বাঙ্গালী অশুভ শক্তিকে পরাভুত করবে -- তাঁদের হাজার বছরের সংষ্কৃতির বন্ধন দিয়ে------ ====================== আজ ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিন।মাসটি বাঙ্গালী জীবনে এক বেদনাবিধূর মাস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফব্রুয়ারী দিনটি হতে। ১৯৪৭ ইং সালের ১৪ই আগষ্ট ভারতীয় উপমহাদেশ  "দ্বিজাতিতত্ব " নামক ভুল দর্শনের ভীত্তিতে বৃটিশ শাষকদের হাত হতে স্বাধীনতা লাভ করে। একদিকে ভারত,অন্যদিকে মসুলমান অধ্যুষিত পাকিস্তান।ভুল "ধর্মীয় জাতীয়তার দর্শনের "ভিতরেই লুকিয়েছিল শোষনের কালছায়া। বাংলাকে উপনিবেশীক শাষক- দের কলোনী করে দীর্ঘমেয়াদে শোষন করার চক্রান্ত। বহু আখাংকীত স্বাধীনতার স্বপ্নের মধ্যেই তাঁর বীজ রোপিত হয়েছিল। কথাটি আমি এই কারনেই বলছি,ইসলাম একটি শ্বাস্বত: ধর্ম। মানব জাতির জন্য শান্তির অভয়বানী নিয়ে নবী করিম (স:) এর মাধ্যমে আল্লাহ সকল জাতির হেদায়েতের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।ইসলাম ধর্ম এবং কোরানেপাক নাজেল করার সাথে সাথে পুর্ববর্তি সকল আসমানী কিতাব নিষিদ্ধ করে শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (স:)এবং সর্বশেষ আল্লাহ প্রদত্ত কোরানকে অনুসরন করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরানেই আছে,নবী করীম (স:)নীজেও বলেছেন এর পর আর কোন নবী বা রাসুল দুনিয়াতে আসবেনা, কোন কিতাবও নাজেল হবেনা। প্রেরীত ধর্ম  স্ব-স্ব-ভাষায় পালন করা যাবে। মহান আল্লাহ সকল ভাষাই বুঝেন,সকলের ইবাদত কবুল করবেন।পৃথিবীতে বিচরন করা প্রত্যেক জাতি, গোত্র, গোষ্টির মানুষের  "ইসলাম ধর্ম "গ্রহন করার এবং পালন করার অধিকার আছে। জাতিগত বেদাভেদ ভীন্ন একটি বিষয়। বাঙ্গালী জাতির মধ্যে যেমন" হিন্দু মুসলিম "আছে তেমনি অন্যান্ন জাতির মধ্যেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান আছে। জাতি বলতে আমরা বুঝি--একই  ভাষা,সংস্কৃতি,কৃষ্টি, চালচলন, আচার আচরন ইত্যাদি বিষয় সমুহ যদি কোন একটা নির্দিষ্ট জনপদে এক ও অভিন্ন থাকে তবে তাঁরা একটি জাতি হতে পারে। যেমন আমাদের দেশের উপজাতি গোষ্টি গুলি-তাঁদের মধ্যে বেশীর ভাগ যদিও বৌদ্ধ ধর্মালম্বি হয় হিন্দু ধর্মের অনুসারীও অনেকেই আছে। জাতীবেদে আমরা তাঁদের বলি মার্মা,ত্রিপরা, চাকমা, মুরং ইত্যাদি। সুতারাং লক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে পাকিস্তানীরা যদিও  ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়, তাঁদের ভাষা আরবী নহে। তাঁদের মধ্যেও জাতীবেদ আছে,হিন্দু, মসুলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, উপজাতি ইত্যাদি রয়েছে। জাতিগত পার্থক্যও বিদ্যমান-যেমন পাঞ্জাবি,পাঠান, বিহারী, পোস্তন ইত্যাদি।ভাষাগত দিক থেকেও সবাই উর্দুতে কথা বলেনা। প্রত্যেক জাতী গোষ্টির আলাদা আলাদা নিজস্ব ভাষা সংষ্কৃতি, কৃষ্টি  বিদ্যমান রয়েছে। অখন্ড পাকিস্তানের কোন জাতি গোষ্টির ভাষা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলনা,"বাংলা ভাষাকে কেন পরিবর্তন প্রয়োজন হল?" কোন ভাষার মধ্যে হিন্দুয়ানীর গন্ধ পাওয়া গেলনা বাংলা ভাষার মধ্যে কেন হিন্দুয়ানী গন্ধ পাওয়া গেল? হিন্দি ভাষা আর উর্দু ভাষার মধ্যে তেমন পার্থক্য না থাকা সত্বেও উর্দুকে পরিবর্তন না করে বাংলাকে কেন  পরিবর্তন করে মসুলমানি করাতে হবে? বাঙ্গালী হিন্দুর চাইতে কয়েকগুন বেশি পাঠান,পাঞ্জাবী হিন্দু থাকা সত্বেও তাঁরা ধর্মভ্রষ্ট না হয়ে বাঙ্গালীরা কেন ধর্মভ্রষ্ট হবে? বিহারীদের মধ্যে হিন্দিভাষার প্রচলন থাকলেও তাঁদের মুসল- মানী না করিয়ে বাঙ্গালীদের করার প্রয়োজন কেন হল? মুলত: বাঙ্গালী জাতিকে সুদীর্ঘকাল শাষন শোষন করার উদ্দেশ্যে  প্রথমেই ভাষা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।বাঙ্গালী জাতির বাঙ্গালীত্ব কেড়ে নিয়ে শংকর জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ভাষার উপর আঘাত করে।এই আঘাতেও কিন্তু অনেক বাঙ্গালী নেতার সায় ছিল। তাঁরাও তাঁদের সাথে সুর মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। ১৯৪৮ সাল হতেই ভাষাকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বাংলার রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা সেই ষড়ন্ত্রের স্বরূপ যথাসময়ে উদঘাটন এবং উদ্দেশ্য চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। তারা তাদের লেখনী, বক্তৃতা, বিবৃতি, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, সিনেমা, গান ও নাটকের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে মাতৃভাষা বাংলা রক্ষার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ করা শুরু করেন। যদিও ভাষা রক্ষা করার দাবির আন্দোলন আপাত: দৃষ্টিতে সাংষ্কৃতিক আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হয়, কালক্রমেই তা বাঙ্গালী মানষে গভীর রেখাপাত করতে সক্ষম হয়।১৯৫২ সালে ঢাকা ইউনিভারসিটি কেন্দ্রীক আন্দোলন যখন সর্বস্তরের ছাত্রদের আলোড়িত করে ছাত্র গনআন্দোলনের রুপ পরিগ্রহ করে, উক্ত আন্দোলনকে জোর করে দমনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানী শাষকচক্র ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৪৪ধারা জারি করে। সর্বপ্রকার মিছিল মিটিং, সমাবে -শের উপর নিশেদাজ্ঞা আরোপ করে। ১৪৪ধারা ভেঙ্গে মিছিল করার চেষ্টা কালে শাষক চক্রের প্রত্যক্ষ হুকুমে পুলিশ নির্বিচারে গুলী চালায়।তৎক্ষনাৎ লুটিয়ে পড়ে -সালাম, জব্বার, রফিক, সফিক।আন্দোলন আর থামায় কে? ,অচিরেই ছাত্র আন্দোলনের আগুন ঢাকা থেকে সারা দেশের গ্রাম-গঞ্জ এবং শহর-নগরে ছড়িয়ে পড়ে। মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ (সাবেক পুর্বপাকিস্তান)। সরকার বিভিন্ন কায়দায় আরবি হরফে বাংলা লেখার চেষ্টা করতে থাকে।এর প্রতিবাদেই ফুঁসে উঠেছিল আন্দোলন। তাঁরা সাধারন বাঙ্গালি মসুল মানদের বুঝানোর চেষ্টা করে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে বিজাতীয় সংস্কৃতির আবহ রয়েছে।সুতারাং চলমান ভাষায় কথা বলা মসুলমানদের বড় রকমের গুনাহ হবে। হিন্দুয়া -নীর গন্ধভরা ভাষা আখ্যায়িত করে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হয়। মজলুম জননেতা মৌলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরেবাংলা এ, কে, ফজলুল হক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কমরেড মনি সিংহ, ইত্তেফাক সম্পাদক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সহ আরো অনেক নেতাদের সঠিক ভূমিকাও দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য সেই অপচেষ্টা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। জনমনে ঘোমট ক্ষোভ প্রশমন করা যায়নি,যদিও তাঁদের পরিকল্পনা বাতিল করে। বাঙ্গালী নেতারা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তা - নীদের সাথে পুর্ব পাকিস্তানের মিলন হবেনা। নীজেদেরকে নিয়ে নীজেরাই ভাবতে হবে। ভাষা রক্ষা করার দাবীতে সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবি, শিল্পি, অভিনেতা অভিনেত্রী ইত্যাদি শ্রেনী পেশার মানুষের মধ্যে যে চেতনাবোধ এবং সুদৃড ঐক্য গড়ে উঠেছিল সে চেতনা বোধ ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের সুপ্ত বাসনা ক্রমান্বয়ে পরবর্তি বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম,নির্বাচনে "কুইনীনের" মতই কায্যকরি ভুমিকা পালন করতে থাকে। মানুষকে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করার কাজে শিল্পী-সাহিত্যিকদের অবদান ছিল অনেকটা ঘটকের মতো। শিল্পি সাহিত্যিকদের "ইস্পাত কঠিন" একতাবদ্ধতার কারনে পুর্ব পাকিস্তানের সকল রাজনৈতিক দলকে "জোটবদ্ধ "করতে প্রভুত সাহায্য করে।গঠিত হয় হক-ভাসানীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট।এর আগে কখনই জোট বদ্ধ আন্দোলন ও নির্বাচনের রাজনীতি দেখা যায়নি। ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির প্রত্যক্ষ প্রভাব আমরা দেখতে পাই ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে। তখন ভাষার দাবীতে যে আন্দো -লন গড়ে উঠেছিল,  বাঙ্গালীর ঘরে জম্ম নিয়ে,মাছে ভাতে বাঙ্গালী হয়েও একশ্রেনীর ধর্মাগ্ধ মানুষ অধার্মীক পাকিস্তানের দালালদের যোগসাজসে বিরুধীতার ভুমিকায় অবতিন্ন হয়েছিল।তাঁর ধারাবা -হিকতা দেখা যায় ৫৪সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের বিরুধীতায়। ৬৬ ইং সালের বঙ্গবন্ধুর ৬দফার বিরুদ্ধে অপ্প্রচার, প্রপাগান্ডায়।   ছয় দফা  দাবী মানা হলে  পুর্ব পাকিস্তানের সব মসুলমান হিন্দুই হয়ে যাবে।দেশ ভারত হয়ে যাবে।৬৯ ইং সালের গন অভ্যু -ত্থানকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টার মধ্যেও দেখা যায় অশুভ শক্তির ছায়া। '৭০ সালের সাধারন নির্বাচনে চক্রটির মুল নির্বাচনী প্রচারই ছিল,নৌকায় ভোট দিলে ইসলাম থাকবেনা। পুর্বপাকিস্তান  ইন্ডিয়া হয়ে যাবে। মসজিদ থাকবেনা,সব মসজিদ মন্দির হয়ে যাবে।'৭০ এর সাধারন নির্বাচনে ইসলাম ধর্মকে উলঙ্গ ব্যবহার করে নৌকার বিজয়কে থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে নুরুল আমীন গংদের প্রচার প্রচারনায় জনগন কান না দিয়ে বিপুল সংখ্যা গরীষ্ট ভোট ও আসন জনগন  আওয়ামী লীগকে দেয়। একই ধারাবাহিকতায় তাঁদের প্রেতাত্বাদের আস্ফালন দেখা গেছে নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তনী সেনাদেরকে প্রত্যক্ষ অস্ত্রহাতে চক্রটি সহযোগিতা করে।বিভিন্ন বাহিনীর জম্ম দিয়ে মুক্তি যোদ্ধা,বাংলার বুদ্ধিজীবি -দের হত্যার মধ্যে। বাঙ্গালী মা বোনদের ধরে নিয়ে খাঁন সেনাদের মনোরঞ্জনে তুলে দেয়ার মধ্যে।প্রকাশ্য ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে ফতোয়া জারী করতেও চক্রটি দ্বিধা করেনি। ফতোয়া জারী করে বলেছিল, বাঙ্গালী মা বোনদের ইজ্জত লুটে নেয়া নাকি জায়েজ হবে"। মুক্তি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চক্রটি কিছু সময়ের জন্য গর্তে লুকিয়ে ছিল।গর্তে লুকালে কি হবে ষড়যন্ত্র ঠিকই অব্যাহত রেখেছিল।সেই ষড়যন্ত্রের নির্মম আঘাত বাঙ্গালীর অস্তিত্বে বসিয়ে দেয় ১৯৭৫ ইং সালের ১৫ই আগষ্ট নিকষ কাল রাতে।বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উম্মেশকারী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বনদ্রষ্টা,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে। পিরিয়ে নেয় বাঙ্গালীর নিজস্ব জাতীয়তা বোধের বাঙলাদেশকে উপনিবেশিকদের পুরাতন ধারায়। নাম রাখে, বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বপ্নের বাংলাদেশ ভিত্তিক" বাংলা দেশী জাতীয়তা বাদ".। কি চরম ধোঁকা,মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে যে দেশটি জম্ম নিল সেই দেশের কৃষ্টি,সংষ্কৃতি,আচার আচরন কবে নিল জম্ম? তাও বাঙ্গালীকে গেলানো হল অভিনব কায়দায়। চক্রটি আবার চরম ভাবে পরাজিত হয় ২০০৮ইং সালের নির্বাচনে।বাঙ্গালীর মেধা,মনন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদান কারি সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তাঁর নেত্রী জাতির জনকের জৈষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনার নিকট।পরাজিত হলে কি হবে,ষড়যন্ত্র থেমে নেই। সরকারের মদদ পেয়ে চক্রটি ইতিমধ্যেই ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছে।২০১৪-১৫ সালে সাধারন নির্বাচনকে সামনে রেখে চক্রটি করুন নির্মম,নগ্নভাবে ঝাপিয়ে পড়ে বাঙ্গালীদের উপর। নষ্ট করতে থাকে বেসুমার রাষ্ট্রীয় সম্পদ।পুড়ে মারে জ্যান্ত মানুষ। পেট্রোল বোমার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করে দেয় সাধারন মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।সারা গায়ে আগুনের ঝলসে যাওয়া ডগডগে ক্ষত নিয়ে পঙ্গুত্ব বরন করে শত শত মানুষ।আগুনে পুড়িয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেনি আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ "কোরান শরীফ"পয্যন্ত। বর্তমান সরকারের দৃডতা, অকোতোভয় মনোভাব, দেশ প্রেমের অফুরন্ত বৈশিষ্টের কারনে পরাজিত হয়েছে ঠিকই তবে ষড়যন্ত্র অব্যাহত গতিতে চলছে। সুযোগ পেলেই কাপুরুষের মত পিছন দিক থেকে একের পর এক আঘাত করছে,লেখক, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, ব্লগার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান,ধর্মীয় সমাবেশে। তাঁরই সর্বশেষ আঘাত লক্ষ করা যায় ব্রাম্মন- বাড়িয়া। ভাড়া নিয়ে তর্কের এক পয্যায় ওরা হামলে পড়ে আমাদের সংষ্কৃতি, কৃষ্টির  উৎসস্থল গুলীতে। ভেজ্ঞে ফেলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কায্যালয় সহ অন্যন্ন স্থাপনা।   ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাম্প্রদায়িক শক্তির সহিংস হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সারা দেশের নাট্য কর্মীদের অভিভাবক সংগঠন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। উভয় সংগঠনের পক্ষ থেকে সহিংসতা সৃষ্টিকারী সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিচার ও তাদের প্রতিরোধের আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশে উপস্থিত বক্তাদের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে উপলক্ষ করে এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আক্রমণের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মন- বাড়িয়ায় রাজনৈতিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ভোটের রাজনীতির কারনে রাজনৈতিক দলগুলো এই সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারেনি। বৃহৎ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই ব্যর্থতা ঘোচাতে হবে। সহিংসতা ঘটানো অপশক্তির সঙ্গে সম্পৃক্তরা জানে না যে, সংস্কৃতির বিনাশ নেই। এটি সহজাত প্রক্রিয়ায় চলে। কোনো -ভাবেই এর গতি রুদ্ধ করা যায় না। মৌলবাদী শক্তির এমন ঝটিকা আক্রমণ অনেক দিন ধরেই চলছে। আর সব সময় তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে বিজ্ঞান মনস্ক ও প্রগতিশীল মানুষ এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। এই অপশক্তির মোকাবেলায় কেবল মাত্র মাদ্রাসা শিক্ষা যুগপোযুগী করলেই হবেনা। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সর্ব শক্তি দিয়ে তাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।যে কোন মুল্যে তাঁদের বিনাশ করতে হবে।সকল অশুভ শক্তির উৎসস্থল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে চারখার করে দিয়ে আগামী প্রজম্মের জন্য নতুন বাংলাদেশ, প্রগতিশীল বাংলাদেশ, অসাম্প্র দায়ীক বাংলাদেশ,জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।    আমি মনে করি,সাধারন চিন্তাচেতনার একজন সচেতন নাগরীকের উপলব্দি করায় কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, ব্রাম্মনবাড়ীয়ার সহিংস ঘটনার পরপরই চক্রটির ত্রান কর্তার ভুমিকায় '৭৫সাল থেকে অবতির্ন্ন বিএনপি জামায়াত জোট ও তাঁদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহন করে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে অস্বীকার করে জনমনে বিভ্রান্তি চড়ানোর নয়া কৌশলের দিকে তাকালেই। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিতর্ক উত্থাপন করে একের পর এক  চ্যালেঞ্জ চুঁড়ে জাতিকে সহিংস করে তোলার অপপ্রয়াস এবং মুক্তিযুদ্ধাদের ধৈয্যচ্যুতি ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কি হতে পারে?৭৫ ইং থেকে ২০০৬ইং মাঝ খানে ১৯৯৬-২০০১ ইং বাদ দিলে তাঁরাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ব্যয় করে শহিদ দিবস সহ অন্যান্ন জাতীয় দিবস পালন করেছে। তখন মনে ছিলনা, মুক্তিযুদ্ধে ত্রীশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়নি। এখন তাঁদের মনে হচ্ছে পরম বন্ধুরা যখন একের পর এক ফাঁসীর রজ্জুতে ঝুলছে।তাঁদের বাছাবার সকল চেষ্টা ব্যার্থ হওয়ার পর নতুন আঙ্গিকে ষড়যন্ত্রের নকশা বাস্তবায়নের ছকের অংশই হচ্ছে লাগাতার মুক্তিযোদ্ধা,  শহীদ পরিবার,মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙ্গালী অস্তিত্বে আঘাতের মর্ম। প্রাচীন যুগ থেকে এই দেশের সাহিত্যপ্রীতি প্রবণতা ও সঙ্গীতের প্রাধান্য দেখা যায়। লোকনৃত্যে, সাহিত্যে ও শিল্পে একটি আধ্যা -ত্মিকতার ছাপ দৃশ্যমান। বাংলার ভাটিয়ালি, বাউল, মুর্শিদি, মারফতি প্রভৃতি গানের মধ্যে এখানকার জনজীবনের অন্তরের সুরটি ধ্বনিত হয়। কবিগান, যাত্রা, জারি, সারি, পালাগান, কীর্তন ইত্যাদির সঙ্গে এই দেশের মানুষের সম্পর্ক নিবিড়। যত দিন বাঙালি আছে, বাংলা ভাষা আছে, শহীদ মিনার আছে, একুশে ফেব্রুয়ারি আছে, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাসের কবিতা আছে, লালন ফকির, হাসনরাজা ও ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সঙ্গীত আছে তত দিন জঙ্গিরা যত চেষ্টাই করুক না কেন, সহিংসতা, সন্ত্রাস ও ধর্মান্ধতার মাধ্যমে আবহমান বাংলার এই সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে পারবে না। বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এবারের ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারীতে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার ও সূর্যসম রক্ত শপথ।    "জয় বাংলা     জয় বঙ্গবন্ধু             জয়তু দেশরত্ম  শেখ হাসিনা"         

  সমৃদ্ধ বাঙ্গালী সংষ্কৃতি যতদিন বাঙালী মননে জীবন্ত থাকবে তত দিন কোন অশুভ শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন