২৫মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষনা সহজে হয়নি--দিবসটি অর্জনে বাঙ্গালী জাতিকে অনেক বন্ধুরপথ অতিক্রম করতে হয়েছে।
(রুহুল আমিন মজুমদার)

বাংলাদেশ তাঁর গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত করেছে। সময়টা খুব বেশী না হলেও মধ্য বয়স বলা যেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে কিছুই দিতে পারেনি সত্য। তবে পাকিস্তান শাষদের সম্মিলীত ২৩ বছরের শাষনে যাহা দিতে পারেনি, জাতির জনক মাত্র দশমাসের মধ্যে তাহাই দিতে পেরেছিলেন। জাতীর জনকের স্বল্প কালিন সময়ের শাষন ব্যবস্থায় মুক্তিকামী জনগনের আশা আকাংক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে '৭২ এর সংবিধান যথাযথভাবে জাতিকে উপহার দিতে পেরেছিলেন।মুক্তিযুদ্ধে বিরুধীতাকারি রাজাকার, আলবদর, আলশামস এর বিচার প্রক্রিয়া গ্রহন করে অনেককে শাস্তি এবং অনেককে জেলখানায় বন্দি করতে পেরেছিলেন। এমনিতর অবস্থায় ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট দেশী বিদেশী চক্রান্তে জাতির জনককে হত্যা করা হলে বাঙ্গালী জাতির গৌরবের ইতিহাসের চাকা থমকে যায়।

       তাঁর পরবর্তী ইতিহাস মিথ্যা, প্রবঞ্চনা, বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস বিকৃতি, চরিত্রহনন, অপ-রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত অ-শুভ শক্তির উত্থানের ইতিহাস।বাঙ্গালী জাতির সুদীর্ঘকালের বঞ্চনা, লাঞ্চনা,শোষন, শাষনের বিরুদ্ধে বিরত্বপুর্ণ লড়াই  সংগ্রামের ঐতিহ্যের ইতিহাসকে বাঙ্গালীর স্মৃতি থেকে মূছে দেয়ার অপচেষ্টার ইতিহাস। সুদীর্ঘকাল সংগ্রাম শেষে বিরত্বপূর্ণ মহান গৌরবের অর্জন সমূহ জাতিকে ভুলিয়ে দেয়ার নগ্ন, জগন্য, অমানবিক পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতিকে অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নেয়ার ইতিহাস।
  একুশবছর একটানা বিভিন্ন নামে,বিভিন্ন বিশেষনে বিশেষায়ীত শাষনের যাঁতাকলে পিষ্ট করে প্রতারনা, জোচ্ছ্বরী, অপ-কৌশলের চাতুয্যতায় বীর বাঙ্গালী জাতির গৌরবের অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে মূছে দিতে না পারলেও ম্লান করে দিতে তাঁরা সক্ষম হয়।দীর্ঘ ২১বছর জাতীর জনকের সাড়ে তিনবছরের শাষনামলকে বিকৃত, ধিকৃত, অপশাষনের কাল অধ্যায় এবং মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার সমূহকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে বীর জাতীর মেধামননে পঁচন ধরানোর সকল আয়োজন সমাপ্ত করে।বাঙ্গালী জাতিকে বিভ্রান্ত, অধ:পতিত, ধর্মাশ্রয়ী, জঙ্গিবাদী, অলস, ভিতু, কাপূরুষের জাতিতে পরিণত করে। তাঁদের প্রভূ পাকিস্তানীদের ধারায় নিয়ে যাওয়ার অপকৌশল গ্রহন করে অনেকটা পথ টেনে নিয়ে  যেতে সক্ষম হয়।

   জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম, ত্যাগের অসীম নজির স্থাপন করে অবশেষে ৯০ এর গনভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরচারের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়। বৃহৎ তিন জোটের রুপরেখা অনুযায়ী '৯১এর সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে সকল আয়োজন আওয়ামীলীগের পক্ষে থাকা সত্বেও দেশী-বিদেশী চক্রান্তে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তদস্থলে জেলা, মহানগর উপজেলা, ইউনিয়ন পয্যায় সাংগঠনিক কাঠামোবিহীন বিএনপি বিদেশী শক্তির গোপন আঁতাতে মোটভোটে আকাশচুম্ভি ব্যাবধান থাকা সত্বেও তুঘলুকি যাদুবলে সংসদ সদস্যের হিসেবে সামান্য বেশী আসনে জিতে যায়।অশুভ শক্তির প্রেতাত্বা মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শত্রুর সঙ্গে নির্বাচনপুর্ব গোপন আঁতাতের ভিত্তিতে তাঁদেরকে সরকারে অংশগ্রহনের সুযোগ দিয়ে অপূর্ণ সংসদ সদস্যের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় বসে বিএনপি এবং তাঁর জোট।

     দেশী-বিদেশী পরিসংখ্যান, তথ্য, উপাত্ত সব আয়োজন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকা সত্বেও ক্ষমতায় আসতে পারেনি। দেশী-বিদেশী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষশক্তি সহ সকল মহল স্তম্ভিত,হতবম্ব, হৎচকিত হয়ে পড়েন। আচমকা হারে দেশবাসি সহ সবমহল স্তম্ভিত হলেও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মনোবলে সামান্যতম চিড় ধরেনি। বরঞ্চ স্বৈরশাষনের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার রদবদলের নন্যুন্নতম গনতান্ত্রিক ধারায় দেশকে নিয়ে আসতে পারায়, দলটির সংগ্রামের ইতিহাসে আর একটি বড় প্রাপ্তির ইতিবাচক মাইলফলক যুক্ত  হয়।

      সংগ্রামের সেই তেজোদিপ্ত ধারাবাহিকতায় ৯৫এর মাগুরা উপনির্বাচনে সরকার দল বিএনপি কতৃক ভোট ডাকাতির ন্যাক্কারজনক ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপি গড়ে উঠে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের ব্যাপক আন্দোলন। আন্দোলনে ভীত হয়ে অশুভ শক্তির চক্রান্তে বিএনপি তিনজোটের রুপরেখার অঙ্গিকারের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতার নজির স্থাপন করে। গনতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদের রক্তের সাথে চরম বেঈমানীর ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। ৯১ এর তত্বাবধায়ক সরকারের নীতিকে পদদলীত করে বিএনপি সরকার এবং তাঁদের সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধিনে সাধারন নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ দলীয় জোট উক্ত নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ঘোষনা দেয় এবং নির্বাচন বর্জন করে।

    জনগনের রক্তস্রোতের বাঁধার মুখে বিএনপি সরকার জোর পুর্বক সাধারন নির্বাচনের নামে প্রহসনের কলংকজনক আধ্যায় স্থাপন করে একতরফা জয়ী ঘোষনা করে সরকার গঠন করে। ততোদিনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন গনভ্যুত্থানে রুপপরিগ্রহ করে সারাদেশ অচল করে দিতে সক্ষম হয়। আন্দোলনের তিব্রতায় মাত্র তিনমাসের মধ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে গঠিত বিএনপি সরকারকে বাংলাদেশের জনগন ক্ষমতাত্যাগে বাধ্য করে। একই বছর অনুষ্ঠিত সাধারন নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে সরকার গঠন করে।

       সরকার গঠন করে প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের সারা অঙ্গে দীর্ঘ দুই যুগের অধিক স্বাধীনতাবিরুধী, বাংলাদেশবিরুধী, মুক্তিযুদ্ধবিরুধী অ-শুভশক্তির লেপন করা কালিমা মোঁছনের উদ্যোগ গ্রহন করেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। পাকিস্তানী শাষকদের অনুকরনে দীর্ঘবছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার মানসে তাঁরা গড়ে তুলেছিল শক্তিশালী ইস্পাতকঠিন ভীত। সাধারন মানুষকে অতিসহজে বিভ্রান্ত করার অন্যতম সহজ মাধ্যম দেশের অভ্যন্তরে  জাতিগত বিরোধ এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আন্তসীমান্ত বহবিদ অথছ সহজে সমাধানযোগ্য স্বাভাবিক সমস্যাকে কৌশলে অমিমাংসীত বিরুধে পরিণত করে সময়মত ব্যবহারের উপযোগী হাতিয়ারে রুপান্তর করে।কৌশলটি ব্যবহার করে সফলভাবে ২৩ বছর পাকিস্তানী শাষক গোষ্টি শাষন শোষন অব্যাহত  রেখেছিল বাঙ্গালী জাতিকে--সেই একই পথ অনুসরন করে ২১ বছর স্বৈরচারি সকল সেনা শাষক সরকার অবিশ্বাস, হিংসা, বিদ্বেসের লৌহপ্রাচির নির্মান করে রাখতে চেয়েছিল।

     উদ্দেশ্য সাধনে প্রতিবেশি দেশকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে জনগনের মনমানষিকতাকে বিষিয়ে তোলার অপচেষ্টায় বাঙ্গালীজাতি, বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির সোপান সমুহকে জটিল ও কঠিন, অমিমাংসীতের পয্যায় ঠেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধির মুলসোপান সমূহকে জিম্মি করে তাঁদের ক্ষমতার ভীত মজবুতের প্রতি ছিল তাঁদের মূল লক্ষ।প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমস্যা সমূহ সমাধান দুরের কথা বরঞ্চ দেশের অভ্যন্তরে জাতিগত বিভাজনের মাধ্যমে পাহাড়ি জনগোষ্টিকে অস্ত্রহাতে নিতে বাধ্য করেছিল। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্টি সমুহকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘাঁটি করার অবাধ সুযোগ দিয়ে আন্তসিমান্ত সমস্যাকে আরো জটিল ও কঠিন করে তুলেছিল। ঘন ঘন ভারত সফরে গেলেও অতীতের সরকার গুলি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরাসরি লজ্জাজনক ভাবেই বলতে শুনেছি, অমিমাংসীত ইস্যুগুলী দ্বিপক্ষিয় অনুষ্ঠিত বৈঠকে তুলতেই তিনি ভুলে গিয়েছিলেন।

       ৯৬ ইং সালে সরকার গঠন করে অ-শুভশক্তি যে সমস্ত ইস্যু ব্যবহার করে জনগনকে বারবার বিভ্রান্তের পথে নিতেন সেই সমস্ত  ইস্পাতকঠিন ভীতকেই প্রথমে চুরমার করার উদ্যোগ গ্রহন করেন। জাতির জনকের কন্যা পাহাড়িদের সমস্যা সমাধান করার উদ্যোগ গ্রহন করে তাঁদের সাথে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন এবং তাঁদেরকে অস্ত্র জমা দিতে উদ্ভোদ্ধ করতে সক্ষম হন। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিচুক্তি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে গেলে তৎসময়ের বিরুধীনেত্রী বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন দশহাজার কিউসেক পানি আনতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকায়ই নামতে দেয়া হবেনা।শেখ হাসিনা ঐ সফরেই ৪০ হাজার কিউসেক পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে গঙ্গার পানিচুক্তি সম্পাদন করেন।
   উক্ত চুক্তির সুফলের বিনিময়ে দেশের উত্তরবঙ্গ সহ ব্যাপক এলাকাকে নিশ্চিত মরুভূমি হওয়ার হাত থেকে তিনি রক্ষা করেছিলেন। বর্তমানে গঙ্গার পানিচুক্তির অন্যতম সুফলগুনে উত্তরবঙ্গের সাংবাৎসরিক মঙ্গা দূর হয়েছে এবং শষ্যশ্যামল করে তুলেছে অত্র এলাকার বিস্তিন্ন এলাকা। উত্তরবঙ্গের আপামর জনগন স্বাবলম্বিতার ক্ষেত্রে অনেকদুর এগিয়েছে।,পদ্মা সেতুর কাজ সমাপ্তির পর তাঁদের সমৃদ্ধি গানিতিক হারে বাড়বে বলে অর্থনীতি বিশারদদের অভিমত।
    জাতীয় ও আন্তজাতিক বৈরিতাপূর্ণ কর্মকান্ড, দেশবিরুধী অশুভ শক্তির চক্রান্ত চিহ্নিত করার পাশাপাশি তথাকথিত মানবতাবিরুধী রাষ্ট্রীয়আইন 'ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ' বাতিল করে  জাতির জনক হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বিদ্যমান আদালতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া গ্রহন করে খুনীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।উক্ত বিচার অনুষ্ঠান সফলভাবে করতে পারায় অশুভ ষড়যন্ত্রকারীদের দুর্গে চরম আগাতের সুত্রপাত ঘটিয়ে হৃদয়ের কাঁপন ধরাতে সক্ষম হন।
    এই পয্যায় সাংবিধানিক ধারাকে সমূন্নত রাখার স্বার্থে বিনা আন্দোলনে মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্যোগ গ্রহন করেন শেখ হাসিনার সরকার।ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্ব নির্ধারীত তারিখে অ-শুভচক্র এবং তাঁদের প্রেতাত্বা, দেশী-বিদেশী শক্তির পুর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে দেশব্যাপি তাঁদের আন্দোলনের বিজয় উৎসবের কর্মসূচি প্রদান করে। অথছ সরকার মেয়াদ শেষে স্বাভাবিক নিয়মেই গঠিত তত্বাবধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করার উদ্যোগ গ্রহন করেছিল।

      অশুভ শক্তির ঘোষিত কর্মসূচি বিজয় উল্লাসতো নয়--এটা ছিল ,আওয়ামী নিধন, হত্যা, লুটপাট, সংখ্যালুঘু হিন্দুদের উপর পাশবিক নিয্যাতনের মধ্যযুগীয় বিজয় উল্লাসের মাধ্যমে জনমনে ভীতির সঞ্চার করে নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার অপ-কৌশল।চক্রান্তের তত্বাবধায়ক সরকারে প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ক্ষনিকের মধ্যে দেশের প্রশাসন, সরকারের বিশেষায়ীত বাহিনী, ছাত্রদল, যুবদল, জামায়াত শিবির একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উপর।

    নিমিষেই আওয়ামী লীগের নেতাদের এলাকা ছাড়া, দেশছাড়া, জেলখানা, গুপ্তহত্যা, গুমের মাধ্যমে একটানা তিনমাস নারকীয় উৎসব পালন করে।-তত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীশুন্য মাঠে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তির চক্রান্তের পরিপূর্ণতা দিতে কোনপ্রকার কার্পন্য করেনি। বিদেশী এজেন্ডা অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুধী অশুভশক্তি, মানবতা বিরুধী, যুদ্ধাপরাধী এবং তাঁদের রক্ষক প্রেতাত্বা   সমন্বয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি।
   তারপরের ইতিহাস আপনাদের সকলের জানা, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার চক্রান্তে হেন কোন কাজ নেই যা খালেদা, তারেক, কোকো করেনি বা বাকি রেখেছে।এমন কোন অপকর্ম নেই মা ছেলে তিনজন মিলে করার বাকি রেখেছে। খালেদার সরকার গনভবনে, তারেকের সরকার হাওয়া ভবনে, কোকোর সরকার গাঁজা ভবনে---তিন সরকার মিলে বাংলাদেশকে নৈরাজ্যের দেশ, ভিক্ষুকের দেশ, দুর্নীতির দেশ, লুটের দেশ, জঙ্গির দেশ অবশেষে ব্যর্থ দেশে পরিণত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছিল।একই চক্রান্তের বৃত্তের আবর্তে অবশেষে তথাকথিত ১/১১ এর সেনা সমর্থিত  সরকার ক্ষমতা দখল করে।খালেদা জিয়া তাঁদের সঙ্গে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে তাঁর লুটেরা দুই পুত্রকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হন।

      ষড়যন্ত্রের সেনাসমর্থিত তিনমাসের সরকার দুইবছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। উক্ত সময়ে তাঁরা বাংলাদেশকে ভীতির জলন্ত নরকে পরিণত করে।জাতিরজনকের কন্যাকে পয্যন্ত তাঁরা জেলে নিতে দ্বিধাবোধ করেনি, তাঁদের বুকে সামান্য কাঁপন সৃষ্টি হয়নি।তারপরও তাঁরা বাংলাদেশের জনগনের মন থেকে মুজিবকন্যার নাম মুছে দিতে পারেনি। অবশেষে ২০০৮ইং সালে সাধারন নির্বাচন ঘোষনা করে ২০০৯ ইং সালে ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা ভুমিধ্বস জয় নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফিরে আসেন।

     এবারের ক্ষমতা গ্রহনের পর অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মানুষ আবিষ্কার করেছে।বিরুধীরা যতই ভাঙ্গার জন্যে নাড়ে, শেখ হাসিনাও নড়ে। বাঁকা করে ফেলে, তিনি আবার সোজা হয়ে যান।ভাঙ্গবে ভাঙ্গবে মনে করে কেবলই আঘাত করে কিন্ত্যু ভাঙ্গেনা-শুধু মচকে।
     আজব এক শেখ হাসিনার উদয় হল বাঙ্গালী জাতির ভাগ্যাকাশ থেকে কালমেঘ দুর করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ উপহার দিতে। নিরলস পরিশ্রমী, সিদ্ধান্তে স্থীর, লক্ষে অটল ও স্থীর, উদ্দেশ্য পরিষ্কার।বাংলাদেশকে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর আরধ্য সুখী, সমৃদ্ধশালী,উন্নত বাংলাদেশে রুপান্তর করবেন।তাঁর পিতার আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ,বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গড়ে তুলবেন। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার অক্ষরে অক্ষরে পুর্ণ বাস্তবায়ন করবেন।সেই লক্ষকে সামনে রেখে উদ্দেশ্যের প্রতি প্রতিনিয়ত ধাবিত তাঁর চিন্তাচেতনা। যতই ঝড় তুফান আসুকনা কেন লক্ষ বিচ্যুত হওয়ার পাত্রী নন।

     ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে ভিখারীর দেশের বদনাম গুছিয়ে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে রুপান্তর করতে পেরেছেন।মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার পূরনের লক্ষে মানবতাবিরুধী বিচারের উদ্যোগ গ্রহন করে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। অনেকের শাস্তি নিশ্চিত করেছেন, অনেকেই শাস্তি ভোগ করার অপেক্ষায় জেলে আছেন।নতুন নতুন মানবতাবিরুধী অপরাধির তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছেন।ইতিমধ্যে তাঁর দুরদর্শীতা, রাজনৈতিক বিচক্ষনতায় অ-শুভ শক্তি এবং তাঁদের পাহারাদার প্রেতাত্বাদের রাজপথে নামার সকল নৈতিক অধিকার হারিয়ে বিবৃতি সর্বস্ব কাগুজে বাঘে পরিণত করেছেন।

     জঙ্গি অভিযান অব্যাহত রেখেছেন, যেখানেই জঙ্গির সন্ধান সেখানেই প্রতিরোধের মানষিকতায় জনগনকে উদ্ভোদ্ধ করতে পেরেছেন।সর্ব উচ্চ আদালতের রায়ে স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরুধীতাকারি দল জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে। সরকারি ভাবে নিষিদ্ধের আতংকে ভুগছে তাঁরা। একদা সম্মিলীত অশুভ শক্তির ব্যাঘ্রের হুমকিকে শিয়ালের মেউ মেউতে রুপান্তর করে জনসমক্ষে ছেড়ে দিয়েছেন। জনগনও মুখের থু থু ফেলার ডাষ্টবিন পেয়ে যারপরনাই খুশি।

এবার আর একটা বড় উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মানের পথে অনেকটা পথ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ক্ষমতার মেয়াদের দ্বিতীয়বারের তৃতীয় বছরের শেষ প্রান্তে এসে ২৫শে মার্চকে জাতীয় গনহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাশ করেছেন।

গত ২৫ বছর ধরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ সরকারিভাবে পালনের জন্য আন্দোলন করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিত হোক বা অন্যকোন কারনে প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ার কারনে হোক  সংসদে বিল উত্থাপনের পর সর্বসম্মতিক্রমে উক্ত বিল পাশ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হবে। এত দিন গণহত্যা দিবস পালিত না হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রাজনীতিতে অবস্থান নিয়েছে। সর্বশেষ আইএসআই প্রযোজিত পাকিস্তানের জুনায়েদ আহমদের বইয়ের প্রকাশ ঘটানোর সাহষ ও দেখিয়েছে।

      মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মানের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পরবর্তি সময় থেকে এখন আরো বেশী কষ্টসাধ্য, ঝুকিপূর্ণ। কারন দীর্ঘযুগ অশুভ শক্তি মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বাংলাদেশ, বাঙ্গালী জাতি বিরুধীশক্তি রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা পেয়ে ফুলে ফেঁপে মোটাতাজা হয়েছে।অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক শক্তিতে বলিয়ান হয়েছে।তাঁদের অনুসারি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গ্রামে গ্রামে একাধিক ইয়াজিদি কারখানা সৃষ্টি করে রেখেছে।ঐসমস্ত কারখানায় প্রতিনিয়ত ধর্মের নামে, ইসলামের নামে উগ্রতার বীজবপন করে চলেছে।

প্রতিনিয়ত সেখান থেকে চারা গজাতেই থাকবে। এই ইয়াজিদি বংশটি ৭১এর আগে কখনও ছিলনা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে নীরবে, নির্বিত্তে পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগীতায় পটিয়ার জঙ্গলে এই কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্তাপিত হয়।আজ বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে তাঁদের লাখ লাখ কারখানার অবস্থান।লাখ লাখ শিশু, তরুন,  যুবক তাঁদের খপ্পরে অলস, জাতির বোঝা হয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসছে।দেশের উৎপাদনী যন্ত্রের সঙ্গে তাঁদের আদৌ কোন সম্পর্ক নেই।
সম্পুর্ণ নবী বিরুদ্ধ শক্তি--সাধারন মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে তাঁদের রুটি রুজির ধান্ধায় লিপ্ত রয়েছে।এই শক্তিকে কৌশল ছাড়া অন্যকোন উপায় দমন করার শক্তি রাষ্ট্রের আদৌ আছে বলে মনে করিনা। তাঁদেরকে নিস্তেজ করা ব্যাতিরেকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মান আদৌ সহজও হবেনা।

     উল্লেখিত খোদাদ্রোহি শক্তি---পরম করুনাময়ের কৃপায় খাঁছায় বন্দি হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বলে মনে হয়। আর একটু পথ এগুলে সহজেই তাঁদের নিস্তেজ করা সম্ভব হতে পারে। অতীতেও দেখা গেছে শক্তিটি চরম আঘাতের উদ্দেশ্যে সাধারন মসুলমানদের বিভ্রান্ত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্ত্যু আল্লাহর হুকুমেই চরম ভাবে লাঞ্চিত, ধিকৃত হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্যে নিস্তেজ হতে বাধ্য হয়েছে। আশা করি তেমনি এবারও আল্লাহর লানৎ তাদের উপর নাজিল হবে, এই বিশ্বাস একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই রাখতে পারি।

   মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মানে জাতি অনেক দুর এগিয়েছে।২৫ শে মার্চকে আন্তজাতিক গনহত্যা দিবসে পরিণত করা গেলে পৃথিবী ধ্বংস পয্যন্ত মানব জাতি জানবে বিশ্বের বৃহত্তম একরাতের হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল বাঙ্গালী জাতির উপর।প্রজম্ম থেকে প্রজম্ম চলে যাবে ইতিহাস থেকে যাবে অক্ষত, অমলিন। বর্তমানে ৯ই ডিসেম্বরকে জাতি সংঘ আন্তজাতিক গনহত্যার প্রতিকি দিবস পালন করে।ঐদিনে বিশ্বের কোথাও গনহত্যা হয়নি।যদিও জাতিসংঘের উক্ত ঘোষিত তারিখ পরিবর্তন করা খুব সহজকাজ হবে না--তথাপি আশা করা যায়, জাতির জনকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় হয়তো বা তাও সহজ হতে পারে।সেদিনের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া গত্যান্তর নেই।

      আর একটি বিনীত দাবী জানাতে চাই---যাহা ইতিমধ্যে গনদাবীতে পরিণত হচ্ছে বলে অনুমেয়। জাতির জনকের কন্যা জীবিতাবস্থায় "জয়বাংলা  জয়বঙ্গবন্ধু" শ্লোগানটিকে জাতীয় শ্লোগানের মায্যদায় অভিষিক্ত করার লক্ষে মহান সংসদে আইনপাশ এবং সংবিধানে যথাযথ সম্মানের সাথে সংযোজন করার দাবী জানাই। রক্তের সাগরে জম্মনেয়া, বাংলার মীরজাপরের মুখে প্রথম উচ্চারীত, বাঙ্গালী জাতির সঙ্গে চরম বেঈমানীর প্রতিক "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" শ্লোগানটিকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহন করা একান্ত প্রয়োজন।যদিও শ্লোগানটি বাংলাদেশের গুনগান সমৃদ্ধ তথাপি খুনীর গর্ভে জম্ম নেয়ায় অপবিত্র শব্দের ভাণ্ডারে উক্ত শ্লোগান ইতিমধ্যে যুক্ত হয়ে গেছে।বাংলাদেশ, বাঙ্গালী জাতির উন্নতি, সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস,ঐতিহ্য সুরক্ষা টেকসই করার নিমিত্তে অপবিত্র শ্লোগানটি নিষিদ্ধ করা সময়ের অন্যতম দাবী এবং একান্ত প্রয়োজন।
     ruhulaminmujumder27@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন