দেরীতে হলেও জনগন সন্দেহমুক্ত হল গায়েশ্বরের বিএনপিতে ভুমিকা সম্পর্কে---"জনগন কিন্তু আমার চেয়েও বেশি গর্বীত মনে হচ্ছে।"
       (রুহুল আমিন মজুমদার)

      বিএনপি জামায়াত বিশ্বব্যাংকের ঋনগ্রহনের শর্তপূরণ করার জন্য পানির দামে দেশের জাতীয়করনকৃত জনগনের সম্পদ, সকল পাটকল বিক্রি করে দিয়ে দেশ পরিচালনা করেছিল। বিক্রি বলা হলে মনে হয় ভুল বলা হবে, নীজেদের দলের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছিল বলাই উত্তম হবে। শুধু তাই নয়-শেষ পয্যন্ত এশিয়ার বিখ্যাত পাটকল আদমজীও অর্ধেকের চেয়ে বেশি বিক্রি করে দেয়ার পর বাদবাকী সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে যায়, বিএনপি-জামায়াতের দুর্বত্ত  নেতারা। এতকিছু করেও জনগনের চাহিদা, দেশের উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচনে শুন্য শতাংশ অগ্রগতি সাধন করতে পারেনি তাঁরা। খমতার পুরো সময়কাল বিশ্বব্যাংক, জাতি সংঘের তালিকায় দারিদ্রতা ও দুর্নীতিতে প্রথমস্থান অধিকারে রেখেছিল। বাঙ্গালী জাতি, বাংলাদেশের চোখেমুখে কলংকের কালিমা চিরস্থায়ীভাবে লেপন করে রাখার সকল আয়োজন পাকাপোক্তভাবে সমাপ্ত করার প্রক্রিয়াও শেষ করে এনেছিল।
  বর্তমান সরকার দারিদ্রতা কাটিয়ে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে রুপান্তর করেছেন এবং দুর্নীতির তালিকায় অনেক উন্নত দেশকে টপকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বমহলে উজ্জ্বল করেছেন। বিশ্বব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগী অন্যান্ন সংস্থার সাথে চেলেঞ্জ দিয়ে পদ্মাসেতুর ন্যায় বৃহৎ মেঘা প্রকল্পও সফলতার সংঙ্গে বাস্তবায়ন করে চলেছেন।
   এখানে গল্পের সমাপ্তি হলে বলার তেমন কিছু ছিলনা--বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং আন্তজাতিক মানের সামরিক শক্তি অর্জনের লক্ষে মিগ -১৬ যুদ্ধবিমান,  জাগুয়ার ফাইটিং এয়ারক্রাপটের পর রাশিয়া থেকে অত্যাধুনিক বিমান ক্রয়ের নতুন করে আন্তজাতিক দরপত্র আহব্বান করেছে সরকার।এদিকে স্থলবাহিনীতে সংযোজন করেছে অত্যাধুনিক  মিশাইল সহ মারাত্মক সব অত্যাধুনিক মারাণাস্ত্র। স্থলবাহিনী, বিমানবাহিনী স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গল্পের শেষ দিলে ভালই হতো।গতকাল আবার নতুন গল্পের জম্ম দিয়ে সারা বিশ্বকে হতবাক করে দিলেন জাতির জনকের কন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
      দুটি সাবমেরিন ২০৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে চীনের নিকট থেকে গতবছরই কিনেছিল বাংলাদেশ সরকার।এই সম্পকীত বিষয়ে দেশী-বিদেশী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত  সংবাদ, বিশ্বব্যাপি আলোচনা- সমালোচনা সম্পর্কে বিশদভাবে লিখেছিলাম সাবমেরিন বাংলাদেশের পানি সিমানায় আসার পরের দিন।অদ্য সেদিকে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই-- তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ভাষন সম্পর্কে স্বল্প পরিসরে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করি।
   বাংলাদেশকে একটি শান্তিপ্রিয় দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য। তবে বাঙালি কখনো অন্যায় ও অবিচারকে মেনে নেয়নি। আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। কিন্তু আমাদের ওপর কোনো ধরনের হামলা হলে তার সমুচিত জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
 গত রবিবার চট্টগ্রাম নৌ জেটিতে দু’টি সাবমেরিন ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’ আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবহরে কমিশনিং করেন তিনি। এ সময় তিনি সাবমেরিন দু’টির কমিশনিং ফরমান অধিনায়কদের হাতে তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন।
     ভারতের পেইড দালালখ্যাত বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্যের বিবৃতির সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের হুবহু মিল খুঁজে পেয়ে জাতি দেরীতে হলেও বুঝতে পেরেছে, গায়েশ্বর খুঁটির জোর পায় কোথায়? বিএনপি দলের অভ্যন্তরে এত অঘটনের নায়ক গায়শ্বরের স্থান হয় কিভাবে? বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বহুবিদ কারনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতপুর্ণ ভাষন যেমন অন্যতম একটি তেমনি গায়েশ্বরের অভিমতও অন্যতম সত্যের মধ্যে একটি বলে আমি মনে করি। বাবু গায়েশ্বর বলেছেন--বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত সরকারের মান অভিমান চলছে।
      তিনি যেহেতু বিএনপির অনেকের মধ্যে অন্যতম এক ভারতপন্থি নেতা, এবং ভারতের নিয়োগকৃত বেতনভুক্ত অন্যতম চর, সেহেতু তারচেয়ে বেশি গভীরের খবর জানার সুত্র সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্পর্কীত না থেকে, অন্য কারো সুযোগ থাকার কথা নয়। তাঁর বক্তব্য সঠিক এবং সময়পযোগী--"প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষনেই  শতভাগ সত্য প্রমানীত হয়।
  যাইহোক---আমার লিখার মূল বিষয়বস্তুতে ফিরে আসি। আমার  একদিকে বাংলাদেশে জম্মগ্রহন এবং জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি কিঞ্চিত ভালবাসা থাকার কারনে অদ্য গর্বে বুক অনেকটা ফুলে দেড় দুই ইঞ্চি বেড়ে গেছে এবং নীজকে খুবই "অহংকারী মানুষের কাতারে চিন্তা করতে বেশ ভালই লাগছে।" অন্যদিকে মনটা অত্যান্ত চঞ্চল এবং অস্থীর হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের প্রতি মানষিকভাবে দুর্বল না হলে একটাই বোধহয় অনূভূত হ'ত-- শুধুমাত্র "হিংসা"। হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলেও মনে হয় ভালই হ'ত, অন্তত: হার্টষ্ট্রোক হওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিলনা।
    অতিশয় স্বল্প সময়ের মধ্যে অস্থীরতা দুরীভূত হওয়া প্রয়োজন। সুতারাং অস্থীরতার কারন সমাধানকল্পে সেই সমস্ত সুহৃদ বন্ধুদের দ্বারস্ত হওয়াই শ্রেয় মনে করে অদ্যকার লেখার সুত্রপাত। অস্থিরতা একর্থ্যে চিন্তা করা যায় খুবই জটিল, আবার  অনেকের নিকট হয়তো বা তেমন কিছুইনা। তবে মনে হয় আমি ব্যাক্তিগতভাবে একটু বেশী আবেগ প্রবন মানুষ বিদায়  বিষয়টি অত্যান্ত জটিল এবং দুর্ভেদ্যই মনে হচ্ছে। মনের অস্থীরতা দুর এবং সৎপোদেশ প্রাপ্তির আশায় আপনাদের শরনাপন্ন না হয়ে অন্যকোন বিকল্প খুঁজে পেলামনা।
       স্বাধীনতার ৪০ বছর জাতীয়করনকৃত শিল্পকারখানা বিক্রি, ভিক্ষা, সাহায্য ছাড়া যে দেশটি পরিচালনার অন্যকোন বিকল্প পথ খোলা ছিলনা সেই দেশটি মাত্র ছয়/সাত বছরের মধ্যে কি এমন যাদুরকাঠির সন্ধান পেয়েছে,  রাতারাতি ঋনদান সংস্থাকে চেলেঞ্জ দিয়ে পদ্মাসেতুর ন্যায় মেঘা প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়ানে বাস্তবায়ন করতে পারে! আবার প্রকল্পকাজ বাস্তবায়ন প্রাক্কালেই বিশ্বমানের সামরিক শক্তি অর্জনের লক্ষে কোটি কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কেনার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে !! কেউ কি বলতে পারেন?
" জয়বাংলা বলে আগে বাড়ো,  বঙ্গবন্ধুর ঝান্ডা উড়াও"
     ruhulaminmujumder27@gmail.com
   


   
   

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন