জনরোষের ভয়ে ভীত চক্রান্তকারীরা,  বেসামাল উক্তি করে জনমনে বিভ্রান্তির চেষ্টায় লিপ্ত--- ======================================= বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খাঁন বলেছেন,, '৭৫সালে গনতন্ত্র নিহত হয়েছিল,এখন আই,সি,কিউতে আছে। "শ্রমিক নেতা জনাব নজরুল সাহেব প্রকৃত শ্রমিক নেতার মতই কথাটা বলেছেন।মৃত্যু হয়ে গেলে আবার কবর থেকে উঠে হাসপাতালের আইসিকিউতে কিভাবে আসতে পারে উনি না বললেও অনেকেই বুঝে। '৭৫এ জাতির জনক যে গনতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন,সেই গনতন্ত্র পশ্চিমাদের জোর জবরদস্তির গনতন্ত্র। লুটেরার গনতন্ত্র।যে গনতন্ত্রের সমাপ্তির কোন সংজ্ঞা নেই।পশ্চিমা সেই গনতন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে বিশ্ব প্রতিনিয়ত অশুভ শক্তির কালছায়ার মাসুল দিয়ে যাচ্ছে।পুঁজিবাদী উপনিবেশিকের বর্তমানের প্রচলিত  গনতন্ত্র ধনীকে আরো ধনী গরীবকে আরো গরীব করার গনতন্ত্র। সম্পদের সুসম বন্টনের বিধান তথাকথিত উপেনিবেশিক শাষক শোষকদের গনতন্ত্রে আজও খোঁজে পাওয়া যায়নি।     বঙ্গবন্ধু শাষক ও শোষকের গনতন্ত্রকে কবর দিয়ে শোষিতের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির নিমিত্তে সব দল ও মতকে একই ছাতার নীছে এনে জাতীয় দল গঠন করে সম অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দেশ শাষন কল্পে জাতীয় দল গঠন করেছিলেন।উক্ত দলে সকল শ্রেনী, পেশার মানুষের অংশিদারিত্ব ছিল। তৃনমূল পয্যায় থেকে জাতীয় সরকার পয্যন্ত নির্বাচনের বিধান ছিল।সম্পদের সুসম বন্টনের লক্ষে সমবায় পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল।জাতিয় সরকারের নামের মধ্যেই তাঁর মহত্ব নিহীত আছে।"বাকশাল" অর্থাৎ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ।    জম্ম নেয়ার আগে ভ্রুন মাতৃ গর্বে হত্যা করে তাঁর মহত্বকে খাঁটো করার জন্য দীর্ঘ একুশ বছর একতরফা অপপ্রচার করে জনমনে জাতীয় সরকারের ধ্যান ধারনা সম্পর্কে ভুল চিন্তা চেতনার বীজ বপন করার আপ্রান চেষ্টা করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বলয় থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।সেই চেষ্টার মাত্রা কিছুটাও যে কমেনি তাঁর বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন জনাব নজরুল সাহেব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতির মঙ্গলের জন্যই  তাঁর সুদুর প্রসারী চিন্তা চেতনার ফসল বিশ্ব নন্দিত দর্শন "বাকশাল" মানব জাতির জন্য উপহার  দিতে পেরেছিলেন। "বাকশাল" একান্ত বঙ্গবন্ধু উদ্ভাবীত দর্শন।বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী করে রচিত দর্শন।     বিশ্বের যে কয়জন দার্শনিক,চিন্তাবীদ কালে কালে মানবের মঙ্গলের জন্য চিন্তার ফসল রেখে গেছেন তাঁদের মধ্যে মার্কস,লেলিন, মাওসেতুং, প্লোটো, সক্রেটিস অন্যতম।তাঁরা তাঁদের চিন্তা চেতনার ফসল রেখে গেছেন তাঁদের দর্শনে।বাংলাদেশের জাতির জনক বিশ্বমানবের কল্যানে তাঁর মতবাদ "বাকশাল" প্রতিফলিত করতে চেয়েছিলেন বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে।তাঁদেরকে যেমন মানব জাতি স্মরন করবে চিরকাল বঙ্গবন্ধুকেও স্মরন করবে বিশ্ব সভ্যতা বেঁচে থাকবে যতকাল।      বঙ্গবন্ধুর "বাকশালে" যদি গনতন্ত্র না থাকে তবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবি সমিতির নির্বাচনেও গনতন্ত্র নেই।শ্রমিক ইউনিয়নের ভোটের নির্বাচনেও গনতন্ত্র নেই।সমবায় সমিতিতেও গনতন্ত্র নেই।কোন শ্রেনী পেশার নির্বাচনে গনতন্ত্র প্রতিফলিত হয়না।জনাব নজরুল ইসলাম যে শ্রেনী থেকে উঠে এসেছেন তিনি নীজেও গনতান্ত্রিক ভাবে আসেননি।যেহেতু ঐ সমস্ত নির্বাচনে আপামর জনগনের মতামত প্রতিফলিত হয়না। শুধুমাত্র স্ব-শ্রেনীর নির্দিষ্ট ভোটার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সেখানে বহুদলের অস্তিত্ব যেহেতু নেই,সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহন নেই,সেখানে কিভাবে গনতন্ত্র থাকে? যদি শ্রেনী পেশার নির্বাচনে গনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট প্রতিফলন ঘটে থাকে, তবে বাকশালেও গনতন্ত্রের প্রতিফলন অবশ্যই ছিল। বাকশালেও একই পদ্ধতির নির্বাচনের ব্যবস্থাই ছিল।স্ব-স্ব শ্রেনী পেশার উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য যেমন স্ব-স্ব শ্রেনীর নির্বাচিত প্রতিনীধিরা আপ্রান চেষ্টা করেন, তেমনি জাতিয় ভাবে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দলের জন প্রতিনীধিরা- জাতীয় সরকার গঠন করে জাতির মঙ্গলই করতেন।   এক্ষেত্রে গনতন্ত্র ছিল না বলে জাতির সাথে এতকাল প্রতারনা করার অপকৌশল ধীরে হলেও প্রকাশ পাচ্ছে।সত্য সদাই কঠিন বাস্তবতা,সত্য প্রকাশ হবেই,মিথ্যা দূর হবেই হবে।    দিন যতই গড়িয়ে যাচ্ছে,সত্য ততই প্রকাশ হচ্ছে।সব শ্রেনী,পেশার মিথ্যেবাদীরা জনরোষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে বেসামাল হয়ে অসংলগ্ন কথাবার্তা  মুখ ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে।     আর একজন প্রতিযষা বুদ্ধিজীবি জনাব এমাজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেছেন,ভারত নয়,বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছায় দেশ স্বাধীন হয়েছে। একই অনুষ্ঠানে দুইজন দুই বিতর্কিত প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোন সময়েই শুনেনি আওয়ামী লীগের কোন পয্যায়ের নেতা বলতে- ভারতের ইচ্ছায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে!! তবে ভারত মিত্র শক্তি হিসেবে অতুলনীয় সহযোগিতা করেছে মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানী তিরানব্বই হাজার সেনা মিত্রবাহিনীর নিকটই আত্মসমর্পন করেছে। যুদ্ধশেষে বঙ্গবন্ধুর জাদুকরি নেতৃত্বেই ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরৎ যেতে বাধ্য হয়েছিল।কোন দেশ থেকে মিত্রবাহিনী এত সহজে পিরে যেতে দেখেছে? বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছাশক্তিকে জাগরুক করার জন্য,চেতনাকে শানীত করার জন্য, স্বাধাধীনতার শেষ প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য,পিছনে পিরে না আসার অবস্থানে পৌঁছে দেয়ার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ২৩টি বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন,মৃত্যু দুয়ার থেকে কমপক্ষে দুইবার ফিরে এসেছেন,দীর্ঘ নয় মাস তাঁর প্রীয় জম্মভূমিতে কি হচ্ছে কোন খবর না পেয়েও স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর অনড় অবস্থান ধরে রেখেছেন, ফাঁসীর রায় শুনার পরও সামান্যতম বিচলীত হননি,মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের প্রতিনীধি সহ কোন কূটনৈতিক বা সরকারের উচ্চ পয্যায়ের কারো সাথে কোন দর্শন পয্যন্ত দিলেননা -এই  কথা গুলি তিনি বলতে ভুলে গেছেন!!         লক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে, নতুন প্রজর্ম্ম সত্যিকার ইতিহাস জানার জন্য  যতই উৎগ্রীব হয়ে উঠছেন, স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস যতই জনমনে প্রভাব বিস্তার করছে ততই অশুভ শক্তির পায়ের নীছের মাটি সরে যাচ্ছে। বেসামাল হয়ে সর্বস্তরের স্বাধীনতার শত্রুরা, মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা, মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে অন্তরে স্বাধীনতার শত্রুদের পুনর্বাসীত করার চক্রান্তকারিরা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। প্রত্যহ নতুন নতুন বিতর্কের জম্ম দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।       মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী  লীগ, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনকের জৈষ্ঠ কন্যা দেশরত্ম শেখ হাছিনার নেতৃত্বে দেশ যখন দ্রুত কাংখীত লক্ষ অর্জনের পথে দাবীত হচ্ছে, দেশ বিদেশে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির দর্পন নিয়ে সরব আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে,বিশ্বের উন্নয়ন শীল দেশ সমুহের রোল মডেল হিসেবে অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে,জাতি হিসেবে বাঙ্গালী বিশ্বদরবারে মাথা উচু করে দাড়িয়েছে, আগামী ২০৪১ সালের আগেই উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছার রুপকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে-- তখনি অশুভ শক্তির পালের গোদারা বেসামাল উক্তি করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।   কোন ষড়যন্ত্রই জাতির জনকের কন্যার পথভ্রষ্ট করতে পারবেনা। দেশ ও জাতির জম্মদাতার চাইতে কারো দরদ বেশী হতে পারেনা।আগুন সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র ধৈয্যের সাথে মোকাবেলা  করে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন কারি সরকার  কোন অবস্থায় বিভ্রান্ত হবেনা। লক্ষ অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে গেলেই নতুন প্রজম্মের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারনকারি প্রজম্ম আগের মতই  সেই বাধা উপড়ে ফেলতে প্রস্তুত। সত্যিকারের দেশপ্রেমী সরকার কোন অশুভ শক্তিকে ভয় পায়না বার বার প্রমানীত হওয়া সত্বেও কাল সাপ তাঁদের ছোবল অব্যাহত রেখেছে।ইনশাল্লা সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ অব্যাহত গতিতে চলতে থাকবে। আগামী ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ উন্নত,বিজ্ঞান সম্মত,আধুনিক  বিশ্বের নেতৃত্বে আসীন হবে।উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্র সমুহের কাতারে বাংলাদেশের নাম জ্বল জ্বল করে জ্বলবে।জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত করে তাঁর আত্মার প্রতি জাতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।সেই লক্ষকে কোন অশুভ শক্তি বানচাল করতে পারবেনা ইনশাল্লাহ।--             জয়বাংলা     জয়বঙ্গবন্ধু   জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা    

Eker poor ek beta uthvoT ukti korei za che.sorkar nirob vumika palon koroche.trader mukhe lagam dear mono ceShTai koroche name.

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন