তিতাস গ্যাসে শুধুমাত্র গ্যাসই চুরি হয়না -"ঘনিভূত(কনডেনসেট) তেলও চুরি হয়।"
(রুহুল আমিন মজুমদার)
 
      বাস্তবতায় জনমনের ধারনা গ্যাস কোম্পেনিতে গ্যাস ছাড়া চুরি করার আর কি বা আছে। কথাটি একেবারে মিথ্যে নয়, অন্য যাহা পাওয়া যায় তা পরিশোধন করার পরই কেবল ব্যবহারযোগ্য বিধায় কারো দৃষ্টি সে দিকে থাকার কথাও নয়। তিতাস গ্যাসে অঞ্চলভিত্তিক সিন্ডিকেটের খবর তথায় সম্পৃত্ত সকলের জানা আছে।  ঐ সমস্ত সিন্ডিকেট কত যে শক্তিশালী সম্পৃত্ত ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া সর্বসাধারনের কল্পনাও করা সম্ভব নয়।
     বিশ্বের গ্যাস সমৃদ্ধ কোন দেশেই পাবলিক ব্যবহায্য জ্বালানি হিসেবে গ্যাস উত্তোলন ও ববিতরনের প্রাথমিক পয্যায় থেকেই পাইপ লাইনে অনির্দিষ্ট ব্যবহার নির্দিষ্ট টাকায়  পদ্ধতি অনুসৃত হয়নি।সকল দেশে যদিও সিলিন্ডারে গ্যাস ব্যবহার করার রীতি প্রচলিত আছে কিন্তু বাংলাদেশেই একমাত্র বিপরীত পাইপলাইনেতো বটেই অ-প্রয়োজনীয় ব্যবহার রোধকল্পে নেয়া পদক্ষেপও কখনও কায্যকর করা যায়নি। গ্যাস আবিস্কারের প্রাথমিক যুগে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার দীর্ঘ ৫২/৫৩ বছর চলমান থাকার পরেও থামানো সম্ভব হয়নি।সরকারের উদ্যোগ এবং  সদিচ্ছা ছিলনা তা কিন্তু  নয়, একাধিকবারের চেষ্টা তিতাসের অভ্যন্তরে গড়ে উঠা দুর্নীতিবাজ চক্র নস্যাৎ করে দিতে সক্ষম হয়েছে।এই থেকে অনুমান করা সম্ভব তাঁদের শক্তি কোথায়? নিম্নে তদ্রুপ শক্তির একটি ঘটমান ঘটনার বিবরন আপনাদের জ্ঞাতার্থে পূণ:আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করি----
     জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) মালিকানাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গ্যাসের ঘনীভূত তেল (কনডেনসেট) চুরিতে ধরা পড়া ২ কর্মচারীকে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি দোষী সাব্যস্ত করলেও রহস্যজনক কারণে তাদের দু'বার সাময়িক বরখাস্তের পর দু'বার পুনর্বহাল করা হয়।ঘটনাটি ২০১২ সালে সংঘটিত হয়।
      মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন গাজীপুরের মাওনা সামিট পাওয়ার প্লান্ট থেকে চালানবিহীন কনডেনসেট (তেল) তিতাসের তালিকাভুক্তির বাইরে ট্যাঙ্কলরিতে (ঢাকা-মেট্রো-ন-১২৩৭) ভরার সময় এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় ওই প্ল্যান্টে কর্মরত পেট্রোলম্যান মো. জসিম উদ্দিনের হাত পুড়ে যায়। এ ঘটনায় পরের দিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করতে গিয়ে অনুমোদনবিহীন ট্যাঙ্কলরিতে তেল চুরির ঘটনা ফাঁস হয়। দেখা গেছে, একইভাবে একই ট্যাঙ্কলরিতে করে ২০০৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৮৮ হাজার লিটার কনডেনসেট চুরি হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৬১ লাখ টাকা।
         এ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি তিতাসের পেট্রোল ম্যান ফরিদ ও জসিমকে সাময়িক বরখাস্ত করে কৃর্তপক্ষ। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এ ব্যাপারে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আখেরুজ্জামান বাদী হয়ে বাংলাদেশ গ্যাস আইন এবং ৩৮০/৩৪ দ-বিধিতে ফরিদ ও জসিমসহ ৬ জনকে বিবাদী করে গাজীপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (শ্রীপুর) এর সিআর মো. নং- ১১৫/২০১২ করেন। মামলার অন্য বিবাদীরা হলো ট্যাংকলরি চালক শাহীন, আফসার, হারুন ও মনির। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা ট্যাংকলরি (ঢাকা মেট্রো ন- ১২৩৭) দিয়ে ১ লাখ ৮৮ হাজার লিটার কনডেনসেট চুরি হয়েছে। যাহার বাজার মূল্য প্রায় ৬১ লাখ টাকা।
      এ দিকে মামলা চলমান অবস্থায় রহস্যজনকভাবে ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল তিতাস গ্যাসের সংস্থাপন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মমতাজ বেগম স্বাক্ষরিত এক পত্রে ফরিদ ও জসিমকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ২৫ মার্চ হতে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয়া হয়। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্তান্তে পরবর্তী ব্যবস্থা গৃহীত হবে। ২০১২ সালের ২৮ জুন আদালতে ফরিদ ও জসিম জামিন নিতে গেলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। তিতাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) মমতাজ বেগম ২০১২ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত অপর এক পত্রে আইনগত মতামত ও সিআর মামলা থাকার কারণে ফরিদ ও জসিমকে পুনরায় ২০১২ সালের ২৫ মার্চ থেকে কার্যকর করে সাময়িক বরখাস্ত করেন। ঐ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ঐ সময়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত তারা কোম্পানির কোনো অফিসে প্রবেশ করতে পারবে না এবং স্থানীয় ঠিকানা ত্যাগ ও পরিবর্তন করতে পারবে না। এ দিকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি উপ-মহাব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) মমতাজ বেগম বরখাস্তকৃত ঐ ২ পেট্রোলম্যানকে বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করে আবার কাজে যোগ দানের অনুমতি দেন। তবে পত্রে তিনি বিভাগীয় তদন্তে ঐ দুই জনকে দোষী সাব্যস্ত করে চাকরিতে অবিলম্বে যোগদানের নির্দেশ দেন। উক্ত নির্দেশ সরকারি চাকুরীবিধির কোন নীতিতে বা কোম্পেনী আইনের কোন ধারায়  আইন সম্মত নয়। উক্ত বিষয় দায়িত্ব প্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা তখনকার পরিস্থীতিতে মুখ খুলতে না চাইলেও প্রজ্ঞাপন দাতা উপ-মহাব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) মমতাজ বেগম সাংবাদিকদের সঙ্গে উদ্যত পুর্ণ আচরন করেন বলে তখনকার সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।(সংগৃহিত)
   উক্ত কর্মচারিদের ভাগ্যে পরবর্তীতে কি ঘটেছিল বা মামলার ভাগ্যেই বা কি ঘটেছিল আজও জানা যায়নি।সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি ও মন্ত্রানালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিষয়টির সর্বশেষ অবস্থা ব্যাখ্য দিয়ে জনকৌতুহল নিবারন জরুরি প্রয়োজন মনে করি।
      এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই---বিগত ৫২ বছর একচেটিয়া উক্ত সংস্থায় লুটপাট, গ্যাস চুরি, তেলচুরি চলতে থাকলেও বন্ধ করার কায্যকর কোন ব্যবস্থা আজব্দি  কোম্পেনির পক্ষ থেকে বা সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। এক্ষেত্রে সেন্ডিকেট ফুলেফেঁপে সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাকে বিভ্রান্ত করার শক্তি অর্জন করে নিশ্চিন্তে লুটপাট অব্যাহত রেখেছে।সকল প্রকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি নির্মূলে প্রয়োজন বেসরকারি খাতে উক্ত সংস্থার আংশিক হস্তান্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনায় অমূল পরিবর্তন সাধন করা বর্তমান সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তবেই কেবল সকল গৃহস্থালী গ্যাস সিলিন্ডারে সরবরাহ, শিল্প কারখানায় মিটার ডিজিটিলাইজেশনের মাধ্যমে বিলিং পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হবে। উক্ত পদ্ধতিতেই কেবলমাত্র  সরকারের প্রভূত আয় করা সম্ভব উক্ত খাতটি থেকে।সরকার এবং ব্যাক্তির যৌথ মালিকানায় ব্যাবস্থাপনা ব্যাতিরেকে সর্বসাধারনের সমমূল্যে গ্যাস সরবরাহ কখনই সম্ভব হবে বলে মনে করিনা।
                    "জয়বাংলা     জয়বঙ্গবন্ধু"
         ruhulaminmujumder27@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার সরকার মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যাতত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ঐতিহ্যে বিতর্ক উত্থাপনের অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করে,মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার মত দৃষ্টতা দেখিয়ে নি:সন্দেহে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এহেন গর্হিত বক্তব্য প্রদানকারী বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখতে পারেননা।মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কোন দল বা জোটের রাজনীতি করারঅধিকার নীতিগতভাবেই থাকতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সকল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করে সর্বচ্ছ আদালতের রায় অনুযায়ী '৭২এর সংবিধান অবিকল বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।বাংলাদেশেরজনগন চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক,মুক্তিযুদ্ধে সাগরসম রক্ত ঢেলে সেই অঙ্গিকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল।স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বসবাসকরে,পরাধীনতার গান শুনতে দেশ স্বাধীন করেনি বাংলার জনগন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছরের বিরামহীন সংগ্রামের ফসল মুক্তিযুদ্ধ।সেইযুদ্ধে উপনিবেশিক পাকিস্তানের আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালীরা পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছিল।সেই স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশেপরাজিত শক্তির দোষর,তাঁদের প্রেতাত্বাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।জাতির জনক তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগন জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রাজাকারের কোন স্থান দিতে চায়না। তাই খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার দৃষ্টান্তমুলক সাজার আশা পোষন করে।কোন রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁদে যেন এই মামলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাঁর গ্যারান্টিও সরকারের নিকট বাংলাদেশের জনগন চায়। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু Ruhul Amin ------------------------------ খালেদা জিয়াকে সমাবেশের অনুমতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আশাহত----04 /01 / 0016 ইং পোষ্ট -==================================প্রখ্যাত দার্শনিক,চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে কম বেশি আমরা সবাই জানি।সক্রেটিস কোন যুগে জম্মগ্রহন করে মানব সেবায় ব্রতি হয়ে আজও দেশে দেশে অনুকরনীয় অনুসরনীয় হয়ে আছেন তাও আমরা জানি।নিশ্চয়ই তখনকার সময় থেকে বর্তমানের সমাজ, রাষ্ট্রব্যাবস্থাপনা আরো শত গুন উন্নত,সমৃদ্ধ,সভ্য।সক্রেটিস ছুতোর, কামার ইত্যাদি প্রসঙ্গে এসে প্রশ্ন করতেন, 'তাহলে রাষ্ট্র নামক জাহাজটি বিগড়োলে কাকে দিয়ে সারাইয়ের কাজ করাবো'হাসান আজিজুল হক (সক্রেটিস) পৃ : ১৬ সক্রেটিসের এ বিখ্যাত কথপোকথন কারো অজানা নয়। আদর্শবান ন্যায়নীতিভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করবার জন্য সক্রেটিসকে হেমলক পান করতে দেয়া হয়েছিল(বিষ), তারপরও তিনি আইনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন- এটাও ছিল তার নির্ভীক বিদ্রোহ। তাকে বাঁচবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আইনঅবজ্ঞা করেননি, আইনে যদি তার মৃত্যুদন্ড হয় তবে তিনি অবশ্যই তা মানতে রাজি। এখানেও তার সমস্ত জীবনকর্মের অনেক গভীর দর্শন কাজ করেছে। তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল একথা তিনি ও এথেন্সবাসী জানতেন। কিন্তু যে আইনে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো- তিনি সে আইনকে শ্রদ্ধা জানালেন এ অর্থে মানুষকে আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বললেন। সেই আইন কারা তৈরি করছে তা তিনি জানতেন তাতে তো আর আইন নামক বিষয়টিকে জীবন থেকে বিতাড়িত করা যায় না।"পবিত্র কোরানে পাকে ও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধর্মী কতৃক শাষিত রাষ্ট্র ও সরকার সমুহের আইন মেনে ধর্ম কর্ম করার।এই রুপ রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় শুক্রবারের খতবায় বিশেষ আয়াৎ সংযুক্ত আছে এবং নিয়মিত নামাজের সাথে আর ও কয় রাকাত নামাজ আদায় করার নির্দেশনা দেয়া আছে।পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে,গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেনীর মানুষ রাষ্ট্রীয় আইন রীতি নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্ব উচ্চ আদালতের রায়কে ও অমান্য করে হরতাল অবরোধ,প্রকাশ্য আদালতের সমালোচনা করতে।শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামেপ্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রীভর্তি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে জীবন্ত মানবকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিতে।উল্লেখ করা প্রয়োজন যারা এই সমস্ত আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন,এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন যে আদালতের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দেয়া যায়,বক্তব্য দেয়া যায়,তাঁরা কখনই কোন অপরাধীর বিচার কায্য সম্পাদন করেছেন তদ্রুপ কোন উদাহরন নেই। যেমন আমি প্রথমেই বলতে চাই ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছেন রাতের অন্ধকারে।বঙ্গবন্ধুর অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? পৃথীবিপৃষ্টের সব চাইতে নিরাপদ স্থান জেলখানা।সেখানে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাহল,তাঁরা বন্দি ছিলেন, তারপর ও তাঁদের অপরাধের বিচার কি করা যেতনা? মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকেতুলে নিয়ে জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হল, তাঁদের অপরাধ কি বিচার করে মিমাংসা করা যেতনা? খালেদ মোশারফ., কর্নেল তাহেরসহ অসংখ্য মুক্তি যুদ্ধা সেনা অফিসারকে মেজর জিয়ার নির্দেশে নির্মম নির্দয় ভাবে হত্যা করা হল, অনেককে গুলী করার পর প্রান পাখী উড়াল দেয়ার আগেই জ্যান্ত মাটি চাপা দেয়া হল, তাঁদের বিচার কি প্রচলিত সেনা আইনে করা যেতনা? অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা,আওয়ামী লীগের নেতা,মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারি,ব্লগার,প্রকাশক,লেখক সাহিত্যিক,সাংবাদিক হত্যা করা হল,তাঁদের অপরাধ কি আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতনা?আন্দোলনের নামে ঘোষনা দিয়ে মানুষ হত্যা করা,সম্পদ নষ্ট করা,লুটপাট করা কি মানবতা বিরুধী অপরাধের আওতায় পড়েনা?মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হতে পারে,যুদ্ধাবস্থা ব্যাতিরেকে ঘোষনা দিয়ে তদ্রুপ কর্মে জড়িতদের এবং হুকুমদাতার বিচার কেন হবেনা? নগদ অপরাধের ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা কি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয়? নাগরীকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়েনা? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁরা কি বিচার পাওয়ার সাংবিধানীক অধিকারের মধ্যে পড়েনা?সেই যুগের সক্রেটিস যদি নীজের উপর আনীত মিথ্যা অভিযোগ জেনে শুনে মেনে নিতে পারেন,সভ্যতার চরম শীখরে দাঁড়িয়ে যারা এই যুগে আইনকে, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্য আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছেন,সম্পদের হানী ঘটিয়েছেন তাঁরা কি সক্রেটিস যুগের আগের অধিবাসি মনে করেন নীজেদের? তাঁরা নীজেরা নিজেদের মনে করুন কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে কোন যুগে ফিরিয়ে নিতে চান?তাঁদের যদি এতই অসহ্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ কিছু আদর্শের প্রতিপালনের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৩০লক্ষ শহিদের আত্মদান,পৌনে চারলাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস- তবে জনগনকে সংঘটিত করে আর একটি গনবিপ্লব ঘটিয়ে তাঁদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষ বাধাতো দিচ্ছেনা। যাদের নেতৃত্বে, যাদের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল, তাঁরাতো ক্ষমতায় আছে,তাঁদের কেন জোর পুর্বক,ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খমতা থেকে নামাতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে,আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত করতে দেয়া হবে।এই সেই দিন মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যিনি বিতর্ক উত্থাপনের বৃথা চেষ্টা করে জনরোষের আওতার মধ্যে এখনও রয়েছেন,তাঁর সৌখিন বাসভবন পাহারায় আপনার সরকার অতিরীক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে,তিনি কি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করার প্রসাশনিক অনুমতি পায়। বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্বের একটি দেশের উদাহরন কি কেউ দিতে পারবেন,স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সেই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে?একটি দেশকি কেউ দেখাতে পারবে যে,সেই দেশের কোনমীমাংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত কোন সত্যকে ৩০/৪০ বছর পর আবার জনসমক্ষে উত্থাপন করে লক্ষ লক্ষ শহিদ পরিবারের অন্তরের আগুনে"ঘি "ঢেলে দেয়ার চেষ্টা, কোন প্রতিষ্ঠিত দল বা তাঁর নেতা করেছেন? কেন এই পয্যন্ত সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে উলটো সমাবেশ করে তাঁর মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়া হল??তাঁরা নীজেদের এত ক্ষমতাবান মনে করেন কিভাবে? তাঁরা কি করে আবার জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করার অধিকার পায়?কেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েও এখন পয্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন করছেন না? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনার আশ্বাস বাংলার মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে।সুতারাং জনগনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগুন সন্ত্রাসের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠন কল্পে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহনকরবেন, জনগনের এই আস্থা বিশ্বাস এখন ও অটুট রয়েছে।মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,শাপলা চত্বরের সেই দিনের ষড় যন্ত্র মোতাবেক যদি খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে আসতেন,পরিকল্পনাঅনুযায়ী সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েআপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো,আপনাকে কি জীবিত বাঁচতে দেয়া হত? আপনার পরিবারের কাওন সদস্যকে বাঁচতে দিত?আওয়ামী লীগের থানা উপজেলা পয্যায়ের কোন নেতা কি বাঁচতে দিত? তাঁরা কি সে দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ম বিদ্বেষী সরকার উৎখাত করে ধর্মধারি সরকার কায়েমের রাজনৈতিক শ্লোগানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামক মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক জননন্দিত এইসংগঠনটিকেও জ্যান্ত কবর দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল না?আমি আজ আরও একটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনকের কন্যাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই,সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন চরমপন্থী নেতার অবিকল নকল করা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার--,গনতান্ত্রিকদেশে,গনতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে, গনতান্ত্রীক সংগঠনের,গনতন্ত্রের পুজারি মনে করা কোন নেতা, রাজপথে আন্দোলন না করে, সীমাবদ্ধ কক্ষে ৪১দিন অবস্থান করে, ৪২ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে,পরবর্তিতে বিচারের সম্মুখ্যিন না হয়ে নিয়মাতান্ত্রীক আন্দোলনের সুযোগ কোন দেশের, কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে, এমন উদাহরন কি কেউ দিতে পারবে?? ষড় যন্ত্রের জাল কোথায় বিস্তৃত ছিল তাঁর প্রমান সেই নেত্রী নীজেই তাঁর উষ্মায় প্রকাশ করে দম্ভস্বরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করে বলে ছিল"সেনাবাহিনী বেঈমান"!!!এর পরও আপনার সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনায়ন না করে প্রকাশ্য সভার অনুমতি দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলির মনে আগাত দেয়া হয়েছে আমি মনে করি। গত পৌর নির্বাচনে রায় দিয়েছে তাঁর বিচার করার,তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার অর্থই হচ্ছে জনগনের ক্ষোভ তাঁর উপর থেকে এখনও কমেনি,বরঞ্চ কয়েক গুন বেড়ে জনরোষের পয্যায় পৌছে গেছে।আপনার সরকারের তাঁকে দেয়া বাড়তিনিরাপত্তাই তা প্রমান করে।সুতারাং দেশ ও জাতি এই রাজনৈতিক লাশের ভার বইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।দেশের এবং জাতির প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত শিক্ষিত, বিজ্ঞান মনস্ক,প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক সভ্য দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করার মত গুনাবলি সমৃদ্ধ নেতার। কোন অবস্থায় সক্রেটিসের আগের যুগে জাতি ফেরৎ যেতে চায়না।পরিশেষে বলতে চাই,আর কোন সংগাত নয়,এবার চাই সমৃদ্ধি।আর নয় জঙ্গিপনা,এবার চাই ধর্মনিরপেক্ষতা।আর নয় সাম্প্রদায়ীকতা,এবার চাই অসম্প্রদায়ীক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।আর নয় পাকি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা,এবার চাই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের সফল বাস্তবায়ন। জয় আমাদের হবেই হবে, অশুভ অপশক্তির পরাজয় অবশ্যাম্ভাবি। জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা