মুক্তি যুদ্ধের অহংকার ও বিপর্যস্ত চেতনা।

'৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙ্গালীর কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন।এই যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল ধর্ম,বর্ন, জাতিসত্বা নির্বিশেষে  দেশের সর্বস্তরের মানুষ।'১৯৭১ সালের ১৬ই দিসেম্ভর মুক্তিবাহিনী ভারতীয় যৌথ বাহিনীর নিকট পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় তিরানব্বই হাজার সৈন্য আত্মসমর্থন করে।যারা ইসলামের দোহাই দিয়ে হত্যা করেছে তিরিশ লক্ষ নিরীহ নিরস্ত্র  মানুষ,দর্শন করেছে প্রায় সোয়া চার লক্ষ বাঙ্গালী নারী,ধ্বংশ করেছে হাজার হাজার জনপথ।পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর যুদ্ধারাধির প্রধান দোষর ছিল এদেশীয় জামায়াতে ইসলামী,যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ইয়াহিয়া সামরীক জান্তার যাবতীয় দুষ্কর্মের সহযোগীতারভপাশাপাশি নিজেরাও  উদ্যোগি হয়ে রাজাজাকার,আলবদর,আলশামস,প্রভৃতি ঘাতক বাহিনী গঠন করে। আমাদের দুর্ভাগ্য,৭১ এ যে জামায়াতে ইসলামী স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় নস্যাৎ করবার জন্য গনহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের মতো নৃসংসতম অপরাধ করেছিল তারা এখন বি,এন,পির ক্ষমতা লিস্পার সুযোগ নিয়ে জোটের অন্যতম অংশিদার।
  '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ শুধুমাত্র একটি পতাকা কিংবা জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের যুদ্ধ ছিল না বলি যখন মুক্তি যুদ্ধ বলি তখন বুঝতে হবেসর্বস্তরের মানুষ এই যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিল সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়।১৯৪৭ সালে বৃটিশ উপনিবেশিকের অবসান ঘটেছিল ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে ভারত বর্ষকে দ্বিখন্ডিত করে ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের মাধ্যমে।পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন ভারত বর্ষে হিন্দু ও মসুল্মান দুটি আলাদাজাতি,তারা একদেশে তাঁরা একদেশে থাকতে পারেনা।তাঁর এ দাবী বৃটিশ শাসকেরা লুফে নিয়েছিল,কারনবৃটিশদের ঔপ্নিবেশের মুল নীতি ছিল--শাসনের জন্য বিভাজন।ভারত বর্ষে মসুল্মান্দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মুল্য দিতে গিয়ে শত সহস্র মানুষ জীবন দিয়েছে,লক্ষ লক্ষ সম্পন্ন মানুষ ভিটেছাড়া হয়েছে,কত পরিবার দেশ ছাড়া হয়েছে, কোটি কোটি মানুষের জিবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্যোগ।
জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্বের ধারনা কতযে ভ্রান্ত অর্থহীন,রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত ছিল তার পরিচয় পাওয়া যাবে পাকিস্তানের আইন সভার প্রথম সভাপতি হিসেবে প্রদত্ত তাঁর ১১ই আগষ্ট ১৯৪৭ ইং তারিখের ভাষনে।এই ভাষনে তিনি বলেছিলেন,'আপনারা যে কোন ধর্ম,বর্ন ও বিশ্বাসের অনুসারী হতে পারেন,এর সঙ্গে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই।আপনারা দেখবেন,সময়ের ব্যবধানে হিন্দু আর হিন্দু থাকবেনা,মসুল মান  আর মসুলমান থাকবেনা--- ধর্মীয় অর্থে নয়,কারন এটা ব্যাক্তিগত বিশ্বাসের অন্তগত,এটা হবে রাজনৈতিক অর্থে,রাষ্ট্রের নাগরীক হিসেবে।
জিন্নাহর এই বক্তব্য নি:সন্দেহে স্যেকুলার গনতান্ত্রিক হয় তাহলে সেখানে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ও হানাহানি থাকেনা।জিন্নাহর এই বক্তব্যই নাকচ করে দেয়,ভারত বর্ষের সংখ্যালঘু মসুলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের তত্ব। খন্ডিত পাকিস্তানে যদি ধর্ম বর্ন  বিশ্বাস নির্বিশেষ সব মানুষ সমান অধিকার ও মার্যদা নিয়ে বাস করতে পারে অখন্ড ভারতবর্ষেও তা সম্ভব ছিল,নেতারা যদি সাম্প্রদায়িক বিরোধের সমাধান সাম্প্রদায়িক হানাহানির মধ্যে না খুঁজে সেক্যুলার মানবিকতা ও গনতন্ত্রের ভেতর অনুস্নধান করতেন।
সাম্প্রদায়িক স্বার্থের কথা বিবেচনা করলেও ধর্মিয় দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি ভারত বর্ষের মসুলমানদের অবস্থান সামগ্রিক ভাবে বিপন্ন করেছে। পাকিস্তান নামের সময় ভারত বর্ষের মসুলমানদের ভেতর এমন এক উম্মাদনা সৃষষ্টি করা হয়েছিল যে,তাঁরা মনে করেছিল পাকিস্তান শুধু তাঁদেরই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে,পাকিস্তানে গেলে তাঁদের রাতারাতি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়ে যাবে।যার ফলে তাঁদের অনেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাকিস্তানে এসে প্রথমেই অমসুলমান বিতাড়নের জেহাদে নিয়োজিত হয়েছে।এর পাশাপাশি ভারতের বহু জায়গায় সাম্প্রদায়িক মনোভাপান্ন হিন্দুরা দেশত্যাগে অনিশ্চুক বহু নিরীহ মসুলমানকে পাকিস্তানে চলে যেতে বাধ্য করেছে,ভেবেছে ভারতে মসুলমানরেরা না থাকলে তাঁদের অবস্থা ভাল হবে।
জিন্নাহর পাকিস্তান কিছু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটালেও এতেব্বিপুল সংখ্যাগরিষ্টের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি,হিন্দু--মসুলমান নির্বিশেষে বহু মানুষের জীবন জীবিকা ধ্বংশ করেছে।মসুলমানদের জন্য স্বতন্ত্র পাকিস্তান ভারতের সংখ্যালুঘু মসুলমানদের আরও সংখ্যা লঘু ও প্রান্তিকিকরন করেছে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পুর্ব বাংলার যেসব বাঙ্গালী মসুলমানের আবেগ উচ্ছাস ও স্বপ্ন কম ছিল না তাঁদের ও মোহ ভঙ্গ হয়েছে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ছয় মাসের মধ্যেই।পাকিস্তানের আইন সভায় ৪৮ ইং সালের ফেব্রুয়ারীতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবী করেছিলেন উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃৃতি প্রদানের জন্য।প্রধান মন্ত্রী লিয়াকত আলী খাঁন থেকে আরাম্ভ করে সরকারী দলের বাঙালী সদস্যরা পয্যন্ত তাঁর এই দাবী নাকচ করে দেন।পাকিস্তানের নেতারা এতে  দেশকে বিচ্ছিন্ন করার ভারতীয়  ষড়্যন্ত্রের গন্ধ আবিষ্কার করেছিলেন।২১শে মার্চ '৪৮ ইং তারিখে ঢাকায় এক জনসভায় জিন্নাহ স্পষ্ট করে বললেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা শুধু উর্দুই হবে। যারা এর বিরোধিতা করবে তাঁদের পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে গন্য করা হবে।।পাকিস্তানের প্রতিয়াশঠাতার বাংলা ও বাঙালী বিদ্বেসি এই মনোভাবের ভেতর নিহিত ছিল পাকিস্তানের ভাঙ্গন ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সংকেত।
বাংলাদেশের ছাত্র ওযুব সমাজ ৪৮ এর জনসভাতেই জিন্নাহর স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রতিবাদ করেছিল।এই প্রতিবাদের মাধ্যমেই সুচিত হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন।মাতৃভাষার মার্যদা প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালী অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবী শুধু ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালির আত্মপরিচয়ের চেতনা বিকশিত হয়,যার যৌক্তিক পরিনতি হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।বিশ্বের মাঞ্চিত্রে বাঙালীর প্রথম স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র,বাঙালীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অহংকার।  
(চলবে)
                শাহরিয়ার কবির,মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইবস থেকে সংগ্রহ।  ধারাবাহিক ভাবে দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যাতত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ঐতিহ্যে বিতর্ক উত্থাপনের অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করে,মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার মত দৃষ্টতা দেখিয়ে নি:সন্দেহে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এহেন গর্হিত বক্তব্য প্রদানকারী বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখতে পারেননা।মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কোন দল বা জোটের রাজনীতি করারঅধিকার নীতিগতভাবেই থাকতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সকল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে সর্বচ্ছ আদালতের রায় অনুযায়ী '৭২এর সংবিধান অবিকল বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।বাংলাদেশেরজনগন চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক,মুক্তিযুদ্ধে সাগরসম রক্ত ঢেলে সেই অঙ্গিকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাসকরে,পরাধীনতার গান শুনতে দেশ স্বাধীন করেনি বাংলার জনগন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বিরামহীন সংগ্রামের ফসল মুক্তিযুদ্ধ।সেইযুদ্ধে উপনিবেশিক পাকিস্তানের আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালীরা পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিল।সেই স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেপরাজিত শক্তির দোষর,তাঁদের প্রেতাত্বাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।জাতির জনক তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রাজাকারের কোন স্থান দিতে চায়না। তাই খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমুলক সাজার আশা পোষন করে।কোন রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁদে যেন এই মামলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাঁর গ্যারান্টিও সরকারের নিকট বাংলাদেশের জনগন চায়। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু Ruhul Amin ------------------------------ খালেদা জিয়াকে সমাবেশের অনুমতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আশাহত----04 /01 / 0016 ইং পোষ্ট -==================================প্রখ্যাত দার্শনিক,চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে কম বেশি আমরা সবাই জানি।সক্রেটিস কোন যুগে জম্মগ্রহন করে মানব সেবায় ব্রতি হয়ে আজও দেশে দেশে অনুকরনীয় অনুসরনীয় হয়ে আছেন তাও আমরা জানি।নিশ্চয়ই তখনকার সময় থেকে বর্তমানের সমাজ, রাষ্ট্রব্যাবস্থাপনা আরো শত গুন উন্নত,সমৃদ্ধ,সভ্য।সক্রেটিস ছুতোর, কামার ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে প্রশ্ন করতেন, 'তাহলে রাষ্ট্র নামক জাহাজটি বিগড়োলে কাকে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করাবো'হাসান আজিজুল হক (সক্রেটিস) পৃ : ১৬ সক্রেটিসের এ বিখ্যাত কথপোকথন কারো অজানা নয়। আদর্শবান ন্যায়নীতিভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করবার জন্য সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে দেয়া হয়েছিল(বিষ), তারপরও তিনি আইনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন- এটাও ছিল তার নির্ভীক বিদ্রোহ। তাকে বাঁচবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আইনঅবজ্ঞা করেননি, আইনে যদি তার মৃত্যুদন্ড হয় তবে তিনি অবশ্যই তা মানতে রাজি। এখানেও তার সমস্ত জীবনকর্মের অনেক গভীর দর্শন কাজ করেছে। তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল একথা তিনি ও এথেন্সবাসী জানতেন। কিন্তু যে আইনে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো- তিনি সে আইনকে শ্রদ্ধা জানালেন এ অর্থে মানুষকে আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বললেন। সেই আইন কারা তৈরি করছে তা তিনি জানতেন তাতে তো আর আইন নামক বিষয়টিকে জীবন থেকে বিতাড়িত করা যায় না।"পবিত্র কোরানে পাকে ও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধর্মী কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ও সরকার সমুহের আইন মেনে ধর্ম কর্ম করার।এই রুপ রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় শুক্রবারের খতবায় বিশেষ আয়াৎ সংযুক্ত আছে এবং নিয়মিত নামাজের সাথে আর ও কয় রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দেয়া আছে।পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে,গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেনীর মানুষ রাষ্ট্রীয় আইন রীতি নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্ব উচ্চ আদালতের রায়কে ও অমান্য করে হরতাল অবরোধ,প্রকাশ্য আদালতের সমালোচনা করতে।শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামেপ্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রীভর্তি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানবকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা এই সমস্ত আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন,এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন যে আদালতের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেয়া যায়,বক্তব্য দেয়া যায়,তাঁরা কখনই কোন অপরাধীর বিচার কায্য সম্পাদন করেছেন তদ্রুপ কোন উদাহরন নেই। যেমন আমি প্রথমেই বলতে চাই ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছেন রাতের অন্ধকারে।বঙ্গবন্ধুর অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? পৃথীবিপৃষ্টের সব চাইতে নিরাপদ স্থান জেলখানা।সেখানে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাহল,তাঁরা বন্দি ছিলেন, তারপর ও তাঁদের অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকেতুলে নিয়ে জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হল, তাঁদের অপরাধ কি বিচার করে মিমাংসা করা যেতনা? খালেদ মোশারফ., কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য মুক্তি যুদ্ধা সেনা অফিসারকে মেজর জিয়ার নির্দেশে নির্মম নির্দয় ভাবে হত্যা করা হল, অনেককে গুলী করার পর প্রান পাখী উড়াল দেয়ার আগেই জ্যান্ত মাটি চাপা দেয়া হল, তাঁদের বিচার কি প্রচলিত সেনা আইনে করা যেতনা? অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা,আওয়ামী লীগের নেতা,মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারি,ব্লগার,প্রকাশক,লেখক সাহিত্যিক,সাংবাদিক হত্যা করা হল,তাঁদের অপরাধ কি আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতনা?আন্দোলনের নামে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যা করা,সম্পদ নষ্ট করা,লুটপাট করা কি মানবতা বিরুধী অপরাধের আওতায় পড়েনা?মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হতে পারে,যুদ্ধাবস্থা ব্যাতিরেকে ঘোষনা দিয়ে তদ্রুপ কর্মে জড়িতদের এবং হুকুমদাতার বিচার কেন হবেনা? নগদ অপরাধের ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা কি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয়? নাগরীকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁরা কি বিচার পাওয়ার সাংবিধানীক অধিকারের মধ্যে পড়েনা?সেই যুগের সক্রেটিস যদি নীজের উপর আনীত মিথ্যা অভিযোগ জেনে শুনে মেনে নিতে পারেন,সভ্যতার চরম শীখরে দাঁড়িয়ে যারা এই যুগে আইনকে, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্য আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছেন,সম্পদের হানী ঘটিয়েছেন তাঁরা কি সক্রেটিস যুগের আগের অধিবাসি মনে করেন নীজেদের? তাঁরা নীজেরা নিজেদের মনে করুন কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে কোন যুগে ফিরিয়ে নিতে চান?তাঁদের যদি এতই অসহ্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ কিছু আদর্শের প্রতিপালনের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৩০লক্ষ শহিদের আত্মদান,পৌনে চারলাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস- তবে জনগনকে সংঘটিত করে আর একটি গনবিপ্লব ঘটিয়ে তাঁদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষ বাধাতো দিচ্ছেনা। যাদের নেতৃত্বে, যাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল, তাঁরাতো ক্ষমতায় আছে,তাঁদের কেন জোর পুর্বক,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খমতা থেকে নামাতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত করতে দেয়া হবে।এই সেই দিন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যিনি বিতর্ক উত্থাপনের বৃথা চেষ্টা করে জনরোষের আওতার মধ্যে এখনও রয়েছেন,তাঁর সৌখিন বাসভবন পাহারায় আপনার সরকার অতিরীক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে,তিনি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করার প্রসাশনিক অনুমতি পায়। বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্বের একটি দেশের উদাহরন কি কেউ দিতে পারবেন,স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে?একটি দেশকি কেউ দেখাতে পারবে যে,সেই দেশের কোনমীমাংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত কোন সত্যকে ৩০/৪০ বছর পর আবার জনসমক্ষে উত্থাপন করে লক্ষ লক্ষ শহিদ পরিবারের অন্তরের আগুনে"ঘি "ঢেলে দেয়ার চেষ্টা, কোন প্রতিষ্ঠিত দল বা তাঁর নেতা করেছেন? কেন এই পয্যন্ত সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে উলটো সমাবেশ করে তাঁর মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হল??তাঁরা নীজেদের এত ক্ষমতাবান মনে করেন কিভাবে? তাঁরা কি করে আবার জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করার অধিকার পায়?কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েও এখন পয্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন করছেন না? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনার আশ্বাস বাংলার মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে।সুতারাং জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন কল্পে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহনকরবেন, জনগনের এই আস্থা বিশ্বাস এখন ও অটুট রয়েছে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,শাপলা চত্বরের সেই দিনের ষড় যন্ত্র মোতাবেক যদি খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে আসতেন,পরিকল্পনাঅনুযায়ী সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েআপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো,আপনাকে কি জীবিত বাঁচতে দেয়া হত? আপনার পরিবারের কাওন সদস্যকে বাঁচতে দিত?আওয়ামী লীগের থানা উপজেলা পয্যায়ের কোন নেতা কি বাঁচতে দিত? তাঁরা কি সে দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম বিদ্বেষী সরকার উৎখাত করে ধর্মধারি সরকার কায়েমের রাজনৈতিক শ্লোগানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক জননন্দিত এইসংগঠনটিকেও জ্যান্ত কবর দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল না?আমি আজ আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন চরমপন্থী নেতার অবিকল নকল করা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার--,গনতান্ত্রিকদেশে,গনতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে, গনতান্ত্রীক সংগঠনের,গনতন্ত্রের পুজারি মনে করা কোন নেতা, রাজপথে আন্দোলন না করে, সীমাবদ্ধ কক্ষে ৪১দিন অবস্থান করে, ৪২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে,পরবর্তিতে বিচারের সম্মুখ্যিন না হয়ে নিয়মাতান্ত্রীক আন্দোলনের সুযোগ কোন দেশের, কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে, এমন উদাহরন কি কেউ দিতে পারবে?? ষড় যন্ত্রের জাল কোথায় বিস্তৃত ছিল তাঁর প্রমান সেই নেত্রী নীজেই তাঁর উষ্মায় প্রকাশ করে দম্ভস্বরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে বলে ছিল"সেনাবাহিনী বেঈমান"!!!এর পরও আপনার সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনায়ন না করে প্রকাশ্য সভার অনুমতি দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলির মনে আগাত দেয়া হয়েছে আমি মনে করি। গত পৌর নির্বাচনে রায় দিয়েছে তাঁর বিচার করার,তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থই হচ্ছে জনগনের ক্ষোভ তাঁর উপর থেকে এখনও কমেনি,বরঞ্চ কয়েক গুন বেড়ে জনরোষের পয্যায় পৌছে গেছে।আপনার সরকারের তাঁকে দেয়া বাড়তিনিরাপত্তাই তা প্রমান করে।সুতারাং দেশ ও জাতি এই রাজনৈতিক লাশের ভার বইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।দেশের এবং জাতির প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত শিক্ষিত, বিজ্ঞান মনস্ক,প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করার মত গুনাবলি সমৃদ্ধ নেতার। কোন অবস্থায় সক্রেটিসের আগের যুগে জাতি ফেরৎ যেতে চায়না।পরিশেষে বলতে চাই,আর কোন সংগাত নয়,এবার চাই সমৃদ্ধি।আর নয় জঙ্গিপনা,এবার চাই ধর্মনিরপেক্ষতা।আর নয় সাম্প্রদায়ীকতা,এবার চাই অসম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।আর নয় পাকি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা,এবার চাই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন। জয় আমাদের হবেই হবে, অশুভ অপশক্তির পরাজয় অবশ্যাম্ভাবি। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা