মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের গৌরব ====================================== অখন্ড পাকিস্তান থেকে বিছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অনেকগুলি কারনের মধ্যে প্রধান কারন তিনটি (১)অর্থনৈতিক বৈশম্য (২)সাম্প্রদায়িকতা (৩)কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পার্থক্য।কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ক্যারিস্মেটিক নেতৃত্বে তৎকালিন পুর্ববাংলা দ্বিজাতি তত্বের নিগড়ে বাধা পড়ে যদিও দুই হাজার মেইল দুরত্বের ভিন্ন জাতগোষ্টির সংগে জোট বদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার অদম্য আখাংকার বাস্তবায়ন করেছিল, সেই আশা আখাংকায় ভাটার টান পড়তে খুব বেশি দেরী হয়নি।পশ্চিম পাকিস্তানীরা পুর্ব পাকিস্তানকে শোষন শাষন করার জন্য প্রথমেই পুর্ব বাংলার ভাষা কৃষ্টি পরিবর্তন করার পদক্ষেপ নিলে দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈরিতার জম্ম নেয়।ভাষা পরিবর্তন এবং বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য পুর্ব পাকিস্তানে যে আন্দোলন গড়ে উঠে তাহাই পয্যায়ক্রমে স্বাধীনতার দিকে দাবিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বসস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধের রুপ ধারন করে।পুর্ব পাকিস্তানের বাঙালী মসুলমানদের ভাষায় হিন্দুত্বের গন্ধ আছে মর্মে অভিযোগের ভিত্তিতে ভাষা পরিবর্তনের আজগুবি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগে বাঙ্গালিরা মর্মে মর্মে অনুভব করে পশ্চিমের সাথে পুর্বের মিলন কোনকালেই সম্ভব হবেনা।পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম অধ্যায়ে যাহা অনুভব করেছিলেন বাঙ্গালিরা ২৪ বছরে তাহাই সর্বক্ষেত্রে পরিস্ফুটিত হয়ে বিশালকার পাহাড়ের আকার ধারন করায় '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অনিবায্যতার লক্ষন ফুটে উঠে।বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রুপ দানের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে বাঙালিদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধের অংশের রাজনৈতিক উপস্থিতিও লক্ষনীয় ছিল। বর্তমান জামায়াতে ইসলামী,মুসলিম লীগ, নেজামি ইসলামী,ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি সহ কতিপয় দল ও ব্যাক্তি পাকিস্তানিদের পক্ষাবলবন করে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা করতে থাকে।'৬৯ এর গনুভ্যুত্থানের পর '৭০এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিশাল সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়ে একক নেতৃত্বদানকারি দল ও ব্যাক্তি মুজিবের উত্থান ঘটলে স্বাধীনতার চুড়ান্ত আকার ধারন করতে আর বেশি সময় নেয়নি।নির্বাচিত এককদল ও ব্যাক্তি শেখ মজিবকে ক্ষমতা গ্রহন করার সুযোগ না দিয়ে জোর পুর্বক অস্ত্রের ভাষায় বাঙ্গালিদের দমন করে শোষন শাষন অব্যাহত রাখার অদম্য আখাংকায় '৭১এর ২৫মার্চের কালোরাতে বাঙ্গালিদের উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাপিয়ে পড়ে।নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে, শারা ঢাকা শহরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিমিশে ধ্বংসস্তুপের বিভিষিকাময় এক অন্ধকার যুগের প্রবর্তন করার চেষ্টা করে।শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের নির্দেশ অনুযায়ী স্থানে স্থানে প্রতিরোধ।সেই প্রতিরোধ যুদ্ধই রুপান্তরীত হয় মহান স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের সসস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিকল্প শক্তি পুর্ব পাকিস্তান থেকেই সৃষ্টি হয়।যারা ৪৭-৭০ইং ২৪ বছর পয্যন্ত বাঙালির প্রত্যেক আন্দোলন সংগ্রামে বাধা দিয়ে পাকিদের স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল তারাই মুক্তি যুদ্ধে গঠন করে পাক সেনাদের সহযোগিতা করার জন্যে রাজাকার, দালাল, আলবদর, আলশামস, মুজাহিদ বাহিনী। জামায়াতে ইসলামী তখন এতে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল।সম্মিলিত বাহিনী ইসলাম রক্ষা করার নামে শুরু করে তান্ডব লীলা।হত্যা,নারী নির্যাতন,আগুন, লুটতরাজ। এমন কোন কিছু বাদ রাখেনি যা মানবতার ইতিহাসে আগে কখনই কোন জাতি দেখেছে বা এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়েছে। একুশ শতকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাসে পেছনে ফিরে তাকালে সে সব নৃশংসতার দৃশ্য ভেসে উঠে মনের আঙ্গিনায়। আজ চুয়াল্লিশ বছর পেরিয়েও সেই নৃশংসতার ইতিহাস, বর্বতার দৃশ্য, হত্যাযজ্ঞের বিভিষিকা বারবার চোখের সামনে স্বপ্নের ঘোরের মতই ভেসে উঠছে।তাইতো দেখা যায় আজকের নতুন প্রজন্মও একাত্তরের বর্বরতার জন্য দায়ীদের কোন ভাবেই ক্ষমা করতে রাজি নয়। তারা মনে করে ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মদান ও তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনদেশে পরাজিত শক্তির অপতৎপরতা বন্ধ করা স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্বকে নিরাপদ রাখার স্বার্থেই প্রয়োজন ।মহান স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতির জীবনে এক মহান ত্যাগ,নির্যাতনে নিস্পেষিত হওয়ার পর বেঁচে যাওয়ার আনন্দ,যুদ্ধে জেতার অহংকার,বাঙ্গালির স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের এক গৌরবময় দিন। বহু ত্যাগ তিতিক্ষা এবং নয় মাস রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধে অবতির্ন হয়ে স্বসস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালির স্বাধীন,সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম,অসিম সাহষ,বাঙ্গালির প্রতি অকৃত্তিম ভালবাসা,তেজদিপ্ত নেতৃত্ব,জেল জুলুম হুলিয়ার অপরনাম আমাদের রক্তেভেজা আজকের এই স্বাধীনতা।বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার আপমর জনগন নারী পুরুষ যুবক যুবতি, কৃষান কৃষানি তথা সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা লাল সুর্য্য। প্রত্যেক দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন একটি গৌরবময় ঘটনা। পৃথিবীতে কম সংখ্যক জাতি আছে, যারা রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এদিক থেকে একটি ব্যতিক্রমী দেশ। এই দেশটি মহান মুক্তিযুদ্ধ এ সাগরসম রক্ত অগনিত মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।স্বাধীনতা সম্পর্কে বাঙালি জাতি যতো ত্যাগ বিসর্জন দিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করেছে, ততোটা অন্য কোন জাতি পারেনি। "স্বাধীনতার মন্ত্র আত্মজ্জল ধারণাটি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ যেভাবে আমাদের মননে এঁকে দিয়েছেন, আর কোনও দেশের কবি মনিষীরা সেভাবে দিতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথের মতে_ "স্বাধীনতা বাহিরের বস্তু নহে। মনের ও আত্মার স্বাধীনতাই প্রকৃত স্বাধীনতা। স্বাধীনতাকে জীবনের আদর্শ হিসেবে যে গ্রহণ করিতে শিখিয়েছে এবং অপরের প্রতি উহা সম্প্রসারিত করিতে যে কুণ্ঠিত নয়, সেই প্রকৃত স্বাধীনতার উপাসক।... স্বাধীনতা সম্বন্ধে অপরের প্রতি যাহারা একাত্মতা প্রকাশে অক্ষমতা প্রকাশে অভ্যস্ত,অপরের প্রতি অবিশ্বাস এবং সন্দেহ, স্বাধীনতার ওপর তাহার কিছুমাত্র নৈতিক দাবি থাকে না, সে পরাধীনই রহিয়া যায়। আমি তাই আমার দেশবাসীকে একথা জিজ্ঞাসা করিতে চাই যে, যে স্বাধীনতার ওপর তাহাদের আখাংকা তাহা কি বাহিরের কোনও বস্তু বা অবস্থা বিশেষের ওপর নির্ভরশীল? তাহারা কি তাহাদের সমাজের ক্ষেত্রে শত রকমের অন্যায় ও অসঙ্গত বাধা হইতে বিমুক্ত এতটুকু স্থান ছাড়িয়া দিতে সম্মত আছেন, যাহার ভিতর তাহাদের সন্তান সন্ততি মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ মর্যাদায় দিন দিন বড় হইয়া উঠিতে পারে?" 'স্বাধীনতার মূল্য' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ মানবতা বোধকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। একাত্তর সালে রবি ঠাকুরের সেই মানবতারই জয় হয়েছিল। আর পরাজয় ঘটেছিল দানবদের।" কোন দেশেই মুক্তিযুদ্ধ বারবার আসে, তা কিন্তু নয়। সেই মুক্তিযুদ্ধে যারা যোগদান করেন এবং গর্বের শিখরে উপনীত হন, তাদের কোনো তুলনা হয়না,তাঁদের ঋন পরিশোধ যোগ্য নয়। কারন জীবনকে সে তুচ্ছ করে দেশকে দখলদারমুক্ত করার জন্য সে ঝাপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে,এখানে তাঁর কোন ব্যাক্তিগত লাভালাভের প্রশ্ন ছিলনা,লাভ পাওয়ার কোন রাস্তাও ছিলনা।একান্ত দেশের স্বার্থে অস্ত্রহাতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে দেশ মাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করেছে।যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু অনিবায্য ছিল,হেরে গেলেও মৃত্যু তাঁর নিশ্চিতই ছিল।সে কোন কিছু পরোয়া করে যুদ্ধে যায়নি,গিয়েছে একান্ত মনের টানে।তাই সর্বযুগে সেই অকোতভয় সৈনীক দেশ ও দশের গৌরবের শিখরেই তাঁর অবস্থান থাকে।হয়তো কেউ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, নয়তো কেউ গোপন পোস্টার লিখে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। কোনো দেশেই সেই যুদ্ধ পুনঃপুনঃ আসে না। তেমন যুদ্ধে তখনকার তরুণ তরুনি, ছাত্র ছাত্রী,সর্বস্তরের মানুষ যোগ দিয়েছিল। আমার আত্মীয়স্বজনদের বিরাট অংশই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে,আমি বা আমার সমবয়সি বন্ধুরা নিতান্তই ছোট ছিলাম বিদায় পারিনি।তবে বুঝার এবং জানার বয়স হয়েছিল। ভাগ্য হয়তো আমার প্রতি সুপ্রসন্ন ছিলনা তাই যেতে পারিনি।আর মাত্র চার পাঁছ বছর পর যদি সেই মহান কর্মটি অনুষ্ঠিত হত হয়তো আমিও গর্বিত এক মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সমাজে বিচরন করতাম।দেশের মহতিক্ষনের অনুপস্থিতি ক্ষনে ক্ষনে নীজকে বিচলিত করেনা তা কিন্তু নয়।আমি রক্ত দেখেছি,নাখাওয়া পাগল প্রায় মুক্তি সেনাদের চোখের আগুন দেখেছি।তাঁদের পানি এনে দিয়েছি তৃষনা নিবারনে।তাঁদের বন্দুক গুলী হাত দিয়ে ছুয়ে দেখেছি। স্বাধীনতার যুদ্ধকালিন এই স্মৃতিটুকু বন্দুকের সেই স্পর্শ, সেই গৌরব মনের আঙ্গিনায় অচঞ্চল মূর্তির মতো স্থানুবৎ দাঁড় করিয়ে রাখে আমাকে সর্বক্ষন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দৃশ্যত একাত্তরের মার্চ থেকে শুরু হলেও এর প্রেক্ষাপট রচিত হয় ঐ যে বললাম'৪৭ইং সালের বাঙালির উপলব্দি কথা।মুলত তখন থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘদিন সামাজিক, রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা তিনি। মুলত ৭০ এর জাতীয় নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে ও নির্দেশে, সার্বিক তত্বাবধানে তখনকার পুর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ চলছিল। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের কারনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বিশ্বজনমতের সমর্থন লাভ করা অত্যান্ত সহজতর হয়েছিল নির্দিদ্বায় বলা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় যদিও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছিল। যুদ্ধকালে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার 'মুজিব নগর সরকার' নামেই পরিচিত ছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার জন্য পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগকে এককভাবে দায়ী করেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করবার পথ সুগম করার অপরাধে পাকিস্তানী সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মৃত্যুদণ্ড দিতে বদ্ধপরিকর হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বজনমতের ভয়ে সেই দণ্ড কার্যকর করতে পারে নি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। বাংলাদেশ এক ঘোষণায় স্বাধীন হয়ে গেছে যারা ভাবেন, তারা আসলে এদেশকেই মেনে নিতে পারেন না বা ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান করে পরাজিত শক্তির পক্ষাবলম্বন করেন। বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো তিনি আমাদের বাঙালি জাতিসত্তাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই প্রক্রিয়া হঠাৎ করে শুরু হয়নি। বাঙালির দীর্ঘদিনের আত্মানুসন্ধান, দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও সংগ্রামের অমোঘ পরিণতি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। বিস্ময় জাগে বৈকি এখন যে, এই ভূখণ্ড যেটি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথমে 'পূর্ববাংলা' এবং পরে 'পূর্বপাকিস্তান' নামে পরিচিত ছিল, সেটিকে ১৯৬৯ সালে 'বাংলাদেশ' বলে ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই জাঁদরেল পাকিস্তানী সামরিক শাসক গোষ্ঠীর ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু এই নামটি বেচে নিয়েছিলেন। প্রত্যেক সভায় বাংলাদেশের নাম বলেই বক্তৃতা দিতেন।তিনিই এদেশের রাজনীতিকে মধ্যযুগীয় ধর্মীয় সামপ্রদায়িক আবর্ত থেকে উদ্ধার করে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ ধারায় প্রবাহিত করার উদ্যোগতা।অন্য আরো অনেকেই ছিলেন, শেখ মুজিবের অবদান ছিল অনন্য। বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত ইচ্ছার ধারক বাহক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যে জাতীয় চেতনার উন্মেষের ফলে আমাদের ছোট বেলার সময়কালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটেছে, সেই জাতীয় চেতনার উন্মেষের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অবিস্মরণীয়।১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালি মুসলমানদের রাজনৈতিক ও সমাজ চিন্তায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত করেছিলেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী তার প্রতিই বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করেছিলেন। তাকেই বার বার জেলে পুরেছেন,তাঁরজন্যই আগরতলা মামলা সাজিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিলেন।২৫ শে মার্চ তাঁকেই বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়েছিলেন।৭ই মার্চের স্বাধিনতার দিক নির্দেশনামুলক ভাষন শুধু বঙ্গবন্ধুই দিয়েছিলেন।লাখো জনতা সে দিন বঙ্গবন্ধু কি বলেন সেই দিকেই মনোনিবেশ রেখেছিলেন।তিনিই বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাঙ্গালীরা শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর উপর নির্য্যাতনের প্রতিবাদেই ফুঁসে উঠেছিল। " জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু ভজয়তুদেশরত্ম শেখ হাসিনা"

কারো বাঁশির এক হুইসেলে স্বাধীনতা আসেনি।২৪বছরের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের পরিনতি আমাদের প্রিয় এই স্বাধীনতা।এই সমস্ত আন্দোলনের সম্মুখে যিনি ছিলেন তিনি আমাদের জাতির জনক, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন