বিশ্বমানবতার কল্যানে প্রেরিত ইসলাম ধর্ম বাংলাদেশের হেফাজতে বিভ্রান্ত!!
(রুহুল আমিন মজুমদার)

      হাইকোর্টের সামনে রক্ষিত ন্যায় বিচারের প্রতিক ভাস্কায্যকে হেফাজতে ইসলাম দেবিমূর্তি নাম দিয়ে সরানোর জন্যে সরকারকে টাইমপ্রেম বেঁধে দিয়ে হুমকি দিয়েছেন। অনেকেই হেফাজতের এই হুমকিকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধ সমালোচনাকে ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহ এবং গহ্যিত কাজ মনে করে প্রকারান্তরে হেফাজতের পক্ষাবলম্বন করেছেন। আমিও ব্যাক্তিগতভাবে তাঁদের সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমিও মনে প্রানে বিশ্বাস করি, সত্যিকার অর্থেই মুর্তিস্থাপন মস্তবড় পাঁপ এবং বড় ধরনের গোনাহ।

     আমি আরো মনে করি গনতান্ত্রিক সমাজে বাস করা, গনতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া, গনতন্ত্রের অন্যতম বাহন বাকও ব্যাক্তি স্বাধীনতা ভোগ করা, গনতান্ত্রিক অধিকারের  সুযোগ গ্রহন করে আন্দোলন করা, বাক সস্বাধীনতার সুযোগ গ্রহন করে বক্তৃতা বিবৃতি প্রকাশ করা--ইত্যাদি সমস্তই মস্ত বড় বড় গুনাহের কাজ। মুলত: গনতন্ত্রে ভোগ, চাওয়া, পাওয়া, সমস্তই পাপ এবং বড় ধরনের গোনাহ।

      আল্লাহ প্রদত্ত ঐশ্বরিক গ্রন্থ আল কোরানের আলোকে বিশ্বব্রম্মান্ডের মানবজাতির কল্যানে তাঁর প্রেরিত দূত(রাসূল স:) কতৃক প্রবর্তিত ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি অনুসারে  একটি আধুনিক, জন কল্যানকর, সাম্য ও সমতা ভিত্তিক রাষ্ট্র শাষন ব্যবস্থার নাম হচ্ছে "ইসলামি শাষন ব্যবস্থা"। অপরপক্ষে গণতন্ত্র আল্লাহর সৃষ্ট অসংখ্য জীবকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠজীব মানবজাতি কতৃক প্রবর্তিত বিদ্যমান বিশ্বের উন্নত, আধুনিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক,  কল্যানকর রাষ্ট্র শাষন ব্যবস্থার আধুনিক নাম হচ্ছে "গনতান্ত্রিক শাষন ব্যবস্থা"। উভয়ের মধ্যে নিশ্চিত আল্লাহর প্রেরিত গ্রন্থের আলোকে এবং তাঁর প্রিয় বন্ধু নবী মোহাম্মদের প্রবর্তিত ও প্রচারিত জীবন বিধান--"নি:সন্দেহে শ্রেষ্ঠত্বের দাবী রাখে।" ইসলামী জীবন বিধান বা ইসলামী শাষন শ্রেষ্ঠ--ইসলাম ধর্মের অনুসারি সকল মসুলমানকে  অবশ্যই ইহার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।

     ইসলাম ধর্মের অনুসারী যে কোন কাউকে উভয়ের মধ্যে একটিকে যদি বেছে নিতে বলা হয়, তিনি যদি একজন খাঁটি মোমিন হন  "ইসলামী শাষন ব্যবস্থাকে"ই  বেছে নিবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই।

     মানব সৃষ্ট গনতান্ত্রিক শাষনে বহু মত ও পথের অস্তিত্ব বিদ্যমান।গনতন্ত্র আধুনিক ও সৃজনশীলতার পূজারি।অন্যদিকে ইসলামী শাষন ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক, একমতের, একপথের। ইসলামী শাষনে কোরান ও হাদিসের আলোকে আইন প্রনয়ন, প্রয়োগ, শাষনকায্য পরিচালনা ইত্যাদি বাধ্যতামূলক।গনতন্ত্রে যুগের চাহিদা অনুযায়ি পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকোচন, সংযোজন রীতি সিদ্ধ।অন্যদিকে ইসলামী শাষনে যুগের চাহিদা অনুযায়ি নবীজি কতৃক নির্দিষ্টদের দ্বারা পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকোচন, সংযোজন রীতি সিদ্ধ। তবে অবশ্যই তাহা "পবিত্র কোরান ও হাদিসের" অভ্যন্তরে থেকেই করতে হবে।কোরানের একটি শব্দ, জের, যবর পরিবর্তন করার ক্ষমতা কেয়ামত পয্যন্ত আল্লাহ কাউকে দেননি, এবং কি তাঁর প্রিয় বন্ধু নবীজিকেও নয়। আল্লাহ নিজেই তাঁর প্রেরিত সর্বশেষ  পবিত্র কিতাব "আল-কোরানে ঘোষনা করেছেন--তিনিই "একমাত্র এবং একমাত্র উক্ত কিতাবের হেফাজতকারি।" কোরান হেফাজতের  অর্থই ইসলাম ধর্মের হেফাজত, কোরানের হেফাজতকারি যেহেতু আল্লাহ স্বয়ং ইসলাম ধর্মের হেফাজতকারীও অবশ্যই স্বয়ং তিনি। এই জন্য নবীজি আল্লাহর হুকুমে তাকাওর বিদায়ি ভাষনে বলে দিয়েছেন--"এর পর আর কোন কিতাব আসবেনা, আর কোন নবীও আসবেনা, আর কোন ধর্মও আসবেনা।" আসেওনি এই পয্যন্ত ভবিষ্যতেও আসবেনা ইহাই সত্য।
 
    আল্লাহ তাঁর নবীর মাধ্যমে মক্কা জয়ের উদাহরন, মক্কা নগরকেন্দ্রিক ইসলামী শাষন ব্যবস্থা প্রবর্তন, নগর রাষ্ট্রকে ইসলামী সাম্রাজ্যে রুপান্তর, ইসলামী রাষ্ট্র শাষন ব্যবস্থার লিখিত নীতি, নবীজির মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় শাষনভার পরিচালনার পদ্ধতি ইত্যকার সমূদয় বিষয়াবলীর প্রত্যক্ষ নজির নবীজির মাধ্যমে  পরবর্তি ইসলাম ধর্মের অনুসারি প্রজম্ম থেকে প্রজম্মান্তরের অনুসরন, অনুকরনের নিমিত্তে স্থাপন করেছেন। নবীজির মৃত্যুর পর তাঁর বিশ্বস্ত চার সাহাবী ক্রমানুসারে ইসলামী সাম্রাজ্যের খেলাফতের খলিফার দায়িত্ব পালন করার নজির বা উদাহরন প্রজম্মান্তরের জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন।
 
    আগেই উল্লেখ করেছি পবিত্র কোরানের সামান্যতম পরিবর্তন করার ক্ষমতা আল্লাহ কাউকে দেননি।নবীজির কথা, কাজ ইত্যাদি হাদিস আকারে পরবর্তি মুসলিম ধর্মালম্বিদের অনুসরন, অনুকরন বাধ্যতামুলক। কোরানের যেমন কোন পরিবর্তন গ্রহনযোগ্য নয় তেমনি হাদিসেরও কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকোচন, বিয়োজন গ্রহনযোগ্য নয়। তাহলে দেখা যায় নবীজি যেরুপে ইসলাম প্রচার প্রসারে তাঁর কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন, উহাই একমাত্র ইসলাম ধর্ম প্রচারের সঠিক পথ। নবীজি যেইরুপে রাষ্ট্র জয়, শাষন, খলিফা মনোনয়ন, জীবন যাপন ইত্যকার কায্যাদি সম্পন্ন করেছেন--"উহাই ইসলামের সঠিক রীতি এবং নীতি।" সর্বযুগে উক্তরুপ রীতিনীতি অনুসরন, অনুকরন প্রত্যেক মসুলমানের জন্যে অবশ্যই বাধ্যতামূলক এবং কর্তব্য। ব্যাতিক্রমে অবশ্যই বে'দাত, ইসলামের অনুশাষন অমান্যকারি, খোদাদ্রোহি, ইসলামের সাথে সম্পর্ক চিহ্নকারি,  মোনাফেক হিসেবে পরিচিত হবেন।

      এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই---ইসলাম ধর্ম পালন, ইসলাম ধর্মের অভ্যন্তরীন আরকাম, আহকাম পালন, পবিত্র কোরান অনুসরন, সেই মতে নিজের জীবন পরিচালনার কথা বার বারই কোরান ও হাদিসে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্ত্যু এই সমস্ত কায্যাদি সম্পন্ন করার জন্যে অবশ্যই "ইসলামী শাষন ব্যবস্থা কায়েমে"র প্রয়োজন রয়েছে, তেমন কোন তাগিদ আল্লাহ তাঁর কোরান  বা  রাসূল তাঁর হাদিসে দেননি। বরঞ্চ কাফের, বিধর্মী শাষনে ইসলাম ধর্মের অনুসারি মুসলিমদের জীবন যাপন, আল্লাহর এবাদতে মুসলিম কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার চেয়ে ভিন্নতর কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।মুসলিমদের যে যেখানেই বসবাস করুক না কেন, সে সেই দেশের আইনকানুন, রীতিনীতি মেনে দেশপ্রেমের উদাহরন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং দেশপ্রেমকে "ঈমানের অঙ্গ" হিসেবে ঘোষনা করেছেন।

ইসলামী শাষন ব্যবস্থা ব্যাতিরেকে ধর্ম পালন যথাযথ নয় এমনটি যদি হতই তাহলে আল্লাহর অনুগ্রহেই বিশ্বব্রম্মান্ডে একাধিক ইসলামী হুকুমতের দেশ পরিলক্ষিত হ'ত।অথবা মরনপন লড়ায়ের মাধ্যমে হলেও ইসলাম ধর্মের অনুসারি কোটি কোটি মুসলিম তৌহিদি জনতা নীজেদের একটি আবাস ভুমি প্রতিষ্ঠা করতেন। তথায় ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ধর্ম পালন করতেন অথবা অন্যভাবে বলা যায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। যেহেতু ইসলামী হুকুমত ব্যাতিরেকে ধর্মকর্ম পালনে শুদ্ধতা আসার অন্যকোন বিকল্প পথ সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাখেননি। তদ্রুপ কি হয়েছে বা  ঘটেছে?

আল্লাহ এক হুকুমে সারা জাহান সৃষ্টি করেছেন, আর এক হুকুমে আদম (অ:) এবং বিবি হাওয়া (রা:)কে সৃষ্টি করেছেন। একলক্ষ বা দুইলক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বর পাঠিয়েছেন--তাঁদের মাধ্যমে একশত চারটি আসমানী পবিত্র কিতাব পাঠিয়েছেন। তাঁর দুনিয়ায় সৃষ্ট মানবজাতিকে সু-পথে আনার জন্যে, তাঁর এবাদত করার জন্যে।আর একটি হুকুমে কি তাঁর প্রিয় ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের জন্যে আলাদা একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে পারতেন না? বা সমুদয় মানব জাতিকে ইসলাম ধর্মে উদ্ভোদ্ধ করতে পারতেন না ? কেন করেন নি?
   
     নবী (স:) যখন সদলবলে মক্কা জয় করেন তখনও মক্কা শরিফের ভিতরে তিনশত ষাটটি মূর্তি রক্ষিত ছিল।তিনি সব গুলী মুর্তি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কথিত আছে একটামাত্র মুর্তির অস্তিত্ব রেখে দেয়া হয়েছিল আগামী প্রজম্মের নিকট উদাহরন হিসেবে তুলে ধরার নিমিত্তে। অর্থাৎ বিজিত মক্কা নগরীতে আর কোন মুর্তির অস্তিত্ব ছিল না। সম্পুর্ণ মক্কা ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের বাসস্থানে পরিণত হয়েছিল। তারপরেই মক্কা নগরীকে "পবিত্র নগরি" ঘোষনা করেছিলেন নবীজি (স:)--তাঁর আগে নয়।


   পাঠক বন্ধুরা, সাধারন মুসলিম পরিবারে জম্মগ্রহন করার কারনে আমিও ইসলাম ধর্মের অনুসারি হিসেবে, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে শ্রবন করা বক্তব্যের আলোকে নিজের ধর্মের সঙ্গে বর্তমানের ইসলাম ধর্ম প্রচারকারি, প্রতিষ্ঠাকারী, ধারক, বাহকদের বৈপরিত্য সম্পর্কে কিঞ্চিত সঞ্চিত জ্ঞানের আলোকে আলোচনা করতে পারি।কিন্ত্যু তাঁদের চেষ্টা  কোন অবস্থায় সম্পূর্ণ বা আংশিক সঠিক নয় বলতে পারিনা। পাঠক গনের উপলব্দিতে যাঁর যেমনটি আসে তাঁর তেমনটি বোধগম্যতা জাগিয়ে সঠিক সত্য, বেদাত, মিথ্যা যাছাইয়ের সুযোগ হতে পারে চিন্তা থেকেই আলোচনার সুত্রপাত।কারন ধর্মীয় জ্ঞান ধারন করার ক্ষমতা আল্লাহ আমি এবং আমার ন্যায় কোটি কোটি জম্মগ্রহনেই ইসলাম ধর্ম অনুসারীকে দেয়নি।

উল্লেখিত আলোচনায় প্রকাশ পেয়েছে ইসলামের হেফাজতকারী একমাত্র আল্লাহ। অন্য কেহ ইহার দাবীদার হ'তে পারেনা। তদ্রুপ যদি কেহ বা কোন মহল দাবীদার অনুমেয় হয়, তবে নিশ্চিত ধরে নেয়া যায়, তিনি বা তাঁরা খোদায়ী দাবীকারক? খোদায়ী দাবীকারক নি:সন্দেহে শিরকের সামিল।সুতারাং হেফাজতে ইসলামের নামের মধ্যেই অর্থ্যাৎ অংকুরেই শীরকের গন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। ইসলামী শাষন ব্যবস্থা প্রবর্তনের আন্দোলন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে সমর্থন যোগ্য এবং অবশ্যই সঠিক।হেফাজতে ইসলাম "ইসলামী শাষন ব্যবস্থা" কায়েমের লক্ষে আন্দোলনরত:,নাকি 'ইসলামের হেফাজত' করার আন্দোলনরত:? তাঁরা প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে একাধিকবার বলেছেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার লোভ তাঁদের মধ্যে কারো নেই। অন্যদিকে ইসলামের হেফাজতকারীর অধিকার আল্লাহপাক নীজের কাছেই রক্ষিত রেখেছেন, তিনি তাঁর কোরানেই স্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন। ইসলামের হেফাজতকারীর ভুমিকায় অবতীর্ন হয়ে "হেফাজতে ইসলাম" আল্লাহর সমকক্ষ দাবীদারের ভুমিকায় অবতির্ন হয়েছেন কিনা--"প্রকৃত আলেম, ওলামা, ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারিগন অবশ্যই ভেবে দেখার সময় হয়েছে।"

দ্বিতীয়ত আলোচনায় এসেছে, নবী (স:) মক্কা জয় করার পর কাবা ঘরের সকল মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছিলেন। হেফাজতে ইসলাম সহ অপরাপর ইসলামী দল সমূহ বাংলাদেশের আনাছে কানাছে অসংখ্য তথাকথিত মূর্তির অবস্থান অক্ষুন্ন রেখে, শুধুমাত্র হাইকোর্টের সামনের কথিত 'দেবিমূর্তি' সরানোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। তাঁরা কি ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বা অন্যকোন নগরী জয় করে ইসলামী হুকুমত কায়েম করেছেন? কোন নগর, বন্দরে ইসলামী ঝান্ডা স্থাপন ব্যাতিত ইসলামের দৃষ্টিতে "বাতিল গনতান্ত্রিক শাষন ব্যাবস্থা" এবং এর সরকারের সঙ্গে তাঁরা কি জোর জবরদস্তি মূলক ফ্যাসাদে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টারত: হননি? ইসলামী শাষন ব্যাতিত তদ্রুপ ফ্যাসাদ সৃষ্টি ইসলাম ধর্ম কি অনুমোদন করে?

    আমাদের দেশের ইসলামের ধারক বাহক "হেফাজতে ইসলাম" সহ অন্যান্ন ইসলামী দল সমূহ সারাদেশে লক্ষ লক্ষ কথিত মুর্তি উচ্ছেদ, সরানো, ভাঙ্গার আন্দোলনে সম্পৃত্ত নয়। মূর্তি স্থাপন  না করার সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রয়োজন "ইসলামী হুকুমতের সরকার প্রতিষ্ঠা।" একক ইসলামী শাষন ব্যবস্থা কায়েমের  লক্ষে জনমত সংগঠিত হওয়া পয্যন্ত অপেক্ষা না করে, গনতান্ত্রিক সরকারের নিকট মূর্তি সরানোর আবেদন বা দাবী, ইসলাম কি অনুমোদন করে?নবীজি কি মক্কা জয় করা পয্যন্ত কাফেরদের নিকট 'কাবাঘরে' রক্ষিত মুর্তি সরানোর আবেদন করেছিলেন? একটি মাত্র মুর্তি সরানো বা ভাঙ্গার আন্দোলনের অর্থ কি বাতিল "গনতান্ত্রিক সরকারের" সাথে ফ্যাসাদে জড়ানো নয়? ফ্যাসাদ সৃষ্টি বা ফ্যাসাদে লিপ্ত হওয়া ইসলাম কি অনুমোদন করে?

   বর্তমান বিশ্বব্যাবস্থায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গনতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্র সমূহ পরিচালিত হচ্ছে। একক ইসলামি অনুশাষনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিশ্বের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না।কোন কোন ইসলামী রাষ্ট্র আংশিক গনতন্ত্রের মধ্যে থেকে সকল ধর্মের অনুসারি গন নিজ নিজ ধর্মকর্ম,  উৎসব, আনন্দ উপভোগরত: রয়েছে। ইসলামের পিতৃভূমি আরব দেশ সহ অন্যান্ন সকল মুসলিম প্রধান দেশেই স্ব-স্ব জাতির জনকের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। সকল রাষ্ট্রেই মুসলিম জাতির জনক হযরত ইব্রাহিম (অ:) এবং নিজস্ব জাতির সত্বার জনকের বিভাজন রেখে, জাতি সত্বার উম্মেষকারির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করার রীতি চালু রেখেছেন।
গনতন্ত্রের সৃজনশীলতার অংশ হিসেবে সকল দেশেই তাঁদের নিজস্ব জাতি গোষ্টির শিল্প সাহিত্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি চর্চা কমবেশি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধর্মকর্মও যথারীতি ভাবগাম্ভিয্য নিয়ে পালিত হচ্ছে--কোথাও কোন মুসলিম প্রধান দেশেই আলেম ওলামাদের কোনরুপ সমস্যা হচ্ছে, তেমনটি শুনা যায়না।শুধু মাত্র বাংলাদেশে বাঙ্গালী জাতির পিতা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, বর্তমান সময়ে হাইকোর্টের সামনে রক্ষিত ন্যায় বিচারের প্রতিক ভাস্কায্যে সমস্যা হচ্ছে--"তথাকথিত হেফাজতে ইসলাম সহ কতিপয় ধর্মীয় দলের।"

       অথচ সৌদি আরবের জেদ্দাতেই আছে দুই দুইটি মূর্তি! একটি উটের ‘মূর্তি’, আরেকটি মুষ্টিবদ্ধ হাত সদৃশ ‘মূর্তি’। এসব নিয়ে সেই দেশের আলেম সমাজের মধ্যে কোনো সমস্যা হয় না। বর্তমান সৌদী বাদশাহর সর্ব বৃহৎ মূর্তি প্রতিস্থাপিত হয়েছে এই সেই দিন। আলেম ওলামাদের মধ্যে কোনরুপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়নি।

পারস্যের কবি শেখ সাদীর নাম আমরা সবাই শুনেছি,বাংলাদেশের আলেম ওলামাগন তাঁর রচিত হামদ ও নাৎ মধুর স্বরে কন্ঠে ধারন করে শ্রোতামন্ডলিকে বিমুগ্ধ করে রাখেন।’-এ দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারন মুসলমানেরা মিলাদে সব সময় পাঠ করে থাকেন--‘বালাগাল উলা বি কামালিহি কাশাফাদ্দুজা বি জামালিহি।’ বাংলাদেশের তথাকতিথ "হেফাজতে ইসলাম" কি জানেনা, শেখ সাদীর মাজারের সামনেই তার একটি মর্মর পাথরের ভাস্কর্য আছে। সেখানকার মাদ্রাসার ছাত্ররা তা কখনো  ভাঙেনি বা ভাঙ্গার আন্দোলনও করেনি।

ইসলামি রাষ্ট্র ইরানে অবস্থিত কবি ওমর খৈয়াম ও মহাকবি ফেরদৌসির ‘মূর্তি’  স্থাপন করা আছে।সেই দেশের আলেম ওলামাদের উক্ত মুর্তি সরানোর আন্দোলন করতে শুনা যায়নি।তাছাড়া সেখানে ক্ষমতায় রয়েছে ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারি আলেম সমাজ,তাঁরা ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তেহরানে অজস্র মানুষের প্রতিকৃতি সম্বলিত ‘মূর্তি’ নিয়ে সে দেশের ক্ষমতাসীন আলেমদের সরকারের কোন সমস্যা হয়েছে বলে শুনা যায়নি।  সিরিয়ার ন্যাশনাল মিউজিয়ামে থাকা ‘মূর্তি’ নিয়েও সেই দেশের আলেম ওলামাদের কোন সমস্যা হয়েছে এ পয্যন্তও শুনা যায়নি।

একটিমাত্র মূর্তি নিয়ে বাংলাদেশে কেন সমস্যা হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের?
অথচ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের জবাবে পরিস্কার বলেছেন,‘এটা  মূর্তি নয়। এটা স্কাল্পচার (ভাস্কর্য)।  উক্ত ভাস্কায্যের মধ্যে দেখানো হয়েছে তিনটি জিনিস। একটি হলো দাঁড়িপাল্লা---"ন্যায়বিচারের সূচক। হাতে একটি তলোয়ার---"দণ্ড বা শাস্তির সূচক"। তৃতীয়টি চোখ বাঁধা-- অর্থাৎ নিরপেক্ষ বিচার বা বিচারকের চোখ অন্ধ অর্থে। তিনি আরো বলেছেন-- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই বিচারের নিরপেক্ষতা তুলে ধরা হয় এই স্কাল্পচার  বা ভাস্কায্য দিয়েই।’ তদোপরিও আমাদের তথাকথিত ইসলামের হেফাজতকারিরা মানতে নারাজ, মুর্তি সরাতেই হবে।

     উক্ত বিষয়ে উপসংহারে বলতে পারি--সূদুর অতীতকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের একশ্রেনীর আলেম ওলেমা, ইসলাম ধর্মজ্ঞান শুন্য ব্যাক্তি ও দল, আরবি জ্ঞানার্জনের ধারে কাছে না যাওয়া তথাকথিত আলেম ওলামা, বর্তমান সময়ে উপমহাদেশে নতুন অবির্ভুত ইসলামি জ্ঞানসম্পন্ন আলেম ওলেমা কতৃক গঠিত 'ইসলামের হেফাজতকারি' পবিত্র ধর্ম ইসলামকে যত্রতত্র ব্যবহার করে সাধারন ধর্মপ্রান মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় ব্রতি ছিলেন, আছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতেও প্রক্রিয়াটি আরো শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যমে জোরালো ভাবেই অব্যাহত রাখবেন।
অতীতে যতবারই সাধারনের ধারনায় "আল্লাহ ও তাঁর নবী বিরুদ্ধ ধর্মাশ্রয়িগন" শক্তি সঞ্চয় করে সাধারনের উপর চড়াও হয়েছেন, বা হওয়ার চেষ্টা করেছেন, ততবারই নাজেহাল, নিয্যাতীত, লানতের ভাগিদার হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন। ইহা কি ধর্মদ্রোহিতার কারনে স্বয়ং আল্লাহর পরোক্ষ প্রত্যক্ষ হুকুমে তাঁর নির্দেশিত লানতের নজির নয়?

      বর্তমানেও সারা বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ট ইসলাম ধর্ম অনুসারি দেশ সমূহের আলেম ওলামাদের বিপরীতে বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের অবস্থান পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোনপ্রকার মন্তব্য না করে শুধুমাত্র বলা যায়--হয় বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ অথবা হেফাজতে ইসলাম ধর্মদ্রোহি, মোনাফেক--নয়তো সারা বিশ্বের মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিক অথবা আলেম সমাজ ধর্মদ্রোহী, মোনাফেক।
যেহেতু বিশ্বমানবতার কল্যানে প্রেরীত ইসলাম ধর্মের বিভিন্নদেশে বিভিন্নরুপ হওয়ার কোন সুযোগ অতীতেও ছিলনা, বর্তমানেও থাকার কথা নয়, ভবিষ্যত সে তো সুদুরপরাহত।
        ruhulaminmujumder27@gmail.com
   
    

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যাতত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ঐতিহ্যে বিতর্ক উত্থাপনের অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করে,মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার মত দৃষ্টতা দেখিয়ে নি:সন্দেহে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এহেন গর্হিত বক্তব্য প্রদানকারী বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখতে পারেননা।মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কোন দল বা জোটের রাজনীতি করারঅধিকার নীতিগতভাবেই থাকতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সকল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে সর্বচ্ছ আদালতের রায় অনুযায়ী '৭২এর সংবিধান অবিকল বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।বাংলাদেশেরজনগন চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক,মুক্তিযুদ্ধে সাগরসম রক্ত ঢেলে সেই অঙ্গিকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাসকরে,পরাধীনতার গান শুনতে দেশ স্বাধীন করেনি বাংলার জনগন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বিরামহীন সংগ্রামের ফসল মুক্তিযুদ্ধ।সেইযুদ্ধে উপনিবেশিক পাকিস্তানের আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালীরা পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিল।সেই স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেপরাজিত শক্তির দোষর,তাঁদের প্রেতাত্বাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।জাতির জনক তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রাজাকারের কোন স্থান দিতে চায়না। তাই খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমুলক সাজার আশা পোষন করে।কোন রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁদে যেন এই মামলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাঁর গ্যারান্টিও সরকারের নিকট বাংলাদেশের জনগন চায়। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু Ruhul Amin ------------------------------ খালেদা জিয়াকে সমাবেশের অনুমতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আশাহত----04 /01 / 0016 ইং পোষ্ট -==================================প্রখ্যাত দার্শনিক,চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে কম বেশি আমরা সবাই জানি।সক্রেটিস কোন যুগে জম্মগ্রহন করে মানব সেবায় ব্রতি হয়ে আজও দেশে দেশে অনুকরনীয় অনুসরনীয় হয়ে আছেন তাও আমরা জানি।নিশ্চয়ই তখনকার সময় থেকে বর্তমানের সমাজ, রাষ্ট্রব্যাবস্থাপনা আরো শত গুন উন্নত,সমৃদ্ধ,সভ্য।সক্রেটিস ছুতোর, কামার ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে প্রশ্ন করতেন, 'তাহলে রাষ্ট্র নামক জাহাজটি বিগড়োলে কাকে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করাবো'হাসান আজিজুল হক (সক্রেটিস) পৃ : ১৬ সক্রেটিসের এ বিখ্যাত কথপোকথন কারো অজানা নয়। আদর্শবান ন্যায়নীতিভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করবার জন্য সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে দেয়া হয়েছিল(বিষ), তারপরও তিনি আইনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন- এটাও ছিল তার নির্ভীক বিদ্রোহ। তাকে বাঁচবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আইনঅবজ্ঞা করেননি, আইনে যদি তার মৃত্যুদন্ড হয় তবে তিনি অবশ্যই তা মানতে রাজি। এখানেও তার সমস্ত জীবনকর্মের অনেক গভীর দর্শন কাজ করেছে। তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল একথা তিনি ও এথেন্সবাসী জানতেন। কিন্তু যে আইনে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো- তিনি সে আইনকে শ্রদ্ধা জানালেন এ অর্থে মানুষকে আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বললেন। সেই আইন কারা তৈরি করছে তা তিনি জানতেন তাতে তো আর আইন নামক বিষয়টিকে জীবন থেকে বিতাড়িত করা যায় না।"পবিত্র কোরানে পাকে ও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধর্মী কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ও সরকার সমুহের আইন মেনে ধর্ম কর্ম করার।এই রুপ রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় শুক্রবারের খতবায় বিশেষ আয়াৎ সংযুক্ত আছে এবং নিয়মিত নামাজের সাথে আর ও কয় রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দেয়া আছে।পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে,গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেনীর মানুষ রাষ্ট্রীয় আইন রীতি নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্ব উচ্চ আদালতের রায়কে ও অমান্য করে হরতাল অবরোধ,প্রকাশ্য আদালতের সমালোচনা করতে।শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামেপ্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রীভর্তি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানবকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা এই সমস্ত আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন,এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন যে আদালতের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেয়া যায়,বক্তব্য দেয়া যায়,তাঁরা কখনই কোন অপরাধীর বিচার কায্য সম্পাদন করেছেন তদ্রুপ কোন উদাহরন নেই। যেমন আমি প্রথমেই বলতে চাই ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছেন রাতের অন্ধকারে।বঙ্গবন্ধুর অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? পৃথীবিপৃষ্টের সব চাইতে নিরাপদ স্থান জেলখানা।সেখানে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাহল,তাঁরা বন্দি ছিলেন, তারপর ও তাঁদের অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকেতুলে নিয়ে জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হল, তাঁদের অপরাধ কি বিচার করে মিমাংসা করা যেতনা? খালেদ মোশারফ., কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য মুক্তি যুদ্ধা সেনা অফিসারকে মেজর জিয়ার নির্দেশে নির্মম নির্দয় ভাবে হত্যা করা হল, অনেককে গুলী করার পর প্রান পাখী উড়াল দেয়ার আগেই জ্যান্ত মাটি চাপা দেয়া হল, তাঁদের বিচার কি প্রচলিত সেনা আইনে করা যেতনা? অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা,আওয়ামী লীগের নেতা,মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারি,ব্লগার,প্রকাশক,লেখক সাহিত্যিক,সাংবাদিক হত্যা করা হল,তাঁদের অপরাধ কি আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতনা?আন্দোলনের নামে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যা করা,সম্পদ নষ্ট করা,লুটপাট করা কি মানবতা বিরুধী অপরাধের আওতায় পড়েনা?মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হতে পারে,যুদ্ধাবস্থা ব্যাতিরেকে ঘোষনা দিয়ে তদ্রুপ কর্মে জড়িতদের এবং হুকুমদাতার বিচার কেন হবেনা? নগদ অপরাধের ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা কি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয়? নাগরীকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁরা কি বিচার পাওয়ার সাংবিধানীক অধিকারের মধ্যে পড়েনা?সেই যুগের সক্রেটিস যদি নীজের উপর আনীত মিথ্যা অভিযোগ জেনে শুনে মেনে নিতে পারেন,সভ্যতার চরম শীখরে দাঁড়িয়ে যারা এই যুগে আইনকে, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্য আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছেন,সম্পদের হানী ঘটিয়েছেন তাঁরা কি সক্রেটিস যুগের আগের অধিবাসি মনে করেন নীজেদের? তাঁরা নীজেরা নিজেদের মনে করুন কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে কোন যুগে ফিরিয়ে নিতে চান?তাঁদের যদি এতই অসহ্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ কিছু আদর্শের প্রতিপালনের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৩০লক্ষ শহিদের আত্মদান,পৌনে চারলাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস- তবে জনগনকে সংঘটিত করে আর একটি গনবিপ্লব ঘটিয়ে তাঁদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষ বাধাতো দিচ্ছেনা। যাদের নেতৃত্বে, যাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল, তাঁরাতো ক্ষমতায় আছে,তাঁদের কেন জোর পুর্বক,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খমতা থেকে নামাতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত করতে দেয়া হবে।এই সেই দিন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যিনি বিতর্ক উত্থাপনের বৃথা চেষ্টা করে জনরোষের আওতার মধ্যে এখনও রয়েছেন,তাঁর সৌখিন বাসভবন পাহারায় আপনার সরকার অতিরীক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে,তিনি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করার প্রসাশনিক অনুমতি পায়। বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্বের একটি দেশের উদাহরন কি কেউ দিতে পারবেন,স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে?একটি দেশকি কেউ দেখাতে পারবে যে,সেই দেশের কোনমীমাংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত কোন সত্যকে ৩০/৪০ বছর পর আবার জনসমক্ষে উত্থাপন করে লক্ষ লক্ষ শহিদ পরিবারের অন্তরের আগুনে"ঘি "ঢেলে দেয়ার চেষ্টা, কোন প্রতিষ্ঠিত দল বা তাঁর নেতা করেছেন? কেন এই পয্যন্ত সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে উলটো সমাবেশ করে তাঁর মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হল??তাঁরা নীজেদের এত ক্ষমতাবান মনে করেন কিভাবে? তাঁরা কি করে আবার জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করার অধিকার পায়?কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েও এখন পয্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন করছেন না? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনার আশ্বাস বাংলার মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে।সুতারাং জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন কল্পে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহনকরবেন, জনগনের এই আস্থা বিশ্বাস এখন ও অটুট রয়েছে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,শাপলা চত্বরের সেই দিনের ষড় যন্ত্র মোতাবেক যদি খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে আসতেন,পরিকল্পনাঅনুযায়ী সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েআপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো,আপনাকে কি জীবিত বাঁচতে দেয়া হত? আপনার পরিবারের কাওন সদস্যকে বাঁচতে দিত?আওয়ামী লীগের থানা উপজেলা পয্যায়ের কোন নেতা কি বাঁচতে দিত? তাঁরা কি সে দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম বিদ্বেষী সরকার উৎখাত করে ধর্মধারি সরকার কায়েমের রাজনৈতিক শ্লোগানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক জননন্দিত এইসংগঠনটিকেও জ্যান্ত কবর দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল না?আমি আজ আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন চরমপন্থী নেতার অবিকল নকল করা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার--,গনতান্ত্রিকদেশে,গনতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে, গনতান্ত্রীক সংগঠনের,গনতন্ত্রের পুজারি মনে করা কোন নেতা, রাজপথে আন্দোলন না করে, সীমাবদ্ধ কক্ষে ৪১দিন অবস্থান করে, ৪২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে,পরবর্তিতে বিচারের সম্মুখ্যিন না হয়ে নিয়মাতান্ত্রীক আন্দোলনের সুযোগ কোন দেশের, কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে, এমন উদাহরন কি কেউ দিতে পারবে?? ষড় যন্ত্রের জাল কোথায় বিস্তৃত ছিল তাঁর প্রমান সেই নেত্রী নীজেই তাঁর উষ্মায় প্রকাশ করে দম্ভস্বরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে বলে ছিল"সেনাবাহিনী বেঈমান"!!!এর পরও আপনার সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনায়ন না করে প্রকাশ্য সভার অনুমতি দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলির মনে আগাত দেয়া হয়েছে আমি মনে করি। গত পৌর নির্বাচনে রায় দিয়েছে তাঁর বিচার করার,তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থই হচ্ছে জনগনের ক্ষোভ তাঁর উপর থেকে এখনও কমেনি,বরঞ্চ কয়েক গুন বেড়ে জনরোষের পয্যায় পৌছে গেছে।আপনার সরকারের তাঁকে দেয়া বাড়তিনিরাপত্তাই তা প্রমান করে।সুতারাং দেশ ও জাতি এই রাজনৈতিক লাশের ভার বইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।দেশের এবং জাতির প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত শিক্ষিত, বিজ্ঞান মনস্ক,প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করার মত গুনাবলি সমৃদ্ধ নেতার। কোন অবস্থায় সক্রেটিসের আগের যুগে জাতি ফেরৎ যেতে চায়না।পরিশেষে বলতে চাই,আর কোন সংগাত নয়,এবার চাই সমৃদ্ধি।আর নয় জঙ্গিপনা,এবার চাই ধর্মনিরপেক্ষতা।আর নয় সাম্প্রদায়ীকতা,এবার চাই অসম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।আর নয় পাকি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা,এবার চাই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন। জয় আমাদের হবেই হবে, অশুভ অপশক্তির পরাজয় অবশ্যাম্ভাবি। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা