মুক্তিযুদ্ধে আমার স্মৃতি===

'মুক্তি যুদ্ধের সময়ে আমি ছোট ছিলাম।ছোট বলতে ৬ষ্ট শ্রেনীতে  বাড়ীর পাশের উচ্চ বিদ্যালয়ে সবে ভর্তি হয়ে মাস খানেক ক্লাস করেছিলাম।সারা দেশ উত্তাল,আমাদের গ্রাম্য হাট বাজারেও সদা সর্বদা মিছিল মিটিং চলছেই।বাজারের পাশে বাড়ী বিধায় বা দেশের চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হোক, সর্বদাই মিছিলে যেতাম।আনন্দ উল্লাস হত,তবে কেন যেতাম তখন মনে হয় বুঝতাম না।
  মার্চের শেষ দিকে মুরুব্বীরা বলা বলি করছিল,ঢাকায় নাকি বহু মানুষ হত্যা করেছে পাঞ্জাবি সেন্যরা।গ্রামের অনেক মানুষ তখন ঢাকায় চাকুরী সুত্রে বা ব্যাবসা সুত্রে বসবাস করতেন।তাদের বাবা মা ভাই বোনেরা হায় হুতাশ,কান্নাকাটি করছিল।তখনকার সময়ে টেলিযোগাযোগ ছিলনা।যাতায়াত ব্যবস্থাও তেমন উন্নত ছিলনা।মরুব্বিরা সবাই জড়ো হয়ে বি,বি,সির খবর শুনতেন রেডিওতে।রেডিও খুব বেশি ছিল না।সারা বাজারে মাত্র দুইটা রেডিও,সেখানেই ভিড় ছিল সবাইর।গ্রামের মানুষ যারা কদাচিৎ বাজারে আসতেন,তাঁরাও ইদানিং বাজারে আসেন, উদ্দেশ্য খবর শুনা।কয়েকদিন পর আমাদের ঈদগাহ ময়দানে অনেক যুবক দেখি ট্রেনিং নিচ্ছেন।আমাদের গ্রামের এক লোক আর্মিতে চাকুরী করতেন,তাঁর নাম ছিল নুরুজ্জমান হাবিলদার।সে প্রত্যহ বিকেল বেলা এলাকার যুবক ভাইদের ট্রেনিং দিতেন।পরে অবশ্য ভদ্রলোক রাজাকারে ভর্তি হয়ে, পাঞ্জাবী সেনাদের সহযোগিতা করেছিলেন।যুদ্ধের পর যাদেরকে তিনি ট্রেনিং দিয়েছিলেন সেই মুক্তিযুদ্ধাদের হাতেই মৃত্যু ভরন করেছিলেন।আমাদের এলাকায় পাঞ্জাবীরা আসতে অনেক দেরী হয়েছিল।পাশেই ২কিলোমিটার ব্যবধানে ভারতীয় সীমান্ত থাকার কারনে লোকজন মনে হচ্ছিল কিছুটা স্বস্থিতেই ছিল।ঢাকা থেকে লোক জন পায়ে হেঁটে অনেকেই ইতিমধ্যে বাড়ী এসে পৌছে গেছেন।তাঁদের মুখে লোমহর্ষক কাহিনী শুনার জন্য এলাকার মানুষ ছুটে যেতে দেখলেই আমিও পিছনে পিছনে চলে যেতাম।বলা প্রয়োজন যে যদিও ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় ছিলাম,শারিরীক ভাবে খুব বেশী ভাল অবস্থায় ছিলাম না।ক্লাসের মধ্যে আমি এবং আমার এক বন্ধু সবার চেয়ে ছোট ছিলাম,অন্যরা সবাই আমাদের থেকে লম্বা এবং স্বাস্থ্যগত দিক থেকে অনেক ভাল অবস্থায় ছিল।আমার আব্বাজান ভারতে গিয়ে এলাকায় পাঞ্জাবি আসার আগেই একটি টিলার উপর ঘর বেঁধে রেখেছেন, আমরা জানতাম না।আমাদের বাড়ী থেকে প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার দক্ষিনে চাঁদগাজীতে মুক্তিযুদ্ধারা নাকি বাঁধ দিয়েছে।অর্থাৎ ব্যারিকেট দিয়েছে,পাঞ্জাবিরা নাকি আমাদের এলাকায় আসতে পারবে না।আমাদের মুরুব্বিরাও এতে দেখা গেল উৎফুল্ল।যার ফলে আগে ভাগে ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি।নিশ্চিন্তমনে সবাই সবার কাজে ব্যাস্ত থেকে যুদ্ধের শেষ পরিনিতির কথাই ভাবছিল।গ্রামের বড়দের সাথে ইতিমধ্যে পাশের ভারতীয় বাজারে এবং তাঁর আসেপাশে কয়েকবার ভ্রমন হয়ে গেছে।পথঘাট সব জানাশুনা হয়ে গেছে।ইতিমধ্যে মহকুমা শহর ফেনী পয্যন্ত পাকিস্তানী বাহিনী চলে এসেছে।মুক্তি যুদ্ধারা বলতে তখন আর্মি, লুলিশ,ই,পি,আরের বাঙ্গালী যুদ্ধারা।তখন ছাত্র জনতা ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধের মাঠে আসেনি।পাকবাহিনী শুভপুর হয়ে আসার চেষ্টা অন্যদিকে ফেনী হয়ে উত্তরে আসার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।মুক্তিযুদ্ধাদের শক্ত অবস্থান চাঁদগাজী থেকে পশ্চিমের বর্ডার পয্যন্ত বিস্থিত।মরন পন লড়াই চালিয়েও মুক্তিযুদ্ধাদের পিছনে হঠাতে পারছেনা।আমরা দিনরাত শুধু আওয়াজ শুনছি বিভিন্ন অগ্নেয়াস্ত্রের।একদিন সকালে হঠাৎ করে রব উঠে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।কে আর কাকে চায়,কে কার দিকে তাকায়।যার যার মত করে যে যেইদিকে পেরেছে সেই দিকে পালায়নপর।।দক্ষিন দিক থেকে পাকি সেনারা মর্টারের সেল আর ব্রাস ফায়ার করে আগেকার ক্যাপ্টেন লিক রোড বর্তমানের( গুগুলের আবদুস সালাম সড়ক) হয়ে এগিয়ে আসছে।মুক্তিযুদ্ধারা প্রানপন বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেও পিছনের দিকে দাবমান।এমনতর অবস্থায় আমাদের পরিবার ভারতের পিলারের সাথে করা ঘরে আশ্রয় নিলাম।সেখানেও অবস্থা বেগতিক চিন্তা করে, আমার বাবা আমাদের ভাইদের চিন্তায় অস্থির।ভাগ্য গুনে কয়েক দিন পর এক হিন্দু ভদ্রলোক এসেছেন আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।পরে জেনেছি পরিবারটি আমাদের পরিবারের সাথে আগে থেকেই খুব ভাল সম্পর্কিত ছিল।আমরা তাঁদের বাড়ীতে গেলাম।তাঁরা আমাদেরকে তাঁদের থাকার ঘরটি ছেড়ে দিল, তাঁরা গোয়াল ঘরে আশ্রয় নিল।আমাদের সাথে আমাদের গ্রামের আর ও এক পরিবারের ঠাঁই হল একই ঘরে।তাঁদের সেই দিনের আশ্রয়ের কথা কখন্ব ভুলার নয়।
  এদিকে পাকিস্থানীরা বিলোনিয়া পয্যন্ত দখল করে নিল।তাঁদের শাষনের মধ্যেও মাঝে মাঝে গোলাগুলি হচ্ছে,কিন্তু সংগঠিত কোন আক্রমন হচ্ছেনা।ইতিমধ্যে বেশ কিছুদিন কেটে গেছে।যে সমস্ত বাড়ীতে লোক জন নেই, পাঞ্জাবিরা ঐ সমস্ত বাড়ী জ্বালিয়ে দিবে এমন খবরে আমার আব্বা আমাকে নিয়ে বাড়ী চলে এসেছেন। আমার বড় চার ভাই এক বোন, ছোট এক বোন মা,চাচারা ভারতে রয়ে গেলেন।আমাদের বাড়ীর পাশেই বাজার আগেই বলেছি,বাজারের লশ্চিমে বড় একটা তহসিল পকুর আছে, একটা ডাক্তারখানা ছিল।সেখানেই পাঞ্জাবীরা ক্যাম্প করেছে।ক্যাম্প করেই রাজাকারে লোক ভর্তি করা শুরু করে।অনেকেই স্বইচ্ছায় রাজাকার হল,অনেককেই ধরে নিয়ে জোর পুর্বক রাজাকারে ভর্তি করা হল, বয়স্ক যারা ছিল,তাদের অনেকেই শান্তি কমিটির সদস্য হয়ে গেল।শান্তি কমিটিতে যারা ছিল, তাঁরা আগে থেকেই গ্রামের প্রভাব শালী মুসলিম লীগ পরিবার ছিল।রাজাকারে যুবকদের মধ্যে অনেকেই ভর্তি হয়ে গেছে।মুক্তি যুদ্ধারা ও ইতি মধ্যে তিন মাসের ট্রেনিং নিয়ে অনেকেই এসেছেন।মাঝে মাঝে আক্রমন পালটা আক্রমন শুরু হয়ে গেছে।এলাকার বেশিরভাগ যুবক গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে এসেছেন।তাঁরা রাস্তায় মাইণ বসানোর কাজ করে, মাঝে মধ্যে রাজাকারদের বাড়ীতে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়।রাজাকার সৃষ্টি হওয়ার পর মুলত মানুষের উপর অত্যাচার লুটপাট,দর্শন ইত্যাদি বেড়ে যায়। একদিন এলাকার কিছু লোক নিয়ে পাঞ্জাবী সেনারা আমাদের বাড়ীতে আসে।আমার বাবা বাহিরে কোথায় ছিল জানিনা।আমি ঘুমে ছিলাম।আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়,উঠে দেখি ছয় সাত জন পাঞ্জাবী সাথে আমাদের এলাকার ৫/৬ জন মানুষ।এলাকার মানুষ দেখে আমি একটু সাহস পেলাম।ওরাযে রাজাকার আমি তা তখনও বুঝে উঠতে পারিনি।একান্ত পরিচিত ছিল সবাই,বাজারে যেতে আসতে আমাকে খুব আদর করতেন তাঁরা।তাঁদের মধ্যে একজন আমার বাবাকে মামা বলে ডাকতেন,তিনি আমাকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করেন, আমার ভাইদের নাম ধরে ধরে তাঁরা কোথায় আছে,আমার বাবা কোথায়।জিজ্ঞাসাটা ধমকের সুরে ছিল বলে আমি একটু আশ্চায্য হলাম।চিন্তা করলাম উনিতো আমাদের আত্মীয়, উনি কেন আমাকে ধমকাবেন।কয়েকবার জিজ্ঞাসার পর আমি স্বিকার করিনি কোথায়,তখন আমি চিন্তায় আনতে পারিনি এরা মুলত পাঞ্জাবি সেনাদের লোক।উনি এলাকার মেম্ভার ছিলেন,নাম তাঁর রশিদ মেম্ভার।উনি কি যেন পাকসেনাদের সাথে কথা বললেন,এসেই আমাদের সব গুলা বসত ঘরে আগুন দেয়ার জন্য উদ্যত হলেন। আমি একান্তই ছোট,তারপর ও কিভাবে যেন বলে ফেললাম আমি আব্বা আসলে বলে দেব আপনি আমাদের ঘরে আগুন দিয়েছেন।এই কথাটা বলার পরই সেই রশিদ মেম্ভার আমাকে সজোরে একটা চড় দিলেন।আমি ঘুরে পড়ে গেলাম।দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল।আমাদের একটা বিল্ডিং ঘর বাড়ীর মধ্যে বাদ বাকী তিনটা মাটির ঘর উপরে টিনের চাউনি ছিল,সব কয়টাতেই আগুন দিল।একটা ঘর ছিল মাটির ওয়াল উপরে টিন,সিলিং ছিল না,ঐ ঘরটাতে তিনবার আগুন দেয়ার পরও আগুন ধরেনি।মাঝখানে বেড়ার পার্টিশান ছিল ঐ পার্টিশানটি জ্বলে নিভে যায়।এখানে বলে রাখা দরকার আমাদের এলাকায় বন্যা,জলোস্বাস হয়না বিধায়  মাটির দেয়ালের ঘর অধিক প্রচলন ছিল।পরবর্তিতে আশেপাশে আমার চাচা জ্যাঠাদের সমুদয় ঘরেই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল।আমাদের সম্পুর্ন বাজারই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।বাজারেও আমাদের ছয়টি দোকান ঘর ছিল,সব গুলি দোকান ঘরে আগুন দেয় রাজাকার এবং পাঞ্জাবীরা।আমার চাচাত ভাই জ্যাঠাতো ভাই সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও আমার ভাইদের মধ্যে একজনও যুদ্ধে যায়নি।যুদ্ধে না যাওয়ার কারনে নীজকে আমার খুব ছোট মনে হয়।আমার বড় ভাই আওয়ামী লীগ বিরুদি ছিলেন, তাই হয়তো কাউকে মুক্তি যুদ্ধে যেতে দেননি,কিন্তু এলাকার মধ্যে সম্পদ হানী সবচেয়ে বেশি হয়েছে আমাদেরই।বড়ভাই যুদ্ধে যাননি বটে, ভারতে পরিবারের সাথেই ছিলেন।যুদ্ধপরবর্তিতে আমার জ্ঞান হওয়া অবদি দেখি আওয়ামী রাজনীতির সাথেই সম্পৃত্ত।ফলত আমরা পরবর্তি সব ভাই আওয়ামী রাজনীতির সংগে জড়িয়ে যাই।
 আমার আব্বা যুদ্ধের পর প্রায় বিশ বছর বেঁচে ছিলেন,এই বিশ বছরই তিনি রশিদ মেম্ভারের ক্ষুঁজ রেখেছিলেন,আর সুযোগ খুঁজছিলেন রশিদ মেম্ভারকে যদি হাতের মুঠোয় পান, তবে জিজ্ঞাসা করবেন তাঁর আদরের ছোট ছেলের গাঁয়ে হাত দিল কেন?আমার আববা আমৃত্যু সেই সুযোগ পাননি।পরে অবশ্য ঐ রাজাকার মানবেতর জীবন যাপন করে খাগড়াচড়ির জঙ্গলে মৃত্যু বরন করেছেন।এক দিনের জন্য ও সে তাঁর জম্ম ভুমিতে আসেননি। আমি আজও ভুলতে পারিনি সেই চড়ের কথাটি।
  দেশ স্বাধীনের পর একদিন বাজার বার ছিল।আব্বা বাজার থেকে বড় সাইজের দুই কুড়ি কলা কিনে আমাকে দিলেন বাড়ীতে নেয়ার জন্য।আমি কলা গুলি দুই হাতে ভাগ করে নিয়ে আসছিলাম।পথিমধ্যে এক মুক্তিযুদ্ধা আমার হাত থেকে এককুড়ি কলা চিনিয়ে নিয়ে গেল।আমি কলা কেন নিয়ে যাচ্ছে জিজ্ঞাসা করায় সেও আমাকে একটা চড় দিল,আমি আশ্চায্য হয়ে গেলাম এই ভেবে,রাজাকারের চড় আর মুক্তি যুদ্ধার চড় দুইটাই কি আমার মত অবুঝ বালকের জন্য বরাদ্ধ ছিল?আমি আজও ভুলতে পারিনা। তবে মুক্তি যুদ্ধার একটা কমেন্ট ছিল"তোদের আগের সেই দিন নাই"।
  মুক্তিযুদ্ধা ভাইটি বহুদিন বেঁচেছিলেন।৩/৪ বছর আগে মারা গেছেন।আমৃত্যু মানুষটি আমাকে ভালবেসেছেন,শ্রদ্ধা করেছেন,অনেক বয়স্ক হলেও সালাম কোনদিন আমি আগে দিতে পারিনি।হয়তো কথাটা তাঁর মনে ছিল,বিবেকের তাড়নায় এমন আচরনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল,অথবা আমি আওয়ামী লীগ করি তাই। মুক্তিযোদ্ধা ভাইটির পদস্থলন হয়েছিল,সে অন্য মুক্তিযুদ্ধাদের মতই বি,এন,পির রাজনীতির সাথে সম্পৃত্ত ছিল।আমি একটা বিষয় তাঁর সম্পর্কে আঁচ করতে পেরেছিলাম,সে যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল,তাঁর সেই স্বপ্ন পূরন হয়নি।তাই শেষ পয্যন্ত আদর্শ চ্যুত হয়েছিল।আমাকে যে কমেন্ট করেছিলেন ঐ কমেন্টে তাঁর স্বপ্ন নিহিত রয়েছে।

৭১এ মুক্তিযুদ্ধের পর আটক রাজাকার আলবদর সদস্যরা, বঙ্গবন্ধুর সাধারন ক্ষমার আওতায়, জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন, তাদের বেশির ভাগ সাবেক বসতি গ্রামে ফিরে না এসে,
ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে নতুন করে বসতি স্থাপন করতে দেখা গেছে।এমন অনেকে দেখা গেছে আত্মীয় স্বজনের মত্যু সংবাদ শুনার পরও, দেখার জন্য নীজ গ্রামে ফেরার চিন্তা করেননি।যদি কখনও কারো সাথে অকস্মাৎ কোথাও দেখা মেলে, বা কারনে অকারনে দেখা হয়ে যায়, তাহলে কেমন যেন চোখ লোকানোর একটা ভাব পরিলক্ষিত হয়।একান্ত পরিচয় দিয়ে আলাপ করতে গেলে,এলাকার বিশেষ কিছু মানুষের সংবাদ সংগ্রহে তাদের বেশি উৎসুক দেখা যায়।ঐ সমস্ত মানুষ গুলি এখন ও জীবিত আছেন, না মারা গেছেন তা জানতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন।
যে রাজাকার মুক্তিযুদ্ধে তার এলাকায় মুক্তিযুদ্ধা পরিবারের উপর নির্যাতন করেছে,বাড়ীঘর পুড়িয়েছে,গরু ছাগল,হাঁস মুরগি ধরে নিয়ে গেছে, তারা এখনও জীবিত আছে কিনা,সেটাই তারা এখন ও নিশ্চিত হতে চায়।এমনিতে কুখ্যাত রাজাকারদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে মারা গেছে বা অনেকে মত্যু পথযাত্রী। এলাকার জন্য তাদের মন কাঁদে এমনটি আমার কাছে মনে হয়নি।সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা দিব্যি সুখেই আছে বলে মনে হল।
গতবছর পাহাড় ঘেরা খাগড়াছড়ি বেড়াতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা আমার নীজের অর্জিত।একাধিক কুখ্যাত রাজা কারের সাথে আমার দেখা এবং কথা হয়েছে।অনেকের নাম জিজ্ঞাসা করে দেখলাম সবাই সবাইকে চেনে- জানে এবং তাদের মধ্যে আন্তঃসংযোগ অত্যান্ত চমৎকার বলেই মনে হল। খবর নিয়ে যতটুকু জানলাম,বেশীর ভাগের সন্তানাদি বি,এন,পি রাজনীতির সাথে জড়িত। অনেকে আবার পাবলিক প্রতিনিধি হয়ে বেশ নামযশ ও কিনেছেন।
অতীতের ইতিহাস ছেলেমেয়েরা জানে
কিনা? এই প্রশ্নটি সরাসরি নাকরে,জানতে চাইলাম, আপনার ছেলেমেয়েরা আপনার আধিনিবাসের খবর জানতে চায় কিনা? এই রুপ প্রশ্নের জবাবে কিছুটা বিচলিত হয়ে উত্তর হ্যাঁ সুচক দিয়ে বলে, ওদের নিয়ে এলাকায় বেড়াতে যাব যাব করেও যাওয়া হয়ে উঠে না।এতে বুঝতে অসুবিধা হয়না যে,এখন ও তারা তাদের '৭১এর কর্মের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মানষিক ভাবে দুবল অবস্থানে আছেন।রাজনীতির বিশ্বাস আগের অবস্থানেতো আছেনই বরং কঠোরতর হয়েছে বলেই মনে হলো।
আমি ঘুরেফিরে যতই জানার চেষ্টা করিনা কেন,তাদের কথা একটাই এইতো অল্প সময়ের মধ্যেই,ভারতের কাছে বাংলাদেশকে বিক্রি করে শেখ হাসিনা বিদেশ পাড়ি জমাবেন।কথাটা তারা বুঝে বলুক আর না বুঝে বলুক "বলাতেই তাদের আনন্দ আমার কাছে মনে হলো"। এইরুপ চিন্তার কারন জানতে চাইলে জাতির জনকের মৈত্রী চুক্তির কথাটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।সাথে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার কথাটা কে জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করেন।এই অশিক্ষিত অধশিক্ষিত লোক গুলো সাজিয়ে কথা বলার মধ্যে,তারা যে দীঘদিনের মুজিব আদশের বিরুদ্ধে বিশেষ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত, এটা বুঝতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।তাদের মারমুখি অবস্থানের কথা চিন্তা করলে মনে হবে,তারা এখনও যেকোন ত্যাগ স্বিকারে  প্রস্তুত।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী কিছুদিন আগে একটি তাৎপয্যপুর্ণ কথাই বলেছেন।
'৯৬ইংসালে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতো তাহলে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তি যুদ্ধের চেতনা কি,ইহাই ভুলে যেত বাংলাদেশের মানুষ।নতুন প্রজম্মের ছেলে মেয়েদের মুক্তিযুদ্ধ সম্মন্ধে জানা তো পরের কথা।
কথাটা যে কতটা প্রনিধানযোগ্য বতমান প্রেক্ষাপট চিন্তা করলেই বুঝা যায়। একবিংশ শতাব্দির বিজ্ঞানের চরম শিখরে দাড়িয়ে,আমরা বিজ্ঞ কিছু মানুষের মুখে শুনতে পাই, এই বুঝি ভারতের দাসত্ব বরন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তি মানে ভারতের দাশ ওই চুক্তি দেশ বিক্রি ইত্যাদি ইত্যাদি।বেগম খালেদা জিয়ার মত নেত্রীরা বা নেতারা যখন বলেন ট্রানজিট চুক্তি হলে বাংলাদেশ ভারতের দাসত্ব বরন করবে।"অশিক্ষিত হলেও তিনি একটা বড়্র রাজনৈতিক দলের নেত্রী। একাধিকবার বাংলাদেশের রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার এবং রাস্ট্র পরিচালনা করার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ।তার মুখে যদি
এমন একটা অর্বাচিনের মত কথা বের
হয় তাহলে সাধারন একটা মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ আছে বলে আমি মনে করি না।'১৯৬৫ইং সালের আগে,অর্থাৎ ভারত পাকিস্থান যুদ্ধের আগে পয্যন্ত সড়ক,রেল,নৌপথে ভারতের সাথে সংযোগ বিদ্যমান ছিল,তখন কি দেশ বিক্রি হয়ে যায়নি?নেপাল ভুটান ও সার্ক ভুক্ত অন্য দেশসমুহের সাথেও যদি এই কানেক্টিভিটি কায্যকর হয়, তাহলে একা ভারত কিভাবে বাংলাদেশ কিনে নিবে?অন্য সবাইকে ভাগ দেয়া ছাড়া?এই সড়কে বাংলাদেশের যে পন্য আমদানী রপ্তানী হবে তার কি হবে?বাংলাদেশ এত সস্তা কি ভাবে হল, যে কোন সময়ে ভারত কিনে পেলে বা সহজে আমরা বিক্রি হয়ে যাই?
বাংলাদেশ নামক এই ছোট্র ভুখন্ডটি
অজন করতে যে মুল্য আমাদের দিতে
হয়েছে তা বিশ্বের আর কোনদেশ কিনতে কি দিতে হয়েছে?পৃথিবীর একটি দেশকি খুজে পাওয়া যাবে,যেদেশ তাদের ভাষার জন্য রাজপথে তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে?পথিবীর একটা দেশকি খুঁজে পাওয়া যাবে,যে দেশ স্বাধীন করতে তাদের মা বোনের জীবনের মুল্যবান সম্পদ হারাতে হয়েছে?তারপরও স্বাধীনতার এত বছর পরও পুরাতন মদ নতুন মোড়কে  বিক্রির চেষ্টা কেন করা হয়?এই দেশটা কি তাঁরা উন্নত দেশে রুপান্তরীত হোক চায় না?

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যাতত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ঐতিহ্যে বিতর্ক উত্থাপনের অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করে,মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার মত দৃষ্টতা দেখিয়ে নি:সন্দেহে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এহেন গর্হিত বক্তব্য প্রদানকারী বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখতে পারেননা।মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কোন দল বা জোটের রাজনীতি করারঅধিকার নীতিগতভাবেই থাকতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সকল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে সর্বচ্ছ আদালতের রায় অনুযায়ী '৭২এর সংবিধান অবিকল বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।বাংলাদেশেরজনগন চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক,মুক্তিযুদ্ধে সাগরসম রক্ত ঢেলে সেই অঙ্গিকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাসকরে,পরাধীনতার গান শুনতে দেশ স্বাধীন করেনি বাংলার জনগন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বিরামহীন সংগ্রামের ফসল মুক্তিযুদ্ধ।সেইযুদ্ধে উপনিবেশিক পাকিস্তানের আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালীরা পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিল।সেই স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেপরাজিত শক্তির দোষর,তাঁদের প্রেতাত্বাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।জাতির জনক তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রাজাকারের কোন স্থান দিতে চায়না। তাই খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমুলক সাজার আশা পোষন করে।কোন রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁদে যেন এই মামলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাঁর গ্যারান্টিও সরকারের নিকট বাংলাদেশের জনগন চায়। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু Ruhul Amin ------------------------------ খালেদা জিয়াকে সমাবেশের অনুমতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আশাহত----04 /01 / 0016 ইং পোষ্ট -==================================প্রখ্যাত দার্শনিক,চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে কম বেশি আমরা সবাই জানি।সক্রেটিস কোন যুগে জম্মগ্রহন করে মানব সেবায় ব্রতি হয়ে আজও দেশে দেশে অনুকরনীয় অনুসরনীয় হয়ে আছেন তাও আমরা জানি।নিশ্চয়ই তখনকার সময় থেকে বর্তমানের সমাজ, রাষ্ট্রব্যাবস্থাপনা আরো শত গুন উন্নত,সমৃদ্ধ,সভ্য।সক্রেটিস ছুতোর, কামার ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে প্রশ্ন করতেন, 'তাহলে রাষ্ট্র নামক জাহাজটি বিগড়োলে কাকে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করাবো'হাসান আজিজুল হক (সক্রেটিস) পৃ : ১৬ সক্রেটিসের এ বিখ্যাত কথপোকথন কারো অজানা নয়। আদর্শবান ন্যায়নীতিভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করবার জন্য সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে দেয়া হয়েছিল(বিষ), তারপরও তিনি আইনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন- এটাও ছিল তার নির্ভীক বিদ্রোহ। তাকে বাঁচবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আইনঅবজ্ঞা করেননি, আইনে যদি তার মৃত্যুদন্ড হয় তবে তিনি অবশ্যই তা মানতে রাজি। এখানেও তার সমস্ত জীবনকর্মের অনেক গভীর দর্শন কাজ করেছে। তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল একথা তিনি ও এথেন্সবাসী জানতেন। কিন্তু যে আইনে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো- তিনি সে আইনকে শ্রদ্ধা জানালেন এ অর্থে মানুষকে আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বললেন। সেই আইন কারা তৈরি করছে তা তিনি জানতেন তাতে তো আর আইন নামক বিষয়টিকে জীবন থেকে বিতাড়িত করা যায় না।"পবিত্র কোরানে পাকে ও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধর্মী কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ও সরকার সমুহের আইন মেনে ধর্ম কর্ম করার।এই রুপ রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় শুক্রবারের খতবায় বিশেষ আয়াৎ সংযুক্ত আছে এবং নিয়মিত নামাজের সাথে আর ও কয় রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দেয়া আছে।পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে,গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেনীর মানুষ রাষ্ট্রীয় আইন রীতি নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্ব উচ্চ আদালতের রায়কে ও অমান্য করে হরতাল অবরোধ,প্রকাশ্য আদালতের সমালোচনা করতে।শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামেপ্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রীভর্তি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানবকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা এই সমস্ত আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন,এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন যে আদালতের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেয়া যায়,বক্তব্য দেয়া যায়,তাঁরা কখনই কোন অপরাধীর বিচার কায্য সম্পাদন করেছেন তদ্রুপ কোন উদাহরন নেই। যেমন আমি প্রথমেই বলতে চাই ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছেন রাতের অন্ধকারে।বঙ্গবন্ধুর অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? পৃথীবিপৃষ্টের সব চাইতে নিরাপদ স্থান জেলখানা।সেখানে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাহল,তাঁরা বন্দি ছিলেন, তারপর ও তাঁদের অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকেতুলে নিয়ে জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হল, তাঁদের অপরাধ কি বিচার করে মিমাংসা করা যেতনা? খালেদ মোশারফ., কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য মুক্তি যুদ্ধা সেনা অফিসারকে মেজর জিয়ার নির্দেশে নির্মম নির্দয় ভাবে হত্যা করা হল, অনেককে গুলী করার পর প্রান পাখী উড়াল দেয়ার আগেই জ্যান্ত মাটি চাপা দেয়া হল, তাঁদের বিচার কি প্রচলিত সেনা আইনে করা যেতনা? অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা,আওয়ামী লীগের নেতা,মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারি,ব্লগার,প্রকাশক,লেখক সাহিত্যিক,সাংবাদিক হত্যা করা হল,তাঁদের অপরাধ কি আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতনা?আন্দোলনের নামে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যা করা,সম্পদ নষ্ট করা,লুটপাট করা কি মানবতা বিরুধী অপরাধের আওতায় পড়েনা?মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হতে পারে,যুদ্ধাবস্থা ব্যাতিরেকে ঘোষনা দিয়ে তদ্রুপ কর্মে জড়িতদের এবং হুকুমদাতার বিচার কেন হবেনা? নগদ অপরাধের ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা কি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয়? নাগরীকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁরা কি বিচার পাওয়ার সাংবিধানীক অধিকারের মধ্যে পড়েনা?সেই যুগের সক্রেটিস যদি নীজের উপর আনীত মিথ্যা অভিযোগ জেনে শুনে মেনে নিতে পারেন,সভ্যতার চরম শীখরে দাঁড়িয়ে যারা এই যুগে আইনকে, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্য আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছেন,সম্পদের হানী ঘটিয়েছেন তাঁরা কি সক্রেটিস যুগের আগের অধিবাসি মনে করেন নীজেদের? তাঁরা নীজেরা নিজেদের মনে করুন কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে কোন যুগে ফিরিয়ে নিতে চান?তাঁদের যদি এতই অসহ্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ কিছু আদর্শের প্রতিপালনের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৩০লক্ষ শহিদের আত্মদান,পৌনে চারলাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস- তবে জনগনকে সংঘটিত করে আর একটি গনবিপ্লব ঘটিয়ে তাঁদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষ বাধাতো দিচ্ছেনা। যাদের নেতৃত্বে, যাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল, তাঁরাতো ক্ষমতায় আছে,তাঁদের কেন জোর পুর্বক,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খমতা থেকে নামাতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত করতে দেয়া হবে।এই সেই দিন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যিনি বিতর্ক উত্থাপনের বৃথা চেষ্টা করে জনরোষের আওতার মধ্যে এখনও রয়েছেন,তাঁর সৌখিন বাসভবন পাহারায় আপনার সরকার অতিরীক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে,তিনি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করার প্রসাশনিক অনুমতি পায়। বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্বের একটি দেশের উদাহরন কি কেউ দিতে পারবেন,স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে?একটি দেশকি কেউ দেখাতে পারবে যে,সেই দেশের কোনমীমাংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত কোন সত্যকে ৩০/৪০ বছর পর আবার জনসমক্ষে উত্থাপন করে লক্ষ লক্ষ শহিদ পরিবারের অন্তরের আগুনে"ঘি "ঢেলে দেয়ার চেষ্টা, কোন প্রতিষ্ঠিত দল বা তাঁর নেতা করেছেন? কেন এই পয্যন্ত সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে উলটো সমাবেশ করে তাঁর মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হল??তাঁরা নীজেদের এত ক্ষমতাবান মনে করেন কিভাবে? তাঁরা কি করে আবার জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করার অধিকার পায়?কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েও এখন পয্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন করছেন না? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনার আশ্বাস বাংলার মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে।সুতারাং জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন কল্পে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহনকরবেন, জনগনের এই আস্থা বিশ্বাস এখন ও অটুট রয়েছে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,শাপলা চত্বরের সেই দিনের ষড় যন্ত্র মোতাবেক যদি খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে আসতেন,পরিকল্পনাঅনুযায়ী সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েআপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো,আপনাকে কি জীবিত বাঁচতে দেয়া হত? আপনার পরিবারের কাওন সদস্যকে বাঁচতে দিত?আওয়ামী লীগের থানা উপজেলা পয্যায়ের কোন নেতা কি বাঁচতে দিত? তাঁরা কি সে দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম বিদ্বেষী সরকার উৎখাত করে ধর্মধারি সরকার কায়েমের রাজনৈতিক শ্লোগানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক জননন্দিত এইসংগঠনটিকেও জ্যান্ত কবর দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল না?আমি আজ আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন চরমপন্থী নেতার অবিকল নকল করা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার--,গনতান্ত্রিকদেশে,গনতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে, গনতান্ত্রীক সংগঠনের,গনতন্ত্রের পুজারি মনে করা কোন নেতা, রাজপথে আন্দোলন না করে, সীমাবদ্ধ কক্ষে ৪১দিন অবস্থান করে, ৪২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে,পরবর্তিতে বিচারের সম্মুখ্যিন না হয়ে নিয়মাতান্ত্রীক আন্দোলনের সুযোগ কোন দেশের, কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে, এমন উদাহরন কি কেউ দিতে পারবে?? ষড় যন্ত্রের জাল কোথায় বিস্তৃত ছিল তাঁর প্রমান সেই নেত্রী নীজেই তাঁর উষ্মায় প্রকাশ করে দম্ভস্বরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে বলে ছিল"সেনাবাহিনী বেঈমান"!!!এর পরও আপনার সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনায়ন না করে প্রকাশ্য সভার অনুমতি দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলির মনে আগাত দেয়া হয়েছে আমি মনে করি। গত পৌর নির্বাচনে রায় দিয়েছে তাঁর বিচার করার,তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থই হচ্ছে জনগনের ক্ষোভ তাঁর উপর থেকে এখনও কমেনি,বরঞ্চ কয়েক গুন বেড়ে জনরোষের পয্যায় পৌছে গেছে।আপনার সরকারের তাঁকে দেয়া বাড়তিনিরাপত্তাই তা প্রমান করে।সুতারাং দেশ ও জাতি এই রাজনৈতিক লাশের ভার বইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।দেশের এবং জাতির প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত শিক্ষিত, বিজ্ঞান মনস্ক,প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করার মত গুনাবলি সমৃদ্ধ নেতার। কোন অবস্থায় সক্রেটিসের আগের যুগে জাতি ফেরৎ যেতে চায়না।পরিশেষে বলতে চাই,আর কোন সংগাত নয়,এবার চাই সমৃদ্ধি।আর নয় জঙ্গিপনা,এবার চাই ধর্মনিরপেক্ষতা।আর নয় সাম্প্রদায়ীকতা,এবার চাই অসম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।আর নয় পাকি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা,এবার চাই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন। জয় আমাদের হবেই হবে, অশুভ অপশক্তির পরাজয় অবশ্যাম্ভাবি। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা