তিস্তার পানিবন্টনে পশ্চিমবঙ্গকে সাথে রাখলে বাংলাদেশেরই লাভ হবে।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
৪৭ এর দেশভাগের পর অত্রাঞ্চলের প্রকৃতিগত প্রাপ্য সম্পদের প্রতি কোনরুপ দৃষ্টি ছিলনা শাষক শ্রেনীগুলীর।৪৭ এ দেশভাগের পর তাঁরা কামনা করেছিল শুধুমাত্র সমৃদ্ধ এই জনপথ।ভুখন্ডগত ভাগাভাগির প্রাক্কালে আন্তজাতিক ভাবে স্বীকৃত এবং প্রকৃতিগতভাবে প্রাপ্য সম্পদ বণ্টনের তাৎক্ষনিক সমাধানের প্রয়োজন ছিল, ইহা শাষক শ্রেনী এড়িয়ে গেছে বরাবর।বরঞ্চ দীর্ঘ শাষনে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে ন্যয্য হিস্যা বা অংশ প্রাপ্তি নিশ্চিতের পথে বাঁধার দেয়াল তোলে রাখতেই তাঁরা সচেষ্ট ছিলেন।এই প্রকৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৯৫ইং সালের বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার শেষদিন পয্যন্ত।
তাঁরা বরাবর এড়িয়ে গেছে বলা হলে অনেকাংশে সত্য বলা হয়না বরঞ্চ প্রাপ্য হিস্যা সম্পর্কে জনগনকেও কখনও জানার সুযোগ দেয়নি। পাছে আন্দোলনের ইস্যু সৃষ্টির ভয়ে।মাওলানা ভাসানী এইক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমি এক দেশপ্রেমিক রাজনীতিবীদ। তিনি প্রথম ফারাক্কা লং মার্চের ঘোষনা দিয়ে জানিয়ে ছিলেন গঙ্গায় অত্রাঞ্চলের হিস্যাও রয়েছে। তোমরা একতরফা পানি প্রত্যাহার করতে পারনা। ভাসানী ফারাক্কা বাঁধ উপড়ে ফেলার ঘোষনা দিয়ে ফারাক্কা অভিমূখে লং মার্চের ঘোষনা দেয়ার অর্থ এই নয়, ভারতীয় ভুখন্ডের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বাঁধ কেটে পানি নিয়ে আসবেন।তাঁর উদ্দেশ্য ছিল জনসচেতনতা এবং আন্তজাতিক বিশ্বকে অবহিত করা। ভারত উজানে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে একতরফা পানি প্রবাহে বাঁধার প্রচীর সৃষ্টি করছে যাহা আন্তজাতিক আইনে কখনই ভারত করতে পারে না।
মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর আন্দোলনের পরিণতি দিয়েছিলেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ ইং সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে। তৎকালিন বিরুধীদলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাবী কমপক্ষে দশহাজার কিউসেক পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে না পারলে শেখ হাসিনাকে বিমান বন্দরে নামতে দিবেন না। শেখ হাসিনা ৪০ হাজার কিউসেক পানির চুক্তিপত্র সম্পাদন করে আসার পর অকৃতজ্ঞ বিরুধীদল ধন্যবাদ তো দেয়নি বরঞ্চ সংসদের ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপিত হলে সংসদ কক্ষই ত্যাগ করেছিল।
চিটমহল, বঙ্গোবসাগরের সিমানা সুনির্দিষ্টকরন, ভারত এবং হিমালয়ে উৎপত্তি উজানের নদী সমুহের পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরন, সিমান্তে চলাচল ইত্যাদি বিষয়ে আন্তজাতিক আইন থাকা সত্বেও অত্রাঞ্চলের জীবনমান সম্পর্কীত বিষয় সমূহের কোনরকম আলোচনা ও সিদ্ধান্ত না করে শুধুমাত্র ভূখন্ডের চতূদিকে কয়েকটি সিমেন্টের পিলার ভূমিতে পূঁতে দিয়ে ভাগাভাগি করে নেয়।শুধু তাই নয়---প্রকৃতিগত ভাবে অত্রাঞ্চলের প্রাপ্য এই সমস্ত ভুমি, জলাশয়, নদীর পানি, বঙ্গোবসাগরের বিশাল অংশ প্রাপ্যতা সম্পর্কে জনগনকেও অবহিত করেনি ৬৭ বছরের ইতিহাসে কোন সরকার।
জাতির জনকের কন্যা ২০০৯ ইং সালে সরকার গঠন করে অত্রাঞ্চলের জীবনমান উন্নয়নের মূলভিত্তি সমূহ নিয়ন্ত্রনের লক্ষে বঙ্গোবসাগরের সিমানা চিহ্নিত করার লক্ষে দ্বিপক্ষিয় আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করে আন্তজাতিক আদালতের শরানাপন্ন হন এবং বিজয় চিনিয়ে আনেন। ৬৭ বছর পর ভারতের সঙ্গে সম্মানজনক চিটমহল সমস্যার সমাধান করে চিটমহলবাসিদের মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। বঙ্গোবসাগর এবং চিটমহল থেকে প্রাপ্ত জলাভূমি ও চাষাবাদ যোগ্য ভূমির আয়তন বর্তমান বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে কম নয়। এই বিশালায়তনের সমুদ্র সীমা রক্ষনাবেক্ষন, সম্পদ আহরন, মৎস সম্পদ রক্ষা করার লক্ষে নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। উক্ত লক্ষে যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তাও তিনি পূরণ করেছেন।
আগামী ৮ এপ্রিল বিদ্যমান আরো কিছু জটিল সমস্যা সমাধানকল্পে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার ভারত সফরের দিন তারিখ ধায্য রয়েছে। এবারের সফরেও তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বন্টন প্রশ্নে গুরুত্ব পুর্ণ কিছু সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের কথা রয়েছে। তম্মধ্যে গরু চোরাচালান, মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা এবং বাণিজ্য ঘাটতি ও বিনিয়োগ অন্যতম। পানি বণ্টন প্রশ্নে ইতিমধ্যে কিছু জটিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।এবারের সফরে পানি সমস্যার আশু কোনো সমাধানের লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। আশু না হোক, দূর ভবিষ্যতে সমস্যাটির সমাধান হবে এই আশা যেন জনগন করতে পারে সেই দিকে মনযোগি হবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা নিশ্চয়ই।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর উপলক্ষে তিস্তা চুক্তি নিয়ে নানাজন নানা মত ব্যক্ত করছেন। প্রশ্ন হল- তিস্তা চুক্তি হলেও কি বাংলাদেশ তার কাংখিত পানির হিস্যা তিস্তা নদী থেকে পাবে? আমার কিন্তু তা মনে হয় না। তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে অনেক আগে থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশেষ করে সিকিমে এ প্রয়াস চলছে। অন্যদিকে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি সেচের জন্য প্রত্যাহার করা হচ্ছে।যখন একতরফা বাঁধগুলী নির্মিত হচ্ছে তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার সমূহ সামান্য প্রতিবাদও করেনি। আন্তজাতিক আদালতে যাওয়া দুরের কথা--জাতিসংঘেও যায়নি। বর্তমানে যে সমস্ত শুশিল তিস্তা না হলে প্রধান মন্ত্রীর ভারত সফর উচিৎ হবেনা মন্তব্য করছেন তাঁরাও তখন চুপ ছিলেন। তিস্তার পানি প্রাপ্যতায় জটিলতা সৃষ্টির সুযোগ দিয়েছেন কুচক্রিমহল ভারতকে আবার এখন আন্দোলন করার হুমকিও দিচ্ছেন তাঁরাই।
অথছ ভারত তিস্তার পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের ভেতরে তিস্তা বাঁধ দিয়েও শুষ্ক মৌসুমে উল্লেখ করার মতো পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। কারণ উজানে পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার প্রবাহ অনেক ক্ষীণ হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে বড়জোর সাত-আটশ’ কিউসেক পানি পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অভিন্ন নদীতে কোনো দেশ একতরফাভাবে পানির প্রবাহ রুদ্ধ করতে পারে না। তিস্তাতে বাঁধ দিয়ে ভারত সে কাজটি যখন করছে তখন বাঁধা প্রদানের চিন্তাও করেনি কুচক্রি মহল এবং বাংলাদেশের সরকারও কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি । বিষয়টি আন্তজাতিক আদালতে না গেলেও অন্তত: জাতিসংঘে উত্থাপন করা সম্ভব হত, তাও করেনি তাঁরা।
আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতার নীতি অনুসরণ করতে হয়। এমন কিছু করা যাবে না, যার ফলে অন্য পক্ষের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়। অতীব দুখ্যের সঙ্গে বলতে হয়, বিগত দুই যুগ ভারত অভিন্ন নদীর উপর বাঁধ নির্মান করে পানি প্রবাহে একতরফা বাঁধার সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার গুলী কখনই উক্ত বাঁধ নির্মান বা একতরফা পানি প্রত্যাহারের সরকারিভাবে কোন প্রতিবাদ করেনি। তখন সরকারিভাবে আন্তজাতিক পয্যায় প্রতিবাদ জানিয়ে রাখলে এখন নিদেনপক্ষে একটা প্রযুক্তিগত সমাধান হলেও করা সম্ভব হ'ত। বিশাল ভারতের অভ্যন্তরে এতগুলী বাঁধ অপসারন করে বর্তমানে তিস্তাচুক্তি হলেও পানি প্রবাহ ঠিক রাখা যাবে, এমন কোন ভরসা নেই।যদিও উক্ত চুক্তি সম্পাদন করতে হয় এমন ভাবে গ্যারান্টি ক্লজ সংযুক্ত করতে হবে যার ফলে বাংলাদেশ তার প্রাপ্য পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে কখনই বঞ্চিত না হয়।
যতটুকু জানি পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃত্ত হতে আগ্রহি। আমি মনে করি পশ্চিমবঙ্গের দাবিও এক্ষেত্রে অযৌক্তিক নয়, তিস্তা পশ্চিমবঙ্গের ও উজানে। পশ্চিম বঙ্গকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃত্ত করে হিস্যা ভাগাভাগিতে বরঞ্চ বাংলাদেশের লাভের সম্ভাবনাই বেশি।পশ্চিমবঙ্গ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হিস্যাগত প্রশ্নে শক্তিশালী বার্গেনিং মাধ্যমের ভূমিকাই পালন করবে। অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে সব পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য এইরুপ সমাধান করা গেলে সবদেশের কিছু মঙ্গল হবে। পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের মধ্যে ইতিমধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিদ্বেষ ও অসন্তোষ হ্রাস পাবে।
প্রকৃতিগতভাবে ভুখন্ডগত বিশাল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। প্রায় নদীর গুলোর উজান অংশ ভারতের কোননা কোন রাজ্যে পড়েছে। এ ভৌগোলিক সুবিধা এবং বিশাল দেশ হওয়ার সুবিধা ব্যবহার করে ভারত তার মনমতো সমাধান কখনও বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিবে না আশা করা যায়। মুক্তিযুদ্ধে বিশাল ভারত ক্ষুদ্ররাষ্ট্র বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সত্যিকারের মহানুভবতা দেখিয়েছিল। সেই মহানূভবতা ক্ষণিকের নয়। সময়কে অতিক্রম করে সেই মহানুভবতা সকল পরিক্ষায় উর্ত্তিন্ন ।
অঞ্চল প্রীতি, জাতিগতপ্রেম, গোষ্টিপ্রেম সকল সময় জাতি, দেশ, কাল, পাত্রভেদে সকলের মাঝে কাজ করে।বন্ধুত্বের পরিক্ষায় তা অনেকসময় উত্তিন্ন হতে হয়।কালের পরিক্রমায় ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীর বন্ধন সুদৃড করার সমাপনি পরিক্ষায় উভয় দেশ মুখামূখি, পিছনের টেবিলে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। আমি মনে করি দুইদেশের মাঝামাঝি শুন্যস্থানে অবস্থান নিয়েছে পশ্চিম বঙ্গ। দুই দেশকেই এই শুন্যতা পূরণে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
শুধু চাইলেই হয়না, চাইতে গেলে দিতেও হয়- মৈত্রীর বন্ধন সুদৃড করার এই সুত্রটি কোনপক্ষ ভুলে গেলে চলবে না।একতরফা প্রেম কোন কালেই পরিণতি লাভ করেনা --বাংলাদেশকেও মনে রাখা উচিৎ।
জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা হয়তো এমন যে, নিজ স্বার্থের প্রতি অন্ধ পক্ষপাতিত্ব জাতীয়তাবাদকে সংকীর্ণতার গলিতে প্রবেশ করিয়ে দেয়। এ নিষ্ঠুর বাস্তবতা উভয়দেশের জনগনের স্বার্থে দেশপ্রেমিক দুই দেশের সরকার প্রধান ভুল প্রমান করার নিমিত্তে আশু পদক্ষেপ গ্রহনের এখনই উপযুক্ত সময়।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
৪৭ এর দেশভাগের পর অত্রাঞ্চলের প্রকৃতিগত প্রাপ্য সম্পদের প্রতি কোনরুপ দৃষ্টি ছিলনা শাষক শ্রেনীগুলীর।৪৭ এ দেশভাগের পর তাঁরা কামনা করেছিল শুধুমাত্র সমৃদ্ধ এই জনপথ।ভুখন্ডগত ভাগাভাগির প্রাক্কালে আন্তজাতিক ভাবে স্বীকৃত এবং প্রকৃতিগতভাবে প্রাপ্য সম্পদ বণ্টনের তাৎক্ষনিক সমাধানের প্রয়োজন ছিল, ইহা শাষক শ্রেনী এড়িয়ে গেছে বরাবর।বরঞ্চ দীর্ঘ শাষনে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে ন্যয্য হিস্যা বা অংশ প্রাপ্তি নিশ্চিতের পথে বাঁধার দেয়াল তোলে রাখতেই তাঁরা সচেষ্ট ছিলেন।এই প্রকৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৯৫ইং সালের বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার শেষদিন পয্যন্ত।
তাঁরা বরাবর এড়িয়ে গেছে বলা হলে অনেকাংশে সত্য বলা হয়না বরঞ্চ প্রাপ্য হিস্যা সম্পর্কে জনগনকেও কখনও জানার সুযোগ দেয়নি। পাছে আন্দোলনের ইস্যু সৃষ্টির ভয়ে।মাওলানা ভাসানী এইক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমি এক দেশপ্রেমিক রাজনীতিবীদ। তিনি প্রথম ফারাক্কা লং মার্চের ঘোষনা দিয়ে জানিয়ে ছিলেন গঙ্গায় অত্রাঞ্চলের হিস্যাও রয়েছে। তোমরা একতরফা পানি প্রত্যাহার করতে পারনা। ভাসানী ফারাক্কা বাঁধ উপড়ে ফেলার ঘোষনা দিয়ে ফারাক্কা অভিমূখে লং মার্চের ঘোষনা দেয়ার অর্থ এই নয়, ভারতীয় ভুখন্ডের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বাঁধ কেটে পানি নিয়ে আসবেন।তাঁর উদ্দেশ্য ছিল জনসচেতনতা এবং আন্তজাতিক বিশ্বকে অবহিত করা। ভারত উজানে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে একতরফা পানি প্রবাহে বাঁধার প্রচীর সৃষ্টি করছে যাহা আন্তজাতিক আইনে কখনই ভারত করতে পারে না।
মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর আন্দোলনের পরিণতি দিয়েছিলেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ ইং সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে। তৎকালিন বিরুধীদলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাবী কমপক্ষে দশহাজার কিউসেক পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে না পারলে শেখ হাসিনাকে বিমান বন্দরে নামতে দিবেন না। শেখ হাসিনা ৪০ হাজার কিউসেক পানির চুক্তিপত্র সম্পাদন করে আসার পর অকৃতজ্ঞ বিরুধীদল ধন্যবাদ তো দেয়নি বরঞ্চ সংসদের ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপিত হলে সংসদ কক্ষই ত্যাগ করেছিল।
চিটমহল, বঙ্গোবসাগরের সিমানা সুনির্দিষ্টকরন, ভারত এবং হিমালয়ে উৎপত্তি উজানের নদী সমুহের পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরন, সিমান্তে চলাচল ইত্যাদি বিষয়ে আন্তজাতিক আইন থাকা সত্বেও অত্রাঞ্চলের জীবনমান সম্পর্কীত বিষয় সমূহের কোনরকম আলোচনা ও সিদ্ধান্ত না করে শুধুমাত্র ভূখন্ডের চতূদিকে কয়েকটি সিমেন্টের পিলার ভূমিতে পূঁতে দিয়ে ভাগাভাগি করে নেয়।শুধু তাই নয়---প্রকৃতিগত ভাবে অত্রাঞ্চলের প্রাপ্য এই সমস্ত ভুমি, জলাশয়, নদীর পানি, বঙ্গোবসাগরের বিশাল অংশ প্রাপ্যতা সম্পর্কে জনগনকেও অবহিত করেনি ৬৭ বছরের ইতিহাসে কোন সরকার।
জাতির জনকের কন্যা ২০০৯ ইং সালে সরকার গঠন করে অত্রাঞ্চলের জীবনমান উন্নয়নের মূলভিত্তি সমূহ নিয়ন্ত্রনের লক্ষে বঙ্গোবসাগরের সিমানা চিহ্নিত করার লক্ষে দ্বিপক্ষিয় আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করে আন্তজাতিক আদালতের শরানাপন্ন হন এবং বিজয় চিনিয়ে আনেন। ৬৭ বছর পর ভারতের সঙ্গে সম্মানজনক চিটমহল সমস্যার সমাধান করে চিটমহলবাসিদের মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। বঙ্গোবসাগর এবং চিটমহল থেকে প্রাপ্ত জলাভূমি ও চাষাবাদ যোগ্য ভূমির আয়তন বর্তমান বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে কম নয়। এই বিশালায়তনের সমুদ্র সীমা রক্ষনাবেক্ষন, সম্পদ আহরন, মৎস সম্পদ রক্ষা করার লক্ষে নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। উক্ত লক্ষে যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তাও তিনি পূরণ করেছেন।
আগামী ৮ এপ্রিল বিদ্যমান আরো কিছু জটিল সমস্যা সমাধানকল্পে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার ভারত সফরের দিন তারিখ ধায্য রয়েছে। এবারের সফরেও তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বন্টন প্রশ্নে গুরুত্ব পুর্ণ কিছু সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের কথা রয়েছে। তম্মধ্যে গরু চোরাচালান, মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা এবং বাণিজ্য ঘাটতি ও বিনিয়োগ অন্যতম। পানি বণ্টন প্রশ্নে ইতিমধ্যে কিছু জটিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।এবারের সফরে পানি সমস্যার আশু কোনো সমাধানের লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। আশু না হোক, দূর ভবিষ্যতে সমস্যাটির সমাধান হবে এই আশা যেন জনগন করতে পারে সেই দিকে মনযোগি হবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা নিশ্চয়ই।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর উপলক্ষে তিস্তা চুক্তি নিয়ে নানাজন নানা মত ব্যক্ত করছেন। প্রশ্ন হল- তিস্তা চুক্তি হলেও কি বাংলাদেশ তার কাংখিত পানির হিস্যা তিস্তা নদী থেকে পাবে? আমার কিন্তু তা মনে হয় না। তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে অনেক আগে থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশেষ করে সিকিমে এ প্রয়াস চলছে। অন্যদিকে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি সেচের জন্য প্রত্যাহার করা হচ্ছে।যখন একতরফা বাঁধগুলী নির্মিত হচ্ছে তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার সমূহ সামান্য প্রতিবাদও করেনি। আন্তজাতিক আদালতে যাওয়া দুরের কথা--জাতিসংঘেও যায়নি। বর্তমানে যে সমস্ত শুশিল তিস্তা না হলে প্রধান মন্ত্রীর ভারত সফর উচিৎ হবেনা মন্তব্য করছেন তাঁরাও তখন চুপ ছিলেন। তিস্তার পানি প্রাপ্যতায় জটিলতা সৃষ্টির সুযোগ দিয়েছেন কুচক্রিমহল ভারতকে আবার এখন আন্দোলন করার হুমকিও দিচ্ছেন তাঁরাই।
অথছ ভারত তিস্তার পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের ভেতরে তিস্তা বাঁধ দিয়েও শুষ্ক মৌসুমে উল্লেখ করার মতো পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। কারণ উজানে পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার প্রবাহ অনেক ক্ষীণ হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে বড়জোর সাত-আটশ’ কিউসেক পানি পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অভিন্ন নদীতে কোনো দেশ একতরফাভাবে পানির প্রবাহ রুদ্ধ করতে পারে না। তিস্তাতে বাঁধ দিয়ে ভারত সে কাজটি যখন করছে তখন বাঁধা প্রদানের চিন্তাও করেনি কুচক্রি মহল এবং বাংলাদেশের সরকারও কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি । বিষয়টি আন্তজাতিক আদালতে না গেলেও অন্তত: জাতিসংঘে উত্থাপন করা সম্ভব হত, তাও করেনি তাঁরা।
আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতার নীতি অনুসরণ করতে হয়। এমন কিছু করা যাবে না, যার ফলে অন্য পক্ষের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়। অতীব দুখ্যের সঙ্গে বলতে হয়, বিগত দুই যুগ ভারত অভিন্ন নদীর উপর বাঁধ নির্মান করে পানি প্রবাহে একতরফা বাঁধার সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার গুলী কখনই উক্ত বাঁধ নির্মান বা একতরফা পানি প্রত্যাহারের সরকারিভাবে কোন প্রতিবাদ করেনি। তখন সরকারিভাবে আন্তজাতিক পয্যায় প্রতিবাদ জানিয়ে রাখলে এখন নিদেনপক্ষে একটা প্রযুক্তিগত সমাধান হলেও করা সম্ভব হ'ত। বিশাল ভারতের অভ্যন্তরে এতগুলী বাঁধ অপসারন করে বর্তমানে তিস্তাচুক্তি হলেও পানি প্রবাহ ঠিক রাখা যাবে, এমন কোন ভরসা নেই।যদিও উক্ত চুক্তি সম্পাদন করতে হয় এমন ভাবে গ্যারান্টি ক্লজ সংযুক্ত করতে হবে যার ফলে বাংলাদেশ তার প্রাপ্য পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে কখনই বঞ্চিত না হয়।
যতটুকু জানি পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃত্ত হতে আগ্রহি। আমি মনে করি পশ্চিমবঙ্গের দাবিও এক্ষেত্রে অযৌক্তিক নয়, তিস্তা পশ্চিমবঙ্গের ও উজানে। পশ্চিম বঙ্গকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃত্ত করে হিস্যা ভাগাভাগিতে বরঞ্চ বাংলাদেশের লাভের সম্ভাবনাই বেশি।পশ্চিমবঙ্গ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হিস্যাগত প্রশ্নে শক্তিশালী বার্গেনিং মাধ্যমের ভূমিকাই পালন করবে। অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে সব পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য এইরুপ সমাধান করা গেলে সবদেশের কিছু মঙ্গল হবে। পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের মধ্যে ইতিমধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিদ্বেষ ও অসন্তোষ হ্রাস পাবে।
প্রকৃতিগতভাবে ভুখন্ডগত বিশাল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। প্রায় নদীর গুলোর উজান অংশ ভারতের কোননা কোন রাজ্যে পড়েছে। এ ভৌগোলিক সুবিধা এবং বিশাল দেশ হওয়ার সুবিধা ব্যবহার করে ভারত তার মনমতো সমাধান কখনও বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিবে না আশা করা যায়। মুক্তিযুদ্ধে বিশাল ভারত ক্ষুদ্ররাষ্ট্র বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সত্যিকারের মহানুভবতা দেখিয়েছিল। সেই মহানূভবতা ক্ষণিকের নয়। সময়কে অতিক্রম করে সেই মহানুভবতা সকল পরিক্ষায় উর্ত্তিন্ন ।
অঞ্চল প্রীতি, জাতিগতপ্রেম, গোষ্টিপ্রেম সকল সময় জাতি, দেশ, কাল, পাত্রভেদে সকলের মাঝে কাজ করে।বন্ধুত্বের পরিক্ষায় তা অনেকসময় উত্তিন্ন হতে হয়।কালের পরিক্রমায় ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীর বন্ধন সুদৃড করার সমাপনি পরিক্ষায় উভয় দেশ মুখামূখি, পিছনের টেবিলে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। আমি মনে করি দুইদেশের মাঝামাঝি শুন্যস্থানে অবস্থান নিয়েছে পশ্চিম বঙ্গ। দুই দেশকেই এই শুন্যতা পূরণে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
শুধু চাইলেই হয়না, চাইতে গেলে দিতেও হয়- মৈত্রীর বন্ধন সুদৃড করার এই সুত্রটি কোনপক্ষ ভুলে গেলে চলবে না।একতরফা প্রেম কোন কালেই পরিণতি লাভ করেনা --বাংলাদেশকেও মনে রাখা উচিৎ।
জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা হয়তো এমন যে, নিজ স্বার্থের প্রতি অন্ধ পক্ষপাতিত্ব জাতীয়তাবাদকে সংকীর্ণতার গলিতে প্রবেশ করিয়ে দেয়। এ নিষ্ঠুর বাস্তবতা উভয়দেশের জনগনের স্বার্থে দেশপ্রেমিক দুই দেশের সরকার প্রধান ভুল প্রমান করার নিমিত্তে আশু পদক্ষেপ গ্রহনের এখনই উপযুক্ত সময়।


মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন