তিতাস গ্যাসে শুধুমাত্র গ্যাসই চুরি হয়না -"ঘনিভূত(কনডেনসেট) তেলও চুরি হয়।"
(রুহুল আমিন মজুমদার)
 
      বাস্তবতায় জনমনের ধারনা গ্যাস কোম্পেনিতে গ্যাস ছাড়া চুরি করার আর কি বা আছে। কথাটি একেবারে মিথ্যে নয়, অন্য যাহা পাওয়া যায় তা পরিশোধন করার পরই কেবল ব্যবহারযোগ্য বিধায় কারো দৃষ্টি সে দিকে থাকার কথাও নয়। তিতাস গ্যাসে অঞ্চলভিত্তিক সিন্ডিকেটের খবর তথায় সম্পৃত্ত সকলের জানা আছে।  ঐ সমস্ত সিন্ডিকেট কত যে শক্তিশালী সম্পৃত্ত ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া সর্বসাধারনের কল্পনাও করা সম্ভব নয়।
     বিশ্বের গ্যাস সমৃদ্ধ কোন দেশেই পাবলিক ব্যবহায্য জ্বালানি হিসেবে গ্যাস উত্তোলন ও ববিতরনের প্রাথমিক পয্যায় থেকেই পাইপ লাইনে অনির্দিষ্ট ব্যবহার নির্দিষ্ট টাকায়  পদ্ধতি অনুসৃত হয়নি।সকল দেশে যদিও সিলিন্ডারে গ্যাস ব্যবহার করার রীতি প্রচলিত আছে কিন্তু বাংলাদেশেই একমাত্র বিপরীত পাইপলাইনেতো বটেই অ-প্রয়োজনীয় ব্যবহার রোধকল্পে নেয়া পদক্ষেপও কখনও কায্যকর করা যায়নি। গ্যাস আবিস্কারের প্রাথমিক যুগে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার দীর্ঘ ৫২/৫৩ বছর চলমান থাকার পরেও থামানো সম্ভব হয়নি।সরকারের উদ্যোগ এবং  সদিচ্ছা ছিলনা তা কিন্তু  নয়, একাধিকবারের চেষ্টা তিতাসের অভ্যন্তরে গড়ে উঠা দুর্নীতিবাজ চক্র নস্যাৎ করে দিতে সক্ষম হয়েছে।এই থেকে অনুমান করা সম্ভব তাঁদের শক্তি কোথায়? নিম্নে তদ্রুপ শক্তির একটি ঘটমান ঘটনার বিবরন আপনাদের জ্ঞাতার্থে পূণ:আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করি----
     জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) মালিকানাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গ্যাসের ঘনীভূত তেল (কনডেনসেট) চুরিতে ধরা পড়া ২ কর্মচারীকে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি দোষী সাব্যস্ত করলেও রহস্যজনক কারণে তাদের দু'বার সাময়িক বরখাস্তের পর দু'বার পুনর্বহাল করা হয়।ঘটনাটি ২০১২ সালে সংঘটিত হয়।
      মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন গাজীপুরের মাওনা সামিট পাওয়ার প্লান্ট থেকে চালানবিহীন কনডেনসেট (তেল) তিতাসের তালিকাভুক্তির বাইরে ট্যাঙ্কলরিতে (ঢাকা-মেট্রো-ন-১২৩৭) ভরার সময় এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় ওই প্ল্যান্টে কর্মরত পেট্রোলম্যান মো. জসিম উদ্দিনের হাত পুড়ে যায়। এ ঘটনায় পরের দিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করতে গিয়ে অনুমোদনবিহীন ট্যাঙ্কলরিতে তেল চুরির ঘটনা ফাঁস হয়। দেখা গেছে, একইভাবে একই ট্যাঙ্কলরিতে করে ২০০৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৮৮ হাজার লিটার কনডেনসেট চুরি হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৬১ লাখ টাকা।
         এ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি তিতাসের পেট্রোল ম্যান ফরিদ ও জসিমকে সাময়িক বরখাস্ত করে কৃর্তপক্ষ। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এ ব্যাপারে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আখেরুজ্জামান বাদী হয়ে বাংলাদেশ গ্যাস আইন এবং ৩৮০/৩৪ দ-বিধিতে ফরিদ ও জসিমসহ ৬ জনকে বিবাদী করে গাজীপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (শ্রীপুর) এর সিআর মো. নং- ১১৫/২০১২ করেন। মামলার অন্য বিবাদীরা হলো ট্যাংকলরি চালক শাহীন, আফসার, হারুন ও মনির। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা ট্যাংকলরি (ঢাকা মেট্রো ন- ১২৩৭) দিয়ে ১ লাখ ৮৮ হাজার লিটার কনডেনসেট চুরি হয়েছে। যাহার বাজার মূল্য প্রায় ৬১ লাখ টাকা।
      এ দিকে মামলা চলমান অবস্থায় রহস্যজনকভাবে ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল তিতাস গ্যাসের সংস্থাপন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মমতাজ বেগম স্বাক্ষরিত এক পত্রে ফরিদ ও জসিমকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ২৫ মার্চ হতে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয়া হয়। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্তান্তে পরবর্তী ব্যবস্থা গৃহীত হবে। ২০১২ সালের ২৮ জুন আদালতে ফরিদ ও জসিম জামিন নিতে গেলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। তিতাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) মমতাজ বেগম ২০১২ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত অপর এক পত্রে আইনগত মতামত ও সিআর মামলা থাকার কারণে ফরিদ ও জসিমকে পুনরায় ২০১২ সালের ২৫ মার্চ থেকে কার্যকর করে সাময়িক বরখাস্ত করেন। ঐ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ঐ সময়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত তারা কোম্পানির কোনো অফিসে প্রবেশ করতে পারবে না এবং স্থানীয় ঠিকানা ত্যাগ ও পরিবর্তন করতে পারবে না। এ দিকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি উপ-মহাব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) মমতাজ বেগম বরখাস্তকৃত ঐ ২ পেট্রোলম্যানকে বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করে আবার কাজে যোগ দানের অনুমতি দেন। তবে পত্রে তিনি বিভাগীয় তদন্তে ঐ দুই জনকে দোষী সাব্যস্ত করে চাকরিতে অবিলম্বে যোগদানের নির্দেশ দেন। উক্ত নির্দেশ সরকারি চাকুরীবিধির কোন নীতিতে বা কোম্পেনী আইনের কোন ধারায়  আইন সম্মত নয়। উক্ত বিষয় দায়িত্ব প্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা তখনকার পরিস্থীতিতে মুখ খুলতে না চাইলেও প্রজ্ঞাপন দাতা উপ-মহাব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) মমতাজ বেগম সাংবাদিকদের সঙ্গে উদ্যত পুর্ণ আচরন করেন বলে তখনকার সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।(সংগৃহিত)
   উক্ত কর্মচারিদের ভাগ্যে পরবর্তীতে কি ঘটেছিল বা মামলার ভাগ্যেই বা কি ঘটেছিল আজও জানা যায়নি।সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি ও মন্ত্রানালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিষয়টির সর্বশেষ অবস্থা ব্যাখ্য দিয়ে জনকৌতুহল নিবারন জরুরি প্রয়োজন মনে করি।
      এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই---বিগত ৫২ বছর একচেটিয়া উক্ত সংস্থায় লুটপাট, গ্যাস চুরি, তেলচুরি চলতে থাকলেও বন্ধ করার কায্যকর কোন ব্যবস্থা আজব্দি  কোম্পেনির পক্ষ থেকে বা সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। এক্ষেত্রে সেন্ডিকেট ফুলেফেঁপে সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাকে বিভ্রান্ত করার শক্তি অর্জন করে নিশ্চিন্তে লুটপাট অব্যাহত রেখেছে।সকল প্রকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি নির্মূলে প্রয়োজন বেসরকারি খাতে উক্ত সংস্থার আংশিক হস্তান্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনায় অমূল পরিবর্তন সাধন করা বর্তমান সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তবেই কেবল সকল গৃহস্থালী গ্যাস সিলিন্ডারে সরবরাহ, শিল্প কারখানায় মিটার ডিজিটিলাইজেশনের মাধ্যমে বিলিং পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হবে। উক্ত পদ্ধতিতেই কেবলমাত্র  সরকারের প্রভূত আয় করা সম্ভব উক্ত খাতটি থেকে।সরকার এবং ব্যাক্তির যৌথ মালিকানায় ব্যাবস্থাপনা ব্যাতিরেকে সর্বসাধারনের সমমূল্যে গ্যাস সরবরাহ কখনই সম্ভব হবে বলে মনে করিনা।
                    "জয়বাংলা     জয়বঙ্গবন্ধু"
         ruhulaminmujumder27@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন