লিখাটি মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইবস থেকে নেয়া।ইতিহাসে সত্য-মিথ্যা,রটনা- ঘটনা নতুন প্রজর্মকে নিবিড় ভাবে জানানো প্রয়োজন। মুক্তিযোদ্ধা ই-আর্কাইবস সে লক্ষে মহতি উদ্যোগ গ্রহন করেছে।তথ্য প্রযুক্তির উন্নত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে অনেকেই উল্লেখীত বিষয়টি সামগ্রিক ভাবে উপলব্দি করত: তাথেকে প্রয়োজনীয় বিষয়ে তথ্য গ্রহন করে জ্ঞান আহরন, মেধার বিকাশ ঘটাতে পারছেননা। অথছ অত্যান্ত সহজ ও সাবলিল ভাবেই মুক্তিযুদ্ধা ই-আর্কাইবস,মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার ইত্যাদি জ্ঞান অর্জনের স্তর সমুহের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যেতে পারে।যথাযথ সাড়া পেলে আশা পোষন করছি সময়ে সময়ে বিশিষ্ট লিখকদের প্রবন্ধ-নিবন্ধের অংশ বিশেষ প্রতিনিয়ত পোষ্ট আকারে দিয়ে যাব।এতে কিঞ্চিত যদি নতুন প্রজর্মের উপকারে আসে নীজেকে ধন্য মনে করব। ড মো আনোয়ার হোসেন রক্তাক্ত নভেম্বর: কী চেয়েছিলেন খালেদ ও তাহের নভেম্ভর ৮, ২০১৫ ============================= ১. ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম ও কর্নেল আবু তাহের, বীর উত্তম– মুক্তিযুদ্ধের দুই বীর সেনানী। আরও একটি মিল আছে দুজনের মধ্যে। দুজনই যুদ্ধাহত সেক্টর কমান্ডার। ১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে কসবার উল্টো দিকে কমলা সাগরে পাকিস্তানিদের নিক্ষিপ্ত শেলের একটি স্প্লিন্টার খালেদের কপাল ভেদ করে সম্মুখভাগের মস্তিষ্কে ঢুকে পড়ে। অন্যদিকে, ১৪ নভেম্বর ১১ নম্বর সেক্টরে ঢাকার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত কামালপুর শত্রুঘাঁটি দখলের এক সম্মুখযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর মর্টার শেলের আঘাতে তাহেরের বাম পা হাঁটুর উপর থেকে উড়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধে এই দুই সেনানায়কের এমনভাবে আহত হওয়া পরবর্তীকালে তাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কী ভয়াবহ অভিঘাতের সৃষ্টি করেছিল, তা-ও আমরা দেখব। মহাবীর এই দুজনের জীবনে মিলের এ-ও আরেক উদাহরণ, যদিও তা ছিল চরম দুর্ভাগ্যজনক, প্রাণঘাতী। যেহেতু এ লেখার অন্যতম চরিত্র জেনারেল খালেদ মোশাররফ, তাই তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাতের দুটো উজ্জ্বল স্মৃতি উল্লেখ করব। প্রথমটি ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে। গৌহাটি সামরিক হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স ট্রেনে মেজর তাহেরের সঙ্গে এসেছি লক্ষ্মৌ সামরিক হাসপাতালে। জানা গেল, মেজর খালেদ মোশাররফও আছেন এখানে। যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার খবর আগেই জেনেছি। ১৪ নভেম্বরে কামালপুর যুদ্ধে হাঁটুর উপর থেকে পা হারাবার পর তাহেরকে তখনও শয্যাতেই থাকতে হয়। তারপরও তাহের তাঁকে হুইল চেয়ারে বসাতে বললেন। উদ্দেশ্য খালেদ মোশাররফকে দেখতে যাওয়া। হুইল চেয়ারটি ঠেলে নিয়ে গেলাম আমি। তাহেরকে দেখে খালেদ বিছানায় উঠে বসলেন। কিছুক্ষণ কথা হল দুই যুদ্ধাহত সেনানায়কের মধ্যে। কী মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম! We were in the thick of the battle, খালেদ মোশাররফের কথাটি কেন যেন মনে গেঁথে গেল। এখনও ভুলিনি। দ্বিতীয় দেখা ১৯৭৫এর ১৫ আগস্টের পর। সম্ভবত সেপ্টেম্বরে। ৫৬, স্টাফ রোডে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের বাসায় তাহের ভাইয়ের সঙ্গে গিয়েছি এক বিকেলে। বাসাটি আমার খুব পরিচিত। কারণ এই বাংলোতেই তাহের ভাই থাকতেন অ্যাডজ্যুটেন্ট জেনারেল পদে থাকাকালে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বিরাজমান পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে তাহের আলোচনা করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু দেশের গভীর সংকটে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ রচনা করার তাহেরের আগ্রহে কোনো সাড়া দিলেন না খালেদ মোশাররফ। তাঁর অভিব্যক্তিহীন ও নিরাসক্ত চেহারা আমার স্পষ্ট মনে আছে। খুব বেশি কথাও তিনি বলেননি। ফেরার পথে গাড়িতে তাহের ভাইকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাও করেছি। তাহের বলেছেন, হয়তো তিনি আর সেনাবাহিনীতে নেই বলে খালেদ মুখ খোলেননি। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে তাহেরের প্রস্তাবে খালেদ মোশাররফের নিরাসক্ত ও অভিব্যক্তিহীন মনোভাবের অন্যতম একটি কারণ যে, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মাথায় গুরুতর আঘাতজনিত সমস্যা, তা আজ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হচ্ছে। ২. শিরোনামের কথায় এবার আসি। তার আগে এই দুই সেনানায়ক সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য দেব। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে হানাদার বাহিনীর গণহত্যার ‘অপারেশন সার্চলাইট’এর অন্যতম রূপকার মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা তাঁর A Stranger in My Own Country বইয়ে বলেন: In Comilla, Lieutenant Colonel Yakub Malik acted with vigor and kept the situation well under control. The 4 East Bengal Regiment was located at Brahmanbaria in the north, on the road to Sylhet. The second-in-command, Major Khalid Musharraf, an East Pakistani, acted with decency. When the situation became well-known, he decided to assume command of the unit from his Commanding Officer, Lieutenant Colonel Malik who, along with the two other West Pakistani Officers, was taken under protective custody. He finally handed them over to the Indian army at Agartala with the request that they should be treated properly as prisoners of war and returned safely to Pakistan at the end of the hostilities. After the war, Lieutenant Colonel Malik was all praises for Major Khalid Musharraf. [‘A Stranger in My Own Country’ Major General Khadim Hossain Raza; Page: 84 The University Press Limited, 2012] ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকাল ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দশম বেঙ্গল রেজিমেন্ট সদর দপ্তরে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের সঙ্গে নিহত হন তাঁর দুই সহযোগী, মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা ও কর্নেল এটিএম হায়দার। এ বিষয়ে ‘কর্নেল হুদা ও আমার যুদ্ধ’ বইয়ে কর্নেল হুদার স্ত্রী নীলুফার হুদা স্মৃতিচারণ করেন: “আমি বললাম, ‘জিয়া ভাই, (জেনারেল জিয়াউর রহমান) আপনি থাকতে হুদা মারা গেল কীভাবে? ওকে কে মারল?’ তখন জিয়া ইংরেজিতে বলেন, ‘হি ওয়াজ মিসগাইডেড উইথ খালেদ মোশাররফ। দ্যাটস হোয়াই হি ওয়াজ কিলড।’ আমি তাঁকে বললাম, ‘খালেদ মোশাররফকেই-বা মারা হবে কেন? তিনি তো এক ফোঁটা রক্তও ঝরাননি, তাঁকে কেন মারা হল? আপনার লোকেরা কেন তাঁকে মারবে?’ আমার এ কথার পর তিনি চুপ থাকলেন।” [‘কর্নেল হুদা ও আমার যুদ্ধ’ নীলুফার হুদা পৃষ্ঠা: ১২২, প্রথমা প্রকাশন, ২০১১] আজ এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ৭ নভেম্বর সকাল ১১টায় দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে উপস্থিত মুক্ত জিয়াউর রহমানের ইঙ্গিতেই দুজন অফিসার মেজর আসাদ ও জলিল দশম বেঙ্গল রেজিমেন্টে খালেদ, হুদা ও হায়দারকে হত্যা করেন। শুধু তাই নয়, এরা এই তিন জনের লাশ একটি ট্রাকে উঠিয়ে জিয়াউর রহমানের সামনে নিয়ে আসেন যাতে তিনি স্বচক্ষে তা দেখতে পারেন। পাঠক ভেবে দেখুন, জিয়াকে বন্দি করেছিলেন খালেদ, কিন্তু হত্যা করেননি। যেমন করেননি বন্দি পাকিস্তানি অফিসারদের। অন্যদিকে, জিয়া তার প্রতিপক্ষ, নিরস্ত্র বন্দি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম তিন সেনানায়ককে বাঁচতে দিলেন না। কর্নেল তাহেরকেও জিয়া বাঁচিয়ে রাখেননি। গোপন বিচারের প্রহসন করে ফাঁসি দেওয়ার নামে ঠাণ্ডা মাথায় আপন জীবনদাতাকে হত্যা করেছেন। ধারাবাহিক ভাবে চলবে---

'75 থেকে '81 হাজার হাজার মুক্তিযুদ্ধাকে বিচারের নামে হত্যা কখনও অভ্যুত্থানের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে হত্যা,কখনও গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে মেজর জিয়া সসস্ত্রবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা শুন্য করে দেন।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন