মুক্তিযুদ্ধে কেবল সম্ভ্রমই নয় স্বামীও হারিয়েছি : তাজিয়া ===================== ( কপি পেষ্ট)===== শরীফা বুলবুল: যুদ্ধে আমি কেবল সম্ভ্রমই হারাইনি, স্বামীকেও হারিয়েছি। অল্প বয়সে বিধবা হয়েছি। আমার স্বামী সরকারি চাকরি করতেন। ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে আর চাকরিতে ফিরে যাননি। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তার অনেক সাহস ছিল, শরীরে শক্তিও ছিল। মাঝে মাঝে আমার কাছে ডিম, ডাল, চাল কিনে পাঠাতেন। বলতেন, কষ্ট হবে জানি, তারপরেও নিজেদের রান্নার পর অতিরিক্ত রান্না হিসেবে এগুলোও রান্না করে দিও। নইলে আমার সহকর্মীরা না খেয়ে থাকবে। কখনো কখনো নিজের ঘরের ডিম, মুরগি রান্না করেও মুক্তিযোদ্ধাদের খাইয়েছি। ছেলেমেয়েগুলো ছোট ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্না করতে গিয়ে অনেক সময় সন্তানদেরও খোঁজ নিতে পারিনি। স্বামী ৭-৮ দিন পরপর বাড়ি আসতেন। কখনো কখনো রান্না করে রাখতাম। লোক এসে নিয়ে যেত। একদিন দুপুরবেলা স্বামী ঘরে আসছিলেন। এমন সময় খবর পেয়ে পাকিস্তানি আর্মিরা এসে স্বামীকে ধরে বটতলায় নিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। এর পর আমাকে নির্যাতন করে। চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের আইনপুর গ্রামের তাজিয়া খাতুন ভোরের কাগজের কাছে এভাবেই একাত্তরের বঞ্চনার কথা বললেন। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্নাবান্না করেছেন। হারিয়েছেন প্রিয় স্বামীকেও। সেই থেকে আজও তিনি বিধবা হয়েই বেঁচে আছেন। বয়সের ভারে ন্যূব্জ তাজিয়া খাতুন ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না, আবার বলতে পারলেও ভালোভাবে শোনেন না। সম্প্রতি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় বীর নারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাজিয়া খাতুন জানান, তার বাবার নাম নিজাম উদ্দিন। মায়ের নাম আইনবী। বাবা-মায়ের তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ৬০ দশকের শুরুর দিকে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার দক্ষিণ দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়নের বিচুন্দাইর গ্রামে সরকারি চাকরি করা ফুল মিয়ার সঙ্গে অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়ের মা হন। তাজিয়া জানান, তার স্বামীর বাড়ি কুমিল্লার বিচুন্দাইর গ্রামে হলেও তিনি এখন বড় ছেলে আবদুল খালেকের সঙ্গে থাকেন। আবদুল খালেক বিচুন্দাইর থেকে চলে গিয়ে মাইজাখার ইউনিয়নের বামলীখোলায় শ্বশুর বাড়িতে বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। তাজিয়া খাতুন একদিকে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ফুল মিয়ার স্ত্রী, অপর দিকে তিনি নিজেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী। মুক্তিযোদ্ধার নির্যাতিত স্ত্রী এবং মুুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী এ দুই পরিচয়ের দাবি নিয়েই তিনি দাবি জানান, স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ফুল মিয়ার কবরটি যেন সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়। তিনি বলেন, যে দেশের জন্য আমার স্বামী জীবন দিল, আমি বিধবা হলাম- সেই দেশ, সরকার আজও আমার স্বামীর কবরটি সংরক্ষণ করেনি। জেলা প্রশাসক আমাকে জমি দিয়েছে, সম্মান জানিয়েছে ভালো কথা। এতে আমি খুশি এবং কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার এখন একটাই দাবি- বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার স্বামীর কবরটি সংরক্ষণ করা হোক। যাতে কবরের সামনে দিয়ে যখন মানুষ চলাচল করবে তখন যেন বলতে পারে এটি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফুল মিয়ার কবর। যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। সরকারের কাছে আমার শেষ জীবনে এই একটি মাত্র চাওয়া। পাশাাপশি তাজিয়া খাতুন আরো একটি দাবি জানালেন, সরকার যেন তার নাতিদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। বাড়ি থেকে ধরে এনে বটতলায় প্রকাশ্য দিনেরবেলায় পাকবাহিনী মেরে ফেলে ফুল মিয়াকে। তাকে মারার পেছনে স্থানীয় রাজাকারদেরও সহায়তা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার করছে এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। তবে বড় রাজাকারদের বিচার করলে হবে না। আমার স্বামীর মতো মুক্তিযোদ্ধাদের যারা নির্বিচারে মেরেছে তাদেরও বিচার করতে হবে। তাহলে মরেও শান্তি পাব।
সরকার মুক্তিযুদ্ধে মহিয়ষী নারী, যারা ইজ্জত বিলীয়ে আমাদের প্রীয় দেশকে, বাঙ্গালী জাতিকে ঋনের জালে আবদ্ধ করেও, বর্তমান স্বাধীনদেশে মানবেতর জীবন যাপন করছেন,তাঁদের মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।সুতারাং তাঁরাও সংগত কারনে ভাতার আওতায় আসবে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমলা তান্ত্রীক জটিলতা পরিহার করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ততই মঙ্গল হবে বিরঙ্গনা সেই বোন এবং তাঁর পরিবারের জন্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন