বিএনপি দলের ভিতরে বাইরে গড়ে উঠা লুটেরা শ্রেনীর স্বার্থরক্ষায় পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত 'জয়হত্যা'। _______________________________________ বাংলাদেশের রাজনৈতিকদল তথাকথিত শুশীলসমাজ, বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবীদ, অল্প কয়েকটি সামাজিক সংগঠন দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য মনে হচ্ছে। কোন বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসলে জয়হত্যার পরিকল্পনার ব্যাপারটি জনগনের দৃষ্টির আড়ালে নেয়া যায় বুঝতেই পারছেন না। গতকাল রাতে শীর্ষ নেতাদের সংঙ্গে খালেদা জিয়া দীর্ঘ বৈঠকের পরেও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য বা যুৎসই বক্তব্য স্থীর করতে পারেন নাই।ফলে স্থায়ী কমিটির নেতারা একেক জন একেক রকমের বক্তব্য নিয়ে মিডিয়ার সামনে হাজির হচ্ছেন।তরুন তুর্কিরা অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে বাঁচার জন্য চারিদিকে জায়গার খোঁজ খবরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমেরিকার আদালতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দন্ড হওয়া এবং নৈতিকভাবে দুর্বল জনাব রেহমান শফিকের সরল স্বীকারোক্তি মুলত: আওয়ামী বিরুধীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।সফিক রেহমান সম্মানীত ব্যাক্তি, বাম বলয়ের সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকায়,অনেকটা স্পষ্টবাদিতার কারনে--স্বল্প সময়ে নাম কিনতে পেরেছিলেন- ইহাও সত্য। কিন্তু রাজনৈতিক ও চারিত্রিক পদস্থলনের কারনে তাঁর প্রকাশিত পত্রিকা আগের মত পাঠক টানতে পারেনা- ইহাও সত্য।তিনি ডিবি কতৃক কোন প্রকার নির্য্যাতন ছাড়াই সংগঠিত ঘটনার অকপটে সবিস্তারে বর্ণনা দিয়েছেন-- ইহা তাঁর সহধর্মীনির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট অনুমান করা যায়। তাঁর সহধর্মীনি তালেয়া রেহমান বলেন, ‘শফিকের সঙ্গে আমার কিছু কথা হয়েছে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছ? বলল, পুলিশ তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে, সেদিক দিয়ে চিন্তা নেই। তবে তাঁর চিন্তা হচ্ছে তাঁকে জামিন দেওয়া হবে না, জেলেই দেবে। শফিক বলছে যে, সে কোনো দিন কারও কাছে কোনো কিছু চায়নি। কেবল দিয়েছে। দিয়েছে ভালোবাসা। তার বদলে কোনো পদ বা কোনো কিছু পায়নি। আশাও করেনি।’ এতেই বুঝা যায় সফিক রেহমান কোনপ্রকার শারিরীক নিয্যাতন ব্যাতিরেকে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও বিএনপির মহাসচিব অভিযোগের সুরে বলতে চাইছেন-"বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ও তনু হত্যার ঘটনা নিয়ে যে বিক্ষোভ, তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার কথা সাংবাদিক শফিক রেহমান স্বীকার করেছেন মর্মে যে খবর বেরিয়েছি এটা 'অস্বাভাবিক।' আজ সকালে শেরে বাংলা নগর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে এ কথা বলেন তিনি।' মুলত: সফিক রেহমানের জন্য বিএনপি এবং বিএনপি মনোভাবাপন্ন শুশিল সমাজ,বুদ্ধিজীবি, দলটির তরুন তুর্কি,জনাব হাইকমান্ড তারেক,খালেদা জিয়া সহ সংশ্লিষ্ট সবাই যারপরনাই হতাশ হওয়ার মুলে কয়েকটি কারন যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত। তাঁদের বুদ্ধিজীবির তালিকা অত্যান্ত সীমিত আগে থেকেই। সিনিয়র তিনজন বুদ্ধিজীবি দেশ-বিদেশে সর্বমহলে আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একজন গত কিছুদিন আগে দলের সকল স্তর থেকে পদত্যাগ করেছেন।বাকি ছিলেন এমাজ উদ্দিন আহম্মেদ, এবং সফিক রেহমান। শমশের মোবিন চৌধুরী এবং শফিক রেহমান বিদেশী দুতাবাস সমুহে সরকার বিরুধী তৎপরতা চালানোর জন্য বেগম খালেদা জিয়া কতৃক অনুমতি প্রাপ্ত ব্যাক্তি ছিলেন। একজনের প্রস্তানের পর গুরু দায়িত্বটি একক ভাবে শফিক রেহমানের উপরই বর্তায়। তাছাড়াও বিএনপির তরুন তুর্কি, তাঁদের হাইকমান্ড তারেক ও খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত ব্যাক্তি হিসেবে পর্দার আড়ালে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন তিনি। বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন শফিক রেহমান খালেদা জিয়ার অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। যাদের পরামর্শ বা মতামতকে খালেদা জিয়া সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করেন তাদের মধ্যে শফিক রেহমান অন্যতম। শফিক রেহমান নিজেও সে কথা জানালেন। গত মার্চ মাসের শুরুতে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে রেহমান বলেছিলেন, 'আমি কৃতজ্ঞ যে, 'খালেদা জিয়া আমার উপদেশ মাঝে-মধ্যে নিয়েছেন এবং সে মোতাবেক অনেক কাজও করেছেন। বিএনপির নীতি নির্ধারণে শফিক রেহমানের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হত, তাঁর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। নিয্যাতন ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে সবিস্তারে স্বীকারোক্তি পয্যবেক্ষন করেই দলটি হতাশ। শফিক রেহমানের দেয়া তথ্য মাহমুদুর রহমানের সামানা সামনি যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে অনেকটা শক্ত প্রকৃতির মাহমুদুর রহমান- এতদিন যাহা অস্বীকার করে এসেছেন তাও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। ' সমুহ বিপদজনক তথ্য প্রকাশের আগাম বার্তায় শংকিত বিএনপি জ্ঞানশুন্য হয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে কিভাবে জনগনের দৃষ্টির আড়ালে নেয়া যায়- তাঁর চিন্তায় বেসামাল হয়ে বিভিন্নভাবে, পেছনে পড়া ইস্যুকে জনসমক্ষে আনতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এফবিআই এর তদন্তে অনেক বিষয় এখন স্পষ্ট হয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায়- তাকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতি হুমকির মুখে ফেলতে চেয়েছিলেন অভিযুক্তরা।' তাছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর 'আইসিটি উপদেষ্টা' হিসেবে- আইসিটি খাতে ব্যাপক 'উন্নতি ও অগ্রগতি' দেশে বিদেশে প্রশংসার জোয়ারে তারেকের ইমেজ ভেসে যাওয়াও আর একটি কারন। খালেদা জিয়া খমতায় থাকাকালিন ২০০১--০৬ ইং সালে তারেক-কোকোর কর্মকান্ড দেশের মানুষ ভাল চোখে নেয়নি। তারেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট, নীতি নৈতিকতা নিয়েও জনগনের মনে যথেষ্ট সংশয় আছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম, উন্নয়ন অগ্রগতির পরিকল্পিত চিন্তাধারা, দেশেবিদেশে গ্রহনযোগ্যতা, রাষ্ট্র পরিচালনার পারঙ্গমতা, সিদ্ধান্ত নেয়ায় স্বচ্ছতা, কাজের প্রতি একাগ্রতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ইঞ্চি পরিমান ছাড় না দিয়ে প্রতিবেশিদের নিকট থেকে দেশের স্বার্থ উদ্ধার, ভীক্ষুক জাতিকে মধ্য আয়ের জাতিতে রুপান্তর, বৃহৎ রাষ্ট্র সমুহকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সাহস ইত্যাদি কারনে খালেদা জিয়া যোজন যোজন মাইল ব্যাকফুটে চলে গেছে সত্য বিএনপি দলকেও অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছে। এমতবস্থায়, তারেককে রাজনীতিতে আগাম পুর্নবাসন যে আশা-ভরসায় করেছিল খালেদা- তার সেই আশায় গুড়েবালি।জয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রাজনীতি করার এমন কোন গুন তারেকের মধ্যে অবশিষ্ট নেই। আওয়ামী বিদ্বেশী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে বেশিদুর যাওয়া যাবেনা, 'যে সমস্ত অভিযোগ এত দিন গোয়েবলসীয় কায়দায় চর্বিত চর্বন করা হত-সেই সমস্ত অভিযোগ ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার বিচক্ষনতায় জনমন থেকে দূর করতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ।' উপসংহারে বলা যায়, জাতির জনকের পরিবারের স্ব-মহিমায় উত্থান -জিয়া পরিবারের সঙ্গত পতনে দিশেহারা বেনিফিসিয়ারী মহল পরিকল্পিত, সুচিন্তিত, সুদুরপ্রসারী চিন্তাভাবনা থেকেই 'জয়হত্যা' পরিকল্পনা করে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশে সদর্বে টিকে থাকার মানষে এবং তাঁদের ভবিষ্যত প্রজর্মের অবস্থান নিশ্চিত করার প্রয়াসে হীন হত্যা প্রচেষ্টা গ্রহন করেছে। জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা বঙ্গরত্ম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন