মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়_________ ================================ বঙ্গবন্ধু মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে ৫/৭টি ইতিহাস বিখ্যাত রাজনৈতিক ভাষণের একটি। তিনি এতটাই জনপ্রিয় নেতা ছিলেন যে, সত্তরের নির্বাচনে বাংলাদেশের (পূর্ব বাংলা) শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুজিবের আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। দু’বার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও তিনি ছিলেন অবিচল, আপসহীন। সামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মুজিব এককভাবে ২৫ দিন দেশ পরিচালনা করেন। ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্য রাতের পর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুজিব ঘোষণা করেন, ‘আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ একাত্তরে ৯ মাস কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় পাকিস্তানিরা একটি কথাও নেতার মুখ থেকে বের করতে পারেনি। ঐ সময় তিনি শুধু প্রহরীদের সালাম গ্রহণ করতেন। মুজিবের দূরদর্শিতারও কোনো তুলনা হয় না। ভাবতে অবাক লাগে,বঙ্গবন্ধু জানতেন, পাকিস্তানিরা ৬ দফা মানবে না এবং না মানলে তা এক দফায় পরিণত হবে, এটা নিশ্চিত হয়েই তিনি ১৯৬৬ সালে জাতির সামনে তা পেশ করেছিলেন। মাত্র ৫ বছরের মাথায় ৬ দফা এক দফায় পরিণত হয়ে দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। শত্রুর হাতে বন্দী থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে বন্দী থাকা সত্ত্বেও বন্দী নেতা মুজিবের নামেই যুদ্ধ পরিচালিত হয়। মনীষী আবুল ফজল লিখেছেন, ‘অনুপস্থিত সেনাপতির এমন সেনাপতিত্ব সত্যই অভিনব, ইতিহাসে এমন নজির বিরল।’ কি আশ্চায্য ব্যাপার লক্ষ করেছেন কিনা জানিনা,স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৪বছর শেষ হতে আর কয়মাসই বা বাকি।যুদ্ধের নয় মাস পাকি কারাগারে ছিলেন,এই পয্যন্ত পাকিরা একটা গুজব পয্যন্ত রটাতে পারেনি,মুজিবের মধ্যে স্বাধীনতা প্রশ্নে কোন নমনীয়তা পেয়েছিল।বাংলাদেশে অবস্থানরত,বাঙ্গালির ঔরসজাত কিছু কিছু বজ্জাতেরা বলে, মুজিব নাকি স্বাধীনতা চায়নি!!! অথর্বদের এতটুকু ধারনাও নেই প্রচলিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোতে থেকে এর চেয়ে আর বেশি বা অন্য কি ভাবে স্বাধীনতার কথা বলতে পারেন প্রধান নেতা।রাজনীতিতে যদি দেশ স্বাধীন হয় হঠকারি রাজনীতির ফাঁদে পা দিয়ে আন্দোলন ব্যর্থ হলে হাজার বছরপর ও কি আর সেই আন্দোলন সংগঠিত করা যেত? পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ওয়ালী খান বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের অসহযোগ আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনকেও হার মানিয়েছে।’ পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এবং পরবর্তীকালে রাজনীতিবিদ এয়ার মার্শাল আসগর খান বলেছিলেন, ‘একাত্তরের ২৩ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে ৭টা সেনানিবাস ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা যায়নি। পাকিস্তানি মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে লিখেন, ‘অসহযোগ আন্দোলনের সময় মুজিবের শাসন পূর্ব পাকিস্তানকে গ্রাস করে।’ অর্থাৎ সেনানিবাস ছাড়া দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীই ছিল মুজিবের অনুগত। ব্রিটিশ পত্রপত্রিকায় তখন লেখা হয়, ‘মুজিবের ৩২ নম্বরের বাসভবন ব্রিটেনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পরিণত হয়েছে।’ ড:রেহমান সোবহান,যদিও তিনি আওয়ামী লীগ পছন্দ করেননা।খালেদা জিয়ার অত্যান্ত কাছের একজন বুদ্ধিজীবি,তার পরও তাঁর দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর সম্মন্ধে তিনি যে কথাটি বলেছেন তাও প্রনিধানযোগ্য বলে আমি মনে করি।""তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান নামেই প্রসিদ্ধ।তিনি যথার্থই লিখেছেন, “আমার ধারণায়, ১৯৭১ সালের পহেলা থেকে ছাব্বিশে মার্চ- এই ছাব্বিশ দিনই বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে এক স্বাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছিল। যার ফলে কখন" স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল বা কে তা ঘোষণা করেছিলেন এই প্রশ্নটি অবান্তর, অপ্রাসঙ্গিক এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করার যে প্রবণতা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনাকে গ্রাস করেছে এটা তারই আরেকটি দৃষ্টান্ত।”" মুলত: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পর জাতিয় ও আন্তজাতিক রাজনীতির সমিকরন দ্রুত পাল্টাতে থাকে।ছাত্র যুবকেরা যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করে। বাংলাদেশের বহুস্থানে রীতিমত ট্রেনিং নেয়া শুরু করে। ঐ দিকে পাকিস্তানী শাষকবর্গ পুর্ব পাকিস্তানকে তাঁদের করতলগত রাখার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নের জন্য সময়ক্ষেপন করছিল।অবশেষে ২৫শে মার্চের মধ্যরাতে তথাকথিত অপারেশন সার্চলাইটের ঘোষনা দিয়ে পাকবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর সকল শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা ইতিহাসের বিরল এক গনহত্যা।নারী শিশু,বৃদ্ধ,যুবক,ছাত্র শিক্ষক,বুদ্ধিজীবি কেহই তাঁদের বন্দুকের নিশানা থেকে রক্ষা পায়নি। নির্বিচারে যেখানে যাকে পেয়েছে সেখানেই হত্যাকরে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম,বর্বর রক্তের হোলিখেলা শুরু করে পাকিস্তানী সামরিকজান্তা বাহিনী। মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চের মধ্য রাতের পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে তৎকালিন ই,পি,আরের ওয়ারলেস ম্যাসেজে স্বাধীনতার কঠিন অভিযাত্রায় সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিয়ে ঘোষনা করেন, "বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে (পাকিস্তানি) সেনাবাহিনীর দখল থেকে প্রীয় মাতৃভূমির দখল্মুক্ত করতে সর্বাত্মক মোকাবেলা করার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করে চূড়ান্তবিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদেরকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহব্বান জানাচ্ছি।" এই ঘোষণার শুরুতেই বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত বিষয়টি সামনে আনেন সহস্র বছরের সাধনায় অর্জিত_ "আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন"। স্বাধীনতা ঘোষনা করার আগে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগ নেতাদের স্ব-স্ব এলাকায় চলে যেতে বলে নীজে ৩২ নম্বরে অবস্থান গ্রহন করেন।নেতারা বঙ্গবন্ধুকে ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যেতে অনুরুধ করলেও বঙ্গবন্ধু বলেন,ওরা যদি আমাকে না পায় আমার সারা বাংলা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে চারখার করে দিবে,তোমাদের প্রতি অনুরুধ রইলো, "যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে সেই দায়িত্ব পালন করবে।ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।" ই,পি,আরের ওয়ারলেস ম্যাসেজে দেয়া ঘোষনা তৎক্ষনাৎ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেল।বিদেশী গনমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে বঙ্গবন্ধুর ঘোষনা প্রচার করা হল।যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ার প্রচলন খুব বেশি না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা ২৬/২৭ শে মার্চে মাইকের মাধ্যমে স্ব-স্ব এলাকায় উক্ত ঘোষনা প্রচারের ব্যাবস্থা করেন। পুরো জাতি ঝাঁপিয়ে পড়লো সেই ঘোষণা শুনে হানাদার দখলদার পাকি বাহিনীকে হটাতে। বাঙালি জাতি সর্বত্র রুখে দাঁড়ায়। নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণ তীব্রতর হতে থাকে। বাঙালি জাতি জড়িয়ে পড়লো এক অসম যুদ্ধে। যে যুদ্ধ পাকিস্তানী জান্তারা তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। নিরস্ত্র ববাঙালি প্রান বিসর্জন দিতে থাকলো পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্বিচারে। রাস্তাঘাটে, রিকশায়, গাড়িতে, ঘরে, বাসা,বাড়িতে, প্রতিষ্ঠানে, স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রছাত্রী,শিক্ষকদের হোস্টেলে বাঙালি নিহত হতে লাগল অকাতরে। চারিদিকে লাশ আর লাশ। দাপন করার কোন ব্যাবস্থা সিমারের দল করেনি,শৃগাল কুকুরের টানাটানি করে লাশ খাচ্ছে।নদীতে লাশ,নর্দমায় লাশ,বাড়ীতে লাশ,হাটে ঘাটে শুধু লাশ আর লাশ।এই যেন এক আদিম যুগের মৃত্যুপুরি।শুরু হয় নারী জাতির উপর অত্যাচার। প্রকাশ্য দিবালোকে নারীর স্তন কেটে বেয়নেটের মাথায় নিয়ে উল্লাস করে ফিরতে লাগল পাকিস্তানী হানাদার সেনারা। নারী ধর্ষিত হতে থাকে গ্রাম গঞ্জে। শিশুরা বেয়নেটের ডগায় উড়তে লাগল রক্তাক্ত নিশানের মত। অস্ত্র হাতে না ধরতে শেখা বাঙালি গেরিলা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার ডাকও দিয়েছিলেন। সেই সাথে আহ্বান জানিয়েছিলেন, "যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।" বাঙালি সে ঘোষনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে শত্রুর মোকাবেলা করেছে।স্থানে স্থানে প্রতিরোধের দুর্ঘ গড়ে তুলে।কিন্তু আধুনিক সমরাস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে ছাত্র যুবক ইপিয়ার বাহিনি আস্তে আস্তে পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়। সে দিন জনতার সাথে ই,পি,আর বাঙ্গালি সেনা বাহিনীর চৌকস বিগ্রেড ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট,পুলিশ বাহিনীও যোগ দেয়।পাকিরা প্রথম আক্রমনেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন,ঢাকা ইউনিভারসিটির হল সমুহ দখল করে নেয়।রোকেয়া হলের ছাত্রীদের উপর নেমে আসে বিভীষিকার এক রজনী।অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশ পাকিস্তানী হানাদার দখল করে নিতে সক্ষম হয়। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বন্ধু ভারত মানব সভ্যতার চরম ভাবে ভুলুন্ঠিত করে আক্রমন পরিচালনা করলে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পুর্ব পাকিস্তান বেষ্টিত ১৭০০মেইল বর্ডার খুলে দেয় বাঙালিদের আশ্রয়ের জন্য।স্রোতের মত বাঙ্গালিরা ভারতে আশ্রয় নিতে থাকে।এককোটির ও অধিক মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়।ছাত্র যুবক ভাইয়েরা যার যার মত করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করে।আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনীধিরাও ভারতে গিয়ে যুদ্ধপ্রস্তুতি গ্রহন শুরু করে।মুক্তি বাহিনী গঠন,প্রবাসি সরকার গঠন সহ একান্ত প্রয়োজনীয় কর্মগুলি যথারীতি শুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মেহের পুরের আম্রবাগান বৈদ্যনাথে একত্রিত হয়ে রাষ্ট্রীয় সকল বিধিবিধান অনুসরন করে প্রবাসি মুজিব নগর সরকার গঠন করা হয়।মুক্তিযুদ্ধাদের চৌকস এক দল তরুন মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের গার্ড অব অনারের মাধ্যমে সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা আরাম্ভ হয়। মেহের পুরের বৈদ্যনাথ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মুজিব নগর। পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার হাত থেকে যে স্বাধীনতার আলোক বর্তিকা কেড়ে নিয়েছিল মীরজাফরের সহযোগিতায়,সে স্বাধীনতার আলোক বর্তিকা প্রজ্জলিত করার দৃড শফথের জন্য প্রবাসি সরকার গঠন করা হয় মেহের পুরের আর এক আম্রবাগানে।বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ি রাষ্ট্রপতি তাজউদ্দিন আহম্মেদ কে প্রধান মন্ত্রী করে সরকার গঠিত হয়।শুরু হয় আনুষ্ঠানিক শুত্রু মুক্ত করার লড়াই।প্রবাসি সরকার সারা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ১১জন সেনা কর্মকর্তাকে প্রধান করে যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করে।প্রধান সেনাপতি করা হয় বাঙ্গালি সেনা কর্মকর্তা(অব:) মেজর জেনারেল ওসমানীকে।মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক পদাধিকার বলে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তাঁর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অভ্যন্তরীন সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করে প্রবাসি সরকার বিদেশিদের সমর্থন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন, অনুষাঙ্গিক অন্যান্ন বিষয়াবলির উপর নজর দেয়।স্বল্প সময়ে যোদ্ধকৌশল গ্রহন করে শুরু হয় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর উপর সাড়াষি গেরিলা আক্রমন।মুক্তিযোদ্ধারা স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষন নিয়ে দলে দলে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গেরিলা কায়দায় আক্রমন পরিচালনা করে পাকিদের দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য কিরে দিতে সক্ষম হয়।গেরিলা আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এদেশিয় দোষরদের সহযোগিতায় গঠন করে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি ইত্যাদি নানাবীদ বাহিনী। তাঁদের এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য সর্বাজ্ঞে এগিয়ে আসে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এবং তাঁদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। যাহা পরবর্তিতে নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্র শিবির নাম ধারন করে।পুর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ,নেজামে ইসলাম,ইসলামি ডেমোক্রেটিক পার্টি সহ আরো কতিপয় ছোট ছোট দল ও গ্রুপ।এদিকে পাকি দখদার বাহিনী সারা বাংলাদেশ ব্যাপি শুরু করে রাজাকারের সহযোগিতায় তান্ডবলীলা--অগ্নিসংযোগ, লুটপার্ট, হত্যা, নারী নির্যাতন এমন কোন কিছু বাদ নেই যা তাঁরা অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেনা।সভ্যতা মুখ থুবড়ে পড়েছে সে দিন তাঁদের অত্যাচারের বিভীষিকার নিকট.,মায়ের সামনে মেয়ে,বাবার সামনে মা,ভাইয়ের সামনে বোন,স্বামীর সামনে স্ত্রীকে দর্শন করতেও তাঁদের বুক কাঁপেনি। মহান ভারতের মহিয়ষী নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী এবং ভারতের জনগন বাঙালির এই বিপদের সময়ে সর্বোচ্ছ ত্যাগ স্বীকার করে শরনার্থীদের থাকা খাওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, অস্ত্র ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতার হাত প্রাসারীত রাখতে কোনরুপ দ্বিধাবোধ করেননি। সেই দিনের সেই সাহায্য যদি ভারতের জনগন বাঙালি শরনার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের না দিতেন,তাহলে ইতিহাস হয়তোবা অন্যভাবে তাঁর গতিপথ নির্ধারন করে নিতে হত। ভারত শুধু আশ্রয় দিয়ে তাঁর কর্তব্য শেষ করেনি,মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে তাঁর দেশ সর্বচ্ছো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখে।ভারতের প্রধান মন্ত্রী বিরামহীন বিশ্বভ্রমন করে বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে বৈঠক করে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকারের স্বপক্ষে তাঁর দেশের অবস্থান তুলে ধরেন,আন্তজাতিক মহলের সাহায্য কামনা করেন।এদিকে প্রবাসি সরকারের পক্ষ থেকেও দুত পাঠিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করার ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়।এতে আন্তজাতিক ভাবে স্পষ্টতই দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়।সৌভিয়েত ইউনিয়ন সহ বেশ কিছু দেশের জনগন ও সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে,অন্য দিকে আমেরীকা চীন সহ বেশ কিছু দেশ পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে নিলর্জ্জভাবে তাঁদের সহযোগিতা করতে থাকে।উল্লেখ্য আমেরীকার জনগন সর্বতোভাবে বাংলাদেশের মুক্তিকামি মানুষের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে-- চাঁদা তুলে সাহায্য করতে থাকে।স্কুল পড়ুয়া শিশুরা তাঁদের টিফিনের টাকা বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য পাঠাবার ব্যাবস্থা করে।এমনিতর পরিস্থিতিতে মধ্য ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ পরিপুর্নতা পেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা চোরাগুপ্তা হামলায় ব্যাপক পাকি সৈন্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকে প্রতিনিয়ত:। আক্রমনের মুখে ব্যাপক সৈন্যের মৃত্যুতে পশ্চিম পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।সেন্যবাহিনীর আত্মীয়স্বজনেরা তাঁদের সন্তানদের অকালে আত্মাহতির কারন ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন শুরু করে।বিশেষ করে পাঞ্জাব ছাড়া আরো দু'টি প্রদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আস্থাশীল নেতৃবৃন্দ ও জনগন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোদ্ধে আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্ছারন শুরু করে। ইয়াহিয়া চতুর্দিকে বিপদের অশনি সংকেত শুনতে পেয়ে যুদ্ধের আশু ফলাফল পাওয়ার ফন্দিফিকিরে লিপ্ত হন। ইয়াহিয়া খাঁন এবং তাঁর পরিষদবর্গ, পরামর্শ দাতাদের তড়িৎ ফলাফল পাওয়ার অস্থিরতায় পেয়ে বসে।তাঁদের মিত্র আমেরীকা সাম্রাজ্যবাদ এবং তাঁর মিত্রদের নিকট সাহায্য কামনা করে পাক সরকারের পক্ষ হতে। এমনিতর সাহায্যের আবেদনের জন্য আমেরীকা ওৎ পেতে বসেছিলেন। কালবিলম্ব না করে বন্ধু পাকিস্তানের জনগনকে সাহায্যের জন্য সপ্তম নৌবহরকে যুদ্ধ সাজে সাজিয়ে বঙ্গোবসাগরে -বাংলাদেশের অদুরে মোতায়েন করা হয়। আমেরীকা বিশ্বের একনম্বর পরাশক্তি তাঁদের নৌবহর মোতায়েনে প্রবাসি সরকারের মধ্যে কিছুটা ভীতির সঞ্চার করে। এই দুর্বলতার মহুর্তে প্রবাসি সকারের মধ্যে আমেরীকার চর রাজনৈতিক ভাবে সংকট নিরসনের জন্য প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিনের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।মীরজাপর মোস্তাক পাকিস্তানের সাথে কনফেড়ারেশন গঠন করার প্রস্তাব দিলে বিচক্ষন প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মেদ ষড়যন্ত্রের আলামত পেয়ে ভারত সরকারের সাথে আলোচনার আয়োজন করেন।বিস্তারীত আলোচনার পর ইন্ধীরাগান্ধী শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বৈঠকস্থল ত্যাগ করেন।পরের দিনই মহান বন্ধু সৌভিয়েত ইউনিয়ন বঙ্গোবসাগরের উদ্দেশ্যে তাঁর অষ্টম নৌবহরকে যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। অষ্টম নৌবহর বাংলাদেশের অদুরে আসার আগেই সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আশংকায় আমেরীকা তাঁর যুদ্ধ জাহাজ প্রত্যাহারের ঘোষনা প্রদান করে। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

পাকিস্তানের মত একটি প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের আইনী কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বাধিনতার প্রশ্নে এর চাইতে আর কিইবা বলতে পারে স্বাধীনতাকামি জনমানুষের একজন নেতা।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যাতত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ঐতিহ্যে বিতর্ক উত্থাপনের অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করে,মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার মত দৃষ্টতা দেখিয়ে নি:সন্দেহে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এহেন গর্হিত বক্তব্য প্রদানকারী বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখতে পারেননা।মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কোন দল বা জোটের রাজনীতি করারঅধিকার নীতিগতভাবেই থাকতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সকল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে সর্বচ্ছ আদালতের রায় অনুযায়ী '৭২এর সংবিধান অবিকল বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।বাংলাদেশেরজনগন চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক,মুক্তিযুদ্ধে সাগরসম রক্ত ঢেলে সেই অঙ্গিকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাসকরে,পরাধীনতার গান শুনতে দেশ স্বাধীন করেনি বাংলার জনগন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বিরামহীন সংগ্রামের ফসল মুক্তিযুদ্ধ।সেইযুদ্ধে উপনিবেশিক পাকিস্তানের আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালীরা পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিল।সেই স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেপরাজিত শক্তির দোষর,তাঁদের প্রেতাত্বাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।জাতির জনক তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রাজাকারের কোন স্থান দিতে চায়না। তাই খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমুলক সাজার আশা পোষন করে।কোন রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁদে যেন এই মামলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাঁর গ্যারান্টিও সরকারের নিকট বাংলাদেশের জনগন চায়। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু Ruhul Amin ------------------------------ খালেদা জিয়াকে সমাবেশের অনুমতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আশাহত----04 /01 / 0016 ইং পোষ্ট -==================================প্রখ্যাত দার্শনিক,চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে কম বেশি আমরা সবাই জানি।সক্রেটিস কোন যুগে জম্মগ্রহন করে মানব সেবায় ব্রতি হয়ে আজও দেশে দেশে অনুকরনীয় অনুসরনীয় হয়ে আছেন তাও আমরা জানি।নিশ্চয়ই তখনকার সময় থেকে বর্তমানের সমাজ, রাষ্ট্রব্যাবস্থাপনা আরো শত গুন উন্নত,সমৃদ্ধ,সভ্য।সক্রেটিস ছুতোর, কামার ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে প্রশ্ন করতেন, 'তাহলে রাষ্ট্র নামক জাহাজটি বিগড়োলে কাকে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করাবো'হাসান আজিজুল হক (সক্রেটিস) পৃ : ১৬ সক্রেটিসের এ বিখ্যাত কথপোকথন কারো অজানা নয়। আদর্শবান ন্যায়নীতিভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করবার জন্য সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে দেয়া হয়েছিল(বিষ), তারপরও তিনি আইনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন- এটাও ছিল তার নির্ভীক বিদ্রোহ। তাকে বাঁচবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আইনঅবজ্ঞা করেননি, আইনে যদি তার মৃত্যুদন্ড হয় তবে তিনি অবশ্যই তা মানতে রাজি। এখানেও তার সমস্ত জীবনকর্মের অনেক গভীর দর্শন কাজ করেছে। তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল একথা তিনি ও এথেন্সবাসী জানতেন। কিন্তু যে আইনে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো- তিনি সে আইনকে শ্রদ্ধা জানালেন এ অর্থে মানুষকে আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বললেন। সেই আইন কারা তৈরি করছে তা তিনি জানতেন তাতে তো আর আইন নামক বিষয়টিকে জীবন থেকে বিতাড়িত করা যায় না।"পবিত্র কোরানে পাকে ও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধর্মী কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ও সরকার সমুহের আইন মেনে ধর্ম কর্ম করার।এই রুপ রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় শুক্রবারের খতবায় বিশেষ আয়াৎ সংযুক্ত আছে এবং নিয়মিত নামাজের সাথে আর ও কয় রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দেয়া আছে।পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে,গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেনীর মানুষ রাষ্ট্রীয় আইন রীতি নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্ব উচ্চ আদালতের রায়কে ও অমান্য করে হরতাল অবরোধ,প্রকাশ্য আদালতের সমালোচনা করতে।শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামেপ্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রীভর্তি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানবকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা এই সমস্ত আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন,এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন যে আদালতের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেয়া যায়,বক্তব্য দেয়া যায়,তাঁরা কখনই কোন অপরাধীর বিচার কায্য সম্পাদন করেছেন তদ্রুপ কোন উদাহরন নেই। যেমন আমি প্রথমেই বলতে চাই ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছেন রাতের অন্ধকারে।বঙ্গবন্ধুর অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? পৃথীবিপৃষ্টের সব চাইতে নিরাপদ স্থান জেলখানা।সেখানে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাহল,তাঁরা বন্দি ছিলেন, তারপর ও তাঁদের অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকেতুলে নিয়ে জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হল, তাঁদের অপরাধ কি বিচার করে মিমাংসা করা যেতনা? খালেদ মোশারফ., কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য মুক্তি যুদ্ধা সেনা অফিসারকে মেজর জিয়ার নির্দেশে নির্মম নির্দয় ভাবে হত্যা করা হল, অনেককে গুলী করার পর প্রান পাখী উড়াল দেয়ার আগেই জ্যান্ত মাটি চাপা দেয়া হল, তাঁদের বিচার কি প্রচলিত সেনা আইনে করা যেতনা? অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা,আওয়ামী লীগের নেতা,মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারি,ব্লগার,প্রকাশক,লেখক সাহিত্যিক,সাংবাদিক হত্যা করা হল,তাঁদের অপরাধ কি আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতনা?আন্দোলনের নামে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যা করা,সম্পদ নষ্ট করা,লুটপাট করা কি মানবতা বিরুধী অপরাধের আওতায় পড়েনা?মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হতে পারে,যুদ্ধাবস্থা ব্যাতিরেকে ঘোষনা দিয়ে তদ্রুপ কর্মে জড়িতদের এবং হুকুমদাতার বিচার কেন হবেনা? নগদ অপরাধের ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা কি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয়? নাগরীকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁরা কি বিচার পাওয়ার সাংবিধানীক অধিকারের মধ্যে পড়েনা?সেই যুগের সক্রেটিস যদি নীজের উপর আনীত মিথ্যা অভিযোগ জেনে শুনে মেনে নিতে পারেন,সভ্যতার চরম শীখরে দাঁড়িয়ে যারা এই যুগে আইনকে, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্য আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছেন,সম্পদের হানী ঘটিয়েছেন তাঁরা কি সক্রেটিস যুগের আগের অধিবাসি মনে করেন নীজেদের? তাঁরা নীজেরা নিজেদের মনে করুন কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে কোন যুগে ফিরিয়ে নিতে চান?তাঁদের যদি এতই অসহ্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ কিছু আদর্শের প্রতিপালনের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৩০লক্ষ শহিদের আত্মদান,পৌনে চারলাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস- তবে জনগনকে সংঘটিত করে আর একটি গনবিপ্লব ঘটিয়ে তাঁদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষ বাধাতো দিচ্ছেনা। যাদের নেতৃত্বে, যাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল, তাঁরাতো ক্ষমতায় আছে,তাঁদের কেন জোর পুর্বক,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খমতা থেকে নামাতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত করতে দেয়া হবে।এই সেই দিন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যিনি বিতর্ক উত্থাপনের বৃথা চেষ্টা করে জনরোষের আওতার মধ্যে এখনও রয়েছেন,তাঁর সৌখিন বাসভবন পাহারায় আপনার সরকার অতিরীক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে,তিনি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করার প্রসাশনিক অনুমতি পায়। বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্বের একটি দেশের উদাহরন কি কেউ দিতে পারবেন,স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে?একটি দেশকি কেউ দেখাতে পারবে যে,সেই দেশের কোনমীমাংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত কোন সত্যকে ৩০/৪০ বছর পর আবার জনসমক্ষে উত্থাপন করে লক্ষ লক্ষ শহিদ পরিবারের অন্তরের আগুনে"ঘি "ঢেলে দেয়ার চেষ্টা, কোন প্রতিষ্ঠিত দল বা তাঁর নেতা করেছেন? কেন এই পয্যন্ত সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে উলটো সমাবেশ করে তাঁর মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হল??তাঁরা নীজেদের এত ক্ষমতাবান মনে করেন কিভাবে? তাঁরা কি করে আবার জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করার অধিকার পায়?কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েও এখন পয্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন করছেন না? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনার আশ্বাস বাংলার মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে।সুতারাং জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন কল্পে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহনকরবেন, জনগনের এই আস্থা বিশ্বাস এখন ও অটুট রয়েছে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,শাপলা চত্বরের সেই দিনের ষড় যন্ত্র মোতাবেক যদি খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে আসতেন,পরিকল্পনাঅনুযায়ী সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েআপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো,আপনাকে কি জীবিত বাঁচতে দেয়া হত? আপনার পরিবারের কাওন সদস্যকে বাঁচতে দিত?আওয়ামী লীগের থানা উপজেলা পয্যায়ের কোন নেতা কি বাঁচতে দিত? তাঁরা কি সে দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম বিদ্বেষী সরকার উৎখাত করে ধর্মধারি সরকার কায়েমের রাজনৈতিক শ্লোগানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক জননন্দিত এইসংগঠনটিকেও জ্যান্ত কবর দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল না?আমি আজ আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন চরমপন্থী নেতার অবিকল নকল করা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার--,গনতান্ত্রিকদেশে,গনতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে, গনতান্ত্রীক সংগঠনের,গনতন্ত্রের পুজারি মনে করা কোন নেতা, রাজপথে আন্দোলন না করে, সীমাবদ্ধ কক্ষে ৪১দিন অবস্থান করে, ৪২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে,পরবর্তিতে বিচারের সম্মুখ্যিন না হয়ে নিয়মাতান্ত্রীক আন্দোলনের সুযোগ কোন দেশের, কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে, এমন উদাহরন কি কেউ দিতে পারবে?? ষড় যন্ত্রের জাল কোথায় বিস্তৃত ছিল তাঁর প্রমান সেই নেত্রী নীজেই তাঁর উষ্মায় প্রকাশ করে দম্ভস্বরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে বলে ছিল"সেনাবাহিনী বেঈমান"!!!এর পরও আপনার সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনায়ন না করে প্রকাশ্য সভার অনুমতি দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলির মনে আগাত দেয়া হয়েছে আমি মনে করি। গত পৌর নির্বাচনে রায় দিয়েছে তাঁর বিচার করার,তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থই হচ্ছে জনগনের ক্ষোভ তাঁর উপর থেকে এখনও কমেনি,বরঞ্চ কয়েক গুন বেড়ে জনরোষের পয্যায় পৌছে গেছে।আপনার সরকারের তাঁকে দেয়া বাড়তিনিরাপত্তাই তা প্রমান করে।সুতারাং দেশ ও জাতি এই রাজনৈতিক লাশের ভার বইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।দেশের এবং জাতির প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত শিক্ষিত, বিজ্ঞান মনস্ক,প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করার মত গুনাবলি সমৃদ্ধ নেতার। কোন অবস্থায় সক্রেটিসের আগের যুগে জাতি ফেরৎ যেতে চায়না।পরিশেষে বলতে চাই,আর কোন সংগাত নয়,এবার চাই সমৃদ্ধি।আর নয় জঙ্গিপনা,এবার চাই ধর্মনিরপেক্ষতা।আর নয় সাম্প্রদায়ীকতা,এবার চাই অসম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।আর নয় পাকি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা,এবার চাই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন। জয় আমাদের হবেই হবে, অশুভ অপশক্তির পরাজয় অবশ্যাম্ভাবি। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা