অলস, ভীতু, লুটেরা নেতাকর্মী দিয়ে হম্বিতম্ভি করা যায়--আন্দোলন,সংগ্রাম, নির্বাচন হয়না------ _________________________________ যুগ উপযোগী বক্তব্য প্রদান করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ।তিনি বলেন 'নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করার জন্য তারা (নির্বাচন কমিশন) যে কোনো ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারেন। কঠোর আইনের ব্যবস্থা নেবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।'' নির্বাচন বা নির্বাচন পরবর্তী কোনো সহিংসতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেখতে চায় না।' তৃণমূলের এই নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ রাখতে দলের নেতা-কর্মীদের কঠোর হুঁশিয়ারিও দেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের হুমকি সম্পর্কে তিনি বলেন 'সরকারের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার জন্য বার বার চক্রান্ত করা হয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে। এই নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি, পঁচাত্তরের শক্তি এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তির এদেশীয় দোসররা অশুভ চক্রান্তে লিপ্ত আছে। তাদের অশুভ চক্রান্তের অংশ হচ্ছে নির্বাচনকে বিতর্কিত করা, নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করা।' উল্লেখিত পরিস্কার বক্তব্যের পরেও নির্বাচন সুষ্ঠুও শান্তিপুর্ণ হবে হয়ত--প্রতিযোগিতামুলক হবে আশা করা যায়না। ইউপি নির্বাচনের হয়ে যাওয়া দুই ধাপের নির্বাচন পয্যবেক্ষন করলে দেখা যায়,বিএনপি এবং তাঁর মিত্র জামায়াতের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়ে প্রায় চার গুন পেছনে পড়ে আছে।নিশ্চিত বলা যায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বা বিদ্রোহি প্রার্থীরা ভোট কারচুপি করে নির্বাচিত হয়নি। ভোট কারচুপি করে নির্বাচিত হওয়ার তাঁদের কোন সুযোগ নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে নির্বাচনে কঠোরতা প্রদর্শন করে বিএনপিকে মাঠে ধরে রাখার জন্য কাঁদানে গ্যাসের স্থলে গুলি ছোঁড়ে বেশ কিছু মানুষের জীবনহানী ঘটিয়েছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন বিএনপির বিচ্ছিন্ন উপস্থীতি, ভোট যুদ্ধ, প্রতিরোধ, প্রতিযোগিতার ভার নীজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।সারা দেশে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বেদম প্রহার, ক্ষেত্র বিশেষ গুলী করে হত্যা করতেও দ্বিধা করছেনা।তারপরও বিএনপিকে মাঠে এনে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উৎসাহীত করতে পারছে বলে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা। বিএনপি জামায়াতের তৃনমুল পয্যায়ের বেহাল অবস্থাকে সরকার,নির্বাচন কমিশন,বিএনপি-- আওয়ামী লীগের কাঁধে তোলে দিয়ে আপাত: স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে বিএনপি দলকে রাজনীতিমুখী,নির্বাচন মুখী করা যাবেনা। সুবিধাবাদি বিএনপি প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ওয়াক ওভার দিয়ে প্রতিরোধ থেকে বিরত থেকে ভোট একতরফা করার সুযোগ করে দিয়েছে বহুস্থানে-- এই ফাঁক টুকু বিএনপি হাইকমান্ড/সরকার/নির্বাচন কমিশন তাঁদের রাজনীতি/প্রশাসনিক হিসেবের মধ্যে না এনে-- আওয়ামী লীগ ভোট নিয়ে যাচ্ছে অজুহাতে দমন পীড়ন অব্যাহত রেখেছে অন্যদিকে বিএনপি ভোট বর্জনের হুমকি দিচ্ছে। গনতন্ত্রে সমশক্তি সম্পন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচন। ভোট হবে আনন্দের, প্রতিযোগিতার- মানুষ উপভোগ করবে, চায়ের কাপে ঝড় তুলবে,যার যার পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবে। অসম শক্তি কখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনা,না পারার খেসারত শক্তিধর দলের কাঁধে তুলে দেয়া সহজ কিন্তু রাজনীতি, গনতন্ত্র, নির্বাচনের জন্য অবশ্যই অশনি সংকেত। সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বেআইনী ভাবে আওয়ামী লীগের মাঠ পয্যায়ে কিছু দমন পীড়নে অংশ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল,। অসংখ্য নেতাকর্মী দলের মধ্যে বিচরন করছে।একেক জনের মন মানষিকতা একেক রকমের।চোখ রাঙিয়ে দশ/ বিশ লক্ষ টাকা খরছ বাঁচাতে পারলে অসুবিধা কি? অন্য রাজনৈতিক দলের চোখ যদি আরো বড় করে তাকাতে পারে তবেতো নির্বাচন প্রতিযোগিতামুলক হয়। এই সহজ পথে না গিয়ে আওয়ামী লীগের উপর দমনের স্টিম রোলার চালিয়ে রাজনীতি চাঙ্গা করার কৌশল গনতন্ত্রকেই হুমকির মধ্যে ফেলে দিবে নির্বাচন কমিশন এবং সরকার। স্বৈরশাষক জিয়া এবং এরশাদের আমলে সর্বচ্ছ রাষ্ট্রীয় আনুকুল্যে ভোট কারচুপির ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছিল। জেলা প্রশাসনের প্রতি তাঁদের প্রার্থীদের নির্বাচিত করার সর্বচ্ছ রাষ্ট্রীয় পয্যায় থেকে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেয়ার পরেও আওয়ামী লীগের প্রতিরোধের মুখে বহুস্থানে সম্ভব করতে পারেনি।এমন অনেক জেলা আছে যে সমস্ত জেলায় -জেলা পরিষদ ডাক বাংলায় সীল মেরে ভোট জমা দিয়ে দেয়া হয়েছে,কেন্দ্র পয্যন্ত ভোটের বাক্স আনার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেনি।তাঁর পরেও আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রতিরোধের দুর্গ ছেড়ে চুল পরিমান ও পেছনে হটেনি।এটা শুধু এক দুই মাসের প্রতিরোধ যুদ্ধ নয় দীর্ঘ একুশটি বছর একটানা যুদ্ধ করে আওয়ামী লীগ আজ এই পয্যায় মনের মত করে দেশের সেবা করার এবং জাতির জনকের আদর্শ বাস্তবায়ন করে দেশকে সমৃদ্ধ করার পথ রচনা করেছে।এতে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা নির্যাতীত নিষ্পেষীত হয়েছে সত্য, গনতন্ত্রকে হারতে দেয়নি। গনতন্ত্রকে হারতে না দিয়ে আজকের এই পয্যন্ত টেনে নিয়ে এসেছে। আমি হলফ করে বলতে পারি জনাব হানিফ নির্বাচনের ব্যপারে যে উক্তিটি নির্বাচন কুমিশন, প্রশাসন, দেশবাসি,নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনের উদ্দেশ্যে করেছেন বিগত সরকারের কোন নীতি নির্ধারকের মুখে এর ছিটেফোঁটাও যদি উচ্চারীত হত-তবে গনতন্ত্র আরো বিকশিত রুপে বাংলাদেশের মানুষ বর্তমানে উপভোগ করার সুযোগ পেত। নেতাদের সামনে বসা নিয়ে মারামারি কাটাকাটি করে- দশটা কর্মী নিয়ে নমিনিশন সাবমিট করার যোগ্যতা রাখেনা। মিছিল করে উপজেলা পরিষদে নমিনিশন জমা দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা। একা একা নমিনেশন দাখিল করার জন্য উপজেলায় গমন করে অর্থাৎ তাঁর নমিনেশন ছাত্রলীগের ছেলেরা নিয়ে যাক। বলতেতো পারবে আওয়ামী লীগ নমিনেশন কেড়ে নিয়ে গেছে,ভোট করতে দিচ্ছেনা বিএনপিকে। তাঁদের সময়কালে আওয়ামী লীগের এই বেহালদশা লাগাতার বছরের পর বছর বিরাজমান কখনও যদি হতো-- একটা নেতা কর্মীকেও তাঁরা বাঁচতে দিতনা। বেহালদশা বহুবারই মোকাবেলা করে স্বল্প সময়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ।সেই ঘুরে দাঁড়ানোতে কোন রকমের হঠকারি রাজনৈতিক কর্মসুচি দিয়ে নয়,জনগনের নৈমত্তিক সমস্যার ইস্যুকে আন্দোলনের উপজিব্য করে। রাজপথ আওয়ামী লীগের পুর্নাঙ্গ দখলে থাকা সত্বেও ২১শে আগষ্ট জাতির জনকের কন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে 'বোমা গুলী বৃষ্টি"বর্ষন করেছিল যারা-তাঁরাই বলছে আওয়ামী লীগ ভোট করার জন্য দিচ্ছেনা,গনতন্ত্র নির্বাসনে।তাঁরা গনতন্ত্রকে ঘরের কোনে লুকিয়ে রেখেছেন একবারও উচ্ছারন করেনা। এইখানেই আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের অপরাপর দলগুলীর ত্যাগের ব্যবধান।আওয়ামী লীগ নেত্রী জাতির জনকের কন্যাকে কম করে দুইবার বোমা গুলীর বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে"মানব ঢাল" তৈরী করে নেত্রীকে বাঁচিয়েছেন অকাতরে জীবন বলি দিয়ে কর্মীরা-নেত্রীর গাঁয়ে আছড় পড়তে দেয়নি। পক্ষান্তরে খালেদা জিয়াকে পুলিশ বালূর ট্রাক দিয়ে পথ রোধ করে রাখলেও ঢাকা শহরে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী থাকার পরেও একটা কর্মী বাসা থেকে বের হয়ে উঁকি দিয়েও দেখেনি।সে দিন যদি দশ হাজার লোকের মিছিল নিয়ে খালেদার বাসভবনে বিএনপির কোন নেতা আসতেন তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতির চেহারা হয়তো অন্যরুপে দেখা যেত। সর্বশেষে বলতে চাই,রাজনৈতিক দলের বড় পুঁজি আদর্শ। আদর্শ ভিত্তিক বেড়ে উঠা দলের রাজনৈতিক কর্মসুচিতে শিল্পের ছোঁয়া থাকে, হঠকারিতা থাকেনা। আওয়ামী লীগকে ভাললাগেনা তাই বিএনপি করি -এমন নেতাকর্মী দিয়ে হম্ভিতম্ভি করা যায়-আন্দোলন সংগ্রাম করা যায়না।ষড়যন্ত্র করে পিছনের দরজা দিয়ে খমতা দখল করা যায়,জনগনের ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায়না।আদর্শহীন দলের নেতাকর্মী-নীতি নৈতিকতা বিবর্জিতই হয়-ত্যাগ স্বীকার করার আগ্রহ থাকেনা। তাঁরা আন্দোলন সংগ্রাম জানেনা-খমতা পেলে লুটপাট ঠিকই জানে। __________________________ জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন