মানুষ মাত্রই ভূল, খালেদা জিয়াও ভূল করেছেন, আদালতকে বিশেষ বিবেচনায় বিচারের আবেদন ফখরুলের!!!! ----- =========================== খালেদা জিয়া ভুল করেছেন বলেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, দলগতভাবে এই রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই বলেছেন বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার ওই মামলায় আদালত খালেদার বিরুদ্ধে সমন জারির ঘণ্টাখানেক পর জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রতিনিধি সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। “স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে আমাদের ম্যাডাম খালেদা জিয়ার বক্তব্য একটু বিতর্কিতই ছিল। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উনার এরকম মন্তব্য করা ঠিক হয়নি। মানুষ মাত্রই ভূল, উনিও ভূল করেছেন।” বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল আরো বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সন তাই আদালত এ পরিচয়টি মাথায় রেখেই শাস্তির বিষয়টি বিশেষভাবে মূল্যায়ন করবেন বলে আশাকরি।” (দেশ বিদেশের সকল গনমাধ্যম) উল্লেখীত সংবাদটি দেশপ্রেমিক সকল নাগরিককে ক্ষুব্দ,আশাহত,দু:খ্যজনক ও আইনকে প্রভাম্বিত করার চক্রান্ত বলেই মনে করে।খালেদা জিয়া শহীদের সংখ্যার বিতর্কিত মন্তব্যটি  বেশ কিছুদিন আগে করেছিলেন। দেশের সুশীল সমাজ,মুক্তিযোদ্ধা,বিবেকবান মানুষের প্রতিক্রিয়া লক্ষনীয় ভাবে পত্রপত্রিকায় চাপানো হয়েছে।জনমত যাচাই পুর্বক সরকার মামলার অনুমতি দেয়ার পর জনগনের সেমপেথি অর্জনের জন্য মীর্জা ফকরুল উল্লেখিত বক্তব্যটি প্রদান করেছেন বলেই অভিজ্ঞগন মনে করেন। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর বাবু গায়েশ্বর আরো একধাপ এগিয়ে খালেদার বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর জনগনের ক্ষোব বিক্ষোবে  রুপান্তরীত হওয়ার প্রাক্কালে সরকার তড়িঘড়ি ব্যবস্থা গ্রহন করে।সরকার আপাত: বিক্ষোব প্রশমন করতে পারলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের অবলীলায় আত্মসমর্পনের কারনে বিষয়টি পুনরায় রাজপথে আসার সম্ভাবনাকে উস্কে দিয়েছে বলে আমি মনে করি। সরকার  বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে মীমাংসার উদ্যোগকে দেশপ্রেমিক জনগন সাধুবাদ জানালেও ফকরুলের  বক্তব্যে আদালতের সিম্পেথী এবং জনগনের দৃষ্টি নমনীয় করার কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। দেশব্যাপি ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হওয়া সত্বেও  বক্তব্যটি ভুল স্বীকারের অনেক সময় পেয়েও ভুল স্বীকার  না করে বরং প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল।এমতবস্থায় তাঁদের আইনজ্ঞ নেতারা আদালত পাড়ায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করে আদালতের স্বাভাবিক কায্যক্রম পরিচালনায় ব্যঘাত সৃষ্টি করার অপকৌশল লক্ষনীয় ভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষে পরিচালিত হচ্ছে বলেই জনগন মনে করে। শুধু আজকের এই বিষয়টি নয়, মানবতা বিরুধী বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই বিএনপি জামাত জোট আইনের শাষনের বিরুদ্ধে জনমনে বিভ্রান্তি চড়ানোর উদ্দেশ্যে নিয়ন্তর চেষ্টা অব্যাহত রেছেছে।দেশে বিদেশে ব্যাপক অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে কোটি কোটি ডলার খরছ করে লবিং ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে।প্রভাব শালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা সহ ইউরুপিয়ান ইউনিয়নের বেশ কিছু রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান সহ আন্তজাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে প্রভাম্বিত করে বিচার প্রক্রিয়া বানচালের চেষ্টাও করা হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরে খুন রাহাজানী,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে সেনাবাহিনীকে উস্কে অভ্যুত্থান পরিকল্পনাও তাঁরা বাদ দেয়নি।দেশের সম্মানীত আলেম সমাজে বিভ্রান্তি চড়িয়ে তাঁদেরকেও রাজপথে নামিয়ে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ,নির্বিচারে গাছ কর্তন,বৈদ্যুতিক পিলার ও ষ্টেসনে হামলা চালিয়ে আইন শৃংখলার চরম অবনতি ঘটানোর পরিকল্পনা ও দেশবাসী চরম উৎকন্ঠার সহিত লক্ষ করেছে।বিএনপি জামায়াতের জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৪১দিন নিরাপদ আশ্রয়ে কায্যালয়ে অবস্থান করে তথাকথিত হরতাল ও অবরোধের নামে অসংখ্য যানবাহনে পেট্রোল বোমার আঘাতে আগুন ধরিয়ে ৪২জন জ্যন্ত মানুষকে পুড়িয়ে কয়লা করে দেয়ার দৃশ্য জনগন ভীতসম্ভ্রন্ত চোখে অবলোকন করেছে।কতশত কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে তাঁর কোন হিসেব আজও জনগন সম্যকভাবে জানেনা।সরকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এবং অকালে অজস্র মানবের জীবন হানীর স্বেতপত্র আজও প্রকাশ করতে পারেনি।প্রত্যক্ষ নির্দেশ দিয়ে মানুষ হত্যায় উস্কানীর জন্য আজও খালেদা জিয়াকে বিচারের  সম্মুখ্যীন করার কোন উদ্যোগ নেয়নি সরকার। একজন তিনবারের সাবেক প্রধান মন্ত্রী হিসেবে, একটা জননন্দিত দলের নেত্রী হিসেবে এবং বিশ দলের দায়িত্বশীল নেত্রী হিসেবে   বেসামাল জীবন যাপনে অভ্যস্ত খালেদা জিয়া- বেসামাল কর্মসূচি দিয়ে জন জীবনে দুর্ভোগ ডেকে এনে পার পেয়ে যাবে তা জনগন ভাল চোখে দেখছে বলে মনে হয়না। উল্লেখীত অপরাধের  রাষ্ট্র কতৃক কোন আইনি ব্যবস্থা আজও গৃহিত না হওয়ায় জনমনে  ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে আমি মনে করি।উক্ত ক্ষোভ বিক্ষোভে রুপান্তরীত হয়ে যে কোন সময়ে রাজপথ  সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ার আশংকাকে উড়িয়ে দেয়া যায়না। আস্কারা পেয়ে খালেদা এবং তাঁর জোট সঙ্গীরা  বাংলাদেশের অস্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধের  বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ, তিন লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ, ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত- মুক্তিযুদ্ধের সত্যকে অবলীলায় ব্যঙ্গাত্বক মন্তব্য করতে পেরেছেন বলে আমি মনে করি। উদার জাতির জনকের কন্যার "মায়ের ভালবাসার দুর্বলতা"কে পুঁজি করে এই যাত্রাও  রক্ষা পাওয়ার আর একটি অপকৌশলের আশ্রয় নিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত  মহাসচিব জনাব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলাদেশের জনগন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে  উক্তরুপ বক্তব্যে মানষিক দুর্বলতায় না ভোগে আইনী প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার অবাধ সুযোগ দেয়ার আশা পোষন করে।       জয় বাংলা        জয়বঙ্গবন্ধু      জয়তু দেশরত্ম শেখ হাছিনা

  ফকরুল ইসলামের বর্তমান ভুমিকা নি:সন্দেহে খালেদা জিয়ার প্রতি আদালতের সেম্পেথি আকর্শন করার অপকৌশল।জনমতকে নীজেদের পক্ষে ধরে রাখাও উদ্দেশ্য।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন