অচিরেই ই-সার্ভিস বাস চালু হচ্ছে বাংলাদেশে== ♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥ সরকারি সেবা, তথ্য, ডাটা আদান-প্রদান ও বিনিময় সহজ করার জন্য ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাস চালু করতে যাচ্ছে সরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক শুক্রবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মিদের এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে একে অপরের তথ্য, ডাটা ও সেবা অনলাইনে পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাস তা দূর করবে। এ বাস মিডলওয়্যার প্লাটফরম হিসেবে কাজ করবে। চালু হওয়ার পর সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অনলাইনভিত্তিক তথ্য, ডাটা ও সেবাসমূহ এসে যুক্ত হবে ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাসে। আর এসব অনলাইনভিত্তিক তথ্য, সেবা ও ডাটা আদান-প্রদান ও বিনিময়ের কাজ মসৃণ করবে এবং তা সেবা গ্রহীতার কাছে সহজে প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে। ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাস চালু হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সফটওয়্যারচালিত তথ্য, ডাটা ও ই-সেবা তৈরিতে ডুপ্লিকেশন হ্রাস পাবে এবং ব্যয় সাশ্রয় হবে। যেমন বর্তমানে সরকারি কোনো একটি প্রতিষ্ঠান যদি নাগরিক তথ্যের ডাটাবেস তৈরি করে এবং তা যদি ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাসে যুক্ত থাকে তাহলে অন্য প্রতিষ্ঠানের সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে একই ডাটাবেস পুনরায় তৈরির প্রয়োজন হবে না। কারণ ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাস যেকোনো সেবা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা নাগরিক তথ্যের ডাটাবেস প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (এলআইসটি) প্রকল্প বাংলাদেশ ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার (বিএনইএ) ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় এই ই-সার্ভিস বাস চালু করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং (ইওয়াই) বিগত এক বছর ধরে বিএনইএ ও ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাসের কারিগরি উন্নয়নের কাজ করছে। ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাসে যুক্ত হওয়ার আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য, সেবা ও ডাটা তৈরিতে বিএনইএ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় নির্ধারিত মান, গাইডলাইন ও স্পেশিফিকেশন অনুসরণ করে সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে। যাতে তা ইন্টাঅপারেবল (আন্তঃপরিবাহী) বা বিনিময়যোগ্য হয়। অচিরেই সরকারি অফিস সমুহে ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাস অচিরেই চালু করা সম্ভব হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর সফটওয়্যারভিত্তিক তথ্য, সেবা ও ডাটা তৈরির জন্য বিএনইএ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় নির্ধারিত মান, গাইডলাইন ও স্পেশিফিকেশন প্রণয়নের কাজে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। এসব অনুসরণ করে স্ব স্ব সরকারি প্রতিষ্ঠান তথ্য, সেবা ও ডাটা প্রদানের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করে তা যুক্ত করা হবে ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাসে। সরকারি কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সক্ষমতা তৈরির জন্য বিসিসিতে ডব্লিউএসওটু (WSO2 ) এর ওপর প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়েছে। যাতে তথ্য, সেবা ও ডাটা আদান-প্রদান ও বিনিময়ের কাজটি তাঁরা সহজে আয়ত্ব করতে পারে। ন্যাশনাল ই-সার্ভিস বাস চালুর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার (এনইএ) পোর্টাল চালু করা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য, সেবা ও ডাটার সফটওয়্যার তৈরিতে বিএনইএ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় নির্ধারিত মান, গাইডলাইন, স্পেশিফিকেশন ও রোডম্যাপ অনুসরণ করবে তা থাকছে এ এনইএ পোর্টালে। উল্লেখ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনার সুযোগ্য পুত্র জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে বিকশিত মেধাকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগে যথাযথ ভুমিকা রাখার স্বার্থে প্রধান মন্ত্রীর দফতরে উচ্চ পয্যায়ের একটি কমিটি প্রধান মন্ত্রীর তত্বাবধানে কাজ করে যাচ্ছে।এই কাজে সহায়তা প্রদানের জন্য ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে উপদেষ্টা এবং তরুন মন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মদ পলক সাহেবকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন।তাঁদের মিলিত প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অদম্য আখাংকা জাতির জনকের কন্যা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এখানে আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই,আমাদের দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক দলের অশিক্ষিত নেতানেত্রীগন প্রথম অবস্থায় জ্ঞানের পরিধির সীমাবদ্ধতার কারনে ডিজিটাল বাংলাদেশকে বিদ্রুপাত্বক শ্লেষী ভাষায় কটুক্তি করতে দেখা গেছে। এখানেই আমার একটা প্রবাদ বার বার মনে পড়ে--""অশিক্ষিত পরম বন্ধুর চাইতে শিক্ষিত চরম শত্রুও অনেক ভাল।"" আধুনিক, বিজ্ঞান মনস্ক জাতি গঠনে বিজ্ঞানের সর্বশেষ আবিস্কারের সাথে দেশকে সম্পৃত্ত করে উন্নত দেশ গঠনের সিদ্ধান্ত শেখহাসিনার যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেশেবিদেশে প্রসংসীত হচ্ছে। লক্ষ করলে দেখা যায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার দিনদিন স্তিমিত না হয়ে প্রসারীতই হচ্ছে।জনমনে এর প্রভাব লক্ষনীয়ভাবে ফুটে উঠেছে।বর্তমান সময়ে কোন অন্ধ, বধির নাগরীকও ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকারকে তাচ্ছিল্যকরে উক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়না। বরঞ্চ এই প্রযুক্তির উন্নত সংস্করন গ্রহন বা সেবা নিতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। তাঁরা কোন কোন ক্ষেত্রে ইহার নেতিবাচক দিক সমুহ আত্বস্থ করে বাংলাদেশের মানুষকে পুড়িয়ে মারার কাজে ব্যবহার করছে।বিদেশী সাইট ভাড়া নিয়ে জঙ্গী তৎপরতায় উৎসাহ দিয়ে যুদ্ধুপরাধীদের বিচার বানচালে অঘোষিত যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা দেশকে দ্রুত তাঁর কাংক্ষিত লক্ষে পৌছানোর মাধ্যমে তাঁর পিতা, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের -সুখী, সমৃদ্ধশালী,উন্নত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣

সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সমুহকে তথ্য আদান প্রদানে সহজতর করার লক্ষে এক জায়গায় তথ্য সন্নিবেশ করে রাখার উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। সারা দেশকে ডিজিটালাইজেসনের ক্ষেত্রে ইহা নিসন্দেহে একধাপ অগ্রগতি।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন