জাতীয় শোক দিবসের আজ ১০সেপ্টেম্বর শেষ দিন।হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা,শ্রদ্ধায় স্মরন করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে। ============================= ১৫ আগস্ট ২০১৫ইং সর্বযুগের সর্বশ্রষ্ঠ বাঙ্গালী,বাংলাদেশের জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাৎ বার্ষিকির, আজ ১০ই সেপ্টেম্বর ২০১৫সরকার ঘোষিত ৪০দিনের জাতীয় শোক দিবসের শেষ দিন।আশার কথা যে এবারের শোক দিবসে অল্প বিস্তর অঘটন ঘটলেও সামগ্রিক শোক পালনে গাম্ভিয্যতা পরিলক্ষিত হয়েছে।বেশ কিছু অফ-লাইনের কাগজ ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়া ৪০দিন ব্যাপি তাঁদের কাগজের পাতায় এবং অনুষ্ঠান সুচিতে কিছু না কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করেছে।এতে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদেরা যেমন মতামত তুলে ধরেছেন তাঁদের জ্ঞানগম্ভির আলোচনায়, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে যারা কাছ থেকে অবলোককন করেছেন তাঁরাও তাদের স্মৃতির পাতা থেকে টুকরো টুকরো স্মৃতি গুলী মানুষকে জানিয়েছেন অবলীলা ক্রমে।বাঙ্গালী যেমন ভালবেসেছিলেন বাঁধন ছেড়া ভাবে বঙ্গবন্ধুকে,বঙ্গবন্ধু ও বাঙ্গালীকে ভালবেসেছিলেন অন্তরের সকল প্রেমকে উজাড় করে মুক্ত আকাশসম হৃদয়ের নিংড়ানো সকল ভালবাসার অকৃত্তিম আবেগ ঢেলে দিয়ে। ১৫ আগস্ট পৈশাচিক, নৃশংস এবং পৃথিবীর সবচাইতে কলঙ্কিত হত্যাকাণ্ডে জাতির জনক সপরিবারে, শেখ ফজলুল হক মণি স্বস্ত্রীক, শেখ নাসের ও আব্দুর রব সেরনিয়াবাত পরিবারের অনেক সদস্যসহ শহীদ হন। এটি পৃথিবীর একটি ব্যতিক্রমধর্মী পৈশাচিক ঘটনা। যুদ্ধ ব্যতিরেকে কোনো জাতির জীবনেই এরকম ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসেনি। ঘটনাটি এতই অনভিপ্রেত এবং এতই অকস্মাৎ ও অতর্কিতে ঘটে যায় যে, যে জাতি ২৫ মার্চের পৈশাচিক আক্রমণকে শুধু প্রতিরোধই নয়, প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিল; ঘটনার আকস্মিকতায় সেই জাতি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়। এবং অন্যদিকে এই ঘটনার বিপরীতে নেতৃত্বের কোনো অংশ থেকে প্রতিরোধ অথবা রুখে দাঁড়ানোর কোনো আহ্বান বিজয়ী জাতির জাগ্রত জনগণ শুনতে পায়নি। প্রসঙ্গের গভীরে আসার আগে আমি বিদগ্ধ চিত্তে কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি কর্নেল জামিলকে- তাঁর দুর্জয় সাহসী ভূমিকার জন্য। যথাসময়ে জীবনের বিনিময়ে তিনি প্রমাণ করে গেছেন তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠা ও সামরিক শৃঙ্খলাবোধের। জামিলের মত আর দুই চার জন যদি সেদিন তাদের কর্তব্য নিষ্টার পরাকাষ্টা দেখাতে পারতেন তাহলে বাংলা দেশের ইতিহাস হয়তোবা আজ অন্যরকম হতে পারতো। পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে ঘাতকের নির্মম আঘাতে জীবন হারানোর ঘটনা বিরল নয়। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের নিষ্পত্তিকরণের মহানায়ক, ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব আব্রাহাম লিঙ্কন, আমেরিকার প্রথিতযশা রাষ্ট্রনায়ক জন এফ কেনেডি ও তাঁর ভাই আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট কেনেডি, মানবতার অগ্রদূত মার্টিন লুথার কিং, কঙ্গোর প্যাট্রিস লুমুম্বা, আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা করমচাঁদ গান্ধী, সত্তর দশকের পৃথিবীর সবচাইতে দূরদর্শী ও সফল রাষ্ট্রনায়ক ইন্দিরা গান্ধী, তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি রাজীব গান্ধীসহ পৃথিবীর রাজনীতির অনেক শ্রদ্ধাভাজন বিশিষ্টজন ও বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক এমনকি জাতির জনক ঘাতকের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু পৃথিবীর কোথাও কখনো একই পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে নির্মূল-নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার এমন পৈশাচিক দৃষ্টান্ত আর নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যামামলা চলাকালে সাক্ষীদের জেরা ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে উঠে এসেছে- আক্রান্ত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় পেয়েছিলেন এবং সামরিক বেসামরিক ও সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছিলেন এবং আক্রমণটিকে প্রতিহত করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। একটা অসহ্য যন্ত্রণায় আমার বুকের পাঁজর টনটন করে ওঠে। মৃত্যুর আগে কি সামরিক, কি বেসামরিক, কি সাংগঠনিক- কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত শক্তিধর ব্যক্তির পক্ষ থেকে যথাযথ সাড়া না পাওয়ার মর্মান্তিক বেদনা নিয়েই তাকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক শক্তি ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশের কারাগার তো দূরে থাক, কোনো ক্যান্টনমেন্টেও তাকে রাখতে সাহস পায়নি, এটা ভেবে যে, তাকে বাংলাদেশের চৌহদ্দির মধ্যে অবরুদ্ধ রাখা ছিল অসম্ভব। তাকে নাগালের মধ্যে পেয়েও পৈশাচিক সামরিক জান্তা খুব সুপরিকল্পিত চেতনার আবর্তেই জীবিত রেখেছিল এই কারণে, মুক্তিযুদ্ধে আমরা পরাজিত হলে তাকে হত্যা করবে, আর তারা পরাজিত হলে তাদের সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক অনুগতদের সঙ্গে জীবন বিনিময় করবে। গভীর বেদনাহত চিত্তে আমার এটা মনে হয়েছে যে, পাকিস্তানের কারাগার থেকে অক্ষত অবস্থায় প্রত্যাগত হওয়ার পর তাঁর চিন্তাচেতনা ও মননশীলতায় এই বদ্ধমূল ধারণা সৃষ্টি হয় যে, তাঁর প্রাণের স্বদেশবাসীরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে তাঁর নিরাপত্তার বিধান করবে। বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলই তাঁর নিরাপত্তার দুর্ভেদ্য দুর্গ। তাই অনেক অনুরোধ ও নানাভাবে তাকে সতর্ক করা সত্ত্বেও ৩২ নম্বরের বাড়ি ছেড়ে তিনি গণভবনের নিরাপত্তা ছাউনির মধ্যে অবস্থান করতে রাজি হতেন না। বিষয়টি নিয়ে তাকে সতর্ক করতে গেলে অনেক সময় প্রচণ্ড ক্রোধান্বিত হয়ে তিনি বলতেন, তিনি নিরাপত্তার নামে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবরুদ্ধ জীবন কাটাতে চান না। ৩২ নম্বরের বাড়িটি এতটাই উন্মুক্ত ও অবারিত ছিল যে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মী থেকে শুরু করে যে কোনো পর্যায়ের মানুষ এমনকি ঘাতকরাও সময়ে-অসময়ে তার কাছে অনায়াসে পৌঁছতে পারত। পালিয়ে যাওয়ার বহু রাস্তা খোলা থাকা সত্বেও,তিন ঘন্টার অধিক সময় পাওয়া সত্বেও বঙ্গ বন্ধু পালিয়ে না গিয়ে নির্ভয়ে ঘাতকদের সামনে চলে এসেছিলেন।তাঁর দৃডবিশ্বাস ছিল বাঙ্গালীরা তাঁকে হত্যা করতে পারেনা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ঘাতকরা যদি আদৌ বুঝতে পারত, বঙ্গবন্ধু ৩২ নম্বর থেকে সরে গেছেন, তাহলে তারা পোশাক ছেড়ে উলঙ্গ হয়ে দিকশূন্য হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হতো। আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি যদি পেছনের দরজা দিয়ে সরে যেতেন, তাহলেও ঘটনার চিত্রটি অন্যরকম হলেও হতে পারত। বঙ্গবন্ধু স্থির প্রত্যয়ে বিশ্বাস করতেন যে, বাঙালির ডান-বাম যে কোনো ধরনের অভ্যুত্থান এমনকি বিপ্লব হলেও তাকে হত্যা তো দূরে থাক, তাঁর নেতৃত্বকে অস্বীকার করার দুঃসাহস ও স্পর্ধা কেউ দেখাবে না। তাঁর এই চেতনাটির প্রতীতি ও প্রত্যয় মানুষের প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং বাংলার মাটির প্রতি তাঁর অবারিত চিত্তের নিগুড় ভালবাসা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু ভারতবর্ষের ইতিহাসের একমাত্র সফল আন্দোলনের নির্মাতাই ছিলেন না, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি উপমহাদেশের সর্বকালে সব শহীদের ঋণ শোধ করেছেন। বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন সেই মানুষ, যাঁর জীবন ও কর্ম সফল করেছে ক্ষুদিরাম-প্রীতিলতা-সূর্যসেন থেকে সালাম-বরকত-রফিক কিংবা ঊনসত্তরের শহীদ আসাদের আত্মদানকে। তিনিই তো একমাত্র নেতা যিনি একই সঙ্গে বাঙালির অতীত ও ভবিষ্যৎকে তাৎপর্যপূর্ণ করেছেন। তাই হীন-অসত্য-ইতিহাস বিকৃতিকারীদের মূর্খতা ও স্থ‚লতার জবাব দেয়াটাও অবান্তর হবে। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের মধ্য দিয়ে যে ইতিতহাস বিকৃতির যুগ অতিবাহিত হয়ে আসছে প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিককেই এই বিকৃতির চক্রব্যুহ ভেদ করতে হবে। বাঙালির ইতিহাসের ভেতর দিয়ে বাঙালি আপন কথা বলে। বাঙালির ইতিহাস বাঙালির অস্তিত্বের উচ্চারণ। আর বঙ্গবন্ধু সর্বকালের বাঙালির আপনতম কণ্ঠ। তাই পনেরই আগস্টের বঙ্গবন্ধু নৃশংস হত্যাকাণ্ড বাঙালির কণ্ঠরোধ করারই শামিল। আর বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম রূপকার বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ভেতর দিয়ে ভ্রান্ত-কপট এক বিষাক্ত জাতীয়তাবাদের দিকে বাঙালিকে চালিত করার পথ প্রশস্ত হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদও বস্তুত কোনো আকস্মিক বিষয় নয়। কোনো সেনাছাউনিতে এর কলঙ্কিত জন্ম হয়নি। এর রয়েছে হাজার বছরের এক সেকুলার ইতিহাস। আমাদের মনে পড়বে বঙ্গবন্ধুকে যেদিন হত্যা করা হয় তার পরের দিন সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ধর্মনিরপেক্ষতা যে জাতীয়তার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল বিশ্বের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিসমূহ কোনো দিন তা সমর্থন করতে পারেনি। উল্লেখ্য, একাত্তরের ঘাতক গোলাম আযম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা তখন পাকিস্তান ও সৌদি আরবে অবস্থান করছিল। আর তাদের দোসররা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্লোগান দিচ্ছিল ‘তোয়াব ভাই, তোয়াব ভাই, চাঁদ-তারা পতাকা চাই’। এরা বাঙালির পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতকে পরিবর্তনেরও দাবি তুলে। কিন্তু বাঙালি স্বভাবগত সেকুলার। হিন্দু মুসলমানদের মিলনের ভেতর দিয়েই এর পূর্ণতা। বহু ধর্ম-দর্শনকে এটি নিজের উদারতা দিয়ে আপন করে নিয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ হচ্ছে সেই সত্তা যাকে রামমোহন-বিদ্যাসাগর-বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সোহরাওয়ার্দীর মতো মহান ব্যক্তিবর্গ নিজের মতো করে আকার দিয়েছেন, আর সেই মৃত্তিকামূর্তির আকারে এক কঠিন সন্ধিক্ষণে তাঁকে এই দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলার ইতিহাস হয়তো দীর্ঘকালের জন্য অশুভ অন্ধকারে থমকে থাকত। এইবছরই বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতিতে জাগরুক হল বঙ্গবন্ধু মুলত সার্বজনীন ব্যাক্তিত্ব।কোন একক দল বা গোষ্টির সম্পদ নন।এই প্রথম বাঙ্গালীচিত্তে স্বরুপে,স্বমহিমায়,স্বগৌরবে জাতির জনক ফিরে আসতে শুরু করেছে।ইতিহাস কোন দিন কেউ বাঁকা করতে পারেনা,যদিও পারে তা নিতান্তই সাময়িক সময়ের জন্য।জাতির জনকের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে,তিনি তিন দশক পরেই ফিরে আসতে শুরু করেছেন।তবে এই আসার পথ ও যে মসৃন নয় তা ইতিমধ্যে প্রমানীত হয়ে গেছে।অনেক প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতাও অযথা বিতর্কের ঝড় তুলে সাময়িক বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন।দক্ষতার সঙ্গেই জাতির জনকের কন্যা সামাল দিতে পেরেছেন বলেই আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাঙালি যিনি জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন এবং বাংলাকে জাতিসংঘের স্বীকৃত ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ভারতের সঙ্গে ২৫ বছরের মৈত্রী ও শান্তি চুক্তি, ফারাক্কার পানি বণ্টন চুক্তিতে বাংলাদেশের জন্য ৪৪ হাজার কিউসেক পানির ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের বিরাট সাফল্য। মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে বিশ্ব শান্তি পরিষদ কর্তৃক সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর অমূল্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জুলি ও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তি আজো সব বাঙালির জন্য গর্বের এবং গৌরবের। ইতিহাস সত্যের পথে অবিরল, অবিচল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে খুনিচক্র বঙ্গবন্ধুর নাম চিরতরে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে খুনি মোশতাক, ফারুক, রশিদ, ডালিম ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ৩৪ বছর পরেও খুনিদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর কর্মের মাঝে, সৃষ্টির মাঝে আমাদের হৃদয় মন্দিরে বেঁচে আছেন। দেশে-বিদেশে লাখ কোটি মানুষের অন্তরের মনিকোঠায় বেঁচে থাকবেন মহাকালের পথ বেয়ে অনন্তকাল।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন