মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের গৌরব--- ============================= কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেবের দুরদর্শি নেতৃত্বের গুনে প্রথম দিকে বাঙালী নেতারা মোহচ্ছন্ন থাকলেও অচিরেই তাঁদের মোহমুক্তি ঘটতে থাকে।সম্যক ভাবেই জ্ঞানে প্রবেশ ততদিনে শুরু হয়ে গেছে যে, ইংরেজ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে হাজার মেইল দুরের আর এক বিজাতীয় উপনিবেশের শাষন শোষনের নিগড়ে বাঙ্গালীরা আবদ্ধ হয়ে গেছে।এবার যাদের নিয়ন্ত্রনে শাষন শোষনের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেল জাতিতত্বের তকমায়,তাঁদের সাথে না আছে ভাষার মিল না আছে সংস্কৃতির মিল। সর্বপাকিস্থান ভিত্তিক দল মুসলিম লীগের দলীয় কাঠামো পশ্চিম পাকিস্থানীদের নিয়ন্ত্রনে ছিল,এবং সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসার কোন উপায় ও ছিলনা।সঙ্গত কারনে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ছাবি কাঠি তাঁদের হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা মোটেই ছিলনা।সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নিয়ে গেলেও পশ্চিমের নিকট ক্ষমতা থেকে যায়,কারন সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে শতকরা নব্বই ভাগ কর্মকর্তা পশ্চিম পাকিস্থান থেকেই নেয়া হত।বাঙ্গালীরা অধিকতর খাটো জাতি হওয়ার কারনে ভর্তি প্রক্রিয়ার বেষ্টনি বেদ করে প্রশিক্ষন প্রক্রিয়ায় পৌছার কোন সুযোগ পেতনা।সঙ্গত কারনে নতুন স্বাধীন হওয়া দেশটির সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাদের অংশ গ্রহনে পুর্বাঞ্চল অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বহুগুন পিছিয়ে যায়।পুর্বাঞ্চল যতই পিছিয়ে যেতে থাকে ততই শোষনের মাত্রা বাড়তে থাকে।পশ্চিমারা তাঁদের শহর সাজানোর মানষিকতায় প্রথম ১৫ বছরের মধ্যেই পাকিস্তানের তিন শহরে রাজধানী পরিবর্তন করে শহর কেন্দ্রিক বিনিয়োগের নামে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাজেট বরাদ্ধ একক ভাবে নিয়ে যায়।প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনের জন্য বর্তমানের সংসদ এলাকায় জমি আধিগ্রহন করেও কোন উন্নয়ন বরাদ্ধ ২৪বছরেও দেয়া হয়নি।অথছ কেন্দ্রীয় সকারের রাজধানী তিন শহরে পরিবর্তন করে স্বল্প সময়ের মধ্যে উক্ত শহরে অধিবেশন কক্ষ নির্মানে টাকার অভাব হয়নি।এই থেকেই বুঝা যায়, আর ২৪ বছর সময় পেলে তাঁরা পুর্ব বাংলাকে শোষনের নিগড় থেকে বের হওয়ার কোন পথ খোলা রাখতো কিনা।এমন্তর পরিবেশ তাঁরা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়,স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কোন প্রকার রাষ্ট্রীয় ঘোষনা ব্যাতিরেকে বাঙালীরা সর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় শ্রেনীতে রুপান্তরীত হয়ে যায়।বাঙ্গালী ছেলেমেয়েরা সহসাই তাঁদের বাসার চাকর বাকর হয়ে কোন রকমে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়ে যায়। গনতন্ত্রের লেশমাত্র ছিলনা।একের পর এক সামরিক জান্তার মাধ্যমে খমতার হাতবদল হতে থাকে।২৪ বছরেও একটা সংবিধান প্রনয়ন করার সুযোগ তারা দেয়নি।সামরিক পরমানের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার অভিনব পন্থায় চলে শাষন শোষন। অভিবক্ত বাংলার প্রধান মন্ত্রী এ,কে ফজলুল হক,শহিদ সরওয়ার্দিকে জোরপুর্বক দেশত্যাগে বাধ্যকরে চলতে থাকে নির্ভেজাল শোষন।বিতাড়িত জীবনেই বাংলার অবিসংবধিত নেতা সশহিদ সরওয়ার্দীর মৃত্যু হলে দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব পান শেখ মজিবুর রহমান। ততোদিনে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে পূর্ববাংলায় নিষ্পেষণের মাত্রা বাড়ায়। পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তন করে করা হয় পুর্বপাকিস্তান। অভিনব নতুন মাত্রায় বাঙালির শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির উপর আঘাত হানা হয়।সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দায়িত্ব বর্তালো তরুন নেতা শেখ মুজিবের ওপর। সর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ হতে বের হয়ে ততদিনে পালটা মুসলিম লীগ গঠন করা হয়।এই দলের নিরংকুস প্রাধান্য থাকে পুর্বাঞ্চলের বাঙালি নেতাদের।মওলানা ভাসানী আরও কতিপয় ব্যক্তির নেতৃত্বে মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা দলছুট ব্যক্তিরা গঠন করেছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। দলটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করেছিল। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাহসী ও অক্লান্ত পরিশ্রমিকর্মী পরবর্তির বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৪ সালে পুর্বাঞ্চলের সব দল একত্রে মিলে গঠন করেন যুক্ত ফ্রন্ট।তৎকালিন পুর্বপাকিস্তানের প্রবীন নেতা শেরে বাঙলা এ,কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে সবাই জোটবদ্ধ হয়ে প্রাদেশিক যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে ৫৪ ইং সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে লড়েছিলেন। নির্বাচনে বিপুল ভোটে কল্পনাতীত জয় পেয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। মুসলিম লীগের অবস্থা এমন পয্যায় নেমে এসেছিল যা পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা কল্লপনাও করে দেখেননি তাঁদের ভাগ্যে ধস নামানো পরাজয় ঘটবে। পূর্ববাংলা মুসলিম লীগের রাজনীতিকেই মুছে দিয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি কেন্দ্রীয় সামরিক বাহিনীর দখল করা রাষ্ট্রপতি। এক ঘোষনা বলে যুক্তফ্রন্ট সরকার বাতিল করে দেয় পাকিস্তানিরা। এরপর কাষ্মির ভুখন্ডের দাবীকে কেন্দ্র করদ ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে ১৭ দিনের এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তান চরমভাবে পরাজিত হলে অসম্মানজনক তাসখন্দ যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধের সময়, পূর্ববঙ্গ ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত,এক ব্যাটেলিয়ন সৈন্যও পুর্বাঞ্চল আক্রান্ত হলে সাময়িক বাধার জন্য মোতায়েন করা হয়নি।পুর্বাঞ্চলের যুবকদের হাতে বাঁশের লাঠি দিয়ে পাহারায় নিয়োজিত রেখে সকল শক্তি পশ্চিমাঞ্চলে সমবেত করেও শেষ রক্ষা হয়নি। যুদ্ধে হেরে গিয়ে অসম তাস খন্দের চুক্তি করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। দুরদর্শী তরুন আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা শেখ মুজিবর রহমান কোন বিলম্ব না করে কাঁচা এই মোক্ষম ইস্যুটিকে জনগণের সামনে নিয়ে আসেন। যুদ্ধকালে পূর্ববঙ্গ থেকে প্রতিরোধের জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়নি,বাস্তবতায় জনগনের দেখা এই বিষয়টি পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের মনের চিন্তাচেতনার সাথে হবহু মিলে যাওয়ায় লুপে নেয় বিষয়টিকে। ভারত পূর্ববঙ্গ আক্রমণের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে সর্বশক্তি নিয়োগ করে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করাই শ্রেয় মনে করে পুর্বাঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করেও আক্রমন করেনি।তাঁদের রণকৌশল যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে প্রমান করেছে সঠিক ছিল। পাকিস্তানের মসুলমানদের সামান্য হিন্দুবাহিনীর নিকট চরম পরাজয় পুর্ব পাকিস্তানের জনগন মেনে নিতে পারেননি।তেজস্বি মুসলিম বাহিনীও এতে চরম অপমান বোধ করতে থাকে।পরাজয়, অপমান বাঙালিদের ক্ষুব্ধ করে তুলে। শেখ মুজিবুর রহমান মোক্ষম ক্ষোভের এই মহুর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিটি সামনে নিয়ে আসেন। ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি। সারা বাংলার মানুষ এই কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে। ততদিনে যুদ্ধব্যায় মিটানোর কারনে পুর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশের অর্থনৈতিক বৈষম্য তখন আকাশ চুঁই ছুঁই করছিল।পুর্বাঞ্চলের দ্রব্যমুল্য পশ্চিমের চাইতে কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুনের বেশিতে ঠেকে।বৈশম্যের মাত্রাবেড়ে চলেছিল প্রতি বছর। দুরদর্শি নেতা সঙ্গে সঙ্গে দাবী উত্থাপন করে বসেন সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সংস্কারের নিমিত্তে ছয়দফা দাবী উত্থাপনের মাধ্যমে। এই দাবি আদায়ের আন্দোলনের তিব্রতা দিনের পর দিন প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠছিল প্রতিদিন প্রতিনিয়ত।আহম্মক সামরিক জান্তা রাজনৈতিক দাবিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে মামলা মোকদ্দমার ফাঁদে ফেলে, দমন পীড়নের আশ্রয় নিয়ে--মোকাবেলা করার কৌশল অবলম্বন করে।পাকিস্তানী শাসকরা প্রথমেই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা আগিরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজুও করে বঙ্গবন্ধুওকে প্রধান আসামি করে।এতে হীতে আরো বিপরীত হল।পুর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা এই মামলাকে বাঙ্গালি জাতিকে আরো নিষ্পেষিত, কণ্ঠরোধ করা, অধিকারহীন অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করে ব্যাপক হারে আন্দোলনে সম্পৃত্ত হতে থাকল। ছাত্র সমাজ এই মামলার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এক্যবদ্ধ হলো। তারা তাঁদের নিজস্ব ব্যানারে ৬ দফার আলোকে ঘোষণা করে ১১ দফা। তখন ছাত্র সমাজের উপর জনগনের আস্থা ছিল প্রশ্নাতীত।ছাড়া আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সাথে সাথে সারা বাঙলা থর থর করে কেঁপে উঠে।অসীম সাহস আর মনোবল নিয়ে জনগন সম্পৃত্ত হওয়ার কারনে একই সময়ের মধ্যে গর্জে উঠল সারা বাংলা। সামরিক শাসক আইয়ুব খানের গদি টলমল। সারা পূর্ববাংলায় গণআন্দোলন নিমীশেই ছড়িয়ে পড়ে। তার ঢেউ লাগে পশ্চিম পাকিস্তানেও। গনজোয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই রুপান্তরীত হয়ে গেল গণঅভ্যুত্থানে। সৃষ্ঠ গনঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব শাহী ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলেন। জয়বাঙলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধুর দুরদর্শি নেতৃত্বের নিকট পাকিস্তানী নেতাদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের সকল জাল ছিন্ন হতে থাকে একের পর এক।সংগঠিত হতে থাকে আন্দোলন।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন