'পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আই, এস' এর মুদ্রিত মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত তথ্য সম্বলিত বই---বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিযুদ্ধ বিরুধী বক্তব্য সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
২০১৫ ইং সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিল।তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পরিস্কার----দুর্নীতির মামলা থেকে জিয়া পরিবারকে রক্ষা, যুদ্ধপরাধের বিচার বানচাল।উক্ত দাবি আদায়ে নৈতিক শক্তির ভিত্তি হতে পারতো----আমাদের অরাজকতার কারনে যেহেতু তোমরা ক্ষমতা পেয়েছ, সেহেতু আমাদের সকল দুর্নীতি সন্ত্রাস, অরাজকতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কতৃক আনীত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অনেকেই মনে করেন খালেদা জিয়ার উক্ত মতলব হাসিল না হওয়ার কারনে---মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের শহিদ, স্বাধীনতার ঘোষক ইত্যাদি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে যাচ্ছেন। রাজনীতির মাঠে নিয়মিত হাজির আছেন জানান দিয়ে নেতাকর্মী, দেশবাসি ও বহি:বিশ্বকে আশ্বস্ত রাখার জন্যই বোধ হয়, জাতীয় দলের জাতীয় নেত্রী হয়েও, প্রতিনিয়ত এমন বালখিল্য মন্তব্য করে যাচ্ছেন।
ঘটনা কিন্তু আদৌ তা নয়---খালেদা জিয়ার ঐসমস্ত মন্তব্য তাঁদের দলের আদর্শিক মন্তব্য, উৎসস্থলের মন্তব্য, তাঁদের জম্মদাতার মনের গহিনে লুকায়িত গোপন অভিসন্ধির আগাম বহি:প্রকাশ ছিল মাত্র।আমি আগেও বার কয়েক বলতে চেষ্টা করেছি বিএনপি দলের সৃষ্ট্রির উৎস বৃত্তের বাহিরে এসে বাঙ্গালী জাতি, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধিনতাকে মেনে রাজনীতি করার মানষিকতা এখনও গড়ে উঠেনি। বঙ্গবন্ধুর রক্ত স্রোত পান করে যে কালবাঘ রাতারাতি হৃষ্টপুষ্ট হয়েছিল, সেই কালবাঘের বল কি এত তাড়াতাড়ি নি:শেষ হতে পারে?
একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘ ৪৬ বছরে ২৫ মার্চ কালরাত স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি, স্মরণসভা কিংবা আলোচনা সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের কোন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছিল না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর আগেও দুইবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনগনের দাবির পক্ষে স্বত:স্ফুর্ত আন্দোলনও ছিল।তথাপি ২৫ মার্চ সহ মুক্তিযূদ্ধের বিশেষ কিছু দিন ও শ্লোগান সংবিধানভুক্ত, স্মরনীয়, পালনীয় করে রাখার উদ্যোগ গ্রহন করেনি।
দীর্ঘদিন পর হলেও এই সরকারী স্বীকৃতির পথ খুলে দিয়েছে আর কেউ নয়, খোদ একাত্তরে পরাজিত শক্তি দেশ পাকিস্তান। সম্প্রতি একাত্তরের এ গণহত্যার দায় এড়িয়ে উল্টো মুক্তিবাহিনীর ওপর দায় চাপিয়ে পাকিস্তানের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মিথ্যা তথ্য সংবলিত একটি বই ছাপিয়ে তা বিভিন্ন দেশে প্রচার করতে থাকে পাকিস্তান। সম্প্রতি মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়ার অমোঘ সত্যটি অস্বীকার করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার আইএসআইর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ওই বইটি সরকারের নজরে আসলে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।
প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশ সরকারের নজরে আসে বইটি বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত অফিসে আসার পর।তাঁর আগে বিভিন্ন দেশে তাঁদের রাষ্ট্রদূত অফিসের মাধ্যমে আন্তজাতিক পয্যায় বইটি ছড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান।তাঁরা যখন বইটি ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করে তখনই খালেদা জিয়া বাংলাদেশে বইটি প্রচারের আগাম মাঠ প্রস্তুতির বক্তব্য উত্থাপন করেছে মাত্র।বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই তিনি বক্তব্যগুলী রাজনীতির মাঠে ছেড়ে দিয়েছিলেন।অথবা খালেদা জিয়ার নিকট আগাম কপি পাঠিয়ে ক্ষেত্র প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছিল আই এস।
আই এসের নির্দেশীত পথেই স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বাস করে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার সাহষ দেখায়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে শাষন করার জন্যে রাজনীতি করে আবার মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা, দিন, নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ার সাহষ করে। এই সমস্ত সব কিছুই সম্ভব হয়েছে এবং হচ্ছে একমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার কারনে।
বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে।এই দাবি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের নিকট ছড়িয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের এই বিকৃত বই ছাপানোর বিষয়টি সংসদের নজরে আনেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টান্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সংসদ অধিবেশনে দাঁড়িয়ে তিনি এ বিষয়টি উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রতি নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে ২৫ মার্চকে জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও দিবসটির স্বীকৃতি আদায়ে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানী শাষক, সেনাবাহীনি এবং তাঁদের এদেশীয় দোষরদের একই অপরাধে অপরাধী বলে চিহ্নিত করেছেন।আমি মনে করি বাংলাদেশে গনহত্যার পিছনে পাকিস্তানী সেনাদের চাইতে হাজার গুনে বেশী দুষে দুষ্ট এদেশীয় তাঁদের প্রেতাত্বারা।কারন পাকিস্তানীরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানুষ হত্যা করেছে এদেশ দাবিয়ে রেখে তাঁদের শোষন অব্যাহত রাখার স্বার্থে। তাঁরা পারেনি, পরাজিত হয়ে এদেশ ত্যাগ করেছে। এখন তাঁরা আন্তজাতিক পয্যায় কূটনৈতিক ভাবে তাঁদের প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করতে পারবে বা করে।কিন্তু এদেশীয় দোষরেরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের সরলপ্রান বাঙ্গালীদের বিভ্রান্ত করে তাঁদের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকার সুযোগ রয়েছে।যেহেতু তাঁরা এদেশের অধিবাসি, এই সমাজে বসবাস করে, এই দেশের আলোবাতাসে তাঁরা নি:শ্বাস গ্রহন করে। আমরা স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও তাঁদের ষড়যন্ত্র করার পথ রুদ্ধ করতে পারেনি।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নেতৃত্বদানকারি দল পরপর দুইবার ক্ষমতায় আসার পরেও বুঝতে পারেনি মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ দিন, বিশেষ কিছু ঘটনা, বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষন, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দিপক শ্লোগানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নাথাকার কারনে দীর্ঘ বছর পাকিস্তানী প্রেতাত্বাদের উক্ত বিশেষ দিনগুলীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের সুযোগ ছিল। তাঁরা যথাযথভাবে সুযোগ কাজে লাগিয়েছে মাত্র। 'জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু'র স্থলে ১৫ ই আগষ্ট ব্জাতির জনকের তাজা রক্তের উপর দাঁড়িয়ে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' শ্লোগান প্রতিস্থাপন করতে পেরেছিল।, 'বাংলাদেশ বেতার'কে রেডিও বাংলাদেশ ১৫ই আগষ্ট সকালে প্রথম ঘোষনাতেই বানাতে পেরেছিল। পাকিস্তান জিন্দাবাদের স্থলে শুধু বাংলাদেশ জিন্দাবাদ এবং রেডিও পাকিস্তানের স্থলে শুধু "রেডিও বাংলাদেশ" নয়।পরবরর্তীতে, সংবিধানেরও আমূল পরিবর্তন করে পাকিস্তানি ধারায় এদেশকে নিয়ে যেতে অনেকাংশে সফল হয়েছিল।
২০০৯ ইং সালে ভূমিধ্বস জয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফিরে এলে তৎপরবর্তি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ইতিহাসখ্যাত "রাষ্ট্র বনাম মাজদার হোসেন" মামলায় ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে সুপ্রিম কোর্ট।উক্ত রায় দিতে গিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে অতীতের দুই "সেনাশাষকের শাষনকাল" সহ তাঁদের সকল "সংবিধান সংশোধন'' অবৈধ ঘোষনা করে এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। সাথে সাথে উচ্চ আদালত সরকারকে কায্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন পুর্বক মুল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার পয্যবেক্ষন ও সংযোজন করে।
শেখ হাসিনার সরকার বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন বিবেচনায় আদালতের সম্পুর্ণ রায় বাস্তবায়ন না করে সংসদের মাধ্যমে কিছু সংশোধনী এনে উক্ত রায় কায্যকর করেন।সরকার মোক্ষম সুযোগ পেয়েও সর্বদিক বিবেচনা করে আদালতের রায় গ্রহন বর্জনের মাধ্যমে দেশের আপামর জনগনের মনের ভাষারই মায্যদা প্রদান করেছিল, আমি মনে করি।
বানর না মানে মনিবের কিছুক্ষন আগের আদর সেবা--সুযোগ পেলেই উঠে কাঁধে, লাগিয়ে দেয় লম্বা নখের আঁছড়। "শেখ হাসিনার সরকারে"র বেলায়ও হয়েছে ঠিক তাই। সংসদে হাইকোর্টের রায় বিল অনুসারে পাশ হওয়ার অব্যাবহিত পরেই আন্দোলনের নামে তাঁরা নামে নাশকতা, অরাজকতা, সন্ত্রাস, আগুনবোমা, পবিত্র কোরানে আগুন দেয়ার ন্যাক্কারজনক সব কর্মকান্ডে। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পরিস্কার--আইন শৃংখলা অবনতির মাধ্যমে তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র। উক্ত আন্দোলন স্তিমিত হতে না হতে আবার আসে মোক্ষম সুযোগ "রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম" পবিত্র সংবিধানে সংযোজন করার মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিরল ঘটনা "আদালতে মামলার শুনানী চলাকালে রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন"। বর্তমানেও তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ন্যায় বিচারের প্রতিক হাইকোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কয্যটি সরানোর জন্যে। "রাষ্ট্র বনাম মাজদার হোসেন" ঐতিহাসিক হাইকোর্টের রায় অবিকল সংবিধানে সংযোজিত হলে তাঁদের আজকের ষড়যন্ত্রের কোন পথ কি খোলা থাকতো?
প্রিয় পাঠক, এ প্রসংগে ১৪ মার্চ ২০১৭ দৈনিক জনকন্ঠের সম্পাদকীতে যা বলা হয়েছে তার অংশ বিশেষ এখানে উদ্ধৃত করছি। “বিশ শতকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘটিত হয়েছে গণহত্যা। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, গুয়েতেমালা, চিলি, বুরুন্ডিসহ বিভিন্ন দেশে গণহত্যা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনও বলেছে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে; তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সব থেকে বেশিসংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে বারো হাজার বাঙালীকে খুন করা হয়েছে। পঁচিশ মার্চ থেকে ষোলো ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বারো হাজার হিসেবে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৪ হাজার।
বাংলাদেশে গণহত্যা পরিচালনাকারী খোদ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক "যুদ্ধাপরাধী আবদুল্লাহ নিয়াজি" তার ‘বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন--"পঁচিশে মার্চের সামরিক অভিযান বুখারা ও বাগদাদে চেঙ্গিস খান ও হালাকু খানের গণহত্যার চেয়েও বেশি নিষ্ঠুর ছিল।" স্বয়ং গণহত্যাকারী প্রধান নিজেই যখন দাবি করছেন, স্পষ্ট হয় বাংলাদেশে তাদের নৃশংসতার মাত্রা কতটুকু ছিল। ১৯৭১ সালের পঁচিশ মার্চ এক রাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে হানাদাররা বাংলাদেশে লক্ষাধিক বাঙালীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ হত্যাপ্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহারে নারীদের ওপর চালানো হয়েছে পাশবিক নির্যাতন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সেসব পৈশাচিক বর্বরতা গণহত্যার ইতিহাসে এক ভয়াবহতম ঘটনা। পঁচিশে মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটা ছিল বিশ্বসভ্যতার জঘন্যতম হত্যাকান্ডের সূচনা। এর পর নয় মাসে পাকিস্তানী হানাদাররা ত্রিশ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ শিশুকে জঘন্যভাবে হত্যা করে।”
মহান জাতীয় সংসদে দেরিতে হলেও ভয়াল ২৫ মার্চকে জাতীয় গনহত্যা দিবস পালনের আইন পাশ হয়েছে। মহান সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি মন্ত্রীপরিষদ উক্ত "২৫ মার্চকে গনহত্যা দিবস" পালন অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন দেয়ার অর্থ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উক্ত দিবস পালন করতে এই বছর থেকে বাধ্য। কিন্তু দু:খ্যজনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে রাজনীতি করে যারা ক্ষমতা দীর্ঘদিন উপভোগ করেছে এবং আগামীতেও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তাঁদের মধ্যে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সহ তাঁর বিশদলীয় জোটের পক্ষ থেকে দিবসটি পালন উপলক্ষে কোনপ্রকার তোড়জোড় লক্ষ করা যাচ্ছেনা। দেশেবিদেশে স্বীকৃত, মহান সংসদে অনুমোদিত, হত্যাকারি কতৃক স্বিকৃত, বাংলাদেশ সরকার কতৃক ঘোষিত ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ এর ভয়াল গনহত্যাকে অস্বীকার করেও কি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে তাঁরা রাজনীতি করার অধিকার ভোগ করতে পারবে?
ruhulaminmujumder27@gmail.com
"জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"
(রুহুল আমিন মজুমদার)
২০১৫ ইং সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিল।তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পরিস্কার----দুর্নীতির মামলা থেকে জিয়া পরিবারকে রক্ষা, যুদ্ধপরাধের বিচার বানচাল।উক্ত দাবি আদায়ে নৈতিক শক্তির ভিত্তি হতে পারতো----আমাদের অরাজকতার কারনে যেহেতু তোমরা ক্ষমতা পেয়েছ, সেহেতু আমাদের সকল দুর্নীতি সন্ত্রাস, অরাজকতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কতৃক আনীত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অনেকেই মনে করেন খালেদা জিয়ার উক্ত মতলব হাসিল না হওয়ার কারনে---মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের শহিদ, স্বাধীনতার ঘোষক ইত্যাদি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে যাচ্ছেন। রাজনীতির মাঠে নিয়মিত হাজির আছেন জানান দিয়ে নেতাকর্মী, দেশবাসি ও বহি:বিশ্বকে আশ্বস্ত রাখার জন্যই বোধ হয়, জাতীয় দলের জাতীয় নেত্রী হয়েও, প্রতিনিয়ত এমন বালখিল্য মন্তব্য করে যাচ্ছেন।
ঘটনা কিন্তু আদৌ তা নয়---খালেদা জিয়ার ঐসমস্ত মন্তব্য তাঁদের দলের আদর্শিক মন্তব্য, উৎসস্থলের মন্তব্য, তাঁদের জম্মদাতার মনের গহিনে লুকায়িত গোপন অভিসন্ধির আগাম বহি:প্রকাশ ছিল মাত্র।আমি আগেও বার কয়েক বলতে চেষ্টা করেছি বিএনপি দলের সৃষ্ট্রির উৎস বৃত্তের বাহিরে এসে বাঙ্গালী জাতি, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধিনতাকে মেনে রাজনীতি করার মানষিকতা এখনও গড়ে উঠেনি। বঙ্গবন্ধুর রক্ত স্রোত পান করে যে কালবাঘ রাতারাতি হৃষ্টপুষ্ট হয়েছিল, সেই কালবাঘের বল কি এত তাড়াতাড়ি নি:শেষ হতে পারে?
একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘ ৪৬ বছরে ২৫ মার্চ কালরাত স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি, স্মরণসভা কিংবা আলোচনা সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের কোন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছিল না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর আগেও দুইবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনগনের দাবির পক্ষে স্বত:স্ফুর্ত আন্দোলনও ছিল।তথাপি ২৫ মার্চ সহ মুক্তিযূদ্ধের বিশেষ কিছু দিন ও শ্লোগান সংবিধানভুক্ত, স্মরনীয়, পালনীয় করে রাখার উদ্যোগ গ্রহন করেনি।
দীর্ঘদিন পর হলেও এই সরকারী স্বীকৃতির পথ খুলে দিয়েছে আর কেউ নয়, খোদ একাত্তরে পরাজিত শক্তি দেশ পাকিস্তান। সম্প্রতি একাত্তরের এ গণহত্যার দায় এড়িয়ে উল্টো মুক্তিবাহিনীর ওপর দায় চাপিয়ে পাকিস্তানের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মিথ্যা তথ্য সংবলিত একটি বই ছাপিয়ে তা বিভিন্ন দেশে প্রচার করতে থাকে পাকিস্তান। সম্প্রতি মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়ার অমোঘ সত্যটি অস্বীকার করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার আইএসআইর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ওই বইটি সরকারের নজরে আসলে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।
প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশ সরকারের নজরে আসে বইটি বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত অফিসে আসার পর।তাঁর আগে বিভিন্ন দেশে তাঁদের রাষ্ট্রদূত অফিসের মাধ্যমে আন্তজাতিক পয্যায় বইটি ছড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান।তাঁরা যখন বইটি ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করে তখনই খালেদা জিয়া বাংলাদেশে বইটি প্রচারের আগাম মাঠ প্রস্তুতির বক্তব্য উত্থাপন করেছে মাত্র।বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই তিনি বক্তব্যগুলী রাজনীতির মাঠে ছেড়ে দিয়েছিলেন।অথবা খালেদা জিয়ার নিকট আগাম কপি পাঠিয়ে ক্ষেত্র প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছিল আই এস।
আই এসের নির্দেশীত পথেই স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বাস করে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার সাহষ দেখায়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে শাষন করার জন্যে রাজনীতি করে আবার মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা, দিন, নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ার সাহষ করে। এই সমস্ত সব কিছুই সম্ভব হয়েছে এবং হচ্ছে একমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার কারনে।
বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে।এই দাবি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের নিকট ছড়িয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের এই বিকৃত বই ছাপানোর বিষয়টি সংসদের নজরে আনেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টান্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সংসদ অধিবেশনে দাঁড়িয়ে তিনি এ বিষয়টি উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রতি নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে ২৫ মার্চকে জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও দিবসটির স্বীকৃতি আদায়ে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানী শাষক, সেনাবাহীনি এবং তাঁদের এদেশীয় দোষরদের একই অপরাধে অপরাধী বলে চিহ্নিত করেছেন।আমি মনে করি বাংলাদেশে গনহত্যার পিছনে পাকিস্তানী সেনাদের চাইতে হাজার গুনে বেশী দুষে দুষ্ট এদেশীয় তাঁদের প্রেতাত্বারা।কারন পাকিস্তানীরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানুষ হত্যা করেছে এদেশ দাবিয়ে রেখে তাঁদের শোষন অব্যাহত রাখার স্বার্থে। তাঁরা পারেনি, পরাজিত হয়ে এদেশ ত্যাগ করেছে। এখন তাঁরা আন্তজাতিক পয্যায় কূটনৈতিক ভাবে তাঁদের প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করতে পারবে বা করে।কিন্তু এদেশীয় দোষরেরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের সরলপ্রান বাঙ্গালীদের বিভ্রান্ত করে তাঁদের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকার সুযোগ রয়েছে।যেহেতু তাঁরা এদেশের অধিবাসি, এই সমাজে বসবাস করে, এই দেশের আলোবাতাসে তাঁরা নি:শ্বাস গ্রহন করে। আমরা স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও তাঁদের ষড়যন্ত্র করার পথ রুদ্ধ করতে পারেনি।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নেতৃত্বদানকারি দল পরপর দুইবার ক্ষমতায় আসার পরেও বুঝতে পারেনি মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ দিন, বিশেষ কিছু ঘটনা, বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষন, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দিপক শ্লোগানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নাথাকার কারনে দীর্ঘ বছর পাকিস্তানী প্রেতাত্বাদের উক্ত বিশেষ দিনগুলীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের সুযোগ ছিল। তাঁরা যথাযথভাবে সুযোগ কাজে লাগিয়েছে মাত্র। 'জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু'র স্থলে ১৫ ই আগষ্ট ব্জাতির জনকের তাজা রক্তের উপর দাঁড়িয়ে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' শ্লোগান প্রতিস্থাপন করতে পেরেছিল।, 'বাংলাদেশ বেতার'কে রেডিও বাংলাদেশ ১৫ই আগষ্ট সকালে প্রথম ঘোষনাতেই বানাতে পেরেছিল। পাকিস্তান জিন্দাবাদের স্থলে শুধু বাংলাদেশ জিন্দাবাদ এবং রেডিও পাকিস্তানের স্থলে শুধু "রেডিও বাংলাদেশ" নয়।পরবরর্তীতে, সংবিধানেরও আমূল পরিবর্তন করে পাকিস্তানি ধারায় এদেশকে নিয়ে যেতে অনেকাংশে সফল হয়েছিল।
২০০৯ ইং সালে ভূমিধ্বস জয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফিরে এলে তৎপরবর্তি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ইতিহাসখ্যাত "রাষ্ট্র বনাম মাজদার হোসেন" মামলায় ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে সুপ্রিম কোর্ট।উক্ত রায় দিতে গিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে অতীতের দুই "সেনাশাষকের শাষনকাল" সহ তাঁদের সকল "সংবিধান সংশোধন'' অবৈধ ঘোষনা করে এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। সাথে সাথে উচ্চ আদালত সরকারকে কায্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন পুর্বক মুল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার পয্যবেক্ষন ও সংযোজন করে।
শেখ হাসিনার সরকার বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন বিবেচনায় আদালতের সম্পুর্ণ রায় বাস্তবায়ন না করে সংসদের মাধ্যমে কিছু সংশোধনী এনে উক্ত রায় কায্যকর করেন।সরকার মোক্ষম সুযোগ পেয়েও সর্বদিক বিবেচনা করে আদালতের রায় গ্রহন বর্জনের মাধ্যমে দেশের আপামর জনগনের মনের ভাষারই মায্যদা প্রদান করেছিল, আমি মনে করি।
বানর না মানে মনিবের কিছুক্ষন আগের আদর সেবা--সুযোগ পেলেই উঠে কাঁধে, লাগিয়ে দেয় লম্বা নখের আঁছড়। "শেখ হাসিনার সরকারে"র বেলায়ও হয়েছে ঠিক তাই। সংসদে হাইকোর্টের রায় বিল অনুসারে পাশ হওয়ার অব্যাবহিত পরেই আন্দোলনের নামে তাঁরা নামে নাশকতা, অরাজকতা, সন্ত্রাস, আগুনবোমা, পবিত্র কোরানে আগুন দেয়ার ন্যাক্কারজনক সব কর্মকান্ডে। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পরিস্কার--আইন শৃংখলা অবনতির মাধ্যমে তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র। উক্ত আন্দোলন স্তিমিত হতে না হতে আবার আসে মোক্ষম সুযোগ "রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম" পবিত্র সংবিধানে সংযোজন করার মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিরল ঘটনা "আদালতে মামলার শুনানী চলাকালে রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন"। বর্তমানেও তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ন্যায় বিচারের প্রতিক হাইকোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কয্যটি সরানোর জন্যে। "রাষ্ট্র বনাম মাজদার হোসেন" ঐতিহাসিক হাইকোর্টের রায় অবিকল সংবিধানে সংযোজিত হলে তাঁদের আজকের ষড়যন্ত্রের কোন পথ কি খোলা থাকতো?
প্রিয় পাঠক, এ প্রসংগে ১৪ মার্চ ২০১৭ দৈনিক জনকন্ঠের সম্পাদকীতে যা বলা হয়েছে তার অংশ বিশেষ এখানে উদ্ধৃত করছি। “বিশ শতকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘটিত হয়েছে গণহত্যা। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, গুয়েতেমালা, চিলি, বুরুন্ডিসহ বিভিন্ন দেশে গণহত্যা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনও বলেছে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে; তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সব থেকে বেশিসংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে বারো হাজার বাঙালীকে খুন করা হয়েছে। পঁচিশ মার্চ থেকে ষোলো ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বারো হাজার হিসেবে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৪ হাজার।
বাংলাদেশে গণহত্যা পরিচালনাকারী খোদ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক "যুদ্ধাপরাধী আবদুল্লাহ নিয়াজি" তার ‘বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন--"পঁচিশে মার্চের সামরিক অভিযান বুখারা ও বাগদাদে চেঙ্গিস খান ও হালাকু খানের গণহত্যার চেয়েও বেশি নিষ্ঠুর ছিল।" স্বয়ং গণহত্যাকারী প্রধান নিজেই যখন দাবি করছেন, স্পষ্ট হয় বাংলাদেশে তাদের নৃশংসতার মাত্রা কতটুকু ছিল। ১৯৭১ সালের পঁচিশ মার্চ এক রাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে হানাদাররা বাংলাদেশে লক্ষাধিক বাঙালীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ হত্যাপ্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহারে নারীদের ওপর চালানো হয়েছে পাশবিক নির্যাতন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সেসব পৈশাচিক বর্বরতা গণহত্যার ইতিহাসে এক ভয়াবহতম ঘটনা। পঁচিশে মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটা ছিল বিশ্বসভ্যতার জঘন্যতম হত্যাকান্ডের সূচনা। এর পর নয় মাসে পাকিস্তানী হানাদাররা ত্রিশ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ শিশুকে জঘন্যভাবে হত্যা করে।”
মহান জাতীয় সংসদে দেরিতে হলেও ভয়াল ২৫ মার্চকে জাতীয় গনহত্যা দিবস পালনের আইন পাশ হয়েছে। মহান সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি মন্ত্রীপরিষদ উক্ত "২৫ মার্চকে গনহত্যা দিবস" পালন অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন দেয়ার অর্থ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উক্ত দিবস পালন করতে এই বছর থেকে বাধ্য। কিন্তু দু:খ্যজনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে রাজনীতি করে যারা ক্ষমতা দীর্ঘদিন উপভোগ করেছে এবং আগামীতেও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তাঁদের মধ্যে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সহ তাঁর বিশদলীয় জোটের পক্ষ থেকে দিবসটি পালন উপলক্ষে কোনপ্রকার তোড়জোড় লক্ষ করা যাচ্ছেনা। দেশেবিদেশে স্বীকৃত, মহান সংসদে অনুমোদিত, হত্যাকারি কতৃক স্বিকৃত, বাংলাদেশ সরকার কতৃক ঘোষিত ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ এর ভয়াল গনহত্যাকে অস্বীকার করেও কি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে তাঁরা রাজনীতি করার অধিকার ভোগ করতে পারবে?
ruhulaminmujumder27@gmail.com
"জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু"
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন