ইজ্জত হারিয়ে এখনো পাগল আফিয়া খাতুন চৌধুরী =======================কপি পেষ্ট ==== শরীফা বুলবুল : ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদারবাহিনী জগন্নাথ দীঘি সংলগ্ন এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে। তখন সোনাপুর গ্রামে পাকবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন বেড়ে যায়। পাক হানাদারদের ভয়ে গ্রামের নারীরা ছিল সন্ত্রস্ত। আজ এ ঘর তো কাল ওই ঘরে গিয়ে বিবাহযোগ্য কিংবা বিবাহিত যুবতী মেয়ে কিংবা মহিলাদের তুলে নিয়ে যেত। এরই মধ্যে রাজাকারদের সহায়তায় ক্যাম্পের দায়িত্বরত পাক হাবিলদারের কাছে খবর পৌঁছে যায় সুন্দরী বিধবা খঞ্জনীর কথা। তাকে হাবিলদারের হাতে তুলে দিলে গ্রামে অন্য নারীদের ওপর নির্যাতন করা হবে না। এ কথামত স্থানীয় রাজাকার নুরুল ইসলাম নুরু ওরফে নুরু মিয়া, আফজ উদ্দিন ফজল হক ও তার মা জোর করে খঞ্জনীকে হানাদারদের জগন্নাথ দীঘি ক্যাম্পে নিয়ে যান ১৯৭১ সালের জুন মাসের কোনো এক রাতে। ওই রাতেই হাবিলদার এই রাজাকারদের উপস্থিতিতে জোর করে খঞ্জনীকে বিয়ে করেন। এর পরদিন থেকেই সোনাপুর গ্রামে পাকবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন কমে যায় এবং ১৬ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত এ গ্রামের কোনো নারী আর সম্ভ্রম হারাননি। ভোরের কাগজের কাছে ফেনী জেলার বরইয়া চৌধুরী বাড়ির আফিয়া খাতুন চৌধুরী ওরফে খঞ্জনীর একাত্তরের দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদারদের অপমানের কথা জানান স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। তখন যে গ্রামে ডাকঘর ছিল তার নাম জোয়ার কাছাড়। সোনাপুর গ্রামের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, জুলাই মাসের শেষ দিকে জগন্নাথ দীঘি সংলগ্ন চিওড়া রাস্তার মাথায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি এম্বুসে পড়ে খঞ্জনীর কথিত স্বামী পাকিস্তানি হাবিলদার মারা যান। এরপরও খঞ্জনীকে হানাদার বাহিনী ছাড়েনি। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত তাকে হানাদারদের ক্যাম্পে থাকতে হয়েছে। এই সময়ে সোনাপুর গ্রামসহ আশপাশের অসংখ্য গ্রামের অসহায় লোকজনকে পাকবাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে সামর্থ্য অনুয়ায়ী সাহায্য করেছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে নিজের ইজ্জত বিলিয়ে দিয়ে আশপাশের শত শত নারীর ইজ্জত সম্ভ্রম রক্ষা করা আফিয়া খাতুন চৌধুরী সমাজ সংসারে নষ্ট, ভ্রষ্ট ও অস্পৃশ্য হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে সীমাহীন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুধু নিজের ইজ্জত দিয়েই গ্রামের মেয়েদের ইজ্জত রক্ষা করেননি তিনি। আশপাশের অনাহারী অভাবী মানুষজনদের জন্য কৌশলে পাক হানাদারদের ক্যাম্প থেকে খাবার দিয়ে তাদের জীবন রক্ষা করেছেন। অথচ খাবার দিয়ে যে সব পরিবারকে তিনি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, নিজের নারীত্ব বিসর্জন দিয়ে যেসব মা-বোন-স্ত্রীদের পাকবাহিনীর লোলুপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা করেছেন, সে সব মানুষই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর খঞ্জনী যখন গ্রামে ফিরে এলেন তখন তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে নষ্টা, ভ্রষ্টা বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। স্বামী, সংসার হারিয়ে পথে পথে ভিক্ষাবৃত্তি করে, অনাহারে, অর্ধাহারে জীবন কাটাতে কাটাতে এক সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বর্তমানে কুমিল্লা নগরীর পূর্ব বাগিচাগাঁও এলাকার একটি বস্তিতে দরিদ্র মেয়ের কাছে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। আফিয়া খাতুন চৌধুরী ওরফে খঞ্জনী ১৯৩৯ সালে ফেনী জেলার বরইয়া চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাসমত আলী চৌধুরী ও মা মছুদা খাতুন। গায়ের রং ফর্সার পাশাপাশি দেখতেও ছিল বেশ সুন্দরী আফিয়া। ১৯৬৩ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ দীঘি ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের রুহুল আমিন মানিক ওরফে হেকমত আলীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৬৪ সালে রোকসানা ও ১৯৬৫ সালে আবদুল মতিন নামে এই দুই ছেলেমেয়ে জন্মগ্রহণ করে। খঞ্জনীর স্বামী, ছেলেমেয়ে ও শাশুড়ি বোচন বিবিকে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই সুখের সংসার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সুখ খঞ্জনীর জীবনে বেশি দিন স্থায়ী হলো না। ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের রেলওয়ের বৈদ্যুতিক শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় নগরীর পাহাড়তলীর ভেলুয়াদীঘির পাড়ের ভাড়া বাসায় রহস্যজনকভাবে মারা যান তার স্বামী হেকমত আলী। স্বামী মারা যাওয়ার পর বাবার বাড়ি থেকে প্রস্তাব আসার পরেও স্বামীর ভিটে-মাটি ছেড়ে যাননি খঞ্জনী। এতিম দুই ছেলেমেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে চরম অভাব অনটনে কোনো মতে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। দুই সন্তানের জননী হলেও অপূর্ব সুন্দরী খঞ্জনীর গায়ের রূপ লাবণ্য কমেনি এতটুকু যা সহজেই দৃষ্টি কাটত সবার। ওই রূপই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়েছে আওয়াজ শুনে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে আসেন খঞ্জনী বেগম। স্বর্বস্ব হারিয়ে ছুটে যান তার মেয়ে রোকসানা ও ছেলে মতিনের কাছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, খঞ্জনী বেগম যাদের জন্য ইজ্জত বিলিয়ে দিয়েছেন, পাক হানাদার বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে যাদের খাবার দিয়ে ক্ষুধা মুক্ত করেছেন তারা তাকে দেখেই অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন। বলতে লাগলেন, এই নষ্টা, ভ্রষ্টা, অসতী খঞ্জনী বেগমকে সোনাপুরে জায়গা দেয়া যাবে না। তাকে ছোঁয়া যাবে না। শাশুড়ি বোচন বিবিও সন্তানদের তার কাছে রেখে এক কাপড়ে বিদায় করে দিলেন খঞ্জনী বেগমকে। সোনাপুর থেকে বাবার বাড়ি ফেনীতে গিয়েও আশ্রয় মেলেনি খঞ্জনী বেগমের। কারণ, পাকবাহিনীর ক্যাম্পে ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ক্ষুধার জ্বালায় ভিক্ষা করতে শুরু করে। রাত কাটে কোনো বাজারে অথবা রেলস্টেশনে। শাশুড়ির কাছে থাকতে গিয়ে অভাব অনটনে অনাহারে মারা যায় ছয় বছরের ছেলে আবদুল মতিন। জানা যায়, নষ্টা নারী বলে সোনাপুরের তৎকালীন সমাজপতিরা মৃত ছেলেকেও দেখতে দেয়নি খঞ্জনী বেগমকে। এভাবে এক সময় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। নিজে নিজে বকবক করেন, রাস্তাঘাটে কিংবা স্টেশনে গান করেন, কবিতা বলেন, পুঁতি পরেন। বলা যায়, পুরোদস্তুর পাগল হয়ে যায় খঞ্জনী বেগম। এভাবে কেটে যায় স্বাধীনতার পর তার জীবন থেকে ২৮টি বছর। ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে এসে খঞ্জনী বেগম আশ্রয় পান ফেনীতে তার ভাই সেনাবাহিনী কর্মকর্তা আবদুর রহমান চৌধুরীর বাড়িতে। কিন্তু সেই আশ্রয়টিতেও অস্পৃশ্য থেকে গেছে তার জীবন। ভাই, ভাবী ও তার ছেলেরা কেউ তাকে নিজের ঘরে রাখেনি। ভাই আবদুর রহমান চৌধুরী দয়া করে তার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিলেন ৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও আড়াই ফুট প্রস্থের একটি মাটির ঘর। সেখানে ধানের খড় বিছিয়ে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো সব কাজ করতে হতো। জানা গেছে, ভাই আবদুর রহমান চৌধুরী আনোয়ারা বেগম নামে এক চাচিকে মাসের খোরাকি বাবদ কিছু চাল দিতেন। চাচি রান্না করে খঞ্জনী বেগমকে দিতেন। খঞ্জনী বেগম তা কখনো খেতেন আবার কখনো খেতেন না। তবে সারাক্ষণ বিরবির করে আনমনাভাবে কথা বলতেন। তিনি খেলেন কি খেলেন না তার খবর নিতেন না কেউ। তিনি যত দিন আবদুর রহমান চৌধুরীর বাড়িতে ছিলেন ততদিন তার স্ত্রী বড় দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তার ধারণা, খঞ্জনী বেগম এখানে থাকলে ভবিষ্যতে সন্তানদের বিয়ে-শাদীতে সমস্যা হতে পারে। বীরঙ্গনা খঞ্জনী বেগমের দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে ছেলেটি ছয় বছর বয়সেই মারা যায়। আর মেয়ে রোকসানা বেগমকে ফুল মিয়া নামক এক শ্রমজীবীর সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। এক সময় ফুল মিয়া ও রোকসানা দুই জনেই কুমিল্লা বিসিকের পাবন ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন। এখন মানসিক ভারসাম্যহীন মা খঞ্জনী বেগম তার সঙ্গে থাকেন বলে নিজের চাকরিটুকু ছেড়েছেন। জানা যায়, খঞ্জনীর শাশুড়ি বোচন বিবি মারা যাওয়ার পর খঞ্জনীর স্বামীর ১৮ শতক জায়গার মধ্যে স্থানীয় জনৈক আবদুছ সাত্তার তাদের ৯ শতক জায়গা জোর করে দখল করে নেন। যদিও খঞ্জনী বেগমকে নিয়ে মেয়ে রোকসানা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে থাকেন মেয়ে রোকসানা ও মেয়ের জামাতা ফুল মিয়ার সঙ্গে কুমিল্লা নগরীর পূর্ব বাগিচাগাঁওয়ের বড় মসজিদ সংলগ্ন বড় মসজিদের ওয়াকফ এস্টেটের বস্তির দুকক্ষের একটি খুপড়ি ঘরে। রোকসানা ও ফুল মিয়া দম্পত্তির রয়েছে সুরাইয়া, মুন্না ও তারিন নামে তিনটি সন্তান। মেয়ে ও মেয়ের জামাতা জানালেন, চলতি বছর কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এবার খঞ্জনীর নামে চৌদ্দগ্রামের কালকোট মৌজার ৩১ দাগের হালে ৬৪০ এর ৫ শতক খাস জায়গা দিয়েছেন। কিন্তু এই জায়গায় আমরা দখলে যেতে পারছি না। প্রভাবশালীরা আমাদের যেতে দিচ্ছে না। প্রশাসনও আমাদের জায়গা বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। মেয়ে রোকসানা আরো বলেন, আমার মার কোনো অপরাধ ছিল না। এলাকার রাজাকাররা আমার মাকে পাঞ্জাবিদের হাতে তুলে দিয়েছে তাদের মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষা হবে বলে। আবার ক্যাম্প থেকে মা তাদের জন্যই বিভিন্ন খাবার পাঠাত যাতে তারা খেয়ে থাকে। অথচ যে দিন মা ছাড়া পেল সেদিন মা, মাগো মা বলে কান্নাকাটি করলেও গ্রামের লোকজন মায়ের কাছে আমাদের যেতে দেয়নি। বলেছে, তোর মা খারাপ। যে দেশের জন্য আমার মা ইজ্জত দিল সে দেশ আজো আমার মাকে বীরাঙ্গনা উপাধি দিল না। সরকারিভাবে যে খাস জমি দিয়েছে তা আজো আমরা দখল নিতে পারছি না বড় লোকদের ভয়ে।

বাঙ্গালী এবং বাঙ্গালী জাতির জন্যে বীরঙ্গনা মা বোনেরা সর্বযুগের জন্য শ্রেষ্ঠ মা বোন।তাঁদেরকে রাষ্ট্রীয় অবহেলার কারনে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতার কারনে সমাজে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য করেছে।জাতী হিসেবে বাঙ্গালীর এর চাইতে লজ্জার আর কি হতে পারে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন