তিস্তার পানিবন্টনে পশ্চিমবঙ্গকে সাথে রাখলে বাংলাদেশেরই লাভ হবে।
    (রুহুল আমিন মজুমদার)
   
    ৪৭ এর দেশভাগের পর অত্রাঞ্চলের প্রকৃতিগত প্রাপ্য সম্পদের প্রতি কোনরুপ দৃষ্টি ছিলনা শাষক শ্রেনীগুলীর।৪৭ এ দেশভাগের পর তাঁরা কামনা করেছিল শুধুমাত্র সমৃদ্ধ এই জনপথ।ভুখন্ডগত ভাগাভাগির প্রাক্কালে আন্তজাতিক ভাবে স্বীকৃত এবং প্রকৃতিগতভাবে প্রাপ্য সম্পদ  বণ্টনের তাৎক্ষনিক সমাধানের প্রয়োজন ছিল, ইহা শাষক শ্রেনী এড়িয়ে গেছে বরাবর।বরঞ্চ দীর্ঘ শাষনে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে ন্যয্য হিস্যা বা অংশ প্রাপ্তি নিশ্চিতের পথে বাঁধার দেয়াল তোলে রাখতেই তাঁরা সচেষ্ট ছিলেন।এই প্রকৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৯৫ইং সালের বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার শেষদিন  পয্যন্ত।
    তাঁরা বরাবর এড়িয়ে গেছে বলা হলে অনেকাংশে সত্য বলা হয়না বরঞ্চ প্রাপ্য হিস্যা সম্পর্কে জনগনকেও কখনও জানার সুযোগ দেয়নি। পাছে আন্দোলনের ইস্যু সৃষ্টির ভয়ে।মাওলানা ভাসানী এইক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমি এক দেশপ্রেমিক রাজনীতিবীদ। তিনি প্রথম ফারাক্কা লং মার্চের ঘোষনা দিয়ে জানিয়ে ছিলেন গঙ্গায় অত্রাঞ্চলের হিস্যাও রয়েছে। তোমরা একতরফা পানি প্রত্যাহার করতে পারনা। ভাসানী ফারাক্কা বাঁধ উপড়ে ফেলার ঘোষনা দিয়ে ফারাক্কা অভিমূখে লং মার্চের ঘোষনা দেয়ার অর্থ এই নয়, ভারতীয় ভুখন্ডের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বাঁধ কেটে পানি নিয়ে আসবেন।তাঁর উদ্দেশ্য ছিল জনসচেতনতা এবং আন্তজাতিক বিশ্বকে অবহিত করা। ভারত উজানে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে একতরফা পানি প্রবাহে বাঁধার প্রচীর সৃষ্টি করছে যাহা আন্তজাতিক আইনে কখনই ভারত করতে পারে না।
     মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর আন্দোলনের পরিণতি দিয়েছিলেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ ইং সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে। তৎকালিন বিরুধীদলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাবী কমপক্ষে দশহাজার কিউসেক পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে না পারলে শেখ হাসিনাকে বিমান বন্দরে নামতে দিবেন না। শেখ হাসিনা ৪০ হাজার কিউসেক পানির চুক্তিপত্র সম্পাদন করে আসার পর অকৃতজ্ঞ বিরুধীদল ধন্যবাদ তো দেয়নি বরঞ্চ  সংসদের ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপিত হলে সংসদ কক্ষই ত্যাগ করেছিল।
         চিটমহল, বঙ্গোবসাগরের সিমানা সুনির্দিষ্টকরন, ভারত এবং হিমালয়ে উৎপত্তি উজানের নদী সমুহের পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরন, সিমান্তে চলাচল ইত্যাদি বিষয়ে আন্তজাতিক আইন থাকা সত্বেও অত্রাঞ্চলের জীবনমান সম্পর্কীত বিষয় সমূহের কোনরকম আলোচনা ও সিদ্ধান্ত না করে শুধুমাত্র  ভূখন্ডের চতূদিকে কয়েকটি সিমেন্টের পিলার ভূমিতে পূঁতে দিয়ে ভাগাভাগি করে নেয়।শুধু তাই নয়---প্রকৃতিগত ভাবে অত্রাঞ্চলের প্রাপ্য এই সমস্ত ভুমি, জলাশয়, নদীর পানি, বঙ্গোবসাগরের বিশাল অংশ প্রাপ্যতা সম্পর্কে জনগনকেও অবহিত করেনি ৬৭ বছরের ইতিহাসে কোন সরকার।
     জাতির জনকের কন্যা ২০০৯ ইং সালে সরকার গঠন করে অত্রাঞ্চলের জীবনমান উন্নয়নের মূলভিত্তি সমূহ নিয়ন্ত্রনের লক্ষে বঙ্গোবসাগরের সিমানা চিহ্নিত করার লক্ষে দ্বিপক্ষিয় আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করে আন্তজাতিক আদালতের শরানাপন্ন হন এবং বিজয় চিনিয়ে আনেন। ৬৭ বছর পর  ভারতের সঙ্গে সম্মানজনক চিটমহল সমস্যার সমাধান করে চিটমহলবাসিদের মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। বঙ্গোবসাগর এবং চিটমহল থেকে প্রাপ্ত জলাভূমি ও চাষাবাদ যোগ্য ভূমির আয়তন বর্তমান বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে কম নয়। এই বিশালায়তনের সমুদ্র সীমা রক্ষনাবেক্ষন, সম্পদ আহরন, মৎস সম্পদ রক্ষা করার লক্ষে নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। উক্ত  লক্ষে যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তাও তিনি পূরণ করেছেন।
     আগামী ৮ এপ্রিল বিদ্যমান আরো কিছু জটিল সমস্যা সমাধানকল্পে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার ভারত সফরের দিন তারিখ ধায্য রয়েছে। এবারের সফরেও তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বন্টন প্রশ্নে গুরুত্ব পুর্ণ কিছু সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের কথা রয়েছে। তম্মধ্যে গরু চোরাচালান, মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা এবং বাণিজ্য ঘাটতি ও বিনিয়োগ অন্যতম।  পানি বণ্টন প্রশ্নে ইতিমধ্যে কিছু জটিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।এবারের সফরে পানি সমস্যার আশু কোনো সমাধানের লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। আশু না হোক, দূর ভবিষ্যতে সমস্যাটির সমাধান হবে এই আশা যেন জনগন করতে পারে সেই দিকে মনযোগি হবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা নিশ্চয়ই।
    বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর উপলক্ষে তিস্তা চুক্তি নিয়ে নানাজন নানা মত ব্যক্ত করছেন। প্রশ্ন হল- তিস্তা চুক্তি হলেও কি বাংলাদেশ তার কাংখিত পানির  হিস্যা তিস্তা নদী থেকে পাবে? আমার কিন্তু তা মনে হয় না। তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে অনেক আগে থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশেষ করে সিকিমে এ প্রয়াস চলছে। অন্যদিকে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি সেচের জন্য প্রত্যাহার করা হচ্ছে।যখন একতরফা বাঁধগুলী নির্মিত হচ্ছে তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার সমূহ সামান্য প্রতিবাদও করেনি। আন্তজাতিক আদালতে যাওয়া দুরের কথা--জাতিসংঘেও যায়নি। বর্তমানে যে সমস্ত শুশিল তিস্তা না হলে প্রধান মন্ত্রীর ভারত সফর উচিৎ হবেনা মন্তব্য করছেন তাঁরাও তখন চুপ ছিলেন। তিস্তার পানি প্রাপ্যতায় জটিলতা সৃষ্টির সুযোগ দিয়েছেন কুচক্রিমহল ভারতকে আবার এখন আন্দোলন করার হুমকিও দিচ্ছেন তাঁরাই।
     অথছ ভারত তিস্তার পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের ভেতরে তিস্তা বাঁধ দিয়েও শুষ্ক মৌসুমে উল্লেখ করার মতো পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। কারণ উজানে পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার প্রবাহ অনেক ক্ষীণ হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে বড়জোর সাত-আটশ’ কিউসেক পানি পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অভিন্ন নদীতে কোনো দেশ একতরফাভাবে পানির প্রবাহ রুদ্ধ করতে পারে না। তিস্তাতে বাঁধ দিয়ে ভারত সে কাজটি যখন করছে তখন বাঁধা প্রদানের চিন্তাও করেনি কুচক্রি মহল এবং বাংলাদেশের সরকারও কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি । বিষয়টি আন্তজাতিক আদালতে না গেলেও অন্তত: জাতিসংঘে উত্থাপন করা সম্ভব হত, তাও করেনি তাঁরা।
     আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতার নীতি অনুসরণ করতে হয়। এমন কিছু করা যাবে না, যার ফলে অন্য পক্ষের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়। অতীব দুখ্যের সঙ্গে বলতে হয়, বিগত দুই যুগ ভারত অভিন্ন নদীর উপর বাঁধ নির্মান করে পানি প্রবাহে একতরফা বাঁধার সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার গুলী কখনই উক্ত বাঁধ নির্মান বা একতরফা পানি প্রত্যাহারের সরকারিভাবে কোন প্রতিবাদ করেনি। তখন সরকারিভাবে  আন্তজাতিক পয্যায় প্রতিবাদ জানিয়ে রাখলে এখন নিদেনপক্ষে একটা প্রযুক্তিগত সমাধান হলেও করা সম্ভব হ'ত। বিশাল ভারতের অভ্যন্তরে এতগুলী বাঁধ অপসারন করে বর্তমানে তিস্তাচুক্তি হলেও পানি প্রবাহ ঠিক রাখা যাবে, এমন কোন ভরসা নেই।যদিও উক্ত চুক্তি সম্পাদন করতে হয় এমন ভাবে গ্যারান্টি ক্লজ সংযুক্ত  করতে হবে যার ফলে বাংলাদেশ তার প্রাপ্য পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে কখনই বঞ্চিত না হয়।
       যতটুকু জানি পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃত্ত হতে আগ্রহি।  আমি মনে করি পশ্চিমবঙ্গের দাবিও এক্ষেত্রে অযৌক্তিক নয়, তিস্তা পশ্চিমবঙ্গের ও উজানে। পশ্চিম বঙ্গকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃত্ত করে হিস্যা ভাগাভাগিতে বরঞ্চ বাংলাদেশের লাভের সম্ভাবনাই বেশি।পশ্চিমবঙ্গ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হিস্যাগত প্রশ্নে শক্তিশালী বার্গেনিং মাধ্যমের ভূমিকাই পালন করবে।  অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে সব পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য এইরুপ সমাধান করা গেলে সবদেশের কিছু মঙ্গল হবে। পশ্চিমবঙ্গ,  বাংলাদেশের মধ্যে ইতিমধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিদ্বেষ ও অসন্তোষ হ্রাস পাবে।
       প্রকৃতিগতভাবে ভুখন্ডগত বিশাল  ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। প্রায় নদীর গুলোর উজান অংশ ভারতের কোননা কোন রাজ্যে পড়েছে। এ ভৌগোলিক সুবিধা এবং বিশাল দেশ হওয়ার সুবিধা ব্যবহার করে ভারত তার মনমতো সমাধান কখনও বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিবে না আশা করা যায়।   মুক্তিযুদ্ধে বিশাল ভারত ক্ষুদ্ররাষ্ট্র বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সত্যিকারের মহানুভবতা দেখিয়েছিল। সেই মহানূভবতা  ক্ষণিকের নয়। সময়কে অতিক্রম করে সেই মহানুভবতা সকল পরিক্ষায় উর্ত্তিন্ন ।
     অঞ্চল প্রীতি, জাতিগতপ্রেম, গোষ্টিপ্রেম সকল সময় জাতি, দেশ, কাল, পাত্রভেদে সকলের মাঝে কাজ করে।বন্ধুত্বের পরিক্ষায় তা অনেকসময় উত্তিন্ন হতে হয়।কালের পরিক্রমায় ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীর বন্ধন সুদৃড করার সমাপনি পরিক্ষায় উভয় দেশ মুখামূখি, পিছনের টেবিলে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। আমি মনে করি দুইদেশের মাঝামাঝি শুন্যস্থানে অবস্থান নিয়েছে পশ্চিম বঙ্গ।  দুই দেশকেই এই শুন্যতা পূরণে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
শুধু চাইলেই হয়না, চাইতে গেলে দিতেও হয়- মৈত্রীর বন্ধন সুদৃড করার এই সুত্রটি কোনপক্ষ ভুলে গেলে চলবে না।একতরফা প্রেম কোন কালেই পরিণতি লাভ করেনা --বাংলাদেশকেও মনে রাখা উচিৎ।
জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা হয়তো এমন যে, নিজ স্বার্থের প্রতি অন্ধ পক্ষপাতিত্ব জাতীয়তাবাদকে সংকীর্ণতার গলিতে প্রবেশ করিয়ে দেয়।  এ নিষ্ঠুর বাস্তবতা উভয়দেশের জনগনের স্বার্থে দেশপ্রেমিক দুই দেশের সরকার প্রধান ভুল প্রমান করার নিমিত্তে আশু পদক্ষেপ গ্রহনের এখনই উপযুক্ত সময়।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন