জাতির জনকের আদর্শ শেখ হাসিনার প্রেরনা-----খালেদা জিয়ার প্রজেক্ট প্রয়াত স্বামীর পদাংক অনুসরন। _____________________________________ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আরো কিছুদিন জীবিত থাকলে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিগনিত হতেন। তার নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও তীক্ষতা এদেশের মানুষ অনুভব করতে পারে নাই।তাঁর মৃত্যুর পর একে একে সকল রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ এবং আন্তজাতিক সম্পর্ক, প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সমুহ মুল্যায়িত হচ্ছে।বিশ্বব্যাপি আলোচিত হচ্ছে তাঁর ধ্যান ধারনা,অসাধারন ব্যাক্তিত্ব, সুদুরপ্রসারী চিন্তা চেতনার। বিশেষ করে স্বল্পকালীন শাষনের দুর্ভিক্ষপীড়িত,খরামঙ্গা মোকাবেলা করে স্থায়ী রাষ্ট্রীয় কাঠামো নির্মানের লক্ষ সমুহ বিশ্ববাসির জন্য শিক্ষনীয় হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে চিরকাল।বিশ্বের নীপিড়িত নিয্যাতীত সংগ্রামী মানুষের অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববরেন্য নেতাদের নানাবিদ কেলেংকারি ফাঁস হয়ে মৃত্যুর পরও সমালোচিত হতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু এক্ষেত্রেও আলাদা এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন।গনতন্ত্রের পুজারী হিসেবে তাঁর সকল কর্মকান্ডই ছিল কৌশলি প্রক্রিয়ায়। উদাহরন হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে পয্যালোচনা করলেও তাঁর নেতৃত্বের অনেক দিক উম্মোচিত হতে পারে।৭ই মার্চের ভাষন মানব সভ্যতার অমূল্য রত্ম হয়ে বিশ্ব দরবারে ঠাই করে নিয়েছে।বিগত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ দিকনির্দেশনামুলক ভাষন হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এইকৌশলী ভাষনের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা এমন ভাবে উচ্চারন করেছিলেন যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদের অপবাদে বিশ্ববাসি তাঁকে দুষতে না পারে-আবার জাতি সম্যক উপলব্দিও করতে পারে এখন তাঁদের কি করা উচিৎ এবং বঙ্গবন্ধু জাতিকে কি নির্দেশনা দান করেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের স্বাধীনতা যারা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল তারাই স্বাধীনতা লাভের মাত্র সাড়ে তিন বছর পর বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।জাতিকে অন্ধকারের অতল গব্বরে নিমজ্জিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছেন কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামকে বেগবান করার নির্দেশনার অল্প কয়দিন পরই তাঁকে স্বাধীনতা বিরুধীরা হত্যা করে। ফলে তাঁর অর্থনৈতিক মুক্তির আহব্বান মুখ থুবড়ে পড়েছিল। জাতির জনকের দুই কন্যা সেদিন ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল বিদেশে অবস্থানের কারনে। তাঁর জৈষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেছেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের সংগ্রাম সফল হচ্ছে।দ্রুতগতিতে দেশ উন্নতি অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভিক্ষা বৃত্তির জাতি মধ্যম আয়ে উন্নিত হয়েছে।পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প নীজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জি,ডি,পির উধ্বগতি প্রতিনিয়ত লক্ষনীয়ভাবে জনসমক্ষে দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতি যখন মন্দার কবলে পড়ে সরকারি আধা সরকারি অফিসের জনবল চাটাই পুর্বক মন্দা মোকাবেলার কৌশল নির্ধারন করছে -তখন শেখ হাসিনার সরকার মন্দার ছোঁয়া অর্থনীতিতে পড়তে দেন-নি বরঞ্চ প্রতিটি সেক্টরে জনবল নিয়োগ দিয়ে গতিশীলতা আনানয়নের প্রতি মনোযোগি হয়েছেন। তাঁর সুফল ইতিমধ্যে জাতি পাওয়া শুরু করেছে।বর্তমান জিডিপি ৭'৫এর ঘরে পৌচেছে, মাথা পিছু আয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে(১৪৬৬ ডলার) লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ববাসি ইতিমধ্যেই তাঁদের মুল্যায়ন পত্রে বলা শুরু করেছেন আগামী দশক আসার আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের তালিকায় শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে নাম লিখাতে সক্ষম হবে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ ৯২ দিন আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফিরে যান। আর ঘরে ফিরে তিনি তার প্রিয় পাকিস্তানকে খুশি করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছেন। বিএনপিকে এক নেতা "ফিনিক্সপাখি" হিসেবে উল্লেখ করে হঠাৎ জেগে উঠার স্বপ্নে বিভোর আছেন।অর্থাৎ তিনিও স্বীকার করে নিলেন বিএনপির অবস্থা ভাল নেই।বিএনপি দাঁড়াতে পারবে কিনা তাঁরা সন্দিহান।হঠকারি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিএনপি বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধীরে হলেও নেতারা স্বীকার করে নেয়া শুরু করেছে। বিএনপি এই নাশকতা করেছিল মানবতা বিরুধী বিচার বানচাল করার উদ্দেশ্যে।৭৫এর পট পরিবর্তনের অব্যবহিত পরেই বুঝা গিয়েছিল মেজর জিয়াই ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার মুল নেপথ্যের নায়ক। ক্ষমতা দখলের নাটকিয়তা, সেনা অভ্যুত্থানের গুজব ছড়িয়ে বিভিন্ন সেনা সদরে মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার হত্যা, রাজাকার আলবদরদের মন্ত্রী সভায় স্থান দেয়া,যুদ্ধ অপরাধাদের জন্য গঠিত ট্রাইবুনাল ভেঙ্গে দেয়া, যুদ্ধ অপরাধে সাজা প্রাপ্ত রাজাকারদের জেলমুক্তি করে দেয়া, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত শীর্ষ অপরাধীদের দেশত্যাগে সুযোগ করে দেয়া ইত্যাদি পয্যলোচনা করলে স্পষ্ট বুঝতে কারই অসুবিধা হওয়ার কথা নয় মেজর জিয়া প্রকৃত একজন রাজাকার ছিলেন-বঙ্গবন্ধু হত্যার মুল কারিগর ছিলেন--মুক্তিযুদ্ধে পাকিদের হাই প্রোফাইলের একজন চর ছিলেন। কোন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার বাসা বাড়ীতে অবস্থান করতে না পারলেও তাঁর পরিবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত সেনা সদরে বেশ সুখে শান্তিতেই ছিলেন। পরবর্তিতে খালেদা জিয়ার কর্মকান্ডই তা প্রমান করে। শিমলা চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের যে ১৯৫ শীর্ষ সামরিক যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার কথা ছিল তার মধ্যে জেনারেল জানজুয়াও ছিলেন। তার মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় শোকবার্তা পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের কোন তোয়াক্কা না করে। বেগম খালেদা জিয়ার এ শোকবার্তা পাঠানোর মাধ্যমে প্রমান হয় তিনি দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেন না।কথিত আছে, খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধি মি: জানজুয়ার হেফাজতেই ছিলেন। ১৫ই আগষ্ট ভুয়া জম্মদিন পালন,শহিদের সংখ্যা বিতর্ক, মানবতা বিরুধী বিচার বানচালে আগুন সন্ত্রাস, আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র-ইত্যাদি নানাহ কর্মকান্ড পয্যালোচনা করলেও স্পষ্ট ধারনা পেতে) -তেমন কোন অসুবিধা হয়না খালেদাও তাঁর স্বামীর পদাংক অনুসরন করে বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানোর প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তিনিও স্বাধীনতা বিরুধী। পরিশেষে বলতে চাই, জাতির জনকের কন্যা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষে।আওয়ামী লীগ, যুবলীগ,ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর উদ্দেশ্য হবে কর্মসুচি বাস্তবায়নে সর্বদা অনুপ্রেরনা যুগিয়ে যাওয়া,সাহষ দিয়ে এগিয়ে নেয়া।যখন দেখি কোন মুজিব আদর্শের সৈনিক অপপ্রচারকারিদের পদাংক অনুসরন করে তাঁদের মতই কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে,তখন নেত্রী নীজেকে বড়ই অসহায় মনে করে, একা মনে হয়। তিনি প্রত্যহ একাকিত্বে ভোগছেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও অনেক সময় তাঁদের সাথে সুর মিলিয়ে একই ভাষায় কোরাশ গায়। জাতির জনকের কন্যা একাদিকবার তাঁর ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে বলতে চেয়েছেন,"আমি ছাড়া আর কেউ চায়না জাতির জনকের আদর্শ বাস্তবায়ন হোক।" __________________________________ জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন