ থেকে ১৯৯১ ইং সাল- তাঁদের প্রেতাত্বারা আমাদের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। তাঁদের নির্দেশীত পথে দেশ পরিচালনা করে আমাদের অর্জিত গৌরবকে ম্লান করার জন্য।, জাতিকে তাঁদের মত বর্বর জাতিতে রুপান্তরীত করার জন্য।তাঁরা আমাদের পবিত্র সংবিধানকে চিন্নভীন্ন করে দিয়ে গেছে। দেশকে প্রগতির ধারা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে।তাঁরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্টন করে এখন অনেক সম্পদের মালিক হয়ে গেছে।তাঁরা এখন দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র করার মত স্বাবলম্বিতা অর্জন করেছে।তোমরাতো শুনেছ,তোমাদের মিডিয়ায় তোমরাই প্রচার করেছিলে,ষড়যন্ত্রকারি প্রধান ব্যাক্তি, মেজর জিয়া, যিনি ক্ষমতায় থাকাকালিন তাঁর নীজ গোত্রের- তাঁর মত অসভ্য কিছু উর্দি পরা লোক, তাঁকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল।কথিত আছে,তাঁর কোন হাঁড়-মাংস পাওয়া যায়নি। তোমরাই বেশি করে প্রচার করেছিলে তাঁর কোন সঞ্চিত সম্পদ ছিলনা।অথছ তাঁর পরিবার এখন কত সম্পদের মালিক হয়েছে,হিসেব করার জন্য তোমাদের দেশের নামকরা চাটার্ড একাউন্টস ফার্মকে নিয়োগ দিলেও সঠিকভাবে নির্নয় করতে পারবে কিনা সন্দেহ। তাঁরা বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ লুট করে তোমাদের দেশে বাড়ী ভাড়া করে বিলাসী জীবনযাপন করছে।তোমাদের দেশের ল'ফার্মকে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে ভাড়া করেছে--বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার জন্য।,বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বক্ষন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, শুধু মাত্র আমার দেশের আইনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।তোমাদের বিশ্ব ব্যাংক তাঁদের পাঁছ বছরের শাষন পাঁছ বার জরিপ করে পাঁছ বারই শীর্ষস্থানে নির্ধারন করে "দুর্নীতির আখড়া"বলে আমাদের লজ্জা দিয়েছিল। বিশ্বের একনম্বরের দুর্নীতির দেশ বলা কতযে অপমানজনক তা তোমরা বুঝবেনা।কারন তোমদের দেশ এই অখ্যাতি কোনদিন অর্জন করেনি। আমাদের দেশকে আখ্যা দিয়েছিল কি কারনে জান,তাঁদের ইউনিয়ন লেভেল থেকে প্রধান মন্ত্রীর পরিবার পয্যন্ত, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত,এই দেশকে লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে পরিনত করেছিল।"দুর্নীতিই একমাত্র নীতি" এই বিশ্বাস মানুষের মনে গেঁথে দিয়েছিল।বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা,তখন আমার দেশের মানুষের মাথা হেট হয়ে যেত,মনে মনে নীজকে অভিসম্পাত করতো- কেন এমন একটা চোরের দেশে মহান আল্লাহ আমাদের জম্ম নিতে বাধ্য করেছেন।তাঁরা রাজনীতিকে জনসেবার অন্যতম মাধ্যম এই ধারনাকে অসার প্রমান করার জন্য রাজনীতিতে দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন।,তাঁদের মরহুম নেতার আদর্শ "রাজনীতিকে আমি রাজনীতিবীদদের জন্য কঠিন করে দেব" এই নীতিকে সর্বস্তরে প্রতিপলিত করার জন্য,যাতে রাজনীতি বিদদের জনগন ঘৃনা করে,তাঁদের কাছ থেকে মুখ পিরিয়ে নেয়।জংলিরা সব সময় তাঁদের মুরুব্বিদেশ পাকিস্তানের আদলে আমার সোনার বাংলাকে শাষন শোষন করতে পারে।সাধারন মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য তাঁরা ঘন ঘন আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যাবহার করে।অথছ ব্যাক্তি জীবনেও তাঁরা কেহই ইসলামের অনুশাষন মেনে চলেনা।রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলামের জন্য কোন স্থাপনা এই পয্যন্ত আদৌ নির্মান করেনি। তোমরাতো অবগত আছ, মাত্র পাঁছ বছরের মধ্যে আমাদের মহান নেতার জৈষ্ঠ কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনা খমতায় আরোহন করেছে।এরই মধ্যে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বের নামকরা উন্নত দেশ সমুহের অনেক পিছনে ১৫৯তম অবস্থানে নিয়ে গেছে।সবাইকে খাওয়া পরার ব্যাবস্থা করে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরীত করতে সক্ষম হয়েছে।তোমাদের বিশ্বব্যাংক ষড়যন্ত্র করে আমার দেশের পদ্মা সেতুর টাকা দুর্নীতির কারন দেখিয়ে ফেরৎ নিয়ে গেছে,তোমরাই বল টাকা দেয়ার আগে কিভাবে টাকা চুরি হয়? অথছ সেই পদ্মা সেতু আমার দেশের মহান নেতার কন্যা নীজ অর্থে করার জন্য উদ্যোগ নিয়ে সফলতার সংজ্ঞে এগিয়ে যাচ্ছে।অথছ তোমরাই ভয় দেখিয়েছিলে বিদেশি ঋন ছাড়া বাংলাদেশ এত বিশাল প্রজেক্ট করার কথা চিন্তাও করতে পারবেনা।বাঙ্গালী বীরের জাতি, পারেনা এমন কোন অসাধ্য কাজ নেই।তোমরাতো জান, মাত্র নয়মাসে খালী হাতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল বাঙ্গালি।পাকি ৯৩ হাজার সুসর্জ্জিত সেনাবাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে মাত্র নয় মাসে অর্থাৎ এই মাসেই আমাদের পায়ের নীছে অস্ত্র সমর্পন করে, মাথা নীছু করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করেছিল। তাঁরা এতই বেলাজ জাতি এখন আবার আমাদের সাথে উদ্যত, উগ্র মেজাজে কথা বলার চেষ্টা করে।তাঁরা এতই বেয়াদপ জাতি, আমাদের রাজদুতকে ডেকে নিয়ে বলে তাঁদের পরম বন্ধুকে ফাঁসী দেয়ায় তাঁরা নাকি দু:খ্য পেয়েছে,বিব্রত বোধ করছে।কত বেয়াদপ দেখ, প্রকাশ্য স্বীকার করে বলে দন্ডপ্রাপ্ত ব্যাক্তিরা নাকি তাঁদের পরম বন্ধু। তোমরাই বল তাহলে,তাঁদের যারা বন্ধু নিশ্চয়ই স্বাধীন দেশের জনগনের তাঁরাইতো শত্রু। আমাদের দেশের বিচার শতভাগ সঠিক, তাঁদের উদ্যত আচরনেইতো প্রমান করে !! দেখ বন্ধুরা আমাদের সম্পদের লোভ ৪৪বছরেও তাঁরা ভুলতে পারেনি।আমাদের শোষন করে তিনবার রাজধানী পরিবর্তনের নামে নীজেদের শহরগুলী সাজিয়ে নিয়েছে। তাঁদের তিন শহরের মোট ব্যায়ায়ীত টাকার তিনগুন টাকা ব্যয় করে বাংলাদেশ পদ্মাসেতুর মত বিশাল ব্যায়বহুল সেতু নির্মান করার যোগ্যতা অর্জন করেছে তাও শতভাগ নীজের দেশের উপার্জিত অর্থে। তাইতো বিজয়ের এই মাসে বারবার তোমাদের ঋনের কথাগুলি মনে পড়ে।তোমাদের ঋন বাঙ্গালি কোনদিন ভুলে যাবেনা।তোমরা কখনও, কস্মিনকালেও ভেবনা বাঙালি অকৃতজ্ঞ জাতি। জয়বাঙলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা।

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়_________ ================================ বঙ্গবন্ধু মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে ৫/৭টি ইতিহাস বিখ্যাত রাজনৈতিক ভাষণের একটি। তিনি এতটাই জনপ্রিয় নেতা ছিলেন যে, সত্তরের নির্বাচনে বাংলাদেশের (পূর্ব বাংলা) শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুজিবের আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। দু’বার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও তিনি ছিলেন অবিচল, আপসহীন। সামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মুজিব এককভাবে ২৫ দিন দেশ পরিচালনা করেন। ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্য রাতের পর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুজিব ঘোষণা করেন, ‘আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ একাত্তরে ৯ মাস কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় পাকিস্তানিরা একটি কথাও নেতার মুখ থেকে বের করতে পারেনি। ঐ সময় তিনি শুধু প্রহরীদের সালাম গ্রহণ করতেন। মুজিবের দূরদর্শিতারও কোনো তুলনা হয় না। ভাবতে অবাক লাগে,বঙ্গবন্ধু জানতেন, পাকিস্তানিরা ৬ দফা মানবে না এবং না মানলে তা এক দফায় পরিণত হবে, এটা নিশ্চিত হয়েই তিনি ১৯৬৬ সালে জাতির সামনে তা পেশ করেছিলেন। মাত্র ৫ বছরের মাথায় ৬ দফা এক দফায় পরিণত হয়ে দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। শত্রুর হাতে বন্দী থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে বন্দী থাকা সত্ত্বেও বন্দী নেতা মুজিবের নামেই যুদ্ধ পরিচালিত হয়। মনীষী আবুল ফজল লিখেছেন, ‘অনুপস্থিত সেনাপতির এমন সেনাপতিত্ব সত্যই অভিনব, ইতিহাসে এমন নজির বিরল।’ কি আশ্চায্য ব্যাপার লক্ষ করেছেন কিনা জানিনা,স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৪বছর শেষ হতে আর কয়মাসই বা বাকি।যুদ্ধের নয় মাস পাকি কারাগারে ছিলেন,এই পয্যন্ত পাকিরা একটা গুজব পয্যন্ত রটাতে পারেনি,মুজিবের মধ্যে স্বাধীনতা প্রশ্নে কোন নমনীয়তা পেয়েছিল।বাংলাদেশে অবস্থানরত,বাঙ্গালির ঔরসজাত কিছু কিছু বজ্জাতেরা বলে, মুজিব নাকি স্বাধীনতা চায়নি!!! অথর্বদের এতটুকু ধারনাও নেই প্রচলিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোতে থেকে এর চেয়ে আর বেশি বা অন্য কি ভাবে স্বাধীনতার কথা বলতে পারেন প্রধান নেতা।রাজনীতিতে যদি দেশ স্বাধীন হয় হঠকারি রাজনীতির ফাঁদে পা দিয়ে আন্দোলন ব্যর্থ হলে হাজার বছরপর ও কি আর সেই আন্দোলন সংগঠিত করা যেত? পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ওয়ালী খান বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের অসহযোগ আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনকেও হার মানিয়েছে।’ পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এবং পরবর্তীকালে রাজনীতিবিদ এয়ার মার্শাল আসগর খান বলেছিলেন, ‘একাত্তরের ২৩ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে ৭টা সেনানিবাস ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা যায়নি। পাকিস্তানি মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে লিখেন, ‘অসহযোগ আন্দোলনের সময় মুজিবের শাসন পূর্ব পাকিস্তানকে গ্রাস করে।’ অর্থাৎ সেনানিবাস ছাড়া দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীই ছিল মুজিবের অনুগত। ব্রিটিশ পত্রপত্রিকায় তখন লেখা হয়, ‘মুজিবের ৩২ নম্বরের বাসভবন ব্রিটেনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পরিণত হয়েছে।’ ড:রেহমান সোবহান,যদিও তিনি আওয়ামী লীগ পছন্দ করেননা।খালেদা জিয়ার অত্যান্ত কাছের একজন বুদ্ধিজীবি,তার পরও তাঁর দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর সম্মন্ধে তিনি যে কথাটি বলেছেন তাও প্রনিধানযোগ্য বলে আমি মনে করি।""তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান নামেই প্রসিদ্ধ।তিনি যথার্থই লিখেছেন, “আমার ধারণায়, ১৯৭১ সালের পহেলা থেকে ছাব্বিশে মার্চ- এই ছাব্বিশ দিনই বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে এক স্বাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছিল। যার ফলে কখন" স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল বা কে তা ঘোষণা করেছিলেন এই প্রশ্নটি অবান্তর, অপ্রাসঙ্গিক এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করার যে প্রবণতা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনাকে গ্রাস করেছে এটা তারই আরেকটি দৃষ্টান্ত।”" মুলত: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পর জাতিয় ও আন্তজাতিক রাজনীতির সমিকরন দ্রুত পাল্টাতে থাকে।ছাত্র যুবকেরা যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করে। বাংলাদেশের বহুস্থানে রীতিমত ট্রেনিং নেয়া শুরু করে। ঐ দিকে পাকিস্তানী শাষকবর্গ পুর্ব পাকিস্তানকে তাঁদের করতলগত রাখার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নের জন্য সময়ক্ষেপন করছিল।অবশেষে ২৫শে মার্চের মধ্যরাতে তথাকথিত অপারেশন সার্চলাইটের ঘোষনা দিয়ে পাকবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর সকল শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা ইতিহাসের বিরল এক গনহত্যা।নারী শিশু,বৃদ্ধ,যুবক,ছাত্র শিক্ষক,বুদ্ধিজীবি কেহই তাঁদের বন্দুকের নিশানা থেকে রক্ষা পায়নি। নির্বিচারে যেখানে যাকে পেয়েছে সেখানেই হত্যাকরে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম,বর্বর রক্তের হোলিখেলা শুরু করে পাকিস্তানী সামরিকজান্তা বাহিনী। মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চের মধ্য রাতের পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে তৎকালিন ই,পি,আরের ওয়ারলেস ম্যাসেজে স্বাধীনতার কঠিন অভিযাত্রায় সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিয়ে ঘোষনা করেন, "বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে (পাকিস্তানি) সেনাবাহিনীর দখল থেকে প্রীয় মাতৃভূমির দখল্মুক্ত করতে সর্বাত্মক মোকাবেলা করার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করে চূড়ান্তবিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদেরকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহব্বান জানাচ্ছি।" এই ঘোষণার শুরুতেই বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত বিষয়টি সামনে আনেন সহস্র বছরের সাধনায় অর্জিত_ "আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন"। স্বাধীনতা ঘোষনা করার আগে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগ নেতাদের স্ব-স্ব এলাকায় চলে যেতে বলে নীজে ৩২ নম্বরে অবস্থান গ্রহন করেন।নেতারা বঙ্গবন্ধুকে ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যেতে অনুরুধ করলেও বঙ্গবন্ধু বলেন,ওরা যদি আমাকে না পায় আমার সারা বাংলা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে চারখার করে দিবে,তোমাদের প্রতি অনুরুধ রইলো, "যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে সেই দায়িত্ব পালন করবে।ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।" ই,পি,আরের ওয়ারলেস ম্যাসেজে দেয়া ঘোষনা তৎক্ষনাৎ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেল।বিদেশী গনমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে বঙ্গবন্ধুর ঘোষনা প্রচার করা হল।যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ার প্রচলন খুব বেশি না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা ২৬/২৭ শে মার্চে মাইকের মাধ্যমে স্ব-স্ব এলাকায় উক্ত ঘোষনা প্রচারের ব্যাবস্থা করেন। পুরো জাতি ঝাঁপিয়ে পড়লো সেই ঘোষণা শুনে হানাদার দখলদার পাকি বাহিনীকে হটাতে। বাঙালি জাতি সর্বত্র রুখে দাঁড়ায়। নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণ তীব্রতর হতে থাকে। বাঙালি জাতি জড়িয়ে পড়লো এক অসম যুদ্ধে। যে যুদ্ধ পাকিস্তানী জান্তারা তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। নিরস্ত্র ববাঙালি প্রান বিসর্জন দিতে থাকলো পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্বিচারে। রাস্তাঘাটে, রিকশায়, গাড়িতে, ঘরে, বাসা,বাড়িতে, প্রতিষ্ঠানে, স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রছাত্রী,শিক্ষকদের হোস্টেলে বাঙালি নিহত হতে লাগল অকাতরে। চারিদিকে লাশ আর লাশ। দাপন করার কোন ব্যাবস্থা সিমারের দল করেনি,শৃগাল কুকুরের টানাটানি করে লাশ খাচ্ছে।নদীতে লাশ,নর্দমায় লাশ,বাড়ীতে লাশ,হাটে ঘাটে শুধু লাশ আর লাশ।এই যেন এক আদিম যুগের মৃত্যুপুরি।শুরু হয় নারী জাতির উপর অত্যাচার। প্রকাশ্য দিবালোকে নারীর স্তন কেটে বেয়নেটের মাথায় নিয়ে উল্লাস করে ফিরতে লাগল পাকিস্তানী হানাদার সেনারা। নারী ধর্ষিত হতে থাকে গ্রাম গঞ্জে। শিশুরা বেয়নেটের ডগায় উড়তে লাগল রক্তাক্ত নিশানের মত। অস্ত্র হাতে না ধরতে শেখা বাঙালি গেরিলা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার ডাকও দিয়েছিলেন। সেই সাথে আহ্বান জানিয়েছিলেন, "যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।" বাঙালি সে ঘোষনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে শত্রুর মোকাবেলা করেছে।স্থানে স্থানে প্রতিরোধের দুর্ঘ গড়ে তুলে।কিন্তু আধুনিক সমরাস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে ছাত্র যুবক ইপিয়ার বাহিনি আস্তে আস্তে পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়। সে দিন জনতার সাথে ই,পি,আর বাঙ্গালি সেনা বাহিনীর চৌকস বিগ্রেড ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট,পুলিশ বাহিনীও যোগ দেয়।পাকিরা প্রথম আক্রমনেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন,ঢাকা ইউনিভারসিটির হল সমুহ দখল করে নেয়।রোকেয়া হলের ছাত্রীদের উপর নেমে আসে বিভীষিকার এক রজনী।অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশ পাকিস্তানী হানাদার দখল করে নিতে সক্ষম হয়। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বন্ধু ভারত মানব সভ্যতার চরম ভাবে ভুলুন্ঠিত করে আক্রমন পরিচালনা করলে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পুর্ব পাকিস্তান বেষ্টিত ১৭০০মেইল বর্ডার খুলে দেয় বাঙালিদের আশ্রয়ের জন্য।স্রোতের মত বাঙ্গালিরা ভারতে আশ্রয় নিতে থাকে।এককোটির ও অধিক মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়।ছাত্র যুবক ভাইয়েরা যার যার মত করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করে।আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনীধিরাও ভারতে গিয়ে যুদ্ধপ্রস্তুতি গ্রহন শুরু করে।মুক্তি বাহিনী গঠন,প্রবাসি সরকার গঠন সহ একান্ত প্রয়োজনীয় কর্মগুলি যথারীতি শুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মেহের পুরের আম্রবাগান বৈদ্যনাথে একত্রিত হয়ে রাষ্ট্রীয় সকল বিধিবিধান অনুসরন করে প্রবাসি মুজিব নগর সরকার গঠন করা হয়।মুক্তিযুদ্ধাদের চৌকস এক দল তরুন মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের গার্ড অব অনারের মাধ্যমে সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা আরাম্ভ হয়। মেহের পুরের বৈদ্যনাথ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মুজিব নগর। পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার হাত থেকে যে স্বাধীনতার আলোক বর্তিকা কেড়ে নিয়েছিল মীরজাফরের সহযোগিতায়,সে স্বাধীনতার আলোক বর্তিকা প্রজ্জলিত করার দৃড শফথের জন্য প্রবাসি সরকার গঠন করা হয় মেহের পুরের আর এক আম্রবাগানে।বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ি রাষ্ট্রপতি তাজউদ্দিন আহম্মেদ কে প্রধান মন্ত্রী করে সরকার গঠিত হয়।শুরু হয় আনুষ্ঠানিক শুত্রু মুক্ত করার লড়াই।প্রবাসি সরকার সারা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ১১জন সেনা কর্মকর্তাকে প্রধান করে যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করে।প্রধান সেনাপতি করা হয় বাঙ্গালি সেনা কর্মকর্তা(অব:) মেজর জেনারেল ওসমানীকে।মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক পদাধিকার বলে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তাঁর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অভ্যন্তরীন সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করে প্রবাসি সরকার বিদেশিদের সমর্থন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন, অনুষাঙ্গিক অন্যান্ন বিষয়াবলির উপর নজর দেয়।স্বল্প সময়ে যোদ্ধকৌশল গ্রহন করে শুরু হয় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর উপর সাড়াষি গেরিলা আক্রমন।মুক্তিযোদ্ধারা স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষন নিয়ে দলে দলে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গেরিলা কায়দায় আক্রমন পরিচালনা করে পাকিদের দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য কিরে দিতে সক্ষম হয়।গেরিলা আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এদেশিয় দোষরদের সহযোগিতায় গঠন করে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি ইত্যাদি নানাবীদ বাহিনী। তাঁদের এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য সর্বাজ্ঞে এগিয়ে আসে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এবং তাঁদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। যাহা পরবর্তিতে নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্র শিবির নাম ধারন করে।পুর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ,নেজামে ইসলাম,ইসলামি ডেমোক্রেটিক পার্টি সহ আরো কতিপয় ছোট ছোট দল ও গ্রুপ।এদিকে পাকি দখদার বাহিনী সারা বাংলাদেশ ব্যাপি শুরু করে রাজাকারের সহযোগিতায় তান্ডবলীলা--অগ্নিসংযোগ, লুটপার্ট, হত্যা, নারী নির্যাতন এমন কোন কিছু বাদ নেই যা তাঁরা অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেনা।সভ্যতা মুখ থুবড়ে পড়েছে সে দিন তাঁদের অত্যাচারের বিভীষিকার নিকট.,মায়ের সামনে মেয়ে,বাবার সামনে মা,ভাইয়ের সামনে বোন,স্বামীর সামনে স্ত্রীকে দর্শন করতেও তাঁদের বুক কাঁপেনি। মহান ভারতের মহিয়ষী নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী এবং ভারতের জনগন বাঙালির এই বিপদের সময়ে সর্বোচ্ছ ত্যাগ স্বীকার করে শরনার্থীদের থাকা খাওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, অস্ত্র ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতার হাত প্রাসারীত রাখতে কোনরুপ দ্বিধাবোধ করেননি। সেই দিনের সেই সাহায্য যদি ভারতের জনগন বাঙালি শরনার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের না দিতেন,তাহলে ইতিহাস হয়তোবা অন্যভাবে তাঁর গতিপথ নির্ধারন করে নিতে হত। ভারত শুধু আশ্রয় দিয়ে তাঁর কর্তব্য শেষ করেনি,মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে তাঁর দেশ সর্বচ্ছো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখে।ভারতের প্রধান মন্ত্রী বিরামহীন বিশ্বভ্রমন করে বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে বৈঠক করে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকারের স্বপক্ষে তাঁর দেশের অবস্থান তুলে ধরেন,আন্তজাতিক মহলের সাহায্য কামনা করেন।এদিকে প্রবাসি সরকারের পক্ষ থেকেও দুত পাঠিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করার ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়।এতে আন্তজাতিক ভাবে স্পষ্টতই দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়।সৌভিয়েত ইউনিয়ন সহ বেশ কিছু দেশের জনগন ও সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে,অন্য দিকে আমেরীকা চীন সহ বেশ কিছু দেশ পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে নিলর্জ্জভাবে তাঁদের সহযোগিতা করতে থাকে।উল্লেখ্য আমেরীকার জনগন সর্বতোভাবে বাংলাদেশের মুক্তিকামি মানুষের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে-- চাঁদা তুলে সাহায্য করতে থাকে।স্কুল পড়ুয়া শিশুরা তাঁদের টিফিনের টাকা বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য পাঠাবার ব্যাবস্থা করে।এমনিতর পরিস্থিতিতে মধ্য ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ পরিপুর্নতা পেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা চোরাগুপ্তা হামলায় ব্যাপক পাকি সৈন্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকে প্রতিনিয়ত:। আক্রমনের মুখে ব্যাপক সৈন্যের মৃত্যুতে পশ্চিম পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।সেন্যবাহিনীর আত্মীয়স্বজনেরা তাঁদের সন্তানদের অকালে আত্মাহতির কারন ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন শুরু করে।বিশেষ করে পাঞ্জাব ছাড়া আরো দু'টি প্রদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আস্থাশীল নেতৃবৃন্দ ও জনগন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোদ্ধে আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্ছারন শুরু করে। ইয়াহিয়া চতুর্দিকে বিপদের অশনি সংকেত শুনতে পেয়ে যুদ্ধের আশু ফলাফল পাওয়ার ফন্দিফিকিরে লিপ্ত হন। ইয়াহিয়া খাঁন এবং তাঁর পরিষদবর্গ, পরামর্শ দাতাদের তড়িৎ ফলাফল পাওয়ার অস্থিরতায় পেয়ে বসে।তাঁদের মিত্র আমেরীকা সাম্রাজ্যবাদ এবং তাঁর মিত্রদের নিকট সাহায্য কামনা করে পাক সরকারের পক্ষ হতে। এমনিতর সাহায্যের আবেদনের জন্য আমেরীকা ওৎ পেতে বসেছিলেন। কালবিলম্ব না করে বন্ধু পাকিস্তানের জনগনকে সাহায্যের জন্য সপ্তম নৌবহরকে যুদ্ধ সাজে সাজিয়ে বঙ্গোবসাগরে -বাংলাদেশের অদুরে মোতায়েন করা হয়। আমেরীকা বিশ্বের একনম্বর পরাশক্তি তাঁদের নৌবহর মোতায়েনে প্রবাসি সরকারের মধ্যে কিছুটা ভীতির সঞ্চার করে। এই দুর্বলতার মহুর্তে প্রবাসি সকারের মধ্যে আমেরীকার চর রাজনৈতিক ভাবে সংকট নিরসনের জন্য প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিনের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।মীরজাপর মোস্তাক পাকিস্তানের সাথে কনফেড়ারেশন গঠন করার প্রস্তাব দিলে বিচক্ষন প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মেদ ষড়যন্ত্রের আলামত পেয়ে ভারত সরকারের সাথে আলোচনার আয়োজন করেন।বিস্তারীত আলোচনার পর ইন্ধীরাগান্ধী শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বৈঠকস্থল ত্যাগ করেন।পরের দিনই মহান বন্ধু সৌভিয়েত ইউনিয়ন বঙ্গোবসাগরের উদ্দেশ্যে তাঁর অষ্টম নৌবহরকে যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। অষ্টম নৌবহর বাংলাদেশের অদুরে আসার আগেই সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আশংকায় আমেরীকা তাঁর যুদ্ধ জাহাজ প্রত্যাহারের ঘোষনা প্রদান করে। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়_________ ================================ মুলত: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পর জাতিয় ও আন্তজাতিক রাজনীতির সমিকরন দ্রুত পাল্টাতে থাকে।ছাত্র যুবকেরা যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করে। বাংলাদেশের বহুস্থানে রীতিমত ট্রেনিং নেয়া শুরু করে। ঐ দিকে পাকিস্তানী শাষকবর্গ পুর্ব পাকিস্তানকে তাঁদের করতলগত রাখার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নের জন্য সময়ক্ষেপন করছিল।অবশেষে ২৫শে মার্চের মধ্যরাতে তথাকথিত অপারেশন সার্চলাইটের ঘোষনা দিয়ে পাকবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর সকল শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা ইতিহাসের বিরল এক গনহত্যা।নারী শিশু,বৃদ্ধ,যুবক,ছাত্র শিক্ষক,বুদ্ধিজীবি কেহই তাঁদের বন্দুকের নিশানা থেকে রক্ষা পায়নি। নির্বিচারে যেখানে যাকে পেয়েছে সেখানেই হত্যাকরে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম,বর্বর রক্তের হোলিখেলা শুরু করে পাকিস্তানী সামরিকজান্তা বাহিনী। মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চের মধ্য রাতের পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে তৎকালিন ই,পি,আরের ওয়ারলেস ম্যাসেজে স্বাধীনতার কঠিন অভিযাত্রায় সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিয়ে ঘোষনা করেন, "বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে (পাকিস্তানি) সেনাবাহিনীর দখল থেকে প্রীয় মাতৃভূমির দখল্মুক্ত করতে সর্বাত্মক মোকাবেলা করার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করে চূড়ান্তবিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদেরকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহব্বান জানাচ্ছি।" এই ঘোষণার শুরুতেই বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত বিষয়টি সামনে আনেন সহস্র বছরের সাধনায় অর্জিত_ "আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন"। স্বাধীনতা ঘোষনা করার আগে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগ নেতাদের স্ব-স্ব এলাকায় চলে যেতে বলে নীজে ৩২ নম্বরে অবস্থান গ্রহন করেন।নেতারা বঙ্গবন্ধুকে ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যেতে অনুরুধ করলেও বঙ্গবন্ধু বলেন,ওরা যদি আমাকে না পায় আমার সারা বাংলা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে চারখার করে দিবে,তোমাদের প্রতি অনুরুধ রইলো, "যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে সেই দায়িত্ব পালন করবে।ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।" ই,পি,আরের ওয়ারলেস ম্যাসেজে দেয়া ঘোষনা তৎক্ষনাৎ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেল।বিদেশী গনমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে বঙ্গবন্ধুর ঘোষনা প্রচার করা হল।যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ার প্রচলন খুব বেশি না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা ২৬/২৭ শে মার্চে মাইকের মাধ্যমে স্ব-স্ব এলাকায় উক্ত ঘোষনা প্রচারের ব্যাবস্থা করেন। পুরো জাতি ঝাঁপিয়ে পড়লো সেই ঘোষণা শুনে হানাদার দখলদার পাকি বাহিনীকে হটাতে। বাঙালি জাতি সর্বত্র রুখে দাঁড়ায়। নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণ তীব্রতর হতে থাকে। বাঙালি জাতি জড়িয়ে পড়লো এক অসম যুদ্ধে। যে যুদ্ধ পাকিস্তানী জান্তারা তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। নিরস্ত্র ববাঙালি প্রান বিসর্জন দিতে থাকলো পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্বিচারে। রাস্তাঘাটে, রিকশায়, গাড়িতে, ঘরে, বাসা,বাড়িতে, প্রতিষ্ঠানে, স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রছাত্রী,শিক্ষকদের হোস্টেলে বাঙালি নিহত হতে লাগল অকাতরে। চারিদিকে লাশ আর লাশ। দাপন করার কোন ব্যাবস্থা সিমারের দল করেনি,শৃগাল কুকুরের টানাটানি করে লাশ খাচ্ছে।নদীতে লাশ,নর্দমায় লাশ,বাড়ীতে লাশ,হাটে ঘাটে শুধু লাশ আর লাশ।এই যেন এক আদিম যুগের মৃত্যুপুরি।শুরু হয় নারী জাতির উপর অত্যাচার। প্রকাশ্য দিবালোকে নারীর স্তন কেটে বেয়নেটের মাথায় নিয়ে উল্লাস করে ফিরতে লাগল পাকিস্তানী হানাদার সেনারা। নারী ধর্ষিত হতে থাকে গ্রাম গঞ্জে। শিশুরা বেয়নেটের ডগায় উড়তে লাগল রক্তাক্ত নিশানের মত। অস্ত্র হাতে না ধরতে শেখা বাঙালি গেরিলা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার ডাকও দিয়েছিলেন। সেই সাথে আহ্বান জানিয়েছিলেন, "যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।" বাঙালি সে ঘোষনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে শত্রুর মোকাবেলা করেছে।স্থানে স্থানে প্রতিরোধের দুর্ঘ গড়ে তুলে।কিন্তু আধুনিক সমরাস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে ছাত্র যুবক ইপিয়ার বাহিনি আস্তে আস্তে পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়। সে দিন জনতার সাথে ই,পি,আর বাঙ্গালি সেনা বাহিনীর চৌকস বিগ্রেড ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট,পুলিশ বাহিনীও যোগ দেয়।পাকিরা প্রথম আক্রমনেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন,ঢাকা ইউনিভারসিটির হল সমুহ দখল করে নেয়।রোকেয়া হলের ছাত্রীদের উপর নেমে আসে বিভীষিকার এক রজনী।অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশ পাকিস্তানী হানাদার দখল করে নিতে সক্ষম হয়। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বন্ধু ভারত মানব সভ্যতার চরম ভাবে ভুলুন্ঠিত করে আক্রমন পরিচালনা করলে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পুর্ব পাকিস্তান বেষ্টিত ১৭০০মেইল বর্ডার খুলে দেয় বাঙালিদের আশ্রয়ের জন্য।স্রোতের মত বাঙ্গালিরা ভারতে আশ্রয় নিতে থাকে।এককোটির ও অধিক মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়।ছাত্র যুবক ভাইয়েরা যার যার মত করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করে।আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনীধিরাও ভারতে গিয়ে যুদ্ধপ্রস্তুতি গ্রহন শুরু করে।মুক্তি বাহিনী গঠন,প্রবাসি সরকার গঠন সহ একান্ত প্রয়োজনীয় কর্মগুলি যথারীতি শুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মেহের পুরের আম্রবাগান বৈদ্যনাথে একত্রিত হয়ে রাষ্ট্রীয় সকল বিধিবিধান অনুসরন করে প্রবাসি মুজিব নগর সরকার গঠন করা হয়।মুক্তিযুদ্ধাদের চৌকস এক দল তরুন মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের গার্ড অব অনারের মাধ্যমে সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা আরাম্ভ হয়। মেহের পুরের বৈদ্যনাথ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মুজিব নগর। পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার হাত থেকে যে স্বাধীনতার আলোক বর্তিকা কেড়ে নিয়েছিল মীরজাফরের সহযোগিতায়,সে স্বাধীনতার আলোক বর্তিকা প্রজ্জলিত করার দৃড শফথের জন্য প্রবাসি সরকার গঠন করা হয় মেহের পুরের আর এক আম্রবাগানে।বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ি রাষ্ট্রপতি তাজউদ্দিন আহম্মেদ কে প্রধান মন্ত্রী করে সরকার গঠিত হয়।শুরু হয় আনুষ্ঠানিক শুত্রু মুক্ত করার লড়াই।প্রবাসি সরকার সারা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ১১জন সেনা কর্মকর্তাকে প্রধান করে যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করে।প্রধান সেনাপতি করা হয় বাঙ্গালি সেনা কর্মকর্তা(অব:) মেজর জেনারেল ওসমানীকে।মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক পদাধিকার বলে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তাঁর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অভ্যন্তরীন সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করে প্রবাসি সরকার বিদেশিদের সমর্থন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন, অনুষাঙ্গিক অন্যান্ন বিষয়াবলির উপর নজর দেয়।স্বল্প সময়ে যোদ্ধকৌশল গ্রহন করে শুরু হয় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর উপর সাড়াষি গেরিলা আক্রমন।মুক্তিযোদ্ধারা স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষন নিয়ে দলে দলে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গেরিলা কায়দায় আক্রমন পরিচালনা করে পাকিদের দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য কিরে দিতে সক্ষম হয়।গেরিলা আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এদেশিয় দোষরদের সহযোগিতায় গঠন করে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি ইত্যাদি নানাবীদ বাহিনী। তাঁদের এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য সর্বাজ্ঞে এগিয়ে আসে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এবং তাঁদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। যাহা পরবর্তিতে নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্র শিবির নাম ধারন করে।পুর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ,নেজামে ইসলাম,ইসলামি ডেমোক্রেটিক পার্টি সহ আরো কতিপয় ছোট ছোট দল ও গ্রুপ।এদিকে পাকি দখদার বাহিনী সারা বাংলাদেশ ব্যাপি শুরু করে রাজাকারের সহযোগিতায় তান্ডবলীলা--অগ্নিসংযোগ, লুটপার্ট, হত্যা, নারী নির্যাতন এমন কোন কিছু বাদ নেই যা তাঁরা অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেনা।সভ্যতা মুখ থুবড়ে পড়েছে সে দিন তাঁদের অত্যাচারের বিভীষিকার নিকট.,মায়ের সামনে মেয়ে,বাবার সামনে মা,ভাইয়ের সামনে বোন,স্বামীর সামনে স্ত্রীকে দর্শন করতেও তাঁদের বুক কাঁপেনি। মহান ভারতের মহিয়ষী নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী এবং ভারতের জনগন বাঙালির এই বিপদের সময়ে সর্বোচ্ছ ত্যাগ স্বীকার করে শরনার্থীদের থাকা খাওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, অস্ত্র ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতার হাত প্রাসারীত রাখতে কোনরুপ দ্বিধাবোধ করেননি। সেই দিনের সেই সাহায্য যদি ভারতের জনগন বাঙালি শরনার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের না দিতেন,তাহলে ইতিহাস হয়তোবা অন্যভাবে তাঁর গতিপথ নির্ধারন করে নিতে হত। ভারত শুধু আশ্রয় দিয়ে তাঁর কর্তব্য শেষ করেনি,মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে তাঁর দেশ সর্বচ্ছো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখে।ভারতের প্রধান মন্ত্রী বিরামহীন বিশ্বভ্রমন করে বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে বৈঠক করে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকারের স্বপক্ষে তাঁর দেশের অবস্থান তুলে ধরেন,আন্তজাতিক মহলের সাহায্য কামনা করেন।এদিকে প্রবাসি সরকারের পক্ষ থেকেও দুত পাঠিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করার ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়।এতে আন্তজাতিক ভাবে স্পষ্টতই দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়।সৌভিয়েত ইউনিয়ন সহ বেশ কিছু দেশের জনগন ও সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে,অন্য দিকে আমেরীকা চীন সহ বেশ কিছু দেশ পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে নিলর্জ্জভাবে তাঁদের সহযোগিতা করতে থাকে।উল্লেখ্য আমেরীকার জনগন সর্বতোভাবে বাংলাদেশের মুক্তিকামি মানুষের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে-- চাঁদা তুলে সাহায্য করতে থাকে।স্কুল পড়ুয়া শিশুরা তাঁদের টিফিনের টাকা বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য পাঠাবার ব্যাবস্থা করে।এমনিতর পরিস্থিতিতে মধ্য ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ পরিপুর্নতা পেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা চোরাগুপ্তা হামলায় ব্যাপক পাকি সৈন্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকে প্রতিনিয়ত:। আক্রমনের মুখে ব্যাপক সৈন্যের মৃত্যুতে পশ্চিম পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।সেন্যবাহিনীর আত্মীয়স্বজনেরা তাঁদের সন্তানদের অকালে আত্মাহতির কারন ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন শুরু করে।বিশেষ করে পাঞ্জাব ছাড়া আরো দু'টি প্রদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আস্থাশীল নেতৃবৃন্দ ও জনগন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোদ্ধে আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্ছারন শুরু করে। ইয়াহিয়া চতুর্দিকে বিপদের অশনি সংকেত শুনতে পেয়ে যুদ্ধের আশু ফলাফল পাওয়ার ফন্দিফিকিরে লিপ্ত হন। ইয়াহিয়া খাঁন এবং তাঁর পরিষদবর্গ, পরামর্শ দাতাদের তড়িৎ ফলাফল পাওয়ার অস্থিরতায় পেয়ে বসে।তাঁদের মিত্র আমেরীকা সাম্রাজ্যবাদ এবং তাঁর মিত্রদের নিকট সাহায্য কামনা করে পাক সরকারের পক্ষ হতে। এমনিতর সাহায্যের আবেদনের জন্য আমেরীকা ওৎ পেতে বসেছিলেন। কালবিলম্ব না করে বন্ধু পাকিস্তানের জনগনকে সাহায্যের জন্য সপ্তম নৌবহরকে যুদ্ধ সাজে সাজিয়ে বঙ্গোবসাগরে -বাংলাদেশের অদুরে মোতায়েন করা হয়। আমেরীকা বিশ্বের একনম্বর পরাশক্তি তাঁদের নৌবহর মোতায়েনে প্রবাসি সরকারের মধ্যে কিছুটা ভীতির সঞ্চার করে। এই দুর্বলতার মহুর্তে প্রবাসি সকারের মধ্যে আমেরীকার চর রাজনৈতিক ভাবে সংকট নিরসনের জন্য প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিনের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।মীরজাপর মোস্তাক পাকিস্তানের সাথে কনফেড়ারেশন গঠন করার প্রস্তাব দিলে বিচক্ষন প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মেদ ষড়যন্ত্রের আলামত পেয়ে ভারত সরকারের সাথে আলোচনার আয়োজন করেন।বিস্তারীত আলোচনার পর ইন্ধীরাগান্ধী শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বৈঠকস্থল ত্যাগ করেন।পরের দিনই মহান বন্ধু সৌভিয়েত ইউনিয়ন বঙ্গোবসাগরের উদ্দেশ্যে তাঁর অষ্টম নৌবহরকে যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। অষ্টম নৌবহর বাংলাদেশের অদুরে আসার আগেই সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আশংকায় আমেরীকা তাঁর যুদ্ধ জাহাজ প্রত্যাহারের ঘোষনা প্রদান করে। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়-- =========≠=================== ১৯৬৯এর গনয়ান্দোলনের মুখে টিকতে না পেরে লৌহমানব খ্যাত আইয়ুব খাঁন রাতের আধাঁরে তাঁরই জাতভাই আর এক সেনা কর্মকর্তা ইয়াহিয়া খাঁনকে হাতে খমতার মসনদ দিয়ে তল্পিতল্পা নিয়ে চলে গেলেন।ইয়াহিয়া জনগনের দাবী একজন এক ভোট নীতিতে সাধারন নির্বাচনের দাবী মেনে নিলেন।মেনে না নিয়ে উপায় ছিলনা-ততোদিনে পাকিস্তানের উভয় অংশে আন্দোলন এমন এক পয্যায় গিয়ে পৌছে সেখান থেকে জংনকে ঘরে পাঠানো কোন রকমেই সম্ভব হতনা।ইয়াহিয়া নির্বাচন দিলেন কিন্তু সাথে এমন একটি অধ্যাদেশ জারী করলেন আপাত দৃষ্টে মনে সবার নিকট গ্রহন্যোগ্য না হওয়ারই মত।সামরীক সরকার ঘোষনা দিয়ে বললেন,প্রেসিডেন্ট যদি মনে করে নির্বাচিত জনপ্রতিনীধি সম্বলিত সংসদ দেশের জন্য হুমকি হতে পারে তবে প্রেসিডেন্ট তা ভেঙ্গে দিতে পারবেন।উভয় পাকিস্তানের বিজ্ঞ অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল ও ব্যাক্তিবর্গ এই অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানালেন।অনেকেই নির্বাচন করে কোন লাভ হবে না মন্তব্য করে নির্বাচন বয়কট করার হুমকি দিয়ে রাখলেন।উল্লেখ্যযে উভয় পাকিস্তানে জনগনের নেতা হিসেবে সবাই সবাইকেই মনে করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হযবরল অবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছেন।কেহ কাউকে ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। জনগনের আসল একক নেতা বা জনগনের পক্ষে একক সিদ্ধান্ত দেয়ার কোন নেতার আর্বিভাব ততোদিনেও হয়নি। সবাই সবাইকে জনগনের একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে ভাবেন। মুলত তাঁদের কারোরই একচিলতে পরিমান জনসমর্থন ছিলনা।যেহেতু তাঁর আগে কোন সাধারন নির্বাচন অনুষ্টিত হয়ে সংখ্যা গরিষ্ট দলের নেতা নির্বাচিত হননি। বঙ্গবন্ধু জানতেন নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্টতা পেলেও পশ্চিমারা বাঙালি নেতাদের হাতে ক্ষমতা দিবেন না। খমতা হস্তান্তর না করার পরিনতি কি হতে পারে সুদুরপ্রসারী চিন্তাবীদ ততোদিনে আছঁ করতে বেগ পেতে হয়নি। বঙ্গবন্ধু এও জানতেন বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি একমাত্র পুর্ব পাকিস্তানের একক সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক।নির্বাচনে ম্যান্ডেট ছাড়া এই জনসমর্থনের কোন মুল্যই ছিল না। এদিকে অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে নির্বাচন না করে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর উপর চাপ সৃষ্টি করে রাখা হল। এই চাপ আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে যেমন তেমনি বাহিরের অন্য বিরুধিদলের পক্ষ হতেও। বঙ্গবন্ধুর চিন্তাচেতনায় তখন একমাত্র নির্বাচন করে পুর্ববাঙলার একক সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারি হওয়া।বিদেশি রাষ্ট্র সমুহের সাহায্যের জন্য যাহা একান্তই প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজনে পাকিস্তানিরা নির্বাচনকে আরো কঠিন শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ করলেও নির্বাচন করা ঐ মহুর্তে জরুরীই ছিল। সকল চাপকে উপেক্ষা করে তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার ঘোষনা দিয়ে মাঠে নেমে গেলেন। অভিজ্ঞ রাজনীতিক মাওলানা ভাসানি সহ আরো কিছু চীন সমর্থিত দল নির্বাচন বয়কট করে শ্লোগান উঠালেন,""ভোটের বাক্সে লাথী মার--পুর্ব বাংলা স্বাধীন কর।""এখানে যে বড় রকমের ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধুর বুঝতে সামান্যতম দেরী হয়নি।পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে থেকে এই ধরনের বিচ্ছিন্নতার শ্লোগান দেয়া সত্বেও ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে কোন রুপ আইনানূগ ব্যাবস্থা গ্রহন না করে বরঞ্চ রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা দিয়ে যাচ্ছিল।এই থেকেই বুঝতে অসুবিধা হয়নি ভোট বর্জন করার কি কারন থাকতে পারে। বঙ্গবন্ধু চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন ঘোষনা দিয়ে ৬দফা দাবীর সমর্থনে গনরায় চেয়ে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে সফর শুরু করে দিলেন।ভোটের ঝড়ো হাওয়ার ঘোরপাকে সকল ষড় যন্ত্র উবে গেল।পুর্ব পাকিস্তানে ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জীতে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ট আসন লাভ করে একমাত্র নেতা হিসেবে দেশ বিদেশের স্বীকৃতি নিয়ে নিলেন।ষড়যন্ত্রকারিদের হাতে পুর্ব পাকিস্তান বিষয়ে আর কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আইনগত ভিত্তি রইলোনা। সংখ্যাগরিষ্ট আসনের অধিকারি বঙ্গবন্ধুর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে এইবার শুরু হয় আর এক নাটক। শুরু হল প্রাসাদ ষড়যন্ত্র,খমতা হস্তন্তর না করার ফন্দিফিকির,অযথা গড়িমসি। সংসদের অধিবেশন ডেকেও তা স্থগিত করে দেন ইয়াহিয়া। ষড়যন্ত্রের মঞ্চে আর্বিভুত হন জনাব ভুট্রো।তিনি কিছুতেই বঙ্গবন্ধুর হাতে খমতা দিতে রাজী নহেন।খমতার অংশিদারিত্ব দাবী করে বসেন তিনি।খমতা যাতে বঙ্গবন্ধুর হাতে না আসে তাঁর জন্য ঘোষিত অর্ডিনেন্স এর খমতা প্রয়োগ করার জন্য অনেকে প্রেসিডেন্টকে প্ররোচিত করতে থাকেন। এমনি অবস্থায় ইয়াহিয়া ঘোষিত সংসদ অধিবেষন স্থগিত করে দেন।স্থগিত ঘোষনা প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পুর্ববাংলা ফুঁসে উঠে।কিছুতেই জনগন এই ঘোষনা মেনে নিতে পারেনি।জনাব ভূট্রোর পরামর্শে ইয়াহিয়া আলোচনার আহব্বান জানালেন।কৌশলি ভুট্রো--ইয়াহিয়া আলোচনার নামে সময়ক্ষেপন করে পুর্বপাকিস্তানে সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর বুঝতে অসুবিধা হয়নি, পশ্চিম পাকিস্তানিরা গায়ের জোরে আন্দোলন দমন করার কৌশল অবলম্বন করছে।গন আন্দোলন গনুভ্যুত্থানে রুপ ধারন করেছে ততোদিনে।বঙ্গবন্ধু সব দিক নেড়েচেড়ে দেখে নিলেন ঠিক আছে কিনা।জোয়ারের মত বত্রিশ নম্ভরের বাড়িতে মানুষের স্রোত আসতে শুরু করেছে।সারাদেশ মিছিলের দেশে পরিনত হয়ে গেছে।নগর বন্দর,গ্রাম গঞ্জ,সব বয়সের মানুষ মিছিলে সামিল হয়ে গগন বিদারি শ্লোগানে শ্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তুলছিল।স্বাধীকারের আন্দোলন রুপান্তরীত হয়ে গেল স্বাধীনতার আন্দোলনে।সারা দেশ, অফিস আদালত,বঙ্গবন্ধু যাহাই বলেন তাহাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন।পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল পুর্ববাংলার মানুষ।অঘোষিত সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু, আঙ্গুলি হেলনে দিকের নিশানা খুঁজে নিচ্ছেন পুর্ব বাংলার মানুষ। এল সময় ঘনিয়ে ৭ইমার্চের। উত্তাল বাংলার সব স্রোত তখন বঙ্গবন্ধুর বত্রিশ নম্ভর বাড়িতে।ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের উত্তাল বাংলার জনগন স্রোতেরমত সমবেত হতে থাকলেন রেসকোর্স ময়দানে।বাংলার অবিসংবধিত নেতা আজ দিক নির্দেশনা মুলক ভাষন দিবেন।দেশি বিদেশি সকল শক্তি অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বাংলার নেতা এই জটিল পরিস্থিতিতে কি বলেন শুনার অপেক্ষায়।অবশেষ এলেন নেতা, ধীর স্থীর গম্ভীর বেসে।জনতা বাঁশের লাঠি আর বাদ্যযন্ত্রের আমোঘ সুরমুর্চনায় নেতাকে সম্ভাষন জানালেন।নেতা দুই হাত উদ্ধে তুলে বিশাল বুকের সব ভালবাসা বিলিয়ে দিলেন জনতার উদ্দেশ্যে।সেই এক অন্যরকম দৃশ্যের অবতারনা করলো নিমিশে সভাস্থল।ভাবগম্ভীর দরাজ গলায় বঙ্গবন্ধু ভাষন দিলেন জাতির উদ্দেশ্যে। এইতো ভাষন নয়,স্বল্প সময়ে পাঠ করলেন বিশাল এক মহাকাব্য।"তুলনাহীন ভাষার মাধুর্য্য,অতুলনীয় ভাষার ব্যাবহার, বজ্রকঠিন আওয়াজ, এমনতর ভাষন বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আর একটাও কোন স্থানে কোন সময়ে দিয়েছিলেন-- এই তথ্য আজও পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের কোন অঞ্চলের ভাষায় তিনি সর্বগ্রায্য, সর্বজনবোধ্য ভাষনটি দিয়েছেন তাও গভেষনা করে বের করতে হবে।প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি চয়ন, প্রতিটি বাক্য বিশ্নেষনে পাওয়া যায়-- মহা এক কাব্যের অমোঘ শব্দের গাঁথুনি। যুগযুগ গভেষনা করেও শেষ করা যাবেনা এই ভাষনের তাৎপয্য। তিনি সেদিন ঘোষনা করলেন,"এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম--এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম"।তিনি আরো বললেন তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো, আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।"এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। সাথে সাথে শর্ত সাপেক্ষে তিনি আলোচনার দরজাও খোলা রাখলেন।ততদিনে দেশের বিভিন্নস্থানে অগনিত মানুষ পাকিস্তানিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে,বঙ্গবন্ধু বললেন, "রক্তের উপর পা দিয়ে আমি আলোচনায় বসতে পারিনা।যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাঁদের তদন্ত পুর্বক ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে,আগে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে,তার পর বিবেচনা করে দেখবো আলোচনায় বসা যায় কিনা।"" গত কয়েক মাস আগে জাতিসংঘ যুগশ্রেষ্ঠ ভাষন হিসেবে ৭ই মার্চের ভাষনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। জয়বাঙলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা।

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের গৌরব--- ============================= কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেবের দুরদর্শি নেতৃত্বের গুনে প্রথম দিকে বাঙালী নেতারা মোহচ্ছন্ন থাকলেও অচিরেই তাঁদের মোহমুক্তি ঘটতে থাকে।সম্যক ভাবেই জ্ঞানে প্রবেশ ততদিনে শুরু হয়ে গেছে যে, ইংরেজ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে হাজার মেইল দুরের আর এক বিজাতীয় উপনিবেশের শাষন শোষনের নিগড়ে বাঙ্গালীরা আবদ্ধ হয়ে গেছে।এবার যাদের নিয়ন্ত্রনে শাষন শোষনের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেল জাতিতত্বের তকমায়,তাঁদের সাথে না আছে ভাষার মিল না আছে সংস্কৃতির মিল। সর্বপাকিস্থান ভিত্তিক দল মুসলিম লীগের দলীয় কাঠামো পশ্চিম পাকিস্থানীদের নিয়ন্ত্রনে ছিল,এবং সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসার কোন উপায় ও ছিলনা।সঙ্গত কারনে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ছাবি কাঠি তাঁদের হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা মোটেই ছিলনা।সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নিয়ে গেলেও পশ্চিমের নিকট ক্ষমতা থেকে যায়,কারন সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে শতকরা নব্বই ভাগ কর্মকর্তা পশ্চিম পাকিস্থান থেকেই নেয়া হত।বাঙ্গালীরা অধিকতর খাটো জাতি হওয়ার কারনে ভর্তি প্রক্রিয়ার বেষ্টনি বেদ করে প্রশিক্ষন প্রক্রিয়ায় পৌছার কোন সুযোগ পেতনা।সঙ্গত কারনে নতুন স্বাধীন হওয়া দেশটির সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাদের অংশ গ্রহনে পুর্বাঞ্চল অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বহুগুন পিছিয়ে যায়।পুর্বাঞ্চল যতই পিছিয়ে যেতে থাকে ততই শোষনের মাত্রা বাড়তে থাকে।পশ্চিমারা তাঁদের শহর সাজানোর মানষিকতায় প্রথম ১৫ বছরের মধ্যেই পাকিস্তানের তিন শহরে রাজধানী পরিবর্তন করে শহর কেন্দ্রিক বিনিয়োগের নামে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাজেট বরাদ্ধ একক ভাবে নিয়ে যায়।প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনের জন্য বর্তমানের সংসদ এলাকায় জমি আধিগ্রহন করেও কোন উন্নয়ন বরাদ্ধ ২৪বছরেও দেয়া হয়নি।অথছ কেন্দ্রীয় সকারের রাজধানী তিন শহরে পরিবর্তন করে স্বল্প সময়ের মধ্যে উক্ত শহরে অধিবেশন কক্ষ নির্মানে টাকার অভাব হয়নি।এই থেকেই বুঝা যায়, আর ২৪ বছর সময় পেলে তাঁরা পুর্ব বাংলাকে শোষনের নিগড় থেকে বের হওয়ার কোন পথ খোলা রাখতো কিনা।এমন্তর পরিবেশ তাঁরা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়,স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কোন প্রকার রাষ্ট্রীয় ঘোষনা ব্যাতিরেকে বাঙালীরা সর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় শ্রেনীতে রুপান্তরীত হয়ে যায়।বাঙ্গালী ছেলেমেয়েরা সহসাই তাঁদের বাসার চাকর বাকর হয়ে কোন রকমে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়ে যায়। গনতন্ত্রের লেশমাত্র ছিলনা।একের পর এক সামরিক জান্তার মাধ্যমে খমতার হাতবদল হতে থাকে।২৪ বছরেও একটা সংবিধান প্রনয়ন করার সুযোগ তারা দেয়নি।সামরিক পরমানের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার অভিনব পন্থায় চলে শাষন শোষন। অভিবক্ত বাংলার প্রধান মন্ত্রী এ,কে ফজলুল হক,শহিদ সরওয়ার্দিকে জোরপুর্বক দেশত্যাগে বাধ্যকরে চলতে থাকে নির্ভেজাল শোষন।বিতাড়িত জীবনেই বাংলার অবিসংবধিত নেতা সশহিদ সরওয়ার্দীর মৃত্যু হলে দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব পান শেখ মজিবুর রহমান। ততোদিনে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে পূর্ববাংলায় নিষ্পেষণের মাত্রা বাড়ায়। পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তন করে করা হয় পুর্বপাকিস্তান। অভিনব নতুন মাত্রায় বাঙালির শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির উপর আঘাত হানা হয়।সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দায়িত্ব বর্তালো তরুন নেতা শেখ মুজিবের ওপর। সর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ হতে বের হয়ে ততদিনে পালটা মুসলিম লীগ গঠন করা হয়।এই দলের নিরংকুস প্রাধান্য থাকে পুর্বাঞ্চলের বাঙালি নেতাদের।মওলানা ভাসানী আরও কতিপয় ব্যক্তির নেতৃত্বে মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা দলছুট ব্যক্তিরা গঠন করেছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। দলটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করেছিল। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাহসী ও অক্লান্ত পরিশ্রমিকর্মী পরবর্তির বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৪ সালে পুর্বাঞ্চলের সব দল একত্রে মিলে গঠন করেন যুক্ত ফ্রন্ট।তৎকালিন পুর্বপাকিস্তানের প্রবীন নেতা শেরে বাঙলা এ,কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে সবাই জোটবদ্ধ হয়ে প্রাদেশিক যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে ৫৪ ইং সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে লড়েছিলেন। নির্বাচনে বিপুল ভোটে কল্পনাতীত জয় পেয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। মুসলিম লীগের অবস্থা এমন পয্যায় নেমে এসেছিল যা পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা কল্লপনাও করে দেখেননি তাঁদের ভাগ্যে ধস নামানো পরাজয় ঘটবে। পূর্ববাংলা মুসলিম লীগের রাজনীতিকেই মুছে দিয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি কেন্দ্রীয় সামরিক বাহিনীর দখল করা রাষ্ট্রপতি। এক ঘোষনা বলে যুক্তফ্রন্ট সরকার বাতিল করে দেয় পাকিস্তানিরা। এরপর কাষ্মির ভুখন্ডের দাবীকে কেন্দ্র করদ ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে ১৭ দিনের এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তান চরমভাবে পরাজিত হলে অসম্মানজনক তাসখন্দ যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধের সময়, পূর্ববঙ্গ ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত,এক ব্যাটেলিয়ন সৈন্যও পুর্বাঞ্চল আক্রান্ত হলে সাময়িক বাধার জন্য মোতায়েন করা হয়নি।পুর্বাঞ্চলের যুবকদের হাতে বাঁশের লাঠি দিয়ে পাহারায় নিয়োজিত রেখে সকল শক্তি পশ্চিমাঞ্চলে সমবেত করেও শেষ রক্ষা হয়নি। যুদ্ধে হেরে গিয়ে অসম তাস খন্দের চুক্তি করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। দুরদর্শী তরুন আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা শেখ মুজিবর রহমান কোন বিলম্ব না করে কাঁচা এই মোক্ষম ইস্যুটিকে জনগণের সামনে নিয়ে আসেন। যুদ্ধকালে পূর্ববঙ্গ থেকে প্রতিরোধের জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়নি,বাস্তবতায় জনগনের দেখা এই বিষয়টি পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের মনের চিন্তাচেতনার সাথে হবহু মিলে যাওয়ায় লুপে নেয় বিষয়টিকে। ভারত পূর্ববঙ্গ আক্রমণের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে সর্বশক্তি নিয়োগ করে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করাই শ্রেয় মনে করে পুর্বাঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করেও আক্রমন করেনি।তাঁদের রণকৌশল যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে প্রমান করেছে সঠিক ছিল। পাকিস্তানের মসুলমানদের সামান্য হিন্দুবাহিনীর নিকট চরম পরাজয় পুর্ব পাকিস্তানের জনগন মেনে নিতে পারেননি।তেজস্বি মুসলিম বাহিনীও এতে চরম অপমান বোধ করতে থাকে।পরাজয়, অপমান বাঙালিদের ক্ষুব্ধ করে তুলে। শেখ মুজিবুর রহমান মোক্ষম ক্ষোভের এই মহুর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিটি সামনে নিয়ে আসেন। ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি। সারা বাংলার মানুষ এই কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে। ততদিনে যুদ্ধব্যায় মিটানোর কারনে পুর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশের অর্থনৈতিক বৈষম্য তখন আকাশ চুঁই ছুঁই করছিল।পুর্বাঞ্চলের দ্রব্যমুল্য পশ্চিমের চাইতে কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুনের বেশিতে ঠেকে।বৈশম্যের মাত্রাবেড়ে চলেছিল প্রতি বছর। দুরদর্শি নেতা সঙ্গে সঙ্গে দাবী উত্থাপন করে বসেন সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সংস্কারের নিমিত্তে ছয়দফা দাবী উত্থাপনের মাধ্যমে। এই দাবি আদায়ের আন্দোলনের তিব্রতা দিনের পর দিন প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠছিল প্রতিদিন প্রতিনিয়ত।আহম্মক সামরিক জান্তা রাজনৈতিক দাবিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে মামলা মোকদ্দমার ফাঁদে ফেলে, দমন পীড়নের আশ্রয় নিয়ে--মোকাবেলা করার কৌশল অবলম্বন করে।পাকিস্তানী শাসকরা প্রথমেই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা আগিরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজুও করে বঙ্গবন্ধুওকে প্রধান আসামি করে।এতে হীতে আরো বিপরীত হল।পুর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা এই মামলাকে বাঙ্গালি জাতিকে আরো নিষ্পেষিত, কণ্ঠরোধ করা, অধিকারহীন অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করে ব্যাপক হারে আন্দোলনে সম্পৃত্ত হতে থাকল। ছাত্র সমাজ এই মামলার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এক্যবদ্ধ হলো। তারা তাঁদের নিজস্ব ব্যানারে ৬ দফার আলোকে ঘোষণা করে ১১ দফা। তখন ছাত্র সমাজের উপর জনগনের আস্থা ছিল প্রশ্নাতীত।ছাড়া আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সাথে সাথে সারা বাঙলা থর থর করে কেঁপে উঠে।অসীম সাহস আর মনোবল নিয়ে জনগন সম্পৃত্ত হওয়ার কারনে একই সময়ের মধ্যে গর্জে উঠল সারা বাংলা। সামরিক শাসক আইয়ুব খানের গদি টলমল। সারা পূর্ববাংলায় গণআন্দোলন নিমীশেই ছড়িয়ে পড়ে। তার ঢেউ লাগে পশ্চিম পাকিস্তানেও। গনজোয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই রুপান্তরীত হয়ে গেল গণঅভ্যুত্থানে। সৃষ্ঠ গনঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব শাহী ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলেন। জয়বাঙলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের গৌরব ====================================== অখন্ড পাকিস্তান থেকে বিছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অনেকগুলি কারনের মধ্যে প্রধান কারন তিনটি (১)অর্থনৈতিক বৈশম্য (২)সাম্প্রদায়িকতা (৩)কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পার্থক্য।কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ক্যারিস্মেটিক নেতৃত্বে তৎকালিন পুর্ববাংলা দ্বিজাতি তত্বের নিগড়ে বাধা পড়ে যদিও দুই হাজার মেইল দুরত্বের ভিন্ন জাতগোষ্টির সংগে জোট বদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার অদম্য আখাংকার বাস্তবায়ন করেছিল, সেই আশা আখাংকায় ভাটার টান পড়তে খুব বেশি দেরী হয়নি।পশ্চিম পাকিস্তানীরা পুর্ব পাকিস্তানকে শোষন শাষন করার জন্য প্রথমেই পুর্ব বাংলার ভাষা কৃষ্টি পরিবর্তন করার পদক্ষেপ নিলে দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈরিতার জম্ম নেয়।ভাষা পরিবর্তন এবং বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য পুর্ব পাকিস্তানে যে আন্দোলন গড়ে উঠে তাহাই পয্যায়ক্রমে স্বাধীনতার দিকে দাবিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বসস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধের রুপ ধারন করে।পুর্ব পাকিস্তানের বাঙালী মসুলমানদের ভাষায় হিন্দুত্বের গন্ধ আছে মর্মে অভিযোগের ভিত্তিতে ভাষা পরিবর্তনের আজগুবি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগে বাঙ্গালিরা মর্মে মর্মে অনুভব করে পশ্চিমের সাথে পুর্বের মিলন কোনকালেই সম্ভব হবেনা।পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম অধ্যায়ে যাহা অনুভব করেছিলেন বাঙ্গালিরা ২৪ বছরে তাহাই সর্বক্ষেত্রে পরিস্ফুটিত হয়ে বিশালকার পাহাড়ের আকার ধারন করায় '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অনিবায্যতার লক্ষন ফুটে উঠে।বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রুপ দানের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে বাঙালিদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধের অংশের রাজনৈতিক উপস্থিতিও লক্ষনীয় ছিল। বর্তমান জামায়াতে ইসলামী,মুসলিম লীগ, নেজামি ইসলামী,ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি সহ কতিপয় দল ও ব্যাক্তি পাকিস্তানিদের পক্ষাবলবন করে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা করতে থাকে।'৬৯ এর গনুভ্যুত্থানের পর '৭০এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিশাল সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়ে একক নেতৃত্বদানকারি দল ও ব্যাক্তি মুজিবের উত্থান ঘটলে স্বাধীনতার চুড়ান্ত আকার ধারন করতে আর বেশি সময় নেয়নি।নির্বাচিত এককদল ও ব্যাক্তি শেখ মজিবকে ক্ষমতা গ্রহন করার সুযোগ না দিয়ে জোর পুর্বক অস্ত্রের ভাষায় বাঙ্গালিদের দমন করে শোষন শাষন অব্যাহত রাখার অদম্য আখাংকায় '৭১এর ২৫মার্চের কালোরাতে বাঙ্গালিদের উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাপিয়ে পড়ে।নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে, শারা ঢাকা শহরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিমিশে ধ্বংসস্তুপের বিভিষিকাময় এক অন্ধকার যুগের প্রবর্তন করার চেষ্টা করে।শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের নির্দেশ অনুযায়ী স্থানে স্থানে প্রতিরোধ।সেই প্রতিরোধ যুদ্ধই রুপান্তরীত হয় মহান স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের সসস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিকল্প শক্তি পুর্ব পাকিস্তান থেকেই সৃষ্টি হয়।যারা ৪৭-৭০ইং ২৪ বছর পয্যন্ত বাঙালির প্রত্যেক আন্দোলন সংগ্রামে বাধা দিয়ে পাকিদের স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল তারাই মুক্তি যুদ্ধে গঠন করে পাক সেনাদের সহযোগিতা করার জন্যে রাজাকার, দালাল, আলবদর, আলশামস, মুজাহিদ বাহিনী। জামায়াতে ইসলামী তখন এতে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল।সম্মিলিত বাহিনী ইসলাম রক্ষা করার নামে শুরু করে তান্ডব লীলা।হত্যা,নারী নির্যাতন,আগুন, লুটতরাজ। এমন কোন কিছু বাদ রাখেনি যা মানবতার ইতিহাসে আগে কখনই কোন জাতি দেখেছে বা এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়েছে। একুশ শতকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাসে পেছনে ফিরে তাকালে সে সব নৃশংসতার দৃশ্য ভেসে উঠে মনের আঙ্গিনায়। আজ চুয়াল্লিশ বছর পেরিয়েও সেই নৃশংসতার ইতিহাস, বর্বতার দৃশ্য, হত্যাযজ্ঞের বিভিষিকা বারবার চোখের সামনে স্বপ্নের ঘোরের মতই ভেসে উঠছে।তাইতো দেখা যায় আজকের নতুন প্রজন্মও একাত্তরের বর্বরতার জন্য দায়ীদের কোন ভাবেই ক্ষমা করতে রাজি নয়। তারা মনে করে ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মদান ও তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনদেশে পরাজিত শক্তির অপতৎপরতা বন্ধ করা স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্বকে নিরাপদ রাখার স্বার্থেই প্রয়োজন ।মহান স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতির জীবনে এক মহান ত্যাগ,নির্যাতনে নিস্পেষিত হওয়ার পর বেঁচে যাওয়ার আনন্দ,যুদ্ধে জেতার অহংকার,বাঙ্গালির স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের এক গৌরবময় দিন। বহু ত্যাগ তিতিক্ষা এবং নয় মাস রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধে অবতির্ন হয়ে স্বসস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালির স্বাধীন,সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম,অসিম সাহষ,বাঙ্গালির প্রতি অকৃত্তিম ভালবাসা,তেজদিপ্ত নেতৃত্ব,জেল জুলুম হুলিয়ার অপরনাম আমাদের রক্তেভেজা আজকের এই স্বাধীনতা।বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার আপমর জনগন নারী পুরুষ যুবক যুবতি, কৃষান কৃষানি তথা সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা লাল সুর্য্য। প্রত্যেক দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন একটি গৌরবময় ঘটনা। পৃথিবীতে কম সংখ্যক জাতি আছে, যারা রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এদিক থেকে একটি ব্যতিক্রমী দেশ। এই দেশটি মহান মুক্তিযুদ্ধ এ সাগরসম রক্ত অগনিত মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।স্বাধীনতা সম্পর্কে বাঙালি জাতি যতো ত্যাগ বিসর্জন দিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করেছে, ততোটা অন্য কোন জাতি পারেনি। "স্বাধীনতার মন্ত্র আত্মজ্জল ধারণাটি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ যেভাবে আমাদের মননে এঁকে দিয়েছেন, আর কোনও দেশের কবি মনিষীরা সেভাবে দিতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথের মতে_ "স্বাধীনতা বাহিরের বস্তু নহে। মনের ও আত্মার স্বাধীনতাই প্রকৃত স্বাধীনতা। স্বাধীনতাকে জীবনের আদর্শ হিসেবে যে গ্রহণ করিতে শিখিয়েছে এবং অপরের প্রতি উহা সম্প্রসারিত করিতে যে কুণ্ঠিত নয়, সেই প্রকৃত স্বাধীনতার উপাসক।... স্বাধীনতা সম্বন্ধে অপরের প্রতি যাহারা একাত্মতা প্রকাশে অক্ষমতা প্রকাশে অভ্যস্ত,অপরের প্রতি অবিশ্বাস এবং সন্দেহ, স্বাধীনতার ওপর তাহার কিছুমাত্র নৈতিক দাবি থাকে না, সে পরাধীনই রহিয়া যায়। আমি তাই আমার দেশবাসীকে একথা জিজ্ঞাসা করিতে চাই যে, যে স্বাধীনতার ওপর তাহাদের আখাংকা তাহা কি বাহিরের কোনও বস্তু বা অবস্থা বিশেষের ওপর নির্ভরশীল? তাহারা কি তাহাদের সমাজের ক্ষেত্রে শত রকমের অন্যায় ও অসঙ্গত বাধা হইতে বিমুক্ত এতটুকু স্থান ছাড়িয়া দিতে সম্মত আছেন, যাহার ভিতর তাহাদের সন্তান সন্ততি মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ মর্যাদায় দিন দিন বড় হইয়া উঠিতে পারে?" 'স্বাধীনতার মূল্য' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ মানবতা বোধকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। একাত্তর সালে রবি ঠাকুরের সেই মানবতারই জয় হয়েছিল। আর পরাজয় ঘটেছিল দানবদের।" কোন দেশেই মুক্তিযুদ্ধ বারবার আসে, তা কিন্তু নয়। সেই মুক্তিযুদ্ধে যারা যোগদান করেন এবং গর্বের শিখরে উপনীত হন, তাদের কোনো তুলনা হয়না,তাঁদের ঋন পরিশোধ যোগ্য নয়। কারন জীবনকে সে তুচ্ছ করে দেশকে দখলদারমুক্ত করার জন্য সে ঝাপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে,এখানে তাঁর কোন ব্যাক্তিগত লাভালাভের প্রশ্ন ছিলনা,লাভ পাওয়ার কোন রাস্তাও ছিলনা।একান্ত দেশের স্বার্থে অস্ত্রহাতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে দেশ মাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করেছে।যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু অনিবায্য ছিল,হেরে গেলেও মৃত্যু তাঁর নিশ্চিতই ছিল।সে কোন কিছু পরোয়া করে যুদ্ধে যায়নি,গিয়েছে একান্ত মনের টানে।তাই সর্বযুগে সেই অকোতভয় সৈনীক দেশ ও দশের গৌরবের শিখরেই তাঁর অবস্থান থাকে।হয়তো কেউ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, নয়তো কেউ গোপন পোস্টার লিখে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। কোনো দেশেই সেই যুদ্ধ পুনঃপুনঃ আসে না। তেমন যুদ্ধে তখনকার তরুণ তরুনি, ছাত্র ছাত্রী,সর্বস্তরের মানুষ যোগ দিয়েছিল। আমার আত্মীয়স্বজনদের বিরাট অংশই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে,আমি বা আমার সমবয়সি বন্ধুরা নিতান্তই ছোট ছিলাম বিদায় পারিনি।তবে বুঝার এবং জানার বয়স হয়েছিল। ভাগ্য হয়তো আমার প্রতি সুপ্রসন্ন ছিলনা তাই যেতে পারিনি।আর মাত্র চার পাঁছ বছর পর যদি সেই মহান কর্মটি অনুষ্ঠিত হত হয়তো আমিও গর্বিত এক মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সমাজে বিচরন করতাম।দেশের মহতিক্ষনের অনুপস্থিতি ক্ষনে ক্ষনে নীজকে বিচলিত করেনা তা কিন্তু নয়।আমি রক্ত দেখেছি,নাখাওয়া পাগল প্রায় মুক্তি সেনাদের চোখের আগুন দেখেছি।তাঁদের পানি এনে দিয়েছি তৃষনা নিবারনে।তাঁদের বন্দুক গুলী হাত দিয়ে ছুয়ে দেখেছি। স্বাধীনতার যুদ্ধকালিন এই স্মৃতিটুকু বন্দুকের সেই স্পর্শ, সেই গৌরব মনের আঙ্গিনায় অচঞ্চল মূর্তির মতো স্থানুবৎ দাঁড় করিয়ে রাখে আমাকে সর্বক্ষন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দৃশ্যত একাত্তরের মার্চ থেকে শুরু হলেও এর প্রেক্ষাপট রচিত হয় ঐ যে বললাম'৪৭ইং সালের বাঙালির উপলব্দি কথা।মুলত তখন থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘদিন সামাজিক, রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা তিনি। মুলত ৭০ এর জাতীয় নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে ও নির্দেশে, সার্বিক তত্বাবধানে তখনকার পুর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ চলছিল। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের কারনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বিশ্বজনমতের সমর্থন লাভ করা অত্যান্ত সহজতর হয়েছিল নির্দিদ্বায় বলা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় যদিও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছিল। যুদ্ধকালে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার 'মুজিব নগর সরকার' নামেই পরিচিত ছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার জন্য পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগকে এককভাবে দায়ী করেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করবার পথ সুগম করার অপরাধে পাকিস্তানী সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মৃত্যুদণ্ড দিতে বদ্ধপরিকর হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বজনমতের ভয়ে সেই দণ্ড কার্যকর করতে পারে নি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। বাংলাদেশ এক ঘোষণায় স্বাধীন হয়ে গেছে যারা ভাবেন, তারা আসলে এদেশকেই মেনে নিতে পারেন না বা ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান করে পরাজিত শক্তির পক্ষাবলম্বন করেন। বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো তিনি আমাদের বাঙালি জাতিসত্তাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই প্রক্রিয়া হঠাৎ করে শুরু হয়নি। বাঙালির দীর্ঘদিনের আত্মানুসন্ধান, দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও সংগ্রামের অমোঘ পরিণতি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। বিস্ময় জাগে বৈকি এখন যে, এই ভূখণ্ড যেটি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথমে 'পূর্ববাংলা' এবং পরে 'পূর্বপাকিস্তান' নামে পরিচিত ছিল, সেটিকে ১৯৬৯ সালে 'বাংলাদেশ' বলে ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই জাঁদরেল পাকিস্তানী সামরিক শাসক গোষ্ঠীর ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু এই নামটি বেচে নিয়েছিলেন। প্রত্যেক সভায় বাংলাদেশের নাম বলেই বক্তৃতা দিতেন।তিনিই এদেশের রাজনীতিকে মধ্যযুগীয় ধর্মীয় সামপ্রদায়িক আবর্ত থেকে উদ্ধার করে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ ধারায় প্রবাহিত করার উদ্যোগতা।অন্য আরো অনেকেই ছিলেন, শেখ মুজিবের অবদান ছিল অনন্য। বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত ইচ্ছার ধারক বাহক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যে জাতীয় চেতনার উন্মেষের ফলে আমাদের ছোট বেলার সময়কালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটেছে, সেই জাতীয় চেতনার উন্মেষের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অবিস্মরণীয়।১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালি মুসলমানদের রাজনৈতিক ও সমাজ চিন্তায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত করেছিলেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী তার প্রতিই বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করেছিলেন। তাকেই বার বার জেলে পুরেছেন,তাঁরজন্যই আগরতলা মামলা সাজিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিলেন।২৫ শে মার্চ তাঁকেই বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়েছিলেন।৭ই মার্চের স্বাধিনতার দিক নির্দেশনামুলক ভাষন শুধু বঙ্গবন্ধুই দিয়েছিলেন।লাখো জনতা সে দিন বঙ্গবন্ধু কি বলেন সেই দিকেই মনোনিবেশ রেখেছিলেন।তিনিই বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাঙ্গালীরা শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর উপর নির্য্যাতনের প্রতিবাদেই ফুঁসে উঠেছিল। " জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু ভজয়তুদেশরত্ম শেখ হাসিনা"

ছবি

নব্য আইএস আই কে মোকাবেলায় নতুন প্রজর্মকে উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষনের বিকল্প নেই--- ----------------------------------------------- ----------------------------------------------- এই কয়দিনের ধারাবাহিক আলোচনায় আমরা একটি সত্যে উপনিত হতে পারি,সত্যটি হচ্ছে '৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে অর্জিত এই দেশটা যে স্বপ্নের বাস্তবায়নের আখাংকায় জাতির জনকের ইস্পাত কঠিন দৃডচেতা নেতৃত্বে স্বাধীন করেছিলেন বাংলাদেশের আপামর জনগন--,সেই স্বাধীনতার স্বাদ প্রাপ্তির আগেই বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে ৭১এর আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয় পরাজিত শত্রুরা। মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনার রাজনৈতিক ধারা, অসামপ্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও শোষণহীন, ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ বিনির্মান। দেশটিকে তার জন্মের অঙ্গীকারে দৃঢ়তার সঙ্গে স্থাপন করতে চায় বর্তমান সরকার। বিপরীত একটি পক্ষ স্পষ্টতই পাকিস্তানপন্থি, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী ধারায় অর্থাৎ পাকিস্তানের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। অসাম্প্রদায়িক,প্রগতিশীল,বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক ধর্ম নিরপেক্ষ ধারার প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।অন্য দিকে কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভুলুন্ঠিত করে সাম্প্রদায়িক মধ্যযুগীয় রাষ্ট্র ব্যাবস্থা ফিরিয়ে আনার নেতৃত্বের ধারক বাহকের ভুমিকায় উলঙ্গভাবে অবতিন্ন হয়েছিলেন জাতির জনকের খুনি মরহুম জিয়াউর রহমান।তিনি স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুদের রাজনীতিতে পুনপ্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতা গ্রহন করেই তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেন।অন্য অর্থে বলা যায়, মরহুম জিয়া দেশে পাকিস্তানপন্থি রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি যে কেবল গোলাম আজমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন তাই নয়, জামায়াত, মুসলিম লীগসহ অন্য সব পাকিস্তানপন্থি রাজনৈতিক দলকে তিনি পুনর্বাসিত করেন, তাদের ক্ষমতার অংশীদার করেন এবং সেই পরাজিত শত্রুদেরকেই রাজনীতিতে মহীরূহে পরিণত হতে সহায়তা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতির সেই পতাকাটিকে দৃঢ়ভাবে বহন করে চলেছেন অদম্য স্পৃহায়। এমনকি তার পুত্র তারেক জিয়া লন্ডনে বসে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা "আইএসআই-"এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার মানষে আন্তজাতিক জঙ্গি সংগঠন সমুহের সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা নিয়ন্তর করে যাচ্ছেন কোন কোন ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছেন। শুধু তাই নয় বিশ্বখ্যাত সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহীমের সাথেও কয়েক দফায় বৈঠকে মিলিত হয়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের জাল বিস্তারে প্ররোচিত করে যাচ্ছেন।এই গুরুত্বপুর্ন সংবাদটি গোয়েন্দাদের অবহিত করেছেন তাঁদের সরকারের সাবেক স্ব -রাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর। বৈঠকের সচিত্র প্রতিবেদনও পত্রিকা সমুহে ছাপানো হয়েছে।তারই ধারাবাহিকতায় বিপুল পরিমান ডলার খরছ করে আন্তজাতিক ভাবে খ্যাতি সম্পন্ন লবিষ্ট ফার্ম নিয়োগ দেয়ার খবর বিশ্বখ্যাত পত্রিকা সমুহে প্রমান সহ ছাপানো হয়েছে।এই ঘরানার রাজনীতির অতীতটাও এই ধারার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে হত্যা করাসহ স্বাধীনতার পক্ষের জাসদ ও তার সহযোগী সব রাজনৈতিক শক্তিকে নির্মুল করার মহাপরিকল্পনা ঠান্ডা মাথায় বাস্তবায়ন করে ক্ষমতা নিষ্কন্টক করেছিলেন। বেগম জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে একই ছকে কাজ করতে ২১শে আগষ্ট সহ আওয়ামী লীগ ও তাঁর অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের বহু নেতা কর্মিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় হত্যা করেছিলেন।তাঁদের বিপরীত ধারার প্রধাননেত্রী জাতির জনকের কন্যা বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্যই ২১শে আগষ্ট কলংকময় দিনের সৃষ্টি করা হয়েছিল।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৮ ইং সালে বিপুল জয় নিয়ে মহাজোট ক্ষমতায় আসে।বিভাজনের রেখামুছে দিতে, জাতিকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে উপায়ন্তর না দেখে একাত্তরের ইস্যুটিকেই রাজনীতির প্রধান ইস্যু হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করেই প্রথমে জাতিকে বিভক্ত করার জন্য স্বৈরাচারদের প্রনিত সংবিধানের ধারা উপধারা সমুহ বাতিল, সকল কালাকানুন এবং অগণতান্ত্রিক বিধানগুলোর পরিবর্তন করে ৭২ এর মুল চেতনায় দেশকে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সফলতার সংগে সমাপ্ত করেন। শুধু তাই নয় জাতিকে দ্বিখন্ডিত করার মুল কারিগর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সফলতার সাথে দন্ডকায্যকর করে চলেছেন। বস্তুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান দুটি রাজনৈতিক ধারার বিভাজনকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জাগ্রত করেছে এবং বিভক্তি যে তাঁদের সৃষ্ট তা আরও স্পষ্ট করেছে। বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়াসহ একটি পক্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার দাবি করে সফল হতে না পেরে সহিংসতার আশ্রয় গ্রহন করে জাতিকে অন্ধকারের দিকে টেনে নেয়ার মানষে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন । তিনি হুমকি দিয়ে নিলর্জ্জভাবে বলেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধারাও গণহত্যা করেছে,,তিনি ক্ষমতায় এসে তাঁদের বিচার করবেন। তাঁরা সবসময়ে বলতেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাঁর অসারতাই প্রমানীত হল।আওয়ামী লীগ সহ এই ধারার মানুষ সব সময়ে বলে আসছিলেন, বহু মুক্তিযোদ্ধাই পাকিস্তানের দালাল আবার বহু রাজাকার যে মুক্তিযোদ্ধাদের চাইতে কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশী অবদান রেখেছেন তারই সত্যতা প্রমানীত হল। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কারনে খালেদা জিয়ার মত অশিক্ষিত রন্ধনশালার বউ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন,অঢেল লুটের টাকায় ভাঙ্গা স্যুটকেস ভর্তি করতে পেরেছিলেন,ছেঁড়া গেঞ্জীর স্থলে হাল ফ্যাসনের ডান্ডিডাইং এর মালিক হতে পেরেছিলেন, রাজধানী ঢাকায় একাধিক বিশাল বিশাল সরকারি বাড়ির মালিকানা নিতে পেরেছিলেন।শুধু তাই নয় কোকো নামের ১২ টি জাহাজ এবং ক্যারো নামের মদের কারখানার মালিক ও জিয়া পরিবার হতে পেরেছিলেন।সেই মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের কাঠগড়ায় উঠাবেন বলে তিনি তাঁর পাকি প্রেমের পুরাতন ইতিহাসই বাংলার জনগনকে স্মরন করিয়ে দিলেন। বেগম জিয়া স্পষ্টতই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে তার অবস্থান দৃড করে প্রকাশ করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও একই কথা বলেছেন। এটি এখন স্পষ্ট যে, বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত দেশটিকে একটি ইসলামী-জঙ্গিবাদী-তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। একাত্তরে এই চিন্তা-চেতনাটি যাদের ছিল তারা পাকিস্তানের দোসর।পাকিস্তান ও তাঁদের ভুমিকা ইদানিং পরিস্কার করেছেন বিশ্ববাসির সামনে তাঁদের সংসদে বাংলাদেশের মানবতা বিরুধি অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা পাশের মাধ্যমে।দন্ড পাওয়া ব্যাক্তি বর্গ তাঁদের দেশের মহান বন্ধু বলে তাঁরা অভিহিত করেছেন।তার পর ও কি বলতে হবে বা সাক্ষ দিতে হবে পাকিস্তানের মহান বন্ধুরা যুদ্ধ অপরাধি নয়?? বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত জোটের এই রাজনীতি শেষ পয্যন্ত তালেবান দমনের পর আইএস আই এর ভুমিকায় অবতির্ন্ন হয়েছে। তাঁরা বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে অন্ধকার যুগের দিকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সারা দেশব্যাপি হত্যা গুপ্তহত্যা,,বিদেশি নাগরিক হত্যা ইত্যাদি অশুভ কাজ সমানে চালিয়ে যাচ্ছে।মুলত তারা বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের পর থেকেই হত্যাকান্ড সমুহ সংঘটিত করে আসছে।বর্তমান বিশ্ব আইএস আই আতংকে কম্পমান বিদায় সেই নামটি ব্যাবহার করে দায় তাঁদের ঘাড়ে রেখে বাংলাদেশকে অস্থির করে বিদেশি প্রভুদের বাংলাদেশ আক্রমন করার পথ প্রসস্ত করাই লক্ষ। পাকিস্তানের জামাতে ইসলাম তাঁদের সরকারকে বাংলাদেশ আক্রমন করে তাঁদের বন্ধুদের জীবন রক্ষার দাবী থেকে আরো স্পষ্টতা পেয়েছে। দেশটি এখন মূলত আবার সত্তর-একাত্তরের রাজনীতিতে দাঁড়িয়ে পড়েছে।মহাজোট ও তার সমর্থকরা দেশটিকে একাত্তরের মূল নীতির কাছাকাছি নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে দাঁড় করাতে চায়। আওয়ামী লীগ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রশ্নে কিছুটা সরে দাঁড়ালেও বা সমাজতন্ত্র শব্দটি স্পষ্টভাবে না বললেও বাংলাদেশকে অন্তত একটি তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে দিতে চায় না। তাদের জন্য গোড়ামি, কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও প্রগতিবিরোধী একটি রাষ্ট্রের কথা ভাবাও কঠিন। খুব সাম্প্রতিককালে জামায়াত-হেফাজতকে মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মহলে অন্তত এটি প্রমাণ করতে পেরেছে যে, তারাই একটি মধ্যপন্থি উদার অসাম্প্রদায়িক অথচ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম। ২০ দলীয় জোট ও হেফাজত পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় সেটিও আওয়ামী লীগ সরকার কূটনৈতিক মহলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধায় উন্নত প্রশিক্ষন নিয়ে এবং নীজেদের আইএস আই দাবী করে বাংলাদেশ- পাকিস্তান অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক-অসাম্প্রদায়িক চেতনার লড়াইটাকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে চায়। আমরা যারা প্রগতির ধারায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে গড়ে তোলার নিয়ন্তর সংগ্রামে ব্যাপৃত রয়েছি তারা কেবলমাত্র বক্তৃতা বিবৃতি সমাবেশ বা মানববন্ধন করে এই চরম অবস্থা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাঁদের সংঙ্গে পাল্লা দিতে একাত্তরের বন্দুকের লড়াইটাকে ডিজিটাল লড়াইতে রূপান্তর করতে হবে। আসুন ফেসবুক, ভাইবার, হুয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করে নয় এইসব ডিজিটাল প্লাটফরমকে ব্যবহার করেই একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে মোকাবিলা করি। আর সেই কাজটি করার জন্য এই ধারার নতুন প্রজর্মকে উন্নত প্রশিক্ষন দেয়ার কোন বিকল্প নেই।কলমের ধারে বিভ্রান্ত হয়েই তাঁরা মুক্তমনা লেখক, সাহিত্যিক সাংবাদিক হত্যার মিশন হাতে নিয়েছে।একাত্তরেও তাঁরা এই ধারায় বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে স্বাধিনতার পর রাজনীতি তাঁদের নিয়ন্ত্রনে নিতে সক্ষম হয়েছিল।সেই একই ধারায় পরাজয়কে জয়ের ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার শেষ চেষ্টার অংশ হিসেবেই তাঁরা হত্যামিশন পরিচালনা করছে।তাঁদের ভয়ে বিদেশ পালিয়ে গিয়ে বা কলম বন্ধ করে সামাজিক দায় এড়ানো যাবেনা।তারা যা চাইছে তাঁর ফাঁদে পড়ার অর্থই হচ্ছে জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া।ভয় পেলে ভয়ই চেপে বসে,সাহষ করে মুখোস উম্মোচনের মিশনে সবাই এক যোগে ব্রতি হলে জয় অবশ্যই আমাদের হাতচানি দিয়ে ডাকবে।আসুন বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে সম্পৃত্ত করে অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার শফথ গ্রহন করি। দেশ ও জাতির আশা আখাংকার প্রতি নীজেদেরকে নিবেদিত রেখে- প্রত্যেকের স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করি।বিজয়ের মাসে লাখো শহিদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার বাস্তবায়নে জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। " জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা"

ছবি

নব্য আইএস আই কে মোকাবেলায় নতুন প্রজর্মকে উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষনের বিকল্প নেই--- ----------------------------------------------- ----------------------------------------------- এই কয়দিনের ধারাবাহিক আলোচনায় আমরা একটি সত্যে উপনিত হতে পারি,সত্যটি হচ্ছে '৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে অর্জিত এই দেশটা যে স্বপ্নের বাস্তবায়নের আখাংকায় জাতির জনকের ইস্পাত কঠিন দৃডচেতা নেতৃত্বে স্বাধীন করেছিলেন বাংলাদেশের আপামর জনগন--,সেই স্বাধীনতার স্বাদ প্রাপ্তির আগেই বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে ৭১এর আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয় পরাজিত শত্রুরা। মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনার রাজনৈতিক ধারা, অসামপ্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও শোষণহীন, ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ বিনির্মান। দেশটিকে তার জন্মের অঙ্গীকারে দৃঢ়তার সঙ্গে স্থাপন করতে চায় বর্তমান সরকার। বিপরীত একটি পক্ষ স্পষ্টতই পাকিস্তানপন্থি, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী ধারায় অর্থাৎ পাকিস্তানের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। অসাম্প্রদায়িক,প্রগতিশীল,বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক ধর্ম নিরপেক্ষ ধারার প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।অন্য দিকে কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভুলুন্ঠিত করে সাম্প্রদায়িক মধ্যযুগীয় রাষ্ট্র ব্যাবস্থা ফিরিয়ে আনার নেতৃত্বের ধারক বাহকের ভুমিকায় উলঙ্গভাবে অবতিন্ন হয়েছিলেন জাতির জনকের খুনি মরহুম জিয়াউর রহমান।তিনি স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুদের রাজনীতিতে পুনপ্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতা গ্রহন করেই তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেন।অন্য অর্থে বলা যায়, মরহুম জিয়া দেশে পাকিস্তানপন্থি রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি যে কেবল গোলাম আজমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন তাই নয়, জামায়াত, মুসলিম লীগসহ অন্য সব পাকিস্তানপন্থি রাজনৈতিক দলকে তিনি পুনর্বাসিত করেন, তাদের ক্ষমতার অংশীদার করেন এবং সেই পরাজিত শত্রুদেরকেই রাজনীতিতে মহীরূহে পরিণত হতে সহায়তা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতির সেই পতাকাটিকে দৃঢ়ভাবে বহন করে চলেছেন অদম্য স্পৃহায়। এমনকি তার পুত্র তারেক জিয়া লন্ডনে বসে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা "আইএসআই-"এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার মানষে আন্তজাতিক জঙ্গি সংগঠন সমুহের সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা নিয়ন্তর করে যাচ্ছেন কোন কোন ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছেন। শুধু তাই নয় বিশ্বখ্যাত সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহীমের সাথেও কয়েক দফায় বৈঠকে মিলিত হয়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের জাল বিস্তারে প্ররোচিত করে যাচ্ছেন।এই গুরুত্বপুর্ন সংবাদটি গোয়েন্দাদের অবহিত করেছেন তাঁদের সরকারের সাবেক স্ব -রাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর। বৈঠকের সচিত্র প্রতিবেদনও পত্রিকা সমুহে ছাপানো হয়েছে।তারই ধারাবাহিকতায় বিপুল পরিমান ডলার খরছ করে আন্তজাতিক ভাবে খ্যাতি সম্পন্ন লবিষ্ট ফার্ম নিয়োগ দেয়ার খবর বিশ্বখ্যাত পত্রিকা সমুহে প্রমান সহ ছাপানো হয়েছে।এই ঘরানার রাজনীতির অতীতটাও এই ধারার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে হত্যা করাসহ স্বাধীনতার পক্ষের জাসদ ও তার সহযোগী সব রাজনৈতিক শক্তিকে নির্মুল করার মহাপরিকল্পনা ঠান্ডা মাথায় বাস্তবায়ন করে ক্ষমতা নিষ্কন্টক করেছিলেন। বেগম জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে একই ছকে কাজ করতে ২১শে আগষ্ট সহ আওয়ামী লীগ ও তাঁর অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের বহু নেতা কর্মিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় হত্যা করেছিলেন।তাঁদের বিপরীত ধারার প্রধাননেত্রী জাতির জনকের কন্যা বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্যই ২১শে আগষ্ট কলংকময় দিনের সৃষ্টি করা হয়েছিল।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৮ ইং সালে বিপুল জয় নিয়ে মহাজোট ক্ষমতায় আসে।বিভাজনের রেখামুছে দিতে, জাতিকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে উপায়ন্তর না দেখে একাত্তরের ইস্যুটিকেই রাজনীতির প্রধান ইস্যু হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করেই প্রথমে জাতিকে বিভক্ত করার জন্য স্বৈরাচারদের প্রনিত সংবিধানের ধারা উপধারা সমুহ বাতিল, সকল কালাকানুন এবং অগণতান্ত্রিক বিধানগুলোর পরিবর্তন করে ৭২ এর মুল চেতনায় দেশকে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সফলতার সংগে সমাপ্ত করেন। শুধু তাই নয় জাতিকে দ্বিখন্ডিত করার মুল কারিগর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সফলতার সাথে দন্ডকায্যকর করে চলেছেন। বস্তুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান দুটি রাজনৈতিক ধারার বিভাজনকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জাগ্রত করেছে এবং বিভক্তি যে তাঁদের সৃষ্ট তা আরও স্পষ্ট করেছে। বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়াসহ একটি পক্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার দাবি করে সফল হতে না পেরে সহিংসতার আশ্রয় গ্রহন করে জাতিকে অন্ধকারের দিকে টেনে নেয়ার মানষে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন । তিনি হুমকি দিয়ে নিলর্জ্জভাবে বলেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধারাও গণহত্যা করেছে,,তিনি ক্ষমতায় এসে তাঁদের বিচার করবেন। তাঁরা সবসময়ে বলতেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাঁর অসারতাই প্রমানীত হল।আওয়ামী লীগ সহ এই ধারার মানুষ সব সময়ে বলে আসছিলেন, বহু মুক্তিযোদ্ধাই পাকিস্তানের দালাল আবার বহু রাজাকার যে মুক্তিযোদ্ধাদের চাইতে কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশী অবদান রেখেছেন তারই সত্যতা প্রমানীত হল। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কারনে খালেদা জিয়ার মত অশিক্ষিত রন্ধনশালার বউ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন,অঢেল লুটের টাকায় ভাঙ্গা স্যুটকেস ভর্তি করতে পেরেছিলেন,ছেঁড়া গেঞ্জীর স্থলে হাল ফ্যাসনের ডান্ডিডাইং এর মালিক হতে পেরেছিলেন, রাজধানী ঢাকায় একাধিক বিশাল বিশাল সরকারি বাড়ির মালিকানা নিতে পেরেছিলেন।শুধু তাই নয় কোকো নামের ১২ টি জাহাজ এবং ক্যারো নামের মদের কারখানার মালিক ও জিয়া পরিবার হতে পেরেছিলেন।সেই মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের কাঠগড়ায় উঠাবেন বলে তিনি তাঁর পাকি প্রেমের পুরাতন ইতিহাসই বাংলার জনগনকে স্মরন করিয়ে দিলেন। বেগম জিয়া স্পষ্টতই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে তার অবস্থান দৃড করে প্রকাশ করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও একই কথা বলেছেন। এটি এখন স্পষ্ট যে, বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত দেশটিকে একটি ইসলামী-জঙ্গিবাদী-তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। একাত্তরে এই চিন্তা-চেতনাটি যাদের ছিল তারা পাকিস্তানের দোসর।পাকিস্তান ও তাঁদের ভুমিকা ইদানিং পরিস্কার করেছেন বিশ্ববাসির সামনে তাঁদের সংসদে বাংলাদেশের মানবতা বিরুধি অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা পাশের মাধ্যমে।দন্ড পাওয়া ব্যাক্তি বর্গ তাঁদের দেশের মহান বন্ধু বলে তাঁরা অভিহিত করেছেন।তার পর ও কি বলতে হবে বা সাক্ষ দিতে হবে পাকিস্তানের মহান বন্ধুরা যুদ্ধ অপরাধি নয়?? বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত জোটের এই রাজনীতি শেষ পয্যন্ত তালেবান দমনের পর আইএস আই এর ভুমিকায় অবতির্ন্ন হয়েছে। তাঁরা বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে অন্ধকার যুগের দিকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সারা দেশব্যাপি হত্যা গুপ্তহত্যা,,বিদেশি নাগরিক হত্যা ইত্যাদি অশুভ কাজ সমানে চালিয়ে যাচ্ছে।মুলত তারা বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের পর থেকেই হত্যাকান্ড সমুহ সংঘটিত করে আসছে।বর্তমান বিশ্ব আইএস আই আতংকে কম্পমান বিদায় সেই নামটি ব্যাবহার করে দায় তাঁদের ঘাড়ে রেখে বাংলাদেশকে অস্থির করে বিদেশি প্রভুদের বাংলাদেশ আক্রমন করার পথ প্রসস্ত করাই লক্ষ। পাকিস্তানের জামাতে ইসলাম তাঁদের সরকারকে বাংলাদেশ আক্রমন করে তাঁদের বন্ধুদের জীবন রক্ষার দাবী থেকে আরো স্পষ্টতা পেয়েছে। দেশটি এখন মূলত আবার সত্তর-একাত্তরের রাজনীতিতে দাঁড়িয়ে পড়েছে।মহাজোট ও তার সমর্থকরা দেশটিকে একাত্তরের মূল নীতির কাছাকাছি নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে দাঁড় করাতে চায়। আওয়ামী লীগ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রশ্নে কিছুটা সরে দাঁড়ালেও বা সমাজতন্ত্র শব্দটি স্পষ্টভাবে না বললেও বাংলাদেশকে অন্তত একটি তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে দিতে চায় না। তাদের জন্য গোড়ামি, কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও প্রগতিবিরোধী একটি রাষ্ট্রের কথা ভাবাও কঠিন। খুব সাম্প্রতিককালে জামায়াত-হেফাজতকে মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মহলে অন্তত এটি প্রমাণ করতে পেরেছে যে, তারাই একটি মধ্যপন্থি উদার অসাম্প্রদায়িক অথচ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম। ২০ দলীয় জোট ও হেফাজত পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় সেটিও আওয়ামী লীগ সরকার কূটনৈতিক মহলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধায় উন্নত প্রশিক্ষন নিয়ে এবং নীজেদের আইএস আই দাবী করে বাংলাদেশ- পাকিস্তান অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক-অসাম্প্রদায়িক চেতনার লড়াইটাকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে চায়। আমরা যারা প্রগতির ধারায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে গড়ে তোলার নিয়ন্তর সংগ্রামে ব্যাপৃত রয়েছি তারা কেবলমাত্র বক্তৃতা বিবৃতি সমাবেশ বা মানববন্ধন করে এই চরম অবস্থা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাঁদের সংঙ্গে পাল্লা দিতে একাত্তরের বন্দুকের লড়াইটাকে ডিজিটাল লড়াইতে রূপান্তর করতে হবে। আসুন ফেসবুক, ভাইবার, হুয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করে নয় এইসব ডিজিটাল প্লাটফরমকে ব্যবহার করেই একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে মোকাবিলা করি। আর সেই কাজটি করার জন্য এই ধারার নতুন প্রজর্মকে উন্নত প্রশিক্ষন দেয়ার কোন বিকল্প নেই।কলমের ধারে বিভ্রান্ত হয়েই তাঁরা মুক্তমনা লেখক, সাহিত্যিক সাংবাদিক হত্যার মিশন হাতে নিয়েছে।একাত্তরেও তাঁরা এই ধারায় বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে স্বাধিনতার পর রাজনীতি তাঁদের নিয়ন্ত্রনে নিতে সক্ষম হয়েছিল।সেই একই ধারায় পরাজয়কে জয়ের ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার শেষ চেষ্টার অংশ হিসেবেই তাঁরা হত্যামিশন পরিচালনা করছে।তাঁদের ভয়ে বিদেশ পালিয়ে গিয়ে বা কলম বন্ধ করে সামাজিক দায় এড়ানো যাবেনা।তারা যা চাইছে তাঁর ফাঁদে পড়ার অর্থই হচ্ছে জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া।ভয় পেলে ভয়ই চেপে বসে,সাহষ করে মুখোস উম্মোচনের মিশনে সবাই এক যোগে ব্রতি হলে জয় অবশ্যই আমাদের হাতচানি দিয়ে ডাকবে।আসুন বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে সম্পৃত্ত করে অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার শফথ গ্রহন করি। দেশ ও জাতির আশা আখাংকার প্রতি নীজেদেরকে নিবেদিত রেখে- প্রত্যেকের স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করি।বিজয়ের মাসে লাখো শহিদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার বাস্তবায়নে জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। " জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা"

ছবি

পাকিস্তানের অস্থির চিত্তই প্রমান করে, মানবতা বিরোধী অপরাধে দন্ডিতরা তাঁদের পোষা ভৃত্য ছিল। ---------------------------------------------- সচরাচর আমরা জানি মানুষ মিথ্যা বলে।সমাজে মিথ্যাবাদি থাকতে পারে।সব ধরনের পাঁপকে বিশালত্বে অথবা গৌনত্বে পাঁপ হিসেবে গন্য করা হয়। কিন্তু মিথ্যাকে মহাপাঁপ বলে গন্য করে ইসলাম ধর্মে।ব্যাক্তির মিথ্যে নয়,রাষ্ট্র মিথ্যাচার করতে পারে তাও কি সম্ভব? এমনিতে ডিসেম্বরর মাস সমাসন্ন হলে আমাদের দেশের কিছু ব্যাক্তি এবং রাজনৈতিক দলের মতিভ্রম হতে দেখা যায়।মানবতা বিরোধী বিচার শুরু হলে পাকিস্তান নামক বর্বর রাষ্ট্রটির মতিভ্রম শুরু হয়।যতই বিচারের রায় কায্যকরের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে,পাকিস্তানের মতিভ্রম রাজনৈতিক দল,ব্যাক্তি এবং সরকারের অস্থির চিত্তের প্রকাশের উদাহরনের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তান একের পর এক আন্তরাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক শিষ্টাচার লংঘন করে চলেছে, সীমাহীন ধৃষ্টতার পরিচয় দিচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উদ্বত্যপুর্ণ আচরন এবং চরম মিথ্যাচার করছে। ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মৌসুমী রহমানকে গত সোমবার ডেকে নিয়ে বলেছে, পাকিস্তান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গণহত্যাসহ কোনোরকম দুষ্কর্ম করেনি! কী ভয়াবহ মিথ্যাচারের আশ্রয় নিল পাকিস্তান ভাবতেও অবাক লাগে। এর আগে গত তিনবারে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ডেকে যদিও প্রতিবাদ না জানায় এবার কিন্তু তাও করেছে। পাকিস্তানের এই ধরনের আচরন, মিথ্যা বক্তব্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এককথায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। উল্লেখ্য "মুক্তিযুদ্ধে গনহত্যাসহ কোন দুস্কর্ম করেনি" কথাটা বলে তাঁরা নীজেরাই ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে সেই দিকেও তাঁদের কোন খেয়াল নেই।কথায় আছেনা--একটা মিথ্যাকে সত্যে পরিনত করতে হাজারো মিথ্যা বলা প্রয়োজন হয়।যাঁরা গত ৪৫ বছর মুক্তিযুদ্ধকে- মুক্তিযুদ্ধ না বলে "গৃহ যুদ্ধ "বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন তাঁরাই বলছেন মুক্তিযুদ্ধে কোন গনহত্যা করেনি। তাঁদের ধৃষ্টতার উপর নির্ভর করে জাতীয়তাবাদি দলের প্রধান নেত্রী -খালেদা জিয়া হুংকার দিয়ে বলেছিলেন -'৭১ এর মুক্তিযুদ্ধাদের মানবতা বিরোধী অপরাধে বিচারের সম্মুখিন করবেন। তখন পাকি জামায়াতের পক্ষ থেকে তাঁদের সরকারের নিকট দাবী করা হয়েছিল- পাকিদের এ দেশীয় দোষর রাজাকার, আলবদরদের রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ আক্রমন করতে। পাকিস্তানের এহেন আচরনের কারনে বাংলাদেশের অগ্নিস্ফুলিঙ্গের শিখার আগুনে দগ্ধ হওয়ার আগেই বিএনপি বিবৃতি দিয়ে জনরোষ থেকে আপাতত বেঁচে গেলেন। পাকিস্তান যদি ১৯৭১ সালে গণহত্যা না করে থাকে, তাহলে ৩০ লাখ শহীদ এবং লাখ লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির জন্য দায়ী কি বর্তমানে বিচারাধীন মানবতা বিরোধী অপরাধীদের? বিএনপির পক্ষ থেকে ডিসেম্ভরের পহেলা তারিখে '৭১ এ গনহত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন।অবশ্য বাঙালী মা বোনের উপর চরম নির্যাতনের ব্যাপারটি এড়িয়ে যেতে ভুল করেননি--!! এরপরই জামায়াতের অনেক নেতাই বিএনপিকে মোনাফেকের দল বলে উষ্মা প্রকাশ করে চলেছেন।তবে কি জামায়াতের সাথে বিএনপির অন্যকোন চুক্তি আছে?জামায়াত -বিএনপি-পাকিস্তান মিলে অন্যকোন ষড়যন্ত্র আছে কিনা তলিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।পাকিস্তানের ধৃষ্টতা-খালেদার মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের হুংকার,বিএনপির ৪০ বছর পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বল্পকথার বিবৃতি-জামায়াতের উষ্মা,পাকিস্তানের নীরবতা এই গোলক ধাঁধাঁর মধ্যেই বাংলাদেশের সকল অশুভ চক্রান্তের বীজ নিহিত আছে বলে আমি মনে করি। পাকিস্তান যদিও সত্য অস্বীকার করে, সারা বিশ্ব জানে ১৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তান সরকারের লেলিয়ে দেয়া সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ আর বাঙালী রমনীদের ইজ্জত লুন্ঠনের নির্মম নিষ্ঠুর ইতিহাসের কথা। বিংশ শতাব্দীর নিকৃষ্টতম গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের দলিল হয়ে শত শত বছর পরেও মানুষ ইতিহাসের পাতায় খুঁজে পাবে তাঁদের এই বর্বরতার ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি পাকিস্তান সরকারের গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিশনের চেয়ারম্যান "বিচারপতি হামদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে" পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যা এবং নারীর সভ্রমহানীর- মানবতা বিরোধী অপরাধের ব্যাপার গুলি বিশেষ ভাবে উঠে এসেছিল। অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের তালিকা দিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। পাকিস্তান তাদের কমিশনের রিপোর্টতো মানেইনি,১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার বিচার সেই দেশের প্রচলিত আইনে করবেন ওয়াদা করেও সেই বিচার করেননি। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শুরু থেকেই নানা আপত্তি জনক ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করে আসছে। মানবতাবিরোধী অপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তারা ‘ডিস্টার্বড’ বোধ করছে!!! এর আগে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে অপর মানবতাবিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান এবং পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী দলের নেতারা বিভিন্ন আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। শুধু তাই নয়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও দুই প্রাদেশিক পরিষদে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে পরাজয়ের গ্লানি পাকিস্তান সরকারী ভাবে, কিছু সংখ্যক রাজনীতিক দল, কতেক বুদ্ধিজীবিরা এখনও ভুলতে পারেননি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে যে নজিরবিহীন বর্বরতা চালিয়েছে, তারজন্য পাকিস্তান সরকারের যেখানে ক্ষমা চাওয়া ফরজ ছিল,সেখানে মনের অন্তজ্বালা এখনও ভুলতে নাপেরে,বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার হীন উদ্দেশ্যে বিচারের বিরোদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বার বার বাঙালীর নৈতিক শক্তির নিকট অপরাধীর দুর্বল চিত্তের পরাজয়কেই ডেকে আনছেন।তাঁরা যদি সভ্য জাতি হতেন,পরাজয়ের পরেই ক্ষমা চেয়ে জাতি হিসেবে মহত্বের পরিচয় তুলে ধরতেন।বর্বর জাতি হওয়ার কারনে বার বার ইস্যুটিকে সামনে এনে অতীত কর্মকান্ডকে ঢাকা দেয়ার ব্যার্থ অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা নাকরা পয্যন্ত সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত রাখা উচিৎ। পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া কেবল বাংলাদেশের জনগণের প্রাণের দাবি নয়, পাকিস্তানের অনেক সচেতন নাগরিকও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। আমরা আশা করব, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে নিয়ে পাকিস্তান নাক গলাবে না। বাংলা দেশে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জোর দাবি উঠেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে চাইলে পাকিস্তানকে তার ধৃষ্টতা ও মিথ্যাচারের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা থেকে তাদের সরে আসতে হবে। তারা সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে অপরাধ ও ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রাষ্টীয় শিষ্টাচারের পরিচয় দেবেন,ইহাই বাংলাদেশের জনগন আশা করে।তাঁদের ভুলে গেলে চলবেনা, দিনে দিনে তাঁদের মিত্রের সংখ্যা বাংলাদেশে কমেই আসছে,এহেন ভুমিকার কারনে মিত্র বাড়বেনা আর কোন দিন।উদ্যত আচরনে বন্ধু কমতে কমতে শুন্যে এসে যাবে,তখন রাষ্ট্রীয় আন্তসম্পর্ক ও ধরে রাখা মহাদায় হয়ে যাবে। তাঁদের আচরনে প্রমান করে মানবতা বিরোধিদের বিচার যুক্তিযুক্তই হচ্ছে,তাঁরা পাকিস্তানের দালালই ছিল বর্তমানেও তাঁদের স্বার্থই রক্ষা করে চলেছে। বর্তমান বিশ্ব যেখানে দিনে দিনে একে অপররের কাছাকাছি আসতে সুদীর্ঘ কালের বৈরীতাকে বিসর্জন দিচ্ছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন নতুন দ্বার উম্মোচন করছে, তখন পাকিস্তান অন্ধকার যুগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশে তাঁদের বৃহৎ মিত্র বিএনপি জোটের গত ১/১২/২০১৫ ইং তারিখে ৭১ এর গনহত্যার বিচার বিভাগিয় তদন্তের দাবি তাহাই প্রমান করে বলে আমি মনে করি। যদিও প্রায় অর্ধশত বছর পর তদন্তের দাবি করে তাঁদের বর্তমান রাজনীতির অস্থির মানষিকতারই পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিজ্ঞরা মনে করছেন। জাতির জনকের কন্যা এই সমস্ত আচরনের তীর কোন দিক থেকে আসতে পারে তা জেনে শুনেই বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়েছেন। ভয় দেখিয়ে, চোখ রাঙিয়ে,রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার লংগন করে,বিশ্ব দরবারে নালিশ দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখা যাবেনা।আন্তজাতিক জঙ্গি সংগঠন গুলোকে যে দৃডতায় বাংলাদেশ থেকে নিস্তেজ করতে সক্ষম হয়েছেন, ঠিক একই মনোবলে বর্তমানের পাকিস্তানের প্রেতাত্বাদের সৃষ্ট নব্য আইএস আইকেও দমন করে বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক বিভাজনকে চিরতরে ধ্বংশ করে উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে সমুন্নত রাখা হবে।বাংলাদেশের মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা উন্নত বিশ্বের সাথে বাংলাদেশকে সম্পৃত্ত রেখে উন্নত জীবন যাপনের নিয়ন্তর প্রচেষ্টায় সরকার ব্যাপৃত থাকুক।জনগনের মনের তীব্র আকাঙ্ক্ষার মুল্য দিতেই বর্তমান সরকার রাজনৈতিক বিতর্কের চিরবসানের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।ইতিমধ্যে তাঁর সুফল জনগন ভোগ করা শুরু করেছে,সুতারাং কোন অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র জাতির জনকের কন্যার রাজনৈতিক বিতর্কের অবসানে নেয়া পদক্ষেপ থেকে চুল পরিমান সরাতে পারবেনা। বাংলাদেশের জনগনের তীব্র আকাংখা- স্বাধীনতার স্বাধ উপভোগের নিমিত্তে, দেশে সত্যিকারের আইনের শাষন প্রতিষ্ঠিত হোক।এই প্রাপ্তির আখাংকায় দীর্ঘ ৪০ বছর নিয়ন্তর আন্দোলন সংগ্রামে জনগন ব্যাপৃত রয়েছে।বহু ত্যাগী নেতাকর্মির আত্মত্যাগে,অনেকের পঙ্গুত্বে,স্বজন হারানোর বেদনা বুকে ধারন করে সেই কাংখিত লক্ষের দিকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে,একে একে অমিমাংসীত জমে থাকা চাঞ্চল্যকর হত্যাযজ্ঞের বিচারকায্য শুরু করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করা হচ্ছে-তখনি কায়েমি স্বার্থান্বেষি মহলের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ভেঙ্গে চুরে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রের রুপ ধারন করেছে। বিগত দিনে যারা বাংলাদেশকে তল্পিবাহক,অন্য জাতির কলোনি করে রাখার জন্য দেশের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তাঁদের মুখোশ ও দেশবাসি অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করছে। বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাস করেও যারা পাকিস্তানের দালাল ছিলেন, পাকিস্তানের অস্থির মানষিকতা তাঁদের চিহ্নিত করতে আরো বেশি সহজতর করেছে।নতুন প্রজম্মের নিকট ঐ সমস্ত দালালদের স্বজনেরা সারাজীবনের জন্য অপাংত্তেয় অসুচি, ঘৃনার বহ্নিশিখার জলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। তাঁদের পরিবার পরিজনকে ধীক্কার জানাতে আর কাউকে প্রচার করে, যুক্তি উপস্থাপন করে সময়ক্ষেপনের প্রয়োজন হবেনা,সেই কাজটি তাঁদের মুরুব্বি বর্তমান পাকিস্তানের সরকার,রাজনৈতিক দল গুলীর অস্থির চিত্তের বর্হিপ্রকাশেই যথেষ্ট।সত্য বড়ই নির্মম নিষ্ঠুর হয়ে তাঁদের এদেশীয় দালাল, মানবতা বিরুধীদের রেখে যাওয়া বংশধরদের নিয়তির উপর প্রতিঘাত শুরু করেছে।এই জয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির প্রাপ্য ছিল স্বাধীনতার পরেই, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কোপানলে জাতিকে পরিবেষ্টন করে ৪০ বছর পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে অশুভ শক্তি।ইতিহাসের অমোঘ বিধানের নিয়মতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা থেকে রক্ষা পাননি নীজে,রক্ষা করতে পারেননি পরিবার,রক্ষিত হয়নি প্রভুদের দীর্ঘকালের মনোবাসনা প্রভুত্বের আখাংকা। জয় হয়েছে মানবতার,পরাজিত হয়েছে অন্ধকারের অশুভ শক্তির।এই জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার দায়িত্ব নতুন প্রজম্মের। তাই সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে নতুন প্রজর্মকে আধুনিক, বিজ্ঞান মনস্ক যুগ -উপযোগি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। বর্তমান প্রজর্মের মানষিক স্পৃহার নিকট রচিত হবে অশুভ শক্তির সকল ষড় যন্ত্রের কবর, সেই দিন আর বেশি দেরী নেই। "জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখহাসিনা"

ছবি

জামায়াত -শিবিরের( নব্য আইএস আই)দমনে সংজ্ঞায়িত বিশেষ আইন ও পুলিশ বিগ্রেড প্রয়োজন-- >>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>> দু:খ্যজনক হলেও সত্য,আইন শৃংখলার অবনতি হলে ডাক ঢোল পিটিয়ে ধরপাকড় শুরু হয়।দাগি অপরাধি থেকে চিঁছকেচোর পয্যন্ত কেহই রেহাই পান না, পুলিশের হাত থেকে। ফলাও করে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় কোন জেলায় কতজন ধরা হল।এতে অনেক পুরাতন মামলার আসামিও অনেক সময় ধরা পড়ে।যাছাই বাছাই করে অনেককে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়।ধরপাকড়কে কেন্দ্র করে পুলিশের চলে রমরমা বানিজ্য।একশ্রনীর দালাল সর্বক্ষন থানার আশেপাশে ঘুরঘুর করে আসামীদের আত্মীয়স্বজনের সাথে থানার বড় সাহেবের যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়ার নাম করে শুরু হয় প্রাথমিক বানিজ্য।এরপরের অবস্থা নাইবা বললাম।২০১৩-১৪ সালের আগুনসন্ত্রাস,সরকারী প্রাইমারী স্কুলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া ইত্যাদি নানাহ সন্ত্রাসি বোমা বাজির মামলার একজন আসামীও বর্তমানে জেল খানায় নেই। এই নাথাকার প্রধান কারন, মামলার এজাহারের দুর্বলতা।ঐ সমস্ত মামলা দ্রুত বিচারের উদ্যোগ নিলে আজকের আইএসআই এর সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতোনা।পুলিশ বাহিনীতে বেশিরভাগ জামাত-বিএনপির ছাত্র ক্যাডারেরা বর্তমানে ও, সি, সেকেন্ড অফিসারের দায়িত্বে চলে এসেছেন। বর্তমান সরকারের গত কয়মাস আগের নিয়োগে বেশিরভাগ জামাত-বিএনপির ক্যডার যে কোন ভাবেই নিয়োগ পেয়ে গেছেন। আমার এলাকা থেকে দুই জন নিয়োগ পাওয়া-উভয়েই শিবির --ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন। উপরে উপরে যতই তেলবাজি করে আওয়ামীনেতা, মন্ত্রী, এমপিদের ম্যানেজ করুক না কেন অন্তরে তাদের দর্শন ঠিকই কাজে লাগিয়ে যাচ্ছে। দারগা সাহেব ধারা হালকা করে দিবেন বলে মোটা টাকাও পেলেন, নীজের দলের লোকটাকে জামিন যোগ্য ধারায় চালানও করলেন।দুই দিক থেকে আমাদের অফিসার সাহেবেরা লাভবান হচ্ছেন।তাঁরপরও আমাদের নেতাদের হুঁশ হয়না।নেতারাই শিবির ক্যাডারের জন্য সুপারিশ করেন,চাড়িয়ে আনার চেষ্টা করেন।দারগা সাহেব ঠিক নেতার সুপারীশের অপেখ্যায় থাকেন,বলা মাত্রই মোটা টাকা আদায় করে ছেড়ে দেন বা হালকা ধারায় কোর্টে চালান দেন।এতে নেতাকেও খুশি রাখলেন,টাকা রুজি হল,দলের অস্তিত্বও রক্ষা করতে পারলেন,যাহা তাঁর মুখ্য বিষয়। যাহাই হোকনা কেন, পুলিশ তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন যদি সঠিক ভাবে করে কোন বোমাবাজ,সন্ত্রাসী, জামিন পাওয়ার কথা নয়।কারন বোমা,অস্ত্র,লুটপাট ইত্যাদি মামলা প্রাথমিক ধারায়ও জামিন অযোগ্য।তাহলে জামিন পায় কিভাবে? যারা জামিন পেয়ে বেরিয়ে এসেছে তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার হাতে নাতে বোমা বাজি করার সময়ে ধরাও পড়েছে।,ব্লগার হত্যা, প্রকাশক হত্যা, বিদেশী হত্যা ইত্যাদি মামলায় এযাবৎ যে কয়জনকে পুলিশ শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা সবাই আগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, বোমাবাজি,আগুন সন্ত্রাসের সাথে জড়িত ছিল দেখা যায়। তাঁরাই আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে আবারও ধরা পড়ছে,অনেককে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজাখুজি শুরু হয়েছে। এই সমস্ত নানা কারণে প্রচলিত আইন- ধর্মীয়জঙ্গি দমনে কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ধর্মীয় জঙ্গিপনা আগে কখনও ছিলনা। আইন প্রনয়নের প্রাক্কালে ধর্মীয়জঙ্গি সংজ্ঞা নির্ধারন করে যেহেতু আইনের কোন ধারা স্পষ্ট নাই,সেহেতু এই ফাঁককে কাজে লাগিয়ে তাঁরা জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে।প্রচলিত আইনের পাশাপাশি ধর্মীয় জঙ্গিপনার মাধ্যমে মানুষ হত্যা,বোমাবাজি,সন্ত্রাস সৃষ্টি ইত্যাদি ম্যানসন করে যতক্ষন পয্যন্ত আইন প্রনয়ন করা হবেনা, ততক্ষন তাঁদের জেলের অভ্যন্তরে রাখা যাবেনা। বিচারক--কে চোর, কে ডাকাত,কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি দেখবেনা--দেখবে শুধু সে যে অপরাধ করেছে -সেই অপরাধের সাথে সংযুক্ত ধারা সঠিক কিনা। যদি সঠিক না থাকে তবে জামিন দিতেই হবে। এই কারনেই এই ধরনের অপরাধ দমনে সংজ্ঞায়িত আইনের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশ্বের বহু দেশেই, প্রত্যেক অপরাধের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আইন আছে। ধর্মীয়জঙ্গি-- সন্ত্রাস দমন আইনে দমন করার পরিকল্পনা ফল ভয়ে আনবেনা।বরঞ্চ সন্ত্রাস দমন আইন সহ প্রচলিত অন্য সমস্ত আইনকে যুগ-উপযোগি করে ধর্মীয়জঙ্গির আলাদা সংজ্ঞা নির্ধারন করেও করা যেতে পারে। আমাদের মধ্যে ইদানিং দেখা যায় অনেকে বর্তমানের ব্লগার হত্যা,প্রকাশক হত্যা ইত্যাদি ঘটনা সমুহকে "বাদ" সংযুক্ত করে বিশেষায়িত করে তাঁদের শক্তি সামর্থ্যের বিশালত্ব দেখাতে চান। ভাল বা মন্দ যাহাই হোক জঙ্গিবাদ একটা দর্শন,একটা আদর্শ হতে পারে। জঙ্গিবাদের বিশালত্বও আছে মেনে নেয়া যায়। কিন্তু বর্তমানের বাংলাদেশের সংঘঠিত ঘটনা সমুহ সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য নহে। এই পয্যন্ত যারাই গোয়েন্দাদের নিয়ন্ত্রনে এসেছে তাঁরা সবাই জামায়াত শিবিরের ক্যডার।এদের সাথে আন্তজাতিক ইসলামি কোন জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃত্ততার প্রমান এই পয্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাঁরাই নীজ থেকে প্রপাকান্ডা করে প্রচার করছে তাঁরা আই এস আই। তবে ভারতের বিখ্যাত সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহীমের সাথে তারেক জিয়া সহ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে বলে বন্দি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর তথ্য দিয়েছেন বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। দাউদ ইব্রাহীমের মত আরও অনেক অন্ধকারের কীটের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে, তবে ইসলামী কোন সাচ্ছা দলের সাথে নেই, তা নির্দ্বিদ্ধায় বলা যায়। বর্তমানের ঘটনা শুধু মাত্র আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্র সমুহকে বিনিয়োগের আগ্রহে বাধা দিয়ে উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করা।সরকারকে অস্থির করে,আইনশৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে মানবতা বিরুধি বিচারকে বাধাগ্রস্ত করাই তাঁদের লৈক্ষ। লক্ষ করলে দেখা যায়,প্রত্যেকটি ঘটনার পর একশ্রনীর বুদ্ধিজীবি গনতন্ত্রে সকলের অবাধ বিচরনের কথা বলে মাতম করতে থাকেন। জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার সাথে -গনতন্ত্রের সমস্যা কোথায় দেখেন আমি তা বুঝিনা। যে বিবৃতিটা দিচ্ছেন সেটা কিভাবে দিচ্ছেন? বাক স্বাধিনতা সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা না থাকলে তিনি যে কথাটা বললেন এবং যে পত্রিকা কথাটা চাপালো কারো বিরুদ্ধে সরকার তো কোন ব্যবস্থা নিলনা--। তবে বাক স্বাধীনতা, ,গনতন্ত্র নাই কথাগুলি আসে কিভাবে? শান্তিপুর্ন কোন মিছিল মিটিং এ পুলিশ বাধা দিয়েছে এমন উদাহরন কি একটা আছে? কোন দেশের সর্বচ্ছো আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল, অবরোধ, বিবৃতি, মিছিল, শ্লোগান ইত্যাদি সেই দেশের রাজনৈতিক কোন দল দিয়েছে?কেউ কি কোনদিন শুনেছেন? তারপরেও গনতন্ত্র নেই? আপনারা সব মানুষ মেরে দেশটাকে খালি করে শুধু আপনারা থাকবেন তবেই গনতন্ত্র থাকবে। যুদ্ধ-অপরাধের বিচার না হলে গনতন্ত্র থাকবে। আপনাদের লুটপাটের বিচার না হলে গনতন্ত্র থাকবে। আপনারা নির্বাচন না করে যদি ক্ষমতায় বসতে পারেন তবেই সুষ্ঠ গনতন্ত্র থাকবে। আপনার ছেলে,আপনার নীজের লুটের টাকার তত্বাবধায়ক সরকারের দেয়া মামলা গুলি সরকার প্রত্যাহার করে নিলে গনতন্ত্র থাকবে। ক্যান্টনমেন্টের সেনাবাহিনীর বিশাল বাড়ী যদি এখন আপনার কাছে থাকতো তবেই গনতন্ত্র আপনার সেই বাড়ীতে নিরাপদে থাকার বিশাল জায়গা পেত। আপনাদের লুটপাটের গনতন্ত্র বাংলাদেশের মানুষ চায়না।আপনাদের আগুন সন্ত্রাসের গনতন্ত্র জনগন চায়না। জনগন অনেক পরে হলেও বুঝতে পেরেছে,যে মা সন্তান প্রসব করে,সে মায়ের চেয়ে দরদ সন্তানের প্রতি অন্য কারো হতে পারেনা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে,আওয়ামী লীগের নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, সেই স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন একটানা ২৪টি বছর। জেল,জুলুম,হুলিয়া,ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও আপোষ করেননি বঙ্গবন্ধু। তাঁর হাতে সৃজিত স্বাধীনতার অপূর্নতা--তাঁরই জৈষ্ঠ কন্যার হাতে পরিপূর্নতা পাচ্ছে। এটাইতো বিধির বিধান। নচেৎ কি যাদুর বলে,একনাগাড়ে ৭বার দুর্নীতির সুচকে বিশ্বের সবকয়টি দেশের শীর্ষে থাকা একটা দেশকে রাতারাতি দুর্নীতির সুচকে দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার সব কয়টি দেশের নিম্নে নিয়ে যেতে পারে। দারিদ্রসীমার নীছে অবস্থানকারি একটা দেশকে কি করে মাত্র ৫বছরের মধ্যে এত অবরোধ, হরতাল, নাশকতা, জ্বালাও পোড়াও উপেক্ষা করে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তর করতে পারে। তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী কি করে উন্নত শক্তিধর দেশ সমুহের জন্য বরাদ্ধ শ্রেষ্ঠত্বের আসন অনায়াসে নিজের করে নিতে পারে। কি করে তৃতীয় বিশ্বের ঘনবসতি পুর্ন একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী ধরিত্রীর শ্রেষ্ঠ মানষ কন্যা হতে পারে। বিদেশি সাহায্যনির্ভর একটাদেশ কিকরে রাতারাতি সাহায্যদাতা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।এই সেই দিনও যে দেশটি গ্রামের একটা ব্রীজের টাকা বিদেশ থেকে ঋন নিয়ে করার অভ্যেস ছিল, সেই দেশটি কি করে পদ্মা সেতুর মত এত বিশাল একটা সেতু দেশের নিজস্ব তহবিলে করতে পারে। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, পদ্মা সেতুর তিনগুন বেশী অর্থব্যায়ে গভীর সমুদ্র বন্দর কি করে করার সাহষ পায়? আপনাদের ভাষায় গনতন্ত্র যদি না থাকে,তবে না থাকুক,লুটেরার গনতন্ত্রের আমাদের প্রয়োজন নেই। উন্নয়নের গনতন্ত্র আছে,সমৃদ্ধির গনতন্ত্র আছে,সর্বশেষ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বলার গনতন্ত্র আছে--আমি বাঙ্গালী, আমার জাতির জনক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।তিনি আমার দেশের নাম রেখে গেছেন "বাংলাদেশ"। আমার দেশের বর্তমানের অবিসংবদিত নেতা তাঁরই জৈষ্ঠ কন্যা, তোমরা যাকে ধরিত্রির মানষ কন্যারুপে চিনো, তিনিই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী,দেশরত্ম শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। পরিশেষে বলতে চাই, নব্য জামায়াত শিবির তাঁদের রক্ষক বিএনপিকে আইএসআই এর ভুমিকায় অভিনয় থেকে যে কোন মুল্যে বিরত রাখতে হবে। প্রয়োজনে কিছুক্ষনের জন্য মঞ্চের আলো নিবিয়ে দিয়ে হলেও শেষ দৃশ্যের যবনিকা টানা সভ্য বাংলাদেশ গড়ার জন্য একান্ত প্রয়োজন। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

বিএনপির চ্ছত্রছায়ায় জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মার অপর নাম বাংলাদেশী আইএস আই। ------------------------------------------ বাংলাদেশে বিভিন্ন নামে জামায়ত-শিবির বিএনপির প্ররোচনায় জঙ্গীপনার তৎপরতায় সব মহলেরই উদ্ভেগ-উৎকন্টা দেখা দিয়েছে। এদের কার্যকলাপ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং মানুষে মানুষে সৌহার্দ-সম্প্রীতির জন্যও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। পর পর কয়েকটি অনাক্ষাংখিত সন্ত্রাসী ঘটনায় দেশ-বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে ৭২-৭৫ এর মতই সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন কুচক্রী মহল। নানা ধর্ম আর নানা মতের সহাবস্থান সুদুর অতীতকাল থেকে আমাদের এই দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যে বয়ে চলে আসছিল।সুফিবাদের প্রচার প্রসারের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের প্রচলন হলেও অন্য মতালম্বিরাও পরবর্তিতে ইসলামের শান্তির বানী প্রচারে বাধাগ্রস্থ হয়নি। ধর্মীয় উগ্রতা নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ কখনও মাথা ঘামিয়েছে তেমন উদাহরন কখনই সৃষ্টি হয়নি। সাম্প্রতিক কালে আইএস পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে একটি মহল বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড- সংঘটিত করে চলেছে।এই চক্রটি আই এস আই এর সাথে সম্পর্ক বুঝানোর জন্য এবং তাঁদের অনুকুলে হামলা হচ্ছে, জনগন ও সরকারকে ধোঁকা দেয়ার প্রতারিত করার জন্য তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা এবং বগুড়ায় শিয়া মসজিদে মুয়াজ্জিনকে হত্যা করেছে নির্দ্বিদায় বলা যায়।ফেস বুক বন্ধ করে ফ্রক্সি সারবার এর উপর নজরদারি চালিয়ে গোয়েন্দারা আমার উল্লেখিত বিষয়টির সত্যতা শতভাগ মিলাতে পেরেছেন। সরকার ও নিশ্চিত ছিলেন বর্তমানের হামলা সমুহ জামায়াত শিবিরেরই কর্ম।শেষ পয্যন্ত তাহাই প্রমানীত হল। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে অতীতেও বিভিন্ন সময় চেষ্টা হয়নি তা কিন্তু বলছি না। কোন সময়েই তাঁরা শতভাগ সফল হতে পারেনি।এ জাতিয় দুর্যোগ মহুর্তে তাৎক্ষনিক ভাবে আমাদের অসাম্প্রদায়িক নেতারা মাঠে নেমে জনগনকে সাথে নিয়ে নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এইরুপ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ন্ত্রনে অহিংস আন্দোলনের মহান নেতা মহাত্মা গান্ধীজি দাঙ্গাকবলিত অঞ্চল নোয়াখালী এসে তাঁর পালিত ছাগলটিও হারিয়েছিলেন।ধর্মাগ্ধমহল কখনও বিষয়টিকে অনেক দূর টেনে নিতে সফল হয়নি। কারণ এ অঞ্চলে সহনশীল সুফিবাদের মাধ্যমে ধর্মের প্রচার হওয়ায় স্বভাবগত ভাবেই মানুষ শান্তিপ্রিয়, কোন হিংস্রতা, উগ্রতা ও ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্রয় দেয়নি।বিদেশি বন্ধু দেশ সমুহের নিকট দেশের আইন শৃংখলা অবনতির উদাহরন তুলে ধরার জন্য এবং মানবতা বিরুধি অপরাধের বিচার দীর্ঘায়িত বা বাঞ্চাল করার জন্য রাজনৈতিক জোটের আন্দোলনের উপর ভরকরে ২০১৩ সাল থেকেই বিভিন্ন লেবাসে ভিন্ন ভিন্ন নামে দেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এই সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবির হত্যাসহ বিভিন্নভাবে তাণ্ডব চালিয়ে জনমনে আতংক সৃষ্টির পায়তারা চালিয়ে আসছে। তারা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে লেখক, প্রকাশক,ব্লগার, পুলিশ সর্বশেষ শিয়া ধর্মালম্বিদের হত্যাসহ নৃশংস সন্ত্রাস, জঙ্গিপনা করে চলেছে। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে এবং ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যাসহ টানা ৯২ দিন ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে যে তান্ডব চলেছে, বিএনপি নেত্রীর সরাসরি তত্বাবধানে- জামায়াত শিবিরের জঙ্গি কর্মিরাই তা করেছে, যাহা দিবালোকের মতই মানুষের মনে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।সেই আলামত এখনও স্পষ্ট,আগামি কয়েক দশকেও তাঁর ক্ষত জনমন থেকে মুছবেনা।এখন জঙ্গিপনা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে তা আইএস ও অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনের নামে জনগনকে এবং সরকারের দৃষ্টি বিভ্রান্ত করার একমাত্র নতুন অপকৌশল- সাক্ষাৎ প্রতারনা ছাড়া আর কিছই নয়। বগুড়ার এই হামলা এবং তাজিয়া মিছিলে হামলা আইএসের সাথে যোগসুত্রের উদাহরন তুলে ধরার জন্য সাজানো নাটক।যেহেতু ফেসবুক বন্ধ করে সরকার নিশ্চিত হতে পেরেছেন সাম্প্রতিক হত্যা ও সন্ত্রাসের ঘটনাগুলোর উৎপত্তি, সংগত কারনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলির সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। এই প্রজর্ম্মের জন্য নয়,আগামি প্রজর্ম্মের জন্য। অপরাধগুলো সত্যিকার ভাবেই নব্য জামায়াত শিবিরের সৃষ্ট আইএস করছে তাহা দিবালোকের মতই জনগনের নিকট তুলে ধরা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। আইএসআই এর মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বার্থ- প্রতারনা করে জনগনকে বিভ্রান্তের ঘোরে ঠেলে দেয়ার অপপ্রয়াসের এবং তাঁদের দলিয় ও জোটের স্বার্থ হাসিল করার অপপ্রয়াসের মুখোষ উম্মোচনের প্রয়োজনেই জনগন চায় সঠিকও নিরপেক্ষ তদন্ত। প্রয়োজনে বিরুদিদলের গত কিছুদিন আগের আগুন সন্ত্রাসের তদন্ত বিদেশিদের মাধ্যমে হওয়ার দাবিকে মেনে নিয়ে আন্তজাতিক তদন্ত দল গঠন করে তদন্ত করে হলেও চিরতরে বাংলার মাটি থেকে এই অপরাজনীতির ধারক বাহক,তাঁদের পৃষ্টপোষকদের চিহ্নিত করে কবর দেয়ার ব্যাবস্থা করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি।অবশ্য বেগম খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে আন্তজাতিক তদন্ত দলের তদন্তের দাবি থেকে সরে গেছেন বলেই মনে হচ্ছে।এই দাবি থেকে কেন খালেদা জিয়া সরে গেল তাও তদন্ত করে দেখা দরকার বলেই আমি মনে করি। সঠিক তদন্ত হলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। একের পর এক ব্লগার হত্যা, বিদেশী নাগরিক হত্যা, হত্যার চেষ্টা, তাজিয়া মিছিলে হামলাসহ সর্বশেষ বগুড়ার শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে হত্যাকান্ডের মাধ্যমে দেশকে একটি অনিরাপদ, জঙ্গী ও সাম্প্রদায়িক বিরোধসঙ্কুল স্থান হিসেবে বহির্বিশ্বে তুলে ধরার অপচেষ্টা চালিয়ে তারা রক্ষা পেয়ে যাবে তা হতে দেয়া যায়না।স্বাধিনতার পর থেকেই লক্ষ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবার সহ হাজার হাজার নেতাকর্মি,মুক্তমনা ব্লগার,লেখকপ্রকাশক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক,এমপি,মন্ত্রী তাদের হত্যার শিকার হয়েছে।একেক সময়ে একেক নামে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে প্রগতিশিল চিন্তাধারার মানুষকে পরপারে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।কখনও শুনা যায়না কোথাও একজন মৌলবাদি বা উগ্রতায় বিশ্বাসি লেখক ব্লগার,সাহিত্যিক সাংবাদিক রাজনৈতিক নেতা হত্যার শিকার হতে।কেন হয়না তাঁরা হত্যার শিকার? আল্লাহ কি তাঁদেরকেই মানুষ হত্যা করার লাইসেন্স দিয়েছেন? অন্য কেহ হত্যা করলে মহাপাপ হয়, তাঁরা হত্যা করলে কি পুর্ন হয়? মানুষ হত্যায় পুর্ন হয় এমন শরিয়তের দলিল যদি কোন ধর্মীয় আলেম দিয়ে প্রমান দিতে পারেন, তবে আমি নিজেই শত শত মানুষকে হত্যা করে বেহেস্থে যাওয়ার পথ পরিষ্কার করতে রাজি আছি। বেহেস্তে যাওয়ার লোভ নেই সারা পৃথবী খুঁজে একজন মানুষকেও পাওয়া যাবেনা।তাঁরা হত্যা করে সবাই বেহেস্তে চলে যাবে আমরা কেন বসে থাকবো? মুলত; তাঁদের লক্ষ্য, দেশের অগ্রযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে প্রমান করা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে হত্যা ঘুম,খুন বেড়ে যায়,দেশে প্রচার যদিও তাই হয় বিদেশিদের নিকট তুলে ধরতে চায় এখানকার জনগন ধর্ম ছাড়া কিছুই বুঝেনা,ধর্মীয় সম্পৃতি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে রক্ষা করতে পারেনা।যেমন এখন ও তাঁরা প্রচার করে বেড়ায় ৭৪-৭৫ সালে বহু লোকের হত্যা ঘুম খুনের কাহিনী। মুলত;তখনও আজকের অপশক্তিরাই সারা দেশব্যাপি হত্যা,ঘুম,খুন,রাহাজানি,পাটের গুদামে আগুন, আমেরীকা কতৃক খাদ্যের জাহাজ মাঝ দরিয়ায় রেখে খাদ্যসংকট তৈরী,ইত্যাদি হেন কাজ নেই যাহা তাঁরা করেনি।তখন সম্মুখ সমরে ছিল আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য বেরিয়ে যাওয়া অতি বিপ্লবি জাসদ।আজকে সম্মুখ সমরে বিএনপি- পেছনে যত অপশক্তি সকলেই একজোট হয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বিচিয়ে একের পর এক প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার মানুষকে হত্যা করে চলেছে।আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে তাঁদের বাপ-দাদাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে তৎপর রয়েছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথই হচ্ছে এসব অপকর্মের হোতাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা। জনগনের সামনে মুখোষ খুলে দিয়ে চিরতরে রাজনীতি থেকে উচ্ছেদের পথ রচনা করা। আমরা আশা করব দ্রুত এই সমস্ত হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এমন ঘটনা আর যেন না হয় , সেটা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে জামায়াত শিবির সহ সকল অপশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ সহ সমমনা প্রতিটি দলকে তাঁদের কর্মি বাহিনী নিয়ে মাঠে নামতে হবে। ঢাকায় বসে বিবৃতি দিয়ে খালেদাকে মাঠে নামতে দেবনা হুংকার দিলেই খালেদা পালিয়ে যাবেনা। তাঁর জন্য চাই প্রতিরোধ গড়া। প্রশিক্ষিত কর্মিবাহিনী নিয়ে আসুন সবাই মিলে অপশক্তি রুখার স্বার্থে একযোগে মাঠে নেমে পড়ি। বর্তমান প্রশাসনেও তাঁদের ২১ বছর নিয়োগ দেয়া অপশক্তি আপনাদের চাইতে আরো বেশি। তাঁদের দিয়ে সন্ত্রাস নির্মুলের স্বপ্ন দেখা ছেঁড়া কাথায় শুয়ে কোটি টাকার স্বপ্ন দেখার সমতুল্য।এই অপশক্তি কোনভাবেই যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতদের সাথে" সর্বদলীয় বিগ্রেড" গঠন করে তাঁদেরকেও দায়িত্ব দিয়ে কাজে লাগাতে হবে।সব মহলকেই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে এ দায়িত্ব দেশের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি মানুষকে সম্পৃত্ত করে তাঁদের উপরও দায়িত্ব তুলে দিতে হবে। আইন শৃংখলা বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা যাবে স্বল্প সময়ের জন্য-নির্মুল করা যাবেনা শেকড় কোনকালেই। জনগনই পারে একমাত্র শেকড় উপড়ে পেলে দিতে। জনগনের বিকল্প কোন শক্তি নেই, হবেও না কোন সময়। সব মহলকে সর্বাজ্ঞে জনগনের শক্তির উপর নির্ভর করার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে, তবেই অপশক্তির কবর রচিত হতে পারে-নচেৎ কস্মীন কালেও এই অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখতে পারবেনা সরকার।যেমনটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চরম ভাবে পরাজিত করার ২/৩বছরের মধ্যেই আবার তাঁরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে জাতির জনকের প্রান সংহার করেছিল।দেশী বিদেশী অপশক্তি সমুহকে একত্রিত করে অশুভ শক্তি অর্জন করে পেলেছিল।তাঁরা মুলত:সুক্ষ ষড়যন্ত্রকারি,বিপদে কচ্ছপের মত মাথা লুকিয়ে রাখে- কিন্তু শেয়ালের চেয়ে ধুর্ত। যে কোন বিপদে বড় গাছের ছায়ায় তাঁরা আশ্রয় নিতে জানে।সময় হলেই তাঁরা আবার শেয়ালের পালে ভীড়ে যায়।আবারও মানুষের ঘুম হারাম করা সেই চিরচেনা ডাক দিয়ে আক্রমনের প্রস্তুতি শানায়।

ছবি

পাকিস্তানের নিকট প্রাপ্য সম্পদ আদায়ে আন্তজাতিক আদালতের শরনাপন্ন হওয়া সময়ের দাবি--- ================================== 1971 ইং সালে পাকিস্তানের সুসজ্জিত ৯৩ হাজার সৈন্য বাঙ্গালী প্রশিক্ষনহীন,স্বল্প প্রশিক্ষিত মুক্তিযুদ্ধাদের নিকট চরম পরাজয়ের গ্লানি আজও ভুলতে পারেনি। ভুলার কথাও নয়,উর্বর ভুমি হাত ছাড়া হলে সবাই কিছুনা কিছু গ্নানিতে ভোগে।তবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও গ্লানিকর এইজন্য যে জাতির জনকের আকাশসম ব্যাক্তিত্বের নিকট দ্বিতীয় পরাজয়।পরাজয়টি ঘটেছিল দ্বিতীয় আন্তজাতিক ইসলামি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্রকরে।স্বাধীনতার পর প্রথম ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে পাকিস্তানের বিরুধিতা সত্বেও বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগদান করে ইসলামী উম্মাহ সদস্য পদ গ্রহন করেন।দ্বিতীয় সম্মেলন ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোর অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিচক্ষনতা এবং দক্ষ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের যোগ্য কূটনীতি পরিচালনার কারনে মুসলিম বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রন পুর্বক স্বীকৃতি আদায় করে শক্ত অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানকে একঘরে করে নিতে সক্ষম হন। সম্মেলন কে ঘিরে আন্তজাতিক রাজনীতির কুটচালে বঙ্গবন্ধুর ক্যারিসম্যটিক রাজনীতির নিকট পাকিস্তানিদের চরম পরাজয় ঘটানোর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেষ পেরাগ তাঁদের ঘাড়ের মাঝ বরাবর ঠুকে দেন। বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগদানের প্রশ্নে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ স্বীকার পুর্বক পাকিস্তানের স্বীকৃতি দাবি করে বলেন, "যে দেশ আমার দেশকে মেনে নেয় নাই,বাংলাদেশের বাস্তবতা মানতে পারেননি সেই দেশে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আমার বাংলাদেশ অংশ গ্রহন করতে পারেনা।" ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রিত অন্য মুসলিম দেশ গুলীও সম্মেলন অনুষ্ঠানে সংশয় প্রকাশ করে বিবৃতির ঝড় উঠলে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রন পত্র পাঠাতে বাধ্য হন। ২৪ বছরের পাকিস্তানের সময়টিতে দেশটির সামরিক ও সামন্ততান্ত্রিক নেতৃত্ব তৎকালিন পুর্ব পাকিস্তানকে শোষন করার মানষে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। তখনকার মানসিকতা থেকে পাকিস্তান আজও বের হয়ে আসতে পারেনি।বলা যায় সম্পর্ক উন্নত করায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার দিকেই তাঁদের জোঁক।তাঁর একমাত্র কারন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যখনি আওয়ামী লীগ আসে তখনি পুরাতন বকেয়া নিয়ে কুটনৈতিক ভাবে কথাবার্তা শুরু করে।আওয়ামী লীগ মনে করে উক্ত পাওনা সম্পদ নৈতিকভাবে এবং হিস্যা অনুসারে বাংলাদেশ প্রাপ্য।এই পাওনা আদায় করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা সব সময়ই করে আসছে। বাংলাদেশ কখনও পাকিস্তানকে অমর্যাদা করে এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় কোন বিবৃতি বা অনৈতিক হস্তক্ষেপ করেনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে হত্যা, নারী নির্যাতন,মানবাধিকার লঙ্গনের অভিযোগে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা আটক অবস্থায় বিচারের পদক্ষেপ নিলে তৎকালিন পাকিস্তানের ভূট্রো সরকার জনগনের নিকট চরম ভাবে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হয়। তাঁদের সেনা অফিসারদের বিচারের উদ্যোগ নিলে পাকিস্তানে আতংকের সৃষ্টি করে এবং তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো অভ্যন্তরীণভাবে চাপের সম্মুখীন হন।বঙ্গবন্ধুর চিন্তা চেতনায় তখন প্রায় আড়াই লাখ বাঙালি পাকিস্তানে অবস্থানরত ছিল। তাঁদের ফেরৎ আনার বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছিল।তাঁদের মা বাবা আত্মীয়স্বজনও বাংলাদেশে তাঁদের ভাগ্য নিয়ে চিন্তায় অস্থির ছিলেন।একসময় বড় সংকট হয়ে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করবে এটা নিশ্চিত বুঝতে পেরেছিলেন জাতির জনক। তাদের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের প্রশ্নেও পাকিস্তান জটিলতা সৃষ্টি করে রেখেছিল।সেনা অফিসার ছাড়াও বাংলাদেশের মাটিতে আত্মসমর্পণকারী ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা তখন বঙ্গবন্ধুর শক্তি। বাংলাদেশের অধিবাসিদের ফেরত আনার বড় হাতিয়ার।তাঁদেরকে নিয়ে ভুট্টো কম বিপদে পড়েছিলেন বললে ভুল হবে রীতিমত বিভ্রান্ত ছিলেন।ভূট্রোর হাতেও বাংলাদেশি নাগরিক গন ৯৩ হাজার সেন্য ফেরৎ নেয়ার বড় হাতিয়ার।এর বাইরে বাংলাদেশ শর্ত দিয়ে দাবি করেছিল পাকিস্তানের স্বীকৃতি। অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করেছিল ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীসহ ৯৩ হাজার সেনাসদস্যের নিঃশর্ত মুক্তির। ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্ট ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে পাকিস্তান যুদ্ধপরাধি সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করবে মর্মে, বাংলাদেশ পাকিস্তানি সৈন্যদের বিচারের দাবি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল, তার অবসান ঘটেছিল। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেসব ব্যক্তি মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচার করা যাবে না- এ ধরনের কোনো কথা ওই চুক্তিতে ছিল না। জাতির জনক ঘোষনা দিয়েছিলেন যাঁরা মানবতা বিরুধি অপরাধে জড়িত ছিলেন না, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজাকার আলবদর, আলসামস হয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের বিরুদ্ধে তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে অস্ত্র ধরেছিলেন তাঁদেরকে সাধারন ক্ষমা করে দিয়ে বলেছিলেন দেশের কাজ করার জন্য।যাঁরা হত্যা, লুন্ঠন,নারি দর্শন,অগ্নিসংযোগের মত মানবতা বিরুধি অপরাধে জড়িত ছিলেন তাঁদের জাতির জনক ক্ষমা করেননি।তাঁদের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছিল,কারো কারো বিচার শেষে জেল জরিমানা হয়েছিল এবং অনেকেই জেলে ছিলেন। পাকিস্তান বার বার যে চুক্তির কথা তাঁদের প্রতিবাদে এবং বিবৃতিতে উল্লেখ করে বলতে চায় তা হচ্ছে ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিলে সম্পাদিত চুক্তি।তাতেও মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচার করা যাবে না- এমন সুনির্দিষ্ট কোন শর্ত উল্লেখ করা নেই। তারপরও বার বার চুক্তিটির উল্লেখ করে পাকিস্তান বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।তাই বলা যায় তাঁরা বর্তমান বাংলাদেশের বাস্তবতা এখন পয্যন্ত মেনে নিতে পারেননি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের ভুমিকায় পরিষ্কার অনুধাবন করা যাচ্ছে১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারি লাহোরে দ্বিতীয় ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর আগে, যে স্বীকৃতি বাংলাদেশকে দিয়েছিল তা তাদের অন্তর থেকে দেয়নি বাধ্য হয়েই দিয়েছিল। ১৯৭৪ থেকে ২০১৫ সময়টা অনেক দীর্ঘ। এত দীর্ঘ সময়েও দুদেশের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক সমস্যা অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রাপ্যতার বিষয়টি সমাধান হয়নি।১৯৭৫ ইংরেজী সালে বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর নামে বেনামে পাকিস্তানিরাই দেশ শাষন করেছিল।ফলে তাঁরা বাংলাদেশের পাওনা সম্পদ ফেরৎ দেয়ার বিষয় নিয়ে একরকম স্বস্তিতেই ছিল।দীর্ঘ ২১ বছর এই নিয়ে কোন কূটনৈতিক তৎপরতা তাঁদের মোকাবেলা করার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু এবার বিধিবাম, স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির যেভাবে উম্মেষ ঘটেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে, তাঁদের তল্পিবাহকেরা আবার ক্ষমতায় আসতে আদৌ পারবে কিনা বা আসলেও অনেক সময়ের প্রয়োজন হতেপারে, এমনটি চিন্তা চেতনার উদ্রেক হওয়ায় পাকিস্তানের সর্বস্তরের রাজনীতিক, চিন্তাবীদ, শুসিলদের মনে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ফলশ্রতিতে আগের বিচারের রায় গুলীতে কিছু রাজনৈতিক দল,সামাজিক সংগঠন,ব্যাক্তি বিশেষ কোন প্রতিক্রিয়া না জানালেও এবার সাকা-মোজাহিদ প্রশ্নে একে অপরের প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন রাজনৈতিক দল গুলিও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে একহাট্রা হয়েছে। আগবাড়িয়ে কিঞ্চিত বর্তমানের কূটনৈতিক সম্পর্ককেও ধংস করার মানষে সব রাজনৈতিক দল একজোট হয়েবাংলাদেশের মানবতা বিরুধিদের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহন করেছে। পাকিস্তানের কাছে পাওনা সম্পদ ফেরত, বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিক বিহারিদের পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন, বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে, আগে থেকেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল দেশটি। পাকিস্তানের কাছে পাওনা সম্পদের বিষয়টি একাধিকবার বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হলেও পাকিস্তান তেমন সাড়া আদৌ দেয়া প্রয়োজন আছে তেমনটিও মনে করেনি।বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে ১৯৭৪ সালে প্লানিং কমিশন ২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা পাওনা দাবি করে একটি রিপোর্ট প্রণয়নকরেছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের সম্পত্তি, জনসংখ্যা, সংখ্যাসাম্য নীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও সম্পদের পরিমাণ হিসাব করে ওই পাওনা টাকার দাবি বিভিন্ন পয্যায়ে উত্থাপন করে আসছে বাংলাদেশ। "গত ৪০ বছরে এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় বর্তমান বিশ্ববাজারের তুলনামুলক মুল্য নির্ধারন করে আন্তজাতিক আদালতে শরনাপন্ন হওয়া যায় কিনা এই বিষয়টি যখন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার খতিয়ে দেখছে, তখনি দেশটির কাঁপুনি এসেছে,যে কোন ভাবে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার মানষেই তাঁরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করছিল।এমনি মহুর্তে দুই জনের ফাঁসির আদেশকে তাঁরা ইস্যু হিসেবে নিয়ে বর্তমানের যৎকিঞ্চিত সম্পর্ক আছে তাও বৈরী করার ষড়যন্ত্র করছে। পাকিস্তান বাংলাদেশ বিমানকে একটি পুরনো টাইপের বোয়িং বিমান ফেরৎ দিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্যতাকে আগেই নৈতিক স্বিকৃতি দিয়েছিল, যা একত্রিত পাকিস্তানের সম্পদের উপর আমাদের প্রাপ্যতার তুলনায় কিছুই নয়। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় পাকিস্তান নীতিগতভাবে বাংলাদেশের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে একটি কাউন্সিল গঠন করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সরকারে পরিবর্তন আসাতে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তিতে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি বিহারিদের পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে বহু দেনদরবার হলেও কোনো অগ্রগতি অদ্যাবদি পরিলক্ষিত হয়নি। এসব পাকিস্তানি নাগরিক এখনও মনমানষিকতায়, চেতনায় পাকিস্তানি ভাবাদর্শ বহন করে এবং তাঁরা পাকিস্তানের নাগরিক দাবি করে, সেখানে যেতেও চায়।অনেকে বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে চলেও গেছে। প্রায় ২ লাখ পাকিস্তানি এখনও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে।যাহা বাংলাদেশের জন্য বিরাট এক বোঝা। ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক এদের নিতে রাজি হয়েছিলেন,এবং ঘোষনাও দিয়েছিলেন।জনাব ভূট্রোর মেয়ে পাকিস্তানের পিপলস পার্টি নেতা বেনজির ভুট্টোর বিরোধিতায় জিয়াউল হক মাঝপথে প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। ভুট্টো যেমন এদের পাকিস্তানি বলে স্বিকৃতি দেননি তাঁর মেয়েও সেই পথ অনুসরন করে বিহারিদের পাকিস্তানি বলতেও রাজি হলেন না। এখানে উল্লেখ করতে চাই যে কারনটি পাকিস্তানিদের খুব বেশি ভাবিয়ে তুলেছে তা হল দল হিসেবে কংগ্রেস এবং দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু, এটা আন্তজাতিক সম্প্রদায়ও অনেকটা তাই মনে করে।সেই কংগ্রেস ভারতের সরকারে থাকাকালিন সমুদ্র সীমানা নির্ধারনের পুরাতন অমিমাংশিত বিষয়টি শেখ হাসিনার সরকার আন্তজাতিক আদালতে উত্থাপন করে রায় নিয়ে এসেছে।ভারত সরকার আন্তজাতিক পয্যায় সবিশেষ বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করে,আরও হেনস্তা হওয়ার ভয়ে বিষটি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করার চেষ্টাও করেনি। দ্বিপক্ষিয় আলোচনার মাধ্যমে মিমাংসার প্রস্তাব দিলেও তা শেখ হাসিনার সরকার প্রত্যাখ্যান করে আন্তজাতিক আদালতে চলে যায়।মিয়ানমারের সাথে তাঁর আগেই আন্তজাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্রের হিস্যা জয়ী হয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ শতভাগ নিশ্চিত করেছে।শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের স্বার্থের প্রশ্নে কোন বন্ধু রাষ্ট্রকে ছাড় দিয়ে আপোষ করার উদাহরন এই পয্যন্ত তাঁদের দৃষ্টিতে আসেনি।পাকিস্তানকেও যে প্রাপ্যতার প্রশ্নে ছাড় দিবেনা তা অংক করে বুঝিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই।সুতারাং সম্পর্কের বৈরীতায় প্রাপ্য অংশ নিয়ে তালবাহানা করার জন্য অনেক আগে থেকেই বৈশম্য সৃষ্টি করে রাখার দিকেই তাঁদের জোঁক পরিলক্ষিত হয়।নিম্নে তাঁর কিঞ্চিত উদাহরন দেয়ার চেষ্টা করছি। পত্রপত্রিকার তথ্যানুসারে এবং বাংলাদেশ সরকারের আমদানী ও রপ্তানী ব্যুরুর তথ্যানুসারে দেখা যায়, বাংলাদেশে পাকিস্তানের রফতানির পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ২৭ দশমিক ৬ ভাগ হারে। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের আমদানি বেড়েছে মাত্র ৯ দশমিক ২ ভাগ হারে। ২০১০-১১ সময়সীমায় বাণিজ্যের পরিমাণ যেখানে ছিল ৯৮৩ মিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ৩৪০ মিলিয়ন ডলারে। এছাড়াও বর্তমানের বিশ্ব অস্থিরতার মুল ইস্যুর দিকে নজর দিলে দেখা যায়,পাকিস্তানি নাগরিক, এমনকি ঢাকাস্থ দূতাবাসের কর্মচারীরা ইতিমধ্যে নানা অপকর্মে নিজেদের জড়িত করেছেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে দেখা যায়, বেশকিছু পাকিস্তানি নাগরিক বাংলাদেশে ভারতীয় জাল নোটের অবৈধ ব্যবসা তথা পাচারের সঙ্গে জড়িত। এই সমস্ত টাকা অধিকাংশ জঙ্গি প্রতিপালনের খরছ যোগায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।এদের মধ্যে বেশ কজন ইতিমধ্যে গ্রেফতারও হয়েছেন। চলতি বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে জনৈক মাজহার খান (যিনি ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত ছিলেন) অকূটনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ তাকে বহিষ্কার করেছে। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বিস্তারে কোনো কোনো পাকিস্তানি নাগরিক সরাসরি জড়িত,অনেকেই ইতিমধ্যে গ্রেপতার হয়েছেন, কিছু কিছু গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে, অনেকেই পালিয়ে বেঁচে গেছেন।নানাহ মাদক ব্যাবসায় জড়িত- অনেকে গ্রেফতার হয়েছে,অনেকে গ্রেফতার এড়িয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন,পাকিস্তান দুতাবাসের আশ্রয় প্রশ্রয়ে অনৈতিক কাজে উৎসাহ পাচ্ছে এমন অভিযোগও আছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সার্ক, কমনওয়েলথ, ডি-৮, ওআইসিসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য। এক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় থাকার কথা ছিল।পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলেও তা হয়নি। বরঞ্চ দিন দিন নিম্নমুখিতাই প্রকাশ পাচ্ছে।এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় পাকিস্তান যখন হস্তক্ষেপ করে, তখন দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও অবনতি হতে বাধ্য। বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানিদের নেতিবাচক প্রচারণাকে সহ্য করবে না। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব যা আছে এতে আরও শক্তিশালী হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি সামাজিক সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। আর্থিক ভিত্তি, নারীশিক্ষা, বৈদেশিক রিজার্ভ, মুদ্রামান, সাস্থ্যসেবা, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, রেমিটেন্স ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। পাকিস্তান বর্তমান বিশ্বের কোন রাষ্ট্রের জন্য কোনো ক্ষেত্রেই কোনো মডেল নয়। বাংলাদেশ বহু ক্ষেত্রেই বিশ্বের বহু রাষ্ট্রের অনুকরনীয় অনুস্মরনীয় দৃষ্টান্ত।শেখ হাসিনা বিভিন্ন পয্যায়ে যেভাবে বিশ্ব নেতৃত্বে আসীন হচ্ছেন,পাকিস্তান তাঁর ধারে কাছেও অবস্থান নিতে পারছেনা।৪৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে রুপান্তরীত হলেও ৭০ বছরের পাকিস্তানের অবস্থান বহু দেশের নিম্নেই রয়ে গেছে।এই সমস্ত বিষয় গুলিও তাঁদের নেতৃত্বকে মর্মপীড়া দেয়।তাই বর্তমান সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে চাপে রাখতেও এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আমি মনে করি। সার্কে উভয় দেশই আছে বটে, কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দেখা যায়, পাকিস্তান মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ককে যতটুকু গুরুত্ব দেয়, সার্কের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে এখন আর তত গুরুত্ব দেয় না। পাকিস্তান যদি বাংলাদেশের ব্যাপারে তার পুরাতন ধ্যান ধারনায়, মন মানসিকতায় পরিবর্তন না আনে, তাহলে দুদেশের সম্পর্কের অবনতিতো হবেই,পাকি সমর্থক এখনও যে সমস্ত বেজর্মা আড়ালে আবড়ালে মুখ ঢেকে দালালি করে তাঁদের দুর্দশা বাড়বে বৈ কমবেনা। সকল সম্পর্ক চিন্নতো হবেই ন্যাক্কার জনক অপদস্ত হয়ে আন্তজাতিক ভাবে বাংলাদেশের সম্পদ ফেরৎ দিতে বাধ্য হবে।বাংলাদেশের জনগন এখনও আশা করে পাকিস্তান তার শাষককের মানসিকতায় পরিবর্তন আনবে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না, এটাই নতুন প্রজম্ম প্রত্যাশা করে। সর্ব শেষে বলতে চাই, পাকিস্তানের নিকট একত্রিত থাকা অবস্থায় আমাদের প্রাপ্য সম্পদের বর্তমান বিশ্ববাজারের মুল্যে- মুল্য নির্ধারন করে আদায়ের জন্য আন্তজাতিক শালিসি ব্যাবস্থাপনার আয়োজন করা বর্তমানে সময়ের দাবি।পাকিস্তানের প্রতি যতই অনুরাগ, আবেগ প্রদর্শন করা হোকনা কেন কখনই তাঁরা বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করে নিবেনা।জাতির জনকের নির্মম হত্যায় পাকিস্তানের সরাসরি হাত ছিল ইহা পরিষ্কারভাবে আন্তজাতিক মহলের বিবেচনায় রয়েছে।তাঁদেরও সম্যক উপলব্দি আছে।সুতারাং জাতির জনককে হত্যার পাপ তাদের সর্বসময়ে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে-ইচ্ছা থাকলেও ভাগ্য তাঁদের প্রলম্বিত করবেই।অযথা সময়ক্ষেপন না করে সকল সম্পর্ক চিন্ন করে অযাচিত ষড়যন্ত্রের চোবল থেকে আগামি প্রজম্মকে রক্ষা করার জন্য জাতির পিতার কন্যা বর্তমান বিশ্বের অন্যতম নেতা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনার নিকট আবেদন জানাচ্ছি। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

দুই যুদ্ধপরাধির রায় কায্যকরে আমেরিকার সন্তোষ,তল্পিবাহক পাকিস্তানের ক্রন্দন। ============================ অস্থির আবহাওয়ায় সামন্য স্বস্তির বাতাবরনের দেখা মিলেছে বলা অত্যুক্তি হবেনা।বর্তমান বিশ্বের মোড়ল বলে খ্যাত আমেরীকার ভুমিকার উপর বিশ্বের বহুদেশের স্থিতিশীলতা-অস্থিরতা নির্ভর করে, কেউ স্বিকার করুক বা না করুক এটাই বাস্তবতা।বর্তমান সরকারের নীতি আদর্শ নিয়ে যুক্ত রাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কাজ করছে, এবং ভাল ফলাফলও পাওয়া যাচ্ছে তা বুঝাই যাচ্ছে।বিচ্ছিন্নভাবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থা বা তাঁদের সিনেটের কতিপয় সদস্যের বিবৃতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে এবং সরকারে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।প্রত্যেক রায়ের পর আন্তজাতিক কতিপয় সরকারি বেসরকারি সংস্থা ব্যাক্তি মহল তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছিল,প্রতিবাদের ধরন এবং তীব্রতায় ইতিমধ্যে কিছুটা স্তিমিতভাব বা কমে এসেছে তা গত দুই একদিনের বিশ্বের নামকরা কিছু পত্রিকার উপর চোখ রাখলে স্পষ্ট অনুধাবন করা যায়। অবশ্য ইউরুপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়া অন্য কোন দেশ সরকারি ভাবে প্রতিবাদ জানায়নি,একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া।ইউরুপিয়ান ইউনিয়নের অন্তভূক্ত দেশগুলির মধ্যে অনেক আগেই মৃত্যুদন্ডাদেশ রহিত করে আইন পাশ করেছে।নীতিগত ভাবে তাঁরা মৃত্যুদন্ডের বিরুধিতা করতে পারে,তবে তাঁরা যুদ্ধপরাধির বিচারের বিপক্ষে নয়। বিভিন্ন পত্রিকায় গত কাল একটা ধারুন সুখবর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে স্বস্থিরভাব দেখা দিয়েছে।বাংলাদেশের প্রায় পত্রিকায় খবরটি আজ ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।খবরটি নিম্নরুপ-- যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলি আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট বলে বলে জানিয়েছেন সেদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা গিলবার্ট মর্টন।বুধবার ওয়াশিংটনে সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির দন্ড কার্যকর সম্পর্কে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধাপরাধও মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অত্যন্ত পরিস্কার। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এই বিচার কার্যক্রমকে সমর্থন করে। বাংলাদেশে আইনের শাষন প্রতিষ্ঠা হোক সমাজে ন্যায়, বিচার প্রতিষ্ঠা হোক এটা যুক্তরাষ্ট্র চায়। আইন এবং আদালতের রায়ের মাধ্যমে অপরাধীদের সাজা হয়েছে এতে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট।তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ নিরসনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দেশীয় ও বহুজাতিক সন্ত্রাসী দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সরকারের কঠিন অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠতে পারেনি। বাংলাদেশে বড় কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার কারণে বহুজাতিক সন্ত্রাসী দলগুলো বাংলাদেশের সীমানা ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে পারেনি। বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ সরাসরি সংশ্লিষ্ট না হয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন সময়ে আইএসএর অনুসারীদের গ্রেপ্তার করেছে। জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি),হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজিবি) এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সরকারের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। এ মুহূর্তে ধর্মীয় উগ্রবাদ, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে সরকার। উল্লেখযোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার গুণগত মানোন্নয়নে বদ্ধপরিকর।গিলবার্ট মর্টন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, সন্ত্রাস মুক্ত জঙ্গীবাদ মুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠুক যুক্তরাষ্ট্র তা চায়। কোন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না। বর্তমান সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। এই পরিবেশ ব্যাহত হয় এমন কোন কাজ যুক্তরাষ্ট্র সরকার সমর্থন করবেনা। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশ একটি মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিনত হচ্ছে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার উৎফুল্ল এবং আনন্দিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব পরিবর্তনের জন্য সে দেশে অবস্থারত বাংলাদেশিরা গুরুত্বপুর্ন অবদান রাখছেন এটা পরিস্কার বুঝা যায়।বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ মার্কিন সরকারের বিভিন্নপয্যায়ে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রেখে চলেছেন।আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকেও তদ্রুপ সফরের ব্যাবস্থা করা গেলে ষড়যন্ত্রের জালে ছিদ্র হত এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।বিরুধিদল যদি লক্ষ লখ ডলার খরছ করে লবিষ্ট ফার্ম নিয়োগ করতে পারে সরকার কেন পক্ষে তাঁর নীতি কৌশল তুলে ধরার জন্য লবিষ্ট নিয়োগ করছেনা তাও বোধগম্য নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তান সরকার এবং সেই দেশের গণমাধ্যম ও একাধিক রাজনৈতিক দল যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, তাতে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তান রাষ্ট্রটির প্রতিই তাঁদের অধিক আনুগত্য ছিল। আর সেটি লুকোছাপা না করে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে জিহাদি মনোভাব দেখিয়েছে, তা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী। প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী জানান, বাংলাদেশে দুই যুদ্ধাপরাধীর বিচারে তিনি দারুণভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন। নিসার আলী ১৯৭৪ সালের চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যা বলেছেন, তার অর্থ হলো সে সময় পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের মাফ করে দিয়ে এখন বিচার করছ কেন? এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও একই কথার প্রতিধ্বনি তুলে দুই দেশের সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের স্বার্থে এ ব্যাপারে আর অগ্রসর না হওয়ার আহ্বান জানালেন। নিজের কথায়ই পাকিস্তান ধরা খেয়েছে। ১৯৭৪ সালের ত্রিদেশীয় চুক্তিতে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে আটক ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও বিচার না করে মাফ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তাই, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করতে চাই, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী যাঁদের মাফ করে দিতে এবং ভুলে যেতে বলেছিলেন, সেই তালিকায় কি সম্প্রতি দণ্ড পাওয়া দুই যুদ্ধাপরাধীর নাম ছিল? তাঁরা কি পাকিস্তানের নাগরিক? আসলে পাকিস্তানের এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পেছনে যে বিষয়টি কাজ করেছে, তা হলো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি সামনে এলে পাকিস্তানের কৃতকর্ম মানুষের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু পাকিস্তানের শাসক ও রাজনীতিকেরা সেটি হতে দিতে চান না। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিকেরা একাত্তরের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না থেকেও নিজেদের মানসিকভাবে যুক্ত করেছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এত দিন একাত্তরের ঘটনাবলির জন্য তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পিপিপি ও তার নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর ওপর দায় চাপালেও এখন মনে হচ্ছে, তিনিও সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। যুদ্ধ অপরাধীর বিচার কতটুকু যুক্তিপূর্ন হচ্ছে তা পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান ভুমিকা থেকে স্পষ্ট অনুধাবন করা যায়।এর পরেও যদি আমাদের তথাকথিত টকশোবাজদের জ্ঞান ফিরে না আসে তবে বলতেই হয়,বিদেশিদের বীর্যের ক্রিয়া অবশ্যম্ভাবি তাঁদের দেহে এখনো প্রবাহমান। "বাংলাদেশের দুই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ব্যাপারে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতের নেতা সিরাজুল হক। রোববার বান্নুতে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই নেতার একমাত্র অপরাধ ছিল, তাঁরা এই দেশ ও এর আদর্শ ও সেনাবাহিনীকে ভালোবাসতেন। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার একের পর এক পাকিস্তানপন্থী লোকদের নির্মূল করছে এবং জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছে। কিন্তু ইসলামাবাদের শাসকেরা নিশ্চুপ রয়েছেন।’" জামায়াতের এই নেতা পাশাপাশি নওয়াজ শরিফকে উদার নীতি ত্যাগ করতে বলেছেন। অন্যথায় বাংলাদেশ বা ভারতে চলে যেতে বলেছেন। পাকিস্তানে প্রতিদিনই সন্ত্রাসী ঘটনায় বহু মানুষ মারা যাচ্ছে, তার প্রতিবাদে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামি কালো দিবস পালন না করলেও বাংলাদেশের দুই নেতার বিচারের প্রতিবাদে কালো দিবস পালন করেছে। কম যায়নি ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফও। দলটি পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে এ দুজনের ফাঁসির বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনেছে।খুব কম শুক্রবার যায় যেদিন কোননা কোন মসজিদে বোমাহামলায় মানুষের জীবনহানি হচ্ছেনা।সেই বিষয়টি নিয়ে একদিনের জন্য ও জামায়াতে ইসলাম পাকিস্তান প্রতিবাদ করেছে তেমনটি পত্রিকার পাতায় পাওয়া যায়না।বাংলাদেশের সর্বচ্ছ আদালতের রায়ের প্রতি প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াত বা সরকার পাকিস্তান দেশ হিসেবে পশ্চাদপদ,জাতি হিসেবে অসভ্যের নিদর্শনই রেখেছেন বলে আমি মনে করি। পাকিস্তানের প্রগতিশিল লেখক সাংবাদিক,সাহিত্যিক এবং জনগন বেশীরভাগ বিচারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আগে থেকে। সংগঠিত শক্তি বা দলীয় ব্যানার নেই বিধায় সরকারের উচ্চপয্যায়ে প্রভাব বিস্তার করা হয়তোবা সম্ভব হচ্ছেনা।পাকিস্তানের ক্ষমতারবলয়ে এবং ক্ষমতার বাহিরে প্রতিক্রিশীলদের প্রভাব প্রতিপত্তি দেশটির স্বাধীনতার উষালগ্ন থেকেই পরিলক্ষিত হয়।প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই শক্তিসঞ্চয় করে সাধারনের মাঝে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।নামে বেনামে সেনা শাষনে অভ্যস্ত জাতির মানষিকতা এর চেয়ে ভাল হবেই বা কি করে।প্রগতিশীল চিন্তাধারার লেখক সাহিত্যিক যে একেবারেই কম জম্মেছে তাও কিন্তু নয়।সাহষ করে তাঁরা স্বৈরশাষনের যাতাকলে পিষ্ট হয়েও তাঁদের লেখনি থামিয়ে দেননি। যুগের পর যুগ তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, লড়াই করে যাচ্ছেন প্রতিক্রিয়ায় আবদ্ধ রাষ্ট্র ও সরকারের নীতি এ আদর্শের বিরুদ্ধে।তেমনি সাম্প্রতিক বাংলাদেশের মানবতা বিরুধি অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া সরকার রাজনৈতিক দল, জামায়াতের বিরুদ্ধে শক্ত এবং তীব্র প্রতিবাদের পত্রিকায় প্রকাশিত উদাহরন নিম্নে তুলে ধরছি। " পাকিস্তান সরকার ‘ভারসাম্যহীনভাবে অতি আবেগ’ দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর। তিনি অভিযোগ করেন, সামরিক আদালতে ও সৌদি আরবে পক্ষপাতদুষ্ট বিচারের মাধ্যমে পাকিস্তানের নাগরিকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও সে ব্যাপারে সরকার নীরব থাকে। তাদের এমন প্রতিক্রিয়া এই বার্তা দেয় যে দেশের মানুষের চেয়ে বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতাদের প্রতি পাকিস্তান সরকারের অধিক ভালোবাসা ও আবেগ রয়েছে। পাকিস্তানের এই মানবাধিকারকর্মী আরও বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পাকিস্তানে ও সৌদি আরবে যেসব পাকিস্তানি নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের প্রতি আগে সরকারকে আবেগ দেখাতে হবে। সরকারের এমন আবেগ একটি ব্যাপার নিশ্চিত করেছে যে ওই দুজন (সাকা ও মুজাহিদ) রাজনৈতিক এজেন্ট ছিলেন এবং পাকিস্তানের জন্য কাজ করতেন। ওই দুজন বাংলাদেশি কি পাকিস্তানে বসবাসকারী নাগরিকদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে কেন এবং কিসের জন্য—সরকারের এটাও পরিষ্কার করা উচিত।" সভ্য দুনিয়ায় যেখানে মানবতা বিরুধী শাস্তি মৃত্যু দন্ডের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠছে ঠিক তখন পাকিস্তানিরা স্থগিত থাকা মৃত্যুদন্ডাদেশের উপর থেকে নিষেদাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আইনটি আবার পুরোদমে বিচারিক ব্যাবস্থায় চালু করেছে। "গত বছর ডিসেম্বরে পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর গত ১১ মাসে ২৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, যা বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম।"মাত্র দেড় দুই বছরের মধ্যে মৃত্যুদন্ড কায্যকারিতার দিক থেকে অন্যতম দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।বাংলাদেশের অবস্থান এখনও তুলনামুলকভাবে তলানীতে অবস্থান। তাঁরপরও পাকিস্তানের মত বর্বর দেশ বাংলাদেশের মানবতা বিরুধিদের মৃত্যুদন্ড নিয়ে কথা বলতে সামান্যতম দ্বিধাম্বিত নয়। পাকিস্তানের এই অকূটনৈতিক আচরণ ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। গত সোমবার পাকিস্তানকে দেওয়া প্রতিবাদে বলা হয়: মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে দণ্ডিত দুজনের ফাঁসি নিয়ে ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়া একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ। বাংলাদেশ এটাও আশা করে যে পাকিস্তান দায়িত্বশীল আচরণ করবে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে। এতে আরও বলা হয়: ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সই হওয়া চুক্তি নিয়ে খণ্ডিত ব্যাখ্যা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী স্থিতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবেশী ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হচ্ছে চুক্তির মূলনীতি। ওই চুক্তিতে কখনোই মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যায় জড়িত এবং এর পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি কিংবা বিচার থেকে রেহাই দেওয়ার কথা বলা হয়নি। বাংলাদেশ সরকার চুক্তি মোতাবেক ১৯৫ জন যুদ্ধ অপরাধিকে ফেরৎ দেয়া এবং তাঁদের বিচারের অঙ্গিকারের রাষ্ট্রীয় চুক্তির কথাও স্মরন করিয়ে ভবিষ্যতে এমন আচরনে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হওয়ার কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জৈষ্ট কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনার অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গিকার ছিল, সকল হত্যাকান্ডের বিচার অনুষ্ঠান করে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আইনের শাষন প্রতিষ্ঠা করার।সে লক্ষ নিয়ে '৯৬ইং সালে ২১ বছর পর খমতায় এসে জাতির জনকের হত্যার বিচার প্রক্রিয়া স্বল্প পরিসরে হলেও শুরু করেছিলেন।বিচার যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়েছে,জড়িত কিছু লোকের শাস্তিও কায্যকর করা হয়েছে,বাকি সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা তাঁদের কৃতকর্মের বেনিফেসিয়ারিদের থেকে সুবিধা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।জেলে জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারের রায় ও আগামি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশিত হবে আশা করা যায়।সবচেয়ে দুর্ভেদ্ধ কঠিন জাতীয় ও আন্তজাতিক প্রভুবেষ্টিত, ২১ বছর স্বৈরাচারের লালনে শক্তি সামর্থ,অর্থ অস্ত্রে বলিয়ান যুদ্ধপরাধীদের বিচার করার অঙ্গিকার নিয়ে ২০০৮ ইং সালে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে।সরকার গঠননের পরেই জনগনের নিকট দেয়া অঙ্গিকার পুরনের লক্ষে সংসদে মানবতা বিরুধি অপরাধের বিচারের জন্য আন্তজাতিক ট্রাইবুনাল গঠনে আইন পাশ করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে।দীর্ঘ তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করে বিচারের প্রাথমিক পয্যায় থেকে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারিদের টনক নড়ে উঠে।তাঁরা নাশকতা,বোমাবাজি,হত্যা,লুন্ঠন,আগুন সন্ত্রাস,ধর্মীয় গোষ্ঠিকে ইন্দন দিয়ে রাজপথে নামিয়ে সরকারকে নাস্তিকের তিলক পরানোর অপচেষ্টা,জঙ্গী উত্থানে ইন্দন,সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকার উৎখাত, নাস্তিকতার ষড়যন্ত্রে সৃজনশীল লেখক প্রকাশক হত্যা ইত্যাদি আইনশৃংখলা অবনতির নানাহ অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে। যুদ্ধ অপরাধের বিচার বা ৭১ এর মানবতা বিরুধিদের বিচার কায্যক্রম বন্ধে এমন কোন অপচেষ্টা নেই যা তাঁরা এবং তাঁদের দোষরদের দ্বারা সংগঠিত হয়নি। শেষ পয্যন্ত কোটি কোটি ডলার খরছ করে বিদেশে লবিষ্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টে চক্রান্ত অব্যাহত রাখে। এতকিছুর পরও জাতির জনকের কন্যার মনোবল,দেশ এবং জাতির উন্নয়ন অগ্রগতি,আইনের শাষন কায়েমে মানবতা বিরুধিদের বিচার প্রক্রিয়ায় সামান্যতম চিড় ধরাতে পারেনি জাতীয় ও আন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের ধারক ও বাহকেরা।বরঞ্চ দেশ ও জাতির সংকল্প দৃড থেকে দৃডতর হয়েছে।জাতি ধীরে ধীরে বিচারের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।সেই ঐক্যই আজ চারদিকে আওয়াজ উঠেছে মানবতা বিরুধী অপরাধে শাস্তি পাওয়া প্রত্যেকের সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত পুর্বক তাঁদের নাগরিক অধিকার বঞ্চিত করার জন্য।

ছবি

আইএস আই নয়,আমার প্রতিবেশি একসময়ের সহজ সরল মেধাবী ছেলেটি--। ================================= আপনার আমার খুবই পরিচিত পাড়ার সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের একটা ছেলে হঠাৎ কেন জানি বদলে যেতে থাকে।কারো সাথে কথা বলা তেমন প্রয়োজন মনে করেনা,সামাজিকতার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে করেনা।মা, বাবা কারো জিজ্ঞাসার জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করে না।সে আছে তার মত করে।সারা দিন ডুবে আছে চিন্তার রাজ্যে,কি চিন্তা করে, ভাবনা গুলো কি কোন সহপাটি বন্ধু বা আত্মীয় এর সাথে শেয়ার করার প্রয়োজন আছে তাও মনে করেনা। এমনিতর পরিস্থিতিতে বালকটির যে মগজ ধোলাইয়ের কাজ চলছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।গুনি -গুনি চেনেন, স্বর্ন চেনে বনিক্য।তদ্রুপ সেই ছেলেটিকেও চিনে নিতে তাঁদের কষ্ট হয়নি।এরা সাধারনত:সহজ সরল,আত্মকেন্দ্রিক, সমাজ বিচ্ছিন্ন,একাকি থাকা পছন্দ করেন।ঠিক সে মোতাবেক তাঁদের চিহ্নিত করে আয়ত্তে নেয়া তাদের জন্য তেমন কঠিন কাজ নয়।তাঁদেরকে নিয়ন্ত্রন করে প্রাথমিক পাঠদানের পর কতটুকু কাজ হবে বা ছেলেটির দ্বারা কি করা সম্ভব তাঁর গবেষনা চলে।গবেষনার ফলাফল নির্নয় করে প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্নের পর কেবল মাত্র উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য নির্বাচিত করা হয়।এরা আমার আপনার অত্যান্ত কাছের প্রতিবেশি।হঠাৎ দেখা যায় ঐ ছেলেটির আর কোন খোঁজ নেই,চিহ্নিত জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিলনা বলে পাড়ার কেউ তেমন নজর ও হয়তো রাখেনি।সে ছেলেটির মগজ ধোলাই করে এমন অস্বাভাবিক করে দেয়া হল স্বল্প সময়ের মধ্যে, মানুষ হত্যা তাঁর হাতের মোড়াই শুধু নয়, প্রয়োজনে নীজের জীবন উৎসর্গ করে দেয়ার মত মানষিকতা তাঁর মধ্যে সৃষ্টি হয়ে যায়। কেন এমনতর হয় তাও কি কেউ চিন্তা করে দেখেছিল কোন দিন--? এদের পেছনে আছে অর্থ, মোহ, পরকাল, ধর্মের উন্মাদনা ও অস্ত্রের জোগান,সদা প্রস্তুত বেহেস্তের টিকেট।শুধু ইসলাম ধর্মেই যে তা নয় প্রত্যেক ধর্মেই বহু আলাদা আলাদা মতবাদে বিস্বাসি প্রত্যেক গোত্রের মধ্যেই এই সর্বনাশা আছর ভর করেছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিও অনেক যুবক-যুবতির মাথা ঘুরিয়ে দিতে সাহায্য করছে। চতুর শ্বেতাঙ্গ ক্রিষ্টান,ইহুদিও পশ্চিমাদের ধর্মীয় ক্রুসেডের দায়িত্ব নিয়েছে সংগঠিত, সুসজ্জিত জঙ্গী বাহিনী,মুলত:তাঁদেরই সৃষ্ট এই দানব। চাপাতি, তলোয়ার, আত্মঘাতী বোমায় উড়ে যাচ্ছে জেহাদের নামে উদম্য মাতাল বিভ্রান্ত যুবক যুবতি। ঐ যুবকটির হঠাৎ পরিবর্তনে তার বিশ্বাস বা ভক্তি যতটা না কাজ করেছে, তারচেয়ে অধিক কাজ করেছে সর্বক্ষন পিছনে লেগে থেকে প্ররোচিত করার কারন। এদের প্ররোচিত করার স্থান দেশের চাইতে বিদেশেই তুলনামূলক বেশি। সংবাদপত্র, টিভি বা যে কোনো মিডিয়ায় অত্যাদিক প্রচারনাও কম ক্ষতিকারক মনে হচ্ছেনা।তরুনদের ধর্মইতো নতুন একটা কিছু করার প্রতি অদম্য আগ্রহ বিদ্যমান থাকা।যতটানা ঘটনা তাঁর অধিক প্রচার পাওয়ার জন্য ও তাঁরা কিছু কিছু ঘটনা করে থাকে।ঘটনার ধরন পয্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে, কতটা আগ্রাসী আর কতটা প্রচারসর্বস্ব। মাথা চিবিয়ে খেয়ে, মগজে উগ্রতার ঘন্টা জুড়ে দিয়ে ধর্ম কায়েম হয় না,কোন ধর্মই তা চায় না। ধর্মের অপব্যাখ্য করে তার কুপ্রভাব গুলি মগজে ডুকিয়ে দিয়ে বিশ্বব্যাপি ত্রাসের আতংক সৃষ্টি করে রেখেছে,একশ্রেনীর স্বার্থান্বেষি মহল।পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলো এখন আতঙ্কে, ভয়ে জড়সড়,কোন দেশ, কোন জাত কোন গোত্র শান্তিতে নেই। তবে এটুকু নি:সন্দেহে বলা যায়, এই সমস্ত সহজ সরল তরুন তরুনিদের ভুল পথ থেকে সরিয়ে আনার কোন সরকারি বেসরকারি,এনজিও বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান কারো উদ্যোগ নেই। আমাদের বিচক্ষন বুদ্ধিজীবীরা বলতেই আছেন জঙ্গির ভয়ে আছি,কখন প্রান পাখি উড়ে যায় বলা যায়না,পুলিশি প্রহরার জন্য সরকারের নিকট ঘন ঘন দাবি উত্থাপন করে যাচ্ছেন। তাঁরা কি আদৌ জানতেন না বাংলা ভাইদের যখন উত্থান হল তখন অনেকেইতো বলতে শুনেছি এটা স্রেফ মিডিয়ার সৃষ্টি।তাঁরা কি জানতেননা আজকে যে শিশুটি জম্ম নিল সেই একদিন যুবক হবে,বিয়ে করবে, তাঁর সংসারে বাচ্ছা হবে? অনেকে এখন বলেন, তাঁরা ভাবতে পারেননি মৌলবাদ এভাবে বড় হয়ে উঠবে, এতেই তো বোঝা যায় বুদ্ধিবৃত্তির মেধায় কতবড় তালা, চোখে কাল চশমার আবরনে ঠুলি লাগানো। এখন থেকে বিশ বছর আগে তারা সামনে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন ওরা জঙ্গী নয়, এখন শত শত কিলোমিটার দূরেও দেখতে পান আইএসের জঙ্গি খলিফার দিকবিদিক বোমা হামলা,জামায়াত শিবিরের" মানুষ কতলকে"ও ওনাদের মনে হচ্ছে আই এস আইএর কর্মকান্ড। এখন সময় এসে গেছে, কোন বিতর্কে না জড়িয়ে আমাদের তরুন প্রজর্ম্মকে রক্ষা করার কৌশল নির্ণয় করার।তাঁদের মা বাবা অনেক আশা ভারসা করে তাঁদের স্কুল কলেজে পাঠিয়েছে,ছেলে লেখা পড়া শেষ করে পরিবারের হাল ধরবে।পথিমধ্যে ছেলের মগজ ধোলাই করে বিপথে নিয়ে যাবে সংঘবদ্ধ চক্র তা কোন মা বাবা চিন্তা করেনি। ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়া" সামাজিক ক্যান্সার প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র "বন্ধ না হলে তরুন সমাজের এক অংশ যে বিপথে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। শুশিল সমাজের বৃহদাংশের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে তাও একান্ত হলফ করে বলা যায়।কে কখন কোথায় কার দ্বারা উড়ে যাবে কেউ জানে না। নষ্ট মগজ, বিকল চিন্তা আর বদলে যাওয়া যুবকের চেহারা গুলি আমাদের আশেপাশের।এখন বুদ্ধিভিত্তিক সমাজকে নির্ঘুম রাখছে, অতঃপর দেশের আপামর জনগনকে নির্ঘুম রাখবে। যখনি ধর্মাগ্ধ গোষ্টিটির সাথে যোগাযোগের ঠিকানা পাবে তখন সারা বিশ্বকে নির্ঘুম রাখবে। বিজ্ঞানের চরম শিখরে দাঁড়িয়ে সভ্যতা কি আত্মসমর্পন করবে ধর্মাগ্ধ গুটিকতক উম্মাদের নিকট। দুনিয়াতে যাহা কিছু উত্তম তাঁর পাশেই অবস্থান অধমের।তবে কি ধরে নেয়া যায় বর্তমানের অস্থিরতা সভ্যতারই কাল দিক? জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

্তিক ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস। প্রায় প্রতিদিনই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আর ভয়াবহ হামলার কারণে বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনার শীর্ষে থাকে এই সংগঠন। এদের সম্পর্কে নানা জানা-অজানা তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়পত্রিকার পাতায়। আইএসের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত অতিকথন কোনগুলো তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ইনডিপেনডেন্ট। আসল সত্যটা কী সেটাও সেখানে জ

ছবি

জাতীয় ও আন্তজাতিক ষড়যন্ত্র ব্যর্থ;যথারীতি দুই মানবতা বিরুধি অপরাধির দন্ড কায্যকর-- ================================== যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে বিএনপি ও জামায়াত বহু মূখি চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল। দেশে ও বিদেশে এসব ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে দল দুটি। এসবের সঙ্গে দলের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ২১শে আগষ্ট,জেল হত্যায় জড়িত বিদেশে পালিয়ে বেড়ানো আসামী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও জড়িত ছিল বলে দেশি বিদেশী গনমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। মানবতা বিরুধি বিচার ঠেকাতে বিএনপি -জামায়াত সাকা-সাঈদীকেই প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করার কৌশল অবলম্বন করেছিল বলে প্রকাশিত সংবাদ পয্যালোচনা করে দেখা যায়।দুই জনকে মূর্খ হিসেবে সামনে নিয়ে এসে ষড়যন্ত্র করার বহুবিদ কারন আছে। কারন সমুহ পয্যালোচনা করলে দেখা যায় উহার যথার্থতা, যথেষ্ট যুক্তি,সংগত আইনি ভীত্তি, বহুবিদ সহায়ক উপকরন বিদ্যমান রয়েছে,আমি মনে করি। তবে বিষয়গুলি পয্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে গনমানুষের মনে শেষ পয্যায় সংশয় সৃষ্টি হওয়ার পিছনে কোন ব্যাপার গুলি সংগত ভাবে কাজ করেছে? তাঁদের ধারনা ছিল সাকা পরিবার পাকিস্থানিদের সাথে বিশেষ সম্পর্ক এবং ফকা চৌধুরীর পাকিস্তান আমলের অর্জিত ইমেজ কে কাজে লাগিয়ে মানবতা বিরুধি অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াই বাঞ্চাল করে দিতে পারবে।সে লক্ষ নিয়ে বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ থেকে আরাম্ভ করে বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যাক্তি বিশেষকেও কাজে লাগানো হয়েছিল। দেশ বিদেশের পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত জামায়াত--বিএনপির বহুবিদ ষড়যন্ত্রের মধ্যে নিম্নের বিষয়গুলি অধিকতর গুরুত্ব বহন করে বলে আমি মনে করি। ""প্রথম বিচার কায্য আরাম্ভ হলে ট্রাইবুনালকে বিতর্কিত করার জন্য বিচারপতির স্কাইপি কেলেংকারি, একদিন আগেই সাকার রায়ের কপি ফাঁস, বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ, বিভিন্ন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফোন, চিঠি, বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি, আন্তর্জাতিক প্রোপাগান্ডা, সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার, বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্টদের হুমকি দেশের অভ্যন্তরে নানাভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য খুন ও গুপ্ত হামলা, আমেরিকার সিনেট সদস্যদের জাল সই সম্বলিত বিবৃতি,মক্কা মদিনা শরিফের ইমামের নামে মিথ্যা বিবৃতিদানের কাহিনী প্রচার,সর্বচ্চো বিচারালয়ে জাল সার্টিফিকেট সরবরাহ,প্রেসিডেন্ট ওবামা কতৃক বাংলাদেশের সরকার প্রধান বরাবর টেলিফোন করে মৃত্যুদন্ড মওকুফ করে যাবজ্জীবন সাজার সুপারিশ, মানবাধিকারের প্রশ্ন উত্থাপন করে সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্বদানকারি ইউরুপীয় ইউনিয়নের দুতাবাস সমুহকে মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে বিবৃতি দানে বাধ্য করা পয্যন্ত তাঁরা সক্ষম হয়।"" এক্ষেত্রে সাকার পরিবারের ইমেজ এর পাশাপাশি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ওয়াজীন হিসেবে আন্তজাতিক খ্যাতি,মোজাহিদের দলের শীর্ষ নেতার অবস্থানকে মুল পুঁজি হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল এবং কারাবন্দি নেতাদের মুক্ত করতে জাতীয় ও আন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই গত ৪/৫ বছরের রাজনীতি, সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাস,ধর্মীয় মৌলবাদিদের লোভলালসার মাধ্যমে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে সাধারন মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে বিভ্রান্ত করা সহ চতূর্মুখী কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে। এছাড়া পথে ঘাটে নাশকতা সৃষ্টি করে জঙ্গীদের নামে স্বীকারোক্তি,বাহিরে দলীয় বুদ্ধিজীবিদের বেসরকারি টিভি চ্যানেলে টাকার বিনিময়ে টকশোতে দাওয়াত গ্রহন পুর্বক গভীর রাত পয্যন্ত ইনিয়ে বিনিয়ে বিচারের বিরুদ্ধে জনমত সংগ্রহের চেষ্টা, ব্লগার,প্রকাশক হত্যা করে আন্তজাতিক জঙ্গী সংগঠনের উপস্থিতির প্রমানে প্রানান্তকর চেষ্টা সহ নানা ধরনের অপরাধ এবং ষড়যন্ত্র করে চলেছে দল দুটির বাছাই করা নেতাকর্মি ও সুশিল সমাজ।এই সমস্ত অপকর্মে জড়িত নেতাকর্মি ও সুশিলদের মোটা অংকের টাকা এবং ভবিষ্যতের নিশ্চিত জীবন জীবিকার গ্যারান্টিও দেয়া হয়েছে,তাঁদের দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নকারি নির্দিষ্ট কমিটির পক্ষ থেকে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নস্যাতে সব ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সরকার দৃডতার সংজ্ঞে অগ্রসর হয়েছেন এবং হচ্ছেন। বিচারে প্রভাব ফেলতে দেশে নাশকতার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারপতি, প্রসিকিউটরসহ সরকার পক্ষের লোকজনের অনেকের তালিকা করে হত্যার হুমকি দিয়ে মানষিকভাবে দুর্বল করে দেয়ার কৌশল অবলম্বন করে।এতে উল্লেখিত ব্যাক্তিবর্গ তাঁদের পরিবার ভয়ে অনেকে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিবেচনায় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।সরকারের কর্মকর্তা,আইন প্রয়োগকারি সংস্থাকে ভীতির মধ্যে রেখে সরকারকে বিভ্রান্ত করার কৌশল অবলম্বন করে। সরকারের মধ্যে থাকা তাঁদের লোকেরা অগ্রবর্তি হয়ে হাউকাউ শুরু করে নিরাপত্তায় পুলিশি ব্যাবস্থার দাবি উত্থাপনও করে।এই বিভ্রান্তি প্রচেষ্টায় তাঁরা আংশিক সফল হয়েছে বলে আমি মনে করি।মুলত;সমগ্র প্রশাসন ব্যাবস্থায় বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টার অংশ পুলিশ হত্যা। কেউ কেউ ঘর থেকে পরিবার নিয়ে বের হতে পারছেন না বলেও প্রচার করতে দেখা গেছে। মুলত:মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাহিত্যিক,সাংবাদিক,লেখক,প্রকাশক,বুদ্ধিজীবিদের টার্গেট করেছে জামায়াত-শিবিরের দুর্বৃত্তরা--,সরকারি কর্মকর্তাদের নয়। দালাল কর্মকর্তাদের জন্য উপযুক্ত পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়ার পরও তাদের ভীতি কাটছে না বলে প্রচার প্রপাগান্ড অব্যাহত রাখে। তাঁদের কর্মকর্তাদের পাতানো ফাঁদে পড়ে বিচারের পক্ষের সরকারি কর্মকর্তারাও কেউ কেউ হাউকাউ করে পানি বেশি গোলা করে ফেলেছেন বলে আমি মনে করি। লক্ষ করলে দেখা যায়,প্রত্যেকটি ষড়যন্ত্রের মুলে সাকা,সাঈদী কে তাঁরা সামনে রাখার চেষ্টা করেছে।জাতীয় ও আন্তজাতিক পরিচিতি কাজে লাগিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করাই তাঁদের উদ্দেশ্য,এখানেও প্রতারনার বহুবিদ কর্মে দল দু'টি নির্লজ্জভাবে জড়িত হয়েছেন। আন্তজাতিক পয্যায় ট্রাইবুনালকে বিতর্কিত করার চেষ্টায় অগ্রিম সালা উদ্দিনের রায় ফাঁস করার প্রচার চালায়।এই প্রচারনার জন্যেও তাঁদের প্রচুর টাকা খরছ করে ট্রাইবুনালের কর্মচারিদের বসে আনতে হয়েছিল। সরকার ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার সাথে সাথে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহন করে প্রথমেই মুদ্রাক্ষরিক ফারুক হোসনকে গ্রেফতার করে।নয়ন আলী নামে একজনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সুত্রধরে সম্পুর্ন গঠনা উৎঘাটন করতে সক্ষম হয়। এতে রায় ফাঁসের সঙ্গে সাকার আইনজীবীর সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত এবং গ্রেফতার হওয়া ব্যাক্তিরামোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে রায় ঘোষণার আগেই রায়ের কপি ফাঁস করে সালাউদ্দিনের আইজীবির হাতে তুলে দেয় তাঁরা।সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে মুল ঘটনার পরিকল্পনাকারি সহ উদ্দেশ্য বের হয়ে আসে। বিচারকে জাতীয় ও আন্তজাতিক ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই কোটি কোটি টাকা শুধু এখাতেই ব্যয় করেছে দল দু'টি।অভিযুক্ত আইনজীবি বিদেশ সফরে গিয়ে আদ্যাবদি দেশে আসেননি। বর্তমান বিশ্বমোড়ল যুক্তরাষ্ট্রকে পক্ষে রাখার জন্য তাঁরা প্রথম থেকেই চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এই জন্য কূটনৈতিক ভাবে সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গকরে এমন কোন প্রক্রিয়া নেই যা তাঁরা আশ্রয় নেয়নি।প্রথম থেকেই যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মনোভাবকে প্রভাবিত করতে অর্গানাইজেশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিজ ইনক-. নামে একটি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট ফার্ম কেসেডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ইন কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক ছাড়াও নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করেন এমন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামার কথা বলা হয়েছে। জামায়াতের এক প্রভাবশালী নেতা ও তার ভাই ২০১১ সালে তিন লাখ ১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য কেসেডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে নিয়োগ করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো বিচারের মুখোমুখি হওয়া জামায়াত নেতাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে বলে আন্তজাতিক মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।মোটা টাকা খরছ করার যথাযথ ফল ও পেয়েছে দল দুইটি।প্রথমেই জামায়াতের সাবেক আমীর ও যুদ্ধাপরাধী (মৃত) গোলাম আযমসহ অন্যদের ফাঁসি না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিচার শেষ হওয়ার আগেই ২০১২ সালে চিঠি পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যাক্তি বর্গরা। এই চিঠির বিষয়বস্তু আবার আন্তজাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের ব্যাবস্থাও করেছিলেন।নিয়মিত বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন মৃত্যুদন্ড না দেয়ার জন্য সরকারকে অনুরুধ করে চিঠি,বিবৃতি টেলিফোন ইত্যাদি নানাভাবে অনুরুধ উপরুধ আসতেই থাকেসরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে।সরকারি সুত্র বিষয়টি মিডিয়াকে নিশ্চিত করে জানায়, এ বিচারকে প্রভাবিত করতে বিদেশী বিভিন্ন ধরনের সংগঠন বিবৃতি দিচ্ছে সত্য।সুত্র নিশ্চিত হতে পেরেছে এজন্য অধিকাংশ সংগঠন মোটা অংকের অর্থ নিয়ে এ ধরনের বিবৃতি দিচ্ছে। সর্বশেষ এই কয়দিনে তাঁদের তৎপরতা দেশী বিদেশী কারো চোখ এড়াতে পারেনি,একরকম মরিয়া হয়ে প্রকাশ্য- অপ্রকাশ্য ভাবে সমস্ত প্রপাগান্ড করা হয়েছে। বিএনপি নেতা যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড অবিলম্বে স্থগিত চেয়ে বিবৃতি দেয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গত শুক্রবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দু’জনের ফাঁসি স্থগিত চেয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। দু’জনের মামলায় ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পর্যালোচনারও’ দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি। আগেও একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছিল সংস্থাটি, যার কড়া সমালোচনা করেছিল বাংলাদেশ সরকার।নির্লজ্জ সংস্থাটি তাঁরপর ও বিবৃতি দিয়ে আবারও আগের কথাটাই নতুন করে বলতে চেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার যেভাবে দেশীবিদেশী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে যুদ্ধঅপরাধের দীর্ঘ লালিত কলংক মুক্ত করার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন, ইহা ইতিহাসের এক নজিরবিহীন ঘটনা।বিশেষ করে আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশের সরকার ধনী দেশগুলীর বিরুধিতা ক্ষেত্র বিশেষ চক্রান্ত উপেক্ষা করে বিচার এগিয়ে নেয়া নি:সন্দেহে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের কন্যা যদি সরকার প্রধান নাহতেন আরো শতবছর পরও জাতি কলংক মুক্ত হতে পারতো বলে আমি মনে করিনা।দেশরত্ম শেখ হাসিনা কোনভাবেই তাড়াহুড়ো না করে সম্পুর্ন আইনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়া ব্যাতিরেকে কোন অপরাধির শাস্তি বাস্তবায়নে কখনই চঞ্চলতা প্রদর্শন করেছেন,কোন শত্রু ও বলতে পারবেননা। স্বাধীন বাংলাদেশে অতীতে বিভিন্ন সরকারের সময়ে বিশেষ করে" মেজর জিয়ার সরকারের" ক্ষমতা গ্রহনের পরপর বিভিন্ন কারনে দেশের মুক্তিযোদ্ধা সেনাকর্মকর্তা এবং দেশের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের বিচার অত্যান্ত গোপনীয় ভাবে, নির্দিষ্ট বিচারকক্ষে অনুষ্ঠিত হতে দেখা গেছে। এমন নজীরও স্থাপন করেছিল বিচারালয়ে সাংবাদিকতো দুরের কথা কোন আইনজীবির মাধ্যমে আইনি পরামর্শ নেয়ার সুযোগ পয্যন্ত দেয়া হয়নি। উচ্চ আদালতের আপিলের মাধ্যমে সুবিচার পাওয়ার সুযোগ--যাহা "অভিযুক্তের মৌলিক সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার" তাহাও কোন অভিযুক্তকে দেয়া হয়নি।আইন বিশেষজ্ঞদের অভিমত প্রত্যেকটি ফাঁসি " রাষ্ট্রীয় হত্যা "ছাড়া অন্য কিছুই ছিলনা।সংগোপনে বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হয়েছিল।কোন প্রকার আইনী প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা ছাড়াই মাত্র ২/৩ মাসের মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দন্ড কায্যকর করতে দেখা গেছে।যাহা সভ্য দুনিয়ায় চিন্তাও করা যায়না। তেমনটি বর্তমান সরকারের সময়ে দেখা যাচ্ছেনা। কোন প্রকার তাড়াহুড়ো না করে বিচারের সর্বশেষ পয্যায় সুচারুরুপে সমাপ্তির পর মহামান্য রাষ্ট্রপতির। "সাংবিধানিক অধিকার "প্রয়োগ করে ক্ষমা প্রদর্শনের ধাপ অতিক্রম করা ছাড়া কোন অপরাধির দন্ড অদ্যাবদি কায্যকর হয়েছে বলে চরম শত্রুও অভিযোগ উত্থাপন করতে পারেনি। সরকারের বিচার অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াগত দিক নিয়ে সম্ভবত উল্লেখিত কারনে কোন আন্তজাতিকভাবে স্বীকৃৃত সংস্থা বা জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ অদ্যাবদি উত্থাপিত হয়নি।বিচার অনুষ্ঠানের স্বচ্ছতা,অভিযুক্তের আইনী সহায়তা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করন,সাফাই সাক্ষী দেয়ার বিধান যথাযথ অনুসরন,সাক্ষীদের জেরার পয্যাপ্ত সুযোগনিশ্চিত করন, অভিযোগ প্রমানে প্রত্যক্ষদর্শির সাক্ষকে গুরুত্ব দেয়া,যথাযথ লিখিত প্রমান সংরক্ষন,নথিপয্যালোচনায় বিচক্ষনতা,সরকারী কৌশলিদের ধৈয্য ইত্যাদি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরনের কারনে বিচার সুষ্ঠ, ন্যায়, যথাযথ হচ্ছে বলে আইন বিশেষজ্ঞ গন অভিমত ব্যাক্ত করেন। জাতীয় ও আন্তজাতিক ষড়যন্ত্রকে সরকার দৃডতার সাথে মোকাবেলা করে বিচার অনুষ্ঠানকে দেশবাসি আকুন্ঠ সমর্থন দেয়ার কারনে সরকার নৈতিক ভাবে অনেকটা বলিয়ান হতে পেরেছে।জনগনের সমর্থন,সরকারের ধৈয্য ও সহনশীলতা,স্বচ্ছতা,যথাযথ তথ্যপ্রমান যথাসময়ে হাজির করে মামলা প্রমানের সদিচ্ছাই কোনপ্রকার ষড়যন্ত্র মানবতা বিরুধিঅপরাধের বিচারের বেলায় কায্যকর হচ্ছেনা বলে বিশেষজ্ঞগন অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।আমি মনে করি প্রধান মন্ত্রীর জনগনকে দেয়া অঙ্গিকার "মানবতা বিরুধি অপরাধের বিচার করার"তাঁকে সাহষি করে তুলেছে।জনগনের স্বত:স্ফুর্ত সমর্থনও এক্ষেত্রে প্রনিধান যোগ্য বলে আমি মনে করি। সকল সংশয়, জল্পনা কল্পনা,সন্দেহজনক পয্যবেক্ষনের সমাপ্তি ঘটিয়ে প্রধান দুই ব্যাক্তির দন্ড কায্যকর হওয়ায় সারা দেশে স্বস্তির আবহ সৃষ্টি হয়েছে।চক্রান্ত চতুর্দিকে ঘুরপাক খাওয়ার কারনে অনেকেই বেশ অস্বস্তিতে বিগত কয়দিন দিনাতিপাত করেছেন।বিশেষকরে তাঁদের দ্বারা অত্যাচারিত,হত্যার শিকার পরিবার,মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি,স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জিবিত নতুন প্রজর্ম্মের অগনীত মানুষ উৎকন্টিত,সংশয়ের দোলাচলে আবর্তিত ছিলেন এই কয়দিন,আইন তাঁর নির্দিষ্ট গতিতে চলবে,নাকি ষড়যন্ত্র জয়ী হবে।শেষাবদি আইনই জিতেছে।দেশব্যাপি ঈদের আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছে,স্থানে স্থানে উৎফুল্ল জনতা মিষ্টি বিতরন করে, মিছিল করে কোলাকোলি করে তাঁদের আনন্দ উৎযাপন করছে।মহান সৃষ্টি কর্তার নিকট শোকরিয়া আদায় করছে জনগন, দেরীতে হলেও তাঁরা জগন্য, নিকৃষ্ট দুই জানোয়ারের বিচারের দন্ড কায্যকর হতে দেখে যেতে পেরেছে। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধান মন্ত্রী,ধন্যবাদ সদাশয় সরকার বাহাদুরকে,ধন্যবাদ মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে-- জনগনের আঁতের খবর বুঝতে পেরে" দুইজনের কৃত অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন" শেষ পয্যন্ত বাতিল করে সত্বর দন্ড কায্যকরের আদেশ প্রদান করে বিচক্ষনতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

সভ্য ইউরুপ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল মুসলিম প্রধান দেশ সমুহকে তাঁরা কত ধৈয্যশীল জাতি-- ~~~~~~~~~~~~~~~`~~~~`~~~`~~~~~~ ইউরুপের সভ্যতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সারা পৃথিবিকে তাঁরা যে আসলেই সভ্য জাতি।বিশেষ করে এশিয়া,আফ্রিকার মানব সমাজকে।সভ্য ইউরুপ -সভ্যের মতই তাঁদের ভুমিকা রেখেছে।এত বড় হৃদয়বিদারক ঘটনা হওয়ার পরও তাঁদের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সংযত আচরন,পরমত সহিঞ্চুতা,ধৈয্যের চরম পরাকাষ্টা দেখিয়ে সারা বিশ্ববাসিকে অবাক করে দিয়েছে।বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার দেশ সমুহ যেখানে দিল্লিতে আগুন দিলে ঢাকায় তার তাপ অনুভব করা যায়, সে সমস্ত দেশ সমুহের সামনে যুগান্তরের শিক্ষনীয় এক উদাহরন সৃষ্টি করে দিয়ে গেল প্যারির হামলা। ফ্রান্সের আইএস জঙ্গিদের হামলায় প্রায় একশত ষাট জন মানুষ প্রান হারিয়েছে।সারা প্যারিস জুড়ে জরুরী অবস্থা ঘোষনা করা হয়েছে।দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মত দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি হল।সরকার জনগনকে ঘর থেকে বাহির না হতে বারন করেছিল।সরকারের বাধা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ প্যারির উন্মুক্ত চত্বরে সমবেত হয়েছেন।তাঁরা নিহত ও আহতদের প্রতি তাদের সশ্রদ্ধ আবেগ এবং ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছে।গুরুত্ব পপূর্ন স্থাপনা সমুহে আলো ননা জজ্বালিয়ে অন্ধকারের কীটদের পপ্রতি তাদের ঘৃনা পপ্রকাশ ককরেছে।আইফেল টাওয়ারে আলো জ্বলেনি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কোনো প্রজ্বলন হয়নি, মানুষ সবকিছুকে দেখেছে বর্বরতা,নৃসশতা অসভ্য কিছু মানুষের অপকর্ম হিসেবে।সেই বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ব সভ্যতা ও মানবতার চিন্তাকে সজাগ করার প্রানান্তকর চেষ্টা করেছে।তাঁদের মনের আকুতি প্রকাশ করেছে খোলা ময়দানে সমবেত হয়ে, ঘরে বসে থেকে নয়। স্বত:স্ফুর্ত জনতার সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ফরাসি দেশের জনগণ, শিশু, কিশোর, নারী, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের বিবেকবান মানুষ। পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুখী, নিরুপদ্রব সমাজে ননিশ্চিন্ত মমনে বসবাস ককরতে পারে।কোন দানবকূলের কারনেএমন ক্ষতি তাঁদের জীবনে ফিরে না আসে।ফরাসি সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো,দেশেরাপামর সব নাগরিক লৌহ কঠিন অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।কোন ধর্মীয় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভিশাপ তাঁদের জনপদে যেন হামলে পড়তে না পারে। সকল কুস্মুন্ডতা থেকে ফ্রান্সকে মুক্ত করতে এক ও অভিন্ন চেতনায় এক সারিতে সারা ফ্রান্স । আমাদের দেশের মতো ককোন রাজ ননৈতিক দল বা ব্যাক্তি সরকার ও পুলিশ বাহিনী ব্যর্থ বলে বিবৃতি দদেয়নি।একে অঅপরকে দোষ দিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেনি। গোটা জনমতকে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে করেনি। স্বশরীরে আমাদের দেশের মত মিডিয়ায় গিয়ে টকশোর ননামেকেউ কেউ নানা উদাহরণ টেনে পান্ডিত্য জাহির করার চেষ্টাও করেনি।দায় কাঁধে নিয়ে সরকার পদত্যাগের ঘোষণা কেন দেয়নি এমন প্রশ্ন কোন তরফ থেকে উত্থাপিত হয়নি। একে অপরকে অভিযুক্ত করে কিংবা নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে ঝগড়াঝাটি শুরু করে দেয়নি। ফরাসি সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেই বক্তব্য দিয়েছে। ফরাসি জনগণও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান সরকারকে ও বিশ্ব বাসিকে জানিয়ে দিয়েছেন,স্বতস্ফুর্ত কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে।না কোন গাড়ি ভাংচুর করেনি জনতা,ব্যাংক বীমাতেও আগুন দেয়নি,স্বর্ন দোকান ও লুট করেনি।জঙ্গিবাদ দমনের জন্য বর্তমান গৃহিত ব্যাবস্থাকে আর জোরদার করার কথাই বলছে। জঙ্গিদের হাতে আর যেন কোন মানুষের জীবন বিপন্ন না হয় সে দাবিই জানিয়েছেন সমবেত জনতা।সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বাইরে অন্য কারো বিরুদ্ধে কোনো উচ্চারণ নেই, ঘৃণার পরিধির সামান্যতম বিস্তৃতিও ঘটেনি। প্যারিতে জঙ্গিবাদী আইএসের হামলার বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফ‚র্ত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ইংল্যান্ড, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপের দেশে দেশে, এশিয়ারও বহু দেশে। দেশসমূহের সরকার এবং জনগণ এই নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কোনো নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালায়নি, এমনকি সংখ্যায় নগন্য মুসলমানদের অভিযুক্ত করে কোনো বক্তৃতা বা বিবৃতি পয্যন্ত দেয়নি। ব্যাক্তি পয্যায়ের আলোচনায়ও ইসলামের বিরুদ্ধে কেহই টুশব্দটি পয্যন্ত উচ্ছারন করেছে এমন কোন খবর এই পয্যন্ত পাওয়া যায়নি। সন্ত্রাসীরা এই হামলায় অংশ নিয়ে ইসলামের নাম ব্যবহার করেছে।ফরাসি জনগন ঠিকই বুঝেন জঙ্গিপনার অধিকার তাদের ইসলাম দেয়নি, সাধারণ মুসলমানরাও দেয়নি। ইসলাম বিশ্বের সর্বপেক্ষা শান্তি ও মানবতার ধর্ম।গুটিকতক বিপদ গামি দোযগের কীটের কারনে তাঁরা গোটা ধর্ম বা মুসলিম সমাজকে দোশি সাব্যস্ত করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ফন্দিও করেনি। অথচ এসব জঙ্গিগোষ্টিপবিত্র ধর্ম ইসলামের কত বড় ক্ষতি সাধন করছে তা তারা কোনোভাবেই বুঝার চেষ্টা করে না। তাদের যারা সমর্থক তারাও বোঝে না, মুসলমানদের কত ক্ষতি তারা করছে। তারা স্বীকার পয্যন্ত করেনা,ইহা অত্যান্ত ক্ষতিকর পদক্ষেপ আমাদের ধর্মের বিকাশের জন্য। ইসলাম অর্থই হচ্ছে শান্তি। সেই শান্তির ধর্মকে কতিপয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী ইসলামি রাষ্ট্র, খিলাফত ব্যবস্থা,কোরানি শাষন,হেফাজতে ইসলাম,জামায়াতে ইসলাম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার নামে যেভাবে উগ্র সন্ত্রাসের পথ বেচে নিয়েছে, তাতে লাভ হওয়ার সম্ভাবনাতো নেই বরঞ্চ বিশ্ব দরবারে মসুলমান মানে সন্ত্রাসি,ইসলাম মানে জঙী এই ধারনাই বদ্ধমুল করার আপ্রান চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিজের দেশেতো বটেই বাইরের দেশগুলোতে রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞ করতে সামান্যতম দ্বিধাগ্রস্থ্যতা দেখা যাচ্ছেনা।ফলশ্রুতিতে মুসলমানদের সম্পর্কে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মারাত্মক বিরূপ ধারণা তৈরি হতে শুরু করেছে। এমনিতেই ইউরোপের দেশগুলোতে এখন কয়েক কোটি মুসলমান বসাবস করছে। সম্প্রতি সিরিয়া থেকে কয়েক লাখ মানুষ ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। আরো বিপুল সংখ্যক মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়ার অপেক্ষায় আছে। বলাবলি শুরু হয়ে গেছে, ফ্রান্সের হামলায় যারা অংশ নিয়েছে তাদের কেউ কেউ শরণার্থীদের ভেতরেই লুকিয়ে ছিল বহুদিন পয্যন্ত। অথচ সিরিয়ায় আইএসআই মানবতার বিরুদ্ধে যে বিপর্যয় ঘটিয়েছে তার নজির খুঁজে পাওয়া কঠিন,তাঁদের অত্যাচার অনাচারে লাখ লাখ ইসলাম ধর্মের অনুসারি প্রাণে বাঁচার জন্য পাড়ি জমিয়েছে ইউরোপে। মধ্যপ্রাচ্যের তথাকথিত ইসলামি দুনিয়ায় কোথাও তাদের ঠাঁই হয়নি।কোটি কোটি বর্গ কিলোমিটার খালি থাকার পরও মুসলিম-মুসলিম ভাইদের সামান্য বিপদে সাড়া দেয়নি।সেখানে ইউরুপের উদার গনতান্ত্রিক দেশ গুলির দরজা সর্বদা খুলা রেখেছে।পথের বাধা না থাকলে,আরো বহু শরনার্থীর আবাস সেখানে হতে পারতো। মধ্যপ্রাচ্যের আরো অনেক দেশের, এশিয়ার দেশ সমুহের অনেক কর্মজীবির ঠাঁই ইউরুপে নিয়েছে,যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ধর্মের দিক থেকে ইসলামের অনুসারি।বৈধ পথে ছাড়াও অবৈধ পথে কর্মজীবী মানুষ শরণার্থী স্রোতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। এ ধরনের বাস্তবতায় যেখানে কয়েক কোটি মুসলিম মানুষ ইউরোপের দেশগুলোতে বসবাস করছে, জীবন-জীবিকা, পরিবার পরিজন নিয়ে শুখে শান্তিতে আছেন তখন আইএসআইয়ের নামে কতিপয় ইসলামি জঙ্গিএ ধরনের ভাগ্যবিনাশি হামলা, নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করার জন্য সন্ত্রাসী আক্রমণ করা , আরো বড় ধরনের হামলা ও প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেয়া কতটুকু যৌক্তিক তাহা মুসলিম বিশ্ব গভীরভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে। ইউরোপে বসবাসকারী সংখ্যায়লুগু মুসলমানদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে ঠেলে দিল ধর্মের নামে উগ্রতা।প্যারিসে সংঘটিত হামলা ও হত্যা মনে হচ্ছে গোটা বিশ্ব সভ্য সমাজকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে, মানব সভ্যতাকেই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আইএসআই নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠার পেছনে ইজরাইলের মোসাদ আমেরিকার সিআইএ সরাসরি জড়িত।তাঁদের অর্থ অস্ত্রে বলিয়ান হয়ে ইসলামকে ধংশের চক্রান্তে শামিল হয়েছে বিশ্বের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ সমুহের তথাকথিত মৌলবাদি,পশ্চাদপদ, উগ্র গুটি কতক ধর্মধারি অধর্মের পুজারি- মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দোসর, ইহুদী বাদের তল্পিবাহক।

ধার্মিকের ছদ্মাবরনে বকধার্মিকদের রক্তাক্ত আস্ফালন,বিশ্ব নীরবে তাকিয়ে রয়---!!

ছবি

বিশ্বমোড়লের স্বার্থের বাহিরে গেলে প্রিয় বন্ধুরাষ্ট্রেও জঙ্গীর উপস্থিতি আছে:অনুকুলে থাকলে দেশের সব মানুষ মারা গেলেও আপত্তির কোন কারন থাকে না। প্রীয় পাঠক বন্ধুরা,নিম্নে বহুল প্রচলিত বিশ্ব নেতাদের নীতি কৌশলের আতংক ওয়েব সাইট উইকিলিকস,অভিজ্ঞ সাবেক বিশ্বনেতা ফিদেল কেস্ট্রো,বর্তমান বিশ্বের ২য় শক্তিধর নেতা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত তিনটি বিশেষ খবর কপি পেষ্ট করে তুলে দিলাম।বর্তমান বাংলাদেশের কথিত আই এস হামলার সাথে এখানে কোন যোগসুত্র পাওয়া যায় কিনা তাঁর একটা বিশ্লেষন ধর্মী আলোচনা বাংলাদেশের রাজনীতি বিশ্লেষকদের কাছ থেকে জানার আগ্রহে আমার ক্ষুদ্র এই প্রয়াস। দেখি তাঁরা কি বলেন------ (এক) ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে গোপন তথ্য ফাঁস করে আলোচিত ওয়েবসাইট ‘উইকিলিকস’ প্যারিস হামলার জন্য আমেরিকা ও তার মিত্রদের অভিযুক্ত করেছে। হামলার পর এক টুইট বার্তায় উইকিলিকস বলে, বছরের পর বছর ধরে সিরিয়া ও লিবিয়ায় চরমপন্থীদের অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার ফল। পরের দিন আরেক টুইট বার্তা ওয়েসসাইটটি বলে, প্যারিস সন্ত্রাসী হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়াও ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এই দুই মৃত্যুর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যে উগ্রপন্থীদের প্রতিপালন করেছে তার সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। আরেক টুইট বার্তায় উইকিলিকস বলে, প্যারিসে ইসলামি সন্ত্রাসীদের হামলায় ১২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ায় আড়াই লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। এই ব্যাপারটা তখনো মজার ছিলো না, এখন মজার না। অস্ত্র এবং আর্থিক সহায়তার প্রশ্ন তুলে আরেক টুইট বার্তায় উইকিলিকস বলে, এরা (হামলাকারী) কারা? সুন্নী উগ্রপন্ত্রী, তাদের অর্থ এবং অস্ত্র দেয় কে? ওয়েবসাইটটি আরো বলে, সিরিয়া ও ইরাক রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে উগ্রপন্ত্রীদের যারা অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেছে তাদের প্রত্যেকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। শনিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে একটি আর্টসেন্টার, রেস্টুরেন্টসহ কয়েকটি জায়গায় বন্দুকধারীর গুলি এবং ফ্রান্স স্টেডিয়ামের কাছে বিস্ফোরণের ঘটনায় দেড়শতাধিক মানুষ নিহত হয়। ক্যাস্ত্রো বলেছেন, উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল সৃষ্টির পেছনে রয়েছে আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইল। কিউবার স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বহু মিডিয়া এ খবর দিয়েছে। (দুই) ক্যাস্ত্রো বলেছেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল সৃষ্টির জন্য ইসরাইলের কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ ও আমেরিকার যুদ্ধবাজ সিনেটর জন ম্যাককেইন ষড়যন্ত্র পাকিয়েছেন। ক্যাস্ত্রো তার নিবন্ধে পরিষ্কার করে বলেছেন, জন ম্যাককেইন হচ্ছেন ইসরাইলের নিঃশর্ত মিত্র এবং মোসাদের সঙ্গে গোপন পরিকল্পনায় আইএসআইএল সৃষ্টি করা হয়। সেই অনিষ্ট শক্তি এখন ইরাকের বিরাট অংশ এবং সিরিয়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্যাস্ত্রো তার বক্তব্যে ন্যাটো সামরিক জোটকেও এক হাত নিয়েছেন। তিনি এ জোটকে জার্মানির নাজি বাহিনীর এসএস কোরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ন্যাটোর কিছু নেতার বক্তব্য শুনলে মনে হবে যেন তারা অ্যাডলফ হিটলারের নাজি বাহিনীর কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েছেন। (তিন) বাংলাদেশ প্রেস ডেস্ক || রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, জি-২০’র কোনো কোনো সদস্যসহ প্রায় ৪০টি দেশ তাকফিরি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আইএসআইএল বা দায়েশকে অর্থের যোগান দিচ্ছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী তুরস্কের আনাতালিয়া শহরে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, রুশ গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আইএসআইএল’র অবৈধ তেল ব্যবসা জরুরিভিত্তিতে বন্ধের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা বলেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, মহাকাশ এবং বিমান থেকে তোলা ছবি জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানকারী রাষ্ট্র প্রধানদের দেখানো হয়েছে। এসব ছবিতে দায়েশের অবৈধ তেল বাণিজ্যের ব্যাপকতা ফুটে উঠেছে। । এ সব ছবিতে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার জুড়ে তেল ট্যাংকারের লাইন ধরা পড়েছে বলে জানান তিনি। পুতিন বলেন, চার থেকে পাঁচ হাজার মিটার ওপর থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে- তেল ট্যাংকারের লাইন দিগন্ত রেখা পেরিয়ে গেছে। গত বছর অধিকৃত তেলক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলিত তেল বিক্রির অর্থ দায়েশ গোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস ছিল। ইরাকের উত্তরাঞ্চল এবং সিরিয়ার রাকা প্রদেশের তেলক্ষেত্রগুলো থেকে এসব তেল উত্তোলন করা হচ্ছে। আমার অভিমতের সাথে পাঠকের মনের মিল খোঁজে পান কিনা একটু দেখুন:------ পাঠকগন লক্ষ করুন--তিনটি পত্রিকার তিন দিগন্ত থেকে দুই বিশ্ববরেন্য ব্যাক্তি এবং এক মিডিয়া ওয়েব বিশ্ববাসিকে একই খবর একই সময়ের মধ্যে জানানো হল। আগেই বিশ্বনেতৃবৃন্দ স্থীর সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন আইএস জঙ্গী সমস্যা কোন একক দেশের একক কোন সমস্যা নয়।শান্তিকামি দেশ সমুহের উপর বিশ্ব মোড়ল বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন কৌশলে একতরফা ভাবে কথিত জঙ্গীর ছদ্মাবরনে তাঁদের মাতব্বরির পথ মসৃন রাখার স্বার্থে চালিয়ে যাচ্ছে শান্তিকামি দেশ সমুহের শান্তিকামি জনগনের উপর। একের পর একবোমা হামলা,আগুন সন্ত্রাস,আর্জেস গ্রেনেড,গুলি,চাপাতির হামলা।দেশ সমুহের সম্পদহানি, প্রকাশ্য লুটতরাজ,গুপ্তহামলা ইত্যাদি করতেও দেখা যায়।মুলত;সামাজতান্ত্রিক বিশ্বের পতনের পর সাম্রাজ্যবাদি দেশ আমেরীকা এবং তার মিত্রদেশ সমুহের মিলিত প্রপাগান্ডার অংশই হচ্ছে আজকের বিশ্বের অস্থিরতার মুল কারন।এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে শীতল যুদ্ধের অবসানের পর থেকেই।জঙ্গির আনাগোনার আত্মপ্রকাশ একেক দেশে একেক নামে প্রকাশ করছে অনেক আগে থেকেই।তাঁদের শোষন এবং ভু-রাজনীতির হিসেব নিকেশ রাখার দোষর যতদিন দেশটির সরকারে আসতে পারবেনা ততদিন তাঁরা সেই দেশটির উপর এই অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।এটাই তাঁদের নীতি আদর্শে পরিনত হয়েছে।বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাঁদের এই উলঙ্গ হামলা জ্ঞানপাপিরা দেখেও না দেখার ভান করেন। এটাতো স্পষ্ট, বি,এন,পির ডাকা অবরোধ প্রত্যাহার করা না করার উপর যেহেতু তাঁদের আরোপিত রেড এলার্ট নির্ভরশীল সেহেতু বি,এনপি কেন তাদের অবরোধ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রত্যাহার না করে শঠতার আশ্রয় নিয়ে একটা জাতিকে ধ্বংশের নেশায় মেতে উঠেছেন? আগুন সন্ত্রাসের রশি কি বেগম জিয়ার হাতে ছিলনা? অবরোধ প্রত্যাহারের ক্ষমতা কি খালেদা জিয়ার নেই? কোন অশুভ শক্তির ইশারায় খালেদা অবরোধ ডেকে নিরাপদ কক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন? কারা দেশের মধ্যে আগুন সন্ত্রাস করেছিল? এই আগুন সন্ত্রাসের নেতৃত্বে কি খালেদা ছিলেননা? খালেদা কি সাম্রাজ্যবাদি চক্রের হাতে এই দেশটা সঁপে দেননি? ঘুপ্ত হত্যা কি অবরোধ প্রত্যাহার করা না করার সাথে সম্পৃত্ত? অবরোধকে উপলক্ষ করে এখনও কেন বাংলাদেশের উপর রেড এলার্ট থাকবে?খালেদা কেন প্রাকাশ্য এখনও বলছেননা তিনি অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন? গুপ্ত হত্যার পর আন্তজাতিক ভাবে আই এসের হামলায় লিখক প্রকাশক হত্যার প্রচার এবং বিএনপি দলের সংলাপ ভিক্ষার মধ্যে একান্ত মিল থাকার পরও আমাদের দেশের তথাকথিত টকশোবাজেরা আইএস খোঁজতে সারা পৃথিবি সব তোলপাড় করে ফেলছেন। অনেক প্রাজ্ঞ রাজনীতিক,বিশ্লেষক,দল, জোট বুঝাতে চান গনতন্ত্রের অভাবে চরম পন্থার উদ্ভব হচ্ছে।গনতন্ত্র বলতে শুধুই কি একটা জাতীয় নির্বাচন? এখনতো পরিষ্কার হয়ে গেল,বিশ দলীয় জোট কেন নির্বাচনে অংশ নেয়নি?ভোটে অংশ না নিয়ে নির্বাচন সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করা আহম্মকি,বেহায়াপনা ছাড়া আর কি হতে পারে? ফ্রান্সে কি গনতন্ত্রের অভাব আছে.না ভোটের কোন হেরফের আছে? সেখানে কেন হামলা হল? ফ্রান্সে হামলা হয়েছে নতুন শক্তির আগমনের আগেই সতর্ক করে দেয়ার কৌশল আমেরীকার।,যে যেদিকে যাবে যাক আগামী বিশ্ব রাজনীতিতে তুমি আমার আশে পাশে থেকো,নয়তো তোমার দেশেও জঙ্গীর উপস্থিতি বিশ্ব টের পেয়েছে,তাই নয় কি? টুইন টাওয়ার ধংশ হল গনতন্ত্রের অভাবে? এত বড় টুইন্টাওয়ার সেখানে নাকি সেদিন কোন মনুষ্য জীবের অবস্থান ছিল না। কি হাস্যকর ব্যাপার। গনতন্ত্রের অভাব কি ভারতেও আছে? খাগড়াগড় হামলা কেন হল? মুলত গনতন্ত্র সমাজতন্ত্র,রাজতন্ত্র কোন বিষয় নয়।তাঁদের স্বার্থের রক্ষক বড় বিষয়।সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমুহ রাজতন্ত্র নয় কি?ইসলামে কি রাজতন্ত্রের অনুমোদন আছে? ইহুদি রাষ্ট্র সমুহ কি ভাবে মুসলিম প্রধান দেশের বন্ধু হয়। কিভাবে গনতন্ত্রের সোল এজেন্ট আমেরীকার মিত্র হয়? জাতির জনকের কন্যা নতুন নতুন নামে নব্য আবিস্কৃত সকল বাংলাদেশি আই,এস,মোজাহেদিন,তাহরিকে ইসলাম ইত্যাদি যে নামেই ডাকা হোকনা কেন,সব জঙ্গীর আস্তানা ঠিকই চিনেন। উদ্ভাবীত আই এস,আগুন সন্ত্রাস,ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান,ইত্যাদি সব কিছুর চেলেঞ্জ মাথায় নিয়েই ধীর স্থীর ভাবে চিরদিনের জন্য নির্মুলের প্রজেক্ট হাতে নিয়ে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে বাংলার জনগনের সম্মুখে উক্ত প্রজেক্ট গুলির নির্মুলের উপকারিতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারনে জনগন স্বতস্ফুর্ত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।আন্তজাতিক জরিপের ফলাফল সমুহের প্রতি লক্ষ রাখলে আমার উক্তির সত্যতা বোধগম্য হতে বিশ্লেষনের প্রয়োজন হবেনা। বিশ্বের কোন দেশের চলমান সরকারের জনপ্রিয়তায় ধ্বস ছাড়া উন্নতি হতে দেখা যায়না,বাংলাদেশের সরকার তথা জাতির জনকের কন্যাই একমাত্র ব্যাতিক্রম শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে উন্নয়নের গতির সাথে তাল মিলিয়ে সকল অশুভ শক্তির আস্তানায় উপোয্যপুরি ক্ষেপনাস্ত্রের হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।যতক্ষন পয্যন্ত বাংলাদেশের জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তির গ্যারান্টির নিশ্চয়তা হবেনা, ততক্ষন পয্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন ইনশাল্লাহ। সাথে সকল অশুভ শক্তির পাটাতন বাংলার মাটির গভীর থেকে উপড়ে সাম্রাজ্যবাদিদের দেশে ফেরৎ পাঠানোর দৃড মনোবল নিয়ে স্থীর হয়ে একাগ্রচিত্তে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রজেক্ট সমাপ্তির পর যাদুঘরেও আর আই এসের সন্ধান করে পাওয়া যাবেনা ইনশাল্লা।সেই মতেই সরকার দেশের জনগনকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। "জয় ইনশাল্লাহ হবেই হবে।" "জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখহাসিনা"

ছবি

অশুভ শক্তির অঘোষিত যুদ্ধ--মন্ত্রী নেতাদের অপরিপক্ষ বচন,বুদ্ধিজীবিদের সীমাহীন দুর্গতি।

ছবি

সর্বচ্ছো ছাড় দিয়ে সংলাপ ভিক্ষা বি,এন,পির--রাজনীতিতে পুর্নবাসন হওয়ার নতুন চাল খালেদার ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ বি,এন,পি কে নিয়ে আর লিখবোনা এক রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।কারন পতন বা ক্ষয়ে যাওয়া কোন কিছু সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করতে গেলে শুধু দুর্গন্ধই বের হয়,সুগন্ধ বের হবেনা।তাই সিদ্ধান্তটি নিয়ে আবার গতকালের দৈনিক সংবাদ পত্র গুলীতে একটা খবর দেখে অন্তরের কান্না থামাতে পারিনি।বার বার কেন জানি মনে হচ্ছিল,জাতির জনককে নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করে হাজারো অপপ্রচারের মাধ্যমে দুর্দন্ড প্রতাপে সারা বাংলা চষে বেড়িয়েছিল যে মানুষ আকৃতির দোযগের কীট গুলি তাঁদের করুন আকুতির ভিক্ষার ধরন দেখে।একদা রাজনীতিকে যারা মিথ্যার ফুলঝুড়ি, ল্যাং মেরে উপরে উঠে আসা,অরাজনৈতিক ব্যাক্তিদের রাজনীতিতে টেনে এনে পেশী শক্তির প্রদর্শনের ব্যাবস্থা পোক্তকরন,রাজনীতিতে দুবৃত্তায়নের আমদানী,বোমা অস্ত্রের অবাধ ব্যাবহার,সরকারি প্রসাশন যন্ত্রকে বন্দুক ধরে পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করন থেকে এমন কোন হেন কাজ নেই যাহা করেনি।জনগনের নিকট রাজনীতিকে" ব্যাবসা আর টাউটের আড্ডা "হিসেবে পরিচিত করে যেতে সক্ষম হয়েছেন।অবশ্য দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেজর জিয়ার গগন বিদারী রাজনীতিবীদদের হৃদয় বিদীর্ন করা কালজয়ী উক্তিই ছিল""আমি রাজনীতিবীদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেব"" অন্যসব ওয়াদা পুরন করতে না পারলেও অক্ষরে অক্ষরে এই উক্তির যথাযথ প্রতিফলন রাষ্ট্রীয় সর্বক্ষেত্রে রেখে যেতে পেরেছেন,রাজনীতিতেতো বটেই। সেই দলের নীতি নির্ধারকদের একটা গুরুত্বপুর্ণ সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গতকাল সব পত্রিকায় চাপা হয়েছে, ""বি,এন,পিকে সরকার যদি ডাকে তাহলে সর্বচ্ছো ছাড় দিতে প্রস্তুত"".।(১১/১১/০০১৫ ইংবৃহস্পতিবার) অথছ এই দলকে দেয়ার জন্য জাতির পিতার কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনা প্রধান মন্ত্রীত্বের বড়াই না করে, রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের তোয়াক্কা না করে খালেদা জিয়ার বাড়ী পয্যন্ত গিয়ে গেট থেকে ফিরে এসেছেন।সামান্য সহানুভুতির বাঙ্গালী ঐতিয্য মেহমানদারি করার, অন্তত ভিতরে বসতে দিয়ে এককাপ চা দেয়ার সৌজন্যতা টুকুও দেখাননি।কি অহমিকা,অহংকার তাঁদের গ্রাস করেছিল,কেন এমন রাজনীতি শিষ্টাচার বর্হিভুত আচরন করেছিল বাংলার মানুষ আগে না জানলেও ইদানিং সব কিছু জানে।উত্তর পাঁড়ায় ক্ষমতায় বসিয়ে দিবেন,তাইতো সাজগোজ করে তিন মাসব্যাপি" আগুন সন্ত্রাস "করে দেশব্যাপি অস্থিরতা সৃষ্টি করে,আইনশৃংখলার অবনতির অজুহাত তুলে ধরার কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।শেষাবদি বোমেরাং হয়ে নীজের ঘাড়ে এসে ভর করেছে,সেই বোমার আগুনে পুড়া অর্ধমৃত,মৃত, বিকলাঙ্গ বিভৎস নরকংকাল গুলো। তাইতো রাজনীতি থেকে বিতাড়িত,স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যাওয়ার আগে শেষ আকুতি,সংলাপ ভীক্ষা চেয়ে রাজনীতিতে পুর্নবাসিত হওয়া যায় কিনা। পুর্নবাসনের সার্টিফিকেট পেতে ভীক্ষার ঝুলি নিয়ে সেই জাতির জনকের কন্যার দরবারে বার বার কড়া নাড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আপনাকে করুনা দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু সংসার ফেরৎ দিয়েছিলেন,তার বদলে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে প্রতিদান দিয়েছেন স্ব-পরিবারে হত্যা করে,তাঁর কন্যাকে বাড়ীর দরজা থেকে ফিরিয়ে দিয়ে।এবার করুনা ভিক্ষা করে কি দিবেন জাতির পিতার কন্যাকে?২১শে আগষ্টের মত অন্যকিছু? সুপ্রিয় বন্ধুগন আপনাদের নিশ্চয়ই স্মরনে আছে ২০০৬ইং সালের ১৪ দলীয় জোটের আন্দোলনের কথা।অহমিকা শুধু মানুষ নয় রাজনৈতিক দলের ও যে পতন ডেকে আনে তাঁর প্রকৃষ্ট প্রমান আজকের বি,এন,পি।আন্দোলন যখন তুঙ্গে কোন অবস্থায় তত্বাবধায়কের প্রধান নিয়োগের ব্যাপারে তৎকালীন বিরুদীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করার জন্য সরকারকে রাজী করানো যাচ্ছিল না,যদিও সংবিধানের নীতি অনুযায়ী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ট বিরুদীদলীয় সদস্যদের মনোনীত প্রধান নেতার সাথে সমঝোতা সাপেক্ষে তত্বাবধায়ক প্রধান সহ অন্যান্ন সদস্যদের নিয়োগ দেয়ার বিধান রক্ষিত ছিল,তাঁর তোয়াক্কা না করে দলীয় প্রেসিডেন্টকে তত্বাবধায়কের প্রধান করা হয়েছিল।সেদিনের রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর জোট গঠিত হয়েছিল জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।সেই জোটের নামকরন করা হয়েছিল "মহাজোট"।আকার এবংপ্রকারের দিক থেকে অতীতে তো হয়নি ভবিষ্যতেও আর কখনও গঠিত হবে কিনা জানি না।সেই দলের ঢাকা অবরোধের কর্মসূচিতে যখন সারা দেশ অচল,তখন খালেদা পুত্র তারেক জনগনের স্বতস্ফুর্ত আন্দোলনের সাথে চরম তামাশার এক ঐতিয্য সৃষ্টি করে।তাঁর কথিত হাওয়া ভবনের মাঠে তিনি ক্রিকেটের উৎসবে মেতে উঠেন।এই যেন রোম পুঁড়ছে,নিরু মনের আনন্দে বাঁশি বাজানোর প্রবাদকেও হার মানিয়ে দেয়ার মত জনগনের প্রতি চরম ঔদায্যতাপুর্ন আচরন। সরকার গঠনের আগে পরে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চৌদ্দ দলীয় জোট,নবগঠিত মহাজোটসহ অন্য বিরোধী দল যে প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল, আপোসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার অনুগামীরা এর প্রত্যেকটির বিরোধিতা সহ চরম ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য করেছিলেন।আন্দোলনের মুখে জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য,সব কয়টি দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এভাবে বার বার আপোসহীন নেত্রী বাংলার জনগনের নিকট পরিচিত হতে থাকেন রাজনীতির ভাড়, বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্র সমুহের নিকট হাস্যরসের খেলনার পতুল হিসেবে পরিনত হতে থাকেন।মেজর জিয়ার পারিবারিক জোরপুর্বক দখল করা সম্মান আর ইমেজে জনগণের সামনে তাসের ঘরের মত ব্যাবহারের পর ছোড়ে ফেলে দেয়ার মত অবস্থায় পৌঁছে দেয় মা,ছেলে মিলে।তাদের এতবড় জনসমর্থিত দলকে খেলো দলে রুপান্তরীত করে দিচ্ছিল তা একবারও বিবেচনায় আনতে পারেননি,দলের বুদ্ধিদীপ্ত তুখোড় নেতারাও। ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সবচেয়ে বেশি দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল বিএনপি। অল্প কয়েক দিনেই বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দলটির ইমেজ নামতে নামতে তলানিতে এসে ঠেকেছিল। নেতা-নেত্রীদের ইতিপূর্বের মাঠ কাঁপানো বক্তৃতা তখন চরম মিথ্যাচার ছিল বলে মানুষের কাছে প্রতীয়মান হতে থাকে। দেশটি বার বার দুর্নীতি গ্রস্ততার বিচারে বিশ্বসেরা শীর্ষস্থান হওয়ার কলঙ্ক গায়ে মেখেছিল মা -ছেলের মিলিত লুটপাটের জন্য তা আর কাউকে বলে বোঝাতে হয়নি। বাঘা বাঘা বিএনপি নেতারা সব দুর্নীতির দায়ে একে একে অন্তরীণ হতে থাকেন জেলে। দু’দিন আগেও ধরাকে সরাজ্ঞান করতে অভ্যস্ত বেগম খালেদা জিয়াকে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রায় ‘অনুচর সহচরশূন্য’ বাগাড়ম্বরখ্যাত মন্ত্রী এম,পি বিহীন অবস্থায় পুষ্পার্ঘ অর্পণ করতে দেখে বড় মায়া,করুনা,হৃদয়ের কান্না,ব্যাথায় মথিত হতে হয়েছিল লক্ষকোটি আমজনতার। অথচ এর ক’দিন আগেও নেত্রীর সান্নিধ্যের কাছাকাছি আসার জন্য উন্মত্ত প্রতিযোগিতা ছিল বিএনপির বড়-মাঝারি নেতা-নেত্রী, আমলা আর ব্যবসায়ী,নেতা পাতিনেতাদের। সাম্প্রতিককালে অমন অবস্থার পুনরাবৃত্তি আমাদের জীবদশায়দেখতে হবে কল্পনাও করিনি কোনদিন। ইতিহাসের পরিণতি এতই স্বয়ংক্রিয় যে ঝড়ো হাওয়া নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল ফখরুদ্দীন আহমদের তত্বাবধায়ক সরকার,নিমিষেই বিলীন করে দিয়ে গেল প্রতাপশালী পরিবারের সবকিছু।বেরিয়ে আসতে থাকে জিয়ার ভাঙ্গা স্যুটকেস থেকে কোটি কোটি টাকার সম্পদ,ব্যাংক ব্যালেন্স,কো-কো জাহাজ আর ডান্ডি ডাইং এর মত হালফ্যাসানের ব্যাবিসায়ীক প্রতিষ্ঠান।পরিবারটি এতই নিলর্জ বেহায়া হয়ে যায় সম্পদের লোভে বাংলাদেশের একাধিকবারের ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করেও ইতিহাসের চরমতম নিকৃষ্ট উদাহরন স্থাপন করতেও দ্বিধা করেনি।তত্বাবধায়ক সরকারের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ গ্রহন করে বিপুল পরিমান টাকা রাজস্ব পরিশোধ করে সাদা করে।ইহাও কি সম্ভব?কোথায় পেলেন এত কাল টাকা,জনগনকে আর কেউ প্রচার করে বুঝাতে হয়নি,জনগনের হাতে বিচারের ভার যখন দিলেন তত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ ইং নির্বাচনের মাধ্যমে,মাত্র ২৯ টি আসনে বিজয় অর্জন করে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পথে ধাবমান হওয়া শুরু করে। শেষ খবর পাওয়া পয্যন্ত বাড়ী ভাড়া নেয়ার জন্য লন্ডনে খোঁজ খবর শুরু করেছেন। এমতবস্থায় মা,ছেলে যখন বুঝতে পেরেছে ভোটের মাধ্যমে খমতা আর ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই,বড় জোর সৎ ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দিয়ে দ্বিগুন যদিও করা যায় তাহলেও ষাট হতে দুই বাকী থাকবে।এরই মধ্যে এতিমের হকের টাকা সাপ হয়ে সারা জীবনের জন্য বিষক্রিয়া চড়িয়ে খমতার বৃত্ত থেকে ১৪ শীকের ভেড়াজালে সারাজীবন পঁচেগলে নি:শেষ হওয়ার ব্যাবস্থা পাকাপাকি হয়ে যাবে,কারন তিনিতো জানেন এতিমের টাকা কিভাবে আত্মসাৎ করে ভোগবিলাসে খরছ করেছেন এবং লুটের টাকায় লন্ডনে আরাম আয়েশে জীবন কাটাচ্ছে ছেলে,পরিকল্পনা তাঁর নীজেরও। সুতারাং অতীত ঐতিয্যের পথে বাঁচার চেষ্টা করা ছাড়া উপায় নেই। তাই জড়ো করলেন আবার বাবা -স্বামী জিয়ার ক্ষমতা গ্রহনের সুত্র মত সব শ্রনীর জঙ্গী,বোমাবাজ,ডানবাম,নাস্তিক, মাওলানা,মৌলভী।সব চেষ্টা বাংলার জনগন রুখে দেয়ার পর আবার ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে জাতির জনকের কন্যার নিকট উপস্থিত হতে দেখে কলম হাতে বসতে বাধ্য হলাম। জাতির জনকের পরিবার সকল সম্পদ,স্ব-পরিবারের রক্ত ঢেলে দিয়ে মাথা গোজার ঠাঁইয়ের জন্য রাষ্ট্র থেকে একটা বাড়ী চেয়ে নিয়েছিলেন।অহংকারী অথর্ব,বাংলার মীরজাফরের পরিবার খমতায় এসে সেই বাড়ী থেকেও বের কিরে দিয়েছিল।অথছ জাতির জনকের মৃত্যুরপর এক রিকাশাওয়ালা দুই বোনের থাকার জন্য নীজের সঞ্চিত টাকায় একখন্ড জায়গা কিনে রেখেছিলেন অনেক আগেই।কেউ জানতোনা। পারিবারিক ঝগড়ার একপয্যায় সাংবাদিক সেই ঘটনা আবিস্কার করে।নেত্রী ঐ বাড়ী ভালবাসার নিদর্শনের প্রতিদানে সেই পরিবারকেই ঘর তোলে মাথা গোঁজার ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন। রাজনীতির ভাগ্যের অমোঘবিধানে আজকে জাতির জনকের কন্যাদ্বয়ের মাথাগোজার ঠাঁই সারা বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু পাগল কোটি জনতার ঘরে,আর যারা বের করেছিল রাষ্ট্রীয় বাড়ী গাড়ী দখল করেছিল,সম্পদ লুট করে রাতারাতি চেড়াগেঞ্জী,ভাঙ্গাস্যুটকেস ভরে তুলেছিলেন ভোগের আশায়,। তাঁরাই একে একে দেশান্তরী হয়ে নতুন নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠছেন। @না!!! @ ভাবার কোন কারন নেই, রাষ্ট্র তাঁদের যেতে বাধ্য করেনি,আত্মহমিকাই তাঁদের নিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বিদেশ বিভুঁইয়ে।মৃত্যুর কোলে সঁপে দিচ্ছেন অজানা অচেনা জনপথে।ইহাই মনে হয় বিধাতার শাস্তি,ইহাই মনে হয় পবিত্র কোরানে আল্লাহ ঘোষিত পৃথিবীর দোজগ,উদাহরন হয়ে থাকার জন্য আল্লাহপাক মাঝে মাঝে দেখান।

নব্য জঙ্গীদের আই,এসের নামে নতুন ৩৪জনের নামের তালিকা প্রেরন,মৃত্যু পরওয়ানা জারী,প্রসাশন নির্বিকার

ছবি

জিয়া পরিবারের রোষানলের আগুনে দগ্ধ বেগম জিয়ার রাজনীতির যবনিকাপাত-- ================================= এই প্রথম বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন বড় দল থেকে উপদল বা মুল দলকে বিভক্ত করে নতুন দল সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।গনতান্ত্রিক রাজনীতিতে দল পরিবর্তন করে অন্য দলে যোগ দেয়া বা নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটানো অপরাধের পয্যায়ে পড়েনা, যদিনা আদর্শিক বিভেদ, দর্শন গত অমিল, কর্মসুচির দ্বিমত ইত্যাদির কারনে হয়ে থাকে।অতীতে স্বৈরাচারী সরকার সমুহ রাষ্ট্রের শক্তি ডি,জি,এফ,আই কে ব্যাবহার করে লোভী নেতাদের লোভের মুলা ঝুলিয়ে,আদর্শিক নেতাদের বল্প্রয়োগ করে নতুন দলের জম্ম দিতে দেখা গেছে।কোন কোন সময়ে হার না মানা নেতাদের হত্যা করে প্রতিশোধ নিতেও দেখা গেছে।যেমনটি ৭৫এর ৩রা নভেম্বর জেল খানার অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে মোস্তাক সরকার ভবিষ্যতের সম্ভাব্য কাঁটা পরিষ্কার করে খমতা পাকাপোক্ত করতে গিয়ে মাত্র তিন দিনের মাথায় খমতা ত্যাগ করে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছে।যাক সেই কথা,আজকে আমার বিষয় তাই নয়,আলোচনা করতে চেয়েছিলাম দল ভাঙ্গা নিয়ে সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকি। দৃশ্যমান না হলেও পর্দার আড়ালে দল ভাঙার রাজনীতি অনেকটা জোরেশোরেই সক্রিয় হচ্ছে। বলা যায়, সাজঘরের প্রস্তুতি শেষের দিকে। লক্ষ্য নতুন বছরের জানুয়ারি মাস। প্রস্তুতি সফল হলে সময়টা রাজপথের প্রধান বিরোদী দল বিএনপির জন্য আরও কঠিন হবে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। এই যখন অবস্থা, তখন এক সময়ে যারা কথিত কিংস পার্টির স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, সহসা খমতা পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকে নতুন ভাবে স্বপ্নে বিভোর হতে শুরু করেছেন। তবে রাজনীতি নিয়ে এমন ঘাত-প্রতিঘাতের অংকের পরিণতি অতীতে ভাল হয়নি এমনটি যারা বলে আসতেন তাঁরাও এবং অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে, এবারের বিষয়টিকে একটু গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তারা বলছেন, যদিও দল ভাঙার অপরাজনীতি করে অতীতে কেউই সফল হয়নি, তারপরও এবারের দল ভাঙ্গার প্রেক্ষাপট ভিন্ন রকম। এবার যারা দল ভেঙ্গে নতুন দল গড়বেন তাঁরা বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাস,বোমা বাজি,জঙ্গী পৃষ্টপোষকতা,প্রধান নেত্রীর রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা,প্রধান মন্ত্রীর পদে থাকাকালীন পারিবারিক লুটপাট,তারেকের অতিরীক্ত বাড়াবাড়ি,যোগউপযোগি কর্মসুচি প্রনয়নে ব্যর্থতা,দলীয় কর্মকান্ডে পারিবারিকিকরন,খালেদা জিয়ার পরিবারকে দুর্নীতির দায় থেকে রক্ষা করার জন্য বি,এন,পি,দলকে ন্যাক্কারজনক ভাবে ব্যাবহার,জামায়াতের উপর নির্ভরশীলতা,গনতান্ত্রিক আন্দোলনে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে বিদেশে উপহাসের পাত্রে পরিনত করা দলকে ইত্যাদি নানাহ অভিযোগের পাহাড়ের উপর ভর করে দল দ্বিখন্ডিত করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছেন বলে অভিজ্ঞমহল দ্বিধাহীন ভাবে উপলব্দি করছেন। অতীতে দল ভাঙ্গা যদিও নিন্দার কারন হয়ে জনগন থেকে নেতারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেন,এবারের ব্যাপারটা তাঁর ঠিক উলটো হবে মনে করছে অভিজ্ঞরা। কেননা, মাইনাস ফর্মুলা থেকে শুরু করে অতীতে যারা যখন দল ভাঙার খবরের জন্ম দিয়েছেন তারা কেউ জনগন কতৃক ধিক্কার ছাড়া প্রসংশা পাননি,যাহা আশা করে বের হয়েছিলেন নতুন দলের জম্ম দিয়েছিলেন লাভ কিছুই হয়নি।জনগনের কাতারে কেউই দাঁড়াতে পারেননি। এবার সে রকম কিছু মনে করার কোন কারন নেই। যেহেতু জাতীয় স্বার্থে দল ভেঙ্গে নতুন দল গড়ার প্রত্যয়ে এবারের উদ্যোগ।ভাঙ্গার প্রক্রিয়া যদি ঘটে যায় তখন তা শক্ত ভীত পেয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। এক টানা দ্বিতীয় মেয়াদে অনেকটা শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ দল সরকারে রয়েছে।বাংলাদেশের ইতিহাসে গনতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে এইবারেই বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে কোন দল বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে অনেকটা নিশ্চিত ভাবেই রয়েছেন।এমনটি দ্বিতীয় বার ক্ষমতা উপভোগ করতে অতীতে কখনও কোন দলকে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দল এবং জোট শেষ অংকে কি হবে তা নিয়ে হয়তো এখনই কিছু বলা না গেলেও অচিরেই ধারনা পাওয়া যাবে । জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপির বিপরীতে আর একটি বিএনপি অবস্থান নিলে রাজনৈতিক অঙ্গন খানিকটা ঘোলাটে হওয়ার আশংকা রয়েছে। ভোটের হিসেবের মধ্যে বড় একটা উত্থান পতন ঘটবে। পরিস্থিতির কারণে অনেকে নতুন পতাকাতলে সমবেত হবেন,শুনা যায় আওয়ামী লীগের সংষ্কার পন্থি হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার কারনে দলে এবং সরকারে কোনঠাসা নেতারাও নতুন প্রক্রিয়ায় সামিল হচ্ছেন।উল্লেখ্যযে জাতীয়তা বাদী দল ও তাঁর জোট শরিক থেকে যারা বেরিয়ে আসছেন তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে বি,এন,পিতে পরিচিত ছিলেন বলে জানা যায়।সে কারনে নাকি আওয়ামী লীগের বঞ্চিত নেতারা শামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করি না। কিন্তু অনৈতিকতার পরিণতি ভয়াবহ। আমি আশা করি, সবারই শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপিকে কেউ কোনোদিন ভাঙতে পারবে না। এমন চেষ্টা অতীতেও সফল হয়নি। তবে তিনি মনে করেন, এখন আবার নতুন করে যারা চেষ্টা করছেন তাদের পেছনে প্রভাবশালী কোনো না কোনো পক্ষের হাত থাকতে পারে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা ভাঙা-গড়ার রাজনীতি করি না। যদি কেউ বিএনপি থেকে বেরিয়ে যায় তার জন্য তো সরকার দায়ী নয়।’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধান মন্ত্রী আগেভাগে সাংবাদিক সম্মেলনে বলে দিয়েছেন কোন রাজনৈতিক দলের নেতাদের আওয়ামী লীগে ঠাঁই হবেনা।তাঁর এই কথাটি সর্বমহলে প্রসংশিত হয়েছে।অভিজ্ঞরা মনে করেন বি,এন,পি জামায়াতের বেশ কিছু নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে জোর তদ্বির চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এই ঘোষনাটি দেন।এতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর শক্তিশালী বিরুদী দল থাকা গনতন্ত্রের অপরিহায্য শর্তের প্রতি তাঁর অঙ্গিকারের বাস্তব পদক্ষেপ বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করে গুপ্তহত্যা বেড়ে যাওয়ায় দল ভাঙার গোপন প্রক্রিয়ার পালে জোরেশোরে হাওয়া লেগেছে। একদিকে এসব ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি এ উদ্বেগ থেকেই রাজনীতির অন্দর মহলে শুরু হয়েছে নানা তৎপরতা। দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডের পর থেকে রাজনীতির পটভূমি তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলাটে করতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,ধারনাটি স্পষ্টতা পায়। একইসঙ্গে এ ধরনের স্পর্শকাতর হত্যাকাণ্ডে বিএনপির যোগসূত্রতার খবর প্রকাশিত হওয়ায় দলের নেতারা যারপরনাই নার্ভাসনেস অনুভব করা শুরু করেছেন। এমনিতে অবরোধে মানুষ পুড়িয়ে মেরে কঠিন বিপর্যয়ের মধ্যে আছে দলটি।গুপ্ত হত্যায় শামিল হয়ে আরও বেকায়দায় পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সরকার বাধ্য হয়ে অনিচ্ছা সত্বেও কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ার মতো বিএনপিকে গুপ্ত হত্যার ঘটনায় কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাস্তবিক অর্থে এমন দুঃসময়ে দল ভেঙে যাওয়ার খবরে বিএনপির জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে বিপাকের শেষ সীমায় পৌছাবে দলটির নেত্রীর পরিবার এবং দলটিকে। এ মুহূর্তে সরকারের রাজনীতির কৌশলগত দিক হচ্ছে বিএনপিকে শক্তিহীন করে রাখা,কোন অবস্থায় নীজের ঘাড়ে দোষ নিয়ে নহে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সেই দিকেই হাঁটছেন মনে হচ্ছে।নয়তো দলে নতুন কোন লোক যোগদানে কঠোর নিষেদাজ্ঞা দেয়ার কারনই বা কি?জামায়াতের মত কট্রর আওয়ামী বিরুদীদের দলে নিতে পেরেছেন- বি,এন পির মুক্তিযোদ্ধা অংশকে নিতে আপত্তি কোথায়? সরকার এই মহুর্তে ইচ্ছে করলে দলের ভাঙ্গনকে ত্ব্ররান্বিত করে দিতে পারতেন।তাঁদের অজস্র নেতার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে দায়েরকৃত পুরনো মামলাগুলো কাজে লাগানোর পাশাপাশি তাদের সব ধরনের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগের ওপর বিধি নিশেদ আরোপ করতে পারতেন,যেহেতু গুপ্ত হত্যায় জড়িত থাকার বহু প্রমান ইতিমধ্যে সরকারের হাতে এসে পৌছে গেছে। ২০ দলীয় জোটে বিভক্তি বা দলটির মধ্যকার দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে, তাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টিতে সক্রিয় উদ্যোগও নিতে পারতেন। সরকার আপাত সেই দিকে নজর না দিয়ে স্বাভাবিক ভাঙ্গনকে উৎসাহিত করার চিন্তায় মগ্ন।প্রধান মন্ত্রী কাউকে দলে নিবেননা, ঘোষনাটি বি,এন,পি ভাঙ্গনের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়েই দিয়েছেন বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।দল ভাঙ্গনের কালচারে সামিল না হওয়ায় এবং নাম সর্বস্ব নেতাদের দলে না ভিড়ানোর ঘোষনায় প্রধান মন্ত্রী সর্বমহলের প্রসংশায় প্রসংশিত হচ্ছেন। এদিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের দণ্ড কায্যকরের দিনক্ষন এগিয়ে আসছে। ঘাতকদের অনুসারীরা বেপরোয়া হয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরিতে গুপ্তহত্যা এবং বোমা বিস্ফোরণ, নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সরাসরি এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে সরকারের নীতিনির্ধারকরা নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা করছেন। এ আলোচনায় বিএনপি ও জামায়াতের অতীতের নাশকতার মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকার মনে করে পুরাতন মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের কৌশলে গুপ্ত হত্যার পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব হবে। সরকার মনে করে বাস্তবতার আলোকে ২০ দলীয় জোটের পরিধি রাজনৈতিক কারনেই সংকুচিত হতে বাধ্য।তাছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের ভেতরের নেতৃত্ব পয্যায়ে মানবতা বিরুধি অপরাধের বিচারের রায়ের পর হরতাল দেয়া বা সমর্থন করা নিয়ে যে দ্বন্দ্ব আছে সেই দ্বন্ধেই জোট সংকোচিত হবে,শুধু সময়ের ব্যাপার।সুতারাং দলে জায়গা দিয়ে বা প্রেসার সৃষ্টি করে জোট ভেঙ্গে স্বৈরাচারী সরকার সমুহের পথ অনুসরন করার কোন প্রয়োজন আছে বলে আওয়ামী লীগ বা দলের নেত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন না। অবশ্য এর আগেই ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে এসেছেন বিএনপির পুরনো মিত্র শেখ শওকত হোসেন নিলু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা,বিভিন্ন সভা সমাবেশে প্রধান মন্ত্রীর প্রসংশা করে বক্তৃতা বিবৃতিও দিচ্ছেন প্রায়ই। কিন্তু প্রধান মন্ত্রী তেমন কোন উৎসাহ এ পয্যন্ত দেখিয়েছেন তেমন প্রমান পাওয়া যায় না তাঁর ব্যাপারে। অপরদিকে সাবেক এমপি শহিদুল হক জামাল ও আবু হেনা নতুন বিএনপি গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক আগে থেকেই। বিএনপির সাবেক এ দুই নেতা দলটির সংস্কারপন্থী নেতাদের সংগঠিত করার পাশাপাশি বর্তমানের মুক্তিযোদ্ধা অংশকেও সংগঠিত করে বড় আকারে রাজনৈতিক দল গঠনে জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। জানা গেছে, বিএনপির সাবেক এই দুই নেতা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন,প্রধান মন্ত্রী সরাসরি তাঁদের না করে দিয়েছেন।ঘটনাটি প্রায় ৭/৮ মাস আগেই ঘটেছিল।সেই দুই নেতাই আরো শক্তি সঞ্চয় করে দলে এবং জোটে ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় সম্মুখে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। আবুহেনা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে এবং কি জনসভায় ও বলেন,দলের বহু নেতাকর্মী নেত্রীর হঠকারী কর্মসুচি এবং পরিবার রক্ষার আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে জেলে রয়েছেন। তাঁরা প্রথম দিকে না বুঝেই খালেদা জিয়ার হঠকারি কর্মসুচিতে শামিল হয়েছিল।তাদের মুক্ত করতে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে,নিয়মতান্ত্রিক ভাবে,গনতন্ত্রের সজ্ঞা অনুযায়ী আন্দোলন করতে হবে। তিনি জানান, সবাইকে নিয়ে জানুয়ারির মধ্যে বড় আকারের কনভেনশন করে সেখানে নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে।অভিজ্ঞমহলের ধারনা বিকল্প ধারার বর্তমান নীরবতায় প্রমান করে তাঁরাও নতুন দলেই শামিল হবেন। বিকল্প ধারার মাহী বি. চৌধুরী সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায়,এবং কর্নেল অলির লন্ডনে খালেদার সাথে বৈঠক করার কারনে বি,এন,পিতে শামিল না হয়ে নতুন বি,এন,পিতে শামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনেকেই মনে করেন। যদিও বি. চৌধুরীর বি,এন,পি বা খালেদার প্রতি দুর্বলতা এখন ও রয়ে গেছে এবং বি,এন, পিতে ফিরে যাওয়ার পক্ষে। ছেলে মাহী ভবিষ্যত বি,এন,পি রাজনীতির অসারতার কথা চিন্তা করে নতুন বি,এন,পিতে যোগদান অথবা জোট গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর বাইরে ২০ দলীয় জোটের ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন বি,এন,পির যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। দেশের বুদ্ধিজীবি ও সুশীল সমাজের একটা অংশের পক্ষ থেকে তাদের ভুল রাজনীতি থেকে সরে আসার জন্য অনুপ্রানিত করা হচ্ছে। লন্ডনে অবস্থানরত জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের অস্বাভাবিক নীরবতার পেছনেও ঠিক একই রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে খোদ দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ভাই আহমেদ কামাল নতুন বি,এন,পির সাথে থাকবেন এবং গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করবেন বলে জানা গেছে।খালেদা জিয়া দলের নেত্রী হওয়া অবদি জিয়া পরিবারের সাথে তেমন একটা ভাল সম্পর্ক রাখেননি তা আগেই পত্রপত্রিকায় জানাজানি ছিল। জিয়ার মৃত্যুর পর ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী না চলাকে তাঁর শশুরবাড়ীর মানুষ ভাল চোখে দেখেননি কখনও। স্বামীর মৃত্যুর পরে একদিনের জন্যও শশুর বাড়ী যাননি বলেও অভিযোগ করেন জিয়ার পরিবার।স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শশুর বাড়ী বেড়াতে গেলে বাড়ীর লোকেরা এবং প্রতিবেশীরা বিরুপ মন্তব্য করায় খালেদা শশুর বাড়ীর পথ মাড়াননি বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। আজকে ইহাই কাঁটা হয়ে জিয়ার আদর্শের উপর বড় ভাগ বসাতে উদ্যোগি হয়েছেন বলে বিশ্লেষকদের ধারনা। জিয়ার ভাই নতুন বি,এন,পি দল আত্মপ্রকাশের প্রাথমিক সব কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত করে রেখেছেন। তারেক লন্ডন থেকে কাকাকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও জানা গেছে।খালেদা পন্থি বি,এন,পি নেতাদের মাথাব্যাথার বড় কারনই হচ্ছেন জিয়ার ভাই,সে যদি মাঠে নেমে আদিবৃত্তান্ত প্রকাশ শুরু করে, তবে খালেদার বাকী ইমেজ ও নষ্ট হতে সময় লাগবেনা বলে তাঁদের বদ্ধমুল ধারনা।বিষয়টি খোদ খালেদাকেও ভাবিয়ে তুলছে বলে জানা গেছে।এ ছাড়া আহমেদ কামালের মিলাদ মাহফিলকে তিনি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলে মন্তব্য করলেও রাজনীতিতে অভিজ্ঞমহল মনে করেন, ফুল ফোটার আগে ছিড়ে ফেলার আশংকা থেকেই তিনি কথাটা বলতে পারেন। রাজনীতিতে তিনি কেবল অনভিজ্ঞ নন।জিয়ার মতই আহমেদ কামাল সূযোগ সন্ধানী আগে থেকেই।বেগম জিয়ার এমন সংকটময় অবস্থার জন্য তিনি এতদিন অপেক্ষায় ছিলেন।অবশ্য জিয়ার হঠাৎ মৃত্যুর পরও ভিতরে ভিতরে চেষ্টা করেছিলেন, ভাইয়ের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিতে উত্থিত হওয়ার।সেই চেষ্টা কয়েক সিনিয়র নেতার কারনে প্রাথমিক পয্যায় বাধাগ্রস্থ হওয়ায় শেষাবদি চুপসে যান।শমসের মবিন চৌধুরীর সরে যাওয়ার বিষয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, তিনি অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়েছেন।অভিজ্ঞ গন এই কথাটিতে আস্থা না রেখে বলেন, বর্তমানের গুপ্ত হত্যায় জড়িয়ে পড়ায় বি,এন,পি দেশে বিদেশে সমালোচনার ঢেউ উঠার আগেই তিনি সরে গেছেন। আন্তজাতিক কানেকশান সম্পর্কে শমসের মবিন অনেক কিছুই জানেন।তিনি বেগম জিয়ার ঘনিষ্টজনদের মধ্যে অন্যতম একজন।স্বাভাবিক ভাবেই তিনি জানেন খালেদার বর্তমান কানেকশান কোথায় কোথায় আছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং জঙ্গি লালন করেছে। ক্ষমতার বাইরে গিয়েও তারা একই কাজ করছে। জঙ্গিদের লালন-পালন এবং আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে, রাজনীতির নামে পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। এতে তারা যেমন জনগণের কাছে অজনপ্রিয় হয়েছে, তেমনি নিজ দলের নেতাকর্মীদের আস্থাও হারিয়েছে। এরকম অবস্থায় দলটিতে ফাটল ধরার যথেষ্ট কারণ তৈরি হয়েছে। পরিশেষে বলা যায়,জিয়া পরিবারের রোষানলের আগুনে দগ্ধ বেগম জিয়া রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিতাড়িত হয়ে স্বেচ্ছায় স্ব-পরিবারে নির্বাসনের পথ বেচে নিতে পারেন।এবারের লন্ডন যাত্রা বেগম জিয়ার রাজনীতির সমাপনি বিদেশ সফর হলে আশ্চায্য হওয়ার কিছুই থাকবেনা।

ছবি
ছবি

ড. কামাল হোসেনের চোখে পানি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম. =================================== (সংগৃহিত) ৫০ বছরের কম হবে না, দেশের সেরা আইনবিদ ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জানাশোনা, ওঠাবসা। তবে প্রথম কখন, কোথায় দেখেছিলাম দিনক্ষণ ঠিক করে বলতে পারব না। তিনিও আমায় কখন, কোথায় দেখেন জানার চেষ্টা করিনি। ১৬-১৭ জানুয়ারি, ’৭২ থেকে জানাজানি, ওঠাবসা চলছে। খুব সম্ভবত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ, তিনি তখন মন্ত্রী। দেশের খাদ্য ঘাটতি নিয়ে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে লেখা বঙ্গবন্ধুর ছোট্ট একটি চিঠি নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলাম। সেই বিমানে ড. কামাল হোসেনও ছিলেন। তিনি একটু আগে, আমি পেছনে, কোনো কথা হয়নি। শিখ নেতা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং তাকে বিমানের সিঁড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমাকে নিয়ে যান বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির এক প্রথম সচিব। উঠেছিলাম লোদি হোটেলে। তিন বেডের রুমের ভাড়া ছিল ১২০ টাকা। আমরা তিনজন পাসপোর্টে ৬০০ ডলার নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন ডলারের দাম ছিল ৬.৫০ টাকা। তাই লোদি হোটেলের ভাড়াটা খুব বেশি মনে হয়েছিল। পরদিন সকালে আমাদের প্রথম রাষ্ট্রদূত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় ভাইস চ্যান্সেলর এ আর মল্লিক হোটেলে ছুটে আসেন। আমি তার কাছে তখন ছোট্ট শিশু। তিনি যখন সন্তানের মতো আমায় ঝাপটে ধরেন তখন আমি পিতার আলিঙ্গনের স্বাদ পাই। তিনি তখনই তার ৯ নম্বর বসন্ত বিহারের বাড়িতে নিতে চেয়েছিলেন। বার বার তার স্ত্রীর কথা বলে বলছিলেন, তোমার আম্মা তোমার জন্য অপেক্ষায় আছে। আর এখানে তোমার থাকা হবে না। ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট তোমাকে তাদের অতিথি ভবনে রাখতে চায়। তুমি রাজি হলেই হলো। রাজি হয়েছিলাম। না হয়ে উপায়ও ছিল না। কারণ সবকিছু উপেক্ষা করা গেলেও মানুষের আন্তরিকতা উপেক্ষা করা যায় না। পরদিন ভারতের মহীয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা। আমি তো তখনো ছোট। মুক্তিযুদ্ধের অবদান মহিমা তার কিছুই আমায় স্পর্শ করেনি। ইন্দিরাজির ১ নম্বর ছফদর জং-এর বাড়ির বারান্দায় আমাকে গ্রহণ এবং কথাবার্তা শেষে বিদায় দিয়েছিলেন। সে সব এখন ভাবা যায় না। ভাবলেই কেমন লাগে। তখন লোকসভার বৈঠক চলছিল। জীবনে প্রথম লোকসভায় গিয়েছিলাম। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী, নাম মনে নেই ইন্দিরাজিকে বঙ্গবন্ধুর খাদ্য সমস্যা নিয়ে লেখা চিঠি প্রসঙ্গে সংসদকে জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তার দেশের খাদ্য সংকটের কথা জানিয়েছেন। আমি সংসদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করতে চাই, ক’দিন আগে বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে আমরা সহযোহিতা করেছি, রক্ত দিয়েছি, বাংলাদেশে আমাদের ভাইয়েরা যদি একবেলা না খেয়ে থাকে আমরাও থাকব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য যত খাদ্যের প্রয়োজন আপনি পাঠান।’ হাউসে দর্শকের গ্যালারিতে বসে আমার চেয়েও উঁচু মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্যে আমার হৃদয়ে নাড়া দিয়েছিল। তখন ভারতও ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ, তারপরও যে আবেগ তিনি ব্যক্ত করেছিলেন আমরা অনেক দিন তার মূল্য দিতে পারিনি। এখন কি পারছি? না, এখনো না। কোনো নতজানু নীতি কৃতজ্ঞতা হতে পারে না, বন্ধুত্বের প্রতিদান নয়। যাক, ওসব নিয়ে পাঠকদের সামনে আরেক দিন হাজির হব। আজ ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে এগোতে চাই। তাও পূর্ণ নয়, একটি খণ্ডচিত্র তুলে ধরতে মন আকুলি বিকুলি করছে। ড. কামাল হোসেন মস্তবড় মানুষ, আমাদের অহংকার, দেশের গৌরবের প্রতীক, বাঙালি জাতির মালার লকেট। তাকে হয়তো কিছুই দিতে পারিনি, তিনিই দিয়েছেন। মানুষ অসুস্থ হলে যেমন ডাক্তারের কাছে যায়, তেমনি আইনের প্রয়োজনে শতবার তার কাছে গেছি কখনো বিমুখ করেননি। এখন তার বয়স হয়েছে, আমারও হয়েছে। ঘন ঘন যাতায়াত না থাকলেও তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধার কোনো ঘাটতি নেই। সমস্যা, তিনি খুবই উচ্চ শিক্ষিত, ধ্যানে-জ্ঞানে জগদ্বিখ্যাত। আমি তার সম্পূর্ণ বিপরীত। সে জন্য মনের মিল থাকলেও প্রকাশ্যে অবশ্যই অমিল আছে। আমি ভালো মনে করে যা বলি, তিনি অনেক সময় তাকেই খারাপ মনে করেন। এ ছাড়া একজন মানুষ হিসেবে তার প্রতি যে আমার অপরিসীম সম্মান বোধ রয়েছে, আমার প্রতি তার অপার স্নেহ ভালোবাসা- এসব জানাজানির কোনো অভাব নেই। তাই সেদিনের ছোট্ট একটি ঘটনা তুলে ধরছি। পাঠক জানেন, টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতীর উপনির্বাচনে আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থা (প্রা.) লি. নামে আমাদের ছোট্ট একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ছিল, যা প্রায় ১০ বছর কোনো কাজ করতে পারে না। কারণ স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধারা সবসময় হয় বঞ্চিত। ১২-১৩ বছরে অগ্রণী ব্যাংক থেকে আমরা ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সেই সময় ব্যাংকের হিসাব মতো ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা সুদ ও অন্যান্য চার্জ দিয়েছি। এরপরও এক সময় ব্যাংক সুদ-আসল ধরে হিসাব করে দেখেছে তাদের পাওনা ৩ কোটি ১৯ লাখ। আগস্ট মাস আমার জন্য বেদনার মাস। সেই মাসেই ঋণটি ফয়সালা করার জন্য আবেদন করেছিলাম। আমরা প্রায় ৫ বছর যাবৎ সমুদয় সুদ মওকুফ করে এককালীন সমন্বয়ের আবেদন জানিয়েছি। কতজনের কত ঋণের সমুদয় সুদ মওকুফ করেছি, সরকারের সঙ্গে বনিবনার অভাবে আমাদেরটা হচ্ছে না। সর্বশেষ চিঠির প্রেক্ষিতে তারা এক লম্বা ফিরিস্তি দিয়ে ৮ কোটি ৪ লাখ টাকা মওকুফ দেখিয়ে ১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ১০% সুদে ১০ বছরে পরিশোধের জন্য সুবিধা দিয়েছিল। সেই হিসাবে অগ্রণী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়। চিঠি পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সিআইবি ডাটাবেজ থেকে সোনার বাংলার নাম প্রত্যাহার করে নেয়। যে ব্রাঞ্চ ঋণ দিয়েছিল, সে ব্রাঞ্চ ঋণটি পুনঃতফসিলের মাধ্যমে বিশ্রেণিকরণসহ ১০% সুদে ১০ বছরে শোধের সুবিধার কথা ধন্যবাদের সঙ্গে জানিয়ে দেয়। হায়রে সুবিধা! অর্থ আইনে আছে, কোনোমতেই কোনো ব্যাংক আসলের ওপর দ্বিগুণের বেশি সুদ নিতে পারবে না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা বলে আমাদের ওপর ৬-৭ গুণ। কী আজব কাণ্ড! কারও যদি ফাঁসি হয় সেও ভালো। কিন্তু এখন দেখছি ১০ বছর আমরা আর কোথাও থেকে ঋণ সুবিধা পাব না। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িতরা ১০ বছর কোনো নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না- এর চেয়ে ফাঁসি কি ভালো নয়? এর মাঝে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জির স্ত্রীর শ্রাদ্ধে যোগ দিতে দিল্লি গিয়েছিলাম। সেখানে থাকতেই বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী সংসদে এক আবেগময়ী ভাষণ দিয়ে পদত্যাগ করেন। তারও সপ্তাহখানিক পর দেশে ফিরে মাটিতে পা রাখতে না রাখতেই কালিহাতীর উপনির্বাচন নিয়ে হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হই। পরে বলব বলে বলে একেবারে নাস্তানাবুদ হয়ে যাই। তারপর বাবা-মার কবর জিয়ারতে গিয়ে আরও চাপে পড়ি। রাজনৈতিক দল হিসেবে যে কোনো উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পরপরই নেওয়া হয়েছিল। তাই বলেছিলাম, আমাদের দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এই নির্বাচনে অংশ নেবে। শুরু হয় ১৪ দল থেকে মনোনয়ন নেওয়ার এক মহা পাঁয়তারা। আমাকে লোকেরা যতই সংগ্রামী ভাবুন, তেমন প্যাঁচপুচ বুঝি না। ১৪-দলীয় জোটের সরকার, তাদের হয়ে নির্বাচন করতে গেলে ভোট হবে কী করে? কোনো প্রার্থী না থাকলে জনগণ ভোট দেবে কাকে? আমার উদ্দেশ্য এমপি হওয়া ছিল না, এখনো নেই। আমার উদ্দেশ্য সরকারি প্রভাবমুক্ত নির্ভেজাল নির্বাচন। তাই আশপাশের কোনো প্রস্তাবে রাজি হতে পারিনি। বোকার মতো মুক্তিযুদ্ধ করেছি, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছি, যখন প্রয়োজন ছিল তখন আলাদা দল গঠন না করে আওয়ামী লীগ এবং বোনের জন্য জীবনপাত করেছি, তারপরও জনগণের এমন বঞ্চনা দেখে বিশেষ করে মূল্যহীন ভোটারদের দেখে নিজের কথা ভাবতে পারিনি। তাই সখিপুর-বাসাইলের মানুষের বহু পরিশ্রমে অপরিসীম অÍত্যাগে ’৯৯ সালে যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জন্ম, সেই দলের প্রতীক গামছা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষের প্রতারণা বা তঞ্চকতা কোনো কোনো সময় না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কোনো অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি প্রতারকের মতো করলে ছোট হয়ে আসা পৃথিবীর অর্থনীতি চলবে কী করে? মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দিন দেখা গেল সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থা (প্রা.) লি.কে ঋণ খেলাপি দেখিয়ে আমার মনোনয়নপত্র বাতিলের পাঁয়তারা চলছে। রিটার্নিং অফিসারের কাছে ১২ অক্টোবর ব্যাংক এক ধারণাগত ভুল বলে চিঠি দিয়েছে। অন্যদিকে ওই ১২ অক্টোবরই বাংলাদেশ ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংকের ১১ অক্টোবরের চিঠির কারণে সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থার নাম পুনরায় খেলাপি হিসেবে ডাটাবেজে তুলেছে। কী তাজ্জব ব্যাপার! যে কোনো নিয়মিত ঋণী প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মিত দেখাতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগে। অথচ আগের দিনও যে নিয়মিত ছিল, সেই প্রতিষ্ঠানকে এক দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি দেখিয়ে দিল- এর বিচার আল্লাহ ছাড়া এ দেশে কার কাছে দেব? অথচ সেই তখনই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এশিয়ায় ব্যাংকের শ্রেষ্ঠ গভর্নরের খেতাব পেলেন। আর আমাদের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রতি এমন জালিয়াতি করা হলো। যাকেই জিজ্ঞেস করলাম, তারা সবাই বলার চেষ্টা করলেন এসবই নাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করেছেন। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, বিশ্বাস করতে পারলাম না। হাইকোর্টে রিটের পর সরকার আপিল করবে এটাও নাকি অ্যাটর্নি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় বলেছেন এবং পরে নির্বাচন কমিশন দিয়ে আপিল করিয়ে নির্বাচন ঠেকিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ খুবই ছোট, এখন আর কথাবার্তা তেমন চাপা থাকে না। অ্যাটর্নিই হয়তো তার কদর বাড়াতে একে ওকে অমন বলেন। তাদের কেউ কেউ সে কথা আমাকে জানিয়ে খুশি হতে চেষ্টা করেন। নির্বাচনী বিধি-বিধানে উল্লেখ আছে, ‘মনোনয়নপত্র দাখিলের ৭ দিন আগে প্রার্থীকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দায় মুক্ত থাকতে হবে। তেমনি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ওই ৭ দিনের মধ্যে নতুন কোনো দায় সৃষ্টি করতে পারবে না।’ কিন্তু তারা তাই করেছে। খুব সম্ভবত রিটার্নিং অফিসার চাবি মারা থাকায় কর্তার ইচ্ছায় কর্ম করেছে। নির্বাচন কমিশনও তথৈবচ। এসব নিয়ে একজন দায়িত্বশীল, চরিত্রবান, শক্ত মেরুদণ্ডের আইনজ্ঞ যখন খুঁজছিলাম এবং খুঁজতে খুঁজতে প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর কাছে গিয়েছিলাম। তারই এক ফাঁকে মামলাটির একটি খসড়া করতে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অ্যাডভোকেট রমজান আলীর প্রয়োজন হয়। অ্যাডভোকেট রমজান আমাদের বহুদিনের প্রিয়। সারা রাত জেগেও তিনি আমাদের অনেক কাজ করেছেন। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। তিনি যে চেম্বারে আছেন তাও জানতাম না। ১৯ অক্টোবর অ্যাডভোকেট রমজানের সঙ্গে কথা বলতে মতিঝিলে গিয়ে শুনি স্যার বসে আছেন। তার সঙ্গে দেখা হয়, অনেক কথা হয়। তিনি সানন্দে রমজানকে আরজি তৈরি করতে বলেন। আমাদের কথা চলতে থাকে। দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক ও আরও কয়েকজন পাশে বসে কথা শুনছিল। একপর্যায়ে তাদের সবাইকে বাইরে চলে যেতে বলি। তারা চলে গেলে মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে আন্দোলনে এক মেধাবী ছাত্রীর কথা বলতে গিয়ে সংবিধান প্রণেতা, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আইনজীবীদের একজন ড. কামাল হোসেন একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন। তার কান্না আমায় নাড়া দেয়। চোখে পানি না এলেও হৃদয় মন অন্তর পানিতে ভেসে যায়। তিনি বলছিলেন, ‘সারা জীবন আইন নিয়ে চলেছি। সেখানেও আর শুদ্ধতা নেই। ভালো ভালো লোক এসে বলছে, আদান প্রদান হয়। গার্মেন্টে কাজ করে লেখাপড়া করা ছাত্রী মেডিকেলে ভর্তি হতে পারবে না। সামনে এসে কেঁদে ফেলছে, তাকে কী সান্ত্বনা দেই? আপনার যে কাগজপত্র দেখলাম আগের মতো কোর্ট থাকলে ৫ মিনিটের ব্যাপার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের কাছ থেকে সনদ নিতে চায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল। আমরা তখন তরুণ শিক্ষক সুবিতা রঞ্জন পালকে দিয়ে রিট করিয়ে ছিলাম। সেখানে আমরা জয়ী হই। পাকিস্তানের প্রতি আমাদের অত পুঞ্জীভ‚ত ঘৃণা থাকার পরও সুপ্রিমকোর্টে সরকার আপিল করে। সেখানে আমরা জয়ী হলে ছাত্ররা আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে। পাকিস্তানেও যে বিচার ছিল, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল আজ তাও এখানে নেই। তাই যেখানে এক দিন না গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসত সেই কোর্টে আজ ৩ বছর যাই না। আপনিই ভাবুন, এটা কত কষ্টের।’ তার চোখ থেকে যখন টসটস করে পানি পড়ছিল, তখন তারই মতো আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অনেকক্ষণ বসে থেকে নির্বাক বেরিয়ে এসেছিলাম।

বিপ্লবের বাঁশিওয়ালা সিরাজ সিকদার ও তাঁর সর্বহারা পার্টি - আরিফুজ্জামান তুহিন মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইবস থেকে সরাসরি কপি পেষ্ট প্রিয় পাঠকদের জন্য। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তান কায়েম হয়। মুক্তি আসে না। নতুন করে শুরু হয় স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির চরম প্রকাশ ১৯৭১ সাল। এ পর্বে এসে বাংলায় নানা রাজনৈতিক সংগঠন-ব্যক্তিকে দেখা যায়, যার মধ্যে সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা পার্টি এক অনন্য অবস্থান তৈরি করে। এ কারণে এক শ্রেণীর কাছে সর্বহারা পার্টি ও সিরাজ সিকদার একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের নাম, আর অন্য একটি অংশের কাছে সিরাজ সিকদার ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত পার্টি একটি আদর্শের নাম। সিরাজ সিকদার বহু আগে নিহত হয়েছেন, মুজিবের শাসনামলের শেষের দিকে। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের গতিপথে খুব কৌশলে সিরাজ সিকদারকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে আড়াল করা হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাস; কিন্তু বাস্তবতায় আজও তিনি সমান প্রাসঙ্গিক। আগামী ২ জুন সর্বহারা পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ময়দানে জন্ম নেওয়া এই ঐতিহাসিক দলটির জন্মদিন উপলক্ষে সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা পার্টি নিয়ে লিখছেন আরিফুজ্জামান তুহিন ঔপনিবেশিক এলিট জাতীয়তাবাদী প্রভাবিত ইতিহাসবিদদের কাছে নিম্নবর্গের মানুষের চৈতন্য বলে কোনো কিছু ধরা পড়েনি। ফলে এ অঞ্চলে নিম্নবর্গের মানুষের যে লড়াই, তা তারা দেখতে পায়নি। শেষ পর্যন্ত শাসকশ্রেণীর ঝোলনোল খেয়ে বাড়বাড়ন্ত ইতিহাসবিদদের কাছে ইতিহাস রক্ষা না পাওয়ারই কথা_এটা আবার ইতিহাসের শিক্ষা। সিরাজ সিকদার তেমনই একজন নিম্নবর্গের ফিনিঙ্ পাখি। অনেকে তাঁকে সিআইএর চর বলেন, অনেকের মতে তিনি বাংলার চে গুয়েভারা। প্রবীণ বামপন্থীরা, যাঁদের তিনকাল পেরিয়ে এসে ঠেকেছে কালীঘাটে যাওয়ার অপেক্ষায়, তাঁরা তাঁকে নানা রকম 'মার্কসবাদী ডিসকোর্সের' অধীনে ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন, এটা হঠকারী। তার পরও সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা পার্টি এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে অনন্য, কারণ এই বাংলায় যখন সবাই চীন-রাশিয়াকে নকল করে কমিউনিজমের আন্দোলন করছেন, সেখানে সিরাজ সিকদার ভিন্ন এবং বঙ্গীয় রীতিতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের চেষ্টা করেছেন। সমসাময়িক বাঘা কমিউনিস্টদের পুতুল বানিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীনদের অনুষঙ্গ হিসেবে। এ কারণে সাহসের যে নাম লাল তারই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন সিরাজ সিকদার। চারু মজুমদারের পূর্ববঙ্গীয় উত্তরসূরি ষাটের দশক পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের দশক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। এ সময় পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও বিকশিত হতে থাকে জাতীয় মুক্তির প্রশ্ন। পাকিস্তানপর্বে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় কমিউনিস্ট পার্টি মূলত আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) মধ্যে মিশে গিয়ে কাজ করতে থাকে। পাকিস্তান সৃষ্টির কয়েক বছরের মধ্যেই বাঙালিদের স্বপ্নভঙ্গ হতে থাকে। এ পর্যায়ে কমিউনিস্ট পার্টি ও বামপন্থীরা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার নানা প্রক্রিয়া হাতে নেয়। এ সময় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনও জমে ওঠে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নামে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ও তাঁর সঙ্গীদের। মামলার শেষ পর্যায় এসে শেখ মুজিবুর রহমানকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই দশকে ভারতে এযাবৎকালের সব থেকে বড় ধাক্কা আসে সশস্ত্র কৃষক আন্দোলনের মাঝখান থেকে। ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির ফাশিদেওয়া, নকশালবাড়ীতে ঘটে যায় এ সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ। সেই বিদ্রোহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পথ হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ নেয় চারু মজুমদারের নেতৃত্বে একদল কমিউনিস্ট। পরে যাঁরা সিপিআই (এমএল) নামে পার্টি তৈরি করেছিলেন, যা ভারতীয় উপমহাদেশে নকশাল আন্দোলন নামে পরিচিত হয়েছিল। নকশালবাড়ীর সেই প্রবল জোয়ার পূর্ব পাকিস্তানেও আছড়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি আগেই রুশ ও চীন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একটি ধর্মভিত্তিক বৈরী রাজনৈতিক আবহাওয়ায় কমিউনিস্ট হিসেবে রাজনৈতিক চেতনা বিকাশের পথ তখন সহজ ছিল না, খুব কম লোকই সেই পথে এগোতে পেরেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলনে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র সিরাজুল হক সিকদার বা সিরাজ সিকদার। ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের ছাত্র বুয়েটের লিয়াকত হল শাখার সভাপতি সিরাজ সিকদার ইতিমধ্যেই মার্কসবাদের মৌলিক জ্ঞান আয়ত্ত করে ফেলেছেন। এই বয়সেই পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) সদস্যপদ পেয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) চারু মজুমদারের সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের তত্ত্বকে হঠকারী হিসেবে আখ্যায়িত করল। এর প্রতিক্রিয়ায় পার্টি থেকে বেরিয়ে এলেন সিরাজ সিকদার। তিনিসহ অন্য তরুণ কর্মীরা পার্টি থেকে বেরিয়ে গঠন করলেন রেড গার্ড। ঢাকা শহর ভরে উঠল, 'বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস' বা 'নকশালবাড়ী জিন্দাবাদ'-এর মতো দেয়াললিখনে। সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে রেড গার্ড লেনিন যাঁরা ভালো করে পড়েছেন তাঁরা জানেন বিপ্লব করতে হলে বিপ্লবী তত্ত্বের প্রয়োজন পড়ে। তবে তাঁর সঙ্গে প্রয়োজন হয় বিপ্লবের রণকৌশল। লেনিন থেকে শিক্ষা নিয়ে মাও সেতুংয়ের দীর্ঘমেয়াদি সশস্ত্র গণযুদ্ধের তত্ত্বমতে গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও করার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে বিপ্লবী পার্টির সেনাবাহিনী, যে সেনাবাহিনী জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে এ লড়াইকে রাষ্ট্রক্ষমতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ রণকৌশল আঁকড়ে ধরে সিরাজ সিকদার প্রথমে অন্য ভ্রাতৃপ্রতিম কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার অংশ হিসেবে মিয়ানমারে কমিউনিস্ট পার্টির সাক্ষাতের জন্য রওনা হলেন টেকনাফ হয়ে মিয়ানমারে। সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা থান-কিন-থাউর সঙ্গে দেখা করলেন নে-উইনের বিরুদ্ধে তাঁদের সংগ্রামের স্বরূপ জানতে। তবে মিয়ানমারের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা থান-কিন-থাউর সঙ্গে সিরাজ সিকদার দেখা করতে যাননি। তাঁদের চারজনের একটি প্রতিনিধিদল সেখানে পাঠান। সেই প্রতিনিধিদলে ছিলেন ফজলুল হক রানা। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা মিয়ানমারে গিয়েছিলাম মূলত সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির লড়াইয়ের কৌশল সম্পর্কে জানার জন্য। আমাদের তাঁরা ক্যাম্পে রেখে খেতে দিয়েছিলেন। অনেক বিষয় আমাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সে সময়।' ফিরে এসে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ঘাঁটি নির্মাণে লেগে গেলেন। বাকি কমরেডদের নিয়ে লেগে গেলেন পাহাড় কেটে সুরঙ্গ তৈরিতে। বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে ঘোরের মধ্যে থাকা এই বিপ্লবীদের সঙ্গী-সাথির বয়স খুবই কম। তবে মানুষ ছাড়া বিপ্লব কার সঙ্গে করবেন? অবশেষে ক্ষান্ত দিয়ে ফিরে এলেন ঢাকায়। মাও সেতুংয়ের চিন্তাধারা গবেষণা কেন্দ্র থেকে পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে পাকিস্তানের কালপর্বে ঘটে যাওয়া ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতিকাল ১৯৬৭-৬৮ সালে সিরাজ সিকদার গড়ে তোলেন মাও সেতুং থট রিসার্চ সেন্টার বা মাও সেতুংয়ের চিন্তাধারা গবেষণা কেন্দ্র। মাও সেতুং গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয় মালিবাগে। মালিবাগের এ বাসাটি ভাড়া নেন ফজলুল হক রানা। এ সময় পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রসংঘের কর্মীদের আক্রমণের কারণে রিসার্চ সেন্টারটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন সিরাজ সিকদার। তবে সিরাজ সিকদার দমে যাননি। এর পরই ১৯৬৮ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি গড়ে তোলেন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন। এ সময় তিনি তাঁর বিখ্যাত থিসিস দেন, যা পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের থিসিস নামে খ্যাত। ১৯৬৮ সালের ১ ডিসেম্বর পরিবর্ধিত ও পুনর্লিখিত দলিলটি পরবর্তী সময়ে সর্বহারা পার্টি গড়ে ওঠার থিসিস হিসেবে, তাত্তি্বক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের থিসিসে সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের উপনিবেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই থিসিসেই সিরাজ প্রধান ও মূল সংঘাতগুলো (কনট্রাডিকশনস) উল্লেখ করার পাশাপাশি একটি সফল বিপ্লবের বিভিন্ন পর্যায় ও তা সম্পন্নের রূপরেখা দেন। সম্মেলনে উপস্থিত সবার অনুমোদন পায় তা। থিসিসে সিরাজ সিকদার ভারতীয় উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সারসংকলন করেন। কেন ভারতীয় উপমহাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি ব্যর্থ হয়েছে সে বিষয় তিনি একটি পর্যালোচনা দেন। পূর্ব বাংলার বিপ্লবের চরিত্র ব্যাখ্যা করে বলেন, 'পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলা একটি স্বাধীন শান্তিপূর্ণ নিরপক্ষে প্রগতিশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এক অর্থে তিনি তাঁর পররাষ্ট্রনীতিও ঠিক করে ফেলেন। দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধ করার জন্য বাহিনী তৈরির কাজেও তিনি লেগে যান। এরপর তিনি গঠন করেন ইস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও ইস্ট বেঙ্গল রেভল্যুশনারি আর্মি, যা পূর্ব বাংলার বিপ্লবী সেনাবাহিনী নামেও পরিচিত। এ সময় তিনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে মাওয়ের স্লোগান দিয়ে দেয়াললিখন করেন। শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীরা মাওয়ের বিখ্যাত উক্তি নিয়ে চিকা পড়ে : বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস। এ সময়ের একটি ঘটনার সাক্ষী শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী শ্রমিক আবু ইসহাক। তিনি বলেন, ভাই (সিরাজ সিকদারকে কর্মীদের অনেকে ভাই বলে সম্বোধন করতেন) আমাদের বললেন, এই স্লোগান ঢাকার বিভিন্ন ওয়ালে লিখতে। আমরা লিখতাম। একটু পরে পুলিশ এসে সারা রাত ধরে সেই স্লোগান মুছত। তখন ভাই হেসে বলতেন, এটা দিয়েই হবে।' এ সময় শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীরা সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে। বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা গোপনে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। এর মধ্যে পার্বত্য অঞ্চল হয়ে দাঁড়ায় তাদের গোপন প্রশিক্ষণের অন্যতম ক্ষেত্র। সর্বহারার হাতে তৈরি বাংলাদেশের পতাকা! শ্রমিক আন্দোলনের থিসিসের পরই শ্রমিক আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ব বাংলা) স্বাধীনতার প্রশ্নে লড়াই শুরু করে। গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের তাত্তি্বক লাইন গ্রহণ করায় এ সময় সংগঠন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশালসহ একাধিক অঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনের মজবুত ভিত গড়ে ওঠে। সংগঠনের নেতৃত্বে বরিশালের ঘাট শ্রমিকদের মধ্যে কিছু অর্থনীতিবাদী প্রকাশ্য আন্দোলন-সংগ্রামও গড়ে ওঠে বলে জানিয়েছেন সর্বহারা পার্টির সাবেক নেতা-কর্মীরা। ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে আমাদের জাতীয় পতাকার প্রকৃত ইতিহাস। ১৯৭০ সালের ৮ জানুয়ারি পার্টির দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একটি নতুন পতাকা ওড়ানো হয়। ওই পতাকারই পরিবর্তিত রূপ আজকের বাংলাদেশের পতাকা। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও ময়মনসিংহে ওড়া ওই পতাকায় সবুজ জমিনের মধ্যে লাল সূর্য। সে সময় নতুন একটি পতাকা উত্তোলনের ঘটনা বিভিন্ন পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়। পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ফজলুল হক রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতীয় পতাকার মূল নকশার পরিকল্পকদের একজন ছিলেন অবাঙালি, সাইফুল্লাহ আজমী। যাঁর পরিবার বিহার থেকে অভিবাসী হয়ে এসেছিল এ দেশে। এ পতাকার সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের পতাকার একটিই পার্থক্য, তা হলো সর্বহারা পার্টি কর্তৃক লাল সবুজের পতাকার মধ্যে শুধু মশাল জ্বালানো একটি অংশ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় নেই। এ প্রসঙ্গে সিরাজ সিকদার নিহত হওয়ার পর সর্বহারা পার্টির সভাপতি রইসউদ্দিন আরিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের সংবিধান থেকে শুরু করে সবখানে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের বহিঃপ্রকাশ। পতাকায়ও তাঁর অবস্থান স্পষ্ট। কিন্তু সিরাজ সিকদার ভিন্ন ঘরানার রাজনীতি করতেন। এ কারণে তিনি পতাকায় তিনটি মশাল দিয়ে স্মারক রেখেছিলেন। এক. ধর্মীয় সংখ্যালঘু, দুই. জাতিগত সংখ্যালঘু ও তিন. ভাষাগত সংখ্যালঘু। সশস্ত্র হামলা শুরু পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন শুধু তাত্তি্বক আর শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কোনো সংগঠন ছিল না। প্রথম থেকেই সংগঠনটি সশস্ত্র অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের বিকাশ নিশ্চিত করে। এ রকম একটি ব্যর্থ হামলা চালায় ১৯৬৮ সালের ৬ মে কার্ল মার্কসের জন্মদিনে। ওই দিন পাকিস্তান কাউন্সিলে দুটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন। হামলাটি সফল হয়নি। তবে হামলা থেমে থাকেনি। এ হামলার পরে আরো বেশ কিছু হামলা হয় বিদেশি দূতাবাসে। তার মধ্যে ওই বছরের অক্টোবর নাগাদ ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন, আমেরিকান ইনফরমেশন সেন্টারসহ আরো বেশ কিছু জায়গায়। বিদেশি শত্রুদের স্থানে হামলা চালানোর সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের বিরোধিতাকারীদেরও একটি তালিকা তৈরি হতে থাকে। সে তালিকায় ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম নিহত হন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এক চা বাগানের সহকারী ম্যানেজার হারু বাবু। শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের কাছে খোলা চিঠি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত ও বুর্জোয়াদের ক্ষুদ্র সংগঠন আওয়ামী লীগ মূল নেতৃত্বে চলে আসে। তবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার ডাক দেয় পাকিস্তানি জান্তা সরকার। তবে সিরাজ সিকদার ও তাঁর সংগঠন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান নেয় পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে সিরাজ সিকদার শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি খোলা চিঠি লেখেন। ১ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন সংসদ অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা দেন, উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলা। পরদিন ২ মার্চ পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন শেখ মুজিবকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানায়। একই সময় সংগঠনটি সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অস্থায়ী বিপ্লবী জোট সরকার গঠন এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ পরিষদ গঠনের অনুরোধ জানায়। তবে মুজিব তখন ব্যস্ত আলাপ-আলোচনায় সমাধান খুঁজতে। চিঠির সংক্ষিপ্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে ছাপা হবে ছোট অক্ষরে, আপনার ও আপনার পার্টির ছয় দফা সংগ্রামের রক্তাক্ত ইহিতাস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, ছয় দফার অর্থনৈতিক দাবিসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যমে, পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন, মুক্ত ও স্বাধীন করে। আপনাকে ও আপনার পার্টিকে পূর্ব বাংলার সাত কোটি জনসাধারণ ভোট প্রদান করেছে পূর্ব বাংলার উপরস্থ পাকিস্তানের অবাঙালি শাসকগোষ্ঠীর ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের অবসান করে স্বাধীন ও সার্বভৌম পূর্ব বাংলা কায়েম করার জন্য। পূর্ব বাংলার জনগণের এ আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন আপনার প্রতি ও আওয়ামী লীগের প্রতি নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো পেশ করছে : ১. পূর্ব বাংলার নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে এবং সংখ্যাগুরু জাতীয় পরিষদের নেতা হিসেবে স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করুন। ২. পূর্ব বাংলার কৃষক-শ্রমিক, প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যরত পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধি-সংবলিত স্বাধীন, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল পূর্ব বাংলার প্রজাতন্ত্রের অস্থায়ী সরকার কায়েম করুন। ৩. পূর্ব বাংলাব্যাপী এ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানান। এ উদ্দেশ্যে পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিবাহিনী গঠন এবং শহর ও গ্রামে জাতীয় শত্রু খতমের ও তাদের প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের আহ্বান জানান। ৪. পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার জন্য শ্রমিক-কৃষক এবং প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যরত পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে 'জাতীয় মুক্তি পরিষদ' বা 'জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট' গঠন করুন। ৫. প্রকাশ্য ও গোপন, শান্তিপূর্ণ ও সশস্ত্র, সংস্কারবাদী ও বিপ্লবী পদ্ধতিতে সংগ্রাম করার জন্য পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। (এরপর ৬ নম্বর পয়েন্টে শ্রমিক আন্দোলনের খোলা চিঠিতে ১৩টি করণীয় নির্ধারণ করে। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে জমি বণ্টন, শ্রমিকদের শ্রম শোষণ বন্ধ, ভাষাগত, ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘুদের সম-অধিকার দেওয়ার বিধানসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা হাজির করে)। তবে শেখ মুজিব ও তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক আন্দোলনের এই খোলা চিঠি আমলে আনেননি। হতে পারে নিরঙ্কুশ ভোটে জয় পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ তখন একলা চলো নীতিতে অটুট ছিল। তবে মুজিবনগর সরকার ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়ার পর সেই সরকারের প্রতি আরেকটি খোলা চিঠি দেওয়া হয় শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে। সেখানে যুদ্ধের ময়দানে করণীয় বিষয়ে তুলে ধরা হয়। তবে এবারও প্রবাসী সরকার শ্রমিক আন্দোলনের সেই চিঠিতে কর্ণপাত করেনি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই সর্বহারা পার্টি তৈরি ১৯৭১ সালের ২ জুন যুদ্ধের ময়দানে কামানের গোলার মধ্যে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পার্টি তৈরি হয়। নাম হয় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। বরিশালের পেয়ারা বাগানকে বেছে নেওয়া হয় পার্টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর জন্য। এর আগে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে পার্টিগুলোর নাম সবই মোটামুটি কমিউনিস্ট পার্টি বা এর কাছাকাছি নাম রাখে; কিন্তু সিরাজ সিকদার প্রলেতারিয়েতের বাংলা সর্বহারার নামে নামকরণ করেন পার্টির। সর্বহারা পার্টি গঠনের ওই দিনে বরিশালের পেয়ারা বাগানে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফজলুল হক রানা। কালের কণ্ঠকে তিনি সেদিনের স্মৃতি হাতড়ে বলেন, 'বরিশালের পেয়ারা বাগানে সেদিন লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। মনে হয়েছিল পেয়ারা বাগান যেন কোনো মুক্তাঞ্চল। এখানে নারী-পুরুষ যে এক নতুন পৃথিবীর জন্মের আগে সমবেত হয়েছে নতুন যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য। সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টি প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে আশ্রয় দেয়। এ সময় সর্বহারা পার্টি কর্মসূচি হাতে নেয়, দেশপ্রেমিক মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার ব্যাপারে। এ অবস্থা ১৯৭১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সর্বহারা পার্টি ধরে রাখে। আগস্টের শুরুতে সর্বহারা পার্টির অন্যতম কেন্দ্রীয় সদস্য এবং বর্তমান বাংলাদেশের পতাকার নকশাকার সাইফুল্লাহ আজমীসহ পাঁচজন যোদ্ধাকে সাভারে পাঠানো হয় মুজিববাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে। মুজিববাহিনী তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী দলের বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টির সব ঐক্য ভেস্তে যায়। তবে এরও আগে ভারতে খুব গোপনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং)-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে মুজিববাহিনী। মূলত এই বাহিনী গড়েই তোলা হয় যুদ্ধ থেকে কমিউনিস্টদের হটিয়ে দেওয়ার জন্য। ১৯৭১ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে থেকে লড়াই-সংগ্রাম করেছে মূলত এ দেশের বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টি ও গ্রুপ, যার মধ্যে সর্বহারা পার্টি অন্যতম। বরিশালের বানারীপাড়া অঞ্চলে অবস্থান নেয় শ্রমিক আন্দোলন, ৩০ এপ্রিল গঠন করে জাতীয় মুক্তিবাহিনী, যা দখলমুক্ত করে পেয়ারা বাগানের খানিকটা। এ মুক্তিবাহিনী পরিচালনা করতে সিরাজ সিকদারকে প্রধান করে সর্বোচ্চ সামরিক পরিচালনামণ্ডলী গঠন করা হয়। বরিশালের পেয়ারা বাগান স্বাধীনতাসংগ্রাম চলার সময় প্রথম ঘাঁটি ও মুক্তাঞ্চল। এ বিষয়ে সর্বহারা পার্টির তৎকালীন বৃহত্তর বরিশাল (বরিশাল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর) অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক রইসউদ্দিন আরিফ (পরবর্তী সময়ে সিরাজ সিকদার নিহত হলে অস্থায়ী সর্বোচ্চ বিপ্লবী সংস্থার সভাপতি) কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বরিশালের পেয়ারা বাগান বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে প্রথম ঘাঁটি ও মুক্তাঞ্চল। এ অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক বড় অপারেশন চালাতে হয়েছিল। আবার সর্বহারা পার্টি পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখত। সর্বহারা পার্টি এ অঞ্চলে অজস্র সফল হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান বাহিনীর ওপর। বরিশাল অঞ্চলে অসংখ্য সফল হামলা চালিয়ে সর্বহারা পার্টি পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। তবে স্বাধীনতার যত ইতিহাস লেখা হয়েছে, সেখানে বরিশালে সর্বহারা পার্টির অবদানকে খুব কৌশলে উহ্য রেখেছেন রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ইতিহাসবিদরা। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সর্বহারা পার্টির সতর্কবাণী ভারতীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে দ্রুত বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ভারতীয় বাহিনীর এই তৎপরতাকে সাদা চোখে দেখেনি সর্বহারা পার্টি। পার্টি মনে করে, পাকিস্তানের উপনিবেশ থেকে দেশ এবার ভারতীয় উপনিবেশের মধ্যে গিয়ে পড়েছে। এ সময় নতুন বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্নে সর্বহারা পার্টি বাংলাদেশের সরকারের প্রতি একটি খোলা চিঠি লেখে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ভারতীয় সৈন্যদের অনতিবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া, যুদ্ধের সৈনিকদের দিয়ে নৌ, আকাশ ও স্থলবাহিনী তৈরি করা, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করা, সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠনসহ ২৭টি দাবি পেশ করা হয়। তবে মুজিব সরকার সর্বহারা পার্টির সেসব দাবির একটিতেও কর্ণপাত করেনি। যদি সে সময় আওয়ামী লীগ বিচক্ষণতার পরিচয় দিত, তাহলে আজ অবধি যুদ্ধাপরাধের বিচার ঝুলিয়ে রাখতে হতো না। চিঠিতে বলা হয়েছিল পূর্ব বাংলার সত্যিকারের স্বাধীনতার জন্য পূর্ব বাংলার লাখ লাখ মানুষ আত্মবলিদান করেছেন। তাঁদের আকাঙ্ক্ষিত প্রাণের চেয়ে প্রিয় স্বাধীনতা বাস্তবায়িত হতে পারে নিম্নলিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমেঃ ১. পূর্ব বাংলার ভূমি থেকে অনতিবিলম্বে শর্তহীনভাবে সব ভারতীয় সৈন্য, সামরিক ও বেসামরিক উপদেষ্টাদের ভারতে ফেরত পাঠানো। ২. পূর্ব বাংলার স্থিতিশীলতা আনয়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কাজের জন্য পূর্ব বাংলার সম্পদ এবং কষ্টসহিষ্ণু, পরিশ্রমী ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ, সাহসী ও দেশপ্রেমী জনগণের ওপর সর্বতোভাবে নির্ভর করা। ৩. পূর্ব বাংলার প্রতিরক্ষার জন্য পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্য থেকে নিয়মিত স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী গড়ে তোলা এবং জনগণকে সামরিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সশস্ত্র করে স্থানীয় বাহিনী গড়ে তোলা। পূর্ব বাংলার প্রতিরক্ষার জন্য এই সামরিক বাহিনী ও জনগণের ওপর নির্ভর করা। পূর্ব বাংলার নিয়মিত বাহিনী ও স্থায়ী বাহিনী মুক্তিবাহিনীর পক্ষেই সম্ভব। ৪. পূর্ব বাংলার জামায়াত, পিডিপি, মুসলিম লীগ (তিন অংশ), নেজামে ইসলাম এবং পাকিস্তানি সামরিক ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে এ ধরনের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, দল ও ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়া, ভোট প্রদানের অধিকার, মিটিং-মিছিল সংগঠিত এবং অন্যান্য রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনার অধিকার বাতিল করা; তাদের ভূমি গ্রামের ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করা; ভূমি ব্যতীত তাদের শিল্প-ব্যবসা ও অন্যান্য সম্পত্তি ক্ষতিপূরণ ছাড়াই রাষ্ট্রীয়করণ করা; এদের মধ্যকার গোড়া জনবিরোধীদের বিচার ও শাস্তি প্রদান করা; প্রমাণিত আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানি সামরিক দস্যুদের অন্য দালালদের কঠোর শাস্তির বিধান করা; কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে সব দেশপ্রেমিককে আলবদর, রাজাকার বা পাকিস্তানি সামরিক গোষ্ঠীর দালাল বলে খতম করার ঘৃণ্য কার্যকলাপের বিরোধিতা করা। এ রকম ২৭টি জরুরি করণীয় নির্ধারণ করে সর্বহারা পার্টি। যেখানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে ভারতে শরণার্থী, পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পায়। তবে রাষ্ট্রযন্ত্র থোড়াই পরোয়া করে সেসব। উঠতি মধ্যবিত্ত যে রাষ্ট্র পেল, যে রাষ্ট্র তারা ধর্মীয় জাতিগতভাবে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশের কাছে হারিয়েছিল, তা দখল করে নিল নিজেদের মধ্যে। যদিও মুক্তিযুদ্ধ অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হাজির করেছিল, তবে বাস্তবে মুসলিম থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ হয়ে আওয়ামী লীগের যে ইতিহাস, সেখানে দুই ধারার মানুষের সম্মিলন ঘটেছিল_এক, সাবেকি মুসলিম লীগ, দুই, উঠতি মধ্যবিত্ত। সর্বহারা পার্টির কোনো দাবি না মেনে নেওয়া এবং স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই বিরোধী মতামতকে উগ্রভাবে দমন করা, ভারতীয় হস্তক্ষেপের বাড়াবাড়ির কারণে সিরাজ সিকদার নতুন থিসিস দিলেন। এই নতুন থিসিসের নাম দিলেন, 'পূর্ব বাংলার বীর জনগণ আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি, পূর্ব বাংলার অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব (জাতীয় মুক্তি ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা) সম্পূর্ণ করার মহান সংগ্রাম চালিয়ে যান।' এই দলিলটি বের হয় ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে, পরে যা আবার ১৯৭৪ সালের মার্চে পুনঃপ্রকাশিত হয়। এই দলিলে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়, কিভাবে বাংলাদেশ নামের নতুন দেশটি ভারতীয় অর্থনৈতিক উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। মূলত এই দলিলের মাধ্যমেই শোষিত শ্রেণীর জন্য প্রকৃত জনমুক্তির বাংলাদেশ গড়তে 'সশস্ত্র সংগ্রাম' অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সর্বহারা পার্টি। এর ফলে বাংলাদেশ সৃষ্টির পরও সর্বহারা পার্টির সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যাহত থাকে। বিভিন্ন এলাকায় থানা লুটের ঘটনা ঘটতে থাকে, একই সঙ্গে শ্রেণীশত্রু খতমের নামে স্থানীয় ভূস্বামী, জোতদার থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সচ্ছলদের হত্যা করা হতে থাকে গোটা বাংলাদেশে। সর্বহারা পার্টি মুক্তিযুদ্ধকে পূর্ণাঙ্গ মনে করেনি কখনোই, তাদের চোখে এটি ছিল পাকিস্তানের শোষণ থেকে বেরিয়ে ভারতের আগ্রাসনের মুখে পড়ার একটি পর্ব মাত্র। এ কারণে সর্বহারা পার্টি ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসেবে পালন না করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ দিবস হিসেবে কালো দিবস ঘোষণা করে ওইদিন হরতাল পালনের আহ্বান জানায়। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে সর্বহারা পার্টি সারা দেশে হরতালের ডাক দেয়। পার্টির মুখপত্র 'স্ফুলিঙ্গ' ও প্রচারপত্রে বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর হচ্ছে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী শক্তির কাছে মুজিব সরকারের আত্মসমর্পণ দিবস। একমাত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমেই জনগণের বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করে প্রকৃত বিজয় আসতে পারে। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে মুজিব সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়ন, হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে সর্বহারা পার্টি ঢাকায় হরতাল আহ্বান করলে সন্তোষ থেকে মওলানা ভাসানী বিবৃতি দিয়ে সমর্থন করেন। হরতাল সফল হয়। দেশব্যাপী থানায় থানায় সশস্ত্র আক্রমণ পরিচালিত হয়। এই হরতালে বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের সর্বহারা পার্টির সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন রইসউদ্দিন আরিফ। হরতালের কথা স্মরণ করতে গিয়ে কালের কণ্ঠকে আরিফ বলেন, 'আমি ছিলাম ফরিদপুরের দিকে। হরতালের আগের রাতে এলাকার কৃষকরা মহাসড়কে গাছ কেটে ফেলে রাখে। এত বেশি গাছ তারা কেটে ছিল যে মহাসড়ক থেকে গাছ সরাতে সরকারের লোকদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।' রাষ্ট্রের প্রথম ক্রসফায়ার ১৯৭৫ সালের ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন, ১ জানুয়ারি। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশব্যাপী সফল হরতাল পালনের মধ্য দিয়ে পার্টির কার্যক্রমকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন সর্বহারা পার্টির এক সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সিরাজ সিকদার। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এক সদস্য হওয়ার কারণ হলো ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য সদস্য মুজিববাহিনী অথবা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি এক সদস্য হওয়ায় এ সময় পার্টি রাজনৈতিক, সামরিক ও সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিটি সেলে দুজন করে লোক নিয়োগ দেয়, যাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফজলুল হক রানা। চট্টগ্রাম থেকে আত্মগোপন করে সিরাজ সিকদারকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল পার্টির গোয়েন্দা উইং। তিনি পার্টির শহীদ এক কর্মীর বাসায় যাচ্ছিলেন দেখা করার জন্য। এর পরই চট্টগ্রাম ত্যাগ করে কোনো ঘাঁটি অঞ্চলে ডুব দেবেন। একটি স্কুটার নিয়েছেন, যাবেন পাহাড়তলী। চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় এলে স্কুটার থামায় সাদা পুলিশ। সিরাজ সিকদার নির্বিকার ভঙ্গিতে নিজেকে পরিচয় দেন ব্যবসায়ী হিসেবে। এমনকি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলে ঘাবড়ে যায় ডিবির সাদা পুলিশের দল। এবার কয়েক ব্যবসায়ীকে ফোন করা হয়। তাঁরা জানান, তিনি একজন ভালো ব্যবসায়ী। তবে ঢাকার গোয়েন্দা সদর দপ্তর নিশ্চিত যে যাঁকে ধরা হয়েছে তিনি সিরাজ সিকদার। ওই দিনই সিরাজ সিকদারকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

আমি আজ আমেরিকার কথা বলবো ========================== আমি বিশ্ব মোড়ল আমেরীকার কথাই বলছিলাম।দেশটি যে দেশের বন্ধু হয় সেই দেশের আর শত্রুর প্রয়োজন হয়না,কে যেন কথাটা বলছিলেন এই মহুর্তে আমার স্মরন হচ্ছে না।তবে কথাটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে দুনিয়ার দেশে দেশে।আমারদের এলাকায় বড়মাপের এক নেতা ছিলেন,তিনি মুসস্লিম লীগের অনেক বড় নেতা।তিনি যে দিন হেসে হেসে কাউকে পিঠের উপর চাপড় দিয়ে প্রসংশা করতেন,সে দিন রাতেই পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে কয়েকটা মামলায় নাকি জড়িয়ে দিতেন।আমেরিকাকেও আজকে তেমনি মনে হয়। প্রকৃত বিচারে উগ্র সন্ত্রাস বিষয়টা বিশ্ব প্রেক্ষপটে দেশে দেশে যে ভয়ানক রূপ নিয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং মানবতা-উন্নয়ন-সম্প্রীতি প্রভৃতির শত্রু হয়ে দাঁড়াচ্ছে; এই প্রশ্নের গভীরে গিয়ে চিন্তা করা এবং করণীয় বের করা আজ আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য জরুরি হয়ে পড়ছে। বিশ্ববাসী সবারই এটা স্মরণে রয়েছে যে, আফগানিস্তানের সোভিয়েতমুখী ‘বিপ্লব’ ঠেকাতেই অর্থ-অস্ত্র, প্রশ্রয়-আস্কারা দিয়ে আমেরিকা উগ্রবাদকে কেঁচো থেকে সাপ বানিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও ওই তৎপরতার ভেতর দিয়েই তালেবানের উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে। এই উগ্রতা সৃষ্টির পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে আমেরিকা রয়েছে, তা কিন্তু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ-বিশ্ লেষণে ক্রমেই সুস্পষ্ট হচ্ছে। এর সঙ্গে যদি উল্লিখিতভাবে বেড়ে ওঠার ঘটনার গতি-প্রকৃতি যুক্ত করা যায়; তবে কি প্রমাণিত হয়! সিরিয়ায় দিনের পর দিন কিছুই করতে পারে না আমেরিকা। অথচ রাশিয়া সঙ্গে সঙ্গেই সাফল্য পাচ্ছে। মানুষ এত বোকা নয় যে, দুয়ে দুয়ে চার যে হয়, তা বুঝতে পারবে না। সাধারণ বিবেচনা থেকেই চলে আসা একটা ধারণা মানুষের মধ্যে ছিল যে, মধ্যপ্রাচ্যের তেল হচ্ছে সব কথার আসল কথা। এ জন্যই মধ্যপ্রাচ্যে ডিভাইড এন্ড রুল নীতি দিয়ে ওই অঞ্চলের দেশে দেশে কিংবা কোনো দেশের অভ্যন্তরে উত্তেজনা উস্কে দেয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী আমেরিকার ওই অঞ্চলে রাজতন্ত্রের অকুণ্ঠ সমর্থক হওয়া দিয়ে উসকে দেয়ার বিষয়টা সহজেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তবে এখন ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে এটা ক্রমেই সুস্পষ্ট হচ্ছে যে, কেবল তেল সম্পদ নয়, ভূ-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষায় আমেরিকা উগ্রতা নিয়ে খেলছে। শ্রেষ্ঠত্ব ও নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করা হচ্ছে মূল কথা। বলাই বাহুল্য উসকে দেয়ার ব্যাপারটা চোরকে চুরি করতে বলে গৃহস্থকে জেগে থাকতে বলার মতো ব্যাপার-স্যাপার। এই কৌশল চালু রাখতে বিশ্বব্যাপী দুই চরম প্রান্তকে দুধকলা দিয়ে পোষা এবং তা সময় সুযোগমতো ব্যবহার করা হচ্ছে আমেরিকাকে স্বঅবস্থান নিয়ে টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। প্রসঙ্গত উগ্রতা বনাম সহনশীলতা, হিংসা বনাম অহিংসা, যুদ্ধ বনাম শান্তি, প্রাচুর্য বনাম গরিবি, অমানবিকতা বনাম মানবিকতা, ধৈর্য বনাম অস্থিরতা, গণতন্ত্র বনাম স্বৈরাচার, অন্ধত্ব বনাম উদারতা প্রভৃতির ভেতর দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে স্বতঃস্ফ‚র্ত ও স্বাভাবিক নিয়মেই দুই চরম প্রান্ত সৃষ্টি হচ্ছে। আবহমানকাল থেকে মানুষের সংগ্রামই হচ্ছে অশুভ প্রতিহত কর, শুভকে জাগ্রত কর। দুর্গাপূজা হয়ে গেল, আশুরা পালিত হলো, ঈদোৎসবও পালন করা হলো; সব কিছুর ইহলৌকিক লক্ষ্য কিন্তু একই। রাষ্ট্র সমাজ সব অগ্রসর হয়েছে ও হচ্ছে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের রক্ষার ভেতর দিয়েই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নানা রূপে নানাভাবে কিন্তু দুষ্ট আবির্ভূত হচ্ছেই এবং এই দুষ্টকে যুগে যুগে লালন-পালন করেছে, আস্কারা-প্রশ্রয় দিচ্ছে কায়েমি স্বার্থ। এই কায়েমি স্বার্থ কখনো অশুভকে করে নিয়ন্ত্রণ আবার কখনো ব্যবহার করে আমের আঁটির মতো ফেলে দেয়। তাই বলছিলাম বন্ধু পুরাতন ভাল,খেলনা নতুন ভাল।আমরা আমাদের মত করে পররাষ্ট্র,বন্ধু,উন্নয়ন,অগ্রগতির চিন্তা করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।আমেরিকা বড্ড বেশী প্রসংশা শুরু করেছে আমাদের।আবার সাথে রেডের লাঠিও রেখেছে,ভয় হয় নিক্সনের কথা মনে হলে। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

নব্য জঙ্গী জামায়াত শিবিরকে রুখে দিতে নতুন প্রজম্ম প্রস্তুত। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ দেশে একের পর এক নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে খুন করা হচ্ছে। আর খুন করার পরপরই সামাজিক গণমাধ্যম ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দাবি করা হচ্ছে- হত্যাকাণ্ডের দায় আইএস, আনসার আল ইসলাম ইত্যাদির। এ ধারার সূচনা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে নৃশংসভাবে হত্যার পর টুইট বার্তার মধ্য দিয়ে। বর্তমানে এই ধারাই বহুল প্রচলিত হয়ে উঠেছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে আইএসের সদস্যরা ঢুকে পড়েছে। এসব খুন, হত্যাকাণ্ড তাদেরই কাজ। অন্যদিকে সরকার দাবি করছে, বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। সবই জামায়াত-শিবিরের কাজ। সরকার যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জামায়াত শিবিরের উপর দোষ চাপায় তবে বিদেশী সংস্থা গুলী কি বলে সে দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। গতকাল শনিবার ৭/১১/২০১৫ দেশের প্রায় সব কয়টি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় আই এ সের নামে সক্রিয় জামায়াত-শিবির শীর্ষক প্রতিবেদন। এতে উঠে এসেছে আই, এ, সের নামে জামায়াত-শিবিরের প্রক্সি-ওয়ারের আদ্যোপান্ত। মূলত এলোপাতাড়ি মানুষ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে, দেশের মানুষের মনে আতংক ছড়িয়ে দিয়ে, সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় এসব হত্যাকাণ্ডের দায় তারা পরিকল্পিতভাবে আই এস, আনসার আল ইসলাম ইত্যাদি সংগঠনের কাঁধে তুলে দিতে তৎপর।পত্র পত্রিকা গুলী কি জ্যোতিষ?কোথায় পেল এই তথ্য।তথ্যের সূত্র নিশ্চিত করতে না পারলে প্রত্যেক পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন ভিক্টিম?মামলা করার নৈতিক বল কি নেই?মুলত পত্রিকাগুলি নিজেদের থেকে লিখে নাই। তারা যে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এসব অপকর্মে তৎপর, সেই প্রযুক্তিই ধরিয়ে দিচ্ছে তাদের। ফলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ঢাকার ওয়ারী কিংবা যাত্রাবাড়ীতে বসে তারা যেসব ব্লগ ও টুইট বার্তা বিদেশী সাইটগুলোর সহায়তায় আপলোড করছে ইন্টারনেটে, সেগুলোর স্থান চিহ্নিত হয়ে পড়ছে।"" যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুই গবেষক তাদের পর্যবেক্ষণ থেকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে আই এস জঙ্গিদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে জামায়াত-জেএমবিতে রয়েছে আইএসের বীজ।"" দেশ বিদেশের সকল গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে বাংলাদেশে বর্তমানে কোন জঙ্গী গোষ্টির অস্তিত্ব নেই,যা আছে তা জামায়াত শিবিরের কর্মকান্ড।তারপরেও একশ্রেনীর বুদ্ধিজীবি পরামর্শকের অযাচিতভাবে সরকারের উদ্দেশ্যে বিনে পয়সায় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে অহরহ,সংকট মোকাবেলায় বিরুধি দলের সংলাপকে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ সরকারের।সরকার আই,এসেওকে লুকাচ্ছে আন্তজাতিক ভয়ে।আগে প্রচার করে নীজের কাঁধে তুলে নিয়েছে জঙ্গীদের।জঙ্গীর হামলা যদি হয় তাঁদের কি লাভ,না কাউকে আড়াল করার জন্য এই জোরালো অভিযোগ? কি আজব দেশ,কি আজব বুদ্ধিজীবি, কি আজব তাঁদের নীতি নৈতিকতা। হত্যাকারি আড়াল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। রাতের পর রাত জেগে, দিনের পর দিন সব কাজ ফেলে রেখে শুধু পতিকায় কলাম লিখা আর টি,ভি টকশোতে কি বলবে তাঁর প্রস্তুতি।যাঁরা পেট্রোল বামার আগুন দিয়ে মানুষ কয়লা করে, যাঁরা রাজপথ চেড়ে ভবনে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে দেশের তরুন সমাজের হাতে বোমা তুলে দেয়,আন্দোলনের নামে দিনের পর দিন অবরোধের আশ্রয় নিয়ে দেশের অর্থনীতি ধ্বংশের পাঁয়তারা করে বিদেশ নীর্ভর করে রাখতে চায় দেশকে, তাঁদের সাথে সংলাপ!!,তাঁর সাথেই বসে ফয়সালার পরামর্শ!!! ধিক তোদের বুদ্ধিবৃত্তি,শত ধিক তোদের নীতি নৈতিকতাকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন ক্ষেত্রেই এত দৈন্যতা দেখা দেয়নি যে খুনী,খুনীর আশ্রয় দাতার সাথে বসে ফয়সালা করে দেশ চালাতে হবে।যাঁদের রাজনৈতিক জ্ঞান,শিক্ষা,নেতৃত্বের দৈন্যতা আছে তাঁরা আলোচনা কার সাথে বসে করবে করুক,আওয়ামী লীগের কিছুই যায় আসে না।তবে জঙ্গীপনা বন্ধ করতে হবে,নিষিদ্ধ দলকে জোটে রেখে রাজনীতি করা যাবে না।বাংলাদেশের নতুন প্রজম্ম খুনী এবং খুনীর আশ্রয় দাতা কাউকে রাজপথে নামতে দিবে না।সরকার যদি সংলাপে বসে তাতেও নতুন প্রজর্ম্মের কিছু যায় আসে না। এ তথ্য নতুন নয় যে, জামায়াত-শিবিরের উগ্রপন্থী সদস্যরাই দেশে জেএমবি, হরকাতুল জেহাদের জন্ম দিয়েছে। তারা শান্তির ধর্ম ইসলাম কায়েমের নামে সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানেও সেই ধারা বহমান। বিদেশী দুই গবেষক তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, সরকার জামায়াত শিবিরের নব্য আইএসের হুমকি মোকাবেলায় কোঠোর অবস্থান নিয়েছে।এতে নিরাপরাধ ব্যাক্তিও হয়্রানীর স্বীকার হবেনা তা হলফ করে বলা যাবেনা।বোয়াল মাছের চেষ্টায় জাল ফেলে কেউ অন্য মাছ পড়লে ছেড়ে দেয়না।এইক্ষেত্রে এমন হবেনা তা বলা যায়না।দেশের বৃহত্তর স্বার্থেঅভিযানের ভুলত্রুটি দেশের মানুষ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।মানুষ চায় নিরাপদ চলাপেরার গ্যারান্টি,রাতে নিরুপদ্রব ঘুম,খাওয়ার জন্য ভাত,চিকিৎসায় ঔষদ।রাষ্ট্র নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য,ইহা জনগনের সাংবিধানিক অধিকার।জনগনের শান্তিতে বসবাস করার জন্য যথপযুক্ত ব্যাবস্থা সরকারকেই করতে হবে। বর্তমানে আইনশৃংখলা অবনতি ঘটানোর মুল কারন- মানবতা বিরুদি অপরাধের দন্ড পেয়ে দুই জামায়াত নেতা কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছে।অন্য দিকে জেলে চার জাতীয় নেতাকে হত্যায় করা মামলার রায় এই মাসের মধ্যেই হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে।জাতির জনকের হত্যায় জড়িত পলাতক আসামীদের দেশে ফেরৎ এনে রায় কায্যকরের নতুন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সব বিষয়গুলী একত্রে জট পাকিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ার সমুহ সম্ভাবনায় নষ্টালিজিয়া আক্রান্ত করেছে দুবৃত্ত সংগঠন গুলিকে।নষ্টালিজিয়ার প্রতিকারের আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে তথাকথিত পেইড সুশীলেরা। কোন অবস্থায় খুনিদের সাথে বৈঠক হতে পারেনা।প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বেগম জিয়াকে জামায়াতে ইসলামীর সংগ ত্যাগ করার ঘোষনা জাতি যেদিন জানতে পারবে, সেদিনই হতে পারে আলোচনা।তাঁর আগে কোন অবস্থায় নতুন প্রজম্ম খুনির দোষরের সাথে বৈঠক মেনে নিবে না, নিতে পারে না।সেই বৈঠক যেই নামেই হোক। প্রয়োজনে নতুন রাজনৈতিক দলের মেরুকরনের আগমুহুর্ত পয্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার জন্য গনতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক -সামাজিক,সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক দল ও জোট সমুহের জন্য আরো খোলা মেলা অবারিত রাজনৈতিক কর্মকান্ড করার সুযোগ তৈরী করে দিতে হবে।বিরুদি দলের শুন্যতা পুরনের কায্যকর উদ্যোগ দেশের বিদ্যমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বুদ্ধিজীবিদের মধ্য হতে উঠে আসুক তাতে কোন আপত্তি নেই। কোন অবস্থায় বি,এন,পি জামায়াত জোটকে যতক্ষন পয্যন্ত সন্ত্রাসের পথ ছাড়বে না,ততক্ষন পয্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও সভা সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া উচিৎ হবে না।এমনিতে জামায়াতের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই, তারপরেও হাইকোর্টের রয়েছে রুল। কোন আইনী সংজ্ঞায় নেই রাজনীতি করার অধিকার।বিশ্বের কোথাও স্বাধীনতা বিরুধিদের রাজনৈতিক,সামাজিক,সরকারি চাকুরী এবং ভোটাধিকার নেই।বাংলাদেশ বিশ্ব পরিবারের বাহিরের অন্যকোন গ্রহের দেশ নহে,এখানে কিভাবে তারা ভোটাধিকার, নাগরিক অধিকার পায়?প্রয়োজনে ৭২ এর সংবিধান ১৫তম সংশোধনী বাতিল করে সর্বচ্ছো আদালতের রায় পুর্ন বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।এখানে শিথিলতা দেখানোর কোন অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের কোন নাগরীক চায়না মুক্তিযুদ্ধের বিরুধীতাকারী, জাতির জনকের অবমাননাকারী,সন্ত্রাসী জঙ্গী প্রতিপালনকারী কোন সংগঠন বা ব্যাক্তি বাংলাদেশের স্বাধীন ভুখন্ডে রাজনীতি করুক,নাগরীক সুবিধা নিয়ে স্বদর্পে ঘুরে বেড়াক,রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তাঁদের গাড়িতে উড়ুক। " জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা"

অরাজকতা, নাশকতা,হত্যা ইত্যাদিতে সরাসরি জড়িত জামায়াত,খালেদা জিয়ার গোপন চক বাস্তবায়নের নব্য বাংলাদেশি আই,এস

ছবি

জাতীয় চারনেতার আত্মত্যাগের প্রতিদান হতে পারে ৭২ এর সংবিধানের পুর্নাঙ্গ অনুসরন। ================================== '৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যার পর ৭৫ এর ৩রা নভেম্বর আর একটি নির্মম নিষ্ঠুর ইতিহাসের বর্বতম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল ঘাতকেরা।মায়ের কোলে শিশু নিরাপদ,পার্থিব জগতে সব শ্রেনীর মানুষের জন্য জেল খানা নিরাপদ।এই তপ্তবাক্য সে দিন মুখ থুবড়ে পড়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের নরপিশাচদের বুটের নিছে। ১৯৭৫ এর আগষ্ট থেকে নভেম্বর মাসের ঘটনা পুঞ্জিতে যাহা ঘটেছিল রাষ্ট্র ব্যাবস্থার সৃষ্টির আদিকাল থেকে যদি সব ইতিহাস তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াই তাহলেও দেখা মিলবেনা কোন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের স্বপরিবারে হত্যার ঘটনা। সভ্যতার আদিযুগেও হয়তো বা নয়।আবার কোন দেশের জেল খানায় হত্যাকান্ড ঘটেছে, সেই দেশেরই জাতীয় নেতা কস্মিনকালেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। বিশ্বের যত রাষ্ট্রনায়ক হত্যাকান্ড ঘটেছে একক অথবা তাঁর অনুসারীদেরকে সহ হত্যা করা হয়েছে।পরিবারের শিশু সন্তান ও অবলা নারী হত্যা হয়েছে তেমন ইতিহাস রচিত হয়নি। হত্যাকান্ডটি কোন আঞ্চলিক জেল খানায় নয়,খোদ রাজধানীর কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে,পাগলা ঘন্টি বাজিয়ে,সতীর্থদের কাছ থেকে সরিয়ে, সেনাবাহিনীর সাজোয়া যান ব্যাবহার করে ঘটানো হয়েছিল।জেল হত্যার শিকার জাতিয় নেতার এক কন্যার দু:খের সাগরের এক বিন্দু শিশিরসম আকুতির উদৃতি দিয়ে আজকে আমার লিখা শুরু করতে চাই।সিমিন হোসেন রিমি,মহান জাতীয় সংসদের সম্মানীত সাংসদ।তিনি আজকে যে কলামটি লিখেছেন তাঁর কিয়দংশ দিয়েই শুরু করতে চাই আমার লিখার প্রারম্বিকতা---।তিনি লিখেছেন--- "মৃত্যুর সহজ সংজ্ঞা হয়তো বা না-ফেরার অনন্ত অজানায় চলে যাওয়া। শারীরিক উপস্থিতির বিচ্ছেদ। সরাসরি কোনো দিন আর না দেখা হওয়া। অথবা যে আমার সরব উপস্থিতি ছিল, তা এক নিমেষে নীরব হয়ে যাওয়া, চিরতরে। ৪০ বছর আগে সাদা কাফনে জড়ানো মুক্তিযুদ্ধের অনন্য বীর, দেশপ্রেমী বাবার (তাজউদ্দীন আহমদ) রক্তাক্ত নীরব নিথর মৃতদেহ। একপাশে দাঁড়ানো আমি। মানুষের বলা কত রকম শব্দ ভেসে আসে কানে। শুনতে পাই, জেলহত্যার নির্মমতার শিকার বাবার তিনজন মৃত্যুসঙ্গীর একজনের মৃতদেহ রাখা হয়েছে আমাদের বাড়ির পাশেই। বাবাকে রেখে অদ্ভুত মমতায় হেঁটে যাই সেই পথে। সাদা কাপড়ের অনেকটা জুড়ে রক্তে ভেজা। রক্তবর্ণ একটি চোখ খোলা। তাকিয়েই থাকি। প্রশ্নের পর প্রশ্ন আছড়ে পড়তে থাকে আমার ভেতরে। সেই খোলা স্পন্দনহীন রক্তাক্ত চোখকে মনে হয় বাংলাদেশের মানচিত্রে রক্ত দিয়ে লেখা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন! সেই প্রশ্নবোধক চিহ্নের বিপরীতে ন্যায়ের পতাকা সগর্বে ওড়ে না ৪০ বছরেও। জোড়াতালিতে অথবা বিরুদ্ধ স্রোতে ন্যায়ের পতাকা নুয়ে পড়ে বারবার। যে মানুষ নিজেকে প্রকাশ করবে বলে হাজার বছর ধরে পাহাড়, অরণ্য, সাগর, মহাসাগর পাড়ি দিয়েছে। কঠিন রুক্ষ মাটিকে করেছে উর্বরা, ছুঁয়েছে আকাশ, ভেদ করেছে অজানা রহস্য__________!!!!। মীর জাফর নবাবী পাওয়ার আশায় বৃটিশ বেনিয়াদের চক্রান্তে পলাশির আম্রকাননে প্রধান সিপাহশালার হয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাবের অভিনয়ের মাধ্যমে নবাব সিরাজদৌল্লার চরম পরাজয় ঢেকে আনেন।পালায়নপর নবাবকে পথিমধ্যে হত্যা করে ভারতীয় ইতিহাসে রচনা করেছিলেন নিমোঘ কাল অধ্যায়ের। বাংলার নবাবকে হত্যার মাধ্যমে গোটা ভারতবর্ষকে তিনি তুলে দিয়েছিলেন ইংরেজদের হাতে।মাত্র ছয় বছর তল্পিবাহক ফরমায়েসি নবাবি চালাতে পেরেছিলেন।শেষবদি অত্যান্ত অপমান অপদস্ত হয়ে সিংহাসন ত্যাগের অল্প কিছুদিনের মধ্যে মৃত্যু বরন করেন কথিত আছে ন্যাক্কারজনক ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়। মরেও বেঁচে আছেন ভারতবাসির কাছে প্রচণ্ড ঘৃণা, ধিক্কার,আর পরম বন্ধুর গালির প্রথম শব্দের উৎস হয়ে। থাকবেন পৃথিবীর চন্দ্র সুর্য্য যতদিন উদয় আর অস্ত যায় ততদিন পয্যন্ত।অভিশপ্ত হতে থাকবেন অনাগত কাল ধরে। মীরজাফরের চায়ার কায়া দেখা যায় স্পষ্ট খোন্দকার মোশতাকের চরিত্রের মধ্যেও।জাতির জনকের অপার ভালবাসা,বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালে স্ব-পরিবারে হত্যায় প্রধান ভুমিকা পালন করেন মোস্তাক।শুধু তাই নয় স্বঘোশিত রাষ্টপতি হয়ে ক্ষমতাকে নির্ভেজাল,কন্টকমুক্ত করার মানষে সরাসরি টেলিফোন আদেশে মোস্তাক হত্যা করানন বাঙালি জাতির চার মহান নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং মুহাম্মদ মনসুর আলীকে। তারই নির্দেশে কতিপয় সেনা কর্মকর্তা ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে তাঁরই দীর্ঘদিনের সহচর পরম বন্ধু জাতিয় চার নেতাকে হত্যার জন্য সকল রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে ঘাতকদের জেল খানায় প্রেরন করে-- চালায় ইতিহাসের নারকীয় বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ।মোস্তক জানতেন চারনেতার দৃড চারিত্রিক বৈশিষ্টের এবং জাতির জনকের প্রতি তাঁদের আনুগত্যের অনুকুল্লতা, অপিরিসিম ভালবাসার নিচ্ছিদ্র বন্ধনে আবদ্ধতা কত গভীরে প্রোথিত ছিল।চার নেতাকে হত্যার মুল কারন বশ্যতা স্বীকার না করা,ভবিষ্যতের ক্ষমতারকাঁটা হয়ে দাঁড়াবার সমুহ সম্ভাবনা,আওয়ামী লীগ সংগটিত হলে বীরের মায্যদায় জেলমুক্তি পেয়ে নেতৃত্ব গ্রহনের আশংকা ইত্যাদি নানাহ রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক হিসেবের খাতা মেলানোর জন্যই তড়িঘড়ি জাতিয় চারনেতাকে জেলখানায় হত্যার প্রয়োজনীয়তা তাঁর নিকট অবশ্যম্ভাবি হয়ে উঠে। তাছাড়া সকল বিভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্নকরে ততদিনে প্রতিরোধের আগুন মিটি মিটি জ্বলা শুরু হয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে।অকাতরে ছাত্রজনতা রক্ত ঢেলে খুনীচক্র প্রতিহতের ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে চতুর্দিক থেকে।এতেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন মোস্তাক। তিনি সামরিক বাহিনীর বন্দুকের নল পেছনে ঠেকিয়ে যাদের মন্ত্রিপরিষদে শপথ নিতে বাধ্য করেছিলেন, তাদের মধ্যেও ভীতি কেটে যাওয়া শুরু হয়ে গেছে।সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকে ইতিমধ্যে মোস্তাকের নেতৃত্ব চেলেঞ্জ করার মত সাহস সঞ্চয় করে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। প্রথমেই সংসদ সদস্য এড. সিরাজুল হক প্রকাশ্য চেলেঞ্জ করে মোস্তাককে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলতে অস্বিকার করে মোস্তাক ভাই বলে সম্ভোধন করে রাষ্ট্রপতি পদের শিরায় 'প্রশ্নবোধক চিহ্ন ’ বসিয়ে দিতে সক্ষমতা প্রদর্শন করে বসেন।সুচুতুর মোস্তাক অন্তদৃষ্টিতে বুঝতে সামান্যতম বেগ পেতে হয়নি।রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে সংগঠিত হচ্ছে।সংসদের বিদ্যমান সদস্যরাও সকল ভীতি পায়েদলে সংঘটিত হতে থাকে।সরকার এবং সংসদের ভেতরের প্রভাব বাইরেও কিছু কিছু পড়তে থাকে। যদিও জাতীয় ৪ নেতাসহ অনেকেই তখন জেলখানায় বন্দি, পলাতক,সেনাবাহিনীর একাংশের অকথ্য নির্যাতনের শিকার।বাহিরের জগতের যেকোন নেতাকর্মীর জীবন বিপন্ন হওয়ার সময় তখনও বিদ্যমান। জীবন বিপন্নের তোয়াক্কা না করার মত সাহষি মুজিব প্রেমিরা মাঠে ঘাটে অবস্থান নিচ্ছিদ্র করতে ব্যস্ত ।কোন কোন এলাকায় প্রতিবাদের দুর্গ গড়ে উঠেছে,প্রয়োজন শুধু শক্ত নেতৃত্বের।রাজধানী ঢাকায় ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদের প্রতিবাদ মিছিল বের করার খবর পাওয়া যাচ্ছিল।জনগন ভীতিকর চোখে উৎসুক নয়নে আগ্রহ ভরে মিছিল গুলি প্রত্যক্ষ করছিল,হাতনেড়ে কেউবা চোখের ভাসায় সমর্থনও দিচ্ছিল। সামগ্রিক অবস্থা দ্রুতই খন্দকার মুশতাক সরকার এবং তার নেপথ্যের শক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে---এটি অনেকটা নিশ্চিত হয়েই খন্দকার মুশতাক আহমদ এবং ১৫ আগস্টের ঘাতকচক্র জেলখানায় বন্দি জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাদের আশঙ্কা একটাই তা হচ্ছে তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে সব কিছু চলে গেলে জাতীয় ৪ নেতা জাতীয় বীরের মর্যাদা নিয়ে জেল থেকে মুক্ত হবে, বঙ্গবন্ধুর শূন্যস্থান পূরণ করতে হাল ধরবেন। সেই ভয় থেকেই ২ নভেম্বর দিবাগত রাতে, ৩ নভেম্বর প্রত্যুষে খুনিচক্র বঙ্গভবন থেকে খন্দকার মুশতাকের টেলিফোনে আদেশ পেয়ে রাষ্ট্রীয় সাজোয়াযান ব্যাবহার করে,পাগলা ঘন্টি বাজিয়ে,বিউগলে সুর তোলে জেলখানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, চারনেতার সহ যোদ্ধাদের আলাদাকক্ষে সরিয়ে নির্মম,নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি জাতিয় চার নেতাকে। বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারেনি ২/৩রা নভেম্বর মধ্যরাতে ও প্রত্যুষ্যে কি ঘটেছিল রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে। ঘাতকচক্র খন্দকার মুশতাককে আর ক্ষমতায় ধরে রাখতে পারেনি। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ক্ষমতার লড়াইয়ে পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান পালটা অভ্যুত্থান ঘটতে থাকে।একপয্যায়, খন্দকার মুশতাক রাষ্ট্রপতি পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। নানা কলাকৌশলের আশ্রয় নিয়ে শেষাবদি ক্ষমতার শীর্ষে আসেন আসল নাটের গুরু সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট,পাকি দালাল মুক্তিযোদ্ধা জিয়া। জাসদ এবং বিপ্লবী নানা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর অনেকেই ৭৫ এর ঘটনা চক্রে যুক্ত হলেও শেষ পরিণতি এদের কারোই সুখকর হয়নি। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই হয় অভ্যুত্থানে মারা গেছেন নয়তো ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জেলে গেছেন।মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে তত দিনে জাসদের বিপ্লবি চেতনার। কেননা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট এর অপ লাইনের রাজনৈতিক শক্তি ছিল তখনকার জাসদ। সূচিত হত্যাকাণ্ড, ক্ষমতার পরিবর্তন সবই ছিল একটি বিশেষ নেপথ্যের শক্তির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। যার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে হত্যা করা, এর আদর্শকে ধ্বংস করা।বাংলাদেশ বিরোধি আমেরীকা সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহক পাকিস্তানের প্রতাত্মার দ্বারা দেশ শাষন।রাষ্ট্রদ্রোহি, মুক্তিযুদ্ধবিরুদি শক্তিকে ক্ষমতা, রাষ্ট্র, রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতিসহ সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস জেলে চার নেতা হত্যার মাত্র তিন দিনের মাথায় ৮২ দিনের খল রাষ্ট্রনায়ক মোশতাকের পতন ঘটে।ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে জায়গা হয় কারান্তরালে। কিন্তু তার অপকর্মের সুবিধাভোগী জিয়াউর রহমান অবৈধ ভাবে নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ করে মোশতাকের ক্ষমতা দখলের বিচার না করে ১৯৭৮ সালে তাকে মুক্ত করে দেন। বিচারের পথ বন্ধে জারী করেন কুখ্যাত ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ।বিচারমুক্ত জেল মুক্ত করলেও জনগণের ঘৃণা আর ধিক্কার থেকে তাকে রক্ষা করতে পারেননি জিয়াউর রহমান। ফলে তাকে আমরণ স্বেচ্ছায়বন্দি জীবনযাপন করতে হয়েছে নিজ গৃহের কারান্তরালে। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির তল্পিবাহক মোশতাক চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তানে রূপান্তরিত করতে।তৎক্ষনাৎ যদিও তাঁর পরিনতি সেই পয্যন্ত তাঁকে যেতে দেয়নি,ধারবাহিকতা বিচ্যুত হয়নি ষড়যন্ত্রকারিদের।এখন ও সেই ধারাবাহিকতার বহিপ্রকাশ ঘটছে প্রতিনিয়ত।জাতির জনকের কন্যাকে হত্যা প্রচেষ্টা কয়েকবারই সংঘটিত হয়েছে।নেতৃত্ব শুন্য করতে প্রগতির চাকা পিছনে নিতে ধারাবাহিক ভাবে নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে।স্বাধীনচেতা, প্রগতিমনা, মুক্তমনা-- লেখক, সাংবাদিক সাহিত্যিকদের উপর প্রতিনিয়ত চলছে হামলা।অকাতরে বলি হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি।ধর্মের নামে কখন ও গনতন্ত্রের নামে চলছে বোমা হামলা, পেট্রোল বোমার আঘাতে পুড়িয়ে জ্যান্ত মানুষকে কয়লায় রুপান্তরের অহর্নিশ প্রচেষ্টা। এমতর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে অনুসরন করার দরকার ছিল ৭২ইং সালের বিশ্বের সেরা লিখিত সংবিধান।যে সংবিধান জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে রচিত হয়েছিল বাঙ্গালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখার অঙ্গিকারের নিমিত্তে।জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তব প্রতিফলনের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়ন,জাতিয় চার নেতার আত্মদানের ঋনের ভার কমানোর উপায়। "জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা"

স্বাধিনতার অর্থ উলঙ্গপনা নয়,অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন,সম্মান প্রদর্শন।