জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনার সরকারের ২০১৫ সালে অর্জিত অগ্রগতির খন্ড চিত্র---================================= বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই বলা যায়।সাধারন থেকে অসাধারন ব্যাক্তিবর্গ সব শ্রেনী পেশার মানুষ এককথায় বলতে শুনা যেত, "আরে এই দেশে কিছুই হবেনা"।পাকিস্তান আমলে তাঁরাই বলতেন, যে দেশে একটা সুঁই তৈরী ক্ষমতা নাই সে দেশ মজিব স্বাধীন করে মানুষকে না খাইয়ে মারবেন,মজিব ভারতের দালাল,ভারতকে আমাদের মাতৃভুমি দিয়ে দেয়ার জন্য মজিব স্বাধীনতা চাইতেছে।মজিব আসলে ভারতের দালাল".। স্বাধীনতার পরে ষড়যন্ত্র সবাই অবগতই আছেন।আমি একটা ছোট্র উদাহরন দিতে চাই,মজিব--ইন্দিরা মৈত্রী চুক্তি করার পর এমন একটা রব উঠেছিল যেন এই মহুর্তে বাংলাদেশ ভারতকে দিয়ে দিল শেখ মজিব,।দেশের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় যত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সকল পদক্ষেপেই ভারতের দালালির গন্ধ পেয়েছে।বিপরীতে এমন কোন প্রচার প্রচারনা ছিলনা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্য থেকে বলার মত যে, পদক্ষেপ গুলী দেশের স্বার্থেই নেয়া হচ্ছে।জাতির জনকের ভারতের সাথে সকল চুক্তির সুবিধা কিন্তু যারা বিরুধীতা করেছেন তাঁরাই উপভোগ করেছেন।১৯৬৫ইং সালের পর থেকে ২০০১ ইং সাল পয্যন্ত বলতে গেলে একতরফা ভাবেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভারতের তোষামোদি বা ভারতকে বাংলাদেশ দিয়ে দেয়ার অপপ্রচার চালিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে অথবা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০১৫ সালের মুজিব --ইন্দীরা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চিটমহল বিনিময় কায্যকর করার প্রাক্কালে জনগন সম্যক বুঝতে পেরেছে জাতির জনকের মৈত্রীচুক্তি ভারতের গোলামি নয়,বাঙ্গালী এবং বাংলাদেশের জীবন মরন সমস্যার সমাধান করে গিয়েছিলেন সর্বকালে শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিব।ব্যে মজিব চুক্তি সৃজন করে নীজের জীবনকে বিপন্নের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন,সেই চুক্তির আংশিক বাস্তবায়ন করে তাঁরই জৈষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়ভাবে দেশরত্ম উপাধীতে ভুষিত হয়,আন্তজাতিক ভাবে জাতিসংঘ ধরিত্রীর মানষ কন্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে উপঢৌকন তুলে দেয় তাঁর হাতে। আজ এই সমস্ত কথা গুলি লিখার জন্য বসিনি।জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হওয়ার কারনে আবেগ সংবরন করে রাখতে না পেরেই অনিচ্ছা সত্বেও মনের অজান্তে লিখা হয়ে গেল। যে বিষয়টির এখন অবতারনা করছি, বিষয়টি সম্পুর্ন আমার নিজস্ব সংগৃহিত।প্রতিটি জরিপের ফলাফল হালনাগাদ করা।লক্ষনীয় ব্যাপার হচ্ছে আন্তজাতিক গভেষনা এবং তাঁর ফলাফলও কিন্তু সেই একই চক্র তুড়িমেরে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। তাঁদের মধ্যে একজন লোকও পাওয়া যাবেনা নিম্নের এই ফলাফল মেনে নিতে পারে বা পারবে।তাঁদের না মানার জন্য কিন্তু বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে থাকবেনা।তাঁরা মানার জন্য আমার এই কষ্টার্জিত সংগ্রহ নহে। আমার সংগ্রহ নতুন প্রজর্ম্মের তরুন রাজনীতিবীদদের জন্য,তাঁরা জানুক বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থান।তথ্য দিয়ে প্রমান দিয়ে যুক্তি দিয়ে তাঁরা কথা বলুক।কোন বেজম্মার প্রশ্নের জবাবে যেন মাথা নিছু করে স্থান ত্যাগ করতে না হয়।--- নিম্নে আংশিক হালনাগাদ তথ্য বন্ধুদের জানার জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।------ আগামী পঁচিশ বছরে পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটির মাপে পৃথিবীর তেইশতম অর্থনীতি হবে (বর্তমানে চৌত্রিশতম) বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পিইইউ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, আগামী পঁচিশ বছরে পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটির মাপে পৃথিবীর তেইশতম অর্থনীতি হবে (বর্তমানে চৌত্রিশতম) বাংলাদেশ এবং অর্থনীতির আকারে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়িয়ে যাবে। মাস্টার কার্ডের জরিপ অনুসারে, ২০১৫ সালের শুরুতে এশিয়া প্যাসিফিকের ১৬টি দেশের মধ্যে কনজুমার কনফিডেন্স ইনডেক্সের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ১৬.৯ শতাংশ যা ৮৩.৩ পয়েন্টে পৌঁছে গেছে। দেশের শতকরা ৭২ ভাগ লোক নিজের আর্থসামাজিক অবস্থানে সন্তুষ্ট এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধি সম্পর্কে আশাবাদী। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট দলীয় থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন হিসাব করছে যে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল ও কৃতসংকল্প পথপরিক্রমায় বাংলাদেশ ২১টি দেশের মধ্যে মোবাইল সক্ষমতায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ২০১৬ সালে ফোর জি শুরু হয়ে গেলে অবস্থানটি আরও মজবুত হবে। এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালনার সক্ষমতার ইতিবাচক প্রবাহ আর্থসামাজিক অগ্রগতি দ্রুততর করেছে। বস্টট কনসালন্টিং গ্রুপ বিসিজি ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশের সঙ্গে তুলনা করে দেখিয়েছে যে, বাংলাদেশে এখন এক কোটি বিশ লাখ লোক বার্ষিক পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার উপার্জনকারী ভোক্তাপণ্যের শক্তিধর চাহিদার উৎস যা ফি বছর শতকরা দশ ভাগ হারে বাড়বে। অর্থাৎ ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ খুবই চমৎকার ক্ষেত্র। অন্য একটি গবেষণা মতে, বাংলাদেশে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ও হার কমছে (বর্তমানে শতকরা ২৪ ভাগ) অর্থাৎ দারিদ্র পিছনে ফেলে ভোগ্যপণ্য চাহিদা বৃদ্ধিকারী মধ্যবিত্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। দেশে কোটিপতির সংখ্যা এখন প্রায় ৫৪,০০০ এবং প্রতি বছর আরও পাঁচ হাজার লোক নতুন করে কোটিপতি হচ্ছেন। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ আর জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির আরও বেশি অর্থবহ মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশে নিম্ন মধ্যম পর্যায়ে (এইচডিআই ভ্যালু ০.৫৭০) উঠে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, স্বল্পোন্নত দেশ বা লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রির বিড়ম্বনা থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উঠে আসা উচিত কিনা এবং তাতে কত সময় লাগতে পারে। অবশ্যই ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ তথা মধ্যম মানব উন্নয়ন সূচকে উঠে আসার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে এবং যদি সাম্প্রতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকে তবে তা অর্জিত হবেই। সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় সকল ক্ষেত্রেই সূচকের শীর্ষ অবস্থানে। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি শতকরা ১.১৩ ভাগ, নারীর প্রজনন প্রবণতা ২, শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ৩৪, প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ, ঝরে পড়ার হার শতকরা ৩০ এবং হ্রাসমান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ছাত্রছাত্রীর অনুপাত জনমিতির অনুরূপ, উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরতদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষাধিক এবং জন্মকালীন গড় আয়ু প্রায় বায়াত্তর। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের হিসাবে জেন্ডার-প্যারিটি ইনডেক্সে ২০১৫ সালে ১৪৫ টি দেশের মধ্যে সূচক ৬৪তম (২০১৪ সালে ছিল ৬৮তম) ভারতের অবস্থান ১০৮। নারীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ প্রায় শতকরা চল্লিশ ভাগ। ২০১৫ সাল বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছে অনেক তাজাপ্রান,বিপুল সম্পদ হয়েছে ধ্বংশ।জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানী করা বাস, ট্রেনের অত্যাধুনিক বগি।উৎপাটন করা হয়েছে শত শত মাইলের ব্রডগেজ স্লিপার।জীবন্ত দগ্ধ হয়েছে ৪২জন মানব। উপড়ে ফেলা হয়েছে অসংখ্য বৈদ্যুতিক পিলার,কেটে ফেলা হয়েছে সবুজ বন বনানি।রাজনীতিতে যোগ করা হয়েছে নতুন আতংক আগুন সন্ত্রাস বা পেট্রোল বোমা।সৃষ্টি করা হয়েছে দেশীয় আই এস আই জঙ্গীগোষ্টি। এত ভয়ভীতিকে উপেক্ষা করে জাতির জনকের কন্যা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা অসীম সাহষ, নির্ভিক মনোবল,দৃডচেতা মন,সংকল্পের প্রতি একনিষ্ট আস্থা,নীজের কর্মের উপর শতভাগ বিশ্বাস, জনগনের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জাতিরজনকের স্বপ্নের সোনার বাংলার অভিষ্ট লক্ষে,তাঁরই কন্যার হাত ধরে। ((চলমান পর্ব)) জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

   বাংলাদেশের বিরাজমান প্রত্যেকটি সেক্টরে অভাবনীয় উন্নতি পরিদৃষ্ট হয়।সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে বাংলাদেশের গতিশীল নেতৃত্বের প্রতি তাকিয়ে আছে।বিশ্বের উন্নয়নশীল প্রত্যেক দেশের উন্নয়নের রোলমডেল বর্তমান বাংলাদেশ।এর চেয়ে গর্বের বিষয় আর কি হতে পারে?

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন