বঙ্গবন্ধু কন্যার একক সাফল্য, উজ্জ্বল ভাবমূর্তি অ-শুভ শক্তির চক্রান্ত মোকাবেলা যথেষ্ট নয়--প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক, আদর্শিক শক্তির।
   (রুহুল আমিন মজুমদার)

        কুমিল্লার একটি চেকপোস্টে বাস তল্লাশির সময় পুলিশের ওপর হামলা করে সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি। স্থানীয়দের সহায়তায় দুই জঙ্গিকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তাদের কাছ থেকে বোমা ও ছুরি উদ্ধার করা হয়। আটককৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়।সেখান থেকে বিপুল পরিমান বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। জঙ্গিরা ভুয়া ন্যাশানাল আই, ডি জমা দিয়ে বাড়ীটি ভাড়ায় নিয়েছিল বলে জানা গেছে। তাঁরা নীজেদেরকে কাপড় ব্যাবসায়ি পরিচয় দিয়ে বাড়ীটি ভাড়ায় নিয়েছিল। জঙ্গিদের সঙ্গি এক মহিলাকে ঐ বাড়ী থেকে আটক করা হয়েছে।

    কয়েকদিন আগে গাজীপুরের টঙ্গীতে জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগীদের বহনকারী দুটি প্রিজন ভ্যানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দারা মোস্তফা কামাল নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বোমা হামলার কথা স্বীকার করেছে। হামলায় আরও অন্তত দুজন অংশ নিয়েছিল বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে এই হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারী আটক এক যুবকের কাছ থেকে একটি গ্রেনেড, সাতটি হাতবোমা, ছয়টি চাপাতি এবং সাত হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বোমা হামলায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা করেছে।

      মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে---এমন একটা আশঙ্কা আগেই ছিল। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিল যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজিবি) জঙ্গিরা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার ছক কষছে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে একাধিক সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটকও করে। তাদের কাছ থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানতে পারে পুলিশ। জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা জানা সত্ত্বেও টঙ্গীতে প্রিজন ভ্যানে বোমা হামলার ঘটনা আগে থেকে নস্যাৎ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয় জনতা সহযোগিতা না করলে হামলাকারী যুবককে হয়তো গ্রেফতার করা সম্ভব হতো না। এর আগে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে তিন জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পরে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। বাকি দুই জঙ্গির কোন খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি।

        জঙ্গি হামলা নিস্তেজ করা সম্ভব হয়েছে সত্য সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হয়নি।বর্তমান বিশ্ব পরিস্থীতিতে সম্পূর্ণ উৎপাটন সম্ভব হবেনা ইহাও বাস্তব। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশী অ-শক্তি কতৃক তাঁদেরকে অর্থ, অস্ত্র, সাহষ দিয়ে লালন করার রাজনৈতিক দল ও প্রভূর অভাব নেই। তাঁদের পাহারাদার চিহ্নিত রাজনৈতিক গনসংগঠন যতক্ষন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে ততক্ষন রাষ্ট্র ও ইসলাম ধর্ম বিরুধী অপশক্তির আস্ফালনও বিদ্যমান থাকবে। গাজী পুরের অস্ত্র উদ্ধার ও জঙ্গি গ্রেপ্তারের সাময়িক বিরতির পর উল্লেখিত তিনটি ঘটনা স্বল্প সময়ে সংঘটিত হয়েছে। এমন সময়ে ঘটনা তিনটি ঘটেছে যখন একদিকে আমেরিকার কংগ্রেসে আইনশৃংখলা বাহিনী কতৃক বাংলাদেশের মানবধিকার লঙন বিষয় রিপোর্ট উত্থাপিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ আই এস আই এর জঙ্গি ঘাঁটি অনুসন্ধানে ব্যাস্ত মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র।

     অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছিল আই এস আই জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই, সংঘটিত জঙ্গি হামলা দেশের অভ্যন্তরে সৃষ্ট অপশক্তির তৎপরতা এবং সরকার সফলভাবে উক্ত কায্যক্রম নিস্তেজ করতে পেরেছে। অদূর ভবিষ্যতে রাষ্ট্র ও ধর্মবিরুধী অপশক্তি শক্তি নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ পাবেনা---ঠিক তখনই।

      প্রিয় পাঠক বন্ধুগন, বাঙ্গালীর চিরায়ত একটি অভ্যেস তাঁদের চারিত্রিক বৈশিষ্টে বার বার ফুটে উঠতে দেখা যায়। রাজনীতি, খেলাধূলা, পারিবারিক, ব্যাক্তিগত সাংসারিক, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, এবং কি বহি:বিশ্বের সাথে সম্পর্ক প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষনটি যথারীতি পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়। সেটি হচ্ছে সংগঠিত ঘটনা যখন ঘটে তখন উৎসাহ, উদ্দিপনার ভাব যথেষ্ট  লক্ষ করা যায়।কিন্তু পরক্ষনে সে বিষয়টি আগের গুরুত্ব নিয়ে তাঁর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনা। হুজুগে বহু অসাধ্য কাজও  বাঙ্গালী অতীতে সাধন করতে পেরেছে কিন্তু পরবর্তিতে  অসাধ্য সাধন করা কাজটির মুল্যমান নির্ণয়ে বাঙ্গালী যথারীতি উদাসিনই থেকেছে।

     জঙ্গি উত্থান রোধ, তাঁদের হামলা রোধ, অপশক্তির আস্ফালন নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি ধারাবাহিক অর্জিত সাফল্য সমূহ নিশ্চিতকরনে যে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন অপরিহায্য ছিল সেই রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে গড়িমসি জোট ও সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করে আগের অবস্থানে নিয়ে গেছে। ঘটনার প্রক্কালে সরকারের সঙ্গে জনগনের যে নিবিড় বন্ধন সৃষ্টি হয়েছিল--সময়ের ব্যবধানে সে বন্ধনে অনেকটা ছিঁড় ধরেছে বলেই মনে হয়। এই প্রসংগে জোটের এবং সরকারের সমসাময়িক দুটি উদাহরন আমি তোলে ধরতে চাই--

       প্রথমত:  সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ ছিল শহর থেকে গ্রাম পয্যায় বিভিন্ন  সময়ে 'হারিয়ে যাওয়া পরিবারের' সন্তানদের তথ্য সংগ্রহ করার উদ্যোগটি। যথেষ্ট সাড়াও মিলেছিল উদ্যোগটির কিন্তু মাঝপথে উদ্যোগটি একেবারেই থেমে গেছে। দ্বিতীয়  উদ্যোগটি রাজনৈতিক ভাবে  ১৪ দল জোটগত ভাবেই নিয়েছিল---প্রত্যেক পাড়া, মহল্লায় জঙ্গি বিরুধি জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে গন্যমান্য ব্যাক্তি, মসজিদের ইমাম, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী সমন্বয়ে জঙ্গিবাদ বিরোধী কর্মসুচি বাস্তবায়নের লক্ষে "নাগরিক কমিটি" গঠন প্রক্রিয়া।

         তৃনমূলে জঙ্গি বাদ বিরুধী জনসচেতনতা বৃদ্ধিজনিত কর্মসূচি গ্রহন ও বাস্তবায়নের লক্ষে ১৪ দলের গৃহিত এই উদ্যোগটিও শেষাবদি  আলোর মূখ দেখেনি। উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে দুটি দিক থেকে জোট এবং সরকার লাভবান হ'ত। প্রথমত: দলীয় নেতাদের দখলবাজি, মাস্তানীর কারনে ক্ষমতাসীন সরকারের জনবিচ্ছিন্নতার ঘাটতি আদর্শিক নেতাদের পদচারনায় পূরণে সহায়ক হতে পারতো। জনগনের সঙ্গে আদর্শিক নেতাদের সরাসরি আলোচনায় অংশ নেয়ার সুযোগে তাঁদের সুখ, দু:খ্যের সংঙ্গে একাত্মতার কারনে হারানো "জনসম্পৃত্ততা পুর্ণোদ্ধার করা সহজে সম্ভব হতো।" দ্বিতীয়ত: সরকার সহজেই জঙ্গি অপতৎপরতায় বিশ্বমানবতার ধর্ম  ইসলামের কোনরুপ সম্পৃত্ততা নেই--জনগনকে সম্যকভাবে ধারনা দেয়া সম্ভব হ'ত।ফলে জনঘৃনার বহি:প্রকাশের ইতিবাচক ফলের ভাগিদার পরোক্ষভাবে বর্তমান সরকারের সাফল্যের ঝুড়িতে জমা হয়ে জনসমর্থন স্ফিতই হত- আমি বিশ্বাস করি।

       ১৪ দলের রাজনৈতিক জোট ও সরকারের নেয়া উদ্যোগ যথারীতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ঘাপটি মেরে থাকা কচ্ছপ প্রজাতির  অ-শুভ শক্তি নতুন উদ্যোমে তাঁদের পূর্বের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নতুন করে ক্ষেত্র সৃষ্টির সুযোগ পেয়েছে।বিগত সরকার বিরুধী আন্দোলনে হেফাজতে ইসলাম রাজপথে নামার সর্বপ্রথম  মূল রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়েছিল--"নারী কতৃক অর্জিত সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত সংসদে পাশ হওয়া 'বিলটি"। উক্ত আইন পবিত্র কোরানের আলোকে ইসলামের মুল নীতি আদর্শ পরিপন্থি তাঁর কোন যৌক্তিক ফতোয়া অদ্যাবদি তাঁদের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা সম্ভব হয়নি। একমাত্র 'জোট ও সরকারে'র প্রচার সেলের দুর্বলতার সুযোগে অশুভ শক্তি ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হিসেবে উক্ত আইনকে ইস্যু হিসেবে গ্রহন করে সরলপ্রান মুসলিম ধর্মালম্বিদের বিভ্রান্ত করার উদ্যোগ নিতে পেরেছিল।

      এবার তাঁরা বেঁচে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সামনে রক্ষিত--"ন্যায় বিচারের প্রতিক ভাস্কায্যটি দেবিমূর্তি নাম দিয়ে প্রতারনামূলক প্রচারের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মালম্বিদের বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।  ভাস্কায্য সম্পর্কে সরকার ও জোটের নির্লিপ্ততার সুযোগে  নির্দিষ্ট সময়ে সরানোর জন্যে সরকারকে ইতিমধ্যে তাঁরা  আলটিমেটাম দেয়ার দু:সাহষও দেখিয়েছে।

     লক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে--গতবার হেফাজতে ইসলাম তাঁদের নাশকতার উদ্দেশ্যে পরিচালিত জঙ্গি মিছিলের সামনের কাতারে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে "মাদ্রাসার কোমলমতি এতিম শিশুদে"র। এবার তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছে "প্রতিবন্ধি ও হিজড়াদে"র মানবঢাল হিসেবে  ব্যবহার করে কায্যসিদ্ধি করার। জামায়াতি ইসলামী নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিচালিত তাঁদের জঙ্গি মিছিলের সামনে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল তাঁদের সৃষ্ট "ছাত্রী সংস্থার প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত নারী সদস্যদে"র। এবার অবশ্য তাঁদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা এখন পয্যন্ত পাওয়া যায়নি।

      সম্মিলিত অ-শুভ শক্তির রক্ষক, প্রেতাত্বা রাজনৈতিক শক্তি "বিএনপি" এর গতবারের আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল "দুইবারের ব্যর্থ তত্বাবধায়ক সরকার" পুর্ণবহাল করার দাবি। এবার তাঁদের আন্দোলনের কর্মসূচি "নির্দলীয় সরকারের অধিনে সাধারন নির্বাচন" অনুষ্ঠানে সরকারকে অ-সাংবিধানিক পথে যেতে বাধ্য করা।" সম্মিলিত অ-শুভশক্তির একমাত্র গোপন সসস্ত্র শক্তি জঙ্গিদের আস্তানা ছিল গতবার শহর কেন্দ্রিক মুক্তমনা লেখক সাহিত্যিক সাংবাদিক, ব্লগার হত্যার মাধ্যমে জনজীবনে আতংক সৃষ্টির অপকৌশল।অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে- এবার তাঁদের আস্তানা মফস্বল শহর, দ্বিপাঞ্চল, প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চল কেন্দ্রিক নাশকতা,অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে বিব্রত রাখার অপকৌশল।

       উদ্দেশ্য একটাই--মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত অঙ্গিকার বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি দলের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারকে অ-নিয়মতান্ত্রিক, অ-গনতান্ত্রিক, অ-সাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতাচ্যুত করা। অ-শুভশক্তির চক্রান্তের ফসল অ-গনতান্ত্রিক অ-সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠনকারি তাঁবেদার শক্তির রাজনৈতিক দুর্বলতার সুযোগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল রাজনীতিবীদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, তৃনমূলের নেতাকর্মীদের উপর আরো এক দফা  নিয্যাতন, হামলা, মামলা , হত্যার মাধ্যমে অগনিত বছর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাহিরে রাখার চক্রান্তের সফল বাস্তবায়ন।

     মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির অনেকেই যদিও নৈরাশ্যবাদের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নেতিবাচক বিবৃতি, বক্তৃতা, প্রার্থী নির্বাচনে আদর্শবান ত্যাগিদের বাদ দিয়ে তথাকথিত হাইব্রিড প্রার্থীদের অগ্রাধিকার প্রদানের মাধ্যমে ধর্ম নিরপেক্ষ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদি চেতনায় উদ্ভোদ্ধ লৌহকঠিন ঐক্যে ইতিমধ্যে ফাঁটল সৃষ্টি করতে পেরেছেন ; তথাপি সম্মিলীত দেশী-বিদেশী অ-শুভশক্তি প্রয়োজনীয় মহুর্তে মুক্তিযুদ্ধের অদম্য শক্তির ঐক্যের অতীতের সফল দৃষ্টান্তকে স্মরণে রেখেছেন। তদ্রুপভাবে সৃষ্ট দেশপ্রেমে উদ্ভোদ্ধ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী চেতনার ঐক্যবদ্ধ অদম্য শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করে সাংবিধানিক উপায়ে নিয়মাতান্ত্রিক রাজনীতি,গনতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে ক্ষমতায় যাওয়ার সামর্থ তাঁরা  রাখেনা এবং কি কল্পনাও করেনা। দেশপ্রেমিক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদি শক্তির চেতনা সম্পর্কে তাঁদের ভালভাবেই বুঝাপড়া আছে"।

     ১৯৭১ ইং মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুধীতার মাধ্যমে শুরু করা হত্যা যজ্ঞ '৭৫  ইং সালের ১৫ই আগষ্ট মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী মহাশক্তির উৎসের বংশসহ বদ করে একতরফা অপপ্রচার, চরিত্রহনন করেও "৯৬ এ উত্থান রোধ সম্ভব হয়নি। আবার "২০০১ ইং সালের ইতিহাসের জগন্যতম নিয্যাতন, হত্যা, অত্যাচার সহ দীর্ঘ '৭১--৯৬পয্যন্ত দীর্ঘ  ৩৫ বছর একটানা "রাষ্ট্রীয় শক্তির পৃষ্টপোষকতায় কখনও বা রাষ্ট্রের নীজ উদ্যোগে" হত্যাযজ্ঞ, গুপ্তহত্যা, প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা, অপপ্রচার, গুজব, চরিত্রহনন মূলক নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে--যে শক্তিকে সম্পুর্ণ বদ তো দুরের ভাবনা বরঞ্চ ২০০৮ ইং সালে ভুমিধ্বস উত্থানই রোধ সম্ভব হয়নি; সেই শক্তিকে  একমাত্র একটি সাধারন নির্বাচনে পরাভূত করে ক্ষমতায় আসতে পারবে--ইহা তাঁদের চিন্তাচেতনায় কস্মিনকালেও আসেনা বা আসার কথাও নয়।
   
     এই প্রকারের ভাবনা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির অভ্যন্তরে সদ্য   অনুপ্রবেশকারি তথাকথিত 'ধর্মনিরপেক্ষ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে' বিশ্বাসি একশ্রেনীর সুযোগ সন্ধানী অতি আদর্শবান হাইব্রিডদের রক্ষক নেতাদের। যে শ্রেনীটি দল ও সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে অতিভক্তি প্রদর্শন পুর্বক  বঙ্গকন্যার এযাবৎ  নেয়া একাধিক জনসম্পৃত্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি বানচাল করে দিতে সক্ষম হয়েছে। যে শ্রেনীটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির একমাত্র ভরসাস্থল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রাক্কালে কৌশলে বাঁধা প্রদান করে দলকে জনবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে পদে পদে।

      জোট ও সরকারের নেয়া উল্লেখিত দু'টি কর্মসূচির একটিও চলমান থাকলে অদ্য হেফাজতের ভাস্কায্য সরানোর হুমকি, জঙ্গিদের নতুন উৎপীড়ন, বিএনপি জোটের নির্দলীয় সরকারের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বার্ণিয়াকটের লম্পজম্পের কোন কারন বিদ্যমান থাকার প্রশ্নই ছিল না। বরঞ্চ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফর্মূলা নিয়ে সরকারের সঙ্গে দেনদরবারে সময় কাটিয়ে দিতে বাধ্য হ'ত বলে আমার বিশ্বাস। বর্তমান সময়ে বিএনপি জোটের রাজনৈতিক দৈন্যদশায় এর চেয়ে বেশিকিছু আশা করার অর্থই ছিল বিএনপি  দলের রাজনীতি, হাজার হাজার নেতা লক্ষ লক্ষ কর্মীকে অরক্ষিত রেখে  বিদেশে পালিয়ে বেড়ানোর পরিস্থীতির উদ্ভব ঘটানো।

অনেকের ধারনা সাগরসম উন্নয়ন-অগ্রগতি, জাতির জনকের কন্যার বিশ্বব্যাপি গড়ে উঠা উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরনী পার হয়ে যাবেন।ইহা নিতান্তই দুরাশার প্রকৃষ্ট উদাহরন হতে পারে ২০০১ ইং সালের সাধারন নির্বাচন থেকে প্রকৃত শিক্ষা না নেয়া। পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড়ে বিরাজমান যুগান্তরের অশান্তি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে নিরসন, তথাকথিত অনেক আপোশহীন নেত্রী বা রাষ্ট্রনায়কের ভুলে যাওয়া 'গঙ্গার' পানি বন্টন চুক্তির ন্যায় অসাধ্য সাধনের যুগান্তকরি সাফল্যের একক অংশিদার হওয়া সত্বেও বাংলাদেশের কোন নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী কোনপ্রকার প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি ২০০১ ইং সালের অশুভশক্তির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের কারনে। যে কয়টি আসন পাওয়া গিয়েছিল ঐসমস্ত আসনে শুধুমাত্র প্রার্থী না দিয়ে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতিক রেখে আসলেও জনগন স্বেচ্ছায় নৌকাকেই গ্রহন করার আসন। এতবড় শিক্ষা গ্রহনকারি নেতা প্রত্যেকেই জীবিত থাকাবস্থায় "শুধুমাত্র উন্নয়নকে প্রধান্য দিয়ে দলীয় কর্মসুচিকে গৌন চিন্তা করে এড়িয়ে চলা" কতটুকু রাজনৈতিক বিচক্ষনতার পরিচায়ক হচ্ছে সময়েই তাঁর যথার্থ উত্তর দিবে।
    "জয়বাংলা    জয়বঙ্গবন্ধু"
  ruhulaminmujumder27@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন