মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর 'জঙ্গী বিরুধী নির্দেশনা' বৈঠক শেষেই বানচাল করার উদ্যোগ।
(রুহুল আমিন মজুমদার)

       হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর জোটগত ভাবে ১৪দল "জঙ্গীবিরুধী" প্রচারনার অংশ হিসেবে প্রতিটি থানা, জেলা, ইউনিয়ন পয্যায় কমিটি গঠন করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের পর ১৪ দলের যৌথ উদ্যোগে রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, সম্মানীত ব্যক্তিদের উদ্যোগে উক্ত কমিটি করার ঘোষনা দেয়া হয়েছিল।
    হলি আর্টিজানে হামলার পর   সরকারি ভাবে নেয়া পদক্ষেপ সমূহ দেশে বিদেশে প্রসংশিত হতে দেখা যায়।সরকারের আইন শৃংখলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, র্যব বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। জনগন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ সরকারের উদ্যোগে ব্যাপকভাবে সাড়া দিতে দেখা গেছে। সর্বত্র জঙ্গীবিরোধি ঘৃনার মনোভাব  পরিলক্ষিত হয়।এমন কি মৃত জঙ্গীদের লাশগ্রহনে পিতামাতারাও অস্বীকৃতি জানাতে দেখা গেছে।ফলে মৃত জঙ্গীদের বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করতে হয়েছে--ইহা নিশ্চয়ই ঘৃনার ব্যাপকতারই ফসল।
    জনগনের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহনের ব্যাপকতায় সরকার বিরোধী দল সমূহের বারংবার "জঙ্গী বিরোধী জাতীয় ঐক্যে"র আহব্বান সরকার অবলীলায় প্রত্যাক্ষান করতে পেরেছিল।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শুনা গেছে--"জনগনের মাঝে জঙ্গীবিরুধী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে অন্যকোন ঐক্যের এখন আর প্রয়োজন নেই।"
   এমনতর পরিস্থীতিতে দেশব্যাপি কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে, সরকারও একাধিকবার ঘোষনা করে জঙ্গীদের শক্তি খর্ব করতে পেরেছেন এবং তাঁরা এখন বিচ্ছিন্ন। সংগঠিত হামলা করার শক্তি তাঁদের এখন আর অবশিষ্ট নেই।
    রাষ্ট্রের আইনশৃংখলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ১৪ দলীয় জোট, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরে তৃপ্তির ছায়া লক্ষ করা যায়। অতিবিশ্বাস হেতু সকলেই জঙ্গী ভীতি ভুলে স্ব-স্ব-কর্মে নিয়োজিত হয়ে পড়ে। সরকারের স্ব-স্ব সংস্থার নেয়া কর্মসূচি স্ব-স্ব-স্থানেই স্থীরিকৃত হয়ে পড়ে।

      সরকার জঙ্গীদলের অর্থদাতা, অস্ত্রদাতাদের খোঁজ খবর নিতে আইনশৃংখলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা সমূহকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিল। চলমান উক্ত সময়ের মধ্যে মালেয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড আইনশৃংলা বাহিনীর প্রতি সরকারের নির্দেশ না থাকা সত্বেও সেই সমস্ত দেশে কর্মরত: বাংলাদেশীদের দুই/পাঁছ লক্ষের মধ্যে একাধিক অর্থ সংগ্রহকারী গ্রুপের সন্ধান পেয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশে সরকারের নির্দেশ থাকা সত্বেও আইনশৃংখলা বাহিনী ১৬ কোটি মানুষের অবস্থান থাকা সত্বেও জঙ্গীদের অস্ত্র সরবরাহকারী বা অর্থ সংগ্রহকারী একটি  গ্রুপেরও সন্ধান রাষ্ট্রকে  দিতে পারেনি।
    রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকারি ১৪দলীয় জোট তৃনমূল পয্যায় অ-শুভশক্তির সন্ধান প্রাপ্তির লক্ষে  সর্বস্তরের জনগনকে  আইনশৃংখলা বাহিনী সমূহকে তথ্যদিয়ে সহযোগীতা করার আবেদন জানায়। "জঙ্গীবাদ বিরুধী প্রচার কমিটির মাধ্যমে তৃনমুলে "বাড়ীছাড়া" যুবকদের খোঁজখবর নেয়ার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। উল্লেখিত তৎপরতা থেকে আদৌ কোন খোঁজ খবর পাওয়া গিয়েছিল----এমন কোন তথ্য গনমাধ্যমে আসেনি। প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশিত "জঙ্গীবাদ বিরোধী কমিটি--'জেলা, উপজেলা ইউনিয়নে গঠিত হয়েছিল কিনা বা সভা সমাবেশ হয়েছিল কিনা উল্লেখযোগ্য তেমন কোন খবর আজও পাওয়া যায়নি।
   
     অদ্য ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী আবারও পুর্বের নির্দেশনা দেন। বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানান--'জঙ্গীবাদের প্রসঙ্গটি অনির্ধারীত ভাবে অদ্যকার বৈঠকে আলোচিত হয়।
   
    বৈঠকে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গি প্রতিরোধ কার্যক্রমে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সবাইকে সম্পৃক্ত করলে জঙ্গি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এলাকায় এলাকায় জঙ্গি প্রতিরোধ করতে তাই মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি প্রতিরোধে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা, ইউনিয়নে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে আবারো কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
   
        "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত পূর্বের কমিটিগুলো সক্রিয় রয়েছে।"
    লক্ষ করুন পাঠক--প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন কমিটি করে কায্যকর উদ্যোগ নিতে তাঁর মন্ত্রী বলছেন পূর্বের কমিটি বর্তমান সময় পয্যন্ত সচল রয়েছে।

    সম্মানিত পাঠক--উল্লেখিত কমিটি যদি একান্তই সচল থাকে তবে তাঁদের কর্মতৎপররতার ফিরিস্তিও নিশ্চয়ই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা আছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় "স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রীর" নিকট সবিনয় জানতে চাই----'অদ্য পয্যন্ত দেশের কোথায়, কবে, কার নেতৃত্বে জঙ্গীবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে? ১৪ দলের নেতৃত্বে গঠিত সুশিল সমাজ সম্পৃত্ত " জঙ্গীবাদ বিরুধী কমিটি" কতজন "বাড়ীছাড়া" যুবকের সন্ধান পেয়েছে। তাঁদের মধ্যে কতজনকে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা খুঁজে পেয়েছে? আইনশৃংখলা বাহিনীই বা কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেছে?
   
       আমাদের বাঙ্গালীদের একটি জাত স্বভাব 'হুজুগে আমরা 'অ-সম্ভবকে ও সম্ভব' করতে পারি। সংঘটিত ঘটনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে আমরা কখনও পারিনি।অতীতে বাঙ্গালীর শৌয্যবিয্যের অমরকাহিনী যেমন সংরক্ষন করতে পারিনি, মায্যদা দিতে পারিনি তেমনি চল্লিশ বছর পর 'প্রগতির চাকা' সচল রাখার ক্ষেত্রে মাত্র ছয়/সাত মাস আগে সর্বস্তরের জনগনের মধ্যে গড়ে উঠা "স্ব-প্রণোদিত জনঐক্য" ও আমরা সংরক্ষন করতে পারিনি।আমরা পারি শুধুমাত্র "দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি ও শক্তি"র বাগাড়ম্ভরপূর্ণ অতিকথনের জোয়ার তুলতে।
   
    মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট আমি সবিনয়ে জানতে চাই--আপনাদের নেয়া জঙ্গীবিরোধী কমিটির অস্তিত্ব যখন ছিলনা তখন লাগাতার চার দিন দেশের কোথাও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে দেশের শক্তিশালী বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত "বিশেষ বাহিনী"কে লাগাতার চার/পাঁছদিন যুদ্ধ করতে হয়নি।এত সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, সাধারন মানুষের প্রান দিতে হয়নি।শুধু তাই নয় একমাসের মধ্যে এত সংখ্যক জঙ্গী হামলারও কোন উদাহরন সৃষ্টি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত কমিটির অস্তিত্ব যদি থেকেই থাকে বিগত চার/পাঁছদিন মতণপণ লড়াই করতে হল কেন? সিলেটে "শিববাড়ী"তে অবস্থান নেয়া জঙ্গীরা কি মঙ্গলগ্রহের বাসিন্দা? আপনার সরকারের আইনশৃংখলা বাহিনী, দলের নেতাকর্মী, জোটের নেতাকর্মী যে সমাজে বসবাস করে অদ্যকার দিনে ধৃত,মৃত জঙ্গীরাও সেই সমাজের বাসিন্দা।সাধারন মানুষ স্ব-উদ্যোগে আইনশৃংখলা বাহিনীকে তাঁদের অবস্থানের খবর দিতে পারলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত কমিটি পারেনি কেন? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি নির্দেশ থাকা সত্বেও তাঁরাও কেন বিগত ছয়/সাত মাসের মধ্যে একটি জঙ্গী ঘাঁটির খবর দিতে পারেনি?

     বাঙ্গালীর অর্জন সমূহ ধরে রাখার ক্ষমতা নেই এভাবে কথাটা যদি বলি হয়তো সর্বাংশে সত্য নাও হ'তে পারে।বাঙ্গালীর অর্জন সমূহ ধরে রাখার মত দৃডচেতা নেতার জম্ম হয়নি এভাবে যদি বলি সত্যিকার অর্থেই যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে। বাঙ্গালী জাতি ক্ষমতা অপ-ব্যাবহার করতে জানে--ক্ষমতা ব্যবহার করে জনকল্যান করতে পারেনা। ক্ষমতাভোগ করতে ঠিকই জানে---ক্ষমতা সংরক্ষনের জন্যে সামান্য সময়ও ত্যাগ করতে পারেনা। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনকের কন্যা ঠিকই জানেন তাঁর দেয়া পুর্বের নির্দেশ মাঠপয্যায়ে বাস্তবায়িত হয়নি। তাই অদ্যকার সভায় অনির্ধারীতভাবে আলোচনা উত্থাপন করে আবারো তিনি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ দেয়ার আধাঘন্টার মধ্যে তাঁরই সরকারের মাননীয় "স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জমান খাঁন কামাল" উক্ত নির্দেশনা ব্যর্থ করে দিলেন।
     বাঙ্গালী কবি তাঁর স্ব-জাতির চারিত্রিক বৈশিষ্টের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে শতবছর আগেই তাঁর কবিতায় বলেছেন--"আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে--কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।"
   
 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন