নীরবে, নীবৃত্তে চলে গেল ঐতিহাসিক ছয়দফার উত্থাপনের পঞ্চাশতম দিবস------!!!!! ============ ♥♥♥========= আজ মহান এক ঐতিহাসিক দিন বাঙ্গালী এবং বাংলাদেশ পার করে দিল।৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬ ইং সালে লাহোরে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খাঁন কতৃক আহুত সর্বদলীয় গোল টেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সনদ ৬দফা উত্থাপন করেছিলেন।সেই হিসেব অনুযায়ী ৬দফা উত্থাপনের ৫০ বছর পুর্ন হল। পরিতাপের বিষয় ৬দফা রাজনৈতিক দাবীর ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় কোন আপোস করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বা রাজনৈতিক ভাবে আপোসের মানষিকতা ঘুনাক্ষরেও প্রকাশ করেছিলেন এইরুপ উদাহরন অদ্যাবদি তাঁর সহকর্মী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক বা পাকিস্তানের এযাবৎ কালের শাষক বর্গ থেকে কোন আভাস ইঙ্গিত, বিবৃতি, স্মৃতিচারন, তথ্য সংবলিত দলিল, বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা বা অন্য কোন তৃতীয় পক্ষ হতে কোন দিন কোন তথ্য প্রমান কোন পক্ষ উপস্থাপন করতে পারেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন ৯মাস পাকিস্তানি কারাগারে তাঁদের হেফাযতে থেকেও কোন আপোষ প্রস্তাবের জন্য বা সরকারের কোন বিশেষ ব্যাক্তির সাথে আপোষের প্রস্তাবে কোন রুপ বাক্যালাপ করেছেন বা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এইরুপ তথ্য কোন মহল বা পাকিদের পক্ষ হতেও উত্থাপিত অদ্যাবদি হয়নি। যদিও তাঁর প্রীয় বাংলাদেশে কি হচ্ছে, কেমন আছে তাঁর স্বজন, সহকর্মীরা তাঁর কোন খবর তিনি জানতেন না।তিনি শুধু জানতেন জেলের অভ্যন্তরে তাঁর বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং বিচারে তাঁর ফাঁসির হুকুম হয়েছে।সর্বচ্ছ রাষ্ট্রীয় কতৃপক্ষের স্বাক্ষরের পর তাঁর ফাঁসী কায্যকর করা হবে।বঙ্গবন্ধুকে সমাধীস্থ করার জন্য তাঁর কনডেম সেলের সামনে একটি সুপরিসর কবর খোঁড়ে রাখা হয়েছে।এমনি বিপদ সংকুল পরিস্থিতিতেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অবিচল, স্বাভাবিক। মানষিক ভাবে ছিলেন দৃড। অথছ ৬দফার একটি দফাও যদি বঙ্গবন্ধু চাড় দিতেন তাহলেও আজীবনের জন্য সারা পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হয়ে বাকী জীবন আরাম আয়েশেই কাটিয়ে দিতে পারতেন। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা প্রণয়ন, উপস্থাপন নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত। অতিবাম কমিউনিষ্টদের কেউ কেউ বলতেন যে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ৬দফা প্রস্তুত করে দিয়েছে। আবার উগ্র ভারত বিরোধীরা বলতেন এটি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা "র" তৈরী করে দিয়েছে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানোর জন্য। "৫৪ ইং সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অখন্ড ভারতের সকল দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল। তাঁদের সকলের সম্মতিতে ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছিল। নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করতে পারলে ২১ দফার আলোকে পাকিস্তানের শাষন তন্ত্র রচনা করবেন জনগনের নিকট অঙ্গিকার ছিল। '২১ দফা জনগন স্বত:স্ফুর্ত ভাবে গ্রহন করেছিল বিধায় যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আরোহন করেছিল। তাঁর পরবর্তি ইতিহাসে আমি যাবনা। আমি শুধু '২১ দফার একটি দফা পাঠকদের অনুধাবনর্থে এখানে তুলে ধরতে চাই---। এখানে ২১ দফার ১৯ নম্বরটি তুলে ধরা হল-- ============ ======= “ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তান কে স্বশাসিত ও ‘সভরেন্ট’ করা হবে এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যবস্থা ব্যতীত অন্য সব বিষয় অবশিষ্ঠাত্মক ক্ষমতাসহ পূর্ব পাকিস্তানে নৌবাহিনীর হেড কোয়ার্টার এবং একটি সমরাস্ত্র কারখানা নির্মাণ পূর্বক, পূর্ব পাকিস্তানকে আত্মরক্ষার স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে। আনসার বাহিনীকে সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা হবে।” সম্মানিত পাঠক বন্ধুরা উপরের কথাগুলোর সঙ্গে ছয় দফার কতটুকু দূরত্ব ছিল আপনারাই বিচার করবেন। আমি অত্যান্ত সংক্ষেপে ছয় দফার উল্লেখ করতে চাই। (১) ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান একটি যুক্তরাষ্ট্র হবে যেখানে প্রদেশসমূহ পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। পাকিস্তানে সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটের মাধ্যমে সার্বভৌম আইন পরিষদ গঠিত হবে। (২) কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবল দুটি বিষয় যথা দেশরক্ষা এবং বৈদেশিক নীতিতে সীমাবদ্ধ থাকবে। (৩) দুটি অঞ্চল যথা পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম অঞ্চলের জন্য সহজে বিনিময়যোগ্য দুটি পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থা চালু থাকবে। (৪) কেন্দ্রীয় সরকারের কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। এই ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অঙ্গরাজ্যগুলো থাকবে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার অঙ্গরাজ্যের রাজস্বের একটি নির্দিষ্ট অংশ লাভ করবে। (৫) পাকিস্তান ফেডারেশনভুক্ত দুটি অঙ্গরাজ্যের (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দুইটি পৃথক খাত থাকবে। বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত পূর্ব পাকিস্তানের আয় পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের আয় পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। (৬) আঞ্চলিক সংহতি এবং সংবিধান রক্ষার জন্য সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধাসামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রক্ষার ক্ষমতা দিতে হবে। অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানকে ইহার নিজস্ব আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন এবং পোষণের অধিকারী হবে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের পদত্যাগের পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৬৮-৬৯-এ আইয়ুবের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। জেনারেল ইয়াহিয়া নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু তার নির্বাচনী প্রচারণায় দ্ব্যার্থহীনভাবে বলেন যে, তিনি এই নির্বাচনকে ছয় দফার ম্যান্ডেট হিসেবে নিয়েছেন এবং ব্যাপক প্রচারেরও উদ্যোগ নিলেন। এখানে আমি আর একটি বিষয় গুরুত্ব সহ উল্লেখ করতে চাই--নির্বাচনের আগে পাকিস্তানকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়,চার প্রদেশের জন্য প্রাদেশিক সরকারের বিধান করা হয়।পশ্চিমাঞ্চলের অংশে একক তিন প্রদেশ পুর্বাংশে শুধুমাত্র পুর্ব পাকিস্তান(বর্তমান বাংলাদেশ)।এতেও ক্ষমতা পশ্চিমের হাতে থাকবে কিনা সন্দিহান হয়ে প্রেসিডেন্ট তাঁর নীজ ক্ষমতায় কি করতে পারবেন তাঁর উল্লেখ করে( পি-২) জারী করলেন।অর্থাৎ ""প্রেসিডেন্ট যদি মনে করেন নির্বাচিত সংসদ দেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তাহলে তিনি সংসদ বাতিল করতে পারবেন।"" এই ন্যক্কার জনক শর্ত থাকা শর্তেও বঙ্গবন্ধু সাধারন নির্বাচনে অংশ নিলেন। ""বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হওয়ার প্রয়োজন নেই,প্রয়োজন শুধু পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের ভাগ্যের ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার।যে অধিকার দেশে বিদেশে গ্রহন যোগ্য হতে পারে।"" নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্য পেলেন তিনি। ভোট পড়েছিল শতকরা ৫৫ ভাগ। প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৭৫ ভাগ আওয়ামী লীগের বাক্সে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের ভেতর ১৬৭টিতে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। এর সঙ্গে সংযুক্ত হয় মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৭টি আসন। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের ভেতর ২৮৮টি আওয়ামী লীগের দখলে.। ’৭০-এর নির্বাচনে পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো পাঞ্জাব এবং সিন্ধু প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। তবে বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠতার মতো নয়। শোনা যায় যে, পাকিস্তানের সামরিক এবং বেসামরিক গোয়েন্দারা নাকি এই মর্মে রিপোর্ট দিয়েছিল যে, কোনো দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। তাহলেই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ’৫৪-’৫৬ সালের মতো রাজনৈতিক খেলা খেলবে। বিধিবাম--বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকদের বলে দিলেন যে, ছয় দফা থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। কারন তিনি ছয়দফার ম্যান্ডেট চেয়ে জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ছয় দফার ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়ন করাই হবে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সাহেবের ঝুলিতে তখন যুক্তফ্রন্ট নির্বানোত্তর অভিজ্ঞতা। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাঙ্গালী জাতির স্বাতন্ত্রবোধ, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ""বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সব নির্বাচিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের ১৯৭১-এর ৩ ফেব্রুয়ারি রমনা মাঠে জনসমক্ষে এই মর্মে শপথ পড়ালেন যে,"" তারা কোনো অবস্থাতে ছয় দফা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত থেকে এক ইঞ্চিও সরে আসবেন না।""-----!! প্রীয় পাঠক বন্ধুরা,বঙ্গবন্ধু সুদুরপ্রসারী রাজনীতিবীদ। তিনি জানতেন ছয়দফা পাকিস্তানি শাষক চক্র মানতে পারবেন না।আর তাই ছয় দফা প্রনয়নের বছরই ঢাকা ইউনিভারসিটি কেন্দ্রিক"" নিউক্লিয়াস"" গঠন করে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুক্তির জন্য লড়াই করার সকল ব্যবস্থা পাকা করতে ছাত্র নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব বন্টন করে দিয়ে রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন বলেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একদল "" বিশ্বস্ত তরুন বাঙ্গালী অফিসার" ভারতের আগড়তলা পাঠিয়ে ভারতের সহযোগিতা কি হতে পারে তাঁর ধারনা নিয়ে রেখেছিলেন। " আর যদি ছয়দফা কোন কারনে মেনেও যায়,তাহলে পাকিস্তানের ইতিহাস হত অন্যরকম আর এক ইতিহাস।পশ্চিম পাকিস্তানের তিন প্রদেশ পুর্ব পাকিস্তানের নিকট থেকে স্বাধীনতা নেয়ার সংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হত হয়তোবা বহুযুগ।" পরিতাপের বিষয়, কমপক্ষে অর্ধশত বুদ্ধিজীবি বলেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি। ইতিহাস না জেনেও ইতিহাস বীদ হওয়ার খায়েশে নিত্য বিতর্কিত আলোচনাই নতুন প্রজম্মকে শেখানোর চেষ্টায় রত:। আহম্মকের দল ছোট্র কথাটাও বুঝতে চেষ্টা করেনা,"একক রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে থেকে আগে আক্রমন করা যায়না, এতে বহি:বিশ্বের স্বীকৃতি পাওয়া যেতনা"। স্বাধীনতা চেয়েছিল নাকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব চেয়েছিল, তাঁর রাজনৈতিক জীবন বিশ্লেষন করলেই পাওয়া যায়। ছয় দফাইতো বলে দিচ্ছে বঙ্গবন্ধু কি চেয়েছিলেন। নীরবেই চলে গেল ঐতিহাসিক ছয় দফার পঞ্চাশ বছর পুর্তির দিনটি। অথছ বঙ্গবন্ধুর সেই দিনের সকল বাধা উপেক্ষা করে ছয়দফা যদি উত্থাপন না করতেন তাহলে হয়তোবা বাঙ্গালী আজও পাকিস্তানের করদ রাজ্যের অন্তভুক্ত হয়েই থাকতে হত। দু:খ্যজনক হলেও সত্য কথাটি হচ্ছে, জাতির জনকের প্রতিষ্ঠিত দল বাংলাদেশের ক্ষমতায়, তাঁর চেয়ে বড় কথা তাঁর কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্বেও দিবসটি নিয়ে দলীয় অথবা রাষ্ট্রীয়ভাবে খুব বেশী তোড়জোড় পরিলক্ষিত হয়নি। জয় বাংলা জয়বঙ্গন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ইহা একান্তই চিরন্তন সত্য যে,৬ দফার সুত্র ধরেই আন্দোলনের তিব্রতা সৃষ্টি হয়েছিল, আগরতলা মামলার উদ্ভব হয়েছিল,বঙ্গবন্ধুকে জেল মুক্ত করতেই গন অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছিল।গন অভ্যুত্থানের কারনেই ৭০ এর নির্বাচনে বিধাল বিজয় অর্জিত হয়েছিল।বিজয়ের কারনেই মুক্তিযুদ্ধের অনিবায্যতা সৃষ্টি হতে পেরেছিল।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন