আব্বা মুক্ত থাকলে আমাদের হত ডাবল ঈদ।

আব্বা মুক্ত থাকলে আমাদের ছিল ডাবল ঈদ শেখ রেহানা | ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ রেহানা জানাচ্ছেন তাঁর ছেলেবেলার ঈদের স্মৃতি। আব্বা–মা, পাঁচ ভাইবোন মিলে তাঁর ছিল সোনালি শৈশব, বর্ণালী কৈশোর। ছিল হাসি–কান্না, স্বপ্ন–আনন্দভরা দিনরাত্রি। বঙ্গবন্ধু প্রায়ই থাকতেন কারাগারে, কখনো–বা থাকতেন কারাগারের বাইরে। কেমন ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সেই সময়ের ঈদের দিনগুলো। মর্মস্পর্শী এই স্মৃতিকথায়। বেলায় দেখতাম, আব্বা প্রায়ই থাকতেন জেলখানায়। আমাদের কাছে ঈদ ছিল তখন, যখন আব্বা জেলখানার বাইরে থাকতেন, মুক্ত থাকতেন। আর আব্বাও জেলখানার বাইরে, ঈদও এল—এমন হলে তো কথাই নেই। আমাদের হতো ডাবল ঈদ। আব্বা জেলে থাকলে ঈদের পরের দিন মা বেশি করে ভালো খাবারদাবার রাঁধতেন। জেলে তো আব্বা একা খাবেন না, অন্য যে নেতারা আছেন, তাজউদ্দীন চাচারা আছেন, আশপাশে যাঁরা আছেন, সবাইকে নিয়ে খাবেন। আব্বার সঙ্গে দেখা করতে আমরা যেতাম জেলখানায়। ১৫ দিনে একবার দেখা করতে যাওয়ার অনুমতি মিলত। সেদিন আমি স্কুলের শেষ দুই পিরিয়ড না করেই চলে আসতাম। রাসেল তো জন্মের পর আব্বাকে বাইরে কমই দেখেছে। ও জেলখানায় গেলে আর ফিরতে চাইত না। বলত, এটা আব্বুর বাড়ি। আমি আমাদের বাড়িতে যাব না। আসো, আমরা আব্বুর বাড়িতেই থাকি। কতই-বা বয়স ছিল তখন। তিন বা চার। ও তো বুঝত না। আমাদের জেলগেট থেকে ফিরে আসতেই হতো। সেই রাতে রাসেল আর ঘুমোতে পারত না। গভীর রাতে সে কাঁদতে শুরু করত। হাছু আপাকে ডাকো, দেনা আপাকে ডাকো, (আমাকে প্রথম প্রথম সে ডাকত দেনা আপা, তারপর রেয়না আপা), বড় ভাইকে ডাকো, ছোট ভাইকে ডাকো। আমরা ছুটে যেতাম। কী হয়েছে! কোনো দিন বলত পেটে ব্যথা, কোনো দিন বলত হাতে ব্যথা, আসলে আব্বার কথা তার মনে পড়েছে, সে ঘুমোতে পারছে না, আমাদের সবাইকে কাছে পেতে চাইছে, আমরা তাকে ঘিরে বসে আছি, সে মায়ের কোলে, ছোট্ট হাত-পা-শরীরের মানুষটা, মায়াভরা মুখ, বড় বড় চোখের পাতা, একটা সময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। আর আব্বা বাসায় থাকলে তো আমাদের ঈদের খুশি। বাড়িতে গমগম করছে মানুষ। কতজন যে আসছেন, কতজন যে খাচ্ছেন, আমরা যা খাই, তা-ই খাচ্ছেন—আলাদা কিছু নয়। রাজনৈতিক পরিবার, যাঁরা আসেন, খান। আমাদের ডাইনিং টেবিলটা ছিল বিশাল বড়। একসঙ্গে ১২ জন ১৬ জনও খেতে বসতে পারত। বাসাভর্তি লোকজন গমগম করছে, রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে—আমরা তো পড়ারও জায়গা পাই না। ছাদে চলে যাই। কিংবা এই ভিড়ের মধ্যেই সব ভাইবোন একখানে গোল হয়ে বসে গুনগুন করে একসঙ্গে পড়ি। সব সামলাতেন আমার মা। আব্বার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আছে, মাকে বলছেন, তুমি যা ভালো বোঝো, কোরো। কী যে সম্মান করতেন মাকে। নারীর প্রতি, স্ত্রীর প্রতি কী যে তাঁর সম্মানবোধ ছিল। আর আমার মা! তাঁর কথা ভাবি। কত অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে তো তিনি আমাদের ছেড়ে চলেই গেলেন। কত অল্প বয়সে এতগুলো ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁকে জীবন-সংগ্রামে নেমে পড়তে হয়েছিল। আব্বা আগের দিন মন্ত্রী, পরের দিন জেলখানায়, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সরকারি বাসা ছেড়ে দিতে হয়েছে, কিন্তু কেউ মাকে বাসাভাড়া দিচ্ছে না। আমার তখনো জন্ম হয়নি, কিন্তু এসব ঘটনা তো শুনেছি, পড়েছি, পরে নিজের চোখে দেখেছি। গ্রামে জন্ম হওয়া একজন সাধারণ নারী আমার মা, ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়েছেন মিশনারি স্কুলে। কিন্তু কী যে প্রজ্ঞা, কী যে তাঁর ধৈর্য। আমার মায়ের কাছ থেকে আমাদের যে জিনিসটা সবার আগে শেখা উচিত, তা হলো ধৈর্য আর সাহস। সবাইকে এক করে রাখা। এতগুলো লোক বাড়িতে খাচ্ছে-দাচ্ছে, আমাদের গ্রামে কোনো মেয়ে ম্যাট্রিক পাস করেছে, তাকে এনে ঢাকায় কলেজে ভর্তি করে দাও, কাকে বিয়ে দিতে হবে! সব সামলাচ্ছেন। এর মধ্যে আমাদের সকালে কোরআন শরিফ পড়া শেখাতে মৌলভি সাহেব আসছেন, তারপর নাচ শিখছি, সেতার শিখছি, বেহালা শিখছি—সব কিন্তু মায়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু তাঁর নিজের বয়স কত! আমার তো মনে হয়, আমার মা কি কোনো দিন তাঁর শৈশবে কিংবা কৈশোরে একটা ফিতা বা রঙিন চুড়ি চেয়েছেন কারও কাছে! মা-ই তো সব থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অথচ তিনি হাসিমুখে সব সামলাচ্ছেন। আব্বা জেলে থাকলে তো আমাদের ঈদ বিশেষ কিছু ছিল না। কাপড়চোপড়ও তো নতুন তেমন কিছু আসত না। ঈদের আগে সবচেয়ে ব্যস্ত থাকতে হতো হাসিনা আপাকে, আমাদের এখনকার প্রধানমন্ত্রীকে। আমাদের ছিল সেলাই মেশিন। তখন দরজির কাছে কেউ পোশাক বানাতে যেত না। বাড়িতে জামাকাপড় বানাতে হতো, সেটাই ছিল চল। মা আমাদের কাপড় সেলাই করতেন, তারপরে করতে শুরু করেন হাসু আপা। আমাদের বাড়িতেই কত লোকজন, তার ওপর আশপাশের পড়শিরাও এসে দিয়ে যেত কাপড়। আপা সবার জামা বানিয়ে দিতেন। সবারটা দিচ্ছেন, শুধু আমারটা দিচ্ছেন না। আমি বলি, আপা, আমার জামাটা বানাবে না? বানাও। আপা বলেন, ‘বানাব রে। একটু মাথা ধরেছে। তুই এক কাজ কর তো। এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আয়। তোর বানানো চায়ের কোনো তুলনা হয় না।’ চা বানিয়ে আনলাম। খাচ্ছেন। ‘ভালো হয়েছে’ বলে হাসলেন। তারপর আবার আরেকজনের জামা বানাতে শুরু করলেন। আমি বলি, আপা, আমারটা বানাবে না? আমারটা ধরো। তিনি হাসতেন, হয়তো বললেন, ‘যা তো, দেখ তো, কফি কোথায় পাওয়া যায়, একটু কফি খেতে পারলে ভালো হতো।’ আমি অভিমান করতাম, যাও, আমারটা তোমাকে বানাতে হবে না। আমারটা বানাতেন একেবারে চাঁদরাতে। শেষ সময়ে। উফ্। কী যে করতেন! একবার তো শেষ সময়ে তাড়াহুড়ো করে আপা জামা বানিয়ে দিয়েছেন ঈদের আগের রাতে। লুকিয়ে রেখে সকালে পরতে গেছি। দেখি, সেলাই করেছেন কাপড়ের উল্টো দিকে। রাসেল আব্বাকে জেলখানার বাইরে পেলে কাছছাড়া করতে চাইত না। আব্বার মতো করে কাপড়চোপড় পরত। আব্বার মতো পাঞ্জাবি-পায়জামা, মুজিব কোট, আব্বার মতো শেরওয়ানি। আবার তার একটা ছোট্ট লুঙ্গিও ছিল। আব্বার তো সবচেয়ে প্রিয় পোশাক ছিল লুঙ্গি আর গেঞ্জি। রাসেলও আব্বাকে অনুকরণ করে পোশাক পরত। আব্বার মতো করে হাঁটত। আবার আব্বা হয়তো পাঞ্জাবি-পায়জামার সঙ্গে জুতা পরে বাইরে যাচ্ছেন। রাসেল দৌড়ে গিয়ে স্যান্ডেল-শু এনে দিত। বলত, আব্বা, পায়জামার সঙ্গে জুতা পরতে হয় না। আব্বা বলতেন, কাদা-পানিতে হাঁটতে হবে বাবা। রাসেল বলত, তাহলে আরেক জোড়া সঙ্গে করে নিয়ে যাও। ঈদের দিন আব্বা, ভাইয়েরা, বাসায় আর যাঁরা যাঁরা আছেন ছেলেরা, সবাই সকালবেলা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজ পড়তে গেল। জামাল ভাই তো পুরো রমজান মাস টুপি পরে থাকতেন। ৩০ রোজা তো করতেনই। আব্বা নামাজ পড়তেন সোবহানবাগ মসজিদ বা ধানমন্ডি মসজিদে। তারপর সোবহানবাগে আমাদের ছোট ফুপু লিলি, সৈয়দ হোসেন ফুপার বাড়িতে গিয়ে সবাই নাশতা করতেন। নাশতা সেরে সেখান থেকে চলে আসতেন বাসায়। ফুপুরাও চলে আসতেন, সবাই মিলে আমাদের বাসাতেই কাটাতেন ঈদের দিনের বাকি সময়টা। আমরাও বিকেলবেলা বেড়াতে বের হতাম। ধানমন্ডি, কলাবাগান, শুক্রাবাদে বন্ধুদের বাসা, লেকের ধার ধরে হাঁটা। মাঠে-বাগানে চষে বেড়ানো। তখন তো সবকিছু খোলামেলা ছিল। দিনের বেলা আমাদের বেড়ানোয় কোনো মানা ছিল না। আমাদের সময়ে জামা-কাপড়ের সংখ্যা তো কারোরই বেশি ছিল না। কামাল ভাই, জামাল ভাই, কারোরই না। কামাল ভাই খুব শৌখিন ছিলেন। খুব গুছিয়ে রাখতেন সবকিছু। কিন্তু বেশি কিছু চাইতেন না। আমার কাছেই এসে হয়তো কোনো দিন বললেন, দশটা টাকা দিবি। বিড়ি-সিগারেট কোনো দিন খাননি। খরচ তো কিছু ছিল না। কত যে তাঁর গুণ ছিল। আমি তো বলি, আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি তাঁদের মামার একটা গুণও পায়, সেও হবে অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। কামাল ভাই সেতার বাজাতেন। ধরা যাক, বাড়িতে অনেক মানুষ। আমার পরীক্ষা। পড়ব কোথায়? পড়ার জায়গার খোঁজে ছাদে গেছি। গিয়ে দেখি কামাল ভাই। হাতে সেতার। আকাশে চাঁদ। চারদিক থইথই করছে জোছনায়। কামাল ভাই বললেন, পড়তে হবে না আজকে। অত পড়ে কী করবি। আয়, আমার সঙ্গে বস। গান ধর। আমি তাঁর সঙ্গে গান ধরলাম। একজন-দুজন করে এসে বসে পড়ল পাশে। জামাল ভাই এলেন। হাসু আপা এলেন। আমরা গান করছি। আকাশে তখন চাঁদ, নারকেলের পাতার ফাঁকে অকৃপণ আলো বিলাচ্ছে পৃথিবীর কোনায় কোনায়। হাসু আপার কোলে রাসেল, তার ঢুলু ঢুলু চোখে এসে পড়েছে চাঁদের আলো। হাসনাহেনার গন্ধ বয়ে আনছে রাতের বাতাস। আমাদের বাসাটা তো ছিল খেলাপাগল বাসা। আমাদের নিয়ম ছিল, বিকেল হলে খেলতে যাও, কিন্তু মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে বাসায় ফিরতে হবে। এসে গোসল করে হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসো। বাসায়ও নানা রকমের খেলা হতো। ক্যারম খেলার তো টুর্নামেন্ট হতো। মনি ভাই, সেলিম ভাইয়েরাও আসতেন। বাগাডুলি খেলা নিয়ে মজা হতো খুব। একটা ঘর আছে বাগাডুলিতে, এলটিপি, লস্ট টোটাল পয়েন্ট। কেউ একজন বলল, এইবার তোর এলটিপি হবে, তারপর যদি হতো, আমরা সবাই তার ওপরে কপট রাগ ঝাড়তাম, তুমি হলে এলটিপি ভাই, এই যে এলটিপি ভাই এসেছেন। চোর-পুলিশ খেলতাম। লুকোচুরি খেলতাম। বাইরে পেয়ারাগাছের পাতার আড়ালে লুকিয়ে আছি, বড় বড় লাল পিঁপড়া, কালো পিঁপড়া, হাত-পায়ের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে, কিন্তু চুপটি মেরে আছি। আরেকটা খেলা ছিল, ভূত নামিবে খেলা। রোববারে ছুটির দিনে মা একটু ভালো রান্না করতেন। হয়তো লুচি বা পরোটা। মা লুচি ভাজছেন। একটা মোড়া নিয়ে আব্বা বসেছেন। তাঁর পাশে আমরা সবাই পিঁড়ি পেতে বসেছি। একটা একটা করে লুচি ভাজা হচ্ছে। আমাদের একেকজনের পাতে পড়ছে। আমাদের চার ভাইবোনের চারটা কাঁসার থালা ছিল। সেই কাঁসার থালায় আমরা খাচ্ছি। আর আমাদের ছিল গ্রামোফোন। মা যখন গ্রামে ছিলেন, তখন থেকেই তাঁর সঙ্গী ছিল কলের গান। হাত দিয়ে হাতল ঘুরিয়ে হিজ মাস্টার্স ভয়েসের রেকর্ড চালানো হতো। মায়ের প্রিয় ছিল জগন্ময় মিত্র, শচীন দেববর্মণ, সন্ধ্যা-লতা, সুরাইয়া আর আব্বাসউদ্দীন সাহেবের নজরুলসংগীত। আমাদের বাসায় রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে লেখা একটা গান ছিল, মৈত্রেয়ী দেবী আব্বাকে দিয়েছিলেন, রুপার ফ্রেমে বাঁধানো ছিল। ১৯৭৫-এ কী করেছে, রুপার ফ্রেমটা নিয়ে ওই রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা কাগজটা দলা পাকিয়ে নিচে ফেলে রেখেছে। আমরা যখন ঢোকার অনুমতি পেলাম, আমি বহুদিন দোতলায় যাইনি, একদিন গেলাম, গিয়ে দেখি, রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা নিচে পড়ে আছে। আমি সেটা যত্ন করে তুলে রাখলাম। এখন আপার কাছে আছে, প্রথমে ভেবেছিলাম শান্তিনিকেতনে দেব, পরে ভাবলাম, না তা কেন, এটা তো বঙ্গবন্ধু জাদুঘরেই থাকতে পারে। কোন গানটা আছে জানেন? ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো’। বাসার মধ্যে আমিই ছিলাম একটু আদুরে, আবদার করতাম। আব্বা বাইরে গেলে আমি তাঁকে এত বড় ফর্দ ধরিয়ে দিতাম। আব্বা বলতেন—হানিফ, কী লিস্ট দেয় নে, রেখে দে, এনে দিস। ফরাশ সাহেব, দেখবেন। আর আব্বা বেশি রাত করে ফিরতেন। আমি তাঁর হাতে খাব। এই জন্য প্রায়ই ভাত খেতাম না। অজুহাত বের করতাম—জামাল ভাই আমার দিকে কটমট করে তাকাল কেন? ও আমার বইটা এখানে না রেখে ওখানে রাখল কেন? আমি ভাত খাব না। আব্বা ফিরতেন বহু রাতে। আমি ভাত খাইনি শুনে আমাকে ঘুম থেকে তুলতেন। একটা ছোট্ট তোয়ালে আমার গলার নিচে বাঁধতেন। তারপর ভাত-তরকারি হোক, দুধ-ভাত হোক, মাখাতেন। আমাকে তুলে তুলে খাওয়াতেন। তারপর তোয়ালে ভিজিয়ে আমার মুখ মুছে দিতেন। আলতো করে শুইয়ে দিতেন। আমি ঘুমের ভান করে পড়ে আছি, শুনছি—এই, তোরা রেহানাকে বকেছিস কেন? সকালবেলায় উঠে আমি হাসতাম, কেমন কাল রাতে বকা খেলে...আব্বা আমার জন্যই কেবল নিউমার্কেটে গেছেন দু-একবার। আমি এটা-ওটা কেনার বায়না ধরতাম। আব্বা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গোপনে আমাদের টাকা দিয়ে বলতেন—নে, টাকা নে, লুকিয়ে বুড়ির জন্য ভালো শাড়ি কিনে আন। মাকে আদর করে বুড়ি ডাকতেন। আমরা মার্কেটে গিয়ে শাড়ি কিনে এনে গোপনে আব্বার হাতে দিতাম। আব্বা সেটা কোথাও লুকিয়ে রাখলেন। মা দেখলেন, শাড়ির প্যাকেট। আব্বা বলতেন, শাড়িটা কেমন? মা বুঝতেন, এ তো মার্কেটে যাওয়ার লোক নয়। নিশ্চয়ই মেয়েদের দিয়ে আনিয়ে নিয়েছেন। রেডিও আর বই ছিল আমার সারাক্ষণের সঙ্গী। কামাল ভাই ১৯৭১ সালে যুদ্ধে গেলেন, জামাল ভাই গেলেন। কামাল ভাই যাওয়ার আগে একটা রেডিও উপহার পেয়েছিলেন, একটা সুইডিশ ফ্যামিলি দিয়েছিল। সেটা আমাদের বাসায় জোরে জোরে বাজত। স্বাধীন বাংলা বেতারের গান আমরা জোরে জোরে বাজাতাম। বাইরে পাকিস্তানি সৈন্য। ওরা তো বাংলা বোঝে না। রাসেল সেই গান শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছে। কিন্তু যখন ঘরের বাইরে গিয়ে সে গান গাইত, সে গাইত— জয় জয় জয় গাছের পাতা হয়... তখনই সে বুঝেছে, জয় বাংলা বলা যাবে না পাকিস্তানি সৈন্যদের সামনে। আব্বা তো তখন পাকিস্তানের জেলে বন্দী। রাসেল একা একা ঘরের কোণে বসে কাঁদছে। কী হয়েছে রে? জানি না আপা, আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ে। আমার চোখে কী যেন হয়েছে। স্বীকার করতে চাইত না যে আব্বার জন্য তার মন খারাপ। কার কী মনে হয় জানি না, আমার শুধু রাসেলের কথাই মনে হয়। ৪০ বছর হয়ে গেল! আপাকে বলি, আপা, মা বেঁচেছিলেন ৪৪ বছর, আমরা তো বেশি বছর বেঁচে গেলাম। জানি না, আমরা দুই বোন কেন বেঁচে আছি। রাসেলেরও তো আমার সঙ্গে জার্মানি যাওয়ার কথা ছিল। অত ছোট ছেলে, মা ছাড়লেন না। ওর জার্মানি যাওয়া হলো না। আব্বার ডায়েরি পাওয়া গেছে, আব্বা একটা মুরগি নিয়ে লিখেছেন, একটা পাখিকে নিয়ে লিখেছেন। কী তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, কী যে তাঁর গাছপালা-প্রাণী-প্রকৃতি আর মানুষের জন্য ভালোবাসা। আজও তো এই আকাশে চাঁদ ওঠে। জোছনায় ভেসে যায় চরাচর। আজও রাতজাগা পাখি গান করে। আমার মনে পড়ে সেই সব দিন। আমরা সবাই ছাদে। কামাল ভাই সেতার বাজাচ্ছেন। আমাকে বললেন, তুই একটা গান ধর। মায়ের পছন্দ জগন্ময় মিত্র। ‘যত লিখে যাই, চিঠি না ফুরায় কথা তো হয় না শেষ...তুমি আজ কত দূরে।’ কিংবা শচীনদেবের গান— ‘নদী যদি হয়রে ভরাট কানায় কানায় হয়ে গেলে শূন্য হঠাৎ তাকে কি মানায়।’ আমাদের ভর-ভরন্ত একটা পৃথিবী ছিল। হঠাৎ করে একদিন সব শূন্য হয়ে গেল। আমরা তো আগে কোনো দিন একা একা ভাত খাইনি। এখন একা একা খেতে হয়! জানি না, আল্লাহ কেন আমাদের দুজনকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমরা আব্বার ডায়েরি পড়ি, সেগুলো বই হয়ে বেরোবে, সেসব কাজের তদারক করি। হয়তো, আব্বার স্মৃতিরক্ষার এই কাজগুলো করিয়ে নেওয়ার জন্য আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। আবার ঈদ এসেছে। আমার আবার আব্বার কথা মনে পড়বে, রাসেলের কথা মনে পড়বে। মনে পড়বে মায়ের কথা, ভাইদের কথা, ভাবিদের কথা। এভাবেই তো কেটে গেল ৪০টি বছর। অনুলিখিত আলোকচিত্র: সংগৃহীত—মোহাম্মদ আলম, জহিরুল হক। কৃতজ্ঞতা: মাহবুবুল হক শাকিল ও ফোকাস বাংলা। http://countries71.blogspot.com/2015/09/blog-post_61.html

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যাতত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ঐতিহ্যে বিতর্ক উত্থাপনের অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করে,মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার মত দৃষ্টতা দেখিয়ে নি:সন্দেহে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এহেন গর্হিত বক্তব্য প্রদানকারী বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখতে পারেননা।মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কোন দল বা জোটের রাজনীতি করারঅধিকার নীতিগতভাবেই থাকতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সকল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে সর্বচ্ছ আদালতের রায় অনুযায়ী '৭২এর সংবিধান অবিকল বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।বাংলাদেশেরজনগন চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক,মুক্তিযুদ্ধে সাগরসম রক্ত ঢেলে সেই অঙ্গিকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাসকরে,পরাধীনতার গান শুনতে দেশ স্বাধীন করেনি বাংলার জনগন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বিরামহীন সংগ্রামের ফসল মুক্তিযুদ্ধ।সেইযুদ্ধে উপনিবেশিক পাকিস্তানের আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালীরা পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিল।সেই স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেপরাজিত শক্তির দোষর,তাঁদের প্রেতাত্বাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।জাতির জনক তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রাজাকারের কোন স্থান দিতে চায়না। তাই খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমুলক সাজার আশা পোষন করে।কোন রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁদে যেন এই মামলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাঁর গ্যারান্টিও সরকারের নিকট বাংলাদেশের জনগন চায়। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু Ruhul Amin ------------------------------ খালেদা জিয়াকে সমাবেশের অনুমতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আশাহত----04 /01 / 0016 ইং পোষ্ট -==================================প্রখ্যাত দার্শনিক,চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে কম বেশি আমরা সবাই জানি।সক্রেটিস কোন যুগে জম্মগ্রহন করে মানব সেবায় ব্রতি হয়ে আজও দেশে দেশে অনুকরনীয় অনুসরনীয় হয়ে আছেন তাও আমরা জানি।নিশ্চয়ই তখনকার সময় থেকে বর্তমানের সমাজ, রাষ্ট্রব্যাবস্থাপনা আরো শত গুন উন্নত,সমৃদ্ধ,সভ্য।সক্রেটিস ছুতোর, কামার ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে প্রশ্ন করতেন, 'তাহলে রাষ্ট্র নামক জাহাজটি বিগড়োলে কাকে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করাবো'হাসান আজিজুল হক (সক্রেটিস) পৃ : ১৬ সক্রেটিসের এ বিখ্যাত কথপোকথন কারো অজানা নয়। আদর্শবান ন্যায়নীতিভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করবার জন্য সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে দেয়া হয়েছিল(বিষ), তারপরও তিনি আইনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন- এটাও ছিল তার নির্ভীক বিদ্রোহ। তাকে বাঁচবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আইনঅবজ্ঞা করেননি, আইনে যদি তার মৃত্যুদন্ড হয় তবে তিনি অবশ্যই তা মানতে রাজি। এখানেও তার সমস্ত জীবনকর্মের অনেক গভীর দর্শন কাজ করেছে। তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল একথা তিনি ও এথেন্সবাসী জানতেন। কিন্তু যে আইনে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো- তিনি সে আইনকে শ্রদ্ধা জানালেন এ অর্থে মানুষকে আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বললেন। সেই আইন কারা তৈরি করছে তা তিনি জানতেন তাতে তো আর আইন নামক বিষয়টিকে জীবন থেকে বিতাড়িত করা যায় না।"পবিত্র কোরানে পাকে ও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধর্মী কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ও সরকার সমুহের আইন মেনে ধর্ম কর্ম করার।এই রুপ রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় শুক্রবারের খতবায় বিশেষ আয়াৎ সংযুক্ত আছে এবং নিয়মিত নামাজের সাথে আর ও কয় রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দেয়া আছে।পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে,গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেনীর মানুষ রাষ্ট্রীয় আইন রীতি নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্ব উচ্চ আদালতের রায়কে ও অমান্য করে হরতাল অবরোধ,প্রকাশ্য আদালতের সমালোচনা করতে।শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামেপ্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রীভর্তি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানবকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা এই সমস্ত আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন,এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন যে আদালতের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেয়া যায়,বক্তব্য দেয়া যায়,তাঁরা কখনই কোন অপরাধীর বিচার কায্য সম্পাদন করেছেন তদ্রুপ কোন উদাহরন নেই। যেমন আমি প্রথমেই বলতে চাই ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছেন রাতের অন্ধকারে।বঙ্গবন্ধুর অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? পৃথীবিপৃষ্টের সব চাইতে নিরাপদ স্থান জেলখানা।সেখানে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাহল,তাঁরা বন্দি ছিলেন, তারপর ও তাঁদের অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকেতুলে নিয়ে জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হল, তাঁদের অপরাধ কি বিচার করে মিমাংসা করা যেতনা? খালেদ মোশারফ., কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য মুক্তি যুদ্ধা সেনা অফিসারকে মেজর জিয়ার নির্দেশে নির্মম নির্দয় ভাবে হত্যা করা হল, অনেককে গুলী করার পর প্রান পাখী উড়াল দেয়ার আগেই জ্যান্ত মাটি চাপা দেয়া হল, তাঁদের বিচার কি প্রচলিত সেনা আইনে করা যেতনা? অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা,আওয়ামী লীগের নেতা,মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারি,ব্লগার,প্রকাশক,লেখক সাহিত্যিক,সাংবাদিক হত্যা করা হল,তাঁদের অপরাধ কি আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতনা?আন্দোলনের নামে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যা করা,সম্পদ নষ্ট করা,লুটপাট করা কি মানবতা বিরুধী অপরাধের আওতায় পড়েনা?মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হতে পারে,যুদ্ধাবস্থা ব্যাতিরেকে ঘোষনা দিয়ে তদ্রুপ কর্মে জড়িতদের এবং হুকুমদাতার বিচার কেন হবেনা? নগদ অপরাধের ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা কি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয়? নাগরীকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁরা কি বিচার পাওয়ার সাংবিধানীক অধিকারের মধ্যে পড়েনা?সেই যুগের সক্রেটিস যদি নীজের উপর আনীত মিথ্যা অভিযোগ জেনে শুনে মেনে নিতে পারেন,সভ্যতার চরম শীখরে দাঁড়িয়ে যারা এই যুগে আইনকে, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্য আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছেন,সম্পদের হানী ঘটিয়েছেন তাঁরা কি সক্রেটিস যুগের আগের অধিবাসি মনে করেন নীজেদের? তাঁরা নীজেরা নিজেদের মনে করুন কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে কোন যুগে ফিরিয়ে নিতে চান?তাঁদের যদি এতই অসহ্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ কিছু আদর্শের প্রতিপালনের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৩০লক্ষ শহিদের আত্মদান,পৌনে চারলাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস- তবে জনগনকে সংঘটিত করে আর একটি গনবিপ্লব ঘটিয়ে তাঁদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষ বাধাতো দিচ্ছেনা। যাদের নেতৃত্বে, যাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল, তাঁরাতো ক্ষমতায় আছে,তাঁদের কেন জোর পুর্বক,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খমতা থেকে নামাতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত করতে দেয়া হবে।এই সেই দিন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যিনি বিতর্ক উত্থাপনের বৃথা চেষ্টা করে জনরোষের আওতার মধ্যে এখনও রয়েছেন,তাঁর সৌখিন বাসভবন পাহারায় আপনার সরকার অতিরীক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে,তিনি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করার প্রসাশনিক অনুমতি পায়। বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্বের একটি দেশের উদাহরন কি কেউ দিতে পারবেন,স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে?একটি দেশকি কেউ দেখাতে পারবে যে,সেই দেশের কোনমীমাংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত কোন সত্যকে ৩০/৪০ বছর পর আবার জনসমক্ষে উত্থাপন করে লক্ষ লক্ষ শহিদ পরিবারের অন্তরের আগুনে"ঘি "ঢেলে দেয়ার চেষ্টা, কোন প্রতিষ্ঠিত দল বা তাঁর নেতা করেছেন? কেন এই পয্যন্ত সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে উলটো সমাবেশ করে তাঁর মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হল??তাঁরা নীজেদের এত ক্ষমতাবান মনে করেন কিভাবে? তাঁরা কি করে আবার জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করার অধিকার পায়?কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েও এখন পয্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন করছেন না? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনার আশ্বাস বাংলার মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে।সুতারাং জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন কল্পে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহনকরবেন, জনগনের এই আস্থা বিশ্বাস এখন ও অটুট রয়েছে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,শাপলা চত্বরের সেই দিনের ষড় যন্ত্র মোতাবেক যদি খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে আসতেন,পরিকল্পনাঅনুযায়ী সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েআপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো,আপনাকে কি জীবিত বাঁচতে দেয়া হত? আপনার পরিবারের কাওন সদস্যকে বাঁচতে দিত?আওয়ামী লীগের থানা উপজেলা পয্যায়ের কোন নেতা কি বাঁচতে দিত? তাঁরা কি সে দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম বিদ্বেষী সরকার উৎখাত করে ধর্মধারি সরকার কায়েমের রাজনৈতিক শ্লোগানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক জননন্দিত এইসংগঠনটিকেও জ্যান্ত কবর দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল না?আমি আজ আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন চরমপন্থী নেতার অবিকল নকল করা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার--,গনতান্ত্রিকদেশে,গনতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে, গনতান্ত্রীক সংগঠনের,গনতন্ত্রের পুজারি মনে করা কোন নেতা, রাজপথে আন্দোলন না করে, সীমাবদ্ধ কক্ষে ৪১দিন অবস্থান করে, ৪২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে,পরবর্তিতে বিচারের সম্মুখ্যিন না হয়ে নিয়মাতান্ত্রীক আন্দোলনের সুযোগ কোন দেশের, কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে, এমন উদাহরন কি কেউ দিতে পারবে?? ষড় যন্ত্রের জাল কোথায় বিস্তৃত ছিল তাঁর প্রমান সেই নেত্রী নীজেই তাঁর উষ্মায় প্রকাশ করে দম্ভস্বরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে বলে ছিল"সেনাবাহিনী বেঈমান"!!!এর পরও আপনার সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনায়ন না করে প্রকাশ্য সভার অনুমতি দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলির মনে আগাত দেয়া হয়েছে আমি মনে করি। গত পৌর নির্বাচনে রায় দিয়েছে তাঁর বিচার করার,তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থই হচ্ছে জনগনের ক্ষোভ তাঁর উপর থেকে এখনও কমেনি,বরঞ্চ কয়েক গুন বেড়ে জনরোষের পয্যায় পৌছে গেছে।আপনার সরকারের তাঁকে দেয়া বাড়তিনিরাপত্তাই তা প্রমান করে।সুতারাং দেশ ও জাতি এই রাজনৈতিক লাশের ভার বইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।দেশের এবং জাতির প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত শিক্ষিত, বিজ্ঞান মনস্ক,প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করার মত গুনাবলি সমৃদ্ধ নেতার। কোন অবস্থায় সক্রেটিসের আগের যুগে জাতি ফেরৎ যেতে চায়না।পরিশেষে বলতে চাই,আর কোন সংগাত নয়,এবার চাই সমৃদ্ধি।আর নয় জঙ্গিপনা,এবার চাই ধর্মনিরপেক্ষতা।আর নয় সাম্প্রদায়ীকতা,এবার চাই অসম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।আর নয় পাকি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা,এবার চাই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন। জয় আমাদের হবেই হবে, অশুভ অপশক্তির পরাজয় অবশ্যাম্ভাবি। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা