জাতির জনক ও দেশরত্মকে বাংলাদেশের গন্ডিতে আটকানো যাবে না।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ৭৫ইং আমৃত্যু পয্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতারা স্রেফ জাতির জনক হিসেবে জানতো।কিন্তু তিনি কত বড় মাপের দার্শনিক,চিন্তাবীদ,রাষ্ট্র নায়ক,সমাজ সংস্কারক,ধর্ম সংস্কারক ছিলেন তা গুনাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি।যদি পারতেন তাহলে পালাকরে নেতাকর্মিরা বঙ্গবন্ধুকে পাহারা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতেন।বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যখন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র নায়কগন,দার্শনিক,চিন্তাবীদগন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে গভেষনা করা শুরু করেছেন,প্রত্যহ নতুন নতুন দিক উম্মোচিত করা শুরু করেন তখনি বোধদয় হয়,মুলত:দেশ কি হারিয়েছে,কাকে হারিয়েছে।দলের জন্য জাতির জনকের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ছিল।যখন জ্ঞানে এসেছে তখন বিবেক শুন্য হয়ে,ক্ষমতায় যাওয়ার বাহন হিসেবে জাতির জনককেই দলীয় গন্ডিতে আবদ্ধ করে পেলেছেন।একটা বিষয় শুধু চিন্তা করলে আমাদের বাঙ্গালী জাতির ভুল অনেকটাই কমে যেত।ভারতীয় উপমহাহাদেশে এবং কি পাকিস্তানেও বহু ভাষাবাসির জনগোষ্টি বিদ্যমান।৪৭/৪৮ইং থেকেই প্রায় জাতি গোষ্টি স্বাতন্ত্রতার জন্য লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।অদ্যাবদি কোন জাতি গোষ্টি কি সফলতার দ্বারপ্রান্তে যেতে পেরেছে?বাঙ্গালী জাতির মধ্যে এত বিবেদ থাকার পরও কোন যাদুর স্পর্ষে আজ থেকে ৪৫বছর আগে স্বাতন্ত্রতা শুধু নয়,স্বাধীনতাই পেয়ে গেছে?আওয়ামী লীগ যাকে শুধু বাংলাদেশের জাতির জনক,বাংলাদেশের রাষ্ট্র নায়ক ভেবেছে,বিশ্বের নির্যাতিত নীপিড়িত মুক্তিকামী জনগন তাঁকেই মুক্তির দিশারী,সংগ্রামের প্রেরনা হিসেবে স্বরন করে।বাঙালী ইচ্ছে করলেও বাংলাদেশের গন্ডিতে বঙ্গবন্ধুকে ধরে রাখতে পারবে না।যেমন পারেনি চিলির আলেন্দেকে,ভারতের মহত্মা গান্ধীকে,নেলসন ম্যান্ডেলাকে।
  তদ্রুপ দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে শুধু আওয়ামী লীগের নেত্রী বা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী চিন্তা করেন যারা--তাঁরা বোকার স্ব্রর্গে বাস করেন।শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী যদি হতেন মাত্র ৬/৭বছরের মধ্যে কোন যাদুর বলে ভিক্ষুক জাতীকে মধ্যম আয়ের জাতিতে রুপান্তরীত করলেন।এত লুটপাট,এত অব্যবস্থাপনা,এত সহিংসতা,এত অবরোধ উপেক্ষা করে, কি করে দেশকে এত দূর নিয়ে গেলেন।বিনা ভোটে বা নামমাত্র ভোটে জীতে দেশে বিদেশে সমর্থনতো ধরে রেখেছেনই বরঞ্চ অনেক ক্ষেত্রে কয়েক গুন বাড়িয়ে নিয়েছেন।এটা আমার কথা নয়, জরীপের কথা।

""আরআইআর-এর জরিপের ফল এবং চলমান রাজনীতি।
বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫,ভোরের কাগজ সহ দেশী বিদেশী প্রায় পত্রিকা""

"মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) পরিচালিত বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র বিষয়ের জরিপ প্রতিবেদন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে গত শুক্রবার ৪ সেপ্টেম্বর। ২০ মে থেকে ১০ জুনের মধ্যে ১৮ থেকে বেশি বয়সের গ্রাম ও শহরের ২ হাজার ৫৫০ জন নরনারী এই জরিপে অংশ নেয়। এর অর্ধেক ছিল নারী ও অর্ধেক পুরুষ। জরিপের বিষয় ছিল ৭টি এবং জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ গ্রাম আর ২৬ শতাংশ শহরে বসবাসকারী। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে জরিপ চালিয়ে আসছে।

জরিপের ফলাফলে বের হয়ে এসেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অবস্থা প্রভৃতি দিকগুলোতে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বেড়েছে। জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন যথাক্রমে ৬৬ ও ৬৭ শতাংশ। দেশের সম্ভাবনার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে ৬২ শতাংশ মনে করছেন, দেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। এ ছাড়া ৭২ শতাংশ মনে করেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ইতিবাচক, ৬৮ শতাংশের মতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো এবং ৬৪ শতাংশ মনে করেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন র্যাব আদালত, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের কাজের প্রতি যথাক্রমে ৮৬, ৭৬, ৭৩, ৫৯, ৮৩ ও ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক সমর্থন দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন ও বিরোধিতার হার ৬০ ও ২৯ শতাংশ। বিএনপির প্রতি এই হার যথাক্রমে ৪২ ও ৪৬ শতাংশ।
প্রসঙ্গত উল্লিখিত সব ক্ষেত্রে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা এবং বিরোধী দলের প্রতি অনাস্থার দিকটা বুঝে নিতে সম্পূর্ণভাবে জরিপের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই। মানুষ সমাজে থাকে, চলে, ফিরে, কাজকর্ম করে। এসবের ভেতর দিয়ে রাজনৈতিক মতামতও আদান-প্রদান করে। তাই সাধারণ মানুষ জরিপ না হলেও সব কিছু অনুধাবনে নিতে পারে। প্রবাদ এ জন্যই বলে, মার কাছে মাসির গল্প বলে লাভ নেই। তবুও গল্পের অনেক সময়েই প্রয়োজন পড়ে।
এবার তিন জন বিদেশীর চোখে বাংলাদেশের চিত্রের সংক্ষিপ্ত বিবরনী হুবহু তুলে দিলাম====
বাংলাদেশ সম্পর্কে দুই ইউরোপীয়ের পর্যবেক্ষণ
সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসেন। সম্প্রতি ইউরোপের দুটি দেশের দুজন, একজন পণ্ডিত এবং একজন সাধারণ নাগরিক, সফরে এসে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন।

জাতীয় বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে ড. ভিটালি নাওমকিনের একটি সাক্ষাৎকার ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে। এ সাক্ষাৎকারে ড. নাওমকিন বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি সাধন করেছে, তাতে আমরা বিস্মিত হয়েছি। কারণ স্বাধীনতার সময় দেশটি অত্যন্ত দরিদ্র ছিল, এর সমস্যার শেষ ছিল না। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে গেছে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ, কিন্তু এর আয়তন সে তুলনায় খুবই কম, মাত্র ১ লাখ ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। রাশিয়া পৃথিবীর বড় দেশ, আয়তন ১ কোটি ৬৩ লাখ ৭৭ হাজার বর্গকিলোমিটার, বাংলাদেশের চেয়ে ১৬৩ গুণ বড়। সেই রাশিয়া লোকসংখ্যাও বাংলাদেশের চেয়ে কম, ১৪ কোটি মাত্র। এতটুকু একটা দেশে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর টিকে থাকাই তো কঠিন ব্যাপার কিন্তু বাংলাদেশ ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। এ দেশে এখন প্রায় শতভাগ ছেলেমেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। আমার মতে, বাংলাদেশের এই সাফল্য অত্যন্ত লক্ষণীয় একটি ব্যাপার।’
হাঙ্গেরীয় ভদ্রলোক এ দেশ সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছেন। ৩ সেপ্টেম্বর জন্মাষ্টমী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। এছাড়া এ উপলক্ষে দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং বিরোধীদলীয় নেতা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বাণী দিয়ে থাকেন। এ বছরেও দিয়েছেন। সরকার প্রধান এবং রাষ্ট্র প্রধান এভাবে বিশিষ্ট হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এ কথা শুনে ভদ্রলোক অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে খানিকক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘দ্য জন্মাষ্টমী ইজ ফর হিন্দুস বাট দ্য হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট এন্ড হেড অব দ্য স্টেট আর অ্যারেঞ্জিং রিসিপশনস অন দিস অকেশন ফর দ্য হিন্দু কমিউনিটি?’ আমি ভদ্রলোককে বললাম, ‘ইট ইজ দ্য ট্রু স্পিরিট অব আওয়ার লিবারেশন ওয়্যার। ইন নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান, হোয়েন অল বেঙ্গলিজ, ইরেসপেক্টিভ অব রিলিজিয়ন, হ্যাড বিন ইউনাইটেড আপন দ্য কল অব আওয়ার গ্রেট লিডার, ফাদার অব দ্য ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
"উপরের কথোপকথটি অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী : চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।"
"ওবামার মুখেও ডিজিটাল বাংলাদেশ
সোমবার, ৩১ আগস্ট ২০১৫ভোরের কাগজ===
ধনে ও মানে এখন আমাদের বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। যার মর্যাদাকর স্বীকৃতি এখন খোদ এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি অপবাদ দেয়া মানুষরাই অকপটে দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক। সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার পিতৃদেশ অর্থাৎ বাবার দেশ আফ্রিকার কেনিয়াতে ব্যক্তিগত ঢঙয়ে এক সরকারি সফর করেছেন। সেখানেই তিনি বিশ্বে বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন ও উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য রাখার সময় আমাদের বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে অন্যতম মডেল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সে সঙ্গে অন্যান্য অনেক সফল কাজের সঙ্গে বিশেষত বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যবস্থার অভূত ও অভাবনীয় উন্নয়নকে যুগান্তকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা কিনা কেনিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।"

"একই মন্তব্য অবশ্য কম্পিউটার প্রযুক্তিকে বিশ্বের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে দিয়ে যিনি নিজেও একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, সেই তথ্যপ্রযুক্তির মহামানব বিশ্বের একনম্বর ধনী ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত মাইক্রোসফটের স্বত্বাধিকারী বিল গেটসও বলেছেন।
কেন, কিভাবে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে এই ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করল সেটি খোঁজার জন্য একটু পেছনে যেতে হবে। আমরা একটু অতীতের কথা স্মরণ করলেই মনে পড়বে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের সমুদ্র উপক‚লে অবস্থিত পর্যটন নগরী কক্সবাজারের পাশ দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিকে গ্লোবালাইজ করার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ক্যাবল সংস্থাপন হওয়ার সময় ওই অবকাঠমোতে আমাদের বাংলাদেশকে বিনামূল্যে সংযুক্ত করার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু তখন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর আমাদের দেশীয় বিশেষজ্ঞ কর্তৃক সাবমেরিন ক্যাবলের সুযোগ-সুবিধা এবং এর সুফল সম্পর্কে বিষয়টির সপক্ষে জোরালো মতামত দেয়ার পরও দেশের তথ্য পাচার হয়ে যাবে এরকম একটি আত্মঘাতী ভীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে সেসময় তাতে যুক্ত করা হয়নি। অথচ একটি ভুলের কারণে এতদিন পরেও এখনো মিলিয়ন-বিলিয়ন অর্থ খরচ করেও আমরা সে লক্ষ্যে পুরোপুরি পৌঁছাতে পারিনি যা আগে খুব সহজেই হাতের নাগালে পাওয়া যেত। শুধুমাত্র একটি সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য এমনটি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। সে সময় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে এতদিনে দেশ ডিজিটালের পথে আরো অনেকদূর এগিয়ে যেত এতে কোনো সন্দেহ নেই।"

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা না থাকলে কী হতো বা হতে পারে, ভাবলেও শিউরে উঠি। তার উপস্থিতি ধীরে ধীরে অর্জিত প্রজ্ঞা ও নেতৃত্ব এখন এই দেশ ও জাতির বড় সহায়। তিনি যে দৃঢ়তার সঙ্গে চলছেন তাতে তার যত ক্ষতি হোক না কেন দেশ ও জাতির লাভ বা মনোবল দৃঢ় হচ্ছে। এখন তার শক্ররও কমতি নেই। এককালে বিএনপি-জামায়াত শত্রু ছিল এখনো আছে যোগ হয়েছে নব্য উৎপাত, সুশীল নামের এক আজব শ্রেণি। এদের চাওয়া-পাওয়া কিংবা হিসাব-নিকাশের দিকটা বোঝা কঠিন। এক সময় দেখতাম এরা জাতির বিবেক সাজার অভিনয় করত, বড় বড় কথা মুখে আদর্শের বুলি আর পোশাকে সাদামাটা অথচ জীবনে ভোগী। এই ভোগী মানুষগুলোর আসল চেহারা বেরিয়ে এলো সংকটকালে।
ফরহাদ মজহারের মতো একদা বাম, হরি কীর্তন গাওয়া পায়ে ঘুঙুর বাঁধা মানুষ হয়ে উঠলেন ঘোর ডান। বিলেতে থাকাকালীন এমনকি দেশে এসেও প্লেবয় খ্যাত শফিক রেহমানের কাণ্ড দেখুন। দেশের তারুণ্যে প্রবাসী অভিজ্ঞতা ও খোলা জীবনের অতীত সম্বল করে যৌনতা ছড়িয়ে দেয়ার মানুষটিও কেমন বদলে গেলেন। যার চলনে-বলনে গোলাপ বিনিময়ে কামগন্ধ সে লোক নামলেন মৌলবাদের পক্ষে।এত বড় এমজংগানী মানুষ অশিক্ষিত,বদমেজাজী খালেদা জিয়ার পদলেহন করতে বিবেকে বাঁধেনা।পান্ডিত্য জাহির করার জন্য  তিনি এখন খালেদা জিয়ার বক্তৃতা লেখক। সেটা দোষের কিছু না, তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রীর একজন ভাষণ লেখক থাকতেই পারে।জাতির এই পরগাছা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়েও ব্যঙ্গ করতে হবে? সবাই জানেন সুর তালে স্লোগান জমে ওঠে। এ জন্য ভাঙা শব্দ বা স্বল্প বাক্যের জায়গাটি টেনে অন্যটির সঙ্গে জুড়ে দিতে হয়। সে কারণে ‘জয় বাংলা’কে ‘জয়-য়-য় বাংলা’ বলারও রেওয়াজ আজকের নয়,স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হতে জোর পাওয়ার জন্যে কন্ঠে দিয়ে আসছে। এই জ্ঞান পাঁপি শফিক রেহমান সেটুকু মেনে নিতে পারেননি। ব্যঙ্গ করতে গিয়ে শালীনতাহীনভাবে একে ‘জয় লম্বা বাংলা’ বলতেও কলম কাঁপেনি বিবেকে বাঁধেনি।এই পেইড সুশিলদের   ষড়যন্ত্র করার  অপচেষ্টা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা বা অবদান জামায়াত -বিএনপির রাজনৈতিক নেতাদের চাইতেও ভয়ঙ্কর। আজকাল আরেক উৎপাতের নাম টকশোজীবী। দুচারটে ভালো টকশো বাদ দিলে সরকারের নিন্দা আর খেয়ে না খেয়ে আওয়ামী বিরোধিতাই এদের শেষ সম্বল। এতসব গণ্ডগোল মিডিয়ার ষড়যন্ত্র, দেশি-বিদেশি লবিং আর অর্থের প্রতাপ এড়িয়ে লড়ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সে তাঁকেও শান্তি, স্বস্তি দিচ্ছেন না নিজ দল ও জোটের বখাটে কিছু নেতা। এদের কেউ কেউ মন্ত্রীও বটে। আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু না থাকলে কপালে মন্ত্রিত্ব দূরে থাক এ দেশে করে খাওয়াটা যাদের দুঃসাধ্য ছিল, তারাও এখন মুখে মুখে জগতের সেব বাঘ মেরে একাকার করে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত।আমার কথা নয় মানুষের  বিশ্বাস ও ধারণা ছিল মানুষ যখন ওপরে ওঠে, তখন তার সবকিছু মার্জিত ও শালীন হয়ে পড়ে,অভদ্র ও ভদ্রের খাতায় নাম উঠানোর চেষ্টা করে।কিন্তু আমাদের তারা বিপরীত। তাদের কাছে আমজনতার চাওয়া খুব বেশি কিছু নয়। মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তা চায়। তাদের জীবনকে সুন্দর বা সচ্ছল করতে না পারলেও তারা বিগড়ে যায় না। এবার দেখছি ঠিক তার উল্টো। অকারণ কথা আর বিবেচনাহীন সিদ্ধান্তে বিরোধী দলহীন রাজনীতির মাঠে এ সরকারে খুঁটি নাড়িয়ে দিচ্ছেন এরা। অকারণে রাজপথ উত্তপ্ত করে তোলা মধ্যবিত্তের সন্তানরা আপাতত ঘরে ফিরে গেলেও এর রেশ কিন্তু বহুদূর যাবে। ভাষার আন্দোলন থেকে কিন্তু স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন,ভুলে গেলে চলবেনা। এ কথা বলতে পারি এর একটা মাসুল আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। এটা গ্রামবাংলার চাষি বা শহুরে শ্রমিক আন্দোলন ছিল না। প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ রাগী একরোখা প্রাণ দিতে প্রস্তুত। কিন্তু অসংঘবদ্ধ, শহুরে মধ্যবিত্ত ও রাজধানী কেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতা অনেক বেশি। তারা বাইরে যেমন হোক ভেতরে একাট্টা। বন্ধন বা শৃঙ্খলা ও স্বার্থের। ফলে আগামী যে কোনো নির্বাচনে এর কুপ্রভাব পড়বেই।
প্রশ্ন হচ্ছে ঝানু, অভিজ্ঞ, বয়স্ক একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে কেন আমরা বিবেচনাবোধ পেলাম না। গরম গরম আর তির্যক কথা বললেই কি কেউ সফল হয়ে যায়? ঘটনার ব্যাখ্যা, যৌক্তিকতা, কে আসলে দায় মেটাবে, কে বেনিফিশিয়ারি কিছুই পরিষ্কার করা হয়নি। মাঠ পর্যায়ে এমন পরাজয় শেখ হাসিনার সরকারের জন্য শুভ হতে পারে না। অন্যদিকে কেউ কেউ ধরে নিয়েছেন প্রতিদিন দুচারটে বিএনপিবিরোধী গরম কথা, খালেদা জিয়া ও তারেকের গুষ্টি উদ্ধার করলেই পদপদবী নিরাপদ। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিদিন নবায়ন কিন্তু ভালো ফল বয়ে আনবে না।জননেত্রী ঠিকই বুঝেন কোন সংলাপ তেলবীজের কোন সংলাপ রাজনীতির। শেখ হাসিনার সরকার বা তাকে সমর্থন ও শক্তি জোগানোর মূল কাজটি কিন্তু কঠিন। জনগণের যে অংশে গুজব হতাশা আর ষড়যন্ত্র কার্যকর সেদিকে নজর দিতে হবে। ভেবে পাই না এমন সময়ে তোফায়েল ভাই, আমু ভাই বা বর্ষীয়ান আওয়ামী নেতারা কেন কিছু বলছেন না। তাদের হস্তক্ষেপ এবং নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা পাশে দাঁড়ালেই শক্তি আসবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু ও শাস্তিদানের পর থেকে এক বিশাল ষড়যন্ত্র চলছে। যেখানে নতুন করে সংখ্যালঘু, ব্লুগার হত্যা, জাসদ বিতর্ক বা ভ্যাট রহস্য মানে গোদের উপর বিষফোঁড়া। এগুলো বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যৎ ছেড়ে কথা বলবে না।২০০১ এর কথাটা সব নেতা কমকরে হলেও সপ্তায় একবার মনের মধ্যে নিয়ে আসা উওচিৎ,তাহলে অনেকেই সংযত কথার বাক্য জোগাড় করতে পারতেন।সব কথার শেষ কথা হল প্রধান মন্ত্রী যেন কখনই একাকিত্ব বোধ না করতে পারেন সেই দিকেই আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। তিনি যেন কখনো একা হয়ে না পড়েন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেমনি তাঁর যুগান্তকারী দর্শনের সুবাদে বিশ্বের মুক্তিকামী জনতার প্রেরনার উৎসে পরিনত হয়েছেন,তেমনি তাঁর যোগ্যকন্যা দরিদ্র বাংলাদেশকে উন্নতির শীর্ষ শিখরে যে মন্ত্রের গুনে নিয়ে গেছেন, সেই ডিজিটাল রুপকল্পের প্রনেতা,বাস্তবে প্রয়োগ করে শতভাগ সফলতার গুনে বিশ্বের বহু দরীদ্র পীড়িত জাতি গুষ্টির অনুকরনীয় অনুস্মরনীয় দৃষ্টান্তে রুপান্তরীত হচ্ছেন এবং হবেন।
জাতীর জনককে হারিয়ে জাতি যেমন শোকের সাগরে ভাসছে,দেশরত্মকে হারালেও জাতি একই ভাবে আপসোসের সাগরে নিমজ্জিত হবে।হাজার বছরেও স্বপ্নচারী,  দৃডচেতা,দুরদর্শী,আকাশসম হৃদয়ের অধিকারী রাষ্ট নায়ক বাঙালী জাতির অদৃষ্টে পাওয়া যাবে কিনা তা একমাত্র অনাগত ভবিষ্যতই বলতে পারবে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন