জয় হত্যা পরিকল্পনা বিএনপির বর্তমান অবস্থান--গনতন্ত্র,আইনের শাষনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। মির্জা ফখরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে দাবী করে বলেছেন, সজিব ওয়াজেদের একাউন্টে ৩০০মিলিয়ন ডলার অবৈধ লেনদেন হয়েছে।সফিক রেহমান জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে পুলিশ বলছেন সফিক রেহমান এইধরনের কোন তথ্য জিজ্ঞাসাবাদে দেননি।পুলিশ নিশ্চিত করেই বলছেন মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সাথে শফিক রেহমানের দেওয়া তথ্যের কোনো মিল নেই। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ চক্রান্তে’ এফবি আই কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার মামলার বিচারে জয়ের একাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য উঠে এসেছে।ওই বিচারের সূত্র ধরে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হলেও ওই লেনদেন নিয়ে কেন কথা হচ্ছে না? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির মহাসচিব।“যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে পেশকৃত মার্কিন সরকারের ডকুমেন্টে ‘ইনডিভিজুয়াল ওয়ান’ অর্থাৎ সজীব ওয়াজেদ জয় ও ৩০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে সরকার টু শব্দ করছেন না কেন?ফখরুল সাহেবের জিজ্ঞাসা সরকারের প্রতি। ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “শফিক রেহমান জিজ্ঞাসাবাদে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বহু তথ্যই দিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে তার কোন মিল নেই। "আমরা জানি না ফখরুল সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন-তার সঙ্গে শফিক রেহমানের আগে পরে কখনও তিনি নিজে কথা বলেছিলেন কিনা।" বিষয়টি যে, বর্তমান সফিক রেহমানের গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসা বিভিন্ন তথ্যকে অসার প্রমান, বিতর্ক উত্থাপনের মাধ্যমে ধুম্রজাল সৃষ্ট্রি, এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপকৌশল- এতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের পরিষ্কার কথা হচ্ছে,সত্য হোক মিথ্যা হোক বিষয়টি অতিব গুরুত্বপুর্ণ। মির্জা ফখরুল যে বিষোয়টির অবতারনা করেছেন, বিষয়টি কোন সুত্র থেকে তিনি অবহিত হলেন, তাঁর পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র প্রদানের জন্য পুলিশ কতৃক তাঁকে নির্দেশ প্রদান করা যেতে পারে।সফিক রেহমান যে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য দিয়েছেন তিনিই বা জানেন কি ভাবে সজিবের একাউন্টে ৩০০ কোটি ডলার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে?বিষয়টি যেহেতু ফখরুল সাহেব উত্থাপন করেছেন তাঁকেই প্রমান করতে হবে সত্যাসত্য। জনমনের সন্দেহকে প্রশমিত করার জন্যই সরকার- ফখরুলকে আইনের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। নতুবা বাস্তবতায় সিনিয়র নেতাদের একাধিক বৈঠকে জয় হত্যার সিদ্ধান্তের যে কথাটি সফিক রেহমান জিজ্ঞাসা বাদে বলেছেন," ইহা কি তাঁরই অংশ হিসেবে ধরে নিতে বাধ্য হবে জনগন"?যদি অংশই হয়ে থাকে তবে মির্জা ফখরুলকে পুলিশ জিজ্ঞাসা বাদের জন্য এখনও তাঁদের হেফাজতে নিচ্ছেনা কেন?“তদন্ত সংস্থার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পেরেছে সফিক রেহমানকে আইনের মধ্যে থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেখানে তার ওপর কোন চাপ প্রয়োগ বা নিপীড়ন করা হয়নি।সফিক রেহমানের সহধর্মিনীর ভাষ্য থেকেও তেমনটি উঠে এসেছে। উনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে তথ্যগুলো দিয়েছেন সেই তথ্যর ভেতরে তিনি সব কিছুই উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের এবং অন্যান্য এফবি আইয়ের তদন্তের কিছু ডকুমেন্টস এবং মার্কিন সরকার কতৃক প্রেরীত বাংলাদেশ সরকারকে দেয়া ডকুমেন্টসের মধ্যে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, সাজাপ্রাপ্ত ব্যাক্তিগন কি কারনে মার্কিন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হলেন, উনারা এখনও মার্কিনীদের জেলেই আছেন।যথাযথ প্রমানাদি সাপেক্ষে সফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ,সফিক রেহমান সাহেব ও কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ ছাড়াই আদোপান্ত সকল ষড়যন্ত্রের বিষয় সমুহ অকপটে স্বীকার করে যাচ্ছে।এমন সব বিষয়ের অবতারনা সফিক রেহমান করে যাচ্ছেন," যে সমস্ত বিষয় সমুহ পুলিশের আদৌ জিজ্ঞাসার মধ্যেই নেই।"তাঁরপরেও নাজুক বিষয়টি নিয়ে কোন পক্ষ পানি ঘোলা করার চেষ্টা জাতির জন্য দু:খ্যজনক হবে বলে আমি মনে করি।বিএনপির উচ্চপয্যায়ের নেতৃবৃন্দের বোধদয় হওয়ার প্রয়োজন আছে যে, "জাতির জনকের দৌহিত্র একক কোন ব্যাক্তি নন, নতুন প্রজম্মের উন্নত,সমৃদ্ধ, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মানের আশা আখাংকার প্রতিভু। আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন সাধনার প্রতিভু হিসেবে নীজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছেন তিনি ইতিমধ্যে।" তাঁর বিরুদ্ধে হাওয়াই কোন অভিযোগ উত্থাপন করার অর্থই হচ্ছে নতুন প্রজম্মের আশা-আখাংখাকে বিভ্রান্ত করার চক্রান্ত যা জনগনের আস্থা ও বিশ্বাসের মুলে কুঠারাঘাত করার শামিল।বাংলাদেশে অতীতের ন্যায় হাওয়াই অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত করার দিন-মনে হয় শেষ হয়ে গেছে। নতুন প্রজম্মের হাতে হাতে এন্ড্রয়েড ফোন তুলে দিয়েছেন জয়, ইচ্ছে করলেই গুগুল চার্জ দিয়ে তৎক্ষনাত উত্থাপিত-যে কোন বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান পেতে পারেন, যে কোন উৎসুক্য ব্যাক্তি।তাছাড়াও স্মরন রাখা প্রয়োজন জাতির জনকের পরিবার বাংলাদেশ,বাঙ্গালী জাতির জন্য বুকের রক্ত ঢেলে প্রমান করেছেন, তাঁদের পরিবারের চেয়ে অতীত বর্তমান, ভবিষ্যতেও কোন বাঙ্গালী পরিবার বা নেতা নেত্রী এত ত্যাগ স্বীকার করেনাই, করছে না,করবেও না। জাতির জনকের পরিবার বাঙলাদেশে রাজনীতি না করলেও বৃটেনের রাজপরিবারের ন্যায় সর্বচ্ছো রাষ্ট্রীয় সম্মানের অধিকারী হয়ে স্বচ্ছন্দে পারিবারিক জীবন অতিবাহিত করতে পারবে- বাংলাদেশ যতদিন পৃথিবীর মানচিত্রে "বাংলাদেশ" হিসেবে স্বীকৃত থাকবে। এই সত্যটুকু সবার মাঝে বিদ্যমান থাকা উচিৎ।নচেৎ বাঙ্গালী সর্বযুগের সেরা বেঈমান জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হতে থাকবে।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগনের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উঠে আসা রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই দলের ষড়যন্ত্র করে বা সেনা বাহিনীকে উস্কানী দিয়ে ক্ষমতা দখল করার কোন ইতিহাস নেই। অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা বা নেত্রীকে হত্যা করে রাজনীতির ভবিষ্যত নিষ্কটক করার উদাহরন- এই দলের মধ্যে কখনও ছিলনা, এখনওনেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিয়মাতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে অখন্ড পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ "মঈন ফখরুলের সেনা সমর্থিত" সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান পয্যন্ত-কোথাও ষড়যন্ত্রের কোন ইঙ্গিত ছিল,তেমন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়না।বরঞ্চ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জাতির জনকের কন্যা ১১ মাস জেলে কাটিয়ে প্রমান করেছেন জনগনের ইচ্ছাই শেষ কথা, জনগনের ইচ্ছার বাহিরে আওয়ামী লীগ এবং তাঁর নেত্রী কোন ষড়যন্ত্রের জালে নীজেকে সম্পৃত্ত করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার চিন্তা আদৌ করেন নাই।দলটি ২০০১ ইং সালে খমতা ত্যাগের পর যে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল-সেই নির্যাতনের বদলাও ২০০৮ ইং সালে বিপুল জনসমর্থনে খমতায় এসে নেয়ার চেষ্টা করেনি, নেয়নি।এক বিরল উদাহরনের সৃষ্ট্রি করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।বিএনপি নেত্রী তাঁর বিগত সম্মেলনে প্রকাশ্য বলেছেন ক্ষমতায় থাকলে "বেহেস্তের স্বাধ নেয়া আর ক্ষমতার বাহিরে গেলে নরকের আগুনে জ্বলা"। বাংলাদেশের রাজনীতির সংস্কৃতিতে রুপান্তরীত হয়েছিল,"যার কারনে তিনি নিজেই ২০০৬ইং সালে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার আপ্রান চেষ্টা করে "মঈন ফকরুলের" ক্ষমতা দখলের পথ সৃষ্ট্রি করেছিলেন।এতটুকু বোধদয়ের পরেও দলটি অতীতের হত্যা, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ইতিহাসের সহিত সামঞ্জস্য রেখে বর্তমানেও একই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে। মার্কিন আদালতে প্রমানীত হত্যা চক্রান্ত, বর্তমান বিএনপি দলের অবস্থান --চলমান গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে ক্ষতিগ্রস্থ্য করবে।চলমান ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত -নি:সন্দেহে দলটির পতনকেই ত্বরান্বিত করবে। হত্যার রাজনীতিতে সম্পৃত্ত হওয়া বিএনপির মত বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের, বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য নিশ্চিত একটি অশনিসংকেত।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশের আদালতে প্রমানীত সত্যকে বিভিন্ন বিতর্ক উত্থাপনের মাধ্যমে পাস কাটানো চেষ্টা আদৌ সংগত হতে পারেনা।বিএনপির উচিৎ ছিল সরকারকে সহযোগিতা করা- -যাতে এই হীন চক্রান্তে জড়িত ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করা যায়। ষড়যন্ত্রকারীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা যায়।ইহা আগামীর বাংলাদেশের গনতন্ত্র, সুশাষন, উন্নয়ন, অগ্রগতির ধারাকে নিরবচ্ছিন্ন করার স্বার্থেই প্রয়োজন ছিল। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা বঙ্গরত্ম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন