মুক্তিযুদ্ধে আমার স্মৃতি===

'মুক্তি যুদ্ধের সময়ে আমি ছোট ছিলাম।ছোট বলতে ৬ষ্ট শ্রেনীতে  বাড়ীর পাশের উচ্চ বিদ্যালয়ে সবে ভর্তি হয়ে মাস খানেক ক্লাস করেছিলাম।সারা দেশ উত্তাল,আমাদের গ্রাম্য হাট বাজারেও সদা সর্বদা মিছিল মিটিং চলছেই।বাজারের পাশে বাড়ী বিধায় বা দেশের চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হোক, সর্বদাই মিছিলে যেতাম।আনন্দ উল্লাস হত,তবে কেন যেতাম তখন মনে হয় বুঝতাম না।
  মার্চের শেষ দিকে মুরুব্বীরা বলা বলি করছিল,ঢাকায় নাকি বহু মানুষ হত্যা করেছে পাঞ্জাবি সেন্যরা।গ্রামের অনেক মানুষ তখন ঢাকায় চাকুরী সুত্রে বা ব্যাবসা সুত্রে বসবাস করতেন।তাদের বাবা মা ভাই বোনেরা হায় হুতাশ,কান্নাকাটি করছিল।তখনকার সময়ে টেলিযোগাযোগ ছিলনা।যাতায়াত ব্যবস্থাও তেমন উন্নত ছিলনা।মরুব্বিরা সবাই জড়ো হয়ে বি,বি,সির খবর শুনতেন রেডিওতে।রেডিও খুব বেশি ছিল না।সারা বাজারে মাত্র দুইটা রেডিও,সেখানেই ভিড় ছিল সবাইর।গ্রামের মানুষ যারা কদাচিৎ বাজারে আসতেন,তাঁরাও ইদানিং বাজারে আসেন, উদ্দেশ্য খবর শুনা।কয়েকদিন পর আমাদের ঈদগাহ ময়দানে অনেক যুবক দেখি ট্রেনিং নিচ্ছেন।আমাদের গ্রামের এক লোক আর্মিতে চাকুরী করতেন,তাঁর নাম ছিল নুরুজ্জমান হাবিলদার।সে প্রত্যহ বিকেল বেলা এলাকার যুবক ভাইদের ট্রেনিং দিতেন।পরে অবশ্য ভদ্রলোক রাজাকারে ভর্তি হয়ে, পাঞ্জাবী সেনাদের সহযোগিতা করেছিলেন।যুদ্ধের পর যাদেরকে তিনি ট্রেনিং দিয়েছিলেন সেই মুক্তিযুদ্ধাদের হাতেই মৃত্যু ভরন করেছিলেন।আমাদের এলাকায় পাঞ্জাবীরা আসতে অনেক দেরী হয়েছিল।পাশেই ২কিলোমিটার ব্যবধানে ভারতীয় সীমান্ত থাকার কারনে লোকজন মনে হচ্ছিল কিছুটা স্বস্থিতেই ছিল।ঢাকা থেকে লোক জন পায়ে হেঁটে অনেকেই ইতিমধ্যে বাড়ী এসে পৌছে গেছেন।তাঁদের মুখে লোমহর্ষক কাহিনী শুনার জন্য এলাকার মানুষ ছুটে যেতে দেখলেই আমিও পিছনে পিছনে চলে যেতাম।বলা প্রয়োজন যে যদিও ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় ছিলাম,শারিরীক ভাবে খুব বেশী ভাল অবস্থায় ছিলাম না।ক্লাসের মধ্যে আমি এবং আমার এক বন্ধু সবার চেয়ে ছোট ছিলাম,অন্যরা সবাই আমাদের থেকে লম্বা এবং স্বাস্থ্যগত দিক থেকে অনেক ভাল অবস্থায় ছিল।আমার আব্বাজান ভারতে গিয়ে এলাকায় পাঞ্জাবি আসার আগেই একটি টিলার উপর ঘর বেঁধে রেখেছেন, আমরা জানতাম না।আমাদের বাড়ী থেকে প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার দক্ষিনে চাঁদগাজীতে মুক্তিযুদ্ধারা নাকি বাঁধ দিয়েছে।অর্থাৎ ব্যারিকেট দিয়েছে,পাঞ্জাবিরা নাকি আমাদের এলাকায় আসতে পারবে না।আমাদের মুরুব্বিরাও এতে দেখা গেল উৎফুল্ল।যার ফলে আগে ভাগে ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি।নিশ্চিন্তমনে সবাই সবার কাজে ব্যাস্ত থেকে যুদ্ধের শেষ পরিনিতির কথাই ভাবছিল।গ্রামের বড়দের সাথে ইতিমধ্যে পাশের ভারতীয় বাজারে এবং তাঁর আসেপাশে কয়েকবার ভ্রমন হয়ে গেছে।পথঘাট সব জানাশুনা হয়ে গেছে।ইতিমধ্যে মহকুমা শহর ফেনী পয্যন্ত পাকিস্তানী বাহিনী চলে এসেছে।মুক্তি যুদ্ধারা বলতে তখন আর্মি, লুলিশ,ই,পি,আরের বাঙ্গালী যুদ্ধারা।তখন ছাত্র জনতা ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধের মাঠে আসেনি।পাকবাহিনী শুভপুর হয়ে আসার চেষ্টা অন্যদিকে ফেনী হয়ে উত্তরে আসার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।মুক্তিযুদ্ধাদের শক্ত অবস্থান চাঁদগাজী থেকে পশ্চিমের বর্ডার পয্যন্ত বিস্থিত।মরন পন লড়াই চালিয়েও মুক্তিযুদ্ধাদের পিছনে হঠাতে পারছেনা।আমরা দিনরাত শুধু আওয়াজ শুনছি বিভিন্ন অগ্নেয়াস্ত্রের।একদিন সকালে হঠাৎ করে রব উঠে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।কে আর কাকে চায়,কে কার দিকে তাকায়।যার যার মত করে যে যেইদিকে পেরেছে সেই দিকে পালায়নপর।।দক্ষিন দিক থেকে পাকি সেনারা মর্টারের সেল আর ব্রাস ফায়ার করে আগেকার ক্যাপ্টেন লিক রোড বর্তমানের( গুগুলের আবদুস সালাম সড়ক) হয়ে এগিয়ে আসছে।মুক্তিযুদ্ধারা প্রানপন বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেও পিছনের দিকে দাবমান।এমনতর অবস্থায় আমাদের পরিবার ভারতের পিলারের সাথে করা ঘরে আশ্রয় নিলাম।সেখানেও অবস্থা বেগতিক চিন্তা করে, আমার বাবা আমাদের ভাইদের চিন্তায় অস্থির।ভাগ্য গুনে কয়েক দিন পর এক হিন্দু ভদ্রলোক এসেছেন আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।পরে জেনেছি পরিবারটি আমাদের পরিবারের সাথে আগে থেকেই খুব ভাল সম্পর্কিত ছিল।আমরা তাঁদের বাড়ীতে গেলাম।তাঁরা আমাদেরকে তাঁদের থাকার ঘরটি ছেড়ে দিল, তাঁরা গোয়াল ঘরে আশ্রয় নিল।আমাদের সাথে আমাদের গ্রামের আর ও এক পরিবারের ঠাঁই হল একই ঘরে।তাঁদের সেই দিনের আশ্রয়ের কথা কখন্ব ভুলার নয়।
  এদিকে পাকিস্থানীরা বিলোনিয়া পয্যন্ত দখল করে নিল।তাঁদের শাষনের মধ্যেও মাঝে মাঝে গোলাগুলি হচ্ছে,কিন্তু সংগঠিত কোন আক্রমন হচ্ছেনা।ইতিমধ্যে বেশ কিছুদিন কেটে গেছে।যে সমস্ত বাড়ীতে লোক জন নেই, পাঞ্জাবিরা ঐ সমস্ত বাড়ী জ্বালিয়ে দিবে এমন খবরে আমার আব্বা আমাকে নিয়ে বাড়ী চলে এসেছেন। আমার বড় চার ভাই এক বোন, ছোট এক বোন মা,চাচারা ভারতে রয়ে গেলেন।আমাদের বাড়ীর পাশেই বাজার আগেই বলেছি,বাজারের লশ্চিমে বড় একটা তহসিল পকুর আছে, একটা ডাক্তারখানা ছিল।সেখানেই পাঞ্জাবীরা ক্যাম্প করেছে।ক্যাম্প করেই রাজাকারে লোক ভর্তি করা শুরু করে।অনেকেই স্বইচ্ছায় রাজাকার হল,অনেককেই ধরে নিয়ে জোর পুর্বক রাজাকারে ভর্তি করা হল, বয়স্ক যারা ছিল,তাদের অনেকেই শান্তি কমিটির সদস্য হয়ে গেল।শান্তি কমিটিতে যারা ছিল, তাঁরা আগে থেকেই গ্রামের প্রভাব শালী মুসলিম লীগ পরিবার ছিল।রাজাকারে যুবকদের মধ্যে অনেকেই ভর্তি হয়ে গেছে।মুক্তি যুদ্ধারা ও ইতি মধ্যে তিন মাসের ট্রেনিং নিয়ে অনেকেই এসেছেন।মাঝে মাঝে আক্রমন পালটা আক্রমন শুরু হয়ে গেছে।এলাকার বেশিরভাগ যুবক গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে এসেছেন।তাঁরা রাস্তায় মাইণ বসানোর কাজ করে, মাঝে মধ্যে রাজাকারদের বাড়ীতে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়।রাজাকার সৃষ্টি হওয়ার পর মুলত মানুষের উপর অত্যাচার লুটপাট,দর্শন ইত্যাদি বেড়ে যায়। একদিন এলাকার কিছু লোক নিয়ে পাঞ্জাবী সেনারা আমাদের বাড়ীতে আসে।আমার বাবা বাহিরে কোথায় ছিল জানিনা।আমি ঘুমে ছিলাম।আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়,উঠে দেখি ছয় সাত জন পাঞ্জাবী সাথে আমাদের এলাকার ৫/৬ জন মানুষ।এলাকার মানুষ দেখে আমি একটু সাহস পেলাম।ওরাযে রাজাকার আমি তা তখনও বুঝে উঠতে পারিনি।একান্ত পরিচিত ছিল সবাই,বাজারে যেতে আসতে আমাকে খুব আদর করতেন তাঁরা।তাঁদের মধ্যে একজন আমার বাবাকে মামা বলে ডাকতেন,তিনি আমাকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করেন, আমার ভাইদের নাম ধরে ধরে তাঁরা কোথায় আছে,আমার বাবা কোথায়।জিজ্ঞাসাটা ধমকের সুরে ছিল বলে আমি একটু আশ্চায্য হলাম।চিন্তা করলাম উনিতো আমাদের আত্মীয়, উনি কেন আমাকে ধমকাবেন।কয়েকবার জিজ্ঞাসার পর আমি স্বিকার করিনি কোথায়,তখন আমি চিন্তায় আনতে পারিনি এরা মুলত পাঞ্জাবি সেনাদের লোক।উনি এলাকার মেম্ভার ছিলেন,নাম তাঁর রশিদ মেম্ভার।উনি কি যেন পাকসেনাদের সাথে কথা বললেন,এসেই আমাদের সব গুলা বসত ঘরে আগুন দেয়ার জন্য উদ্যত হলেন। আমি একান্তই ছোট,তারপর ও কিভাবে যেন বলে ফেললাম আমি আব্বা আসলে বলে দেব আপনি আমাদের ঘরে আগুন দিয়েছেন।এই কথাটা বলার পরই সেই রশিদ মেম্ভার আমাকে সজোরে একটা চড় দিলেন।আমি ঘুরে পড়ে গেলাম।দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল।আমাদের একটা বিল্ডিং ঘর বাড়ীর মধ্যে বাদ বাকী তিনটা মাটির ঘর উপরে টিনের চাউনি ছিল,সব কয়টাতেই আগুন দিল।একটা ঘর ছিল মাটির ওয়াল উপরে টিন,সিলিং ছিল না,ঐ ঘরটাতে তিনবার আগুন দেয়ার পরও আগুন ধরেনি।মাঝখানে বেড়ার পার্টিশান ছিল ঐ পার্টিশানটি জ্বলে নিভে যায়।এখানে বলে রাখা দরকার আমাদের এলাকায় বন্যা,জলোস্বাস হয়না বিধায়  মাটির দেয়ালের ঘর অধিক প্রচলন ছিল।পরবর্তিতে আশেপাশে আমার চাচা জ্যাঠাদের সমুদয় ঘরেই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল।আমাদের সম্পুর্ন বাজারই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।বাজারেও আমাদের ছয়টি দোকান ঘর ছিল,সব গুলি দোকান ঘরে আগুন দেয় রাজাকার এবং পাঞ্জাবীরা।আমার চাচাত ভাই জ্যাঠাতো ভাই সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও আমার ভাইদের মধ্যে একজনও যুদ্ধে যায়নি।যুদ্ধে না যাওয়ার কারনে নীজকে আমার খুব ছোট মনে হয়।আমার বড় ভাই আওয়ামী লীগ বিরুদি ছিলেন, তাই হয়তো কাউকে মুক্তি যুদ্ধে যেতে দেননি,কিন্তু এলাকার মধ্যে সম্পদ হানী সবচেয়ে বেশি হয়েছে আমাদেরই।বড়ভাই যুদ্ধে যাননি বটে, ভারতে পরিবারের সাথেই ছিলেন।যুদ্ধপরবর্তিতে আমার জ্ঞান হওয়া অবদি দেখি আওয়ামী রাজনীতির সাথেই সম্পৃত্ত।ফলত আমরা পরবর্তি সব ভাই আওয়ামী রাজনীতির সংগে জড়িয়ে যাই।
 আমার আব্বা যুদ্ধের পর প্রায় বিশ বছর বেঁচে ছিলেন,এই বিশ বছরই তিনি রশিদ মেম্ভারের ক্ষুঁজ রেখেছিলেন,আর সুযোগ খুঁজছিলেন রশিদ মেম্ভারকে যদি হাতের মুঠোয় পান, তবে জিজ্ঞাসা করবেন তাঁর আদরের ছোট ছেলের গাঁয়ে হাত দিল কেন?আমার আববা আমৃত্যু সেই সুযোগ পাননি।পরে অবশ্য ঐ রাজাকার মানবেতর জীবন যাপন করে খাগড়াচড়ির জঙ্গলে মৃত্যু বরন করেছেন।এক দিনের জন্য ও সে তাঁর জম্ম ভুমিতে আসেননি। আমি আজও ভুলতে পারিনি সেই চড়ের কথাটি।
  দেশ স্বাধীনের পর একদিন বাজার বার ছিল।আব্বা বাজার থেকে বড় সাইজের দুই কুড়ি কলা কিনে আমাকে দিলেন বাড়ীতে নেয়ার জন্য।আমি কলা গুলি দুই হাতে ভাগ করে নিয়ে আসছিলাম।পথিমধ্যে এক মুক্তিযুদ্ধা আমার হাত থেকে এককুড়ি কলা চিনিয়ে নিয়ে গেল।আমি কলা কেন নিয়ে যাচ্ছে জিজ্ঞাসা করায় সেও আমাকে একটা চড় দিল,আমি আশ্চায্য হয়ে গেলাম এই ভেবে,রাজাকারের চড় আর মুক্তি যুদ্ধার চড় দুইটাই কি আমার মত অবুঝ বালকের জন্য বরাদ্ধ ছিল?আমি আজও ভুলতে পারিনা। তবে মুক্তি যুদ্ধার একটা কমেন্ট ছিল"তোদের আগের সেই দিন নাই"।
  মুক্তিযুদ্ধা ভাইটি বহুদিন বেঁচেছিলেন।৩/৪ বছর আগে মারা গেছেন।আমৃত্যু মানুষটি আমাকে ভালবেসেছেন,শ্রদ্ধা করেছেন,অনেক বয়স্ক হলেও সালাম কোনদিন আমি আগে দিতে পারিনি।হয়তো কথাটা তাঁর মনে ছিল,বিবেকের তাড়নায় এমন আচরনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল,অথবা আমি আওয়ামী লীগ করি তাই। মুক্তিযোদ্ধা ভাইটির পদস্থলন হয়েছিল,সে অন্য মুক্তিযুদ্ধাদের মতই বি,এন,পির রাজনীতির সাথে সম্পৃত্ত ছিল।আমি একটা বিষয় তাঁর সম্পর্কে আঁচ করতে পেরেছিলাম,সে যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল,তাঁর সেই স্বপ্ন পূরন হয়নি।তাই শেষ পয্যন্ত আদর্শ চ্যুত হয়েছিল।আমাকে যে কমেন্ট করেছিলেন ঐ কমেন্টে তাঁর স্বপ্ন নিহিত রয়েছে।

৭১এ মুক্তিযুদ্ধের পর আটক রাজাকার আলবদর সদস্যরা, বঙ্গবন্ধুর সাধারন ক্ষমার আওতায়, জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন, তাদের বেশির ভাগ সাবেক বসতি গ্রামে ফিরে না এসে,
ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে নতুন করে বসতি স্থাপন করতে দেখা গেছে।এমন অনেকে দেখা গেছে আত্মীয় স্বজনের মত্যু সংবাদ শুনার পরও, দেখার জন্য নীজ গ্রামে ফেরার চিন্তা করেননি।যদি কখনও কারো সাথে অকস্মাৎ কোথাও দেখা মেলে, বা কারনে অকারনে দেখা হয়ে যায়, তাহলে কেমন যেন চোখ লোকানোর একটা ভাব পরিলক্ষিত হয়।একান্ত পরিচয় দিয়ে আলাপ করতে গেলে,এলাকার বিশেষ কিছু মানুষের সংবাদ সংগ্রহে তাদের বেশি উৎসুক দেখা যায়।ঐ সমস্ত মানুষ গুলি এখন ও জীবিত আছেন, না মারা গেছেন তা জানতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন।
যে রাজাকার মুক্তিযুদ্ধে তার এলাকায় মুক্তিযুদ্ধা পরিবারের উপর নির্যাতন করেছে,বাড়ীঘর পুড়িয়েছে,গরু ছাগল,হাঁস মুরগি ধরে নিয়ে গেছে, তারা এখনও জীবিত আছে কিনা,সেটাই তারা এখন ও নিশ্চিত হতে চায়।এমনিতে কুখ্যাত রাজাকারদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে মারা গেছে বা অনেকে মত্যু পথযাত্রী। এলাকার জন্য তাদের মন কাঁদে এমনটি আমার কাছে মনে হয়নি।সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা দিব্যি সুখেই আছে বলে মনে হল।
গতবছর পাহাড় ঘেরা খাগড়াছড়ি বেড়াতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা আমার নীজের অর্জিত।একাধিক কুখ্যাত রাজা কারের সাথে আমার দেখা এবং কথা হয়েছে।অনেকের নাম জিজ্ঞাসা করে দেখলাম সবাই সবাইকে চেনে- জানে এবং তাদের মধ্যে আন্তঃসংযোগ অত্যান্ত চমৎকার বলেই মনে হল। খবর নিয়ে যতটুকু জানলাম,বেশীর ভাগের সন্তানাদি বি,এন,পি রাজনীতির সাথে জড়িত। অনেকে আবার পাবলিক প্রতিনিধি হয়ে বেশ নামযশ ও কিনেছেন।
অতীতের ইতিহাস ছেলেমেয়েরা জানে
কিনা? এই প্রশ্নটি সরাসরি নাকরে,জানতে চাইলাম, আপনার ছেলেমেয়েরা আপনার আধিনিবাসের খবর জানতে চায় কিনা? এই রুপ প্রশ্নের জবাবে কিছুটা বিচলিত হয়ে উত্তর হ্যাঁ সুচক দিয়ে বলে, ওদের নিয়ে এলাকায় বেড়াতে যাব যাব করেও যাওয়া হয়ে উঠে না।এতে বুঝতে অসুবিধা হয়না যে,এখন ও তারা তাদের '৭১এর কর্মের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মানষিক ভাবে দুবল অবস্থানে আছেন।রাজনীতির বিশ্বাস আগের অবস্থানেতো আছেনই বরং কঠোরতর হয়েছে বলেই মনে হলো।
আমি ঘুরেফিরে যতই জানার চেষ্টা করিনা কেন,তাদের কথা একটাই এইতো অল্প সময়ের মধ্যেই,ভারতের কাছে বাংলাদেশকে বিক্রি করে শেখ হাসিনা বিদেশ পাড়ি জমাবেন।কথাটা তারা বুঝে বলুক আর না বুঝে বলুক "বলাতেই তাদের আনন্দ আমার কাছে মনে হলো"। এইরুপ চিন্তার কারন জানতে চাইলে জাতির জনকের মৈত্রী চুক্তির কথাটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।সাথে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার কথাটা কে জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করেন।এই অশিক্ষিত অধশিক্ষিত লোক গুলো সাজিয়ে কথা বলার মধ্যে,তারা যে দীঘদিনের মুজিব আদশের বিরুদ্ধে বিশেষ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত, এটা বুঝতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।তাদের মারমুখি অবস্থানের কথা চিন্তা করলে মনে হবে,তারা এখনও যেকোন ত্যাগ স্বিকারে  প্রস্তুত।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী কিছুদিন আগে একটি তাৎপয্যপুর্ণ কথাই বলেছেন।
'৯৬ইংসালে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতো তাহলে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তি যুদ্ধের চেতনা কি,ইহাই ভুলে যেত বাংলাদেশের মানুষ।নতুন প্রজম্মের ছেলে মেয়েদের মুক্তিযুদ্ধ সম্মন্ধে জানা তো পরের কথা।
কথাটা যে কতটা প্রনিধানযোগ্য বতমান প্রেক্ষাপট চিন্তা করলেই বুঝা যায়। একবিংশ শতাব্দির বিজ্ঞানের চরম শিখরে দাড়িয়ে,আমরা বিজ্ঞ কিছু মানুষের মুখে শুনতে পাই, এই বুঝি ভারতের দাসত্ব বরন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তি মানে ভারতের দাশ ওই চুক্তি দেশ বিক্রি ইত্যাদি ইত্যাদি।বেগম খালেদা জিয়ার মত নেত্রীরা বা নেতারা যখন বলেন ট্রানজিট চুক্তি হলে বাংলাদেশ ভারতের দাসত্ব বরন করবে।"অশিক্ষিত হলেও তিনি একটা বড়্র রাজনৈতিক দলের নেত্রী। একাধিকবার বাংলাদেশের রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার এবং রাস্ট্র পরিচালনা করার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ।তার মুখে যদি
এমন একটা অর্বাচিনের মত কথা বের
হয় তাহলে সাধারন একটা মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ আছে বলে আমি মনে করি না।'১৯৬৫ইং সালের আগে,অর্থাৎ ভারত পাকিস্থান যুদ্ধের আগে পয্যন্ত সড়ক,রেল,নৌপথে ভারতের সাথে সংযোগ বিদ্যমান ছিল,তখন কি দেশ বিক্রি হয়ে যায়নি?নেপাল ভুটান ও সার্ক ভুক্ত অন্য দেশসমুহের সাথেও যদি এই কানেক্টিভিটি কায্যকর হয়, তাহলে একা ভারত কিভাবে বাংলাদেশ কিনে নিবে?অন্য সবাইকে ভাগ দেয়া ছাড়া?এই সড়কে বাংলাদেশের যে পন্য আমদানী রপ্তানী হবে তার কি হবে?বাংলাদেশ এত সস্তা কি ভাবে হল, যে কোন সময়ে ভারত কিনে পেলে বা সহজে আমরা বিক্রি হয়ে যাই?
বাংলাদেশ নামক এই ছোট্র ভুখন্ডটি
অজন করতে যে মুল্য আমাদের দিতে
হয়েছে তা বিশ্বের আর কোনদেশ কিনতে কি দিতে হয়েছে?পৃথিবীর একটি দেশকি খুজে পাওয়া যাবে,যেদেশ তাদের ভাষার জন্য রাজপথে তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে?পথিবীর একটা দেশকি খুঁজে পাওয়া যাবে,যে দেশ স্বাধীন করতে তাদের মা বোনের জীবনের মুল্যবান সম্পদ হারাতে হয়েছে?তারপরও স্বাধীনতার এত বছর পরও পুরাতন মদ নতুন মোড়কে  বিক্রির চেষ্টা কেন করা হয়?এই দেশটা কি তাঁরা উন্নত দেশে রুপান্তরীত হোক চায় না?

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন