পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০১৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে
ছবি

সাম্প্রতিক পৌরনির্বাচন,বিএনপি-আওয়ামী লীগের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ----- ========================= পুরাতন বছরের ক্রান্তিকাল নতুন বছরের শুরুতে মহা বিজয়ের স্বাধ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৬ ইং সালের প্রথম কায্য দিবস শুরু করবে ইনশাল্লাহ। জাতির জনকের কন্যার অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রশ্নাতীত দেশপ্রেম,ইস্পাত কঠিন দৃডতা,দুসাহষী কর্মযজ্ঞ এনে দিয়েছে আস্থাহীন স্থানীয় নেতাদের বিজয়ের গৌরব। আমাদের স্থানীয় নেতাদের অধিকাংশের ধারনায় ছিলনা বর্তমান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা '৭৫ পরবর্তি যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে।আস্থার সংকটের কারনে নির্বাচনে অনেকেই জোর খাটানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে দেশরত্ম শেখ হাসিনার শাষনের গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা করেছিলেন।নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত আইন শৃংখলা বাহিনী কঠোর হস্তে তাঁদের কায্যক্রম নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়েছেন।নির্বাচন কমিশন,আইনশৃংখলা বাহিনী সবাই নিরপেক্ষ ভুমিকা রাখার আপ্রান চেষ্টা করে সফল নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ায় দেশবাসির সুনাম কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন।তবে সত্যিকার অর্থে স্থানীয় সম্মানীত নেতৃবৃন্দ নীজেদের কর্মকান্ড এবং সত্যিকার জনসেবার উপর আস্থা রাখতে পারলে নির্বাচন আরো সুন্দর নির্ভেজাল হতে পারতো। দ:এশিয়ার অন্য যে কোন দেশের স্থানীয় নির্বাচন থেকে বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হয়েছে নির্দ্ধিদায় বলা যায়।মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভাই ও এমনটি মন্তব্য করেছেন।বাংলাদেশের অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় এই নির্বাচনটি নিরপেক্ষ, অবাধ সুষ্ঠ।যারা আমার এই মতের বিরুধীতা করার ইচ্ছা পোষন করবেন, তাঁদেরকে আগেই অনুরুধ জানাব-- আয়নায় নীজের চেহারাটুকু দেখে আসেন,তখনকার সময়ের পত্রিকার পাতাটা আবার উলটে পালটে দেখে তাঁরপর মন্তব্য করবেন। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, সকল সময়ের সকল নির্বাচনে,সকল গনতান্ত্রিক দেশেই প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর সমর্থন তুলনা মুলক অতি কম হলে, শক্তিশালি জনসমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকেরা কেন্দ্রে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করবেই।ইহা শুধু বাংলাদেশে নয়,বিশ্বের দেশে দেশে একই চিত্র দেখা যায়। যারা নীতিবাক্য ব্যয় করে সারাক্ষন টি,ভি পর্দায় ভোটের চুলচেরা বিশ্লেষন করছেন, তাঁদের কে সবিনয় অনুরুধ করতে চাই, নীজ দেশের প্রথম দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচনের সমালোচনা করার আগে শত বছরের পুরাতন গনতন্ত্রচর্চাকারি প্রতিবেশি দেশের স্থানীয় নির্বাচনের পরিসংখ্যান তুলে ধরুন আগে, তার পর বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলুন, অভিমত দিন,সমালোচনা করুন আপর্ত্তি থাকবেনা। আমাদের স্মরনে রাখা প্রয়োজন,স্বাধীনতার ৪৪বছর পরেও যে দেশটির রাজনৈতিক দল গুলির নেতৃত্ব নির্বাচনে কর্মিদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়না,দলিয় নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটের বাধ্যবাধকতার প্রচলন করা যায়নি,সে দেশের স্থানীয় নির্বাচন এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে,কিভাবে হতে পারে,আমার সাধারন জ্ঞানে আসেনা। অকারনে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা আমাদের দেশের সুশীলদের অভ্যেসে পরিনত হয়ে গেছে,এই অভ্যেসের গোলামী থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।যে সমস্ত কেন্দ্রে গোলযোগ হয়েছে,সে সমস্ত কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছেন নির্বাচন কমিশন,আইন শৃংখলা বাহিনীর হাত থেকে সরকারি দলের প্রার্থী ও অপদস্ত হওয়া থেকে রক্ষা পায়নি,কবে কখন,কোন নির্বাচনে এমনতর ভুমিকা রাখতে পেরেছিল নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মিরা?জেলের অভ্যন্তরে থেকে বিএনপি প্রার্থী জিতেছেন, নিরপেক্ষ সুষ্ঠ,অবাধ নির্বাচনের অন্তরীকতা না থাকলে সরকারের এইরুপ কি আদৌ সম্ভব হত? আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি, স্থানীয় নেতাদের জনগনের মানষিকতা পরিবর্তনের উপর আস্থা বিশ্বাসের ঘাটতি থাকার কারনে কিছু বিশৃংখল অনাকাংখিত দু:খজনক ঘটনা ঘটেছে।এই সমস্ত ঘটনার জন্য কোন অবস্থায় সরকারকে দোষ দেয়া যায়না। আমাদের রাজনৈতিক দল সমুহের নেতা কর্মিদের ও যথেষ্ট দোষ রয়েছে।সর্বাজ্ঞে আমি বলব,আদর্শিক কর্মির অভাবে এই রুপ ঘটনা সমুহের সম্মুখীন আমরা বার বার হচ্ছি। দলের প্রতি আনুগত্যহীনতা,অল্পতে নার্ভাস অনুভব করা,দৃড মনোবলের অভাব নেতাকর্মিদের মাঝে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।প্রত্যেক রাজনৈতিক দলে প্রথমে গনতন্ত্রের চর্চার অভ্যেস করতে হবে,দলে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের প্রথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।আদর্শিক কর্মিবাহিনী সৃষ্টির প্রতি মনোযোগী হতে হবে।ভালছাত্রদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে,মেধা সম্পন্ন নেতার উত্থান কন্টকমুক্ত করতে হবে,তবেইতো গনতন্ত্রের স্বাধ উপভোগ করা যাবে। তাঁর আগে অন্য সমস্ত দেশের অনুসরনে আমাদের দেশের নির্বাচন ও প্রশ্নবিদ্ধ হতেই থাকবে। সরকারের একশভাগ আন্তরীকতা থাকলেও শতভাগ নির্ভেজাল নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হবেনা,আমি দৃডভাবেই বিশ্বাস করি। প্রত্যেক দল এই সমস্যা সমুহ দূর না করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের দোষ দিয়ে লাভ হবেনা।নীজেরা যাহাতে অভ্যস্থ নই,তাহাতে সরকার কিভাবে অভ্যস্ত হবে আমার বোধগম্যতায় আসেনা।সরকার কি আলাদা কোন জগতের প্রানী?? জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখহাসিনা

ছবি

জিয়া পরিবারের বিচারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে

ছবি

খোলা আবেদন =================== বরাবর, বেগম খালেদা জিয়া। চেয়ারপার্সন, বাংলাদেশ জাতীয়তা বাদী দল(বিএনপি) বিষয়:- জঙ্গী সম্পর্কিত বিষয়ে ধারনা ও শহীদদের সংখ্যায় বিতর্ক প্রসঙ্গে। জনাবা, যথাবিহীত সম্মানপুর্বক নিবেদন এই,আপনি বাংলাদেশের একজন প্রথম কাতারের রাজনীতিবীদ,বৃহত্তর গনসংগঠন জাতীয়তাবাদি দলের চেয়ারপার্সন,অনুন্নত বাংলাদেশের সাবেক তিন বারের প্রধান মন্ত্রী,সাবেক বিরুদী দলের নেতৃত্বে ছিলেন। ১/১১ এর ঘটনা বহুল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপনি ও বর্তমান প্রধান মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একত্রে আলাদা আলাদা গৃহে কারাওন্তরালে ছিলেন।রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের জন্য জেল খানা দ্বিতীয় বাড়ী এতে কিছুই যায় আসে না।বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও জীবনের অধিকাংশ সময় জেল খানায় কাটিয়েছেন।কথিত আছে তাঁর জন্য সব সময়ে জেল খানার সরঞ্জাম সহ একটি বাক্স প্রস্তুত করে রাখা হত।সেই সময়ের ব্যাপারটি মানুষ মেনে নিতে পারেনি বলে বিজাতীয় পাঞ্জাবী পাঠানদের বিতাড়িত করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জনগন একতাবদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল। মাননীয় নেত্রী, আপনি যদিও অশিক্ষিত হন ভাগ্যদেবী আপনাকে তখনকার সময়ের একজন শিক্ষিত তরুন সামরীক অফিসার কে বরাদ্ধ করেছিলেন বিদায়, আপনার আচার আচরন চলাপেরায় শিক্ষিত মার্জিত একজন গৃহবধুর ভাবমুর্তি সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠতে দেরী হয়নি।রাজনীতির জন্য বা দেশ পরিচালনার জন্য খুব বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন হয়না, তার প্রকৃষ্ট প্রমান আপনি রেখেছেন।কিন্তু অতীব দু:খ্যের সঙ্গে লক্ষ করছি" মহিলারা সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট থাকা তাঁদের ধর্ম" এই পুরুষালী তপ্ত বাক্য থেকে আপনি মুক্ত হতে পারেননি।যাঁর ফলে মেজর জিয়ার মৃত্যুকালে কোন সম্পদ রেখে না গেলেও আপনি তিনবার প্রধান মন্ত্রীত্বের সুযোগ পেয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবারের সদস্য হয়ে,দেশের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করা সর্তেও লুটপাট করে সম্পদ আহরন করা কোনমতেই নীতিনৈতিকতার মধ্যে পড়েনা।যাক আপনি অর্জিত সম্পদ রক্ষা এবং আপনার পরিবারকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সর্বপুরি আপনার"অস্থিমর্জ্জায় লালিত পাকিপ্রেমের অন্ধনুভুতি"কে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার মানসে ন্যাক্কার জনকভাবে মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচারের বিরুধীতা করতেও আপনি কুণ্ঠাবোধ করেননি। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মানবতা বিরুধী সংগঠন জামায়াতের সংগে জোট বেঁধে তাঁদের নেতৃত্ব আপনি গ্রহন করে রাজনীতির সকল সংজ্ঞা বিবর্জিত কর্মকান্ড (জ্বালাও পোড়াও আগুন সন্ত্রাস লুটপাট) পরিচালনা করতেও দ্বিধাবোধ করেননি।এমনতর অবস্থায় দেশকে পৌছে দেয়ার চেষ্টা করেছেন, মধ্যযুগীয় বর্বর যুগে(যাহা থেকে হয়তো আপনিও রক্ষা পাওয়ার কোন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারতেননা)।যেমন পারেননি জাসদ ১৯৭৫ ইং সালে। আপনি বাংলাদেশের গনতান্ত্রীক ধারা, আপনার স্বামী প্রতিষ্ঠিত দল,এবং আপনার রাজনৈতিক ভবিষ্যতকেও অন্ধকারে ঠেলে দিতে উদ্যোগি হয়েছিলেন। আপনার সকল প্রচেষ্টা নস্যাৎ হওয়ার পর, প্রকাশ্য ঘোষনা দিয়ে বলেছিলেন, আপনি আর হিংসাত্বক রাজনীতি করবেন না,যদি কোন দিন সরকারে আসতে পারেন প্রতিশোধ গ্রহন করবেননা। প্রথম বাক্যটি যদিও আপনার রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ফেরৎ আসার ইঙ্গিত বহন করে -দ্বিতীয় বাক্যটি আপনি কেন বলছেন তা অনেকেই না বুঝলেও রাজনীতি সচেতন নাগরিকেরা ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছেন।তাঁর আগেও তাঁদের প্রতি স্পষ্ট উষ্মা প্রকাশ করে প্রকাশ্য বলেছিলেন, "সেনাবাহিনী বেঈমান"।তাঁরা আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে মর্মে ওয়াদা করেও ওয়াদা রক্ষা না করার লজ্জায় ঘৃনায় আপনি এখন পয্যন্ত অবরোধ হরতাল প্রত্যাহারেরঘোষনা দিতে পারেননি।আপনার সেই কর্মসুচি চলমান থাকায় আপনার মিত্রদেশ আমেরীকা ও লজ্জায় ঘৃনায় তাঁদের জারী করা রেড এলার্ট প্রত্যাহার করতে পারছেন না।দুই দেশের দুই রাজনৈতিক ভরসার কারনে আন্তজাতিক ভাবে বাংলাদেশ বহু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ও হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।আপনিই বলুন আপনার হরতাল অবরোধ কি এখন ওবহাল আছে?আপনি ও আপনার দল বা জোট কি এখনও তা পালন করছেন? এমনতর পরিস্থিতিতে আপনার দল যখন বহু খন্ডে বিভক্ত হওয়ার উপক্রম,বহুদলীয় গনতন্ত্র হুমকির সম্মুখ্যিন,(,শক্তিশালী বিরুদি দলের অস্তিত্ব থাকা গনতন্ত্রের মুলভিত্তি) গনতন্ত্রের সংজ্ঞার চরম ব্যত্যায়ের উপক্রম,দলে দলে নেতাদের ভীন্ন দলে যোগদান করে নীজেদের রাজনৈতিক ধারা রক্ষায় নিমগ্ন তখন ও আপনি ব্যাস্ত সুদুর লন্ডনে আপনার অথর্ব সন্তান তারেক এবং দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারিদের সাথে বৈঠকে। "ঐ সময়ে আপনাদের দুই নেত্রী জেলখানায় যে আন্তরিকতা গড়ে উঠেছিল, সেই আন্তরীকতার বহি:প্রকাশ ঘটালেন জাতির জনকের কন্যা, বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা।তিনি গনতন্ত্রের স্বার্থে,শক্তিশালী বিরুদী দলের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে, দেশের সমৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে,প্রকাশ্য ঘোষনা দিলেন, "একজন নেতা কর্মিকেও আওয়ামী লীগে যোগদান করতে দেয়া হবেনা".।দেশরত্মের ঘোষনায় নিসন্দেহে আপনার দল ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেয়েছে,রক্ষা পেয়েছে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের দলত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক থেকে। শেখ হাসিনার এই উদারতা দেশের মানুষ তৎক্ষনাৎ বুঝতে না পারলেও সচেতন রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ঠিকই বুঝেছেন।আপনার ভক্ত শুসীল সমাজের আলোচনা থেকে সেই দিনের পর রাজনৈতিক দলের গনতন্ত্রের চর্চার বিষয়টি উধাও হয়ে গেছে।এই বদন্যতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই দেখাতে পেরেছেন।এইখানেই সামরিক সরকারের সৃষ্ট দল আর জনগনের আন্দোলন সংগ্রামে সৃষ্ট দলের পার্থক্য।এই জায়গা টুকুতেই শিক্ষিত নেতা আর অশিক্ষিত নেতার পার্থক্য।"এইখানেই বুঝা যায় কে গনতন্ত্রের পুজারি কে গনতন্ত্রধ্বংশকারী।কে ক্ষমতালোভী কে রাজনীতি লোভী।কে দেশের উন্নয়ন অগ্রগিতি চায়,কে ধ্বংশ আর অরাজগতা চায়।"" মাননীয় নেত্রী, আপনি যুদ্ধচলাকালিন পাঞ্জাবীদের সাথে ক্যান্টনমেন্টে নিরাপদে আনন্দঘন সময় অতিবাহিত করেছেন।পাঞ্জাবী সেনা কর্মকর্তাদের প্রত্যহিক সৌয্যবীয্যের আলোচনাই শুনেছেন।বিপরীত কোন আলোচনা সমালোচনা শুনার সুযোগ আপনার ছিলনা।এইখানে আপনার দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই।আপনি যাহা চেয়েছিলেন তাহা পাননি।মানুষ যা চায়, তা কি সবসময়ে পায়?তাঁদের সাথে বসবাসের কারনে আপনি তাঁদের প্রতি আন্তরীক এতেও আমি দোষের কিছু দেখিনা।জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু আপনাকে গ্রহন করার জন্য জিয়াউর রহমানকে বাধ্য করেছে,ইহাও দোষের নয়।বঙ্গবন্ধু বহুজনের ঘর সংসার রক্ষা করে দিয়েছেন।বহু নির্যাতিত নারীকে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন। অনেকেই আজ স্বাবলম্বি,কোটিপতির খাতায় ও অনেকের নাম জ্বল জ্বল করে জ্বলছে।আপনার প্রতি ভাগ্যদেবী অধিকতর দুর্বল, তা নাহলে কি আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন? ভাঙ্গা সুটকেষ থেকে কি হাজার হাজার কোটি টাকা বের হতে পারে?আলাদীনের চেরাগের কাহিনীকে হার মানিয়েছে আপনার ভাগ্যের কাহিনী।ইহা কি আমি সত্য বলি নাই মাননীয় নেত্রী? যাক, স্বাধীনতার ৪৫ বছরে বাংলাদেশ আর কিছু দিনের মধ্যে পা দিবে।এমনি সময়ে বিজয়ের মাসের আনন্দ ঘন মহুর্তে শহিদের সংখ্যা বিতর্ক কেন তুলেছেন মাননীয় দেশনেত্রী।আপনি যদি সত্যিকার ভাবে দেশনেত্রী হয়ে থাকেন(আপনার নেতা কর্মিরা এখনও সম্বোধন করে)তবে কি আপনার মুখে বিতর্কটি শোভা পায়?আপনি যাদের রক্ষা করার জন্য নিজের দলের অস্তিত্ব বিপন্ন করার জোকি গ্রহন করেছিলেন, তাঁদের দিয়ে এই সামান্য বিতর্কটি কি উত্থাপন করানো যেতনা?বিতর্কটি উত্থাপিত আপনার মুখে হওয়ার কারনে দেশের মানুষ, মুক্তিযুদ্ধে আপনার আশ্রয়দাতা এবং আপনার আনন্দমুখর দিনগুলীর অতীত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতেও দ্বিধাবোধ করছেনা।একজন সাবেক প্রধান মন্ত্রীর এই রুপ সমালোচনা যদিও বিবেকবর্জিত সমালোচনা তার পরও না করে পারছেনা।দেশের মানুষ আপনার এই মন্তব্যে রাগে ক্ষোভে দু:খ্যে যারপরনাই জ্ঞানশুন্য।কি বলতে কি বলছেন হয়তো নীজেরাও জানেনা। অনেকেই এমনতর মন্তব্য করতেও পিছপা হয়নি যে,আপনি নাকি সে দিন বেশি মাত্রায় মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। মাননীয় দেশনেত্রী, আপনার মুখে প্রায়শ:শুনতে পাওয়া যায়, দেশের ছেলে পেলে গুলোকে পুলিশ অযথা ধরে নিয়ে জঙ্গী সাজাচ্ছে।আপনি আবার বলেন বাংলাদেশে জঙ্গীর উপস্থিতি আছে।জঙ্গী কি ভীন গ্রহের কোন অশরীরি জীব? না অন্য দেশের পুশইন হওয়া কোন সন্ত্রাসী ধর্মীয় উগ্রব্যাক্তিবর্গ বিশেষের সংগঠিত দল? মিরপুরে একটানা ১৮/১৯ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করে যাদের ধরা হল তাঁরাতো বাংলাদেশের ছেলে পেলে? আপনি কি বুঝাতে চান মাননীয় নেত্রী পরিস্কার করে বলে দিন না।সরকার কে সেই মতে ব্যাবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নিতে সাহায্য করুন।আপনার বক্তব্যে পরিস্কার বুঝা যায় তাঁদের আপনি চিনেন।দেশ এবং জনগন সর্বপুরি আমাদের উদার ধর্ম ইসলামের শত্রু এই ধর্মীয় জঙ্গীরা, এটাতো সত্যি।ইসলামতো কখনই উগ্রতা পছন্দ করেনা।যারা ধরা পড়েছে তাঁরা ছাত্র শিবিরের নেতা কর্মী।এরাই কি আই এস আই?বাংলাদেশের নাগরীক কোন দেশের শাষন কায়েম করার জন্য আই এস আই হয়েছেন? মাননীয় দেশনেত্রী, রাজনৈতিক শুন্যতায় বাংলাদেশের বহু অরাজনৈতিক ব্যাক্তি,সেনা সদস্য,ব্যাবসায়ী রাজনীতিবীদ হতে পেরেছেন। রাজনৈতিক শুন্যতা সৃষ্টি না হলে এরাই রাজনীতিবীদদের তল্পিতল্পা বহন করতেন।ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বাংলাদেশের, জাতির জনকের নির্মম হত্যাকান্ডের পর দেশ পাহারাদারদের শাষনেও আমাদের থাকতে হয়েছে।আপনারমত গৃহবধূ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ একাধিকবার অলংকৃত করতে পেরেছেন।অনেক সেনা কর্মকর্তা এমপি মন্ত্রী হতে পেরেছেন।তাতে কোন দু:খ্য নেই,তাঁরা বাংলাদেশের সচেতন নাগরীক। দু:খ্য হয় যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি,মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে অস্ত্রহাতে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল,যাঁরা আমাদের মা বোনদেরকে পাঞ্জাবি পাঠান খাঁনসেনাদের মনোরঞ্জনের খোরাকে পরিনত করেছিল, যারা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ করে বাংলাকে পোড়ামাটিতে রুপান্তরে সহযোগিতা করেছিল,ক্ষেত্র বিশেষে নীজেরাও সম্পৃত্ত হয়েছিল,যারা নতুন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শুন্য করে রাখার সুদুরপ্রসারী লরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষে শত শত বুদ্ধিজীবিকে হত্যা করেছে তাঁদের হাতেও আপনি বাংলাদেশের রক্তে রাঙানো পতাকা তুলে দিয়েছিলেন।তাঁদেরকে আপনার স্বামী মামলা প্রত্যাহার করে জেল থেকে মুক্ত করে দিয়েছিল।অনেককে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ফেরৎ দিয়েছিল।তাঁদেরকে অবাধে ব্যাবসা বানিজ্য করার লাইসেন্স দিয়ে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।আপনি আর ও একধাপ এগিয়ে তাঁদের কে আপনার সরকারের মন্ত্রী বানিয়ে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা তাঁদের গাড়িতে ব্যাবহার করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। লাখো শহিদের প্রানের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অপদস্ত করতেও আপনি দ্বিধাবোধ করেননি। বাংলাদেশের জনগনের প্রানের দাবী যুদ্ধপরাধীদের বিচার। আপনি সেই বিচারের বিপক্ষে অবস্থান করে সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলের সন্ধি করে ব্যর্থ হয়েছেন।এখন শহিদের সংখ্যা বিভ্রান্তি করে ৪৪বছরের প্রতিষ্ঠিত সত্যকে বিতর্কে জড়িয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।আপনার এহেন কর্মকান্ড বাংলাদেশের নতুন প্রজর্ম কোনমতেই সহ্য করবে না।আপনি আপনার রাজনৈতিক পথে নীজেই নীজের কাঁটা বিছিয়ে দিলেন,এই কাঁটা আপনাকেই পরিষ্কার করে রাজপথে নামতে হবে।দেশরত্ম সদয় হয়ে আপনার দল বাঁচিয়ে রাজনীতি করার প্লাটফরম রক্ষা করে দিয়েছেন, রাজপথে নেমে রাজনীতি করার গ্যারান্টি দিতে পারবেনা।আপনি যেমন কয়েক সন্ত্রাসী মাস্তান দিয়ে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করতে প্ররোচিত করেছেন,শেখ হাসিনা তেমন প্ররোচিত হয়তো করবেন না, কিন্তু কোন মুক্তি যুদ্ধের চেতনা সম্পন্ন ব্যাক্তিকে বারন ও করতে পারবেন না।নতুন প্রজর্মের তরুন মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত আপনার দেশ বিরুদী কর্মকান্ডের সমুচিত জবাব রাজপথেই দেয়া হবে ইনশাল্লাহ। মাননীয় দেশনেত্রী-বিনীত প্রার্থনা, এখন ও সময় আছে, জাতির নিকট ক্ষমা চেয়ে নিন, নীজকে জাতীয় নেতার মায্যদায় উন্নিত করুন,বিবেকের জ্বালা থেকে দেশবাসিকে মুক্তি দিন।সকল প্রকার ষড়যন্ত্র পরিহার করে গনতন্ত্রের স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসুন,দেশ ও জাতিকে রক্ষা করুন।বৃহৎ দলের নেত্রী হিসেবে দায় আপনাকেই নিতে হবে।দেশ আপনার খালি স্যুটকেস পুরে দিয়েছে,বাংলাদেশের সর্বউচ্চ সম্মান প্রধান মন্ত্রী বানিয়েছে,এখনও রাজনীতি করে সময় কাটানোর মত বিরক্তিকর ইস্যু থেকে রক্ষা করে চলেছে।আপনিও দেশের জন্য, গনতন্ত্রের জন্য,উন্নতি অগ্রগতির জন্য এখন ও অনেক কিছুই করতে পারেন,অনেক কিছুই দেয়ার আছে।আপনি আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার আকুল আবেদন জানিয়ে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। খোদা হাফেজ। আপনার অনুগত একজন সাধারন নাগরীক। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখহাসিনা

জেলহত্যা দিবসের স্মৃতিকথা তোফায়েল আহমেদ বিডিনিউজ২৪.কম ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর মানব সভ্যতার ইতিহাসকে ম্লান করে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতা– সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আমি ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী। কি দুঃসহ জীবন তখন আমাদের। ময়মনসিংহ কারাগারের কনডেম সেলে (ফাঁসির আসামীকে যেখানে রাখা হয়) আমাকে রাখা হয়েছিল। সহকারাবন্দী ছিলেন “দি পিপল” পত্রিকার এডিটর জনাব আবিদুর রহমান। কিছুদিন আগে যিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। আমরা দু’জন দু’টি কক্ষে ফাঁসির আসামীর মতো জীবন কাটিয়েছি। হঠাৎ খবর এলো, কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারের সকলে এবং কারারক্ষীরা সতর্ক। ময়মনসিংহ কারাগারের জেল সুপার ছিলেন শ্রী নির্মলেন্দু রায়। চমৎকার মানুষ তিনি। কারাগারে আমরা যারা বন্দী, তাদের প্রতি তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল। বঙ্গবন্ধুও তাকে খুব স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধু যখন বারবার কারাগারে বন্দী ছিলেন, নির্মলেন্দু রায় তখন কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হয়ে নির্মলেন্দু রায়কে কাছে টেনে সবসময় আদর করতেন। সেদিন গভীর রাতে হঠাৎ নির্মলেন্দু রায় আমার সেলে এসে বলেন, “ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এতো রাতে কেন? তিনি বললেন, “ঢাকা কারাগারে আপনাদের প্রিয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কারাগারের চতুর্দিক পুলিশ দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছি, জেল পুলিশ ঘিরে রেখেছে। এসপি সাহেব এসেছেন আপনাকে নিয়ে যেতে।” আমি বললাম, না, এভাবে তো যাওয়ার নিয়ম নেই। আমাকে যদি হত্যাও করা হয়, আমি এখান থেকে এভাবে যাব না। পরবর্তীকালে শুনেছি সেনাবাহিনীর একজন মেজর সেদিন কারাগারে প্রবেশের চেষ্টা করে। নির্মলেন্দু রায় তাকে বলেছিল, “আমি অস্ত্র নিয়ে কাউকে কারাগারে প্রবেশ করতে দেবো না।” কারাগারের চতুর্পার্শ্বে আমাকে রক্ষা করার জন্য সেদিন যারা ডিউটি করছিলেন তাদের মধ্যে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী ওদুদ সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছিল কারাগারকে রক্ষা করার জন্য। নির্মলেন্দু রায়ের কাছে আমি ঋণী। জেলখানার এই নিষ্ঠুর হত্যার খবরে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অতীতের অনেক কথাই ভাবতে শুরু করি। ছাত্র জীবন থেকে আমি জাতীয় চার নেতাকে নিবিড়ভাবে দেখেছি। তাঁদের আদর-স্নেহে আর রাজনৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়ে জীবন আমার ধন্য হয়েছে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট যেদিন জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়, আমরা সেদিন নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জাতীয় চার নেতাসহ আমরা ছিলাম গৃহবন্দী। ১৫ আগস্টের পরদিন আমার বাসভবনে খুনীরা এসে আমাকে তুলে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যায়। সেখানে আমার উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। পরবর্তীতে জেনারেল শফিউল্লাহ এবং আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সদ্যপ্রয়াত কর্নেল শাফায়াত জামিল– তিনি তখন ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার– তাদের প্রচেষ্টায় রেডিও স্টেশন থেকে আমাকে বাড়ীতে আমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মায়ের কথা আজ ভীষণভাবে মনে পড়ে। আমাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মা বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন। মায়ের শরীরের উপর দিয়েই আমাকে টেনে নেয় ঘাতকের দল। আগস্টের ২২ তারিখ জাতীয় চার নেতাসহ আমাদের অনেক বরেণ্য নেতাকে গ্রেফতার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়েছিল গুলী করে হত্যা করার জন্য। যেকোন কারণেই হোক শেষ পর্যন্ত হত্যা করে নি। পরে নেতৃবৃন্দকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের উপর যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল তা উপেক্ষা করে আমরা খুনী মোশতাকের সকল প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। গৃহবন্দী অবস্থা থেকে জিল্লুর রহমান, আমাকে ও জনাব আবদুর রাজ্জাককে একই দিনে গ্রেফতার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কোণে অবস্থিত পুলিশ কন্ট্রোলরুমে ৬ দিন বন্দী রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এরপর আমাকে ও আবিদুর রহমানকে ময়মনসিংহ কারাগারে এবং জিল্লুর রহমান ও প্রিয় নেতা রাজ্জাক ভাইকে কুমিল্লা কারাগারে নিয়ে যায়। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতীয় চার নেতার কতো স্মৃতি। ’৬৬তে বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা দেন, তখন তাজউদ্দীন ভাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক। ছয় দফা দেওয়ার পর মার্চের ১৮, ১৯ ও ২০ তারিখ হোটেল ইডেনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু মুজিব সভাপতি এবং তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু মানুষ চিনতে ভুল করতেন না। তিনি যোগ্য লোককে যোগ্যস্থানে বসাতেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রথম সহসভাপতি, মনসুর আলী সাহেবকে অন্যতম সহসভাপতি, কামারুজ্জামান সাহেবকে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাজউদ্দীন ভাই পরমনিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। বঙ্গবন্ধু সারা বাংলাদেশে ছয় দফার সমর্থনে জনসভা করেন এবং যেখানেই যান সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে থামাতে পারেনি। মে’র ৮ তারিখ নারায়ণগঞ্জের জনসভা শেষে ধানমণ্ডির বাসভবনে ফেরামাত্রই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরপরই তাজউদ্দীন ভাইসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতিবাদে ৭ জুন আমরা সফল হরতাল পালন করি। হরতাল শেষে এক বিশাল জনসভায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছয় দফা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে অপূর্ব সুন্দর বক্তৃতা করেছিলেন। তিনি অনলবর্ষী বক্তা ছিলেন। তাজউদ্দীন ভাই দক্ষ সংগঠক ছিলেন এবং এএইচএম কামারুজ্জামান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের এমএনএ হিসেবে পার্লামেন্টে বাঙালির পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে সোচ্চার ছিলেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের এই জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বারংবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন অপূর্ব দক্ষতার সাথে। ’৬৯-এর গণআন্দোলনে তাজউদ্দীন ভাইসহ অধিকাংশ নেতাই কারাগারে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাইরে ছিলেন। জানুয়ারির ১ম সপ্তাহে মরহুম আহমেদুল কবীরের বাসভবনে ডাকের সভা চলছিল। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ১১ দফা দাবী নিয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে গিয়েছিলাম। নেতৃবৃন্দের কাছে যখন ১১ দফা ব্যাখ্যা করি, তখন ন্যাপ নেতা মাহমুদুল হক কাসুরি বলেছিলেন, ”You have included Sheikh Mujib’s six points in to, so questions of acceptance does not come.” তাঁর এই বক্তব্যের পর বলেছিলাম, আমরা বাঙালি, কিভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয় আমরা জানি। আপনারা সমর্থন না করলেও এই ১১ দফা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আমরা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রিয়নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কারাগার থেকে মুক্ত করবো। এই দৃপ্ত উচ্চারণের পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম আমাকে বুকে টেনে আদর করে বলেছিলেন, “তোমার বক্তব্যে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।” মহৎ হৃদয়ের অধিকারী নেতৃবৃন্দদের যার যা প্রাপ্য, বঙ্গবন্ধু তাদের তা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনি তৃণমূলের কর্মীকে নেতা বানিয়েছেন; ইউনিয়নের নেতাকে থানার নেতা; থানার নেতাকে জেলার নেতা; জেলার নেতাকে কেন্দ্রের নেতা এবং কেন্দ্রীয় নেতাকে জাতীয় নেতা বানিয়ে নিজে হয়েছিলেন জাতির পিতা। তাঁর কাছে কর্মীদের কাজের, দক্ষতার এবং যোগ্যতার মূল্য ছিল। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এবং এএইচএম কামারুজ্জামান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কে কোন পদে পদায়িত হবেন বঙ্গবন্ধু তা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। ’৭০-এর নির্বাচনে মাত্র ২৭ বছর বয়সে আমি এমএনএ হয়েছিলাম। ’৭১-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টারী পার্টির মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু সংসদীয় দলের নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপনেতা এবং এএইচএম কামারুজ্জামান সচিব, ইউসুফ আলী চীফ হুইপ, আবদুল মান্নান এবং আমিরুল ইসলাম হুইপ নির্বাচিত হন। প্রাদেশিক পরিষদ নেতা নির্বাচিত হন মনসুর আলী। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে মনসুর আলী হবেন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী। এজন্য মনসুর আলীকে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সেটআপ করা ছিল। ’৭১-এর ১ মার্চ পূর্বঘোষিত জাতীয় পরিষদ অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিত হলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম পর্ব। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে সর্বাত্মক স্বাধীনতা ঘোষণার পর শুরু হয় অসহযোগের দ্বিতীয় পর্ব। বিশ্বে এমন অসহযোগ কখনো দেখে নি কেউ। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সুচারুরূপে পরিচালনা করেছে অসহযোগের প্রতিটি দিন। এ সময় লালমাটিয়ায় আমাদের প্রয়াত নেতা খুলনার মোহসীন সাহেবের বাসভবনে বসে আমরা সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন জাতীয় চার নেতার সাথে পরামর্শক্রমে। বঙ্গবন্ধু এমন এক নেতা ছিলেন যে, তাঁর অবর্তমানে কে কোথায় কী কাজ করবেন এটি আগেই নির্ধারণ করতেন। ২৫ মার্চ রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার পর যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়, তখন জাতীয় চার নেতাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দক্ষতার সাথে মুজিবনগর সরকার পরিচালনা করেন। মুজিবনগর সরকারে বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রী কামারুজ্জামান সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে ’৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর দেশকে হানাদার মুক্ত করেন। আজকে স্বাধীনতার ইতিহাস অনেকেই বিকৃত করে। অথচ কি সুন্দর পরিকল্পনা নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। ’৭১-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের চারজন– শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক এবং আমাকে বঙ্গবন্ধু ডাকেন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে। বঙ্গবন্ধু আমাদের বলেন, “পড়ো, মুখস্থ করো।” আমরা মুখস্থ করলাম একটি ঠিকানা– “২১, রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা।” বলেছিলেন, “এইখানে হবে তোমাদের জায়গা। ভুট্টো-ইয়াহিয়া ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। পাকিস্তানীরা বাঙালিদের ক্ষমতা দেবে না। আমি নিশ্চিত ওরা আক্রমণ করবে। আক্রান্ত হলে এখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করবে।” বঙ্গবন্ধু সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। সদ্য নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য চিত্তরঞ্জন সুতারকে আগেই কলকাতায় প্রেরণ করেছিলেন। ডাক্তার আবু হেনা প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য। তাকেও বঙ্গবন্ধু আগেই পাঠিয়েছিলেন অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে। যে পথে আবু হেনা গিয়েছিলেন, সেই একই পথে তিনি মনসুর আলী, কামারুজ্জামান, মণি ভাই এবং আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাজেন্দ্র রোডে আমরা অবস্থান করতাম। ৮ নং থিয়েটার রোডে অবস্থান করতেন জাতীয় চার নেতা। নেতৃবৃন্দের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। কতোবার তাজউদ্দীন ভাইয়ের সাথে বর্ডারে রণাঙ্গনে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুজিববাহিনীর সাথে মুজিবনগর সরকারের ভুল বোঝাবুঝির চেষ্টা হয়েছিল। জাতীয় নেতৃবৃন্দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সকল ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রিয় মাতৃভূমিকে আমরা স্বাধীন করেছি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর আমি এবং রাজ্জাক ভাই দেশে আসি ১৮ ডিসেম্বর। ২২ ডিসেম্বর চার নেতা ফিরেন; বঙ্গবন্ধু এলেন ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি। ডিসেম্বরের ২২ তারিখ আমরা বিমানবন্দরে মুজিবনগর সরকারের জাতীয় চার নেতাকে অভ্যর্থনা জানাই। ’৭২-এর ১১ জানুয়ারি তাজউদ্দীন ভাইয়ের বাসভবনে বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাবেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন বঙ্গবন্ধু মুজিব স্বয়ং; সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিল্পমন্ত্রী; তাজউদ্দীন আহমেদ অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী; ক্যাপ্টেন মনসুর আলী যোগাযোগমন্ত্রী এবং কামারুজ্জামান ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৪ জানুয়ারি মাত্র ২৯ বছর বয়সে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হবার। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর কাছে থেকেছি শেষদিন পর্যন্ত। ’৬৯-এর পর থেকে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার অফুরন্ত স্নেহ-আদর-ভালোবাসা এবং সাহচর্য পেয়েছি। যা কোনদিন ভুলবার নয়। ’৭৪-এর ২৬ অক্টোবর, তাজউদ্দীন ভাইকে মন্ত্রীসভা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রতিদিন তাজউদ্দীন ভাইয়ের বাসায় যেতাম। তাজউদ্দীন ভাই আমায় বলতেন, “দেখো তোফায়েল, সারা জীবন যা কিছু করেছি, তার সবই মুজিব ভাইয়ের খাতায় জমা রেখেছি। আমার নিজের খাতায় কিছুই রাখি নি। যে কোন মূল্যে মুজিব ভাইকে বাঁচাতে হবে। মুজিব ভাইকে বাঁচাতে না পারলে আমরা কেউ-ই বাঁচতে পারবো না। এই স্বাধীনতা সবকিছু অর্থহীন হয়ে যাবে।” ভাবতে অবাক লাগে, তাজউদ্দীন ভাই মন্ত্রীসভায় ছিলেন না- সরকারে ছিলেন না, অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করে গেছেন!

ছবি

ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল আইনি কাঠামো কোথায়??? ============================ তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান বাংলাদেশ, নতুন প্রজর্ম্মের ছেলে মেয়েদের নিকট অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে -পেইজ বুক সহ অন্য সব সামাজিক সাইট গুলি। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যাবহার সর্বসাধারন হয়ে উঠার বয়স কিন্তু একেবারেই কম।কম হলেও বেশিরভাগ যুবক যুবতি যে হারে আসক্ত হয়ে পড়েছে অন্য পুরাতন ব্যাবহারকারি দেশ সমুহের ছেলে মেয়েরা সমহারে আসক্ত হয়নি।অন্যভাবে বলা যায় আমাদের তরুন প্রজর্ম্ম প্রযুক্তিটি যত বেশি আগ্রহ সহকারে গ্রহন করেছে উন্নত দেশ সমুহের যুবক যুবতিরা তত আগ্রহ সহকারে গ্রহন করেনি।আমাদের অনেকেই ব্যাবহার করে সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে আবার বেশ কিছু মানুষ আছেন বিনোদনের উপকরন হিসেবে গ্রহন করে সর্বক্ষন পর্ণোসাইট গুলি ঘুরে বেড়ান।খুব কম সংখ্যক মানুষ আছেন যারা প্রয়োজনীয় কাজে এই প্রযুক্তি কাজে লাগান।উন্নত দেশ সমুহের নতুন প্রজর্ম বা যুবক যুবতিদের বেশির ভাগই কিন্তু আমাদের বিপরীতে অবস্থান। তাঁরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যাবহার করে বেশির ভাগ জ্ঞান অর্জন করছে,অনেকেই টাকা রুজির হাতিয়ার বানিয়ে সঙ্গি করেছে জীবনের। ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার মাননীয় প্রধান মন্ত্রী প্রযুক্তিটি যত দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন, তত দ্রুত এর নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থাপনা আয়ত্ব করা জনশক্তি আবিষ্কার করতে পারেননি। '৯৬ ইং সালে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পয্যায় ক্ষমতা গ্রহন করে প্রযুক্তিটি সর্বসাধরনের ব্যাবহার করার সুযোগ সৃষ্টি করে মোবাইল কোম্পেনি গুলির মনোপলি ব্যাবসা ভেঙ্গে দিয়ে অবাধ করে দিয়েছিল,সাথে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর তরুন প্রজর্ম গড়ে তোলার উদ্দেশ্য প্রতিটি জেলাতে একটি করে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।সেই মোতাবেক বেশ কয়টি জেলায় তদ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে বাদ বাকি জেলাগুলোতেও প্রলিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত আছে। সরকার প্রযুক্তিটি নিয়ন্ত্রন, ব্যাবহার,সফলতা অর্জনের আগেই দেখা যাচ্ছে যারা বিজ্ঞানের উন্নতি বা প্রযুক্তির ব্যাবহার একেবারেই সহ্য করেননা তদীয় শ্রেনীর সামান্য একটি অংশ (কোনভাবেই পার্সেন্টেজের হিসেবে আসেনা) ডিজিটাল প্রযুক্তিটির আরো উন্নত সংস্করন ব্যাবহার করে নাশকতার কাজে ব্যাবহারে উৎসাহ বোধ করছেন বা নিরাপদ মনে করছেন। আরামদায়ক বলে গন্য করে যথেচ্ছ ব্যাবহার করে দেশে অরাজগতা, নাশকতায় ইন্দন দেয়ার হাতিয়ারে রুপান্তরীত করেছেন।উন্নত দেশের ছেলেমেয়েরা ব্যাবহার করে তাঁদের সভ্যতার নিদর্শনকে অনূকরনীয় অনুসরনীয় করে তুলছেন বিশ্ববাসির নিকট।তারা যখন প্রযুক্তি বিক্রি করে,সাইট ভাড়া দিয়ে ডলার আয় করে জীবনের স্বাচ্ছন্দ আনছেন -তখন আমরা ব্যাবহার করে আনছি ধ্বংশ, অরাজগতা,নাশকতা। বিশ্বের বহু দেশে পেইজ বুক বন্ধ থাকলেও তাঁদের দেশের ব্যাবহারকারিরা সরকারের সমালোচনা করেনা বা ব্যাঙ্গ করে, কাটুন একে উষ্মা প্রকাশ করে না।আমরা নতুন ব্যাবহারকারি হলেও কয়েকদিন বন্ধ করার পর বহু জন বহু ভাবে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।যিনি উষ্মা প্রকাশ করে ব্যাঙ্গ চিত্র আপলোড করছেন তিনি কস্মিনকালেও চিন্তা করেন নাই রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করে বিকল্প উপায়ে সামাজিক সাইট গুলি নিয়মিত ব্যাবহার করছেন। অথছ ফ্রান্সের মত সভ্য একটা দেশ আমাদের একই সময়ে বন্ধকরে এখন পয্যন্ত পেইজ বুক বা অন্য সামাজিক সাইট গুলি চালানোর অনুমতি দেননি। তাঁরা তো কই সব গেছে বলে হায়হুতাস করেছে তেমনটি দেখা যায়না।যারা এই সমস্ত অপকর্ম, ব্যাঙ্গচিত্র একেছেন, হায় হুতাস করেছেন তাঁরাই জঙ্গিদের সমর্থক আমি মনে করি।ভেবে দেখার দরকার ছিল আপনাদের সরকার বিনা খরছে সাইবার ক্যাবল পাওয়া সর্তেও তা গ্রহন না করে দেশকে কতদুর পিছনে ঠেলে দিয়েছিল। এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই, ২০০৫ সালে যেখানে মাত্র ১১৫ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতো সেখানে ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী সেই সংখ্যা ২৯২ কোটি, ৫২ লাখ, ৪৯ হাজার ৩৫৫ ওঠেছে। ২০১৫ সালে বিশ্বের ৩২০ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বাংলাদেশে হঠাৎ করেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৪ সালের শেষের দিকে ছিল প্রায় ৪.৮৪ কোটি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী যা ছিলো (মাত্র ১২ লাখ) এখন সেটি তার চাইতে বহু গুণ বেশি। এর পেছনে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইদথের দাম কমা, ইন্টারনেটে প্রয়োজনীয় কনটেন্টস পাওয়া এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্ক ও ব্লগিং এর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। যে কেউ এখন দেশের সকল প্রান্তের বিপুল পরিমাণ মানুষকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হওয়া অবস্থায় দেখতে পারেন, বা ভাব বিনিময় করতে পারেন। এক সময়ে যা কেবলমাত্র কিছুসংখ্যক মানুষের সাময়িক কার্যকলাপ হিসেবে গণ্য হতো এখন সেটি দেশের প্রায় সকল এলাকার মানুষেরই প্রাত্যহিক ক্রিয়া-কর্মে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ধরনের মাইলফলক । বিএনপি বা চার দলিয় জোট সরকার ২০০৬ সালে সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে দেশটিকে যুক্ত করে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে ব্যর্থ হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের সরকার সেই অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন করেছে। এই খাতকে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের যুক্ত হওয়াটাও নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের সফলতা। একই সাথে বিগত কয়েক বছরে মোবাইলের সংযোগের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ার বিষয়টিও ইতিবাচক। মোবাইলের সংযোগ বৃদ্ধি, থ্রিজির আগমন এবং মোবাইল কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতা মুলক একে অপরের প্রতি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভাবে ইন্টারনেট কানেকশন বাজারজাত করার ফলেও ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। ডিজিটাল অপরাধের একটি বড় ক্ষেত্র হচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ফেইজবুক,টুইটার,ম্যাসেঞ্জিং এর মত প্রকাশ মাধ্যমগুলি। এই মিডিয়া গুলি গত দুই বছর তিন বছরের অবস্থায় এখন আর নেই, আগের পরিধিতেও নেই। বরং ইন্টারনেট প্রচলিত মিডিয়াকে কেমন করে বদলে দিয়েছে এবং মিডিয়ার ডিজিটাল রূপান্তর কতোটা করে পেলেছে সেটি উপলব্ধি,অনুভব করার বিষয়। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, আমলা, ওলেমা মাশায়েখ, ডাকতার,ইঞ্জিনিয়ার বা সাধারণ মানুষের পক্ষে দেশের ডিজিটাল মিডিয়ার জগৎটা সম্পর্কে ধারণা করা সহজ ছিল না। তাদের কেউ সম্ভবত বিষয়টিকে কখনও গুরুত্ব দিয়ে আমলে নিয়ে চিন্তা করে দেখেননি। মিডিয়ার রূপান্তরটি কত ভিন্নমাত্রার হয়েছে তাঁর ব্যাখ্যা একেক জন একেক ভাবে করলেও উপলব্দি অনুভবের ক্ষেত্রে প্রায় সবাইর বেলায় সামান্য তারতম্য পরিলক্ষিত হলেও সহমত পোষন করেন। সামান্য একটু উদাহরন দিলে ব্যাপারটি বুঝার জন্য আরও সহজ হবে বলে মনে করি। যেমন বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকার সর্বোচ্চ সার্কুলেশন হতে পারে ৩/৪ লাখ, যদিও বেশির ভাগেরই প্রচার সংখ্যা শ' বা হাজারের কোঠায়। কাগজে ছাপা সকল পত্রিকার পাঠক সংখ্যা হতে পারে সর্বোচ্চ ৩৫/৪০ লাখ। অন্যদিকে অনলাইনে এসব পত্রিকার পাঠকসংখ্যা প্রায় ৫/৭ গুণ বেশি এবং দেশের প্রায় ৭/৭'৫০ কোটি লোক এখন অনলাইনে যুক্ত থাকে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ কোন না কোনভাবে অনলাইনে খবর সংগ্রহ করে থাকে,যুৎসই খবরটি নীজ টাইমলাইনে আপলোড করে। দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সকলেই কোন না কোনভাবে খবরটি পাঠ করে থাকে। এর পাশাপাশি বিশেষায়িত অংশগুলোর কথাও বলা যায়। শুধু ফেসবুকে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোক যুক্ত রয়েছে। অনলাইনে একজন ব্যক্তির যোগাযোগ ক্ষমতা কতটা বেড়েছে তার হিসাবটা আমি নিজের হিসাব থেকে দিতে পারি। ১৮জুলাই২০১৫ (সকাল ১০'৩০ মিনিট) সময়কালে আমার ফেসবুক বন্ধু ছিল ২৮৬০ জন। আজকে ১৮ ই ডিসেমম্বর ৪৯০২ জন। একবার ভাবুন কত দ্রুত বন্ধুর সংখ্যা বেড়েছে আর কতজনের চোখে আমার পোষটি পড়েছে।আমার পেইজ আছে সাতটি।বন্ধু আছে সবগুলি মিলিয়ে প্রায় ১৩/১৪ হাজার,আবার আমি অনেকগুলো গ্রুপের সদস্য। এসব গ্রুপে কয়েক লাখ ইউজার যুক্ত আছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাথেও যুক্ত হতে পারি। এর মানে হচ্ছে আমি দেশের সকল পত্রিকার পাঠক সংখ্যার সমান মানুষের কাছে তো একাই যেতে পারি। তারপরেও আছে গুগুল,টুইটার সং্যুক্ত বন্ধুরা।একা একজন কত মানুষের সাথে সংযুক্ত আমি।একটু ভাবুনত এই মানুষেরা কিন্তু বিশ্বের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আরও একটি বিষয় সকলের উপলব্ধি করার আছে। এমনকি কাগজের পত্রিকাগুলোরও অনলাইনের দাপট অপ লাইন থেকে অনেক বেশি। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যাবহার কারির সংখ্যা প্রতি সেকেন্ড বাড়ছে এবং তা দ্রুততার সঙ্গেই। ২০১৩ সালে ব্লগার কতৃক ইসলাম ধর্মের অবমাননার সূত্র ধরে সন্ত্রাস, ফেসবুকে পেজ খুলে ইসলাম ধর্মের নামে সন্ত্রাসের প্রসার, ব্লগারদেরকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে খুনিদেরকে লেলিয়ে দেয়া ও খুন করার মধ্য দিয়ে দেশে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের অপকর্মের কাজটিও করা হচ্ছে। আমাদের জন্য এই সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় শঙ্কাটি হচ্ছে, বাংলাদেশটিকে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর জন্য জঙ্গিরা ডিজিটাল মিডিয়াকে নিরাপদ ভাবে ব্যবহার করে যাওয়া। সরকার নিরাপদকে আপদে পরিনত করতে গেলেই তাদের সমর্থক কতৃক ব্যাঙ্গাত্বকভাবে সমালোচনায় অংশ নিয়ে দেশের মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার অপপ্রয়াসে যুক্ত হওয়া।কেবল অনলাইন মিডিয়া নয় অপ লাইনের মিডিয়া- কাগজের গুলিও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বিএনপির মুখপত্র আমার দেশ পত্রিকা এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসের যোগান দিয়ে নাশকতায় উৎসাহিত করেছে। সরকার আমার দেশের সম্পাদককে আটক না করলে সম্ভবত সেটি চরম বিপর্যয় ডেকে এনে সরকারের পতন পয্যন্ত হতে পারতো। ডিজিটালাইজেসনের সুবিধা গ্রহন করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি ফাঁস,বিচারকের টেলিফোন আলাপে আড়িপাতা, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী আপলোড করে অপপ্রচারের কথাও উল্লেখ করতে পারি। ২০১৩ সালের কথা এত তাড়াতাড়ি আমি মনে করি কারো স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়নি। সেই সময়ে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন, হেফাজতে ইসলাম ও গণজাগরণ মঞ্চ কর্তৃক পরস্পরবিরোধী অবস্থান গ্রহণ দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল সকলেই অবগত আছেন। রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকসহ সকলেরই তখন আলোচ্য বিষয় ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম ডিজিটাল সন্ত্রাসের ভয়াবয়হতা সম্পর্কিত। ডিজিটাল সন্ত্রাসকে ভিত্তি করে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা, হত্যা, গুম, আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ,স্বর্ন দোকান লুট,পবিত্র কোরানে আগুন দেয়া ইত্যাদি এতো ব্যাপকতা পেয়েছিল, এর আগে এদেশে কখনও এমনভাবে তা আর কখনই দেখা যায়নি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে টেলিভিশনের টকশো ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলে চা দোকানের আড্ডায় সর্বত্রই এর ব্যাপকতা মানুষের মুখে মুখে আলোচনার উপজিব্য ছিল। বর্বরতম আর একটি ব্যাপার উল্লেখ করা দরকার যে, এসব ডিজিটাল সন্ত্রাসের পাশাপাশি ইভ টিজিং, নারীর প্রতি সহিংসতা, ডিজিটাল পর্ণোগ্রাফি, মানি লন্ডারিং, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, স্প্যামিং, হ্যাকিং ইত্যাদির মাত্রা প্রতিনিয়ত ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই,তর্কের ও কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। পুরাতন আইন দিয়ে নতুন সমস্যার সমাধান করা যায়না।যুগের সাথে তালমিলিয়ে,উন্নত প্রযুক্তির ব্যাবহার করে সন্ত্রাসিরা ডিজিটাল সন্ত্রাসে লিপ্ত হচ্ছে,সেই ডিজিটাল সন্ত্রাস মোকাবেলা করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত প্রজর্ম্ম গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনি কাঠামোর মধ্যেও ডিজিটালাইজেসনের ব্যাবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।ডিজিটাল সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রথমেই প্রয়োজন ডিজিটাল আইন প্রয়োগকারি সংস্থা। আইন সৃজন করে তা সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য পুর্বক সংযোজন করা সময়ের দাবি। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন

ছবি

যুদ্ধাপরাধের বিচার নুরেমবার্গ থেকে ঢাকা: ঐতিহাসিক বিশ্লেষণশাহরিয়ার কবিরদৈনিক জনকন্ঠে চার খন্ডে প্রকাশিত হয়েছিলকেউ কোন অপরাধ করলে তার বিচার হতে হবে সমাজের এই নিয়ম সভ্যতার বোধের অন্তর্গত। হত্যা, নির্যাতন, সম্পদ লুণ্ঠন বা সম্পদহানি প্রাচীনকাল থেকেই মানব সমাজে অপরাধ হিসেবে গণ্য। এ সব অপরাধের বিচার ওশাস্তির বিধান ভারত, চীন, মেসোপটেমিয়া, গ্রীস ও মিসরের প্রাচীন ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে।যুদ্ধের সময় বিবদমান উভয় পক্ষকে কিছু নিয়ম বা রীতি মান্য করার বিধান মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম গৃহীত হয়েছে প্রাচীন ভারতবর্ষে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়। এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল পাঁচ হাজার বছরের আগে। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ‘মহাভারত’-এ এই যুদ্ধের কারণ, বিবরণ, যুদ্ধের অস্ত্র, কলাকৌশল, কূটনীতি প্রভৃতির পাশাপাশি যুদ্ধের আইনের উল্লেখ রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বিবদমান পা-ব ও কৌরবরা কতগুলো নিয়ম বা আইন মান্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে যুদ্ধের সময় উভয় পক্ষই এসব আইন ভঙ্গ করে যুদ্ধাপরাধ করেছিল। সেই সময় যুদ্ধাপরাধের জন্য জাগতিক শাস্তির বিধান ছিল না। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আইন লঙ্ঘনকারীরা যুদ্ধাপরাধের জন্য ঐশ্বরিক শাস্তি ভোগ করেছিলেন, যে শাস্তি থেকে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরও রেহাই পাননি। তাঁর অপরাধ ছিল প্রতিপক্ষকে অর্ধসত্য বলে প্রতারণার।কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর চীন, মেসোপটেমিয়া, মিসর ও গ্রীসে যুদ্ধের নিয়ম বা আইনের উল্লেখ সামরিক ইতিহাসে পাওয়া যাবে। আইন ও বিচারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছিল প্রাচীন গ্রীসে। এথেন্সের ক্ষমতাবান শাসক ও সমরনায়ক এ্যালিবিয়াদিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০-৪০৪)-এর বিচার হয়েছিল সিসিলির বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান পরিচালনাকালে যুদ্ধের আইন ভঙ্গের জন্য। এথেন্সের আদালতে তারঅনুপস্থিতিতে বিচার হয় এবং তাঁকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। পরে সিসিলি জয় করে ফিরে আসার পর এথেন্সবাসী তাকে বীর হিসেবে বরণ করে এবং আদালত শাস্তি প্রত্যাহার করে নেয়।বিশ শতকের আগে যুদ্ধকালে সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন প্রভৃতি অপরাধের জন্য বিচারের কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছি ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্বে। ঐতিহাসিক বাসিয়োনির মতেযুদ্ধাপরাধের জন্য প্রথম বিচারের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে ইতালি থেকে। ১২৬৮ সালে নেপলস-এর কনরাডিন ভন হোহেনস্টেফানের বিচার হয়েছিল যুদ্ধের আইন ভঙ্গের জন্য এবং তাকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছিল। এর এগারো বছর পর ১২৭৯ সালে ইংল্যান্ডে ‘ওয়েস্টমিন্স্টার আইন’ (স্ট্যাটিউট অব ওয়েস্টমিন্স্টার) পাস হয়, যেখানে আইন ভঙ্গের জন্য সেনাবাহিনীর বিচারের ক্ষমতা রাজাকে দেয়া হয়েছে। এই আইনের অধীনে ১৩০৫ সালে স্কটল্যান্ডের স্যার উইলিয়াম ওয়ালেসের (১২৭২-১৩০৫) বিচার হয়। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের। এ ছাড়াও ওয়ালেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যুদ্ধের সময় বয়স ও নারীপুরুষ নির্বিশেষে গণহত্যার জন্য। ইংল্যান্ডের আদালত তাঁকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করলেও স্কটল্যান্ডে স্যার উইলিয়াম ওয়ালেস স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক ও জাতীয় বীর হিসেবে আজও সম্মানিত।ইতালিতে হোহেনস্টেফান এবং ইংল্যান্ডে উইলিয়াম ওয়ালেসের বিচার হয়েছিল সেই সব দেশের রাজার আইনে, যাছিল নির্দিষ্ট দেশের জন্য প্রযোজ্য। তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালত স্থাপনের প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে অস্ট্রিয়া ১৪৭৪ সালে স্যার পিটার ভন হাগেনবাখের (১৪২০-১৪৭৪) বিচারের ক্ষেত্রে। বার্গান্ডির ডিউক চার্লস (যিনি ‘চার্লস দি টেরিবল’ নামে বেশি পরিচিত) ব্রেইসাখের শাসক নিযুক্ত করেছিলেন হাগেনবাখকে। অস্ট্রিয়া তখন রোমান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। ব্রেইসাখের শাসক হিসেবে হাগেনবাখ হত্যা ও নির্যাতনের বিভীষিকাময় রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। হাগেনবাখের দখল থেকে ব্রেইসাখকে মুক্ত করে অস্ট্রিয়া ও তার মিত্ররা। হাগেনবাখকে বিচারের নির্দেশ দেন রোম সম্রাট। এই বিচারের জন্য রোমান সাম্রাজ্যের ২৮টি দেশ থেকে বাছাই করা ২৮ জন বিচারকের সমন্বয়ে একটি বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছিল। এই আদালতে হাগেনবাখের বিচার হয়েছিল ঈশ্বর ও প্রকৃতির আইন লঙ্ঘনের জন্য। তার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, অবৈধ কর আদায়, সম্পত্তি দখল ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছিল। হাগেনবাখ অবশ্য আদালতে বলেছেন, তিনি সবই করেছেন তার নিয়োগদাতা বার্গান্ডির ডিউকের নির্দেশে। এই বিচারকার্য শুরুর এক বছর আগে ডিউক চার্লস মারা গিয়েছিলেন। আদালত হাগেনবাখের যুক্তি খারিজ করে তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে। রায়ে তার নাইট উপাধি বাতিল করে তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। ৯ মে ১৪৭৪ তারিখে শিরñেদের মাধ্যমে হাগেনবাখের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। হাগেনবাখের এই বিচারের মাধ্যমে যুদ্ধআইনে ‘অধিনায়কের দায়বদ্ধতা’র (কমান্ড রেসপনসিবিলিটি) ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়,যা পরবর্তীকালে এ ধরনের বিচারের সূত্র হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। একই সঙ্গে এই বিচার ‘আন্তর্জাতিক আদালত’-এর ধারণাও প্রতিষ্ঠা করেছে।বিশ শতকের আগে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে একটি বহুল আলোচিত মামলা হচ্ছে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন হেনরি রীযের বিচার। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় (১৮৬১-১৮৬৫) হেনরি একটি কারাগারের দায়িত্বে ছিলেন। এই গৃহযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল ৩,৫৯,৫২৮। কারাগারে আটক যুদ্ধবন্দী মৃত্যুর সংখ্যা ২৪,৮৬৬। ক্যাপ্টেন হেনরির বিরুদ্ধে ১৩টি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল, যার ভেতর হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও আঘাত অন্যতম। ক্যাপ্টেন হেনরির বিচার হয়েছিল সামরিক আদালতে, যার প্রধান বিচারকছিলেন মেজর জেনারেল লিউ ওয়ালেস (‘বেনহুর’ উপন্যাসের রচয়িতা)। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটা ছিল প্রথম যুদ্ধাপরাধের বিচার। বিচারে ক্যাপ্টেন হেনরিকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।যুদ্ধের ব্যাপক নিষ্ঠুরতা, হত্যা ও নির্যাতনের বিভীষিকা গত শতাব্দীতে আমরা প্রথম প্রত্যক্ষ করি প্রথম মহাযুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৮)। চার বছরের এই মহাযুদ্ধ মানব জাতির বিবেককে প্রচ-ভাবে আলোড়িত করেছিল। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য জার্মানিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই।ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স যুদ্ধ চলাকালে পৃথকভাবে দাবি করেছে- যারা স্থলে ও সমুদ্রে যুদ্ধ ও মানবতার আইন লঙ্ঘন করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। ১৯১৮ সালে ৫ অক্টোবর ফরাসী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল- আন্তর্জাতিক আইন ও মানব সভ্যতার মূলনীতি অগ্রাহ্য করে যারা যুদ্ধ করেছে তারা শাস্তি থেকে অব্যাহতি পেতে পারে না। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী লুই বারথু ১৯১৭ সালের ৩ নবেম্বর বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি পেতেই হবে এবং এটা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।১৯১৮ সালের ১১ নবেম্বর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইংল্যান্ডের লর্ড হাই চ্যান্সেলর ভাইকাউন্ট বিরকেনহেড দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির দায়িত্ব ছিল ১ম বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের ঘটনা সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রণয়ন করা। এরপর ভার্সাইতে মিত্রশক্তির সঙ্গে জার্মানির বৈঠকে ঐতিহাসিক ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯১৯ সালের ২৮ জুন। এই চুক্তি সম্পর্কে জার্মানি পরে বলেছে তাদের এতে স্বাক্ষর প্রদানে বাধ্য করা হয়েছিল।ভার্সাই চুক্তির ৪৪০টি অনুচ্ছেদের ভেতর জার্মানির প্রতি শাস্তিমূলক বহু ধারা রয়েছে। এই চুক্তির সপ্তম পর্বে ২২৭, ২২৮ ও ২২৯ অনুচ্ছেদে জার্মানির সম্রাট দ্বিতীয় উইলিয়াম হোহেনযোলেনসহ তদন্তে অভিযুক্ত সকল জার্মান যুদ্ধাপরাধীকে সামরিক আদালতে বিচারের কথা বলা হয়েছে।ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী মিত্রশক্তি প্রথমে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ১৯ হাজার ব্যক্তির তালিকা তৈরি করেছিল। এই তালিকা বলা বাহুল্য জার্মানির কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। জার্মান প্রতিনিধিরা বলেছেন এত বেশি ব্যক্তির বিচারের যেমন সমস্যা রয়েছে- এই বিচার শুরু হলে জার্মানিতে গৃহযুদ্ধ বাধতে পারে। মিত্রশক্তি এই যুক্তি মেনে নিয়ে যাচাই বাছাই করে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৯৫ জন এবং শেষে চূড়ান্তভাবে ৪৫ জন যুদ্ধাপরাধীর একটি তালিকা জার্মানিকে প্রদান করে।জার্মানির কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম যুদ্ধে পরাজয়ের পর নেদারল্যান্ডে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নেদারল্যান্ডস নিরপেক্ষ ছিল। এ ছাড়া কাইজার উইলিয়াম আত্মীয়তার সূত্রে নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। সেই সময় ইউরোপের অধিকাংশ রাজ পরিবার একটি অপরটির সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ ছিল।মিত্রশক্তি আশা করেছিল কাইজারের বিচার সম্ভব না হলেও ৪৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার জার্মানি করবে। কিন্তু সমস্যা ছিল বিচারের আইন ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে এবং জার্মান সরকারের সদিচ্ছার। জার্মানির আইন এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও আমেরিকার আইন এক নয়। এ ছাড়া বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে জার্মান ভাষায়, মিত্রশক্তির সাক্ষীদের জন্য যা ছিল অস্বস্তিকর ও বিরক্তিকর। বিচারে জার্মান সরকারের আগ্রহও আন্তরিকতার অভাব লক্ষ্য করে কিছু ব্রিটিশ সাক্ষী শেষ পর্যন্ত লাইপযিগের আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।জার্মান সুপ্রীমকোর্ট শেষ পর্যন্ত মাত্র ২২ জন যুদ্ধবন্দীর বিচার করেছিল যাদের ভেতর সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল তিন বছর কারাদন্ড যার এই শাস্তি হয়েছে তার অপরাধ ছিল সে মিত্রশক্তির একটি সমুদ্রগামী হাসপাতাল জাহাজ টর্পেডোর আঘাতে ডুবিয়ে দিয়েছিল- যে জাহাজে দুই শতাধিক আহত ও অসুস্থ সৈন্য এবং সাধারণ রোগী ছিল। ঠান্ডা মাথায় দুই শতাধিক নিরস্ত্র, আহত ও অসুস্থ মানুষকে হত্যার জন্য ওবেরলেফট্যানেন্ট সি প্যাটজিগকে মাত্র তিন বছরের কারাদ- প্রদান করে ‘লাইপজিগ ট্রায়াল’ ন্যায়বিচারের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।মানব জাতির ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যা, নির্যাতন, ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) সময়। জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি বাহিনী, ইতালিতে মুসোলিনির ফ্যাসিস্টবাহিনী এবং প্রাচ্যে জেনারেল তোজোর রাজকীয় জাপানী বাহিনীর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কথা বিশ্ববাসী কখনও ভুলবে না। হিটলারের নাৎসি বাহিনী এবং তাদের সহযোগী গেস্টাপোও অন্যান্য বাহিনী যেভাবে ইহুদি, কমিউনিস্ট ও অজার্মানদের হত্যা করেছে সভ্যতার ইতিহাসে তার কোনও নজির নেই। যুদ্ধের ইতিহাসবিদরা নাৎসিদের এই নৃশংসতাকে আখ্যায়িত করেছেন ‘হলোকস্ট’ বা ‘শোয়াহ্’ নামেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মিত্রশক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা প্রদান করে। ১৯৪৩ সালে ৩০ অক্টোবর ঐতিহাসিক ‘মস্কো ঘোষণা’ স্বাক্ষরিত হয়। এতে বলাহয়েছে, অক্ষশক্তির যে সব রাজনৈতিক নেতা ও সমর অধিনায়কদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের গ্রেফতার করে বিচার করা হবে। মস্কো ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৪৫ সালের ৪-১১ ফেব্রুয়ারি ইয়াল্টা কনফারেন্সে মিলিত হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল এবং সোভিয়েত রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্টালিন। এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় বিজয়ের পর মিত্রশক্তি সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে। শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে তিন দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা সম্মিলিতভাবে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করবে।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ইয়াল্টা সম্মেলনে চার্চিল বলেছিলেন, যুদ্ধজয়ের পর দেরিনা করে পরাজিত সব নাৎসি নেতাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে। স্টালিন বলেছিলেন আমাদের দেশে আমরা কাউকে বিচার না করে শাস্তি দিই না। বিরক্ত চার্চিল বলেছিলেন, আমরা বিচার করেই তাদের ফাঁসিতে ঝোলাব।ইয়াল্টা সম্মেলনের পর মিত্রশক্তি যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা ও প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। তাদের সামনে ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতা- প্রয়োজনীয় আইন এবং আন্তরিকতার অভাব ঘটলে কিভাবে যুদ্ধাপরাধীরা বিচার ও শাস্তি থেকে অব্যাহতি লাভ করে। ১৯৪৫ সালের ৮ আগস্ট মিত্রশক্তি ‘লন্ডন চুক্তি’ স্বাক্ষর করে। এতে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল’-এ। ট্রাইব্যুনালের নীতি ও কার্যবিধি এই চুক্তির ভেতর অনুমোদন করা হয়। এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন জাস্টিস এইচ জ্যাকসন, ফ্রান্সের অস্থায়ী সরকারের পক্ষে রবার্ট ফ্যালকো, যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সরকারের পক্ষে জোউইট সি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকারের পক্ষে আই নিকিশেঙ্কো ও এ ট্রাইনিন।এই চুক্তি অনুযায়ী মিত্রশক্তির চারটি দেশ ট্রাইব্যুনালের জন্য নিজ নিজ দেশের আইনজীবী ও বিচারক নিয়োগ চূড়ান্ত করে। যুক্তরাষ্ট্র ‘আন্তর্জাতিক সামরিক আদালত’ (আইএমটি)-এর প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি রবার্ট এইচ জ্যাকসনকে নিয়োগ করে।২০ নবেম্বর ১৯৪৫ তারিখে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম আরম্ভ হয়। এর আগে ১৮-১৯ অক্টোবর মিশ্রশক্তির আইনজীবীরা ‘আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতে’ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২৪ জন শীর্ষস্থানীয় নাৎসি নেতা ও সমরনায়ক এবং ৭টি সংগঠনকে সুপরিকল্পিতভাবে লাখ লাখ মানুষ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে ৬৫ পৃষ্ঠার অভিযোগনামা পেশ করেন। বিচার শুরু হওয়ার আগে নাৎসি পার্টির প্রধান হিটলারএবং তার দুই শীর্ষ সহযোগী হিমলার ও গোয়েবলস আত্মহত্যা করার জন্য বিচার থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। অভিযুক্তদের তালিকায় ১ নম্বর আসামি ছিলেন ডেপুটি ফুয়েরার মার্টিন বোরমান। গ্রেফতারের আগেই তিনি আত্মগোপন করেছিলেন।১৯টি তদন্ত দল অভিযুক্ত নাৎসি নেতাদের দুষ্কর্ম সম্পর্কে তদন্ত করেছেন। নাৎসি সরকারের দলিল, চিঠিপত্র, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র সংগ্রহ করা ছাড়াও তারা অনেক বন্দী নির্যাতন শিবির পরিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের জবানবন্দী নথিবদ্ধ করেছিলেন।ব্যক্তির বিচারের পাশাপাশি নুরেমবার্গে ৭টি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কর্মকা- সম্পর্কে তদন্ত ও বিচার হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে- ১) নাৎসি পার্টির নেতৃত্ব, ২) রাইখ সরকারের মন্ত্রিসভা, ৩) এসএস, ৪) গেস্টাপো ৫) এসডি, ৬) এসএ এবং ৭) জার্মান হাই কমান্ড। বিচারে ৪টি সংগঠন দোষী প্রমাণিত হয়েছেএবং রায়ে এদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য ৭টি নীতি বা ধারা প্রণয়ন করা হয়েছিল। ৬ নং ধারায় বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক আইনে যে সব অপরাধ শাস্তিযোগ্য বলে নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ক) শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, খ) যুদ্ধাপরাধ ও গ) মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এরপর এই তিনটি অপরাধের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর আগে এত নির্দিষ্টভাবে এই সব অপরাধ আইনশাস্ত্রে বিধিবদ্ধ হয়নি। নুরেমবার্গ নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানও অব্যাহতি পাবেন না। এই নীতিমালার ভিত্তিতেই প্রস্তুত করা হয়েছিল অভিযোগনামা।প্রত্যেক দেশের বিচার ব্যবস্থার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পশ্চিমে প্রধানত দুই ধরনের বিচার পদ্ধতিঅনুসরণ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তিদের ভেতর আমেরিকা ও বৃটেন অনুসরণ করে ‘দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি’ (অফাবৎংধৎরধষ ঝুংঃবস)। অন্যদিকে ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়ন অনুসরণ করে ‘অনুসন্ধানমূলক পদ্ধতি’ (ওহয়ঁরংরঃরাব ঝুংঃবস)। আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থার উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের দেশে আদালতে বিচারক থাকেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। সাধারণত দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে তারই ভিত্তিতে তিনি রায় দেন। অন্যদিকে ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশের আদালত প্রধানত বিচারককেন্দ্রিক। বিচারক নিজেও বাদী ও বিবাদীকে প্রশ্ন করতে পারেন, দুই পক্ষের আইনজীবীদেরও জেরা করতে পারেন এবং নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রায় দেন।লন্ডনে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের নীতি প্রণয়নের সময় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর কিছু পরিমার্জনসহ ‘দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি’ গ্রহণ করা হয়। এরপর প্রশ্ন উঠেছিল নতুন নীতিমালার ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা (জবঃৎড়ংঢ়বপঃরাব বভভবপঃ) সম্পর্কে। কোন অপরাধের বিচারের সময় বাদী পক্ষের আইনজীবীকে আদালতে বলতে হয় সেই অপরাধ আইনের কোন কোন ধারায় দন্ড যোগ্য। অপরাধ যখন সংঘটিত হয় তখন যে আইন বলবৎ ছিল সেই আইনে অপরাধীর বিচার হয়। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের নীতি ও আইন প্রণয়নের সময় মিত্রশক্তির আইনপ্রণয়নকারীদের এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হয়েছেজ্জ তারা নতুন কোন আইন তৈরি করতে যাচ্ছেন না যা আইনশাস্ত্রে ইতিপূবে বর্ণিত হয়নি। নুরেমবার্গে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ ও ‘শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধে’র বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রথমবারের মতো সূত্রবদ্ধ করা হলেও হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, বাধ্যতামূলক শ্রম, যৌনদাসত্ব, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতি প্রভৃতি বহু আগে থেকেই অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। জাস্টিস জ্যাকসন লন্ডন বৈঠকের শুরুতেই মিত্রশক্তির সহযোগীদের বলেছিলেন, আমরা এমন সব কর্মকান্ডের বিচার করতে যাচ্ছি যা আদিকাল থেকে অপরাধ হিসেবে পরিগণিত এবং প্রতিটি সভ্য দেশে যার বিচার করা হয়।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের নীতি ও কার্যবিধি প্রণয়নের সময় মিত্রপক্ষের আইনজীবীরা সম্ভাব্য সকল চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। জাস্টিস জ্যাকসন তার উদ্বোধনী ও সমাপনী ভাষণে প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য সমালোচনা ও বিরুদ্ধ যুক্তি অত্যন্ত মেধা ও দক্ষতার সঙ্গে খন্ডন করেছেন। একটি সমালোচনা নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এটি ছিল ‘বিজয়ীর বিচার’ (ঠরপঃড়ৎ’ং ঔঁংঃরপব)।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের উদ্বোধনী ভাষণে জাস্টিস জ্যাকসন এ বিষয়ে বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় এইযে, আদালত গঠন সহ আইনজীবী ও বিচারক সবই নিয়োগ করতে হয়েছে যুদ্ধে বিজয়ী মিত্রশক্তিকে পরাজিত অক্ষশক্তির অপরাধের বিচারের জন্য। অভিযুক্তদের বিশ্বব্যাপী আগ্রাসনের কারণে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ কেউ নেই বললেই চলে, যারা এই বিচারে আগ্রহী হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হয় পরাজিতদের বিচার করতে হবে বিজয়ীদের, নয় তো পরাজিতদের অপরাধের বিচারের ভার তাদের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়টির অকার্যকারিতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অপরাধীদের বিচার কার্যক্রম থেকে।অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের আপিলের সুযোগ নেই, এমনকি বিচারকদের সম্পর্কে আপত্তি উত্থাপনেরও কোন সুযোগ কার্যবিধিতে রাখা হয়নি। এ বিষয়ে অক্সফোর্ডের অধ্যাপক এ এল গুডহার্ট লিখেছেন, ‘তত্ত্বগতভাবে এই যুক্তি আকর্ষণীয় মনে হতে পারে, তবেতা যে কোন দেশের বিচারব্যবস্থার পরিপন্থী। এই যুক্তি মানতে হলে কোন দেশ গুপ্তচরদের বিচার করতে পারবে না। কারণ যে দেশের আদালতে সেই গুপ্তচরের বিচার হবে সেখানকার বিচারক তার শত্রুদেশের। এ ক্ষেত্রে কেউ নিরপেক্ষতার কথা বলতে পারে না। বন্দি গুপ্তচর বিচারকদের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতে পারে কিন্তু কোন অবস্থায় তাদের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে না। (ক্রমশ.)লর্ড রিট যেমন বলেছেন একই নীতি সাধারণ ফৌজদারি আইনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। একজন চোর নিশ্চয়ই অভিযোগ করতে পারে না তার বিচার কেন সৎ লোকেরা করছে।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে জাস্টিস জ্যাকসনের উদ্বোধনী ভাষণের মতোই আকর্ষণীয় ছিল তাঁর সমাপনী ভাষণ। ১৯৪৫-এর ২৬ জুলাই-এ প্রদত্ত এই ভাষণের উপসংহারে শেক্সপিয়ারের ‘রিচার্ড দি থার্ড’ নাটকেরএকটি উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ... অভিযুক্তরা বলছেন তারা হত্যা, হত্যার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের এই দীর্ঘ তালিকায় বর্ণিত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তারা এই বিচারের সামনে এমনভাবে নিজেদের দাঁড় করিয়েছেন যেভাবে রক্তরঞ্জিত গ্লচেস্টার দাঁড়িয়েছিলেন তার নিহত রাজার লাশের সামনে। এদের মতো গ্লচেস্টারও বিধবা রানীকে বলেছিলেন, আমি হত্যা করিনি। রানী জবাবে বলেছিলেন, ‘তাহলে বল তারা নিহত হয়নি, কিন্তু তারা মৃত।’ যদি এদের (অভিযুক্তদের) সম্পর্কে বলা হয় এরা নিরাপরাধ, তাহলে তা এমনই সত্য হবে যুদ্ধ বলে কিছু হয়নি, কেউ নিহত হয়নি, কোন অপরাধের ঘটনাও ঘটেনি।’অভিযুক্তরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় সকল অপরাধের দায় হিটলার, হিমলার ও গোয়েবলস-এর উপর চাপিয়েছিলেন, যারা জার্মানির আত্মসমর্পণের আগেই বার্লিনে ২৫ ফুট মাটির নিচে বাঙ্কারে সপরিবারে আত্মহত্যা করেছিলেন। এ বিষয়ে ব্রিটেনের প্রধান কৌঁসুলি স্যার হার্টলি শকরস তাঁর সমাপনী বক্তব্যেবলেছিলেন, ‘কেউ হয়ত অন্যদের চেয়ে বেশি অপরাধ করতে পারে, হতে পারে কেউ অপরাধ সংঘটনে অন্যদের চেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকায় ছিল । কিন্তু অপরাধ যদি গণহত্যা, দাসত্ব, বিশ্বযুদ্ধদুই কোটি মানুষের প্রাণহানির মতো গুরুতর হয়, যদি একটি মহাদেশ ধ্বংসের মতো এবং বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত দুঃখক্লেশ ও বেদনার কারণ হয় তখন কে কম অপরাধ করেছে আর কে বেশি করেছে তাতে এই ক্ষত মিটবে না। কেউ কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী, কেউ দায়ী কয়েক লক্ষের মৃত্যুর জন্য, এতে অপরাধের কোন তারতম্য ঘটছে না।’নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রক্রিয়া এবং এর মান সম্পর্কে অনেকে তখন অনেক কথা বলেছেন। নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের উকিলরা বলেছিলেন এই ট্রাইব্যুনালে তারা ন্যায় বিচার পাবেন না। তারপরও বিচার চলাকালে কয়েকজন শীর্ষ নাৎসি নেতা এই ট্রাইবুনালকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। নাৎসি নেতা হ্যান্স ফ্র্যাঙ্ক ছিলেন অধিকৃত পোল্যান্ডের গবর্নর জেনারেল। তিনি বলেছেন, ‘আমার বিবেচনায় এই বিচার হচ্ছেঈশ্বরের ইচ্ছাধীন আদালতে, যেখানে এডলফ হিটলারের আমলের দুঃসহ যাতনার পর্যালোচনা ও সমাপ্তি ঘটবে।’ হিটলারের যুদ্ধসামগ্রী নির্মাণ মন্ত্রী এ্যালবার্ট স্পিয়ার বলেছেন, ‘এই বিচার জরুরী। এমনকি একটি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রেও এসব ভয়াবহ অপরাধের সম্মিলিত দায় থাকে।’ অভিযুক্তদের একজন আইনজীবী ড. থিয়োডর ক্লেফিশ লিখেছেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া ও রায় সর্বোচ্চ পক্ষপাতহীনতা, বিশ্বস্ততা ও ন্যায়বোধ দাবি করে। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল এই সব দাবি মর্যাদার সঙ্গে পূরণ করেছে।এই বিশাল বিচারযজ্ঞের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সত্য ও ন্যায় অনুসন্ধান ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যাতেকারও ভেতর কোন সন্দেহ না থাকে।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে ৪টি মিত্র দেশের ৮ জন বিচারক ছিলেন যাদের একজন পূর্ণ সদস্য অপরজন বিকল্প সদস্য। বিচারকমন্ডলীর সভাপতি ছিলেন ইংল্যান্ডের লর্ড জাস্টিস জিওফ্রে লরেন্স। ৪টি দেশের ৫২ জন আইনজীবী ছিলেন সরকারের পক্ষে। প্রত্যেক দেশের এক মুখ্য আইনজীবী এবং কয়েকজন আইনজীবী ও সহকারী আইনজীবী ছিলেন, তবে সরকারি আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আদালতে সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস জ্যাকসন। তাঁর এই দুটি দীর্ঘ ভাষণ আন্তর্জাতিক আইনশাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে গণ্য করা হয়।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের একটি সচিবালয় ছিল। বিভিন্ন বিভাগে মোট ১৮ জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম দফা বিচারকালে ৬ জন ছিলেন সচিব, ২ জন মার্শাল, অনুবাদ বিভাগের প্রধান ছিলেন ৩ জন, প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান ১ জন, সাক্ষীদের তলব ও সাক্ষ্য প্রমাণ বিভাগের ১ জন প্রধান, অভিযুক্তদের তথ্য বিভাগের প্রধান ১ জন, দলিল ও রেকর্ডের বিভাগের দায়িত্বে ১ জন, রেকর্ড সম্পাদক ১ জন এবং মুদ্রণ বিভাগের পরিচালক ১ জন। এই সচিবালয়ের বিভিন্ন বিভাগে তিন শতাধিক কর্মচারী ছিলেন। জনশক্তির বিবেচনায় নুরেমবার্গ ট্রায়ালের দ্বিতীয় উদাহরণ বিচারের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। এই বিচারকার্যের বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণের জন্যআমেরিকা থেকে ৬৪০ জন সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তি নুরেমবার্গ এসেছিলেন যাদের ভেতর ১৫০ জন ছিলেন আইনজীবী।নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করলেও নুরেমবার্গ ট্রায়ালের রেকর্ড কখনও ভাঙা যাবে না। বিচার চলাকালে কয়েক শ’ সৈন্য ৭৫ মি.মি. কামান সমেত প্যালেস অব জাস্টিসের চতুর্দিকে টহল দিত। শতাধিক মিলিটারি পুলিস আদালত ভবনের ভেতরে টহল দিত। ১৯৪৬-এর ৩০ সেপ্টেম্বর সেদিন আদালতের রায় ঘোষণা করা হয় সেদিন অতিরিক্ত ১০০০ সৈন্য নিরাপত্তার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল।১৯৪৯ সালের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আদালত বার্লিনে স্থানান্তর করা হয়। অন্যান্য মিত্র দেশের আদালতেও ১৬০০ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে, যারা পরে ধরা পড়েছেন।ট্রাইব্যুনালে ৪টি ভাষায় (ইংরেজী, ফরাসী, রুশ ও জার্মান) বিচারিক কার্য সম্পাদিত হয়েছে। আদালতের৪০৩টি প্রকাশ্য অধিবেশনে দুই শতাধিক সাক্ষী উপস্থিত হয়ে অভিযুক্তদের পক্ষে ও বিপক্ষে মৌখিক সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। ১৮০৯ জন সাক্ষীর এফিডেভিট আদালতে প্রদান করা হয়েছে। ১৫৫০০০ ব্যক্তির স্বাক্ষরকৃত ৩৮ হাজার এফিডেভিট প্রদান করা হয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে। এসএসদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে ১৩৬২১৩টি এফিডেভিট। ১০,০০০ এসএ-র পক্ষে, ৭,০০০ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এবং ২,০০০ এফিডেভিট গেস্টাপোদের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে। প্রায় তিশ লাখ ফুট প্রামাণ্যচিত্রের ফিল্ম পরীক্ষা করে এক লাখ ফুট নুরেমবার্গে আনা হয়েছিল। ২৫,০০০-এরও বেশি আলোকচিত্র প্রমাণ হিসেবে নুরেমবার্গে আনা হয়েছিল। এর ভেতর ১৮,০০০ আলোকচিত্র ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মিত্রপক্ষের আইনজীবীরা তিন হাজার টন রেকর্ড আদালতে প্রদান করেছিলেন।নুরেমবার্গের আদালতে ৪০০ দর্শনার্থী/পর্যবেক্ষককে অনুমতি দেয়া হয়েছিল প্রাত্যহিক বিচারকার্য প্রত্যক্ষ করার জন্য।পর্যবেক্ষকদের তালিকায় মন্ত্রী, বিচারক, আমলা, আইনপ্রণেতা ও মানবাধিকার কর্মীরা ছিলেন। এ ছাড়া ২৩টি দেশ থেকে ৩২৫ জন সাংবাদিক প্রতিদিন উপস্থিত থেকে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার করেছেন।জাস্টিস জ্যাকসন পরে বলেছিলেন, প্রাথমিকভাবে তিনি প্রমাণের জন্য নির্ভর করেছেন নাৎসি নেতাদের লিখিত বক্তব্য, সরকারী দলিল এবং পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ওপর। তিনি সাক্ষীর ওপর বেশি নির্ভর করেননি এ কারণে যে, প্রতিপক্ষ বলতে পারে সাক্ষীদের প্রভাবিত করে শিখিয়ে-পড়িয়ে আনা হয়েছে। (ক্রমশ.)ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে আমরা বিস্তারিত জেনেছি অসউইজসহ বিভিন্ন বন্দীশিবিরে কী নৃশংসভাবে ইহুদি বন্দীদের গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।১ অক্টোবর ১৯৪৬ সালে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে প্রথম পর্যায়ে শীর্ষস্থানীয় ২৪ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারে ১২ জনকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। ৩ জনকে যাবজ্জীবন, ২ জনকে ২০ বছর, ১ জনকে ১৫ বছর এবং ১ জনকে ১০ বছর কারাদ- প্রদান করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩ জন খালাস পায়। অভিযুক্ত বাকি দুজনের ভেতর জার্মান শ্রমিক ফ্রন্ট ডিএএফ-এর প্রধান গুস্তাভ ক্রুপকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য মেডিকেল বোর্ড বিচারের সম্মুখীন হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করে। অপর অভিযুক্ত ডাঃ রবার্ট লাই বিচার শুরুহওয়ার আগে ২৫ অক্টোবর ১৯৪৫ তারিখে আত্মহত্যা করেন। নাৎসি পার্টির সেক্রেটারি, ডেপুটি ফুয়েরার মার্টিন বোরমানের অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছিল এবং তাঁকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়।নুরেমবার্গ ট্রায়াল বলতে সাধারণভাবে প্যালেস অব জাস্টিসে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনালে’র প্রথম বিচারকে গণ্য করা হয়, যার সময়কাল ছিল ১০ মাস। ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত নুরেমবার্গের প্যালেস অব জাস্টিসে আরও ১২টি মামলার বিচার হয়েছিল যেখানে ২০০ জন নাৎসি রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা ও পেশাজীবীর বিচার হয়েছিল। এদের ভেতর ২৪ জনকে প্রথমে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল, পরে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। অবশিষ্টদের ২০ জনকে যাবজ্জীবন এবং ৯৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩৫ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। গুরুতর অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে ৪ জনকে বিচার থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ৪ জন বিচার চলাকালে আত্মহত্যা করেছিলেন।উপরোক্ত ১২টি মামলা ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল’-এ হয়নি। কারণ প্রথম ২৪ জনের মামলা চলাকালে চার মিত্রশক্তির ভেতর বিভিন্ন বিষয়ে গুরুতর মতপার্থক্য ঘটেছিল। ১৯৪৫-এর ৩০ আগস্ট পরাজিতজার্মানির রাষ্ট্রীয় কর্মকা- পরিচালনার জন্য যখন মিত্রশক্তির কন্ট্রোল কাউন্সিল (এসিসি) গঠিত হয় তখনও বিচারের পদ্ধতি সম্পর্কে শরিকদের ভেতর মতপার্থক্য যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। এসিসির নীতিমালায় বলা হয়েছে শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্মিলিতভাবে করা হলেও যারা পরে যার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ধরা পড়বে সেই দেশ তাদের বিচার করবে। ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইবুনালে’ (আইএমটি) ২৪ জন শীর্ষ নাৎসি নেতার বিচার শেষ হওয়ার পর ‘আইএমটি’র বিলুপ্তি ঘটে। একই ভবনে আমেরিকা গঠন করে ‘নুরেমবার্গ মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল (এনএমটি)।এই ট্রাইব্যুনালে নিম্নোক্ত ১২টি মামলা হয়েছিল১। ডক্টর্স ট্রায়াল (৯ ডিসেম্বর ১৯৪৬২০ আগস্ট ১৯৪৭) : বিচার হয়েছিল ২৪ জনের, ২। মিল্চ্ ট্রায়াল (২ জানুয়ারি১৬ এপ্রিল ১৯৪৭) : বিচার হয়েছিল ১ জনের, ৩। জাজেস ট্রায়াল (৫ মার্চ৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭): বিচার হয়েছিল ১৬ জনের, ৪। পল ট্রায়াল (৮ এপ্রিল ৩ নবেম্বর ১৯৪৭) : বিচার হয়েছিল ১৮ জনের, ৫। ফ্লিক ট্রায়াল (১৯ এপ্রিল ২২ ডিসেম্বর ১৯৪৭) : বিচার হয়েছিল ৬ জনের, ৬। আই জি ফারবেন ট্রায়াল (২৭ আগস্ট ১৯৪৭ ৩০ জুলাই ১৯৪৮) : বিচার হয়েছিল ২৪ জনের, ৭। হস্টেজেস ট্রায়াল (৮ জুলাই ১৯৪৭ ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮) : বিচার হয়েছিল ১২ জনের, ৮। রুশা বা রাশিয়া ট্রায়াল (২০ অক্টোবর ১৯৪৭ ১০ মার্চ১৯৪৮) : বিচার হয়েছিল ১৫ জনের, ৯। আইনসাজ গ্রুপেন ট্রায়াল (২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ ১০ এপ্রিল ১৯৪৮): বিচার হয়েছিল ২৭ জনের, ১০। ক্রুপ ট্রায়াল (৮ ডিসেম্বর ১৯৪৭ ৩১ জুলাই ১৯৪৮) : বিচার হয়েছিল ১২ জনের, ১১। মিনিস্ট্রিজ ট্রায়াল (৬ জানুয়ারি ১৯৪৮ ১৩ এপ্রিল ১৯৪৯) : বিচার হয়েছিল ২১ জনের, ১২। হাই কমান্ড ট্রায়াল (৩০ ডিসেম্বর ১৯৪৭ ২৮ অক্টোবর ১৯৪৮) : বিচার হয়েছিল ১৪ জনের।উপরোক্ত ১২টি মামলাসহ আমেরিকান মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল ১৯৪৫ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ইউরোপ, জাপান ওদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ৮০৯টি মামলা পরিচালনা করেছে যেখানে বিচার হয়েছে ১৬০০ জন আসামির। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ৯৩৭ জনের বিচার করেছে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স করেছে ২১০৭ জনের বিচার ।আমেরিকা ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্স ও ব্রিটেন তাদের অধিকৃত জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। এসব বিচারের ভেতর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১) ডাচাউ ট্রায়ালস, ২) অসউইজ ট্রায়াল, ৩) বেলসেন ট্রায়াল, ৪) ফ্র্যাঙ্কফুর্ট-অসউইজ ট্রায়াল, ৫) বুখেনওয়াল্ড ট্রায়াল এবং ৬) নেউয়েনগামে ট্রায়াল। এই ৬টি মামলায় ১০৯ নাৎসি যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও শাস্তি হয়েছে। সবচেয়েঅধিকসংখ্যক নাৎসির বিচার হয়েছে অসউইজ ট্রায়ালে। এই মামলায় ৩৯ জন অভিযুক্তের ভেতর ২০ জনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। এর বাইরে নাৎসিদের সহযোগীদেরও বিচার হয়েছে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, রুমানিয়া, ফ্রান্স, পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।নুরেমবার্গ ট্রায়াল সম্পর্কে বলা হয় আইন শাস্ত্রের ইতিহাসে এত বড় বিচার কখনও হয়নি। এই বিচার আন্তর্জাতিক আইনকে সমৃদ্ধ করেছে, সভ্যতার ইতিহাসে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার ও শাস্তির বোধ প্রতিষ্ঠা এবং দেশে দেশে অনুরূপ অপরাধ বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর আগে বা পরে কোন দেশের ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থানকারী সামরিক-অসামরিক নেতৃবৃন্দকে কখনও আদালতের কাঠগড়ায় এভাবে দল বেঁধে দাঁড়াতে হয়নি যেমনটি হয়েছে নুরেমবার্গে। একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিমন্ডলী কিংবা কোন দল বা সংগঠন যত শক্তিশালী ও ক্ষমতাসম্পন্ন হোক না কেন কেউই আইনের উর্ধে নয় নুরেমবার্গের বিচার এই বোধটিও প্রতিষ্ঠা করেছে।টোকিও ট্রাইব্যুনাল আয়োজন ও আড়ম্বরের দিক থেকে নুরেমবার্গের কাছাকাছি হলেও রাজনৈতিক কারণে, বিশেষভাবে আমেরিকার প্রয়োজনে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচার না করায় এই বিচার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইতিহাসে নতুন কোন মাত্রা যুক্ত করতে পারেনি। এরপর ম্যানিলা, বসনিয়া, রুয়ান্ডা, যুগোসøাভিয়া, সিয়েরা লিওন, কম্বোডিয়া ও ইস্ট তিমুরে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধও যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালত গঠন করা হয়েছে কিংবা পূর্বে গঠিত আন্তর্জাতিক আদালতে এসবের বিচার হয়েছে।এসব বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের রায়ে অপরাধের বৈশিষ্ট্য এবং বিচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিবেচনা ও বিচারপদ্ধতি নিঃসন্দেহে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারণা ও মাত্রা সংযোজিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা সমৃদ্ধ হয়েছে। একাধিক কারণে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার জাতীয় ওআন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায়ও গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা সংযোজন করেছে।নুরেমবার্গের ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইবুনাল’ (আইএমটি)-এর সঙ্গে ঢাকার ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনাল’ (আইসিটি)-এর প্রধান মিল হচ্ছে ন্যায়বিচারের দর্শন ও চেতনাগত। আমরা যদি মনেকরি ‘গণহত্যা’ ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ ‘শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ’, ‘যুদ্ধাপরাধ’ প্রভৃতি সাধারণ হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুন্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞের চেয়ে অনেক ভয়াবহ ও গুরুতর অপরাধ তাহলে অপরাধীদের অবশ্যই বিচার করতে হবে যুদ্ধের ভিকটিমদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের স্বার্থে, ভবিষ্যতে মানবজাতিকে গণহত্যা ও যুদ্ধের অভিশাপ থেকে মুক্তি প্রদান এবং সভ্যতার বোধ নির্মাণের প্রয়োজনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রশক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সরকার এই উদ্দেশ্যে বিশেষ আইন প্রণয়ন করে বিশেষ ট্রাইবুনালে এসব অপরাধের বিচারের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠাকরেছে। নুরেমবার্গের ‘আইএমটি’-র সঙ্গে ঢাকার ‘আইসিটি’-র পার্থক্য হচ্ছে প্রথমটি ছিল আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল এবং দ্বিতীয়টি জাতীয় বা দেশীয় ট্রাইবুনাল। এছাড়া প্রথমটি ছিল সামরিক আদালত, দ্বিতীয়টি অসামরিক আদালত। (ক্রমশ)পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশ, আমেরিকা, কানাডা, রাশিয়া, ইসরাইল ও আরও কয়েকটি দেশ যুদ্ধাপরাধ সহ মানবতাবিরোধী বহু কর্মকান্ড যা আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির পরিপন্থী সেসব তাদের দেশীয় আইনে সংজ্ঞায়িত করে বিচারের ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে। নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালে ‘গণহত্যা’ স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়নি। ঢাকার ট্রাইবুনাল গণহত্যাকে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে এবংএই ট্রাইবুনালে অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রথম রায়ে এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের আগে কোনও দেশের নিজস্ব আইনে গণহত্যা (মবহড়পরফব)-কেঅপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।ইংরেজিতে দুটি শব্দ সধংং শরষষরহম ও মবহড়পরফব-এর বাংলা গণহত্যা, কিন্তু দুটির অর্থ এক নয়। সধংং শরষষরহম হচ্ছে নির্বিচারে হত্যা, যা বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের পর। কিন্তু এই সধংং শরষষরহম দ্রুত মবহড়পরফব-এ রূপান্তরিত হয়েছে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় বিশেষভাবে হিন্দুরা। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং স্বাধীনতার পক্ষের বাঙালি জাতি। একটি নৃগোষ্ঠী, সম্প্রদায় ও জাতিকে যখন সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে হত্যা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় নিশ্চিহ্নকরণের উদ্যোগ নেয়া হয় সেটা মবহড়পরফব. গণহত্যা বিশেষজ্ঞ মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আর জে রুমেল এই ধরনের গণহত্যাকে আরও বিভাজন করেছেন। একটি হচ্ছে সরকার বা রাষ্ট্র কর্তৃক, অপরটি হচ্ছে সরকারের বাইরের কোন গোষ্ঠী, দল বা সম্প্রদায় কর্তৃক। সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে রুমেল অভিহিত করেছেন ফবসড়পরফব হিসেবে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে সধংং শরষষরহম, মবহড়পরফব, ঢ়ড়ষরঃরপরফব ও ফবসড়পরফব সব ধরনের হত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আইএমটির চেয়ে আইসিটির অবস্থান স্বচ্ছ এবং নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। দেশীয় আইন ও দেশীয় আদালতে গণহত্যার বিচার করে বাংলাদেশ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, গত শতাব্দীতে গণহত্যার শিকার অথচ বিচারবঞ্চিত এমন বহু দেশের জন্য তা অনুকরণযোগ্য বিবেচিত হবে।যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল যে বিশাল আয়োজনের পাশাপাশি আইনী লড়াইয়ের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আইএমটির প্রতিদিনের ধারাবিবরণী পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় বিশ্বের বিচারব্যবস্থায় তা এক অনন্য অধ্যায়, অতীতে যেমনটি দেখা যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশে আইসিটির আয়োজন আইএমটির আয়োজনের তুলনায় কিছুই নয়। কিন্তু যে সীমিত সম্পদ, লোকবল ও রসদ সম্বল করে ঢাকার ট্রাইব্যুনাল যাত্রা শুরু করেছে, দশ মাসের ভেতর একটি মামলার শুনানি শেষ করে রায় দিয়েছে তাতে সংশ্লিষ্টদের দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃঢ়তা প্রতিফলিত হয়েছে।নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছিল অপরাধ সংগঠনের অব্যবহিত পরে অথচ বাংলাদেশে বিচার শুরু হয়েছে প্রায় চল্লিশ বছর পর। সময়ের ব্যবধানে বহু প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীমৃত্যুবরণ করেছেন, বহু তথ্যপ্রমাণও হারিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে অধিকাংশ সময় ক্ষমতায়ছিল ’৭১-এর গণহত্যাকারীরা এবং তাদের সহযোগীরা। ক্ষমতায় থাকার সুযোগে তারা বহু তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছে এবং পাঠ্যপুস্তক ও প্রচার মাধ্যম থেকে ’৭১-এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ শুধু নয় সমগ্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলতে চেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাহীনতার এক অন্ধকার সময়ের ভেতর। যাদের অনেকে পাকিস্তানী লেখক এবং তাদের বাংলাদেশী দোসরদের মিথ্যাচারের শিকার। তার মনে করে ’৭১-এ তিরিশ লাখ মানুষের গণহত্যা, সোয়াচার লাখ নারীর পাশবিক নির্যাতন ইত্যাদি পরিসংখ্যান অতিরঞ্জিত। তারা মনে করে ’৭১-এ কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, পশ্চিম পাকিস্তানের ভাইদের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের ভাইদের কিছু রাজনৈতিক বিষয়ে মতপার্থক্যকে হিন্দু ভারত গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত করেছে এবং এই গৃহযুদ্ধের সুযোগে ভারত পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ ভারতের এই চক্রান্তের প্রধান সহযোগী ছিল এবংএখনও ভারতের স্বার্থে কাজ করছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে এদেশের মানুষের অনন্যসাধারণ ত্যাগ, জীবনদান, শৌর্যবীর্যের পাশাপাশি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা নৃশংসতম গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ যেমন সংঘটিত হয়েছে, গণহত্যার একই নৃশংসতায় হত্যা করা হয়েছে ইতিহাসের এই অমোঘ সত্য। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঢাকায় আইসিটি যে রায় দিয়েছে তা ইতিহাসের বহু বিস্মৃত সত্যকে মিথ্যার অন্ধকার বিবর থেকে মুক্ত করেছে।আইসিটির প্রথম রায়ে গণহত্যার নৃশংসতা উপলব্ধির জন্য বাচ্চু রাজাকারের কয়েকটি হত্যা, ধর্মান্তকরণ ও ধর্ষণের উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাচ্চু রাজাকার যাদের হত্যা করা হয়েছে ধর্মীয় পরিচয়ে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের। রাজাকারদের গণহত্যার যে পদ্ধতি ফরিদপুরের নগরকান্দায় অনুসৃত হয়েছে সারা দেশের চিত্র তারই সমার্থক। এই রায়ের সমালোচনা করতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কিছু ভাড়াটেগণমাধ্যম, পেশাজীবী ও মানবাধিকার সংগঠন মন্তব্য করেছে অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন ধর্মপ্রচারক, ইসলামীচিন্তাবিদ তার বিচারের অর্থ হচ্ছে ইসলামকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, তার মৃত্যুদ- সরকারের ইসলামবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ ইত্যাদি। এরা মনে করেহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন প্রভৃতি অপরাধ ইসলামের সমার্থক। ১৯৭১ সালে ইসলামের দোহাই দিয়েই জামায়াতে ইসলামী গণহত্যা ও নারীধর্ষণ সহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী নৃশংস অপরাধকে বৈধতা দিয়েছিল। একজন ধর্মপ্রচারক কিভাবে ভিন্ন ধর্মের অনুসারী বস্তু জগৎ ও পার্থিব স্বার্থের বিপরীতে আধ্যাত্মিক জগতের অনুসারী আটজন সাধু সন্ন্যাসীকে হত্যা করতে পারে এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রয়োজন তারা মনে করে না। হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্মান্তরকরণের মতো নিষ্ঠুরতা কিভাবে অনুমোদন করা যায়? অঞ্জলী সাহাকে যেভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে, যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, যেভাবে তাকে দাহ করতে বাধা দেয়া হয়েছেএ ধরনের নৃশংসতার ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্টের পর পৃথিবীর কোথাও ঘটেনি। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর চেয়ে তাদের সহযোগীদের অপরাধের নৃশংসতা কোনও অংশে কম ছিল না। ঢাকার ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ বিষয়টি যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।নুরেমবার্গ ও টোকিও ট্রাইব্যুনাল চরিত্রগতভাবে ছিল সামরিক আদালত। আদালতের রায় ছিল চূড়ান্ত। এর বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়নি। ঢাকার ‘আইসিটি’র আইনে অভিযুক্তকে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি মানবাধিকারের বিবেচনায় নুরেমবার্গ ও টোকিওর চেয়ে মানসম্পন্ন।নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের যখন বিচার হয় তখন সমগ্র জার্মানি যুদ্ধবিধ্বস্থ। পৃথিবীর কোথাও অভিযুক্ত নাৎসিদের প্রতি সহানুভূতি জানাবার মতো কেউ ছিল না। ’৭১-এর গণহত্যার সময় সৌদি আরব তথা মুসলিম উম্মাহ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের বাঙালি সহযোগীদের পক্ষে ছিল। আমেরিকা, চীন, আফ্রিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের বহু দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের গণহত্যাকেসমর্থন করেছে। ২০০৯ সালে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী ও গণহত্যাকারীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণের পর পরই অপরাধীদের প্রধান দল জামায়াতে ইসলামী বিচার প্রশ্নবিদ্ধ ও বিঘিœত করাবার জন্য শত শত কোটি টাকাব্যয় করে তাদের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগ করেছে, তাদের পক্ষে বহু গণমাধ্যম কর্মী, মানবাধিকার কর্মী এবংবিভিন্ন সংগঠনকে ভাড়া করেছে এই বিচার সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য। আইসিটির ভেতরেও তাদের অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল অবগত রয়েছেন। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালকে এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বহু কারণেই নুরেমবার্গে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের তুলনায় অনেক বেশি জটিল। নাৎসি দর্শনের একনিষ্ঠ অনুসারী জামায়াতে ইসলামীর মিত্র যেমন দেশের ভেতরে আছে তার চেয়ে বেশি আছে দেশের বাইরে। পাকিস্তানসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জামায়াতের কোন প্রভু বা বন্ধুরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারের বিরোধিতা না করলেও কয়েকটি দেশ ও সেসব দেশের আল কায়দার সহযোগীরা অনানুষ্ঠানিক ও পরোক্ষভাবে এই বিচার সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে অপপ্রচার ও নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করছে যে সুযোগ নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ছিল না।নুরেমবার্গে ২২ জন অভিযুক্ত ও ৭টি সংগঠনের বিরুদ্ধে মামলার রায় একসঙ্গে দেয়া হয়েছে। আইসিটি প্রতিটি অভিযুক্তের জন্য পৃথক অভিযোগনামা প্রণয়নের পাশাপাশি শুনানি করেছে পৃথকভাবে এবং রায় প্রদানও শুরু হয়েছে পৃথকভাবে। এতে অভিযুক্তরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ বেশি পেয়েছেন। নুরেমবার্গেপ্রথম মামলার রায় পরবর্তী পর্যায়ের বিচারের ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। ঢাকার আইসিটির প্রথম রায়ের একাধিক পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য পরবর্তী মামলাসমূহের রায় কিছুটা সহজ করে দিয়েছে। যদিও বাচ্চু রাজাকারের বিচার হয়েছে তার অনুপস্থিতিতে, তার নিজস্ব আইনজীবী ছিলেন না, রাষ্ট্র তার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেছে, পলাতক থাকার কারণে তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আপিলেরও সুযোগ নেই যা অন্যদের আছে; তা সত্ত্বেও ‘প্রধান প্রসিকিউটর বনাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু (পলাতক)’ শীর্ষক মামলার রায়ে যেভাবে ‘ঐতিহাসিক পটভূমিকা’, ‘ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার’, ‘অভিযোগ প্রমাণের দায়’, ‘পটভূমি ও প্রসঙ্গ’, ‘ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর দায়মুক্তি’ ‘অপরাধের সংজ্ঞা ও উপাদান’, ‘অভিযোগের বিচার’, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ভূখন্ডে বিরাজমান প্রেক্ষিত’ প্রভৃতি অনুচ্ছেদে এমন কিছু মন্তব্য রয়েছে যা বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে।দেশীয় আইনে এবং দেশীয় আদালতে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দুরূহ কাজ। এ ক্ষেত্রে ট্রাইবুনালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী, প্রশাসনিক বিভাগ ও বিচারকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, কিন্তু তাদের সামনে ছিল নুরেমবার্গ, টোকিও ও ম্যানিলা থেকে আরম্ভ করে চলমান কম্বোডিয়ার বিচারের ইতিহাস ও কার্যক্রম; এসব বিচারের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়সমূহ। ঢাকার ট্রাইবুনালের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা পড়াশোনা করেছেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন এবং নিজেদের কর্মক্ষেত্রের বিশাল অভিজ্ঞতার আলোকে ’৭১-এর গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মামলার প্রথম রায় প্রদান করেছেন।নুরেমবার্গ থেকে আরম্ভ করে কম্বোডিয়া পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অপরাধে ঘটনার দীর্ঘ চল্লিশ বছরের ব্যবধানে বিচার একমাত্র বাংলাদেশেই আরম্ভ হয়েছে। এই বিচার ও প্রথম রায় প্রমাণ করেছে দেশের জনগণ ও সরকার যদি চায় অপরাধ যত অতীতেই ঘটুক না কেন স্বজনহারাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে তাদের দুঃসহ বেদনা সম্পূর্ণ উপশম না হোক লাঘব করা সম্ভব।এই বিচার যাতে অব্যাহত থাকে এখনই প্রয়োজন আইন প্রণয়ন করে অস্থায়ী ট্রাইবুনালকে স্থায়ী ট্রাইবুনালে রূপ দেয়া। আরও প্রয়োজন বিচার বিলম্বিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচাল করবার যাবতীয় ষড়যন্ত্র,সহিংসতা ও অন্তর্ঘাত প্রতিহতকরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান গ্রহণ। এসব ষড়যন্ত্র ও অন্তর্ঘাত দেশের ভেতর মোকাবেলা করতে হবে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনগতভাবে এবং দেশের বাইরে করতে হবে সর্বাত্মক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে।আমরা আরও চাই নুরেমবার্গের মতো ঢাকার ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’ ভবন একদিন জাদুঘরে পরিণত হবে। ‘গণহত্যা’, ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’, ‘শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ’ ও ‘যুদ্ধাপরাধের’ স্থান জাদুঘরের বাইরে আর কোথাও হওয়া উচিৎ নয়। সকল দেশের সকল অপরাধীর বিচার ও শাস্তির মাধ্যমে এই প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব। বাংলাদেশ সেই প্রত্যাশা তখনই পূরণ করতে পারবে যেদিন ঢাকার আইসিটি শেষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকা

ছবি

বুদ্ধিজীবি হত্যা মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়----- ================ আজ ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিনে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে,সারা বাংলা উল্লাসে মাতোয়ারা,দখলদার বাহিনীকে ঢাকায় অবরুদ্ধ করে সারেন্ডার করার জন্য মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে- ঠিক সেই সময় পরাজয় নিশ্চিত জেনে' পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসকদের হত্যা করে বাঙালি জাতির ওপর চরম আঘাত হানে। সুপরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী দিকপাল মানুষদের বাড়ি থেকে ধরে এনে ঢাকার রায়েরবাজার, কাটাসুর ও মিরপুরসহ দেশের অসংখ্য বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে নির্মম পৈশাচিকতার সঙ্গে হত্যা করে। এ দিনে আমরা ওই সব বুদ্ধিজীবীকে স্মরণ করি বিনম্র চিত্তে গভীর শোক ও শ্রদ্ধায়। দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন পাকিস্তানি শাসকচক্রের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে দিকনির্দেশক এবং সোচ্চার কণ্ঠ।মুক্তমনা এই সমস্ত বুদ্ধিজীবিগন অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ সর্বোপরি একটি সুখী-সমৃদ্ধ প্রগতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আখাংকা তারা লালন করতেন মনের গভীরে। পাকিস্তানি কুচক্রী ও এ দেশীয় দোসর ধর্মান্ধগোষ্ঠী যখন আঁচ করতে পারলো,মিত্র বাহিনী তাঁদেরকে চতুর্দিকে অবরুদ্ধ করে পেলেছে,পরাজয় সময়ের দ্বারপ্রান্তে,বাঙালির স্বাধীনতা সমাসন্ন, তখন তারা জাতির দিকপালদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তড়িগড়ি তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিল। যেন বাঙালি জাতিসৃজনশীতা, মানবিক গুন প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে ফেলে।যেন সদ্যস্বাধীন দেশটি সুস্থ চেতনা ও বিচার বুদ্ধির পথভ্রষ্ট হয়ে নিঃস্ব, দুর্বল ও দিক নির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে। দেশ স্বাধীনের পরও অব্যাহত থাকে কুচক্রীদের সেই ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই একাত্তরের পরাজিত শক্তি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাহায্যে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক,সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার চেতনার নেতৃত্ব সমূলে বিনাশ করার লক্ষ্যে জেলের ভেতর হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী,প্রবাসি মুজিব নগর সরকারের দিকপাল, চার জাতীয় নেতাকে। পরিণামে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদের যে চেতনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আপামর বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ছিল, নয় মাসব্যাপি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, স্বাধীন দেশে সে অর্জন থেকে দিনে দিনে আমরা অনেকদুর পিছিয়ে যাই।পিছিয়ে যাই প্রগতির ধারা থেকে। একাত্তরের ঘাতক আলবদর, আলশামস, রাজাকাররা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার পর্যন্ত হতে পেরেছিল। তবে দেরিতে হলেও বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে। জাতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আয়োজন করেছে। একে একে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা দণ্ডিত হচ্ছে, তাদের ফাঁসি হচ্ছে বাংলার মাটিতে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধিদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামি ফাঁসির রায়ে দন্ডিত হয়ে যুদ্ধ অপরাধের দায় স্বীকার করে সাজা মওকুপের আবেদন ও করেছেন।মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মহাজোট সরকার সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে ধীরে হলেও গনমানুষের প্রানের দাবি পুরন করার জন্য নিয়ন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনা জাতিকে বিচারহীনতার কবল থেকে মুক্ত করার জন্য বদ্ধপরিকর।ইতিমধ্যে অনেকের রায় কায্যকর করে তাঁর সরকারের সদিচ্ছার সেই স্বাক্ষর ও রেখেছেন।আশা করি সকল যুদ্ধ অপরাধির বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে বাঙ্গালি জাতিকে অচিরেই কলংকমুক্ত করবেন,জাতি সেই আশাই করে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যার নিকট।পরিশেষে আজকের দিনের দেশের বরেন্য ব্যাক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, তাঁদের আত্মার মাগফেরাৎ কামনা করি মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট। জয়বাঙলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা।

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়--- ========================= বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধী এবং ভারতের জনগন বাঙালির দু:সময়ে যদি সহযোগিতার হাত না বাড়াতেন তাহলে ইতিহাস অন্য কোন ভাবে তাঁর গতিপথ নির্ণয় করতে বাধ্য হত। জর্জ হ্যারিসন,বাংলাদেশের মানুষের মনের মধ্যে নামটি চিরজাগরুক হয়ে আছে,থাকবেন অনন্তকাল।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই গুনী শিল্পি সাহায্যের হাত প্রসারীত করেছিলেন,তাঁর নিজস্ব সম্পদ কণ্ঠকে ব্যাবহার করে।তাঁর অবদান বাঙালীর দু:সময়ে মুক্তিযুদ্ধাদের মনে প্রেরনা জুগিয়েছিল নি:সন্দেহে।বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র সমুহের প্রধানগন যদিও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন,কিন্তু তাঁদের মুক্তিকামি প্রজাসাধারন, মুক্তিকামী বাঙ্গালীর পক্ষেই ছিল উহাই প্রমানীত হয় ওবালের সেদিনের টিকেট বিক্রির হারের দিকে তাকালেই।বিজয়ের মাসে সেইসব বন্ধুদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই,যারা আমাদের পাশে এসে বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতার হাত প্রসারীত করেছিলেন। জর্জ হ্যারিসনের বিখ্যাত "কনসার্ট ফর বাংলাদশ"-এর কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু ওভালের ‘গুডবাই সামার’ কনসার্টের কথা আমাদের অনেকেরই জানা নাই। সেই কনসার্টের পোস্টার এটি। কি দারুণ এক পোস্টার...বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে ১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ওভালে ‘গুডবাই সামার’ নামের এই কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়েছিলো। সেদিন সেই কনসার্টের টিকেটের দাম ধরা হয়েছিলো সোয়া এক পাউন্ড করে। বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট করে লেখা ছিলো বাংলাদেশের শরণার্থীদের কথা। অফিসিয়ালি ৩১,০০০ দর্শক থাকলেও আয়োজকদের মতে সংখ্যাটা ৩৫,০০০ ছাড়িয়ে যায়। সেই কনসার্ট থেকে আয় হয়েছিলো ১৫,০০০ পাউন্ড!! আমরা পরিষ্কারভাবে আমাদের মনের গহীন থেকে তাঁদের কে বার্তা পৌঁছে দিতে চাই,হ্যাঁ বন্ধুরা আপনাদের সেই উদার মনের আন্তরীক সমর্থন বৃথা যায়নি।যাদের কাছ থেকে আমরা বাঙ্গালীরা স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে ব্যাপৃত ছিলাম-যাদের অত্যাচার,অনাচার, জুলুমের চিত্র দেখে আপনাদের বিবেক নাড়া দিয়েছিল।হাজার মাইল দূরে থেকেও সমর্থন দিয়েছিলেন, সাহায্য করেছিলেন,ব্যাথায় আপনাদের মন কুঁকড়ে গিয়েছিল।সেই বর্বর পাকিরা আজও বর্বরই রয়ে গেছে।তাঁরা এখনও বলতে চায় তাঁরা আমাদের উপর কোন অন্যায় করেনি-,তবে আমাদের যুদ্ধ কার সাথে হল,কারা আমাদের মা বোন নির্য্যাতন করলো। কারা আমাদের বাবা,ভাই,বন্ধুদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল??? অসভ্য,বর্বর চাড়া কেউ কি মিথ্যা, চলচাতুরী আর উগ্রতার এমন পরাকাষ্টা দেখাতে পারে?? আমাদের সম্পদে পোদ্দারী করেছিল তাঁরা --তার প্রমান বাংলাদেশ মাত্র ৪৪ বছরে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরীত হয়ে প্রমান করেছে বিশ্বদরবারে।তাঁরা তখন যেখানে ছিল এখন তাঁর চেয়ে আরো অনেক পিছনে চলে গেছে।আমরা সাহায্যকারি দেশে রুপান্তরীত হয়েছি,তাঁরা এখনও ভিক্ষার জন্য আমেরীকার দালালি করে।ভিক্ষা করে বোমা বানায়,সন্ত্রাসি লালন করে, বিশ্ব মুসলিম দেশ সমুহের কপালে কলংকের তিলক পরায়।আমরা গনতন্ত্রের চর্চায় অনেক দূর এগিয়ে গেছি,আমাদের স্কুল, কলেজ পাড়া মহল্লার ক্লাবেও গনতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রতিনীধিরা নেতৃত্ব করে। প্রকারান্তরে তাঁদের দেশে এখনও জংলী কাপড় পরা কিছু লোক আছে,যাঁদের ভরন পোষন করে জনগন নীজেদের পাহারা দেয়ার জন্য,তাঁরাই কর্তা সেজে এখনও সেই জনগনকে শাষন করে,সামান্য অজুহাতে ক্ষমতার মসনদ দখল করে বসে থাকে। তাঁদের পালিত কুকুরের দল এখনও গৌরবের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে মাঝে মাঝে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করে।মাঝখানে ৭৫ থেকে ১৯৯১ ইং সাল- তাঁদের প্রেতাত্বারা আমাদের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। তাঁদের নির্দেশীত পথে দেশ পরিচালনা করে আমাদের অর্জিত গৌরবকে ম্লান করার জন্য।, জাতিকে তাঁদের মত বর্বর জাতিতে রুপান্তরীত করার জন্য।তাঁরা আমাদের পবিত্র সংবিধানকে চিন্নভীন্ন করে দিয়ে গেছে। দেশকে প্রগতির ধারা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে।তাঁরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্টন করে এখন অনেক সম্পদের মালিক হয়ে গেছে।তাঁরা এখন দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র করার মত স্বাবলম্বিতা অর্জন করেছে।তোমরাতো শুনেছ,তোমাদের মিডিয়ায় তোমরাই প্রচার করেছিলে,ষড়যন্ত্রকারি প্রধান ব্যাক্তি, মেজর জিয়া, যিনি ক্ষমতায় থাকাকালিন তাঁর নীজ গোত্রের- তাঁর মত অসভ্য কিছু উর্দি পরা লোক, তাঁকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল।কথিত আছে,তাঁর কোন হাঁড়-মাংস পাওয়া যায়নি। তোমরাই বেশি করে প্রচার করেছিলে তাঁর কোন সঞ্চিত সম্পদ ছিলনা।অথছ তাঁর পরিবার এখন কত সম্পদের মালিক হয়েছে,হিসেব করার জন্য তোমাদের দেশের নামকরা চাটার্ড একাউন্টস ফার্মকে নিয়োগ দিলেও সঠিকভাবে নির্নয় করতে পারবে কিনা সন্দেহ। তাঁরা বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ লুট করে তোমাদের দেশে বাড়ী ভাড়া করে বিলাসী জীবনযাপন করছে।তোমাদের দেশের ল'ফার্মকে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে ভাড়া করেছে--বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার জন্য।,বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বক্ষন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, শুধু মাত্র আমার দেশের আইনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।তোমাদের বিশ্ব ব্যাংক তাঁদের পাঁছ বছরের শাষন পাঁছ বার জরিপ করে পাঁছ বারই শীর্ষস্থানে নির্ধারন করে "দুর্নীতির আখড়া"বলে আমাদের লজ্জা দিয়েছিল। বিশ্বের একনম্বরের দুর্নীতির দেশ বলা কতযে অপমানজনক তা তোমরা বুঝবেনা।কারন তোমদের দেশ এই অখ্যাতি কোনদিন অর্জন করেনি। আমাদের দেশকে আখ্যা দিয়েছিল কি কারনে জান,তাঁদের ইউনিয়ন লেভেল থেকে প্রধান মন্ত্রীর পরিবার পয্যন্ত, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত,এই দেশকে লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে পরিনত করেছিল।"দুর্নীতিই একমাত্র নীতি" এই বিশ্বাস মানুষের মনে গেঁথে দিয়েছিল।বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা,তখন আমার দেশের মানুষের মাথা হেট হয়ে যেত,মনে মনে নীজকে অভিসম্পাত করতো- কেন এমন একটা চোরের দেশে মহান আল্লাহ আমাদের জম্ম নিতে বাধ্য করেছেন।তাঁরা রাজনীতিকে জনসেবার অন্যতম মাধ্যম এই ধারনাকে অসার প্রমান করার জন্য রাজনীতিতে দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন।,তাঁদের মরহুম নেতার আদর্শ "রাজনীতিকে আমি রাজনীতিবীদদের জন্য কঠিন করে দেব" এই নীতিকে সর্বস্তরে প্রতিপলিত করার জন্য,যাতে রাজনীতি বিদদের জনগন ঘৃনা করে,তাঁদের কাছ থেকে মুখ পিরিয়ে নেয়।জংলিরা সব সময় তাঁদের মুরুব্বিদেশ পাকিস্তানের আদলে আমার সোনার বাংলাকে শাষন শোষন করতে পারে।সাধারন মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য তাঁরা ঘন ঘন আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যাবহার করে।অথছ ব্যাক্তি জীবনেও তাঁরা কেহই ইসলামের অনুশাষন মেনে চলেনা।রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলামের জন্য কোন স্থাপনা এই পয্যন্ত আদৌ নির্মান করেনি। তোমরাতো অবগত আছ, মাত্র পাঁছ বছরের মধ্যে আমাদের মহান নেতার জৈষ্ঠ কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনা খমতায় আরোহন করেছে।এরই মধ্যে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বের নামকরা উন্নত দেশ সমুহের অনেক পিছনে ১৫৯তম অবস্থানে নিয়ে গেছে।সবাইকে খাওয়া পরার ব্যাবস্থা করে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরীত করতে সক্ষম হয়েছে।তোমাদের বিশ্বব্যাংক ষড়যন্ত্র করে আমার দেশের পদ্মা সেতুর টাকা দুর্নীতির কারন দেখিয়ে ফেরৎ নিয়ে গেছে,তোমরাই বল টাকা দেয়ার আগে কিভাবে টাকা চুরি হয়? অথছ সেই পদ্মা সেতু আমার দেশের মহান নেতার কন্যা নীজ অর্থে করার জন্য উদ্যোগ নিয়ে সফলতার সংজ্ঞে এগিয়ে যাচ্ছে।অথছ তোমরাই ভয় দেখিয়েছিলে বিদেশি ঋন ছাড়া বাংলাদেশ এত বিশাল প্রজেক্ট করার কথা চিন্তাও করতে পারবেনা।বাঙ্গালী বীরের জাতি, পারেনা এমন কোন অসাধ্য কাজ নেই।তোমরাতো জান, মাত্র নয়মাসে খালী হাতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল বাঙ্গালি।পাকি ৯৩ হাজার সুসর্জ্জিত সেনাবাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে মাত্র নয় মাসে অর্থাৎ এই মাসেই আমাদের পায়ের নীছে অস্ত্র সমর্পন করে, মাথা নীছু করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করেছিল। তাঁরা এতই বেলাজ জাতি এখন আবার আমাদের সাথে উদ্যত, উগ্র মেজাজে কথা বলার চেষ্টা করে।তাঁরা এতই বেয়াদপ জাতি, আমাদের রাজদুতকে ডেকে নিয়ে বলে তাঁদের পরম বন্ধুকে ফাঁসী দেয়ায় তাঁরা নাকি দু:খ্য পেয়েছে,বিব্রত বোধ করছে।কত বেয়াদপ দেখ, প্রকাশ্য স্বীকার করে বলে দন্ডপ্রাপ্ত ব্যাক্তিরা নাকি তাঁদের পরম বন্ধু। তোমরাই বল তাহলে,তাঁদের যারা বন্ধু নিশ্চয়ই স্বাধীন দেশের জনগনের তাঁরাইতো শত্রু। আমাদের দেশের বিচার শতভাগ সঠিক, তাঁদের উদ্যত আচরনেইতো প্রমান করে !! দেখ বন্ধুরা আমাদের সম্পদের লোভ ৪৪বছরেও তাঁরা ভুলতে পারেনি।আমাদের শোষন করে তিনবার রাজধানী পরিবর্তনের নামে নীজেদের শহরগুলী সাজিয়ে নিয়েছে। তাঁদের তিন শহরের মোট ব্যায়ায়ীত টাকার তিনগুন টাকা ব্যয় করে বাংলাদেশ পদ্মাসেতুর মত বিশাল ব্যায়বহুল সেতু নির্মান করার যোগ্যতা অর্জন করেছে তাও শতভাগ নীজের দেশের উপার্জিত অর্থে। তাইতো বিজয়ের এই মাসে বারবার তোমাদের ঋনের কথাগুলি মনে পড়ে।তোমাদের ঋন বাঙ্গালি কোনদিন ভুলে যাবেনা।তোমরা কখনও, কস্মিনকালেও ভেবনা বাঙালি অকৃতজ্ঞ জাতি। জয়বাঙলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা।

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়_________ ================================ বঙ্গবন্ধু মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে ৫/৭টি ইতিহাস বিখ্যাত রাজনৈতিক ভাষণের একটি। তিনি এতটাই জনপ্রিয় নেতা ছিলেন যে, সত্তরের নির্বাচনে বাংলাদেশের (পূর্ব বাংলা) শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুজিবের আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। দু’বার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও তিনি ছিলেন অবিচল, আপসহীন। সামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মুজিব এককভাবে ২৫ দিন দেশ পরিচালনা করেন। ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্য রাতের পর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুজিব ঘোষণা করেন, ‘আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ একাত্তরে ৯ মাস কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় পাকিস্তানিরা একটি কথাও নেতার মুখ থেকে বের করতে পারেনি। ঐ সময় তিনি শুধু প্রহরীদের সালাম গ্রহণ করতেন। মুজিবের দূরদর্শিতারও কোনো তুলনা হয় না। ভাবতে অবাক লাগে,বঙ্গবন্ধু জানতেন, পাকিস্তানিরা ৬ দফা মানবে না এবং না মানলে তা এক দফায় পরিণত হবে, এটা নিশ্চিত হয়েই তিনি ১৯৬৬ সালে জাতির সামনে তা পেশ করেছিলেন। মাত্র ৫ বছরের মাথায় ৬ দফা এক দফায় পরিণত হয়ে দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। শত্রুর হাতে বন্দী থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে বন্দী থাকা সত্ত্বেও বন্দী নেতা মুজিবের নামেই যুদ্ধ পরিচালিত হয়। মনীষী আবুল ফজল লিখেছেন, ‘অনুপস্থিত সেনাপতির এমন সেনাপতিত্ব সত্যই অভিনব, ইতিহাসে এমন নজির বিরল।’ কি আশ্চায্য ব্যাপার লক্ষ করেছেন কিনা জানিনা,স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৪বছর শেষ হতে আর কয়মাসই বা বাকি।যুদ্ধের নয় মাস পাকি কারাগারে ছিলেন,এই পয্যন্ত পাকিরা একটা গুজব পয্যন্ত রটাতে পারেনি,মুজিবের মধ্যে স্বাধীনতা প্রশ্নে কোন নমনীয়তা পেয়েছিল।বাংলাদেশে অবস্থানরত,বাঙ্গালির ঔরসজাত কিছু কিছু বজ্জাতেরা বলে, মুজিব নাকি স্বাধীনতা চায়নি!!! অথর্বদের এতটুকু ধারনাও নেই প্রচলিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোতে থেকে এর চেয়ে আর বেশি বা অন্য কি ভাবে স্বাধীনতার কথা বলতে পারেন প্রধান নেতা।রাজনীতিতে যদি দেশ স্বাধীন হয় হঠকারি রাজনীতির ফাঁদে পা দিয়ে আন্দোলন ব্যর্থ হলে হাজার বছরপর ও কি আর সেই আন্দোলন সংগঠিত করা যেত? পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ওয়ালী খান বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের অসহযোগ আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনকেও হার মানিয়েছে।’ পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এবং পরবর্তীকালে রাজনীতিবিদ এয়ার মার্শাল আসগর খান বলেছিলেন, ‘একাত্তরের ২৩ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে ৭টা সেনানিবাস ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা যায়নি। পাকিস্তানি মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে লিখেন, ‘অসহযোগ আন্দোলনের সময় মুজিবের শাসন পূর্ব পাকিস্তানকে গ্রাস করে।’ অর্থাৎ সেনানিবাস ছাড়া দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীই ছিল মুজিবের অনুগত। ব্রিটিশ পত্রপত্রিকায় তখন লেখা হয়, ‘মুজিবের ৩২ নম্বরের বাসভবন ব্রিটেনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পরিণত হয়েছে।’ ড:রেহমান সোবহান,যদিও তিনি আওয়ামী লীগ পছন্দ করেননা।খালেদা জিয়ার অত্যান্ত কাছের একজন বুদ্ধিজীবি,তার পরও তাঁর দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর সম্মন্ধে তিনি যে কথাটি বলেছেন তাও প্রনিধানযোগ্য বলে আমি মনে করি।""তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান নামেই প্রসিদ্ধ।তিনি যথার্থই লিখেছেন, “আমার ধারণায়, ১৯৭১ সালের পহেলা থেকে ছাব্বিশে মার্চ- এই ছাব্বিশ দিনই বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে এক স্বাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছিল। যার ফলে কখন" স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল বা কে তা ঘোষণা করেছিলেন এই প্রশ্নটি অবান্তর, অপ্রাসঙ্গিক এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করার যে প্রবণতা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনাকে গ্রাস করেছে এটা তারই আরেকটি দৃষ্টান্ত।”" মুলত: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পর জাতিয় ও আন্তজাতিক রাজনীতির সমিকরন দ্রুত পাল্টাতে থাকে।ছাত্র যুবকেরা যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করে। বাংলাদেশের বহুস্থানে রীতিমত ট্রেনিং নেয়া শুরু করে। ঐ দিকে পাকিস্তানী শাষকবর্গ পুর্ব পাকিস্তানকে তাঁদের করতলগত রাখার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নের জন্য সময়ক্ষেপন করছিল।অবশেষে ২৫শে মার্চের মধ্যরাতে তথাকথিত অপারেশন সার্চলাইটের ঘোষনা দিয়ে পাকবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর সকল শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা ইতিহাসের বিরল এক গনহত্যা।নারী শিশু,বৃদ্ধ,যুবক,ছাত্র শিক্ষক,বুদ্ধিজীবি কেহই তাঁদের বন্দুকের নিশানা থেকে রক্ষা পায়নি। নির্বিচারে যেখানে যাকে পেয়েছে সেখানেই হত্যাকরে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম,বর্বর রক্তের হোলিখেলা শুরু করে পাকিস্তানী সামরিকজান্তা বাহিনী। মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চের মধ্য রাতের পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে তৎকালিন ই,পি,আরের ওয়ারলেস ম্যাসেজে স্বাধীনতার কঠিন অভিযাত্রায় সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিয়ে ঘোষনা করেন, "বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে (পাকিস্তানি) সেনাবাহিনীর দখল থেকে প্রীয় মাতৃভূমির দখল্মুক্ত করতে সর্বাত্মক মোকাবেলা করার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করে চূড়ান্তবিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদেরকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহব্বান জানাচ্ছি।" এই ঘোষণার শুরুতেই বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত বিষয়টি সামনে আনেন সহস্র বছরের সাধনায় অর্জিত_ "আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন"। স্বাধীনতা ঘোষনা করার আগে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগ নেতাদের স্ব-স্ব এলাকায় চলে যেতে বলে নীজে ৩২ নম্বরে অবস্থান গ্রহন করেন।নেতারা বঙ্গবন্ধুকে ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যেতে অনুরুধ করলেও বঙ্গবন্ধু বলেন,ওরা যদি আমাকে না পায় আমার সারা বাংলা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে চারখার করে দিবে,তোমাদের প্রতি অনুরুধ রইলো, "যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে সেই দায়িত্ব পালন করবে।ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।" ই,পি,আরের ওয়ারলেস ম্যাসেজে দেয়া ঘোষনা তৎক্ষনাৎ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেল।বিদেশী গনমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে বঙ্গবন্ধুর ঘোষনা প্রচার করা হল।যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ার প্রচলন খুব বেশি না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা ২৬/২৭ শে মার্চে মাইকের মাধ্যমে স্ব-স্ব এলাকায় উক্ত ঘোষনা প্রচারের ব্যাবস্থা করেন। পুরো জাতি ঝাঁপিয়ে পড়লো সেই ঘোষণা শুনে হানাদার দখলদার পাকি বাহিনীকে হটাতে। বাঙালি জাতি সর্বত্র রুখে দাঁড়ায়। নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণ তীব্রতর হতে থাকে। বাঙালি জাতি জড়িয়ে পড়লো এক অসম যুদ্ধে। যে যুদ্ধ পাকিস্তানী জান্তারা তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। নিরস্ত্র ববাঙালি প্রান বিসর্জন দিতে থাকলো পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্বিচারে। রাস্তাঘাটে, রিকশায়, গাড়িতে, ঘরে, বাসা,বাড়িতে, প্রতিষ্ঠানে, স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রছাত্রী,শিক্ষকদের হোস্টেলে বাঙালি নিহত হতে লাগল অকাতরে। চারিদিকে লাশ আর লাশ। দাপন করার কোন ব্যাবস্থা সিমারের দল করেনি,শৃগাল কুকুরের টানাটানি করে লাশ খাচ্ছে।নদীতে লাশ,নর্দমায় লাশ,বাড়ীতে লাশ,হাটে ঘাটে শুধু লাশ আর লাশ।এই যেন এক আদিম যুগের মৃত্যুপুরি।শুরু হয় নারী জাতির উপর অত্যাচার। প্রকাশ্য দিবালোকে নারীর স্তন কেটে বেয়নেটের মাথায় নিয়ে উল্লাস করে ফিরতে লাগল পাকিস্তানী হানাদার সেনারা। নারী ধর্ষিত হতে থাকে গ্রাম গঞ্জে। শিশুরা বেয়নেটের ডগায় উড়তে লাগল রক্তাক্ত নিশানের মত। অস্ত্র হাতে না ধরতে শেখা বাঙালি গেরিলা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার ডাকও দিয়েছিলেন। সেই সাথে আহ্বান জানিয়েছিলেন, "যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।" বাঙালি সে ঘোষনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে শত্রুর মোকাবেলা করেছে।স্থানে স্থানে প্রতিরোধের দুর্ঘ গড়ে তুলে।কিন্তু আধুনিক সমরাস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে ছাত্র যুবক ইপিয়ার বাহিনি আস্তে আস্তে পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়। সে দিন জনতার সাথে ই,পি,আর বাঙ্গালি সেনা বাহিনীর চৌকস বিগ্রেড ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট,পুলিশ বাহিনীও যোগ দেয়।পাকিরা প্রথম আক্রমনেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন,ঢাকা ইউনিভারসিটির হল সমুহ দখল করে নেয়।রোকেয়া হলের ছাত্রীদের উপর নেমে আসে বিভীষিকার এক রজনী।অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশ পাকিস্তানী হানাদার দখল করে নিতে সক্ষম হয়। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বন্ধু ভারত মানব সভ্যতার চরম ভাবে ভুলুন্ঠিত করে আক্রমন পরিচালনা করলে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পুর্ব পাকিস্তান বেষ্টিত ১৭০০মেইল বর্ডার খুলে দেয় বাঙালিদের আশ্রয়ের জন্য।স্রোতের মত বাঙ্গালিরা ভারতে আশ্রয় নিতে থাকে।এককোটির ও অধিক মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়।ছাত্র যুবক ভাইয়েরা যার যার মত করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করে।আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনীধিরাও ভারতে গিয়ে যুদ্ধপ্রস্তুতি গ্রহন শুরু করে।মুক্তি বাহিনী গঠন,প্রবাসি সরকার গঠন সহ একান্ত প্রয়োজনীয় কর্মগুলি যথারীতি শুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মেহের পুরের আম্রবাগান বৈদ্যনাথে একত্রিত হয়ে রাষ্ট্রীয় সকল বিধিবিধান অনুসরন করে প্রবাসি মুজিব নগর সরকার গঠন করা হয়।মুক্তিযুদ্ধাদের চৌকস এক দল তরুন মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের গার্ড অব অনারের মাধ্যমে সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা আরাম্ভ হয়। মেহের পুরের বৈদ্যনাথ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মুজিব নগর। পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার হাত থেকে যে স্বাধীনতার আলোক বর্তিকা কেড়ে নিয়েছিল মীরজাফরের সহযোগিতায়,সে স্বাধীনতার আলোক বর্তিকা প্রজ্জলিত করার দৃড শফথের জন্য প্রবাসি সরকার গঠন করা হয় মেহের পুরের আর এক আম্রবাগানে।বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ি রাষ্ট্রপতি তাজউদ্দিন আহম্মেদ কে প্রধান মন্ত্রী করে সরকার গঠিত হয়।শুরু হয় আনুষ্ঠানিক শুত্রু মুক্ত করার লড়াই।প্রবাসি সরকার সারা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ১১জন সেনা কর্মকর্তাকে প্রধান করে যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করে।প্রধান সেনাপতি করা হয় বাঙ্গালি সেনা কর্মকর্তা(অব:) মেজর জেনারেল ওসমানীকে।মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক পদাধিকার বলে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তাঁর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অভ্যন্তরীন সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করে প্রবাসি সরকার বিদেশিদের সমর্থন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন, অনুষাঙ্গিক অন্যান্ন বিষয়াবলির উপর নজর দেয়।স্বল্প সময়ে যোদ্ধকৌশল গ্রহন করে শুরু হয় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর উপর সাড়াষি গেরিলা আক্রমন।মুক্তিযোদ্ধারা স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষন নিয়ে দলে দলে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গেরিলা কায়দায় আক্রমন পরিচালনা করে পাকিদের দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য কিরে দিতে সক্ষম হয়।গেরিলা আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এদেশিয় দোষরদের সহযোগিতায় গঠন করে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি ইত্যাদি নানাবীদ বাহিনী। তাঁদের এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য সর্বাজ্ঞে এগিয়ে আসে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এবং তাঁদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। যাহা পরবর্তিতে নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্র শিবির নাম ধারন করে।পুর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ,নেজামে ইসলাম,ইসলামি ডেমোক্রেটিক পার্টি সহ আরো কতিপয় ছোট ছোট দল ও গ্রুপ।এদিকে পাকি দখদার বাহিনী সারা বাংলাদেশ ব্যাপি শুরু করে রাজাকারের সহযোগিতায় তান্ডবলীলা--অগ্নিসংযোগ, লুটপার্ট, হত্যা, নারী নির্যাতন এমন কোন কিছু বাদ নেই যা তাঁরা অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেনা।সভ্যতা মুখ থুবড়ে পড়েছে সে দিন তাঁদের অত্যাচারের বিভীষিকার নিকট.,মায়ের সামনে মেয়ে,বাবার সামনে মা,ভাইয়ের সামনে বোন,স্বামীর সামনে স্ত্রীকে দর্শন করতেও তাঁদের বুক কাঁপেনি। মহান ভারতের মহিয়ষী নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী এবং ভারতের জনগন বাঙালির এই বিপদের সময়ে সর্বোচ্ছ ত্যাগ স্বীকার করে শরনার্থীদের থাকা খাওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, অস্ত্র ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতার হাত প্রাসারীত রাখতে কোনরুপ দ্বিধাবোধ করেননি। সেই দিনের সেই সাহায্য যদি ভারতের জনগন বাঙালি শরনার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের না দিতেন,তাহলে ইতিহাস হয়তোবা অন্যভাবে তাঁর গতিপথ নির্ধারন করে নিতে হত। ভারত শুধু আশ্রয় দিয়ে তাঁর কর্তব্য শেষ করেনি,মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে তাঁর দেশ সর্বচ্ছো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখে।ভারতের প্রধান মন্ত্রী বিরামহীন বিশ্বভ্রমন করে বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে বৈঠক করে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকারের স্বপক্ষে তাঁর দেশের অবস্থান তুলে ধরেন,আন্তজাতিক মহলের সাহায্য কামনা করেন।এদিকে প্রবাসি সরকারের পক্ষ থেকেও দুত পাঠিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করার ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়।এতে আন্তজাতিক ভাবে স্পষ্টতই দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়।সৌভিয়েত ইউনিয়ন সহ বেশ কিছু দেশের জনগন ও সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে,অন্য দিকে আমেরীকা চীন সহ বেশ কিছু দেশ পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে নিলর্জ্জভাবে তাঁদের সহযোগিতা করতে থাকে।উল্লেখ্য আমেরীকার জনগন সর্বতোভাবে বাংলাদেশের মুক্তিকামি মানুষের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে-- চাঁদা তুলে সাহায্য করতে থাকে।স্কুল পড়ুয়া শিশুরা তাঁদের টিফিনের টাকা বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য পাঠাবার ব্যাবস্থা করে।এমনিতর পরিস্থিতিতে মধ্য ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ পরিপুর্নতা পেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা চোরাগুপ্তা হামলায় ব্যাপক পাকি সৈন্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকে প্রতিনিয়ত:। আক্রমনের মুখে ব্যাপক সৈন্যের মৃত্যুতে পশ্চিম পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।সেন্যবাহিনীর আত্মীয়স্বজনেরা তাঁদের সন্তানদের অকালে আত্মাহতির কারন ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন শুরু করে।বিশেষ করে পাঞ্জাব ছাড়া আরো দু'টি প্রদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আস্থাশীল নেতৃবৃন্দ ও জনগন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোদ্ধে আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্ছারন শুরু করে। ইয়াহিয়া চতুর্দিকে বিপদের অশনি সংকেত শুনতে পেয়ে যুদ্ধের আশু ফলাফল পাওয়ার ফন্দিফিকিরে লিপ্ত হন। ইয়াহিয়া খাঁন এবং তাঁর পরিষদবর্গ, পরামর্শ দাতাদের তড়িৎ ফলাফল পাওয়ার অস্থিরতায় পেয়ে বসে।তাঁদের মিত্র আমেরীকা সাম্রাজ্যবাদ এবং তাঁর মিত্রদের নিকট সাহায্য কামনা করে পাক সরকারের পক্ষ হতে। এমনিতর সাহায্যের আবেদনের জন্য আমেরীকা ওৎ পেতে বসেছিলেন। কালবিলম্ব না করে বন্ধু পাকিস্তানের জনগনকে সাহায্যের জন্য সপ্তম নৌবহরকে যুদ্ধ সাজে সাজিয়ে বঙ্গোবসাগরে -বাংলাদেশের অদুরে মোতায়েন করা হয়। আমেরীকা বিশ্বের একনম্বর পরাশক্তি তাঁদের নৌবহর মোতায়েনে প্রবাসি সরকারের মধ্যে কিছুটা ভীতির সঞ্চার করে। এই দুর্বলতার মহুর্তে প্রবাসি সকারের মধ্যে আমেরীকার চর রাজনৈতিক ভাবে সংকট নিরসনের জন্য প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিনের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।মীরজাপর মোস্তাক পাকিস্তানের সাথে কনফেড়ারেশন গঠন করার প্রস্তাব দিলে বিচক্ষন প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মেদ ষড়যন্ত্রের আলামত পেয়ে ভারত সরকারের সাথে আলোচনার আয়োজন করেন।বিস্তারীত আলোচনার পর ইন্ধীরাগান্ধী শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বৈঠকস্থল ত্যাগ করেন।পরের দিনই মহান বন্ধু সৌভিয়েত ইউনিয়ন বঙ্গোবসাগরের উদ্দেশ্যে তাঁর অষ্টম নৌবহরকে যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। অষ্টম নৌবহর বাংলাদেশের অদুরে আসার আগেই সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আশংকায় আমেরীকা তাঁর যুদ্ধ জাহাজ প্রত্যাহারের ঘোষনা প্রদান করে। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়_________ ================================ মুলত: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পর জাতিয় ও আন্তজাতিক রাজনীতির সমিকরন দ্রুত পাল্টাতে থাকে।ছাত্র যুবকেরা যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করে। বাংলাদেশের বহুস্থানে রীতিমত ট্রেনিং নেয়া শুরু করে। ঐ দিকে পাকিস্তানী শাষকবর্গ পুর্ব পাকিস্তানকে তাঁদের করতলগত রাখার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নের জন্য সময়ক্ষেপন করছিল।অবশেষে ২৫শে মার্চের মধ্যরাতে তথাকথিত অপারেশন সার্চলাইটের ঘোষনা দিয়ে পাকবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর সকল শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা ইতিহাসের বিরল এক গনহত্যা।নারী শিশু,বৃদ্ধ,যুবক,ছাত্র শিক্ষক,বুদ্ধিজীবি কেহই তাঁদের বন্দুকের নিশানা থেকে রক্ষা পায়নি। নির্বিচারে যেখানে যাকে পেয়েছে সেখানেই হত্যাকরে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম,বর্বর রক্তের হোলিখেলা শুরু করে পাকিস্তানী সামরিকজান্তা বাহিনী। মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চের মধ্য রাতের পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে তৎকালিন ই,পি,আরের ওয়ারলেস ম্যাসেজে স্বাধীনতার কঠিন অভিযাত্রায় সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিয়ে ঘোষনা করেন, "বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে (পাকিস্তানি) সেনাবাহিনীর দখল থেকে প্রীয় মাতৃভূমির দখল্মুক্ত করতে সর্বাত্মক মোকাবেলা করার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করে চূড়ান্তবিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদেরকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহব্বান জানাচ্ছি।" এই ঘোষণার শুরুতেই বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত বিষয়টি সামনে আনেন সহস্র বছরের সাধনায় অর্জিত_ "আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন"। স্বাধীনতা ঘোষনা করার আগে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগ নেতাদের স্ব-স্ব এলাকায় চলে যেতে বলে নীজে ৩২ নম্বরে অবস্থান গ্রহন করেন।নেতারা বঙ্গবন্ধুকে ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যেতে অনুরুধ করলেও বঙ্গবন্ধু বলেন,ওরা যদি আমাকে না পায় আমার সারা বাংলা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে চারখার করে দিবে,তোমাদের প্রতি অনুরুধ রইলো, "যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে সেই দায়িত্ব পালন করবে।ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।" ই,পি,আরের ওয়ারলেস ম্যাসেজে দেয়া ঘোষনা তৎক্ষনাৎ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেল।বিদেশী গনমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে বঙ্গবন্ধুর ঘোষনা প্রচার করা হল।যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ার প্রচলন খুব বেশি না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা ২৬/২৭ শে মার্চে মাইকের মাধ্যমে স্ব-স্ব এলাকায় উক্ত ঘোষনা প্রচারের ব্যাবস্থা করেন। পুরো জাতি ঝাঁপিয়ে পড়লো সেই ঘোষণা শুনে হানাদার দখলদার পাকি বাহিনীকে হটাতে। বাঙালি জাতি সর্বত্র রুখে দাঁড়ায়। নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণ তীব্রতর হতে থাকে। বাঙালি জাতি জড়িয়ে পড়লো এক অসম যুদ্ধে। যে যুদ্ধ পাকিস্তানী জান্তারা তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। নিরস্ত্র ববাঙালি প্রান বিসর্জন দিতে থাকলো পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্বিচারে। রাস্তাঘাটে, রিকশায়, গাড়িতে, ঘরে, বাসা,বাড়িতে, প্রতিষ্ঠানে, স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রছাত্রী,শিক্ষকদের হোস্টেলে বাঙালি নিহত হতে লাগল অকাতরে। চারিদিকে লাশ আর লাশ। দাপন করার কোন ব্যাবস্থা সিমারের দল করেনি,শৃগাল কুকুরের টানাটানি করে লাশ খাচ্ছে।নদীতে লাশ,নর্দমায় লাশ,বাড়ীতে লাশ,হাটে ঘাটে শুধু লাশ আর লাশ।এই যেন এক আদিম যুগের মৃত্যুপুরি।শুরু হয় নারী জাতির উপর অত্যাচার। প্রকাশ্য দিবালোকে নারীর স্তন কেটে বেয়নেটের মাথায় নিয়ে উল্লাস করে ফিরতে লাগল পাকিস্তানী হানাদার সেনারা। নারী ধর্ষিত হতে থাকে গ্রাম গঞ্জে। শিশুরা বেয়নেটের ডগায় উড়তে লাগল রক্তাক্ত নিশানের মত। অস্ত্র হাতে না ধরতে শেখা বাঙালি গেরিলা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার ডাকও দিয়েছিলেন। সেই সাথে আহ্বান জানিয়েছিলেন, "যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।" বাঙালি সে ঘোষনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে শত্রুর মোকাবেলা করেছে।স্থানে স্থানে প্রতিরোধের দুর্ঘ গড়ে তুলে।কিন্তু আধুনিক সমরাস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে ছাত্র যুবক ইপিয়ার বাহিনি আস্তে আস্তে পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়। সে দিন জনতার সাথে ই,পি,আর বাঙ্গালি সেনা বাহিনীর চৌকস বিগ্রেড ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট,পুলিশ বাহিনীও যোগ দেয়।পাকিরা প্রথম আক্রমনেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন,ঢাকা ইউনিভারসিটির হল সমুহ দখল করে নেয়।রোকেয়া হলের ছাত্রীদের উপর নেমে আসে বিভীষিকার এক রজনী।অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশ পাকিস্তানী হানাদার দখল করে নিতে সক্ষম হয়। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বন্ধু ভারত মানব সভ্যতার চরম ভাবে ভুলুন্ঠিত করে আক্রমন পরিচালনা করলে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পুর্ব পাকিস্তান বেষ্টিত ১৭০০মেইল বর্ডার খুলে দেয় বাঙালিদের আশ্রয়ের জন্য।স্রোতের মত বাঙ্গালিরা ভারতে আশ্রয় নিতে থাকে।এককোটির ও অধিক মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়।ছাত্র যুবক ভাইয়েরা যার যার মত করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করে।আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনীধিরাও ভারতে গিয়ে যুদ্ধপ্রস্তুতি গ্রহন শুরু করে।মুক্তি বাহিনী গঠন,প্রবাসি সরকার গঠন সহ একান্ত প্রয়োজনীয় কর্মগুলি যথারীতি শুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মেহের পুরের আম্রবাগান বৈদ্যনাথে একত্রিত হয়ে রাষ্ট্রীয় সকল বিধিবিধান অনুসরন করে প্রবাসি মুজিব নগর সরকার গঠন করা হয়।মুক্তিযুদ্ধাদের চৌকস এক দল তরুন মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের গার্ড অব অনারের মাধ্যমে সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা আরাম্ভ হয়। মেহের পুরের বৈদ্যনাথ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মুজিব নগর। পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার হাত থেকে যে স্বাধীনতার আলোক বর্তিকা কেড়ে নিয়েছিল মীরজাফরের সহযোগিতায়,সে স্বাধীনতার আলোক বর্তিকা প্রজ্জলিত করার দৃড শফথের জন্য প্রবাসি সরকার গঠন করা হয় মেহের পুরের আর এক আম্রবাগানে।বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ি রাষ্ট্রপতি তাজউদ্দিন আহম্মেদ কে প্রধান মন্ত্রী করে সরকার গঠিত হয়।শুরু হয় আনুষ্ঠানিক শুত্রু মুক্ত করার লড়াই।প্রবাসি সরকার সারা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ১১জন সেনা কর্মকর্তাকে প্রধান করে যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করে।প্রধান সেনাপতি করা হয় বাঙ্গালি সেনা কর্মকর্তা(অব:) মেজর জেনারেল ওসমানীকে।মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক পদাধিকার বলে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তাঁর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অভ্যন্তরীন সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করে প্রবাসি সরকার বিদেশিদের সমর্থন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন, অনুষাঙ্গিক অন্যান্ন বিষয়াবলির উপর নজর দেয়।স্বল্প সময়ে যোদ্ধকৌশল গ্রহন করে শুরু হয় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর উপর সাড়াষি গেরিলা আক্রমন।মুক্তিযোদ্ধারা স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষন নিয়ে দলে দলে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গেরিলা কায়দায় আক্রমন পরিচালনা করে পাকিদের দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য কিরে দিতে সক্ষম হয়।গেরিলা আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এদেশিয় দোষরদের সহযোগিতায় গঠন করে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি ইত্যাদি নানাবীদ বাহিনী। তাঁদের এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য সর্বাজ্ঞে এগিয়ে আসে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এবং তাঁদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। যাহা পরবর্তিতে নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্র শিবির নাম ধারন করে।পুর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ,নেজামে ইসলাম,ইসলামি ডেমোক্রেটিক পার্টি সহ আরো কতিপয় ছোট ছোট দল ও গ্রুপ।এদিকে পাকি দখদার বাহিনী সারা বাংলাদেশ ব্যাপি শুরু করে রাজাকারের সহযোগিতায় তান্ডবলীলা--অগ্নিসংযোগ, লুটপার্ট, হত্যা, নারী নির্যাতন এমন কোন কিছু বাদ নেই যা তাঁরা অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেনা।সভ্যতা মুখ থুবড়ে পড়েছে সে দিন তাঁদের অত্যাচারের বিভীষিকার নিকট.,মায়ের সামনে মেয়ে,বাবার সামনে মা,ভাইয়ের সামনে বোন,স্বামীর সামনে স্ত্রীকে দর্শন করতেও তাঁদের বুক কাঁপেনি। মহান ভারতের মহিয়ষী নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী এবং ভারতের জনগন বাঙালির এই বিপদের সময়ে সর্বোচ্ছ ত্যাগ স্বীকার করে শরনার্থীদের থাকা খাওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, অস্ত্র ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতার হাত প্রাসারীত রাখতে কোনরুপ দ্বিধাবোধ করেননি। সেই দিনের সেই সাহায্য যদি ভারতের জনগন বাঙালি শরনার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের না দিতেন,তাহলে ইতিহাস হয়তোবা অন্যভাবে তাঁর গতিপথ নির্ধারন করে নিতে হত। ভারত শুধু আশ্রয় দিয়ে তাঁর কর্তব্য শেষ করেনি,মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে তাঁর দেশ সর্বচ্ছো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখে।ভারতের প্রধান মন্ত্রী বিরামহীন বিশ্বভ্রমন করে বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে বৈঠক করে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকারের স্বপক্ষে তাঁর দেশের অবস্থান তুলে ধরেন,আন্তজাতিক মহলের সাহায্য কামনা করেন।এদিকে প্রবাসি সরকারের পক্ষ থেকেও দুত পাঠিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করার ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়।এতে আন্তজাতিক ভাবে স্পষ্টতই দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়।সৌভিয়েত ইউনিয়ন সহ বেশ কিছু দেশের জনগন ও সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে,অন্য দিকে আমেরীকা চীন সহ বেশ কিছু দেশ পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে নিলর্জ্জভাবে তাঁদের সহযোগিতা করতে থাকে।উল্লেখ্য আমেরীকার জনগন সর্বতোভাবে বাংলাদেশের মুক্তিকামি মানুষের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে-- চাঁদা তুলে সাহায্য করতে থাকে।স্কুল পড়ুয়া শিশুরা তাঁদের টিফিনের টাকা বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য পাঠাবার ব্যাবস্থা করে।এমনিতর পরিস্থিতিতে মধ্য ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ পরিপুর্নতা পেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা চোরাগুপ্তা হামলায় ব্যাপক পাকি সৈন্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকে প্রতিনিয়ত:। আক্রমনের মুখে ব্যাপক সৈন্যের মৃত্যুতে পশ্চিম পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।সেন্যবাহিনীর আত্মীয়স্বজনেরা তাঁদের সন্তানদের অকালে আত্মাহতির কারন ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন শুরু করে।বিশেষ করে পাঞ্জাব ছাড়া আরো দু'টি প্রদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আস্থাশীল নেতৃবৃন্দ ও জনগন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোদ্ধে আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্ছারন শুরু করে। ইয়াহিয়া চতুর্দিকে বিপদের অশনি সংকেত শুনতে পেয়ে যুদ্ধের আশু ফলাফল পাওয়ার ফন্দিফিকিরে লিপ্ত হন। ইয়াহিয়া খাঁন এবং তাঁর পরিষদবর্গ, পরামর্শ দাতাদের তড়িৎ ফলাফল পাওয়ার অস্থিরতায় পেয়ে বসে।তাঁদের মিত্র আমেরীকা সাম্রাজ্যবাদ এবং তাঁর মিত্রদের নিকট সাহায্য কামনা করে পাক সরকারের পক্ষ হতে। এমনিতর সাহায্যের আবেদনের জন্য আমেরীকা ওৎ পেতে বসেছিলেন। কালবিলম্ব না করে বন্ধু পাকিস্তানের জনগনকে সাহায্যের জন্য সপ্তম নৌবহরকে যুদ্ধ সাজে সাজিয়ে বঙ্গোবসাগরে -বাংলাদেশের অদুরে মোতায়েন করা হয়। আমেরীকা বিশ্বের একনম্বর পরাশক্তি তাঁদের নৌবহর মোতায়েনে প্রবাসি সরকারের মধ্যে কিছুটা ভীতির সঞ্চার করে। এই দুর্বলতার মহুর্তে প্রবাসি সকারের মধ্যে আমেরীকার চর রাজনৈতিক ভাবে সংকট নিরসনের জন্য প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিনের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।মীরজাপর মোস্তাক পাকিস্তানের সাথে কনফেড়ারেশন গঠন করার প্রস্তাব দিলে বিচক্ষন প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মেদ ষড়যন্ত্রের আলামত পেয়ে ভারত সরকারের সাথে আলোচনার আয়োজন করেন।বিস্তারীত আলোচনার পর ইন্ধীরাগান্ধী শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বৈঠকস্থল ত্যাগ করেন।পরের দিনই মহান বন্ধু সৌভিয়েত ইউনিয়ন বঙ্গোবসাগরের উদ্দেশ্যে তাঁর অষ্টম নৌবহরকে যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। অষ্টম নৌবহর বাংলাদেশের অদুরে আসার আগেই সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আশংকায় আমেরীকা তাঁর যুদ্ধ জাহাজ প্রত্যাহারের ঘোষনা প্রদান করে। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও গৌরবের বিজয়-- =========≠=================== ১৯৬৯এর গনয়ান্দোলনের মুখে টিকতে না পেরে লৌহমানব খ্যাত আইয়ুব খাঁন রাতের আধাঁরে তাঁরই জাতভাই আর এক সেনা কর্মকর্তা ইয়াহিয়া খাঁনকে হাতে খমতার মসনদ দিয়ে তল্পিতল্পা নিয়ে চলে গেলেন।ইয়াহিয়া জনগনের দাবী একজন এক ভোট নীতিতে সাধারন নির্বাচনের দাবী মেনে নিলেন।মেনে না নিয়ে উপায় ছিলনা-ততোদিনে পাকিস্তানের উভয় অংশে আন্দোলন এমন এক পয্যায় গিয়ে পৌছে সেখান থেকে জংনকে ঘরে পাঠানো কোন রকমেই সম্ভব হতনা।ইয়াহিয়া নির্বাচন দিলেন কিন্তু সাথে এমন একটি অধ্যাদেশ জারী করলেন আপাত দৃষ্টে মনে সবার নিকট গ্রহন্যোগ্য না হওয়ারই মত।সামরীক সরকার ঘোষনা দিয়ে বললেন,প্রেসিডেন্ট যদি মনে করে নির্বাচিত জনপ্রতিনীধি সম্বলিত সংসদ দেশের জন্য হুমকি হতে পারে তবে প্রেসিডেন্ট তা ভেঙ্গে দিতে পারবেন।উভয় পাকিস্তানের বিজ্ঞ অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল ও ব্যাক্তিবর্গ এই অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানালেন।অনেকেই নির্বাচন করে কোন লাভ হবে না মন্তব্য করে নির্বাচন বয়কট করার হুমকি দিয়ে রাখলেন।উল্লেখ্যযে উভয় পাকিস্তানে জনগনের নেতা হিসেবে সবাই সবাইকেই মনে করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হযবরল অবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছেন।কেহ কাউকে ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। জনগনের আসল একক নেতা বা জনগনের পক্ষে একক সিদ্ধান্ত দেয়ার কোন নেতার আর্বিভাব ততোদিনেও হয়নি। সবাই সবাইকে জনগনের একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে ভাবেন। মুলত তাঁদের কারোরই একচিলতে পরিমান জনসমর্থন ছিলনা।যেহেতু তাঁর আগে কোন সাধারন নির্বাচন অনুষ্টিত হয়ে সংখ্যা গরিষ্ট দলের নেতা নির্বাচিত হননি। বঙ্গবন্ধু জানতেন নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্টতা পেলেও পশ্চিমারা বাঙালি নেতাদের হাতে ক্ষমতা দিবেন না। খমতা হস্তান্তর না করার পরিনতি কি হতে পারে সুদুরপ্রসারী চিন্তাবীদ ততোদিনে আছঁ করতে বেগ পেতে হয়নি। বঙ্গবন্ধু এও জানতেন বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি একমাত্র পুর্ব পাকিস্তানের একক সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক।নির্বাচনে ম্যান্ডেট ছাড়া এই জনসমর্থনের কোন মুল্যই ছিল না। এদিকে অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে নির্বাচন না করে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর উপর চাপ সৃষ্টি করে রাখা হল। এই চাপ আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে যেমন তেমনি বাহিরের অন্য বিরুধিদলের পক্ষ হতেও। বঙ্গবন্ধুর চিন্তাচেতনায় তখন একমাত্র নির্বাচন করে পুর্ববাঙলার একক সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারি হওয়া।বিদেশি রাষ্ট্র সমুহের সাহায্যের জন্য যাহা একান্তই প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজনে পাকিস্তানিরা নির্বাচনকে আরো কঠিন শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ করলেও নির্বাচন করা ঐ মহুর্তে জরুরীই ছিল। সকল চাপকে উপেক্ষা করে তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার ঘোষনা দিয়ে মাঠে নেমে গেলেন। অভিজ্ঞ রাজনীতিক মাওলানা ভাসানি সহ আরো কিছু চীন সমর্থিত দল নির্বাচন বয়কট করে শ্লোগান উঠালেন,""ভোটের বাক্সে লাথী মার--পুর্ব বাংলা স্বাধীন কর।""এখানে যে বড় রকমের ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধুর বুঝতে সামান্যতম দেরী হয়নি।পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে থেকে এই ধরনের বিচ্ছিন্নতার শ্লোগান দেয়া সত্বেও ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে কোন রুপ আইনানূগ ব্যাবস্থা গ্রহন না করে বরঞ্চ রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা দিয়ে যাচ্ছিল।এই থেকেই বুঝতে অসুবিধা হয়নি ভোট বর্জন করার কি কারন থাকতে পারে। বঙ্গবন্ধু চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন ঘোষনা দিয়ে ৬দফা দাবীর সমর্থনে গনরায় চেয়ে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে সফর শুরু করে দিলেন।ভোটের ঝড়ো হাওয়ার ঘোরপাকে সকল ষড় যন্ত্র উবে গেল।পুর্ব পাকিস্তানে ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জীতে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ট আসন লাভ করে একমাত্র নেতা হিসেবে দেশ বিদেশের স্বীকৃতি নিয়ে নিলেন।ষড়যন্ত্রকারিদের হাতে পুর্ব পাকিস্তান বিষয়ে আর কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আইনগত ভিত্তি রইলোনা। সংখ্যাগরিষ্ট আসনের অধিকারি বঙ্গবন্ধুর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে এইবার শুরু হয় আর এক নাটক। শুরু হল প্রাসাদ ষড়যন্ত্র,খমতা হস্তন্তর না করার ফন্দিফিকির,অযথা গড়িমসি। সংসদের অধিবেশন ডেকেও তা স্থগিত করে দেন ইয়াহিয়া। ষড়যন্ত্রের মঞ্চে আর্বিভুত হন জনাব ভুট্রো।তিনি কিছুতেই বঙ্গবন্ধুর হাতে খমতা দিতে রাজী নহেন।খমতার অংশিদারিত্ব দাবী করে বসেন তিনি।খমতা যাতে বঙ্গবন্ধুর হাতে না আসে তাঁর জন্য ঘোষিত অর্ডিনেন্স এর খমতা প্রয়োগ করার জন্য অনেকে প্রেসিডেন্টকে প্ররোচিত করতে থাকেন। এমনি অবস্থায় ইয়াহিয়া ঘোষিত সংসদ অধিবেষন স্থগিত করে দেন।স্থগিত ঘোষনা প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পুর্ববাংলা ফুঁসে উঠে।কিছুতেই জনগন এই ঘোষনা মেনে নিতে পারেনি।জনাব ভূট্রোর পরামর্শে ইয়াহিয়া আলোচনার আহব্বান জানালেন।কৌশলি ভুট্রো--ইয়াহিয়া আলোচনার নামে সময়ক্ষেপন করে পুর্বপাকিস্তানে সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর বুঝতে অসুবিধা হয়নি, পশ্চিম পাকিস্তানিরা গায়ের জোরে আন্দোলন দমন করার কৌশল অবলম্বন করছে।গন আন্দোলন গনুভ্যুত্থানে রুপ ধারন করেছে ততোদিনে।বঙ্গবন্ধু সব দিক নেড়েচেড়ে দেখে নিলেন ঠিক আছে কিনা।জোয়ারের মত বত্রিশ নম্ভরের বাড়িতে মানুষের স্রোত আসতে শুরু করেছে।সারাদেশ মিছিলের দেশে পরিনত হয়ে গেছে।নগর বন্দর,গ্রাম গঞ্জ,সব বয়সের মানুষ মিছিলে সামিল হয়ে গগন বিদারি শ্লোগানে শ্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তুলছিল।স্বাধীকারের আন্দোলন রুপান্তরীত হয়ে গেল স্বাধীনতার আন্দোলনে।সারা দেশ, অফিস আদালত,বঙ্গবন্ধু যাহাই বলেন তাহাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন।পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল পুর্ববাংলার মানুষ।অঘোষিত সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু, আঙ্গুলি হেলনে দিকের নিশানা খুঁজে নিচ্ছেন পুর্ব বাংলার মানুষ। এল সময় ঘনিয়ে ৭ইমার্চের। উত্তাল বাংলার সব স্রোত তখন বঙ্গবন্ধুর বত্রিশ নম্ভর বাড়িতে।ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের উত্তাল বাংলার জনগন স্রোতেরমত সমবেত হতে থাকলেন রেসকোর্স ময়দানে।বাংলার অবিসংবধিত নেতা আজ দিক নির্দেশনা মুলক ভাষন দিবেন।দেশি বিদেশি সকল শক্তি অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বাংলার নেতা এই জটিল পরিস্থিতিতে কি বলেন শুনার অপেক্ষায়।অবশেষ এলেন নেতা, ধীর স্থীর গম্ভীর বেসে।জনতা বাঁশের লাঠি আর বাদ্যযন্ত্রের আমোঘ সুরমুর্চনায় নেতাকে সম্ভাষন জানালেন।নেতা দুই হাত উদ্ধে তুলে বিশাল বুকের সব ভালবাসা বিলিয়ে দিলেন জনতার উদ্দেশ্যে।সেই এক অন্যরকম দৃশ্যের অবতারনা করলো নিমিশে সভাস্থল।ভাবগম্ভীর দরাজ গলায় বঙ্গবন্ধু ভাষন দিলেন জাতির উদ্দেশ্যে। এইতো ভাষন নয়,স্বল্প সময়ে পাঠ করলেন বিশাল এক মহাকাব্য।"তুলনাহীন ভাষার মাধুর্য্য,অতুলনীয় ভাষার ব্যাবহার, বজ্রকঠিন আওয়াজ, এমনতর ভাষন বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আর একটাও কোন স্থানে কোন সময়ে দিয়েছিলেন-- এই তথ্য আজও পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের কোন অঞ্চলের ভাষায় তিনি সর্বগ্রায্য, সর্বজনবোধ্য ভাষনটি দিয়েছেন তাও গভেষনা করে বের করতে হবে।প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি চয়ন, প্রতিটি বাক্য বিশ্নেষনে পাওয়া যায়-- মহা এক কাব্যের অমোঘ শব্দের গাঁথুনি। যুগযুগ গভেষনা করেও শেষ করা যাবেনা এই ভাষনের তাৎপয্য। তিনি সেদিন ঘোষনা করলেন,"এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম--এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম"।তিনি আরো বললেন তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো, আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।"এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। সাথে সাথে শর্ত সাপেক্ষে তিনি আলোচনার দরজাও খোলা রাখলেন।ততদিনে দেশের বিভিন্নস্থানে অগনিত মানুষ পাকিস্তানিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে,বঙ্গবন্ধু বললেন, "রক্তের উপর পা দিয়ে আমি আলোচনায় বসতে পারিনা।যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাঁদের তদন্ত পুর্বক ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে,আগে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে,তার পর বিবেচনা করে দেখবো আলোচনায় বসা যায় কিনা।"" গত কয়েক মাস আগে জাতিসংঘ যুগশ্রেষ্ঠ ভাষন হিসেবে ৭ই মার্চের ভাষনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। জয়বাঙলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা।

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের গৌরব--- ============================= কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেবের দুরদর্শি নেতৃত্বের গুনে প্রথম দিকে বাঙালী নেতারা মোহচ্ছন্ন থাকলেও অচিরেই তাঁদের মোহমুক্তি ঘটতে থাকে।সম্যক ভাবেই জ্ঞানে প্রবেশ ততদিনে শুরু হয়ে গেছে যে, ইংরেজ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে হাজার মেইল দুরের আর এক বিজাতীয় উপনিবেশের শাষন শোষনের নিগড়ে বাঙ্গালীরা আবদ্ধ হয়ে গেছে।এবার যাদের নিয়ন্ত্রনে শাষন শোষনের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেল জাতিতত্বের তকমায়,তাঁদের সাথে না আছে ভাষার মিল না আছে সংস্কৃতির মিল। সর্বপাকিস্থান ভিত্তিক দল মুসলিম লীগের দলীয় কাঠামো পশ্চিম পাকিস্থানীদের নিয়ন্ত্রনে ছিল,এবং সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসার কোন উপায় ও ছিলনা।সঙ্গত কারনে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ছাবি কাঠি তাঁদের হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা মোটেই ছিলনা।সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নিয়ে গেলেও পশ্চিমের নিকট ক্ষমতা থেকে যায়,কারন সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে শতকরা নব্বই ভাগ কর্মকর্তা পশ্চিম পাকিস্থান থেকেই নেয়া হত।বাঙ্গালীরা অধিকতর খাটো জাতি হওয়ার কারনে ভর্তি প্রক্রিয়ার বেষ্টনি বেদ করে প্রশিক্ষন প্রক্রিয়ায় পৌছার কোন সুযোগ পেতনা।সঙ্গত কারনে নতুন স্বাধীন হওয়া দেশটির সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাদের অংশ গ্রহনে পুর্বাঞ্চল অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বহুগুন পিছিয়ে যায়।পুর্বাঞ্চল যতই পিছিয়ে যেতে থাকে ততই শোষনের মাত্রা বাড়তে থাকে।পশ্চিমারা তাঁদের শহর সাজানোর মানষিকতায় প্রথম ১৫ বছরের মধ্যেই পাকিস্তানের তিন শহরে রাজধানী পরিবর্তন করে শহর কেন্দ্রিক বিনিয়োগের নামে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাজেট বরাদ্ধ একক ভাবে নিয়ে যায়।প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনের জন্য বর্তমানের সংসদ এলাকায় জমি আধিগ্রহন করেও কোন উন্নয়ন বরাদ্ধ ২৪বছরেও দেয়া হয়নি।অথছ কেন্দ্রীয় সকারের রাজধানী তিন শহরে পরিবর্তন করে স্বল্প সময়ের মধ্যে উক্ত শহরে অধিবেশন কক্ষ নির্মানে টাকার অভাব হয়নি।এই থেকেই বুঝা যায়, আর ২৪ বছর সময় পেলে তাঁরা পুর্ব বাংলাকে শোষনের নিগড় থেকে বের হওয়ার কোন পথ খোলা রাখতো কিনা।এমন্তর পরিবেশ তাঁরা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়,স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কোন প্রকার রাষ্ট্রীয় ঘোষনা ব্যাতিরেকে বাঙালীরা সর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় শ্রেনীতে রুপান্তরীত হয়ে যায়।বাঙ্গালী ছেলেমেয়েরা সহসাই তাঁদের বাসার চাকর বাকর হয়ে কোন রকমে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়ে যায়। গনতন্ত্রের লেশমাত্র ছিলনা।একের পর এক সামরিক জান্তার মাধ্যমে খমতার হাতবদল হতে থাকে।২৪ বছরেও একটা সংবিধান প্রনয়ন করার সুযোগ তারা দেয়নি।সামরিক পরমানের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার অভিনব পন্থায় চলে শাষন শোষন। অভিবক্ত বাংলার প্রধান মন্ত্রী এ,কে ফজলুল হক,শহিদ সরওয়ার্দিকে জোরপুর্বক দেশত্যাগে বাধ্যকরে চলতে থাকে নির্ভেজাল শোষন।বিতাড়িত জীবনেই বাংলার অবিসংবধিত নেতা সশহিদ সরওয়ার্দীর মৃত্যু হলে দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব পান শেখ মজিবুর রহমান। ততোদিনে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে পূর্ববাংলায় নিষ্পেষণের মাত্রা বাড়ায়। পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তন করে করা হয় পুর্বপাকিস্তান। অভিনব নতুন মাত্রায় বাঙালির শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির উপর আঘাত হানা হয়।সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দায়িত্ব বর্তালো তরুন নেতা শেখ মুজিবের ওপর। সর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ হতে বের হয়ে ততদিনে পালটা মুসলিম লীগ গঠন করা হয়।এই দলের নিরংকুস প্রাধান্য থাকে পুর্বাঞ্চলের বাঙালি নেতাদের।মওলানা ভাসানী আরও কতিপয় ব্যক্তির নেতৃত্বে মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা দলছুট ব্যক্তিরা গঠন করেছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। দলটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করেছিল। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাহসী ও অক্লান্ত পরিশ্রমিকর্মী পরবর্তির বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৪ সালে পুর্বাঞ্চলের সব দল একত্রে মিলে গঠন করেন যুক্ত ফ্রন্ট।তৎকালিন পুর্বপাকিস্তানের প্রবীন নেতা শেরে বাঙলা এ,কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে সবাই জোটবদ্ধ হয়ে প্রাদেশিক যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে ৫৪ ইং সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে লড়েছিলেন। নির্বাচনে বিপুল ভোটে কল্পনাতীত জয় পেয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। মুসলিম লীগের অবস্থা এমন পয্যায় নেমে এসেছিল যা পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা কল্লপনাও করে দেখেননি তাঁদের ভাগ্যে ধস নামানো পরাজয় ঘটবে। পূর্ববাংলা মুসলিম লীগের রাজনীতিকেই মুছে দিয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি কেন্দ্রীয় সামরিক বাহিনীর দখল করা রাষ্ট্রপতি। এক ঘোষনা বলে যুক্তফ্রন্ট সরকার বাতিল করে দেয় পাকিস্তানিরা। এরপর কাষ্মির ভুখন্ডের দাবীকে কেন্দ্র করদ ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে ১৭ দিনের এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তান চরমভাবে পরাজিত হলে অসম্মানজনক তাসখন্দ যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধের সময়, পূর্ববঙ্গ ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত,এক ব্যাটেলিয়ন সৈন্যও পুর্বাঞ্চল আক্রান্ত হলে সাময়িক বাধার জন্য মোতায়েন করা হয়নি।পুর্বাঞ্চলের যুবকদের হাতে বাঁশের লাঠি দিয়ে পাহারায় নিয়োজিত রেখে সকল শক্তি পশ্চিমাঞ্চলে সমবেত করেও শেষ রক্ষা হয়নি। যুদ্ধে হেরে গিয়ে অসম তাস খন্দের চুক্তি করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। দুরদর্শী তরুন আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা শেখ মুজিবর রহমান কোন বিলম্ব না করে কাঁচা এই মোক্ষম ইস্যুটিকে জনগণের সামনে নিয়ে আসেন। যুদ্ধকালে পূর্ববঙ্গ থেকে প্রতিরোধের জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়নি,বাস্তবতায় জনগনের দেখা এই বিষয়টি পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের মনের চিন্তাচেতনার সাথে হবহু মিলে যাওয়ায় লুপে নেয় বিষয়টিকে। ভারত পূর্ববঙ্গ আক্রমণের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে সর্বশক্তি নিয়োগ করে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করাই শ্রেয় মনে করে পুর্বাঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করেও আক্রমন করেনি।তাঁদের রণকৌশল যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে প্রমান করেছে সঠিক ছিল। পাকিস্তানের মসুলমানদের সামান্য হিন্দুবাহিনীর নিকট চরম পরাজয় পুর্ব পাকিস্তানের জনগন মেনে নিতে পারেননি।তেজস্বি মুসলিম বাহিনীও এতে চরম অপমান বোধ করতে থাকে।পরাজয়, অপমান বাঙালিদের ক্ষুব্ধ করে তুলে। শেখ মুজিবুর রহমান মোক্ষম ক্ষোভের এই মহুর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিটি সামনে নিয়ে আসেন। ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি। সারা বাংলার মানুষ এই কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে। ততদিনে যুদ্ধব্যায় মিটানোর কারনে পুর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশের অর্থনৈতিক বৈষম্য তখন আকাশ চুঁই ছুঁই করছিল।পুর্বাঞ্চলের দ্রব্যমুল্য পশ্চিমের চাইতে কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুনের বেশিতে ঠেকে।বৈশম্যের মাত্রাবেড়ে চলেছিল প্রতি বছর। দুরদর্শি নেতা সঙ্গে সঙ্গে দাবী উত্থাপন করে বসেন সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সংস্কারের নিমিত্তে ছয়দফা দাবী উত্থাপনের মাধ্যমে। এই দাবি আদায়ের আন্দোলনের তিব্রতা দিনের পর দিন প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠছিল প্রতিদিন প্রতিনিয়ত।আহম্মক সামরিক জান্তা রাজনৈতিক দাবিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে মামলা মোকদ্দমার ফাঁদে ফেলে, দমন পীড়নের আশ্রয় নিয়ে--মোকাবেলা করার কৌশল অবলম্বন করে।পাকিস্তানী শাসকরা প্রথমেই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা আগিরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজুও করে বঙ্গবন্ধুওকে প্রধান আসামি করে।এতে হীতে আরো বিপরীত হল।পুর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা এই মামলাকে বাঙ্গালি জাতিকে আরো নিষ্পেষিত, কণ্ঠরোধ করা, অধিকারহীন অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করে ব্যাপক হারে আন্দোলনে সম্পৃত্ত হতে থাকল। ছাত্র সমাজ এই মামলার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এক্যবদ্ধ হলো। তারা তাঁদের নিজস্ব ব্যানারে ৬ দফার আলোকে ঘোষণা করে ১১ দফা। তখন ছাত্র সমাজের উপর জনগনের আস্থা ছিল প্রশ্নাতীত।ছাড়া আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সাথে সাথে সারা বাঙলা থর থর করে কেঁপে উঠে।অসীম সাহস আর মনোবল নিয়ে জনগন সম্পৃত্ত হওয়ার কারনে একই সময়ের মধ্যে গর্জে উঠল সারা বাংলা। সামরিক শাসক আইয়ুব খানের গদি টলমল। সারা পূর্ববাংলায় গণআন্দোলন নিমীশেই ছড়িয়ে পড়ে। তার ঢেউ লাগে পশ্চিম পাকিস্তানেও। গনজোয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই রুপান্তরীত হয়ে গেল গণঅভ্যুত্থানে। সৃষ্ঠ গনঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব শাহী ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলেন। জয়বাঙলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

ছবি

মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের গৌরব ====================================== অখন্ড পাকিস্তান থেকে বিছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অনেকগুলি কারনের মধ্যে প্রধান কারন তিনটি (১)অর্থনৈতিক বৈশম্য (২)সাম্প্রদায়িকতা (৩)কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পার্থক্য।কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ক্যারিস্মেটিক নেতৃত্বে তৎকালিন পুর্ববাংলা দ্বিজাতি তত্বের নিগড়ে বাধা পড়ে যদিও দুই হাজার মেইল দুরত্বের ভিন্ন জাতগোষ্টির সংগে জোট বদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার অদম্য আখাংকার বাস্তবায়ন করেছিল, সেই আশা আখাংকায় ভাটার টান পড়তে খুব বেশি দেরী হয়নি।পশ্চিম পাকিস্তানীরা পুর্ব পাকিস্তানকে শোষন শাষন করার জন্য প্রথমেই পুর্ব বাংলার ভাষা কৃষ্টি পরিবর্তন করার পদক্ষেপ নিলে দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈরিতার জম্ম নেয়।ভাষা পরিবর্তন এবং বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য পুর্ব পাকিস্তানে যে আন্দোলন গড়ে উঠে তাহাই পয্যায়ক্রমে স্বাধীনতার দিকে দাবিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বসস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধের রুপ ধারন করে।পুর্ব পাকিস্তানের বাঙালী মসুলমানদের ভাষায় হিন্দুত্বের গন্ধ আছে মর্মে অভিযোগের ভিত্তিতে ভাষা পরিবর্তনের আজগুবি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগে বাঙ্গালিরা মর্মে মর্মে অনুভব করে পশ্চিমের সাথে পুর্বের মিলন কোনকালেই সম্ভব হবেনা।পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম অধ্যায়ে যাহা অনুভব করেছিলেন বাঙ্গালিরা ২৪ বছরে তাহাই সর্বক্ষেত্রে পরিস্ফুটিত হয়ে বিশালকার পাহাড়ের আকার ধারন করায় '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অনিবায্যতার লক্ষন ফুটে উঠে।বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রুপ দানের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে বাঙালিদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধের অংশের রাজনৈতিক উপস্থিতিও লক্ষনীয় ছিল। বর্তমান জামায়াতে ইসলামী,মুসলিম লীগ, নেজামি ইসলামী,ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি সহ কতিপয় দল ও ব্যাক্তি পাকিস্তানিদের পক্ষাবলবন করে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা করতে থাকে।'৬৯ এর গনুভ্যুত্থানের পর '৭০এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিশাল সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়ে একক নেতৃত্বদানকারি দল ও ব্যাক্তি মুজিবের উত্থান ঘটলে স্বাধীনতার চুড়ান্ত আকার ধারন করতে আর বেশি সময় নেয়নি।নির্বাচিত এককদল ও ব্যাক্তি শেখ মজিবকে ক্ষমতা গ্রহন করার সুযোগ না দিয়ে জোর পুর্বক অস্ত্রের ভাষায় বাঙ্গালিদের দমন করে শোষন শাষন অব্যাহত রাখার অদম্য আখাংকায় '৭১এর ২৫মার্চের কালোরাতে বাঙ্গালিদের উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাপিয়ে পড়ে।নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে, শারা ঢাকা শহরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিমিশে ধ্বংসস্তুপের বিভিষিকাময় এক অন্ধকার যুগের প্রবর্তন করার চেষ্টা করে।শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের নির্দেশ অনুযায়ী স্থানে স্থানে প্রতিরোধ।সেই প্রতিরোধ যুদ্ধই রুপান্তরীত হয় মহান স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের সসস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিকল্প শক্তি পুর্ব পাকিস্তান থেকেই সৃষ্টি হয়।যারা ৪৭-৭০ইং ২৪ বছর পয্যন্ত বাঙালির প্রত্যেক আন্দোলন সংগ্রামে বাধা দিয়ে পাকিদের স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল তারাই মুক্তি যুদ্ধে গঠন করে পাক সেনাদের সহযোগিতা করার জন্যে রাজাকার, দালাল, আলবদর, আলশামস, মুজাহিদ বাহিনী। জামায়াতে ইসলামী তখন এতে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল।সম্মিলিত বাহিনী ইসলাম রক্ষা করার নামে শুরু করে তান্ডব লীলা।হত্যা,নারী নির্যাতন,আগুন, লুটতরাজ। এমন কোন কিছু বাদ রাখেনি যা মানবতার ইতিহাসে আগে কখনই কোন জাতি দেখেছে বা এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়েছে। একুশ শতকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাসে পেছনে ফিরে তাকালে সে সব নৃশংসতার দৃশ্য ভেসে উঠে মনের আঙ্গিনায়। আজ চুয়াল্লিশ বছর পেরিয়েও সেই নৃশংসতার ইতিহাস, বর্বতার দৃশ্য, হত্যাযজ্ঞের বিভিষিকা বারবার চোখের সামনে স্বপ্নের ঘোরের মতই ভেসে উঠছে।তাইতো দেখা যায় আজকের নতুন প্রজন্মও একাত্তরের বর্বরতার জন্য দায়ীদের কোন ভাবেই ক্ষমা করতে রাজি নয়। তারা মনে করে ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মদান ও তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনদেশে পরাজিত শক্তির অপতৎপরতা বন্ধ করা স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্বকে নিরাপদ রাখার স্বার্থেই প্রয়োজন ।মহান স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতির জীবনে এক মহান ত্যাগ,নির্যাতনে নিস্পেষিত হওয়ার পর বেঁচে যাওয়ার আনন্দ,যুদ্ধে জেতার অহংকার,বাঙ্গালির স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের এক গৌরবময় দিন। বহু ত্যাগ তিতিক্ষা এবং নয় মাস রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধে অবতির্ন হয়ে স্বসস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালির স্বাধীন,সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম,অসিম সাহষ,বাঙ্গালির প্রতি অকৃত্তিম ভালবাসা,তেজদিপ্ত নেতৃত্ব,জেল জুলুম হুলিয়ার অপরনাম আমাদের রক্তেভেজা আজকের এই স্বাধীনতা।বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার আপমর জনগন নারী পুরুষ যুবক যুবতি, কৃষান কৃষানি তথা সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা লাল সুর্য্য। প্রত্যেক দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন একটি গৌরবময় ঘটনা। পৃথিবীতে কম সংখ্যক জাতি আছে, যারা রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এদিক থেকে একটি ব্যতিক্রমী দেশ। এই দেশটি মহান মুক্তিযুদ্ধ এ সাগরসম রক্ত অগনিত মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।স্বাধীনতা সম্পর্কে বাঙালি জাতি যতো ত্যাগ বিসর্জন দিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করেছে, ততোটা অন্য কোন জাতি পারেনি। "স্বাধীনতার মন্ত্র আত্মজ্জল ধারণাটি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ যেভাবে আমাদের মননে এঁকে দিয়েছেন, আর কোনও দেশের কবি মনিষীরা সেভাবে দিতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথের মতে_ "স্বাধীনতা বাহিরের বস্তু নহে। মনের ও আত্মার স্বাধীনতাই প্রকৃত স্বাধীনতা। স্বাধীনতাকে জীবনের আদর্শ হিসেবে যে গ্রহণ করিতে শিখিয়েছে এবং অপরের প্রতি উহা সম্প্রসারিত করিতে যে কুণ্ঠিত নয়, সেই প্রকৃত স্বাধীনতার উপাসক।... স্বাধীনতা সম্বন্ধে অপরের প্রতি যাহারা একাত্মতা প্রকাশে অক্ষমতা প্রকাশে অভ্যস্ত,অপরের প্রতি অবিশ্বাস এবং সন্দেহ, স্বাধীনতার ওপর তাহার কিছুমাত্র নৈতিক দাবি থাকে না, সে পরাধীনই রহিয়া যায়। আমি তাই আমার দেশবাসীকে একথা জিজ্ঞাসা করিতে চাই যে, যে স্বাধীনতার ওপর তাহাদের আখাংকা তাহা কি বাহিরের কোনও বস্তু বা অবস্থা বিশেষের ওপর নির্ভরশীল? তাহারা কি তাহাদের সমাজের ক্ষেত্রে শত রকমের অন্যায় ও অসঙ্গত বাধা হইতে বিমুক্ত এতটুকু স্থান ছাড়িয়া দিতে সম্মত আছেন, যাহার ভিতর তাহাদের সন্তান সন্ততি মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ মর্যাদায় দিন দিন বড় হইয়া উঠিতে পারে?" 'স্বাধীনতার মূল্য' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ মানবতা বোধকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। একাত্তর সালে রবি ঠাকুরের সেই মানবতারই জয় হয়েছিল। আর পরাজয় ঘটেছিল দানবদের।" কোন দেশেই মুক্তিযুদ্ধ বারবার আসে, তা কিন্তু নয়। সেই মুক্তিযুদ্ধে যারা যোগদান করেন এবং গর্বের শিখরে উপনীত হন, তাদের কোনো তুলনা হয়না,তাঁদের ঋন পরিশোধ যোগ্য নয়। কারন জীবনকে সে তুচ্ছ করে দেশকে দখলদারমুক্ত করার জন্য সে ঝাপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে,এখানে তাঁর কোন ব্যাক্তিগত লাভালাভের প্রশ্ন ছিলনা,লাভ পাওয়ার কোন রাস্তাও ছিলনা।একান্ত দেশের স্বার্থে অস্ত্রহাতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে দেশ মাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করেছে।যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু অনিবায্য ছিল,হেরে গেলেও মৃত্যু তাঁর নিশ্চিতই ছিল।সে কোন কিছু পরোয়া করে যুদ্ধে যায়নি,গিয়েছে একান্ত মনের টানে।তাই সর্বযুগে সেই অকোতভয় সৈনীক দেশ ও দশের গৌরবের শিখরেই তাঁর অবস্থান থাকে।হয়তো কেউ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, নয়তো কেউ গোপন পোস্টার লিখে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। কোনো দেশেই সেই যুদ্ধ পুনঃপুনঃ আসে না। তেমন যুদ্ধে তখনকার তরুণ তরুনি, ছাত্র ছাত্রী,সর্বস্তরের মানুষ যোগ দিয়েছিল। আমার আত্মীয়স্বজনদের বিরাট অংশই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে,আমি বা আমার সমবয়সি বন্ধুরা নিতান্তই ছোট ছিলাম বিদায় পারিনি।তবে বুঝার এবং জানার বয়স হয়েছিল। ভাগ্য হয়তো আমার প্রতি সুপ্রসন্ন ছিলনা তাই যেতে পারিনি।আর মাত্র চার পাঁছ বছর পর যদি সেই মহান কর্মটি অনুষ্ঠিত হত হয়তো আমিও গর্বিত এক মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সমাজে বিচরন করতাম।দেশের মহতিক্ষনের অনুপস্থিতি ক্ষনে ক্ষনে নীজকে বিচলিত করেনা তা কিন্তু নয়।আমি রক্ত দেখেছি,নাখাওয়া পাগল প্রায় মুক্তি সেনাদের চোখের আগুন দেখেছি।তাঁদের পানি এনে দিয়েছি তৃষনা নিবারনে।তাঁদের বন্দুক গুলী হাত দিয়ে ছুয়ে দেখেছি। স্বাধীনতার যুদ্ধকালিন এই স্মৃতিটুকু বন্দুকের সেই স্পর্শ, সেই গৌরব মনের আঙ্গিনায় অচঞ্চল মূর্তির মতো স্থানুবৎ দাঁড় করিয়ে রাখে আমাকে সর্বক্ষন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দৃশ্যত একাত্তরের মার্চ থেকে শুরু হলেও এর প্রেক্ষাপট রচিত হয় ঐ যে বললাম'৪৭ইং সালের বাঙালির উপলব্দি কথা।মুলত তখন থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘদিন সামাজিক, রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা তিনি। মুলত ৭০ এর জাতীয় নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে ও নির্দেশে, সার্বিক তত্বাবধানে তখনকার পুর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ চলছিল। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের কারনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বিশ্বজনমতের সমর্থন লাভ করা অত্যান্ত সহজতর হয়েছিল নির্দিদ্বায় বলা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় যদিও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছিল। যুদ্ধকালে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার 'মুজিব নগর সরকার' নামেই পরিচিত ছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার জন্য পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগকে এককভাবে দায়ী করেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করবার পথ সুগম করার অপরাধে পাকিস্তানী সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মৃত্যুদণ্ড দিতে বদ্ধপরিকর হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বজনমতের ভয়ে সেই দণ্ড কার্যকর করতে পারে নি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। বাংলাদেশ এক ঘোষণায় স্বাধীন হয়ে গেছে যারা ভাবেন, তারা আসলে এদেশকেই মেনে নিতে পারেন না বা ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান করে পরাজিত শক্তির পক্ষাবলম্বন করেন। বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো তিনি আমাদের বাঙালি জাতিসত্তাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই প্রক্রিয়া হঠাৎ করে শুরু হয়নি। বাঙালির দীর্ঘদিনের আত্মানুসন্ধান, দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও সংগ্রামের অমোঘ পরিণতি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। বিস্ময় জাগে বৈকি এখন যে, এই ভূখণ্ড যেটি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথমে 'পূর্ববাংলা' এবং পরে 'পূর্বপাকিস্তান' নামে পরিচিত ছিল, সেটিকে ১৯৬৯ সালে 'বাংলাদেশ' বলে ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই জাঁদরেল পাকিস্তানী সামরিক শাসক গোষ্ঠীর ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু এই নামটি বেচে নিয়েছিলেন। প্রত্যেক সভায় বাংলাদেশের নাম বলেই বক্তৃতা দিতেন।তিনিই এদেশের রাজনীতিকে মধ্যযুগীয় ধর্মীয় সামপ্রদায়িক আবর্ত থেকে উদ্ধার করে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ ধারায় প্রবাহিত করার উদ্যোগতা।অন্য আরো অনেকেই ছিলেন, শেখ মুজিবের অবদান ছিল অনন্য। বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত ইচ্ছার ধারক বাহক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যে জাতীয় চেতনার উন্মেষের ফলে আমাদের ছোট বেলার সময়কালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটেছে, সেই জাতীয় চেতনার উন্মেষের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অবিস্মরণীয়।১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালি মুসলমানদের রাজনৈতিক ও সমাজ চিন্তায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত করেছিলেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী তার প্রতিই বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করেছিলেন। তাকেই বার বার জেলে পুরেছেন,তাঁরজন্যই আগরতলা মামলা সাজিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিলেন।২৫ শে মার্চ তাঁকেই বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়েছিলেন।৭ই মার্চের স্বাধিনতার দিক নির্দেশনামুলক ভাষন শুধু বঙ্গবন্ধুই দিয়েছিলেন।লাখো জনতা সে দিন বঙ্গবন্ধু কি বলেন সেই দিকেই মনোনিবেশ রেখেছিলেন।তিনিই বজ্রকন্ঠে বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাঙ্গালীরা শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর উপর নির্য্যাতনের প্রতিবাদেই ফুঁসে উঠেছিল। " জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু ভজয়তুদেশরত্ম শেখ হাসিনা"

ছবি

নব্য আইএস আই কে মোকাবেলায় নতুন প্রজর্মকে উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষনের বিকল্প নেই--- ----------------------------------------------- ----------------------------------------------- এই কয়দিনের ধারাবাহিক আলোচনায় আমরা একটি সত্যে উপনিত হতে পারি,সত্যটি হচ্ছে '৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে অর্জিত এই দেশটা যে স্বপ্নের বাস্তবায়নের আখাংকায় জাতির জনকের ইস্পাত কঠিন দৃডচেতা নেতৃত্বে স্বাধীন করেছিলেন বাংলাদেশের আপামর জনগন--,সেই স্বাধীনতার স্বাদ প্রাপ্তির আগেই বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে ৭১এর আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয় পরাজিত শত্রুরা। মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনার রাজনৈতিক ধারা, অসামপ্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও শোষণহীন, ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ বিনির্মান। দেশটিকে তার জন্মের অঙ্গীকারে দৃঢ়তার সঙ্গে স্থাপন করতে চায় বর্তমান সরকার। বিপরীত একটি পক্ষ স্পষ্টতই পাকিস্তানপন্থি, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী ধারায় অর্থাৎ পাকিস্তানের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। অসাম্প্রদায়িক,প্রগতিশীল,বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক ধর্ম নিরপেক্ষ ধারার প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।অন্য দিকে কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভুলুন্ঠিত করে সাম্প্রদায়িক মধ্যযুগীয় রাষ্ট্র ব্যাবস্থা ফিরিয়ে আনার নেতৃত্বের ধারক বাহকের ভুমিকায় উলঙ্গভাবে অবতিন্ন হয়েছিলেন জাতির জনকের খুনি মরহুম জিয়াউর রহমান।তিনি স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুদের রাজনীতিতে পুনপ্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতা গ্রহন করেই তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেন।অন্য অর্থে বলা যায়, মরহুম জিয়া দেশে পাকিস্তানপন্থি রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি যে কেবল গোলাম আজমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন তাই নয়, জামায়াত, মুসলিম লীগসহ অন্য সব পাকিস্তানপন্থি রাজনৈতিক দলকে তিনি পুনর্বাসিত করেন, তাদের ক্ষমতার অংশীদার করেন এবং সেই পরাজিত শত্রুদেরকেই রাজনীতিতে মহীরূহে পরিণত হতে সহায়তা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতির সেই পতাকাটিকে দৃঢ়ভাবে বহন করে চলেছেন অদম্য স্পৃহায়। এমনকি তার পুত্র তারেক জিয়া লন্ডনে বসে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা "আইএসআই-"এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার মানষে আন্তজাতিক জঙ্গি সংগঠন সমুহের সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা নিয়ন্তর করে যাচ্ছেন কোন কোন ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছেন। শুধু তাই নয় বিশ্বখ্যাত সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহীমের সাথেও কয়েক দফায় বৈঠকে মিলিত হয়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের জাল বিস্তারে প্ররোচিত করে যাচ্ছেন।এই গুরুত্বপুর্ন সংবাদটি গোয়েন্দাদের অবহিত করেছেন তাঁদের সরকারের সাবেক স্ব -রাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর। বৈঠকের সচিত্র প্রতিবেদনও পত্রিকা সমুহে ছাপানো হয়েছে।তারই ধারাবাহিকতায় বিপুল পরিমান ডলার খরছ করে আন্তজাতিক ভাবে খ্যাতি সম্পন্ন লবিষ্ট ফার্ম নিয়োগ দেয়ার খবর বিশ্বখ্যাত পত্রিকা সমুহে প্রমান সহ ছাপানো হয়েছে।এই ঘরানার রাজনীতির অতীতটাও এই ধারার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে হত্যা করাসহ স্বাধীনতার পক্ষের জাসদ ও তার সহযোগী সব রাজনৈতিক শক্তিকে নির্মুল করার মহাপরিকল্পনা ঠান্ডা মাথায় বাস্তবায়ন করে ক্ষমতা নিষ্কন্টক করেছিলেন। বেগম জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে একই ছকে কাজ করতে ২১শে আগষ্ট সহ আওয়ামী লীগ ও তাঁর অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের বহু নেতা কর্মিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় হত্যা করেছিলেন।তাঁদের বিপরীত ধারার প্রধাননেত্রী জাতির জনকের কন্যা বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্যই ২১শে আগষ্ট কলংকময় দিনের সৃষ্টি করা হয়েছিল।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৮ ইং সালে বিপুল জয় নিয়ে মহাজোট ক্ষমতায় আসে।বিভাজনের রেখামুছে দিতে, জাতিকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে উপায়ন্তর না দেখে একাত্তরের ইস্যুটিকেই রাজনীতির প্রধান ইস্যু হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করেই প্রথমে জাতিকে বিভক্ত করার জন্য স্বৈরাচারদের প্রনিত সংবিধানের ধারা উপধারা সমুহ বাতিল, সকল কালাকানুন এবং অগণতান্ত্রিক বিধানগুলোর পরিবর্তন করে ৭২ এর মুল চেতনায় দেশকে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সফলতার সংগে সমাপ্ত করেন। শুধু তাই নয় জাতিকে দ্বিখন্ডিত করার মুল কারিগর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সফলতার সাথে দন্ডকায্যকর করে চলেছেন। বস্তুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান দুটি রাজনৈতিক ধারার বিভাজনকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জাগ্রত করেছে এবং বিভক্তি যে তাঁদের সৃষ্ট তা আরও স্পষ্ট করেছে। বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়াসহ একটি পক্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার দাবি করে সফল হতে না পেরে সহিংসতার আশ্রয় গ্রহন করে জাতিকে অন্ধকারের দিকে টেনে নেয়ার মানষে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন । তিনি হুমকি দিয়ে নিলর্জ্জভাবে বলেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধারাও গণহত্যা করেছে,,তিনি ক্ষমতায় এসে তাঁদের বিচার করবেন। তাঁরা সবসময়ে বলতেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাঁর অসারতাই প্রমানীত হল।আওয়ামী লীগ সহ এই ধারার মানুষ সব সময়ে বলে আসছিলেন, বহু মুক্তিযোদ্ধাই পাকিস্তানের দালাল আবার বহু রাজাকার যে মুক্তিযোদ্ধাদের চাইতে কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশী অবদান রেখেছেন তারই সত্যতা প্রমানীত হল। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কারনে খালেদা জিয়ার মত অশিক্ষিত রন্ধনশালার বউ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন,অঢেল লুটের টাকায় ভাঙ্গা স্যুটকেস ভর্তি করতে পেরেছিলেন,ছেঁড়া গেঞ্জীর স্থলে হাল ফ্যাসনের ডান্ডিডাইং এর মালিক হতে পেরেছিলেন, রাজধানী ঢাকায় একাধিক বিশাল বিশাল সরকারি বাড়ির মালিকানা নিতে পেরেছিলেন।শুধু তাই নয় কোকো নামের ১২ টি জাহাজ এবং ক্যারো নামের মদের কারখানার মালিক ও জিয়া পরিবার হতে পেরেছিলেন।সেই মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের কাঠগড়ায় উঠাবেন বলে তিনি তাঁর পাকি প্রেমের পুরাতন ইতিহাসই বাংলার জনগনকে স্মরন করিয়ে দিলেন। বেগম জিয়া স্পষ্টতই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে তার অবস্থান দৃড করে প্রকাশ করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও একই কথা বলেছেন। এটি এখন স্পষ্ট যে, বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত দেশটিকে একটি ইসলামী-জঙ্গিবাদী-তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। একাত্তরে এই চিন্তা-চেতনাটি যাদের ছিল তারা পাকিস্তানের দোসর।পাকিস্তান ও তাঁদের ভুমিকা ইদানিং পরিস্কার করেছেন বিশ্ববাসির সামনে তাঁদের সংসদে বাংলাদেশের মানবতা বিরুধি অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা পাশের মাধ্যমে।দন্ড পাওয়া ব্যাক্তি বর্গ তাঁদের দেশের মহান বন্ধু বলে তাঁরা অভিহিত করেছেন।তার পর ও কি বলতে হবে বা সাক্ষ দিতে হবে পাকিস্তানের মহান বন্ধুরা যুদ্ধ অপরাধি নয়?? বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত জোটের এই রাজনীতি শেষ পয্যন্ত তালেবান দমনের পর আইএস আই এর ভুমিকায় অবতির্ন্ন হয়েছে। তাঁরা বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে অন্ধকার যুগের দিকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সারা দেশব্যাপি হত্যা গুপ্তহত্যা,,বিদেশি নাগরিক হত্যা ইত্যাদি অশুভ কাজ সমানে চালিয়ে যাচ্ছে।মুলত তারা বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের পর থেকেই হত্যাকান্ড সমুহ সংঘটিত করে আসছে।বর্তমান বিশ্ব আইএস আই আতংকে কম্পমান বিদায় সেই নামটি ব্যাবহার করে দায় তাঁদের ঘাড়ে রেখে বাংলাদেশকে অস্থির করে বিদেশি প্রভুদের বাংলাদেশ আক্রমন করার পথ প্রসস্ত করাই লক্ষ। পাকিস্তানের জামাতে ইসলাম তাঁদের সরকারকে বাংলাদেশ আক্রমন করে তাঁদের বন্ধুদের জীবন রক্ষার দাবী থেকে আরো স্পষ্টতা পেয়েছে। দেশটি এখন মূলত আবার সত্তর-একাত্তরের রাজনীতিতে দাঁড়িয়ে পড়েছে।মহাজোট ও তার সমর্থকরা দেশটিকে একাত্তরের মূল নীতির কাছাকাছি নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে দাঁড় করাতে চায়। আওয়ামী লীগ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রশ্নে কিছুটা সরে দাঁড়ালেও বা সমাজতন্ত্র শব্দটি স্পষ্টভাবে না বললেও বাংলাদেশকে অন্তত একটি তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে দিতে চায় না। তাদের জন্য গোড়ামি, কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও প্রগতিবিরোধী একটি রাষ্ট্রের কথা ভাবাও কঠিন। খুব সাম্প্রতিককালে জামায়াত-হেফাজতকে মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মহলে অন্তত এটি প্রমাণ করতে পেরেছে যে, তারাই একটি মধ্যপন্থি উদার অসাম্প্রদায়িক অথচ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম। ২০ দলীয় জোট ও হেফাজত পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় সেটিও আওয়ামী লীগ সরকার কূটনৈতিক মহলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধায় উন্নত প্রশিক্ষন নিয়ে এবং নীজেদের আইএস আই দাবী করে বাংলাদেশ- পাকিস্তান অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক-অসাম্প্রদায়িক চেতনার লড়াইটাকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে চায়। আমরা যারা প্রগতির ধারায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে গড়ে তোলার নিয়ন্তর সংগ্রামে ব্যাপৃত রয়েছি তারা কেবলমাত্র বক্তৃতা বিবৃতি সমাবেশ বা মানববন্ধন করে এই চরম অবস্থা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাঁদের সংঙ্গে পাল্লা দিতে একাত্তরের বন্দুকের লড়াইটাকে ডিজিটাল লড়াইতে রূপান্তর করতে হবে। আসুন ফেসবুক, ভাইবার, হুয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করে নয় এইসব ডিজিটাল প্লাটফরমকে ব্যবহার করেই একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে মোকাবিলা করি। আর সেই কাজটি করার জন্য এই ধারার নতুন প্রজর্মকে উন্নত প্রশিক্ষন দেয়ার কোন বিকল্প নেই।কলমের ধারে বিভ্রান্ত হয়েই তাঁরা মুক্তমনা লেখক, সাহিত্যিক সাংবাদিক হত্যার মিশন হাতে নিয়েছে।একাত্তরেও তাঁরা এই ধারায় বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে স্বাধিনতার পর রাজনীতি তাঁদের নিয়ন্ত্রনে নিতে সক্ষম হয়েছিল।সেই একই ধারায় পরাজয়কে জয়ের ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার শেষ চেষ্টার অংশ হিসেবেই তাঁরা হত্যামিশন পরিচালনা করছে।তাঁদের ভয়ে বিদেশ পালিয়ে গিয়ে বা কলম বন্ধ করে সামাজিক দায় এড়ানো যাবেনা।তারা যা চাইছে তাঁর ফাঁদে পড়ার অর্থই হচ্ছে জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া।ভয় পেলে ভয়ই চেপে বসে,সাহষ করে মুখোস উম্মোচনের মিশনে সবাই এক যোগে ব্রতি হলে জয় অবশ্যই আমাদের হাতচানি দিয়ে ডাকবে।আসুন বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে সম্পৃত্ত করে অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার শফথ গ্রহন করি। দেশ ও জাতির আশা আখাংকার প্রতি নীজেদেরকে নিবেদিত রেখে- প্রত্যেকের স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করি।বিজয়ের মাসে লাখো শহিদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার বাস্তবায়নে জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। " জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা"

ছবি

নব্য আইএস আই কে মোকাবেলায় নতুন প্রজর্মকে উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষনের বিকল্প নেই--- ----------------------------------------------- ----------------------------------------------- এই কয়দিনের ধারাবাহিক আলোচনায় আমরা একটি সত্যে উপনিত হতে পারি,সত্যটি হচ্ছে '৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে অর্জিত এই দেশটা যে স্বপ্নের বাস্তবায়নের আখাংকায় জাতির জনকের ইস্পাত কঠিন দৃডচেতা নেতৃত্বে স্বাধীন করেছিলেন বাংলাদেশের আপামর জনগন--,সেই স্বাধীনতার স্বাদ প্রাপ্তির আগেই বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে ৭১এর আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয় পরাজিত শত্রুরা। মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনার রাজনৈতিক ধারা, অসামপ্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও শোষণহীন, ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ বিনির্মান। দেশটিকে তার জন্মের অঙ্গীকারে দৃঢ়তার সঙ্গে স্থাপন করতে চায় বর্তমান সরকার। বিপরীত একটি পক্ষ স্পষ্টতই পাকিস্তানপন্থি, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী ধারায় অর্থাৎ পাকিস্তানের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। অসাম্প্রদায়িক,প্রগতিশীল,বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক ধর্ম নিরপেক্ষ ধারার প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।অন্য দিকে কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভুলুন্ঠিত করে সাম্প্রদায়িক মধ্যযুগীয় রাষ্ট্র ব্যাবস্থা ফিরিয়ে আনার নেতৃত্বের ধারক বাহকের ভুমিকায় উলঙ্গভাবে অবতিন্ন হয়েছিলেন জাতির জনকের খুনি মরহুম জিয়াউর রহমান।তিনি স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুদের রাজনীতিতে পুনপ্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতা গ্রহন করেই তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেন।অন্য অর্থে বলা যায়, মরহুম জিয়া দেশে পাকিস্তানপন্থি রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি যে কেবল গোলাম আজমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন তাই নয়, জামায়াত, মুসলিম লীগসহ অন্য সব পাকিস্তানপন্থি রাজনৈতিক দলকে তিনি পুনর্বাসিত করেন, তাদের ক্ষমতার অংশীদার করেন এবং সেই পরাজিত শত্রুদেরকেই রাজনীতিতে মহীরূহে পরিণত হতে সহায়তা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতির সেই পতাকাটিকে দৃঢ়ভাবে বহন করে চলেছেন অদম্য স্পৃহায়। এমনকি তার পুত্র তারেক জিয়া লন্ডনে বসে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা "আইএসআই-"এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার মানষে আন্তজাতিক জঙ্গি সংগঠন সমুহের সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা নিয়ন্তর করে যাচ্ছেন কোন কোন ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছেন। শুধু তাই নয় বিশ্বখ্যাত সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহীমের সাথেও কয়েক দফায় বৈঠকে মিলিত হয়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের জাল বিস্তারে প্ররোচিত করে যাচ্ছেন।এই গুরুত্বপুর্ন সংবাদটি গোয়েন্দাদের অবহিত করেছেন তাঁদের সরকারের সাবেক স্ব -রাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর। বৈঠকের সচিত্র প্রতিবেদনও পত্রিকা সমুহে ছাপানো হয়েছে।তারই ধারাবাহিকতায় বিপুল পরিমান ডলার খরছ করে আন্তজাতিক ভাবে খ্যাতি সম্পন্ন লবিষ্ট ফার্ম নিয়োগ দেয়ার খবর বিশ্বখ্যাত পত্রিকা সমুহে প্রমান সহ ছাপানো হয়েছে।এই ঘরানার রাজনীতির অতীতটাও এই ধারার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে হত্যা করাসহ স্বাধীনতার পক্ষের জাসদ ও তার সহযোগী সব রাজনৈতিক শক্তিকে নির্মুল করার মহাপরিকল্পনা ঠান্ডা মাথায় বাস্তবায়ন করে ক্ষমতা নিষ্কন্টক করেছিলেন। বেগম জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে একই ছকে কাজ করতে ২১শে আগষ্ট সহ আওয়ামী লীগ ও তাঁর অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের বহু নেতা কর্মিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় হত্যা করেছিলেন।তাঁদের বিপরীত ধারার প্রধাননেত্রী জাতির জনকের কন্যা বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্যই ২১শে আগষ্ট কলংকময় দিনের সৃষ্টি করা হয়েছিল।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৮ ইং সালে বিপুল জয় নিয়ে মহাজোট ক্ষমতায় আসে।বিভাজনের রেখামুছে দিতে, জাতিকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে উপায়ন্তর না দেখে একাত্তরের ইস্যুটিকেই রাজনীতির প্রধান ইস্যু হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করেই প্রথমে জাতিকে বিভক্ত করার জন্য স্বৈরাচারদের প্রনিত সংবিধানের ধারা উপধারা সমুহ বাতিল, সকল কালাকানুন এবং অগণতান্ত্রিক বিধানগুলোর পরিবর্তন করে ৭২ এর মুল চেতনায় দেশকে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সফলতার সংগে সমাপ্ত করেন। শুধু তাই নয় জাতিকে দ্বিখন্ডিত করার মুল কারিগর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সফলতার সাথে দন্ডকায্যকর করে চলেছেন। বস্তুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান দুটি রাজনৈতিক ধারার বিভাজনকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জাগ্রত করেছে এবং বিভক্তি যে তাঁদের সৃষ্ট তা আরও স্পষ্ট করেছে। বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়াসহ একটি পক্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার দাবি করে সফল হতে না পেরে সহিংসতার আশ্রয় গ্রহন করে জাতিকে অন্ধকারের দিকে টেনে নেয়ার মানষে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন । তিনি হুমকি দিয়ে নিলর্জ্জভাবে বলেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধারাও গণহত্যা করেছে,,তিনি ক্ষমতায় এসে তাঁদের বিচার করবেন। তাঁরা সবসময়ে বলতেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাঁর অসারতাই প্রমানীত হল।আওয়ামী লীগ সহ এই ধারার মানুষ সব সময়ে বলে আসছিলেন, বহু মুক্তিযোদ্ধাই পাকিস্তানের দালাল আবার বহু রাজাকার যে মুক্তিযোদ্ধাদের চাইতে কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশী অবদান রেখেছেন তারই সত্যতা প্রমানীত হল। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কারনে খালেদা জিয়ার মত অশিক্ষিত রন্ধনশালার বউ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন,অঢেল লুটের টাকায় ভাঙ্গা স্যুটকেস ভর্তি করতে পেরেছিলেন,ছেঁড়া গেঞ্জীর স্থলে হাল ফ্যাসনের ডান্ডিডাইং এর মালিক হতে পেরেছিলেন, রাজধানী ঢাকায় একাধিক বিশাল বিশাল সরকারি বাড়ির মালিকানা নিতে পেরেছিলেন।শুধু তাই নয় কোকো নামের ১২ টি জাহাজ এবং ক্যারো নামের মদের কারখানার মালিক ও জিয়া পরিবার হতে পেরেছিলেন।সেই মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের কাঠগড়ায় উঠাবেন বলে তিনি তাঁর পাকি প্রেমের পুরাতন ইতিহাসই বাংলার জনগনকে স্মরন করিয়ে দিলেন। বেগম জিয়া স্পষ্টতই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে তার অবস্থান দৃড করে প্রকাশ করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও একই কথা বলেছেন। এটি এখন স্পষ্ট যে, বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত দেশটিকে একটি ইসলামী-জঙ্গিবাদী-তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। একাত্তরে এই চিন্তা-চেতনাটি যাদের ছিল তারা পাকিস্তানের দোসর।পাকিস্তান ও তাঁদের ভুমিকা ইদানিং পরিস্কার করেছেন বিশ্ববাসির সামনে তাঁদের সংসদে বাংলাদেশের মানবতা বিরুধি অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা পাশের মাধ্যমে।দন্ড পাওয়া ব্যাক্তি বর্গ তাঁদের দেশের মহান বন্ধু বলে তাঁরা অভিহিত করেছেন।তার পর ও কি বলতে হবে বা সাক্ষ দিতে হবে পাকিস্তানের মহান বন্ধুরা যুদ্ধ অপরাধি নয়?? বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত জোটের এই রাজনীতি শেষ পয্যন্ত তালেবান দমনের পর আইএস আই এর ভুমিকায় অবতির্ন্ন হয়েছে। তাঁরা বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে অন্ধকার যুগের দিকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সারা দেশব্যাপি হত্যা গুপ্তহত্যা,,বিদেশি নাগরিক হত্যা ইত্যাদি অশুভ কাজ সমানে চালিয়ে যাচ্ছে।মুলত তারা বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের পর থেকেই হত্যাকান্ড সমুহ সংঘটিত করে আসছে।বর্তমান বিশ্ব আইএস আই আতংকে কম্পমান বিদায় সেই নামটি ব্যাবহার করে দায় তাঁদের ঘাড়ে রেখে বাংলাদেশকে অস্থির করে বিদেশি প্রভুদের বাংলাদেশ আক্রমন করার পথ প্রসস্ত করাই লক্ষ। পাকিস্তানের জামাতে ইসলাম তাঁদের সরকারকে বাংলাদেশ আক্রমন করে তাঁদের বন্ধুদের জীবন রক্ষার দাবী থেকে আরো স্পষ্টতা পেয়েছে। দেশটি এখন মূলত আবার সত্তর-একাত্তরের রাজনীতিতে দাঁড়িয়ে পড়েছে।মহাজোট ও তার সমর্থকরা দেশটিকে একাত্তরের মূল নীতির কাছাকাছি নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে দাঁড় করাতে চায়। আওয়ামী লীগ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রশ্নে কিছুটা সরে দাঁড়ালেও বা সমাজতন্ত্র শব্দটি স্পষ্টভাবে না বললেও বাংলাদেশকে অন্তত একটি তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে দিতে চায় না। তাদের জন্য গোড়ামি, কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও প্রগতিবিরোধী একটি রাষ্ট্রের কথা ভাবাও কঠিন। খুব সাম্প্রতিককালে জামায়াত-হেফাজতকে মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মহলে অন্তত এটি প্রমাণ করতে পেরেছে যে, তারাই একটি মধ্যপন্থি উদার অসাম্প্রদায়িক অথচ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম। ২০ দলীয় জোট ও হেফাজত পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় সেটিও আওয়ামী লীগ সরকার কূটনৈতিক মহলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধায় উন্নত প্রশিক্ষন নিয়ে এবং নীজেদের আইএস আই দাবী করে বাংলাদেশ- পাকিস্তান অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক-অসাম্প্রদায়িক চেতনার লড়াইটাকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে চায়। আমরা যারা প্রগতির ধারায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে গড়ে তোলার নিয়ন্তর সংগ্রামে ব্যাপৃত রয়েছি তারা কেবলমাত্র বক্তৃতা বিবৃতি সমাবেশ বা মানববন্ধন করে এই চরম অবস্থা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাঁদের সংঙ্গে পাল্লা দিতে একাত্তরের বন্দুকের লড়াইটাকে ডিজিটাল লড়াইতে রূপান্তর করতে হবে। আসুন ফেসবুক, ভাইবার, হুয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করে নয় এইসব ডিজিটাল প্লাটফরমকে ব্যবহার করেই একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে মোকাবিলা করি। আর সেই কাজটি করার জন্য এই ধারার নতুন প্রজর্মকে উন্নত প্রশিক্ষন দেয়ার কোন বিকল্প নেই।কলমের ধারে বিভ্রান্ত হয়েই তাঁরা মুক্তমনা লেখক, সাহিত্যিক সাংবাদিক হত্যার মিশন হাতে নিয়েছে।একাত্তরেও তাঁরা এই ধারায় বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে স্বাধিনতার পর রাজনীতি তাঁদের নিয়ন্ত্রনে নিতে সক্ষম হয়েছিল।সেই একই ধারায় পরাজয়কে জয়ের ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার শেষ চেষ্টার অংশ হিসেবেই তাঁরা হত্যামিশন পরিচালনা করছে।তাঁদের ভয়ে বিদেশ পালিয়ে গিয়ে বা কলম বন্ধ করে সামাজিক দায় এড়ানো যাবেনা।তারা যা চাইছে তাঁর ফাঁদে পড়ার অর্থই হচ্ছে জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া।ভয় পেলে ভয়ই চেপে বসে,সাহষ করে মুখোস উম্মোচনের মিশনে সবাই এক যোগে ব্রতি হলে জয় অবশ্যই আমাদের হাতচানি দিয়ে ডাকবে।আসুন বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে সম্পৃত্ত করে অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার শফথ গ্রহন করি। দেশ ও জাতির আশা আখাংকার প্রতি নীজেদেরকে নিবেদিত রেখে- প্রত্যেকের স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করি।বিজয়ের মাসে লাখো শহিদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার বাস্তবায়নে জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। " জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা"

ছবি

পাকিস্তানের অস্থির চিত্তই প্রমান করে, মানবতা বিরোধী অপরাধে দন্ডিতরা তাঁদের পোষা ভৃত্য ছিল। ---------------------------------------------- সচরাচর আমরা জানি মানুষ মিথ্যা বলে।সমাজে মিথ্যাবাদি থাকতে পারে।সব ধরনের পাঁপকে বিশালত্বে অথবা গৌনত্বে পাঁপ হিসেবে গন্য করা হয়। কিন্তু মিথ্যাকে মহাপাঁপ বলে গন্য করে ইসলাম ধর্মে।ব্যাক্তির মিথ্যে নয়,রাষ্ট্র মিথ্যাচার করতে পারে তাও কি সম্ভব? এমনিতে ডিসেম্বরর মাস সমাসন্ন হলে আমাদের দেশের কিছু ব্যাক্তি এবং রাজনৈতিক দলের মতিভ্রম হতে দেখা যায়।মানবতা বিরোধী বিচার শুরু হলে পাকিস্তান নামক বর্বর রাষ্ট্রটির মতিভ্রম শুরু হয়।যতই বিচারের রায় কায্যকরের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে,পাকিস্তানের মতিভ্রম রাজনৈতিক দল,ব্যাক্তি এবং সরকারের অস্থির চিত্তের প্রকাশের উদাহরনের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তান একের পর এক আন্তরাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক শিষ্টাচার লংঘন করে চলেছে, সীমাহীন ধৃষ্টতার পরিচয় দিচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উদ্বত্যপুর্ণ আচরন এবং চরম মিথ্যাচার করছে। ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মৌসুমী রহমানকে গত সোমবার ডেকে নিয়ে বলেছে, পাকিস্তান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গণহত্যাসহ কোনোরকম দুষ্কর্ম করেনি! কী ভয়াবহ মিথ্যাচারের আশ্রয় নিল পাকিস্তান ভাবতেও অবাক লাগে। এর আগে গত তিনবারে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ডেকে যদিও প্রতিবাদ না জানায় এবার কিন্তু তাও করেছে। পাকিস্তানের এই ধরনের আচরন, মিথ্যা বক্তব্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এককথায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। উল্লেখ্য "মুক্তিযুদ্ধে গনহত্যাসহ কোন দুস্কর্ম করেনি" কথাটা বলে তাঁরা নীজেরাই ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে সেই দিকেও তাঁদের কোন খেয়াল নেই।কথায় আছেনা--একটা মিথ্যাকে সত্যে পরিনত করতে হাজারো মিথ্যা বলা প্রয়োজন হয়।যাঁরা গত ৪৫ বছর মুক্তিযুদ্ধকে- মুক্তিযুদ্ধ না বলে "গৃহ যুদ্ধ "বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন তাঁরাই বলছেন মুক্তিযুদ্ধে কোন গনহত্যা করেনি। তাঁদের ধৃষ্টতার উপর নির্ভর করে জাতীয়তাবাদি দলের প্রধান নেত্রী -খালেদা জিয়া হুংকার দিয়ে বলেছিলেন -'৭১ এর মুক্তিযুদ্ধাদের মানবতা বিরোধী অপরাধে বিচারের সম্মুখিন করবেন। তখন পাকি জামায়াতের পক্ষ থেকে তাঁদের সরকারের নিকট দাবী করা হয়েছিল- পাকিদের এ দেশীয় দোষর রাজাকার, আলবদরদের রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ আক্রমন করতে। পাকিস্তানের এহেন আচরনের কারনে বাংলাদেশের অগ্নিস্ফুলিঙ্গের শিখার আগুনে দগ্ধ হওয়ার আগেই বিএনপি বিবৃতি দিয়ে জনরোষ থেকে আপাতত বেঁচে গেলেন। পাকিস্তান যদি ১৯৭১ সালে গণহত্যা না করে থাকে, তাহলে ৩০ লাখ শহীদ এবং লাখ লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির জন্য দায়ী কি বর্তমানে বিচারাধীন মানবতা বিরোধী অপরাধীদের? বিএনপির পক্ষ থেকে ডিসেম্ভরের পহেলা তারিখে '৭১ এ গনহত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন।অবশ্য বাঙালী মা বোনের উপর চরম নির্যাতনের ব্যাপারটি এড়িয়ে যেতে ভুল করেননি--!! এরপরই জামায়াতের অনেক নেতাই বিএনপিকে মোনাফেকের দল বলে উষ্মা প্রকাশ করে চলেছেন।তবে কি জামায়াতের সাথে বিএনপির অন্যকোন চুক্তি আছে?জামায়াত -বিএনপি-পাকিস্তান মিলে অন্যকোন ষড়যন্ত্র আছে কিনা তলিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।পাকিস্তানের ধৃষ্টতা-খালেদার মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের হুংকার,বিএনপির ৪০ বছর পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বল্পকথার বিবৃতি-জামায়াতের উষ্মা,পাকিস্তানের নীরবতা এই গোলক ধাঁধাঁর মধ্যেই বাংলাদেশের সকল অশুভ চক্রান্তের বীজ নিহিত আছে বলে আমি মনে করি। পাকিস্তান যদিও সত্য অস্বীকার করে, সারা বিশ্ব জানে ১৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তান সরকারের লেলিয়ে দেয়া সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ আর বাঙালী রমনীদের ইজ্জত লুন্ঠনের নির্মম নিষ্ঠুর ইতিহাসের কথা। বিংশ শতাব্দীর নিকৃষ্টতম গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের দলিল হয়ে শত শত বছর পরেও মানুষ ইতিহাসের পাতায় খুঁজে পাবে তাঁদের এই বর্বরতার ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি পাকিস্তান সরকারের গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিশনের চেয়ারম্যান "বিচারপতি হামদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে" পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যা এবং নারীর সভ্রমহানীর- মানবতা বিরোধী অপরাধের ব্যাপার গুলি বিশেষ ভাবে উঠে এসেছিল। অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের তালিকা দিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। পাকিস্তান তাদের কমিশনের রিপোর্টতো মানেইনি,১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার বিচার সেই দেশের প্রচলিত আইনে করবেন ওয়াদা করেও সেই বিচার করেননি। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শুরু থেকেই নানা আপত্তি জনক ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করে আসছে। মানবতাবিরোধী অপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তারা ‘ডিস্টার্বড’ বোধ করছে!!! এর আগে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে অপর মানবতাবিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান এবং পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী দলের নেতারা বিভিন্ন আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। শুধু তাই নয়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও দুই প্রাদেশিক পরিষদে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে পরাজয়ের গ্লানি পাকিস্তান সরকারী ভাবে, কিছু সংখ্যক রাজনীতিক দল, কতেক বুদ্ধিজীবিরা এখনও ভুলতে পারেননি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে যে নজিরবিহীন বর্বরতা চালিয়েছে, তারজন্য পাকিস্তান সরকারের যেখানে ক্ষমা চাওয়া ফরজ ছিল,সেখানে মনের অন্তজ্বালা এখনও ভুলতে নাপেরে,বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার হীন উদ্দেশ্যে বিচারের বিরোদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বার বার বাঙালীর নৈতিক শক্তির নিকট অপরাধীর দুর্বল চিত্তের পরাজয়কেই ডেকে আনছেন।তাঁরা যদি সভ্য জাতি হতেন,পরাজয়ের পরেই ক্ষমা চেয়ে জাতি হিসেবে মহত্বের পরিচয় তুলে ধরতেন।বর্বর জাতি হওয়ার কারনে বার বার ইস্যুটিকে সামনে এনে অতীত কর্মকান্ডকে ঢাকা দেয়ার ব্যার্থ অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা নাকরা পয্যন্ত সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত রাখা উচিৎ। পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া কেবল বাংলাদেশের জনগণের প্রাণের দাবি নয়, পাকিস্তানের অনেক সচেতন নাগরিকও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। আমরা আশা করব, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে নিয়ে পাকিস্তান নাক গলাবে না। বাংলা দেশে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জোর দাবি উঠেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে চাইলে পাকিস্তানকে তার ধৃষ্টতা ও মিথ্যাচারের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা থেকে তাদের সরে আসতে হবে। তারা সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে অপরাধ ও ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রাষ্টীয় শিষ্টাচারের পরিচয় দেবেন,ইহাই বাংলাদেশের জনগন আশা করে।তাঁদের ভুলে গেলে চলবেনা, দিনে দিনে তাঁদের মিত্রের সংখ্যা বাংলাদেশে কমেই আসছে,এহেন ভুমিকার কারনে মিত্র বাড়বেনা আর কোন দিন।উদ্যত আচরনে বন্ধু কমতে কমতে শুন্যে এসে যাবে,তখন রাষ্ট্রীয় আন্তসম্পর্ক ও ধরে রাখা মহাদায় হয়ে যাবে। তাঁদের আচরনে প্রমান করে মানবতা বিরোধিদের বিচার যুক্তিযুক্তই হচ্ছে,তাঁরা পাকিস্তানের দালালই ছিল বর্তমানেও তাঁদের স্বার্থই রক্ষা করে চলেছে। বর্তমান বিশ্ব যেখানে দিনে দিনে একে অপররের কাছাকাছি আসতে সুদীর্ঘ কালের বৈরীতাকে বিসর্জন দিচ্ছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন নতুন দ্বার উম্মোচন করছে, তখন পাকিস্তান অন্ধকার যুগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশে তাঁদের বৃহৎ মিত্র বিএনপি জোটের গত ১/১২/২০১৫ ইং তারিখে ৭১ এর গনহত্যার বিচার বিভাগিয় তদন্তের দাবি তাহাই প্রমান করে বলে আমি মনে করি। যদিও প্রায় অর্ধশত বছর পর তদন্তের দাবি করে তাঁদের বর্তমান রাজনীতির অস্থির মানষিকতারই পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিজ্ঞরা মনে করছেন। জাতির জনকের কন্যা এই সমস্ত আচরনের তীর কোন দিক থেকে আসতে পারে তা জেনে শুনেই বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়েছেন। ভয় দেখিয়ে, চোখ রাঙিয়ে,রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার লংগন করে,বিশ্ব দরবারে নালিশ দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখা যাবেনা।আন্তজাতিক জঙ্গি সংগঠন গুলোকে যে দৃডতায় বাংলাদেশ থেকে নিস্তেজ করতে সক্ষম হয়েছেন, ঠিক একই মনোবলে বর্তমানের পাকিস্তানের প্রেতাত্বাদের সৃষ্ট নব্য আইএস আইকেও দমন করে বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক বিভাজনকে চিরতরে ধ্বংশ করে উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে সমুন্নত রাখা হবে।বাংলাদেশের মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা উন্নত বিশ্বের সাথে বাংলাদেশকে সম্পৃত্ত রেখে উন্নত জীবন যাপনের নিয়ন্তর প্রচেষ্টায় সরকার ব্যাপৃত থাকুক।জনগনের মনের তীব্র আকাঙ্ক্ষার মুল্য দিতেই বর্তমান সরকার রাজনৈতিক বিতর্কের চিরবসানের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।ইতিমধ্যে তাঁর সুফল জনগন ভোগ করা শুরু করেছে,সুতারাং কোন অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র জাতির জনকের কন্যার রাজনৈতিক বিতর্কের অবসানে নেয়া পদক্ষেপ থেকে চুল পরিমান সরাতে পারবেনা। বাংলাদেশের জনগনের তীব্র আকাংখা- স্বাধীনতার স্বাধ উপভোগের নিমিত্তে, দেশে সত্যিকারের আইনের শাষন প্রতিষ্ঠিত হোক।এই প্রাপ্তির আখাংকায় দীর্ঘ ৪০ বছর নিয়ন্তর আন্দোলন সংগ্রামে জনগন ব্যাপৃত রয়েছে।বহু ত্যাগী নেতাকর্মির আত্মত্যাগে,অনেকের পঙ্গুত্বে,স্বজন হারানোর বেদনা বুকে ধারন করে সেই কাংখিত লক্ষের দিকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে,একে একে অমিমাংসীত জমে থাকা চাঞ্চল্যকর হত্যাযজ্ঞের বিচারকায্য শুরু করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করা হচ্ছে-তখনি কায়েমি স্বার্থান্বেষি মহলের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ভেঙ্গে চুরে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রের রুপ ধারন করেছে। বিগত দিনে যারা বাংলাদেশকে তল্পিবাহক,অন্য জাতির কলোনি করে রাখার জন্য দেশের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তাঁদের মুখোশ ও দেশবাসি অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করছে। বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাস করেও যারা পাকিস্তানের দালাল ছিলেন, পাকিস্তানের অস্থির মানষিকতা তাঁদের চিহ্নিত করতে আরো বেশি সহজতর করেছে।নতুন প্রজম্মের নিকট ঐ সমস্ত দালালদের স্বজনেরা সারাজীবনের জন্য অপাংত্তেয় অসুচি, ঘৃনার বহ্নিশিখার জলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। তাঁদের পরিবার পরিজনকে ধীক্কার জানাতে আর কাউকে প্রচার করে, যুক্তি উপস্থাপন করে সময়ক্ষেপনের প্রয়োজন হবেনা,সেই কাজটি তাঁদের মুরুব্বি বর্তমান পাকিস্তানের সরকার,রাজনৈতিক দল গুলীর অস্থির চিত্তের বর্হিপ্রকাশেই যথেষ্ট।সত্য বড়ই নির্মম নিষ্ঠুর হয়ে তাঁদের এদেশীয় দালাল, মানবতা বিরুধীদের রেখে যাওয়া বংশধরদের নিয়তির উপর প্রতিঘাত শুরু করেছে।এই জয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির প্রাপ্য ছিল স্বাধীনতার পরেই, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কোপানলে জাতিকে পরিবেষ্টন করে ৪০ বছর পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে অশুভ শক্তি।ইতিহাসের অমোঘ বিধানের নিয়মতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা থেকে রক্ষা পাননি নীজে,রক্ষা করতে পারেননি পরিবার,রক্ষিত হয়নি প্রভুদের দীর্ঘকালের মনোবাসনা প্রভুত্বের আখাংকা। জয় হয়েছে মানবতার,পরাজিত হয়েছে অন্ধকারের অশুভ শক্তির।এই জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার দায়িত্ব নতুন প্রজম্মের। তাই সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে নতুন প্রজর্মকে আধুনিক, বিজ্ঞান মনস্ক যুগ -উপযোগি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। বর্তমান প্রজর্মের মানষিক স্পৃহার নিকট রচিত হবে অশুভ শক্তির সকল ষড় যন্ত্রের কবর, সেই দিন আর বেশি দেরী নেই। "জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখহাসিনা"