জাতির জনকের লক্ষে-বিভ্রান্ত ছিল বিরুদীরা, মুজিব কন্যার দুরদর্শিতায়-দিশাহীন বর্তমান স্বাধীনতা বিরুদীরা----!!! ===========================     জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের রাজনৈতিক রাজনৈতীক জীবনের উত্থানের প্রারম্বিকতা আমরা যদি লক্ষ করি তবে স্পষ্ট কারোই বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় তিনি বাঙ্গালীর স্বাধীকারের স্বপ্ন নিয়েই  তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। অখন্ড পাকিস্তানের প্রভাব শালী রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ,পাকিস্তানের স্বাধীনতার রুপকারের রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ। দলটির সার্বিক রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ। সুতারাং বুঝতে বাকি নেই মুসলিম লীগ তৃনমুল থেকে সংগঠিত পাকিস্তানের একমাত্র জননন্দিত, প্রভাবশালী দল হিসেবে অবস্থান পাকাপোক্তই ছিল।     যেহেতু দলটির শীর্ষ নেতাদের বেশীর ভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের অধিবাসি ছিলেন, সংগত কারনে এই দলের মধ্যে বিচরন করে পুর্বাংশের(বর্তমান বাংলাদেশ) যথাযথ স্বার্থরক্ষা করা যাবেনা।পুর্ব পাকিস্তানের আয়তন, জনসংখ্যা, সম্পদ ইত্যাদি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় সরকারের একাদিক প্রভাবশালী মন্ত্রীত্ব হয়তো সব সময় পাওয়া যাবে।পুর্বপাকিস্তানের বহু রাজনীতিবীদ সেই পথে হাটলেও তরুন নেতা শেখ মজিবুর রহমানের অন্তরের বাসনায় ভীন্নতা থাকার কারনে মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে তাঁর রাজনৈতিক গুরু সরোওয়ার্দী,  মাওলানা ভাসানী সহ আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন দলের ভিত্তি স্থাপন করেন। নতুন রাজনৈতিক দলের তরুন নেতা শেখ মজিবুর রহমান এই দলের তিন নম্বর নেতা হয়ে রাজনীতি শুরু করলেও অচিরেই প্রধান ব্যাক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সময় নেননি।আওয়ামী মুসলিম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দল গঠন করার চেষ্টায় দলে ভাঙ্গন দেখা দিলে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।পাকিস্তান সৃষ্টির "দ্বিজাতি তত্বের  ভুল দর্শন "থেকে শিক্ষা নিয়ে মুলত: অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দল গঠন করার উদ্যোগি হতে তাঁকে সাহায্য করে।তিনি সম্যক বুঝতে পেরেছিলেন বাঙ্গালীরা ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুরাগী হলেও ধর্মাগ্ধ নন। মাওলানা তর্কবাগীশ, মাওলানা ভাসানীর মত দেওবন্দ মাদ্রাসায় পড়ুয়া ধর্মীয় ব্যাক্তিত্বদের মাঝে যেহেতু ধর্মাগ্ধতা কাজ করেনা সেহেতু সাধারন বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে উগ্রতা বা ধর্মাগ্ধতা থাকবে কেন। তাঁর পরের ইতিহাস নিয়ে বিস্তর আলোচনা আছে আমি সে দিকে না গিয়ে শুধুমাত্র উত্থানপর্ব এবং পরিনতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই।     ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনের পরই মুজিব তাঁর বাসনা পুরনে পদক্ষেপ গ্রহন শুরু করেন।এতদিনে বাঙ্গালীদের আলাদা রাষ্ট্র বা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রয়োজনীতা যার সৃষ্টি ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রোথিত হয়েছিল তাঁর অংকুর উৎগম শুরু হয়ে গেছে।ভাষার লড়াই যদিও সাংস্কৃতির লড়াই ছিল, রাজনৈতিক শুভচেতনার উম্মেষ ঘটাতে ভাষার লড়ায়ের ভুমিকা অনবদ্য স্বাধীকারের দিকে নিয়ে যেতে প্রভুত সাহায্য করে। বাঙ্গালী চেতনার এই মোক্ষম সুযোগকে তরুন সুদুরপ্রসারী রাজনীতিক শেখ মুজিব কাজে লাগাতে বিলম্ব করেননি। পাকিস্তানের শাষনতন্ত্র প্রনয়নের উদ্দেশ্যে লাহোরে সর্বদলীয় কনভেনশন(গোল টেবিল বৈঠক) আহব্বান করে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ ১৯৬৬ ইং সালে। শেখ মজিবুর রহমান ততদিনে জনগনের মনের আঙ্গিনায় '৬৫ইং সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পুর্ব পাকিস্তানকে অরক্ষিত রেখে পশ্চিমে সৈন্য সমাবেশ ঘটানোকে ইস্যু হিসেবে দাঁড় করিয়ে জনমত প্রভাবিত করতে শতভাগ  সক্ষম হয়েছেন। বাস্তবতার নীরিখে পুর্বপাকিস্তানীরা ইস্যুটিকে তাঁদের স্বার্থের নিরিখে চিন্তা করে।ইস্যুটি ব্যাপক জনপ্রীয়তা পেতে থাকে।শেখ মজিবুর রহমান শাষনতন্ত্র রচনায় যুৎসই শর্ত খুজছিলেন। এমনতর রাজনৈতিক শর্ত দিতে হবে যে শর্ত মানাও যাবেনা দেশদ্রোহের অভিযোগও আনা যাবেনা। যেহেতু পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামো যতদিন থাকবে, ততদিন তাঁর নিয়ম কানুন আইন মেনেই রাজনৈতিক কর্মসুচি প্রনয়ন করতে হবে।অনেক ভেবে তিনি যুগান্তকারি ৬দফা দাবী প্রনয়ন করেন,প্রথমেই পুর্ব পাকিস্তানের সুশীল সমাজ,রাজনৈতিক দল গুলীর মতামত গ্রহন করতে চাইলেন।অতীব দু:খ্যের সঙ্গে বলতে হচ্ছে তাঁর ৬দফা কেহই সমর্থন করেননি।ভয়ে সবাই তাঁর সঙ্গত্যাগের উপক্রম।বঙ্গবন্ধু কেন পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোতে থেকে ৬দফা প্রনয়ন করেছেন তা শুধু তাঁর মনের গহীনেই  সংরক্ষীত রেখেছেন। নতুন প্রজম্মকে আমি সবিনয়ে অনুরুধ করব, আপনারা ৬দফা সংগ্রহ করুন,পড়ুন।আজকে যারা বলেন শেখ মজিব স্বাধীনতা চাননি,তিনি চেয়েছিলেন অখন্ড পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হতে।তিনি সত্যি কি চেয়েছিলেন ৬দফায় তা আছে।একটি দফাও যদি বঙ্গবন্ধু ছাড় দিতেন অনায়াসে তিনি পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হতে পারতেন।তিনি তা করেননি।বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্য ছিল, ৬দফা না মানলে এক দফা স্বাধীনতা, আর যদি মানে তবে পুর্ব পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার জন্য তাঁদেরকেই যুদ্ধ করতে হবে। আমাদের কাছ থেকেই তাঁরা স্বাধীনতা নেয়ার সংগ্রাম করতে হত। হ্যা তিনি অখন্ড পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রীত্বের জন্যই রাজনীতি করেছেন। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই প্রধান উদ্দেশ্য ক্ষমতায় যাওয়া।তিনিও তাই চাইতেন।সেই চাওয়া ছিল সারা পাকিস্তানের একচ্ছত্র অধিপত্ত।৬দফায় তার উদ্দেশ্য প্রমান করে।৬দফা এমন রাজনৈতিক কর্মসুচি,যে কর্মসুচি কোন অবস্থায় একক রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে থেকে মানা যায়না।যদি ন্যায্য দাবী না মানে আপনারাই বলুন তখন কর্মসুচি কি হয়।বিজ্ঞ অভিজ্ঞ রাজনীতিবীদেরা আপনারাই বলুন ৬দফা মানলে কি হত, মানে নাই বিদায় কি হয়েছে। তাঁর পরের ইতিহাস সবাই জানেন,ঢাকা ইউনিভারসিটি কেন্দ্রিক স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস গঠন করে প্রাথমিক যুদ্ধ প্রস্তুতির সুচনা করলেন। আগরতলায়  পুর্ব পাকিস্তানের সেনা অফিসার যারা ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তাঁদের একটা দলকে পাঠিয়ে স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতের কি ধরনের সাহায্য পাওয়া যেতে পারে তাঁর নিশ্চয়তা বিধান করলেন। আর কি বাকি রইল, হ্যা বাকি রয়েছে।পুর্ব পাকিস্তানের যে কোন রাজনৈতিক ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহন করার একক জনগনের রায় সংবলিত রাজনৈতিক দলের।ইতিমধ্যে আগড়তলা ষড়যন্ত্র সম্পর্কে পাকিস্তান সরকার জেনে গেছে।ক্যান্টন্মেন্টের অভ্যন্তরে সার্জেন্ট জহুরুল কে বিনাবিচারে প্রকাশ্য গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। শেখ মজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী করে রাষ্ট্রদ্রোহ  মামলা হয়েছে, বাদী সরকার।শেখ মজিবুর রহমানকে বন্দি করা হল,বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় প্রতিদিনের খবর মুজিবকে ফাঁসী দেয়া হবে।সংক্ষিপ্ত বিচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট চলে এসেছে শেখ মজিবুর রহমানের হাতে।সারা পুর্ববঙ্গ ফুঁসে উঠেছে।স্বল্প সময়ে ঘটে গেছে গনঅভ্যুত্থান।জনতা জেল থেকে চিনিয়ে নিয়ে এসেছে তাঁদের প্রানের নেতাকে। জনগনের চাপের মুখে বিনাশর্তে মুক্তি দিয়ে জেনারেল আয়ুব খাঁন সরে গেলেন ক্ষমতার দৃশ্যপট থেকে।শেখ মজিব হয়ে উঠেছেন জনগনের নেতা, মধ্যমনি। ঢাকা ইউনিভারসিটির ছাত্ররা সম্বধনার আয়োজন করে শেখ মজিবকে উপাধি দিলেন "বঙ্গ বন্ধু".। ক্ষমতার দৃশ্যপটে নতুন জেনারেল ইয়াহিয়া।তিনি এসেই সাধারন নির্বাচন দেয়ার জন্য রাজী হলেন।তবে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে কতিপয় শর্তযুক্ত নির্বাচন।প্রেসিডেন্ট যদি মনে করেন, নির্বাচিত সংসদ দেশের পরিপন্থি কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে,তাহলে নির্বাচন বাতিল বা সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারবেন।বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজন ছিল শুধু নির্বাচন।কারন তখন পুর্ব পাকিস্তানে বহু দল,বহু নেতা,কিন্তু জনরায় ছিলনা।ম্যান্ডেট ছাড়া দেশে বিদেশে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহন যোগ্য হতে পারেনা।সব রাজনৈতিক দলের বিরুদীতা সত্বেও বঙ্গবন্ধু নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিলেন। কারন তিনি ততদিনে বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর স্বপ্ন বাস্তবে রুপ লাভ করার সময় এসে গেছে। গনঅভ্যুত্থান স্বাধীনতার স্বপ্নকে দশ বছর এগিয়ে দিয়েছে। একক দল আওয়ামী লীগ, একক নেতা শেখ মজিব,প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে ৬৯ এর গনুভ্যুত্থান।এখন প্রয়োজন শুধু গনরায়।যেমনভাবা তেমন কাজ।পুর্বপাকিস্তানের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিরামহীন ছুটে চলা, শুধু ৬দফার যৌক্তিকতা নিয়ে বক্তৃতা।সংগের ছাত্রপ্রতিনীধিরা তাঁদের ১১ দফার প্রচার প্রসার নিয়ে ব্যস্ত। আওয়ামী লীগের ৬ দফা ছাত্রদের ১১ দফা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ততদিনে। ৭০'এর নির্বাচনে একক সংখ্যগরিষ্টতাই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে এগিয়ে দেয় জাতির জনকের কাংখিত স্বপ্ন পুরন--দূর করে দেয় সকল বাঁধা বিপত্তি। নতুন স্বপ্ন জাগে জাতির জনক হওয়ার অনবদ্য ইচ্ছার। ২৫শে মার্চ তিনি কেন বন্দিত্ব বরন করেছেন? তাও বুঝার জ্ঞান বর্তমান রাজনীতিকদের নেই।তিনি ভারতকে সম্প্রসারনবাদি দেশ মনে করতেন।ভারতে তাঁর অবস্থান অসম আবদার হয়তো রক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হত।যেহেতু স্বাধীনতার প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধের সকল প্রস্তুতি তিনি আগেই সম্পন্ন করে রেখেছেন,তাই সম্প্রসারনবাদি ভারতের আশ্রয় গ্রহন করে উপনিবেশিক শাষন শোষন থেকে মুক্ত হয়ে, সম্প্রসারন বাদি দেশের তল্পিবাহক হতে চাননি বিধায়, সবাইকে যার যার মত দায়িত্ব দিয়ে নিজেই বসে ছিলেন পরিবার নিয়ে ৩২নম্বর বাসভবনে। তিনি জানতেন,যদি তাঁকে হত্যা করে,তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙ্গালি হৃদয়ে, বিশ্বের কোটি কোটি মুক্তিকামি মানুষের মুক্তির দুত হয়ে।মৃত্যু একদিন অনিবায্য।সেই মৃত্যু যদি ঐতিহাসিক করে যেতে পারেন,তবে সারা জীবনের সংগ্রাম সার্থক।আর যদি বেঁচে যান, তবে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের রুপকার হয়ে বাকি জীবন মনের তৃপ্তিতে অতিবাহিত করবেন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং নতুন জাতির উম্মেষকারি হিসেবে বাঙ্গালি হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন সুর্য্য যতদিন আলো বিকিরন করবে ততদিন। নি:সন্দেহে একদেশ থেকে মুক্তি পেয়ে আর এক দেশের দাসত্ববরন চাননি বলেই সুদুরপ্রসারী চিন্তাবীদ,যুগশ্রেষ্ঠ দার্শনিক মুজিব সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে পেরেছিলেন।মুল কথায় পিরে আসি।         পাকিস্তানি উপনিবেশিক সরকারের নাগপাশ ছিঁড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যার হাতে পূর্ণতা পায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবের সুযোগ্য নেতৃত্বে ও আওয়ামী লীগের দলীয় তৎপরতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেই নির্ধারিত হয় বাঙালি জাতির ভাগ্য। ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারত তাহলে আজ ভিন্ন রকমের হতে পারত বাংলাদেশের ইতিহাস।     ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের নীরব ভাঙচুর শুরু হয়েছিল। তখন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকেই স্থানীয় শৃঙ্খলা ও জনপ্রীতির কারণে আওয়ামী লীগ হারিয়ে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে। ১৯৭০ সালেও আওয়ামী লীগের বিপরীতে অসংখ্য রাজনৈতিক দল ছিল। কিন্তু শেখ মুজিবের আদর্শের কাছে, তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে অন্য কোন দলই আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারে নাই।         তাই যতবারই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে ততবারই আওয়ামী লীগ সর্বাধিক সংখ্যক ভোট পেয়েছে।     বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র পৌনে চার বছর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ পরিচালনা করার সুযোগ পায়। তারপর নিষ্ঠুর ঘাতকেরা রাতের আঁধারে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্ব-পরিবারে হত্যা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে দেশ চলে যায় পাকিস্তানি কায়দায় সামরিক বাহিনীর বুটের তলায়। আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য চলতে থাকে নানা রকম চক্রান্ত। পরিস্থিতি তখন এতই নাজুক হয়ে পড়ে যে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করার মতো মানুষও খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেদিন যারা মুজিব আদর্শ বুকে ধারণ করে টিকে থাকে- তারাই আজ হাল ধরে আছে আওয়ামী লীগের।     ১৯৭৫ সালের পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক ভাঙা-গড়া শুরু হয়। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বন্দুকের নলের সাহায্যে বাংলাদেশের ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে জন্ম দেয় রাজনৈতিক দলের, যার নাম বিএনপি। বিএনপি গঠিত হয় এদেশের সুবিধাবাদী ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির সমর্থনে। রাজাকার, আলবদর,বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারিদের যোগ সাজসে জিয়াউর রহমান অত্যন্ত চতুর ঠান্ডা মাথার খুনি ছিলেন। যারা জিয়াউর রহমানের ইতিহাস জানেন তাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়, হত্যার রাজনীতি শুরু করে জিয়া কিভাবে বাংলাদেশের সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন। জিয়া নিজেই ঘোষণা করেছিলেন- ‘I shall make politics difficult for politician’ কেন তিনি এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা উচ্চারণ করেছিলেন সেদিন? করেছিলেন এই জন্য যে সেদিন যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী, গণ-সম্পৃক্ত রাজিৈনতক দলকে ভেঙে চুরে তছনছ করে দিয়েছিলেন।  ছোটখাটো সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলগুলোকে তার বশংবদ করতে পেরেছিলেন। তার সামনে কোন প্রতিপক্ষ দাঁড়ানোর মত ছিল না।   তিনি জানতেন না যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে বাঙালির জাতির ভালোবাসার বন্ধন, গণমানুষের চাওয়া-পাওয়ার আবেদন।জনগনের সাথে এই বন্ধন সৃষ্টি করেছে জাতির জনকের কালজয়ী দর্শন,গতিশিল নেতৃত্ব,যুগোপযোগী আদর্শ। জিয়ার আমলে আওয়ামী লীগ সাময়িক সময়ের জন্য স্থবির হয়ে  গেলেও এক সময় ঠিকই এসে রাজনৈতিক মঞ্চে আসন করে নিতে সক্ষম হয়।         ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ক্রান্তিকাল দেখা দিয়েছিল। ঠিক ৪৬ বছর পরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখন সেই ধরনের ক্রান্তিকালই দেখা দিয়েছে। ১৯৭০ সালে যেভাবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা আর বঙ্গবন্ধুর আকাশচুম্বি ব্যক্তিত্বের নিকট ম্লান হয়ে গিয়েছিল,  জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখনও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের কাছে ম্লান হয়ে গেছে, শেখ হাসিনার দেশে বিদেশে আকাশ্চুম্বি জনপ্রীয়তা আর ব্যক্তিত্বের নিকট চরম ভাবে ধরাশায়ী    একদিকে দেশব্যাপি উন্নয়ন অগ্রগতি,অন্যদিকে দেশ বিদেশের প্রসংশার পাহাড়।দেশরত্ম  জাতির জনকের কন্যা কি উপলব্দি করতে পারছেন তাঁর জনপ্রীয়তার ব্যরোমিটার বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছে?     বর্তমান বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে মডেল। উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের হাল ধরেছে গণমানুষের সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে যে দল এক সময় মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল তারাই আজ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা ছাড়া কোন দলই টিকে থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগ আদর্শে বিশ্বাসী দল। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আওয়ামী লীগের বর্তমান দলীয় অবস্থা সন্তোষজনক হলেও তাকে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না।      " বাকশাল" গঠিত হওয়ার পর জাতির জনক অনুভব করতে পেরেছিলেন,দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সময় এসে গেছে।শুদ্ধি অভিযানে যত দেরী হবে,তাঁর স্বপ্ন পুরনে ততই বিঘ্নতার সৃষ্টি হবে,বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপন হবে। শত্রু নীজের বিচানায় রেখে ঘুমানোর অর্থই হচ্ছে,নীজের মৃত্যুকে পাশে রেখে ঘুমানো।পদক্ষেপ ও নিতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন,শত্রুরা তাঁকে সেই সুযোগ আর দেয়নি।তাঁর আগেই স্ব-পরিবারে তাঁকে হত্যা করে তাঁদের পথ পরিষ্কার করতে সক্ষম হয়।        আওয়ামী লীগের এই সময়টাতে  দলের ভেতর-বাহির পরিচ্ছন্ন করার সময়। আজ আওয়ামী লীগে যে সকল দুর্বৃত্ত নেতাকর্মী আছে, বয়স্ক ও বিভ্রান্ত মন্ত্রী-উপদেষ্টা আছে তাদের বিষয়ে ভাবতে হবে। আবেগ দিয়ে আওয়ামী লীগকে চললে হবে না,আবেগের সাথে বাস্তবতার সংমিশ্রন ঘটাতে হবে।আওয়ামী লীগকে, গণমুখী ও বিবেকবান, জনসম্পৃত্ত হতে হবে। ভারতে কংগ্রেসের অবস্থা ও অবস্থানের অভিজ্ঞতা সংরক্ষন করে সেই মতে আওয়ামী লীগকে তৃন্মুল থেকে সাজানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আজ মানুষ ১৯/২০ দল, ১৪/১৫ দল, জাতীয় পার্টি কিংবা বিএনপি নয়- তাকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর গড়া আওয়ামী লীগের দিকে,তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার দিকে। কিভাবে দলের সাংগঠনিক শক্তিকে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়ে আরো বেশি শক্তিশালী করা যায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এখন সেদিকেই বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। আসন্ন জাতীয় সম্মেলনের পূর্বেই দলের চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও দুর্বৃত্তদের দল থেকে বিতাড়ন করতে হবে। দলের নেতৃত্বে এখন প্রয়োজন খাজা আহম্মদ,তালেব আলী,নরুল ইসলাম, ওবায়দুল কাদেরের মত নিষ্ঠাবান ত্যাগি জনসম্পৃত্ত নেতাদের।           শেখ হাসিনাকে স্মরন করে দিতে চাই,বর্তমানে দল যেখানে দাঁড়িয়ে আছে,আপনার যে জনপ্রীয়তার সৃষ্টি হয়েছে ,যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলা করে ক্ষমতার বৃত্তে ফিরে আসতে খুব বেশী সময় নিবেনা।সুতারাং জনচাহিদা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ,যুব লীগ, ছাত্র লীগকে মাস্তান, লুটেরা,দুবৃত্ত মুক্ত করা আপনার দায়িত্ব। তাহলেই আওয়ামী লীগ দল হিসেবে জনগণের কাছে  আস্থাভাজন আরো টেকসই হবে। যেভাবেই হোক দেশবাসীর স্বার্থে শেখ হাসিনাকে এই কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা আওয়ামী লীগের হাতেই নির্মিত হবে বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।জনগন আশা করে তাঁদের আগামী দিনের প্রজম্মের জন্য নিরাপদ, আধুনিক, বিজ্ঞান সম্মত, শিল্প সমৃদ্ধ, উন্নত,সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মান করতে পারে একমাত্র আওয়ামী লীগ এবং জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। জাতির জনক দেশ দিয়েছেন,তাঁর কন্যা সুখী জীবন উপহার দিবেন, ইহাই স্বাভাবিক।          জয় বাংলা     জয়বঙ্গবন্ধু      জয়তু দেশরত্ম  শেখ হাসিনা

'৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরের আগে বাঙ্গালিরা কোন কালে স্বাধীন জাতিসত্বা নিয়ে বসবাস করতে পারেনি।উপেনুবেশিক শাষন শোষনের কারনে এক ধরনের প্রভু ভক্তি মানষিকতায় অভ্যস্থ্য হয়ে পড়েছিল।সঙ্গত কারনে ভিন্নজাতি গোষ্টির প্রতি তাঁদের মানষিক অন্ধত্ব ভিতরে কাজ করে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন