তিতাস নদীর মরাগাঙ্গে তিতাস গ্যাসের তিব্র খরস্রোত---বেড়িবাঁধ দিয়ে গ্রামীন জনপদে গ্যাস সরবরাহ নিচ্ছিত সম্ভব।
  (রুহুল আমিন মজুমদার)

সরকার এককভাবে দেশে গ্যাস সরবরাহের অধিকার সংরক্ষণ করে। পাইপলাইন ও সিলিন্ডার উভয় মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তিতাস গ্যাস পরিসঞ্চালন কর্তৃপক্ষ ও বাখরাবাদ গ্যাস পরিসঞ্চালন কর্তৃপক্ষ এই পাইপলাইন নেটওয়ার্কের স্বত্বাধিকারী। বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকের জন্য উভয় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সংযোগ নীতি, রাজস্ব হার ও পরিষেবা রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডারের জন্য সরকারের নিজস্ব একটি সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ
পেট্রোবাংলা
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল)
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড।

   তিতাস গ্যাস:--
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড বাংলাদেশের বৃহত্তর ঢাকা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করে থাকে। তেল,জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এবং পেট্রোবাংলার অধীনে তিতাস গ্যাস তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তিতাস ১৯৬৪ সালের ২০ নভেম্বর কোম্পানী আইনের আওতায় যৌথ তহবিল কোম্পানী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর তীরে বিরাট গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। ১৯৬৪ সালের ২০ নভেম্বর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড জন্মলাভ করে ৫২ বছর বয়স অতিক্রান্ত করেছে। তৎকালীন সরকারি প্রতিষ্ঠান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক ১৪″ব্যাস সম্পন্ন ৫৮ মাইল দীর্ঘ তিতাস-ডেমরা সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের পর ১৯৬৮ সালের ২৮ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে কোম্পানী বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।

 উল্লেখযোগ্য সংযোগ ও মুলধন:---
অনুমোদিত মূলধন       : ২,০০০.০০কোটি টাকা।
পরিশোধিত মূলধন(২০১৬ সালে ৩০ জুন অনুসারে)   : ৯৮৯.২২কোটি টাকা।
গ্যাস বিক্রয় (অর্থবছরে ২০১৫-১৬) : ১৬,৫৮৩.৩৩ এমএমছিএম
সেলস রাজস্ব (অর্থবছরে ২০১৫-১৬) : ১১,২০৩.৮৩ কোটি টাকা
জাতীয় রাজস্ব আদায় : ৪৮৩.৬০ কোটি টাকা
(২০১৬ জুন ৩০ অনুসারে) ক্রেতাদের সংখ্যা: মোট ২০,২৩,০০৫
পাওয়ার (সরকার.) ০৭ টি
পাওয়ার (ব্যক্তিগত) ৩১ টি
সার :-                              ০৩ টি
শিল্প :-                                ৪,৬০৪ টি
সিএনজি :--             ৩৩৩ টি
ক্যাপটিভ পাওয়ার:--       ১০৮৫ টি
বাণিজ্যিক :---             ১০,৯১৭ টি
আবাসিক:---             ২০,০৬,০১৩ টি
নির্মিত পাইপলাইন(২০১6 সালের জুন ৩০ অনুসারে): ১৩,০৩৮.৬৯ কিমি

 সর্বশেষ মুল্য নির্ধারন---
     গ্যাস বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কোম্পানি গৃহস্থালি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুই চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণের আবেদন করেছে। এক চুলার বিল হবে ১ হাজার টাকা।
এ ছাড়া যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে বিইআরসির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এই হারে বাড়ানো হলে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম হবে প্রায় ৫৮ টাকা, যা বর্তমানে ৩৫ টাকা।
মাত্র সাত মাস আগে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা এবং এক চুলার বিল ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মতামত:--
     -সরকার বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস-সংযোগ তো বন্ধ করেছেই, এখন পাইপলাইন গ্যাসের ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করতে চায়। এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ মানুষ পাইপলাইনের গ্যাস পায় না। তাদের অনেকেই বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করে, যার দাম অনেক বেশি। দুই ধরনের ব্যবহারকারীর মধ্যে বৈষম্য কমানো সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সে কারণেই বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম একটু বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

মুল্য বৃদ্ধির উপকারিতা:---
     সরকার বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সেখান থেকে পাওয়া বাড়তি অর্থের একাংশ এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীদের ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার কথাও ভাবছে। আর সিএনজির দাম বাড়ানো হবে যানবাহনে ব্যবহৃত তরল জ্বালানির (পেট্রল, অকটেন) দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য। এর আরেকটি উদ্দেশ্য দ্রুত কমে আসা দেশের গ্যাসের ওপর থেকে বাড়তি চাহিদার চাপ কমানো।

বিইআরসি এর অভিমত:---
এবার সব গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। বাসাবাড়ি ও সিএনজি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন বলে আবেদন করেছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।

চুরির ফাঁদে ১০০কোটি টাকা:----
   ১০০ কোটি টাকা নিয়ে বিব্রত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এ বছর গ্রাহকদের কাছ থেকে গ্যাসের বিল বাবদ যে পরিমাণ টাকা আসার কথা ছিল, তার চেয়ে ১০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে।কিন্তু এই বাড়তি টাকা পুরোনো বকেয়া নয়; চলতি বছরের বিভিন্ন মাসের বিলের টাকার সঙ্গে এসেছে এই বাড়তি টাকা। তাহলে কি গ্রাহকেরা ভুল করে তিতাসকে এই ১০০ কোটি টাকা দিয়েছেন? নাকি ভালোবেসে দিয়েছেন?

  তিতাসের বৈধ উপায় চুরির ফাঁদ:---
সরকার গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করার পর থেকে নানা কৌশলে যেসব সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেই এই ১০০ কোটি টাকা এসেছে। এই সংযোগগুলোকে অবৈধ বলতে চান না গ্রাহকেরা। কারণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বিল বইয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা নিয়ে এসব সংযোগ দেওয়া হয়েছে।তিতাসের আবাসিক গ্রাহকেরা যেসব ব্যাংকে প্রতি মাসে গ্যাসের বিল জমা দেন, সেই ব্যাংকগুলো থেকে ওই বাড়তি টাকার হিসাব কোম্পানির কেন্দ্রীয় হিসাব বিভাগে এসেছে। কিন্তু এই টাকা তিতাসের হিসাবে জমা হচ্ছে না (পোস্টিং না হওয়া), তাই বেকায়দায় পড়েছে তিতাস।

পাইপ লাইনের অনুমোদিত চুরি:--
      রাজধানী সহ সারা দেশে গড়ে উঠা বস্তি, আবাসিক এলাকা, শিল্পকারখানায় অনুমোদিত পাইপ লাইন সংযোগ না থাকলেও বৈধ সংযোগ প্রাপ্ত এলাকা বা শিল্প কারখানার চেয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পেয়ে থাকে অবৈধ পাইপ লাইনে প্রাপ্ত গ্যাস সংযোগ কারিরা।সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিতাস কর্মকর্তা/কর্মচারি এলাকার মাস্তানদের যোগসাজসে উক্ত অবৈধ পাইপ লাইন সংযোগ প্রদান করে একদিকে তিতাসের কোটি কোটি টাকার গ্যাস বিক্রিলব্দ টাকা তিতাস তহবিলে জমা না হয়ে কর্মকর্তা/কর্মচারিদের পকেটে জমা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। অবৈধ সংযোগের ব্যবহার করা গ্যাসের মুল্য পরিশোধে বাধ্য করছে কোম্পেনি বৈধ সংযোগপ্রাপ্ত গ্যাস ব্যবহারকারিদের কাঁধে উক্ত গ্যাসের বিল পরিশোধে বাধ্য করে।

 সামাজিক অস্থিরতা:--
এলাকা ভিত্তিক মাস্তানদের গ্যাস পাইপ লাইন এলাকা দখল পালটা দখল উচ্ছেদ, পালটা উচ্ছেদে পাড়া মহল্লায় বিরাজ করছে অস্থিরতা, ঝরে পড়ছে অকালে অনেকের প্রান। মাস্তানদের অবৈধ পথে আয়ের টাকা খরছ হচ্ছে উঠতি মাস্তান সৃষ্টি করে আধিপত্য ধরে রাখার কাজে। উঠতি মাস্তানদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে মদ, মাদক সহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজে অবাধে বিচরনের টাকা মুল মাসানের পকেট থেকে সরবরাহের মাধ্যমে। ফলে প্রলুব্দ হচ্ছে ভদ্রঘরের অবুঝ স্কুল কলেজ পড়ুয়া তরুন অনায়াসে খবরদারি করার লাইসেন্স সংগ্রহে।

  কর্মচারির একাধিক কর্মচারি:---
এমনও দেখা যায় তিতাসে বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত মিটার রিড়ার এখন আর মিটার রিড়ার পদে পরিচয় দিতে নারাজ।সে বড় কোন কোম্পেনি বা হাউজিং ব্যবসায় নিজেকে ব্যাস্ত রেখে তার পদে বিকল্প কাজ করার একাধিক কর্মচারি নিয়োগ দিয়ে রেখেছে।তাঁরাও কয়েক বছর কাজ করার পর রাজধানী শহরে একাধিক  গাড়ী বাড়ীর মালিক হতে দেখা যায়।
   খোঁজ নিলে দেখা যায় অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারি বিদেশে সেমিনার, ট্রেনিং, সংযোগ রক্ষার নামে সারাবছর দলে দলে বিদেশ ভ্রমনের প্রবনতা।তাঁদের ছেলে মেয়েদের বিদেশী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে আসা অথবা পরিবারের সাথে দেখা করে আসাই মুল উদ্দেশ্য।

      হিসেবে গরমিল:--
    বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবউশন কোম্পানিতে গত চার বছরে তিন হাজার কোটিরও বেশি টাকার হিসাবে গড়মিল পাওয়া গেছে।  ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে এই অনিয়ম হয়েছে।এর সঙ্গে জড়িতদের কাছ থেকে দ্রুত ওই অর্থ আদায়ের সুপারিশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। উক্ত অর্থ আদায় হয়েছিল কিনা বা অর্থের ভাগ্যে কি পরিণতি ঘটেছিল সে তথ্য আজো জানা যায়নি।

    উপসংহারে বলতে চাই--
বর্তমান সরকার জনগনের সরকার।অতীতে সামরিক সরকার, অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে রাষ্ট্রের সর্বত্র দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে।বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকা বা নতুন করে ক্ষমতা দখলের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিকড় গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের অন্তরে প্রোথিত।সুতারাং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগ্রাসি ভুমিকা গ্রহনে বৃহত্তর জনগোষ্টির আস্থা অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন আশা করি।
তিতাস নদী স্থানে স্থানে মরা নদীতে রুপান্তরিত হয়ে স্রোত থেমে গেলেও তিতাস গ্যাসের তিব্রস্রোত প্রতিনিয়ত দ্বিগুন শক্তি নিয়ে প্রবাহমান রয়েছে।অনতি বিলম্ভে উক্ত স্রোতের বিপরীতে কঠিন পাথর ঢালাই বাঁধের ব্যবস্থা গ্রহন করা না গেলে অচিরেই তিতাস গ্যাসের বিশাল সাগর শুকিয়ে তিতাস নদীর মরাস্রোতে রুপান্তর হতে সময় লাগবেনা বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল।
পাইপলাইনে সংযুক্তি প্রাপ্ত ব্যবহারকারিগন মনে রাখা প্রয়োজন গ্রামের বাড়ীতে রেখে আসা তাঁদের পরিবার পরিজন প্রতিমাসে জ্বালানী বাবদ ৪/৫হাজার টাকা খরছ করেও একাধিক চুল্লিতে রান্নাবান্না করতে পারেননা।সেই অবস্থানে মাত্র ১২ শত টাকায় নিত্য জেয়াফতের ব্যবস্থা থাকা সত্বেও মুল্যবৃদ্ধির বিরুধীতা গ্রামীন জনগনকে শোষন করার আদিম মানষিকতারই পরিচায়ক।
সুতারাং সরকারের নেয়া পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ অনুৎসাহের  পদক্ষেপ কেন, উপকার, অপকারের ব্যাপক  প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ট গ্রামীন জনপদে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিচ্ছিতে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। সরকারের নেয়া বিভিন্ন জনকল্যানমুলক পদক্ষেপ প্রচার প্রচারনার অভাবে গনবিরুধী চিহ্নিত হয়ে ইতিপুর্বে বাতিল করার বহু ন্যাক্কার জনক উদাহরন সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাসের বেলায় তদ্রুপ যেন না হয়-সেই দিকে মনযোগী হওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের একযোগে কাজ করা প্রয়োজন। পারত: পক্ষে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ শিল্পকারখানায় অনুমোদন রেখে বাদবাকি সব লাইন তুলে নেয়া দেশ, জনগন, সরকারের কল্যানে একান্ত জরুরী প্রয়োজন।
 ruhulaminmujumder27@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন