সভ্য ইউরুপ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল মুসলিম প্রধান দেশ সমুহকে তাঁরা কত ধৈয্যশীল জাতি-- ~~~~~~~~~~~~~~~`~~~~`~~~`~~~~~~ ইউরুপের সভ্যতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সারা পৃথিবিকে তাঁরা যে আসলেই সভ্য জাতি।বিশেষ করে এশিয়া,আফ্রিকার মানব সমাজকে।সভ্য ইউরুপ -সভ্যের মতই তাঁদের ভুমিকা রেখেছে।এত বড় হৃদয়বিদারক ঘটনা হওয়ার পরও তাঁদের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সংযত আচরন,পরমত সহিঞ্চুতা,ধৈয্যের চরম পরাকাষ্টা দেখিয়ে সারা বিশ্ববাসিকে অবাক করে দিয়েছে।বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার দেশ সমুহ যেখানে দিল্লিতে আগুন দিলে ঢাকায় তার তাপ অনুভব করা যায়, সে সমস্ত দেশ সমুহের সামনে যুগান্তরের শিক্ষনীয় এক উদাহরন সৃষ্টি করে দিয়ে গেল প্যারির হামলা। ফ্রান্সের আইএস জঙ্গিদের হামলায় প্রায় একশত ষাট জন মানুষ প্রান হারিয়েছে।সারা প্যারিস জুড়ে জরুরী অবস্থা ঘোষনা করা হয়েছে।দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মত দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি হল।সরকার জনগনকে ঘর থেকে বাহির না হতে বারন করেছিল।সরকারের বাধা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ প্যারির উন্মুক্ত চত্বরে সমবেত হয়েছেন।তাঁরা নিহত ও আহতদের প্রতি তাদের সশ্রদ্ধ আবেগ এবং ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছে।গুরুত্ব পপূর্ন স্থাপনা সমুহে আলো ননা জজ্বালিয়ে অন্ধকারের কীটদের পপ্রতি তাদের ঘৃনা পপ্রকাশ ককরেছে।আইফেল টাওয়ারে আলো জ্বলেনি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কোনো প্রজ্বলন হয়নি, মানুষ সবকিছুকে দেখেছে বর্বরতা,নৃসশতা অসভ্য কিছু মানুষের অপকর্ম হিসেবে।সেই বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ব সভ্যতা ও মানবতার চিন্তাকে সজাগ করার প্রানান্তকর চেষ্টা করেছে।তাঁদের মনের আকুতি প্রকাশ করেছে খোলা ময়দানে সমবেত হয়ে, ঘরে বসে থেকে নয়। স্বত:স্ফুর্ত জনতার সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ফরাসি দেশের জনগণ, শিশু, কিশোর, নারী, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের বিবেকবান মানুষ। পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুখী, নিরুপদ্রব সমাজে ননিশ্চিন্ত মমনে বসবাস ককরতে পারে।কোন দানবকূলের কারনেএমন ক্ষতি তাঁদের জীবনে ফিরে না আসে।ফরাসি সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো,দেশেরাপামর সব নাগরিক লৌহ কঠিন অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।কোন ধর্মীয় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভিশাপ তাঁদের জনপদে যেন হামলে পড়তে না পারে। সকল কুস্মুন্ডতা থেকে ফ্রান্সকে মুক্ত করতে এক ও অভিন্ন চেতনায় এক সারিতে সারা ফ্রান্স । আমাদের দেশের মতো ককোন রাজ ননৈতিক দল বা ব্যাক্তি সরকার ও পুলিশ বাহিনী ব্যর্থ বলে বিবৃতি দদেয়নি।একে অঅপরকে দোষ দিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেনি। গোটা জনমতকে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে করেনি। স্বশরীরে আমাদের দেশের মত মিডিয়ায় গিয়ে টকশোর ননামেকেউ কেউ নানা উদাহরণ টেনে পান্ডিত্য জাহির করার চেষ্টাও করেনি।দায় কাঁধে নিয়ে সরকার পদত্যাগের ঘোষণা কেন দেয়নি এমন প্রশ্ন কোন তরফ থেকে উত্থাপিত হয়নি। একে অপরকে অভিযুক্ত করে কিংবা নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে ঝগড়াঝাটি শুরু করে দেয়নি। ফরাসি সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেই বক্তব্য দিয়েছে। ফরাসি জনগণও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান সরকারকে ও বিশ্ব বাসিকে জানিয়ে দিয়েছেন,স্বতস্ফুর্ত কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে।না কোন গাড়ি ভাংচুর করেনি জনতা,ব্যাংক বীমাতেও আগুন দেয়নি,স্বর্ন দোকান ও লুট করেনি।জঙ্গিবাদ দমনের জন্য বর্তমান গৃহিত ব্যাবস্থাকে আর জোরদার করার কথাই বলছে। জঙ্গিদের হাতে আর যেন কোন মানুষের জীবন বিপন্ন না হয় সে দাবিই জানিয়েছেন সমবেত জনতা।সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বাইরে অন্য কারো বিরুদ্ধে কোনো উচ্চারণ নেই, ঘৃণার পরিধির সামান্যতম বিস্তৃতিও ঘটেনি। প্যারিতে জঙ্গিবাদী আইএসের হামলার বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফ‚র্ত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ইংল্যান্ড, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপের দেশে দেশে, এশিয়ারও বহু দেশে। দেশসমূহের সরকার এবং জনগণ এই নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কোনো নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালায়নি, এমনকি সংখ্যায় নগন্য মুসলমানদের অভিযুক্ত করে কোনো বক্তৃতা বা বিবৃতি পয্যন্ত দেয়নি। ব্যাক্তি পয্যায়ের আলোচনায়ও ইসলামের বিরুদ্ধে কেহই টুশব্দটি পয্যন্ত উচ্ছারন করেছে এমন কোন খবর এই পয্যন্ত পাওয়া যায়নি। সন্ত্রাসীরা এই হামলায় অংশ নিয়ে ইসলামের নাম ব্যবহার করেছে।ফরাসি জনগন ঠিকই বুঝেন জঙ্গিপনার অধিকার তাদের ইসলাম দেয়নি, সাধারণ মুসলমানরাও দেয়নি। ইসলাম বিশ্বের সর্বপেক্ষা শান্তি ও মানবতার ধর্ম।গুটিকতক বিপদ গামি দোযগের কীটের কারনে তাঁরা গোটা ধর্ম বা মুসলিম সমাজকে দোশি সাব্যস্ত করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ফন্দিও করেনি। অথচ এসব জঙ্গিগোষ্টিপবিত্র ধর্ম ইসলামের কত বড় ক্ষতি সাধন করছে তা তারা কোনোভাবেই বুঝার চেষ্টা করে না। তাদের যারা সমর্থক তারাও বোঝে না, মুসলমানদের কত ক্ষতি তারা করছে। তারা স্বীকার পয্যন্ত করেনা,ইহা অত্যান্ত ক্ষতিকর পদক্ষেপ আমাদের ধর্মের বিকাশের জন্য। ইসলাম অর্থই হচ্ছে শান্তি। সেই শান্তির ধর্মকে কতিপয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী ইসলামি রাষ্ট্র, খিলাফত ব্যবস্থা,কোরানি শাষন,হেফাজতে ইসলাম,জামায়াতে ইসলাম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার নামে যেভাবে উগ্র সন্ত্রাসের পথ বেচে নিয়েছে, তাতে লাভ হওয়ার সম্ভাবনাতো নেই বরঞ্চ বিশ্ব দরবারে মসুলমান মানে সন্ত্রাসি,ইসলাম মানে জঙী এই ধারনাই বদ্ধমুল করার আপ্রান চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিজের দেশেতো বটেই বাইরের দেশগুলোতে রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞ করতে সামান্যতম দ্বিধাগ্রস্থ্যতা দেখা যাচ্ছেনা।ফলশ্রুতিতে মুসলমানদের সম্পর্কে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মারাত্মক বিরূপ ধারণা তৈরি হতে শুরু করেছে। এমনিতেই ইউরোপের দেশগুলোতে এখন কয়েক কোটি মুসলমান বসাবস করছে। সম্প্রতি সিরিয়া থেকে কয়েক লাখ মানুষ ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। আরো বিপুল সংখ্যক মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়ার অপেক্ষায় আছে। বলাবলি শুরু হয়ে গেছে, ফ্রান্সের হামলায় যারা অংশ নিয়েছে তাদের কেউ কেউ শরণার্থীদের ভেতরেই লুকিয়ে ছিল বহুদিন পয্যন্ত। অথচ সিরিয়ায় আইএসআই মানবতার বিরুদ্ধে যে বিপর্যয় ঘটিয়েছে তার নজির খুঁজে পাওয়া কঠিন,তাঁদের অত্যাচার অনাচারে লাখ লাখ ইসলাম ধর্মের অনুসারি প্রাণে বাঁচার জন্য পাড়ি জমিয়েছে ইউরোপে। মধ্যপ্রাচ্যের তথাকথিত ইসলামি দুনিয়ায় কোথাও তাদের ঠাঁই হয়নি।কোটি কোটি বর্গ কিলোমিটার খালি থাকার পরও মুসলিম-মুসলিম ভাইদের সামান্য বিপদে সাড়া দেয়নি।সেখানে ইউরুপের উদার গনতান্ত্রিক দেশ গুলির দরজা সর্বদা খুলা রেখেছে।পথের বাধা না থাকলে,আরো বহু শরনার্থীর আবাস সেখানে হতে পারতো। মধ্যপ্রাচ্যের আরো অনেক দেশের, এশিয়ার দেশ সমুহের অনেক কর্মজীবির ঠাঁই ইউরুপে নিয়েছে,যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ধর্মের দিক থেকে ইসলামের অনুসারি।বৈধ পথে ছাড়াও অবৈধ পথে কর্মজীবী মানুষ শরণার্থী স্রোতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। এ ধরনের বাস্তবতায় যেখানে কয়েক কোটি মুসলিম মানুষ ইউরোপের দেশগুলোতে বসবাস করছে, জীবন-জীবিকা, পরিবার পরিজন নিয়ে শুখে শান্তিতে আছেন তখন আইএসআইয়ের নামে কতিপয় ইসলামি জঙ্গিএ ধরনের ভাগ্যবিনাশি হামলা, নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করার জন্য সন্ত্রাসী আক্রমণ করা , আরো বড় ধরনের হামলা ও প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেয়া কতটুকু যৌক্তিক তাহা মুসলিম বিশ্ব গভীরভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে। ইউরোপে বসবাসকারী সংখ্যায়লুগু মুসলমানদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে ঠেলে দিল ধর্মের নামে উগ্রতা।প্যারিসে সংঘটিত হামলা ও হত্যা মনে হচ্ছে গোটা বিশ্ব সভ্য সমাজকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে, মানব সভ্যতাকেই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আইএসআই নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠার পেছনে ইজরাইলের মোসাদ আমেরিকার সিআইএ সরাসরি জড়িত।তাঁদের অর্থ অস্ত্রে বলিয়ান হয়ে ইসলামকে ধংশের চক্রান্তে শামিল হয়েছে বিশ্বের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ সমুহের তথাকথিত মৌলবাদি,পশ্চাদপদ, উগ্র গুটি কতক ধর্মধারি অধর্মের পুজারি- মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দোসর, ইহুদী বাদের তল্পিবাহক।

দুনিয়ার দেশে দেশে ধর্মের আলখেল্লা পরিহিত কিছু ধর্ম ব্যাবসায়ি পৃথিবি নামক সুন্দর গ্রহটাকে বাসের অযোগ্য করে তুলেছে।নবী করিম (স) এর ওফাৎ এর পর খলিফা হযরত আবু বক্কর (র) পর তিন খলিফাই তাঁদের হাতে মৃত্যু বরন করেন।এমন কি নবী করিম (স) এর আদরের দৌহিত্রদ্বয় ও ঠিক এই উগ্র ধর্মিয় মৌলবাদিদের হাতেই প্রান হারান।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন