জেলহত্যা দিবসের স্মৃতিকথা তোফায়েল আহমেদ বিডিনিউজ২৪.কম ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর মানব সভ্যতার ইতিহাসকে ম্লান করে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতা– সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আমি ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী। কি দুঃসহ জীবন তখন আমাদের। ময়মনসিংহ কারাগারের কনডেম সেলে (ফাঁসির আসামীকে যেখানে রাখা হয়) আমাকে রাখা হয়েছিল। সহকারাবন্দী ছিলেন “দি পিপল” পত্রিকার এডিটর জনাব আবিদুর রহমান। কিছুদিন আগে যিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। আমরা দু’জন দু’টি কক্ষে ফাঁসির আসামীর মতো জীবন কাটিয়েছি। হঠাৎ খবর এলো, কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারের সকলে এবং কারারক্ষীরা সতর্ক। ময়মনসিংহ কারাগারের জেল সুপার ছিলেন শ্রী নির্মলেন্দু রায়। চমৎকার মানুষ তিনি। কারাগারে আমরা যারা বন্দী, তাদের প্রতি তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল। বঙ্গবন্ধুও তাকে খুব স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধু যখন বারবার কারাগারে বন্দী ছিলেন, নির্মলেন্দু রায় তখন কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হয়ে নির্মলেন্দু রায়কে কাছে টেনে সবসময় আদর করতেন। সেদিন গভীর রাতে হঠাৎ নির্মলেন্দু রায় আমার সেলে এসে বলেন, “ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এতো রাতে কেন? তিনি বললেন, “ঢাকা কারাগারে আপনাদের প্রিয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কারাগারের চতুর্দিক পুলিশ দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছি, জেল পুলিশ ঘিরে রেখেছে। এসপি সাহেব এসেছেন আপনাকে নিয়ে যেতে।” আমি বললাম, না, এভাবে তো যাওয়ার নিয়ম নেই। আমাকে যদি হত্যাও করা হয়, আমি এখান থেকে এভাবে যাব না। পরবর্তীকালে শুনেছি সেনাবাহিনীর একজন মেজর সেদিন কারাগারে প্রবেশের চেষ্টা করে। নির্মলেন্দু রায় তাকে বলেছিল, “আমি অস্ত্র নিয়ে কাউকে কারাগারে প্রবেশ করতে দেবো না।” কারাগারের চতুর্পার্শ্বে আমাকে রক্ষা করার জন্য সেদিন যারা ডিউটি করছিলেন তাদের মধ্যে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী ওদুদ সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছিল কারাগারকে রক্ষা করার জন্য। নির্মলেন্দু রায়ের কাছে আমি ঋণী। জেলখানার এই নিষ্ঠুর হত্যার খবরে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অতীতের অনেক কথাই ভাবতে শুরু করি। ছাত্র জীবন থেকে আমি জাতীয় চার নেতাকে নিবিড়ভাবে দেখেছি। তাঁদের আদর-স্নেহে আর রাজনৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়ে জীবন আমার ধন্য হয়েছে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট যেদিন জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়, আমরা সেদিন নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জাতীয় চার নেতাসহ আমরা ছিলাম গৃহবন্দী। ১৫ আগস্টের পরদিন আমার বাসভবনে খুনীরা এসে আমাকে তুলে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যায়। সেখানে আমার উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। পরবর্তীতে জেনারেল শফিউল্লাহ এবং আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সদ্যপ্রয়াত কর্নেল শাফায়াত জামিল– তিনি তখন ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার– তাদের প্রচেষ্টায় রেডিও স্টেশন থেকে আমাকে বাড়ীতে আমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মায়ের কথা আজ ভীষণভাবে মনে পড়ে। আমাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মা বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন। মায়ের শরীরের উপর দিয়েই আমাকে টেনে নেয় ঘাতকের দল। আগস্টের ২২ তারিখ জাতীয় চার নেতাসহ আমাদের অনেক বরেণ্য নেতাকে গ্রেফতার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়েছিল গুলী করে হত্যা করার জন্য। যেকোন কারণেই হোক শেষ পর্যন্ত হত্যা করে নি। পরে নেতৃবৃন্দকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের উপর যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল তা উপেক্ষা করে আমরা খুনী মোশতাকের সকল প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। গৃহবন্দী অবস্থা থেকে জিল্লুর রহমান, আমাকে ও জনাব আবদুর রাজ্জাককে একই দিনে গ্রেফতার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কোণে অবস্থিত পুলিশ কন্ট্রোলরুমে ৬ দিন বন্দী রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এরপর আমাকে ও আবিদুর রহমানকে ময়মনসিংহ কারাগারে এবং জিল্লুর রহমান ও প্রিয় নেতা রাজ্জাক ভাইকে কুমিল্লা কারাগারে নিয়ে যায়। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতীয় চার নেতার কতো স্মৃতি। ’৬৬তে বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা দেন, তখন তাজউদ্দীন ভাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক। ছয় দফা দেওয়ার পর মার্চের ১৮, ১৯ ও ২০ তারিখ হোটেল ইডেনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু মুজিব সভাপতি এবং তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু মানুষ চিনতে ভুল করতেন না। তিনি যোগ্য লোককে যোগ্যস্থানে বসাতেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রথম সহসভাপতি, মনসুর আলী সাহেবকে অন্যতম সহসভাপতি, কামারুজ্জামান সাহেবকে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাজউদ্দীন ভাই পরমনিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। বঙ্গবন্ধু সারা বাংলাদেশে ছয় দফার সমর্থনে জনসভা করেন এবং যেখানেই যান সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে থামাতে পারেনি। মে’র ৮ তারিখ নারায়ণগঞ্জের জনসভা শেষে ধানমণ্ডির বাসভবনে ফেরামাত্রই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরপরই তাজউদ্দীন ভাইসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতিবাদে ৭ জুন আমরা সফল হরতাল পালন করি। হরতাল শেষে এক বিশাল জনসভায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছয় দফা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে অপূর্ব সুন্দর বক্তৃতা করেছিলেন। তিনি অনলবর্ষী বক্তা ছিলেন। তাজউদ্দীন ভাই দক্ষ সংগঠক ছিলেন এবং এএইচএম কামারুজ্জামান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের এমএনএ হিসেবে পার্লামেন্টে বাঙালির পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে সোচ্চার ছিলেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের এই জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বারংবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন অপূর্ব দক্ষতার সাথে। ’৬৯-এর গণআন্দোলনে তাজউদ্দীন ভাইসহ অধিকাংশ নেতাই কারাগারে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাইরে ছিলেন। জানুয়ারির ১ম সপ্তাহে মরহুম আহমেদুল কবীরের বাসভবনে ডাকের সভা চলছিল। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ১১ দফা দাবী নিয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে গিয়েছিলাম। নেতৃবৃন্দের কাছে যখন ১১ দফা ব্যাখ্যা করি, তখন ন্যাপ নেতা মাহমুদুল হক কাসুরি বলেছিলেন, ”You have included Sheikh Mujib’s six points in to, so questions of acceptance does not come.” তাঁর এই বক্তব্যের পর বলেছিলাম, আমরা বাঙালি, কিভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয় আমরা জানি। আপনারা সমর্থন না করলেও এই ১১ দফা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আমরা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রিয়নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কারাগার থেকে মুক্ত করবো। এই দৃপ্ত উচ্চারণের পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম আমাকে বুকে টেনে আদর করে বলেছিলেন, “তোমার বক্তব্যে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।” মহৎ হৃদয়ের অধিকারী নেতৃবৃন্দদের যার যা প্রাপ্য, বঙ্গবন্ধু তাদের তা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনি তৃণমূলের কর্মীকে নেতা বানিয়েছেন; ইউনিয়নের নেতাকে থানার নেতা; থানার নেতাকে জেলার নেতা; জেলার নেতাকে কেন্দ্রের নেতা এবং কেন্দ্রীয় নেতাকে জাতীয় নেতা বানিয়ে নিজে হয়েছিলেন জাতির পিতা। তাঁর কাছে কর্মীদের কাজের, দক্ষতার এবং যোগ্যতার মূল্য ছিল। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এবং এএইচএম কামারুজ্জামান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কে কোন পদে পদায়িত হবেন বঙ্গবন্ধু তা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। ’৭০-এর নির্বাচনে মাত্র ২৭ বছর বয়সে আমি এমএনএ হয়েছিলাম। ’৭১-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টারী পার্টির মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু সংসদীয় দলের নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপনেতা এবং এএইচএম কামারুজ্জামান সচিব, ইউসুফ আলী চীফ হুইপ, আবদুল মান্নান এবং আমিরুল ইসলাম হুইপ নির্বাচিত হন। প্রাদেশিক পরিষদ নেতা নির্বাচিত হন মনসুর আলী। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে মনসুর আলী হবেন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী। এজন্য মনসুর আলীকে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সেটআপ করা ছিল। ’৭১-এর ১ মার্চ পূর্বঘোষিত জাতীয় পরিষদ অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিত হলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম পর্ব। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে সর্বাত্মক স্বাধীনতা ঘোষণার পর শুরু হয় অসহযোগের দ্বিতীয় পর্ব। বিশ্বে এমন অসহযোগ কখনো দেখে নি কেউ। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সুচারুরূপে পরিচালনা করেছে অসহযোগের প্রতিটি দিন। এ সময় লালমাটিয়ায় আমাদের প্রয়াত নেতা খুলনার মোহসীন সাহেবের বাসভবনে বসে আমরা সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন জাতীয় চার নেতার সাথে পরামর্শক্রমে। বঙ্গবন্ধু এমন এক নেতা ছিলেন যে, তাঁর অবর্তমানে কে কোথায় কী কাজ করবেন এটি আগেই নির্ধারণ করতেন। ২৫ মার্চ রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার পর যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়, তখন জাতীয় চার নেতাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দক্ষতার সাথে মুজিবনগর সরকার পরিচালনা করেন। মুজিবনগর সরকারে বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রী কামারুজ্জামান সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে ’৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর দেশকে হানাদার মুক্ত করেন। আজকে স্বাধীনতার ইতিহাস অনেকেই বিকৃত করে। অথচ কি সুন্দর পরিকল্পনা নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। ’৭১-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের চারজন– শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক এবং আমাকে বঙ্গবন্ধু ডাকেন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে। বঙ্গবন্ধু আমাদের বলেন, “পড়ো, মুখস্থ করো।” আমরা মুখস্থ করলাম একটি ঠিকানা– “২১, রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা।” বলেছিলেন, “এইখানে হবে তোমাদের জায়গা। ভুট্টো-ইয়াহিয়া ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। পাকিস্তানীরা বাঙালিদের ক্ষমতা দেবে না। আমি নিশ্চিত ওরা আক্রমণ করবে। আক্রান্ত হলে এখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করবে।” বঙ্গবন্ধু সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। সদ্য নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য চিত্তরঞ্জন সুতারকে আগেই কলকাতায় প্রেরণ করেছিলেন। ডাক্তার আবু হেনা প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য। তাকেও বঙ্গবন্ধু আগেই পাঠিয়েছিলেন অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে। যে পথে আবু হেনা গিয়েছিলেন, সেই একই পথে তিনি মনসুর আলী, কামারুজ্জামান, মণি ভাই এবং আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাজেন্দ্র রোডে আমরা অবস্থান করতাম। ৮ নং থিয়েটার রোডে অবস্থান করতেন জাতীয় চার নেতা। নেতৃবৃন্দের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। কতোবার তাজউদ্দীন ভাইয়ের সাথে বর্ডারে রণাঙ্গনে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুজিববাহিনীর সাথে মুজিবনগর সরকারের ভুল বোঝাবুঝির চেষ্টা হয়েছিল। জাতীয় নেতৃবৃন্দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সকল ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রিয় মাতৃভূমিকে আমরা স্বাধীন করেছি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর আমি এবং রাজ্জাক ভাই দেশে আসি ১৮ ডিসেম্বর। ২২ ডিসেম্বর চার নেতা ফিরেন; বঙ্গবন্ধু এলেন ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি। ডিসেম্বরের ২২ তারিখ আমরা বিমানবন্দরে মুজিবনগর সরকারের জাতীয় চার নেতাকে অভ্যর্থনা জানাই। ’৭২-এর ১১ জানুয়ারি তাজউদ্দীন ভাইয়ের বাসভবনে বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাবেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন বঙ্গবন্ধু মুজিব স্বয়ং; সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিল্পমন্ত্রী; তাজউদ্দীন আহমেদ অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী; ক্যাপ্টেন মনসুর আলী যোগাযোগমন্ত্রী এবং কামারুজ্জামান ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৪ জানুয়ারি মাত্র ২৯ বছর বয়সে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হবার। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর কাছে থেকেছি শেষদিন পর্যন্ত। ’৬৯-এর পর থেকে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার অফুরন্ত স্নেহ-আদর-ভালোবাসা এবং সাহচর্য পেয়েছি। যা কোনদিন ভুলবার নয়। ’৭৪-এর ২৬ অক্টোবর, তাজউদ্দীন ভাইকে মন্ত্রীসভা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রতিদিন তাজউদ্দীন ভাইয়ের বাসায় যেতাম। তাজউদ্দীন ভাই আমায় বলতেন, “দেখো তোফায়েল, সারা জীবন যা কিছু করেছি, তার সবই মুজিব ভাইয়ের খাতায় জমা রেখেছি। আমার নিজের খাতায় কিছুই রাখি নি। যে কোন মূল্যে মুজিব ভাইকে বাঁচাতে হবে। মুজিব ভাইকে বাঁচাতে না পারলে আমরা কেউ-ই বাঁচতে পারবো না। এই স্বাধীনতা সবকিছু অর্থহীন হয়ে যাবে।” ভাবতে অবাক লাগে, তাজউদ্দীন ভাই মন্ত্রীসভায় ছিলেন না- সরকারে ছিলেন না, অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করে গেছেন!

ইতিহাসের চরমতম ঘৃন্য কাজটি করতেও সেদিন খুনীদের বুক কাঁপেনি।জেল খানায় রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থেকেও সেই দিন জাতিয় নেতারা নিরাপদ ছিলেন না।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন