তিতাস নদীর মরাগাঙ্গে তিতাস গ্যাসের তিব্র খরস্রোত---বেড়িবাঁধ দিয়ে গ্রামীন জনপদে গ্যাস সরবরাহ নিচ্ছিত সম্ভব।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
সরকার এককভাবে দেশে গ্যাস সরবরাহের অধিকার সংরক্ষণ করে। পাইপলাইন ও সিলিন্ডার উভয় মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তিতাস গ্যাস পরিসঞ্চালন কর্তৃপক্ষ ও বাখরাবাদ গ্যাস পরিসঞ্চালন কর্তৃপক্ষ এই পাইপলাইন নেটওয়ার্কের স্বত্বাধিকারী। বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকের জন্য উভয় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সংযোগ নীতি, রাজস্ব হার ও পরিষেবা রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডারের জন্য সরকারের নিজস্ব একটি সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ
পেট্রোবাংলা
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল)
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড।
তিতাস গ্যাস:--
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড বাংলাদেশের বৃহত্তর ঢাকা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করে থাকে। তেল,জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এবং পেট্রোবাংলার অধীনে তিতাস গ্যাস তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তিতাস ১৯৬৪ সালের ২০ নভেম্বর কোম্পানী আইনের আওতায় যৌথ তহবিল কোম্পানী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর তীরে বিরাট গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। ১৯৬৪ সালের ২০ নভেম্বর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড জন্মলাভ করে ৫২ বছর বয়স অতিক্রান্ত করেছে। তৎকালীন সরকারি প্রতিষ্ঠান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক ১৪″ব্যাস সম্পন্ন ৫৮ মাইল দীর্ঘ তিতাস-ডেমরা সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের পর ১৯৬৮ সালের ২৮ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে কোম্পানী বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
উল্লেখযোগ্য সংযোগ ও মুলধন:---
অনুমোদিত মূলধন : ২,০০০.০০কোটি টাকা।
পরিশোধিত মূলধন(২০১৬ সালে ৩০ জুন অনুসারে) : ৯৮৯.২২কোটি টাকা।
গ্যাস বিক্রয় (অর্থবছরে ২০১৫-১৬) : ১৬,৫৮৩.৩৩ এমএমছিএম
সেলস রাজস্ব (অর্থবছরে ২০১৫-১৬) : ১১,২০৩.৮৩ কোটি টাকা
জাতীয় রাজস্ব আদায় : ৪৮৩.৬০ কোটি টাকা
(২০১৬ জুন ৩০ অনুসারে) ক্রেতাদের সংখ্যা: মোট ২০,২৩,০০৫
পাওয়ার (সরকার.) ০৭ টি
পাওয়ার (ব্যক্তিগত) ৩১ টি
সার :- ০৩ টি
শিল্প :- ৪,৬০৪ টি
সিএনজি :-- ৩৩৩ টি
ক্যাপটিভ পাওয়ার:-- ১০৮৫ টি
বাণিজ্যিক :--- ১০,৯১৭ টি
আবাসিক:--- ২০,০৬,০১৩ টি
নির্মিত পাইপলাইন(২০১6 সালের জুন ৩০ অনুসারে): ১৩,০৩৮.৬৯ কিমি
সর্বশেষ মুল্য নির্ধারন---
গ্যাস বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কোম্পানি গৃহস্থালি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুই চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণের আবেদন করেছে। এক চুলার বিল হবে ১ হাজার টাকা।
এ ছাড়া যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে বিইআরসির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এই হারে বাড়ানো হলে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম হবে প্রায় ৫৮ টাকা, যা বর্তমানে ৩৫ টাকা।
মাত্র সাত মাস আগে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা এবং এক চুলার বিল ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মতামত:--
-সরকার বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস-সংযোগ তো বন্ধ করেছেই, এখন পাইপলাইন গ্যাসের ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করতে চায়। এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ মানুষ পাইপলাইনের গ্যাস পায় না। তাদের অনেকেই বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করে, যার দাম অনেক বেশি। দুই ধরনের ব্যবহারকারীর মধ্যে বৈষম্য কমানো সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সে কারণেই বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম একটু বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
মুল্য বৃদ্ধির উপকারিতা:---
সরকার বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সেখান থেকে পাওয়া বাড়তি অর্থের একাংশ এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীদের ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার কথাও ভাবছে। আর সিএনজির দাম বাড়ানো হবে যানবাহনে ব্যবহৃত তরল জ্বালানির (পেট্রল, অকটেন) দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য। এর আরেকটি উদ্দেশ্য দ্রুত কমে আসা দেশের গ্যাসের ওপর থেকে বাড়তি চাহিদার চাপ কমানো।
বিইআরসি এর অভিমত:---
এবার সব গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। বাসাবাড়ি ও সিএনজি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন বলে আবেদন করেছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।
চুরির ফাঁদে ১০০কোটি টাকা:----
১০০ কোটি টাকা নিয়ে বিব্রত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এ বছর গ্রাহকদের কাছ থেকে গ্যাসের বিল বাবদ যে পরিমাণ টাকা আসার কথা ছিল, তার চেয়ে ১০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে।কিন্তু এই বাড়তি টাকা পুরোনো বকেয়া নয়; চলতি বছরের বিভিন্ন মাসের বিলের টাকার সঙ্গে এসেছে এই বাড়তি টাকা। তাহলে কি গ্রাহকেরা ভুল করে তিতাসকে এই ১০০ কোটি টাকা দিয়েছেন? নাকি ভালোবেসে দিয়েছেন?
তিতাসের বৈধ উপায় চুরির ফাঁদ:---
সরকার গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করার পর থেকে নানা কৌশলে যেসব সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেই এই ১০০ কোটি টাকা এসেছে। এই সংযোগগুলোকে অবৈধ বলতে চান না গ্রাহকেরা। কারণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বিল বইয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা নিয়ে এসব সংযোগ দেওয়া হয়েছে।তিতাসের আবাসিক গ্রাহকেরা যেসব ব্যাংকে প্রতি মাসে গ্যাসের বিল জমা দেন, সেই ব্যাংকগুলো থেকে ওই বাড়তি টাকার হিসাব কোম্পানির কেন্দ্রীয় হিসাব বিভাগে এসেছে। কিন্তু এই টাকা তিতাসের হিসাবে জমা হচ্ছে না (পোস্টিং না হওয়া), তাই বেকায়দায় পড়েছে তিতাস।
পাইপ লাইনের অনুমোদিত চুরি:--
রাজধানী সহ সারা দেশে গড়ে উঠা বস্তি, আবাসিক এলাকা, শিল্পকারখানায় অনুমোদিত পাইপ লাইন সংযোগ না থাকলেও বৈধ সংযোগ প্রাপ্ত এলাকা বা শিল্প কারখানার চেয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পেয়ে থাকে অবৈধ পাইপ লাইনে প্রাপ্ত গ্যাস সংযোগ কারিরা।সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিতাস কর্মকর্তা/কর্মচারি এলাকার মাস্তানদের যোগসাজসে উক্ত অবৈধ পাইপ লাইন সংযোগ প্রদান করে একদিকে তিতাসের কোটি কোটি টাকার গ্যাস বিক্রিলব্দ টাকা তিতাস তহবিলে জমা না হয়ে কর্মকর্তা/কর্মচারিদের পকেটে জমা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। অবৈধ সংযোগের ব্যবহার করা গ্যাসের মুল্য পরিশোধে বাধ্য করছে কোম্পেনি বৈধ সংযোগপ্রাপ্ত গ্যাস ব্যবহারকারিদের কাঁধে উক্ত গ্যাসের বিল পরিশোধে বাধ্য করে।
সামাজিক অস্থিরতা:--
এলাকা ভিত্তিক মাস্তানদের গ্যাস পাইপ লাইন এলাকা দখল পালটা দখল উচ্ছেদ, পালটা উচ্ছেদে পাড়া মহল্লায় বিরাজ করছে অস্থিরতা, ঝরে পড়ছে অকালে অনেকের প্রান। মাস্তানদের অবৈধ পথে আয়ের টাকা খরছ হচ্ছে উঠতি মাস্তান সৃষ্টি করে আধিপত্য ধরে রাখার কাজে। উঠতি মাস্তানদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে মদ, মাদক সহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজে অবাধে বিচরনের টাকা মুল মাসানের পকেট থেকে সরবরাহের মাধ্যমে। ফলে প্রলুব্দ হচ্ছে ভদ্রঘরের অবুঝ স্কুল কলেজ পড়ুয়া তরুন অনায়াসে খবরদারি করার লাইসেন্স সংগ্রহে।
কর্মচারির একাধিক কর্মচারি:---
এমনও দেখা যায় তিতাসে বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত মিটার রিড়ার এখন আর মিটার রিড়ার পদে পরিচয় দিতে নারাজ।সে বড় কোন কোম্পেনি বা হাউজিং ব্যবসায় নিজেকে ব্যাস্ত রেখে তার পদে বিকল্প কাজ করার একাধিক কর্মচারি নিয়োগ দিয়ে রেখেছে।তাঁরাও কয়েক বছর কাজ করার পর রাজধানী শহরে একাধিক গাড়ী বাড়ীর মালিক হতে দেখা যায়।
খোঁজ নিলে দেখা যায় অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারি বিদেশে সেমিনার, ট্রেনিং, সংযোগ রক্ষার নামে সারাবছর দলে দলে বিদেশ ভ্রমনের প্রবনতা।তাঁদের ছেলে মেয়েদের বিদেশী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে আসা অথবা পরিবারের সাথে দেখা করে আসাই মুল উদ্দেশ্য।
হিসেবে গরমিল:--
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবউশন কোম্পানিতে গত চার বছরে তিন হাজার কোটিরও বেশি টাকার হিসাবে গড়মিল পাওয়া গেছে। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে এই অনিয়ম হয়েছে।এর সঙ্গে জড়িতদের কাছ থেকে দ্রুত ওই অর্থ আদায়ের সুপারিশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। উক্ত অর্থ আদায় হয়েছিল কিনা বা অর্থের ভাগ্যে কি পরিণতি ঘটেছিল সে তথ্য আজো জানা যায়নি।
উপসংহারে বলতে চাই--
বর্তমান সরকার জনগনের সরকার।অতীতে সামরিক সরকার, অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে রাষ্ট্রের সর্বত্র দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে।বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকা বা নতুন করে ক্ষমতা দখলের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিকড় গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের অন্তরে প্রোথিত।সুতারাং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগ্রাসি ভুমিকা গ্রহনে বৃহত্তর জনগোষ্টির আস্থা অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন আশা করি।
তিতাস নদী স্থানে স্থানে মরা নদীতে রুপান্তরিত হয়ে স্রোত থেমে গেলেও তিতাস গ্যাসের তিব্রস্রোত প্রতিনিয়ত দ্বিগুন শক্তি নিয়ে প্রবাহমান রয়েছে।অনতি বিলম্ভে উক্ত স্রোতের বিপরীতে কঠিন পাথর ঢালাই বাঁধের ব্যবস্থা গ্রহন করা না গেলে অচিরেই তিতাস গ্যাসের বিশাল সাগর শুকিয়ে তিতাস নদীর মরাস্রোতে রুপান্তর হতে সময় লাগবেনা বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল।
পাইপলাইনে সংযুক্তি প্রাপ্ত ব্যবহারকারিগন মনে রাখা প্রয়োজন গ্রামের বাড়ীতে রেখে আসা তাঁদের পরিবার পরিজন প্রতিমাসে জ্বালানী বাবদ ৪/৫হাজার টাকা খরছ করেও একাধিক চুল্লিতে রান্নাবান্না করতে পারেননা।সেই অবস্থানে মাত্র ১২ শত টাকায় নিত্য জেয়াফতের ব্যবস্থা থাকা সত্বেও মুল্যবৃদ্ধির বিরুধীতা গ্রামীন জনগনকে শোষন করার আদিম মানষিকতারই পরিচায়ক।
সুতারাং সরকারের নেয়া পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ অনুৎসাহের পদক্ষেপ কেন, উপকার, অপকারের ব্যাপক প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ট গ্রামীন জনপদে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিচ্ছিতে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। সরকারের নেয়া বিভিন্ন জনকল্যানমুলক পদক্ষেপ প্রচার প্রচারনার অভাবে গনবিরুধী চিহ্নিত হয়ে ইতিপুর্বে বাতিল করার বহু ন্যাক্কার জনক উদাহরন সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাসের বেলায় তদ্রুপ যেন না হয়-সেই দিকে মনযোগী হওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের একযোগে কাজ করা প্রয়োজন। পারত: পক্ষে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ শিল্পকারখানায় অনুমোদন রেখে বাদবাকি সব লাইন তুলে নেয়া দেশ, জনগন, সরকারের কল্যানে একান্ত জরুরী প্রয়োজন।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
(রুহুল আমিন মজুমদার)
সরকার এককভাবে দেশে গ্যাস সরবরাহের অধিকার সংরক্ষণ করে। পাইপলাইন ও সিলিন্ডার উভয় মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তিতাস গ্যাস পরিসঞ্চালন কর্তৃপক্ষ ও বাখরাবাদ গ্যাস পরিসঞ্চালন কর্তৃপক্ষ এই পাইপলাইন নেটওয়ার্কের স্বত্বাধিকারী। বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকের জন্য উভয় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সংযোগ নীতি, রাজস্ব হার ও পরিষেবা রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডারের জন্য সরকারের নিজস্ব একটি সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ
পেট্রোবাংলা
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল)
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড।
তিতাস গ্যাস:--
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড বাংলাদেশের বৃহত্তর ঢাকা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করে থাকে। তেল,জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এবং পেট্রোবাংলার অধীনে তিতাস গ্যাস তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তিতাস ১৯৬৪ সালের ২০ নভেম্বর কোম্পানী আইনের আওতায় যৌথ তহবিল কোম্পানী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর তীরে বিরাট গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। ১৯৬৪ সালের ২০ নভেম্বর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড জন্মলাভ করে ৫২ বছর বয়স অতিক্রান্ত করেছে। তৎকালীন সরকারি প্রতিষ্ঠান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক ১৪″ব্যাস সম্পন্ন ৫৮ মাইল দীর্ঘ তিতাস-ডেমরা সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের পর ১৯৬৮ সালের ২৮ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে কোম্পানী বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
উল্লেখযোগ্য সংযোগ ও মুলধন:---
অনুমোদিত মূলধন : ২,০০০.০০কোটি টাকা।
পরিশোধিত মূলধন(২০১৬ সালে ৩০ জুন অনুসারে) : ৯৮৯.২২কোটি টাকা।
গ্যাস বিক্রয় (অর্থবছরে ২০১৫-১৬) : ১৬,৫৮৩.৩৩ এমএমছিএম
সেলস রাজস্ব (অর্থবছরে ২০১৫-১৬) : ১১,২০৩.৮৩ কোটি টাকা
জাতীয় রাজস্ব আদায় : ৪৮৩.৬০ কোটি টাকা
(২০১৬ জুন ৩০ অনুসারে) ক্রেতাদের সংখ্যা: মোট ২০,২৩,০০৫
পাওয়ার (সরকার.) ০৭ টি
পাওয়ার (ব্যক্তিগত) ৩১ টি
সার :- ০৩ টি
শিল্প :- ৪,৬০৪ টি
সিএনজি :-- ৩৩৩ টি
ক্যাপটিভ পাওয়ার:-- ১০৮৫ টি
বাণিজ্যিক :--- ১০,৯১৭ টি
আবাসিক:--- ২০,০৬,০১৩ টি
নির্মিত পাইপলাইন(২০১6 সালের জুন ৩০ অনুসারে): ১৩,০৩৮.৬৯ কিমি
সর্বশেষ মুল্য নির্ধারন---
গ্যাস বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কোম্পানি গৃহস্থালি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুই চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণের আবেদন করেছে। এক চুলার বিল হবে ১ হাজার টাকা।
এ ছাড়া যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে বিইআরসির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এই হারে বাড়ানো হলে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম হবে প্রায় ৫৮ টাকা, যা বর্তমানে ৩৫ টাকা।
মাত্র সাত মাস আগে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা এবং এক চুলার বিল ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মতামত:--
-সরকার বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস-সংযোগ তো বন্ধ করেছেই, এখন পাইপলাইন গ্যাসের ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করতে চায়। এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ মানুষ পাইপলাইনের গ্যাস পায় না। তাদের অনেকেই বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করে, যার দাম অনেক বেশি। দুই ধরনের ব্যবহারকারীর মধ্যে বৈষম্য কমানো সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সে কারণেই বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম একটু বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
মুল্য বৃদ্ধির উপকারিতা:---
সরকার বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সেখান থেকে পাওয়া বাড়তি অর্থের একাংশ এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীদের ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার কথাও ভাবছে। আর সিএনজির দাম বাড়ানো হবে যানবাহনে ব্যবহৃত তরল জ্বালানির (পেট্রল, অকটেন) দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য। এর আরেকটি উদ্দেশ্য দ্রুত কমে আসা দেশের গ্যাসের ওপর থেকে বাড়তি চাহিদার চাপ কমানো।
বিইআরসি এর অভিমত:---
এবার সব গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। বাসাবাড়ি ও সিএনজি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন বলে আবেদন করেছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।
চুরির ফাঁদে ১০০কোটি টাকা:----
১০০ কোটি টাকা নিয়ে বিব্রত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এ বছর গ্রাহকদের কাছ থেকে গ্যাসের বিল বাবদ যে পরিমাণ টাকা আসার কথা ছিল, তার চেয়ে ১০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে।কিন্তু এই বাড়তি টাকা পুরোনো বকেয়া নয়; চলতি বছরের বিভিন্ন মাসের বিলের টাকার সঙ্গে এসেছে এই বাড়তি টাকা। তাহলে কি গ্রাহকেরা ভুল করে তিতাসকে এই ১০০ কোটি টাকা দিয়েছেন? নাকি ভালোবেসে দিয়েছেন?
তিতাসের বৈধ উপায় চুরির ফাঁদ:---
সরকার গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করার পর থেকে নানা কৌশলে যেসব সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেই এই ১০০ কোটি টাকা এসেছে। এই সংযোগগুলোকে অবৈধ বলতে চান না গ্রাহকেরা। কারণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বিল বইয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা নিয়ে এসব সংযোগ দেওয়া হয়েছে।তিতাসের আবাসিক গ্রাহকেরা যেসব ব্যাংকে প্রতি মাসে গ্যাসের বিল জমা দেন, সেই ব্যাংকগুলো থেকে ওই বাড়তি টাকার হিসাব কোম্পানির কেন্দ্রীয় হিসাব বিভাগে এসেছে। কিন্তু এই টাকা তিতাসের হিসাবে জমা হচ্ছে না (পোস্টিং না হওয়া), তাই বেকায়দায় পড়েছে তিতাস।
পাইপ লাইনের অনুমোদিত চুরি:--
রাজধানী সহ সারা দেশে গড়ে উঠা বস্তি, আবাসিক এলাকা, শিল্পকারখানায় অনুমোদিত পাইপ লাইন সংযোগ না থাকলেও বৈধ সংযোগ প্রাপ্ত এলাকা বা শিল্প কারখানার চেয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পেয়ে থাকে অবৈধ পাইপ লাইনে প্রাপ্ত গ্যাস সংযোগ কারিরা।সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিতাস কর্মকর্তা/কর্মচারি এলাকার মাস্তানদের যোগসাজসে উক্ত অবৈধ পাইপ লাইন সংযোগ প্রদান করে একদিকে তিতাসের কোটি কোটি টাকার গ্যাস বিক্রিলব্দ টাকা তিতাস তহবিলে জমা না হয়ে কর্মকর্তা/কর্মচারিদের পকেটে জমা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। অবৈধ সংযোগের ব্যবহার করা গ্যাসের মুল্য পরিশোধে বাধ্য করছে কোম্পেনি বৈধ সংযোগপ্রাপ্ত গ্যাস ব্যবহারকারিদের কাঁধে উক্ত গ্যাসের বিল পরিশোধে বাধ্য করে।
সামাজিক অস্থিরতা:--
এলাকা ভিত্তিক মাস্তানদের গ্যাস পাইপ লাইন এলাকা দখল পালটা দখল উচ্ছেদ, পালটা উচ্ছেদে পাড়া মহল্লায় বিরাজ করছে অস্থিরতা, ঝরে পড়ছে অকালে অনেকের প্রান। মাস্তানদের অবৈধ পথে আয়ের টাকা খরছ হচ্ছে উঠতি মাস্তান সৃষ্টি করে আধিপত্য ধরে রাখার কাজে। উঠতি মাস্তানদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে মদ, মাদক সহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজে অবাধে বিচরনের টাকা মুল মাসানের পকেট থেকে সরবরাহের মাধ্যমে। ফলে প্রলুব্দ হচ্ছে ভদ্রঘরের অবুঝ স্কুল কলেজ পড়ুয়া তরুন অনায়াসে খবরদারি করার লাইসেন্স সংগ্রহে।
কর্মচারির একাধিক কর্মচারি:---
এমনও দেখা যায় তিতাসে বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত মিটার রিড়ার এখন আর মিটার রিড়ার পদে পরিচয় দিতে নারাজ।সে বড় কোন কোম্পেনি বা হাউজিং ব্যবসায় নিজেকে ব্যাস্ত রেখে তার পদে বিকল্প কাজ করার একাধিক কর্মচারি নিয়োগ দিয়ে রেখেছে।তাঁরাও কয়েক বছর কাজ করার পর রাজধানী শহরে একাধিক গাড়ী বাড়ীর মালিক হতে দেখা যায়।
খোঁজ নিলে দেখা যায় অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারি বিদেশে সেমিনার, ট্রেনিং, সংযোগ রক্ষার নামে সারাবছর দলে দলে বিদেশ ভ্রমনের প্রবনতা।তাঁদের ছেলে মেয়েদের বিদেশী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে আসা অথবা পরিবারের সাথে দেখা করে আসাই মুল উদ্দেশ্য।
হিসেবে গরমিল:--
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবউশন কোম্পানিতে গত চার বছরে তিন হাজার কোটিরও বেশি টাকার হিসাবে গড়মিল পাওয়া গেছে। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে এই অনিয়ম হয়েছে।এর সঙ্গে জড়িতদের কাছ থেকে দ্রুত ওই অর্থ আদায়ের সুপারিশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। উক্ত অর্থ আদায় হয়েছিল কিনা বা অর্থের ভাগ্যে কি পরিণতি ঘটেছিল সে তথ্য আজো জানা যায়নি।
উপসংহারে বলতে চাই--
বর্তমান সরকার জনগনের সরকার।অতীতে সামরিক সরকার, অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে রাষ্ট্রের সর্বত্র দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে।বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকা বা নতুন করে ক্ষমতা দখলের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিকড় গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের অন্তরে প্রোথিত।সুতারাং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগ্রাসি ভুমিকা গ্রহনে বৃহত্তর জনগোষ্টির আস্থা অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন আশা করি।
তিতাস নদী স্থানে স্থানে মরা নদীতে রুপান্তরিত হয়ে স্রোত থেমে গেলেও তিতাস গ্যাসের তিব্রস্রোত প্রতিনিয়ত দ্বিগুন শক্তি নিয়ে প্রবাহমান রয়েছে।অনতি বিলম্ভে উক্ত স্রোতের বিপরীতে কঠিন পাথর ঢালাই বাঁধের ব্যবস্থা গ্রহন করা না গেলে অচিরেই তিতাস গ্যাসের বিশাল সাগর শুকিয়ে তিতাস নদীর মরাস্রোতে রুপান্তর হতে সময় লাগবেনা বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল।
পাইপলাইনে সংযুক্তি প্রাপ্ত ব্যবহারকারিগন মনে রাখা প্রয়োজন গ্রামের বাড়ীতে রেখে আসা তাঁদের পরিবার পরিজন প্রতিমাসে জ্বালানী বাবদ ৪/৫হাজার টাকা খরছ করেও একাধিক চুল্লিতে রান্নাবান্না করতে পারেননা।সেই অবস্থানে মাত্র ১২ শত টাকায় নিত্য জেয়াফতের ব্যবস্থা থাকা সত্বেও মুল্যবৃদ্ধির বিরুধীতা গ্রামীন জনগনকে শোষন করার আদিম মানষিকতারই পরিচায়ক।
সুতারাং সরকারের নেয়া পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ অনুৎসাহের পদক্ষেপ কেন, উপকার, অপকারের ব্যাপক প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ট গ্রামীন জনপদে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিচ্ছিতে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। সরকারের নেয়া বিভিন্ন জনকল্যানমুলক পদক্ষেপ প্রচার প্রচারনার অভাবে গনবিরুধী চিহ্নিত হয়ে ইতিপুর্বে বাতিল করার বহু ন্যাক্কার জনক উদাহরন সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাসের বেলায় তদ্রুপ যেন না হয়-সেই দিকে মনযোগী হওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের একযোগে কাজ করা প্রয়োজন। পারত: পক্ষে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ শিল্পকারখানায় অনুমোদন রেখে বাদবাকি সব লাইন তুলে নেয়া দেশ, জনগন, সরকারের কল্যানে একান্ত জরুরী প্রয়োজন।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন