পরিকল্পনায় বিএনপির তরুন নেতারা জড়িত--হালকা করতে ইলিয়াস,তনু কে সামনে নিয়ে আসতে চায়। ------+------------++----------------+-+------ আসুন বন্ধুরা গত দুই দিনে তিব্র আন্দোলন গড়ে বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে রেহমান শফিকের মুক্তি ও গনতন্ত্র পুনরদ্ধারকারীদের অবস্থান কার কোথায় গিয়ে থমকে আছে, একটু দেখে আসি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুইটা নাম অবশ্যই আমাদের সবার জানা আছে।মশিউর রহমান (যাদু) মিয়া।সাথে আরও একটা নাম যোগ হয়েছিল শাহ আজিজুর রহমান। দুই জনের প্রথম জন ছিলেন অখন্ড পাকিস্তানের পোঁড় খাওয়া বিপ্লবের কর্ণধার,অন্যজন ইসলাম মুখী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন, অর্থাৎ মুসলিম লীগ।মেজর জিয়া ক্ষমতার দৃশ্যপটে এলে প্রথম ব্যাক্তি বিপ্লবের তকমা ছেড়ে জিয়া মন্ত্রী সভার 'সিনিয়র মন্ত্রীর' শফথ নেয় খুনী অবৈধ সরকারে,দ্বিতীয়জন সাক্ষাৎ রাজাকারের পোষাক ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধা জিয়া সরকারের প্রধান মন্ত্রীর শফথ নেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেই ধারা বাহিকতার ব্যত্যায় ঘটেনি।গতকাল ১৮/৪০০১৬ ইং দুই অতি বিপ্লবী কমিনিষ্ট নাস্তিক যোগদান করেছেন ইসলামের ধারক বাহক- জামায়াতে ইসলামের সঙ্গীয় জোট বিএনপি এবং তাঁর নেত্রী খালেদার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে। সেই অনুষ্ঠানেই খালেদা জিয়া প্রকাশ্য আহব্বান জানালেন 'ডান-বাম' ভুলে একই ছাতার নিছে আসার জন্য সবাইকে। আশা করা যায় তাঁর এই আহব্বানে তথাকথিত ইসলামের ধারক বাহকদের চোখে-সদ্য কমিউনিষ্ট বিপ্লবের মহানায়ক, নাস্তিকদের শীরোমনি, সমকামীদের প্রানপুরুষ জনাব ইমরান এইছ সরকার সাড়া দিবেন। নাস্তিক অপবাদ নিয়ে চলাফেরা করা মহা সংকট থেকে রক্ষা পেতে বিএনপি নেত্রীর আব্বানে সাড়া দিবেন-এমনটি আশা করে দেশবাসিও। ডানপন্থি-বামপন্থি ভুলে সবাইকে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার’ আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সদ্য আটক মহামানব সম্পর্কে একটি শব্দও উচ্চারন করেননি। দেশের আলোড়িত ঘটনা, যে ঘটনার জন্য তার আগের দিন অর্থাৎ ১৭/০৪ তারিখে তিব্র আন্দোলন গড়ে তোলার শফথ নিয়েছিলেন। যোগদানের এতবড় মহতি অনুষ্ঠানে সেই কথাটি একবারের জন্যও বলেননি বেগম খালেদা জিয়া। বলা যায়বেমালুম ভুলেই গেছেন তিনি বলতে। বহুগুনে গুনাম্বীত- সর্বদা হাস্যোজ্জল রংবেরং এর চশমা পরিহিত , ৮২ বছর বয়সেও বাবরি চুলের বাহারি ফ্যাশন, রঙিন-ক্ষেত্র বিশেষ বহু রঙের হাফ সার্ট ব্যবহাররে অভ্যস্ত, বেলব্যাট/জোকার টাইপ প্যান্ট পরিধানে তরুন যুবক যুবতিদের উৎসাহ দাতা, অনুকরন যোগ্য মহামানব--যার চোখে মুখে সর্বদাই প্রস্ফুটিত লেডিকিলারের অবয়ব, মুক্তিযুদ্ধের পর নতুন বাংলাদেশের পর্ণো-পত্রিকা প্রকাশের পুরোধা---জনাব রেহমান শফিক সাহেবের মুক্তির আন্দোলনের কথাই বলছি।মাত্র ১২ ঘন্টা ব্যবধানে ভুলে গেলেন আগুনের নেত্রী খালেদা তাঁর প্রীয় মানুষটি পুলিশ রিমান্ডে ডিম থেরাপিতে কি অবর্ননীয় দু:খ্য কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী সরকারের হাতেই আছেন বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।গতকাল সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের এত বছর পরেও তিনি সরকারের কাছে আছে দাবী করতে ভুলেননি, কিন্তু তাঁর দুই দিন আগে রেহমান শফিক আটক হয়েছেন তা বেমালুম ভুলে গেছেন।যদিও তীব্র আন্দোলন করে কারামুক্তি ঘটাবেন বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে তাঁর আগের দিনই কড়া বিবৃতি দিয়েছিলেন। বিএনপির এ নেতা অারও বলেন, 'ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর সারাদেশে আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু সেসময় আমাকে গ্রেফতার করা হলে কিছুদিন পর আন্দোলন থেমে যায়। আমাকে গ্রেফতার করার কিছুদিন পর কেন আন্দোলন থেমে যায়? আরও কিছুদিন আন্দোলন অব্যাহত থাকলে আমরা ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে পারতাম।' একই সুরে কথা বলেন বিএনপির আরেক নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও। লক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে, সদ্য আটক রেহমান শফিকের মুক্তির কথা একবারও উচ্চারন না করে ইলিয়াস আলীকে আবার সামনে নিয়ে এলেন কেন? ইলিয়াস আলীর সহধর্মীনির অবয়বে এত সতেজতা কেন?ইলিয়াস আলী যদি ঘুমই হয়ে থাকেন কেন্দ্রীয় বিএনপিতে তাঁকে পুনরায় অন্তভুক্তি কেন?তবে কি তাঁকেও সরকার ভারতের কোন জঙ্গলে সহসাই ফেলে দিয়ে আসার কোন সম্ভাবনার ইঙ্গিত পেয়েছেন বিএনপির নেতারা।নাকি শফিক রেহমান সাহেবের কু-কীর্তি জনগনের দৃষ্টির আড়ালে নিতে ইলিয়াসকে সামনে আনা হল? এদিকে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ চক্রান্তের মামলায় শফিক রেহমানকে শনিবার গ্রেপ্তারের সময় ঠাকুরগাঁওয়ে ছিলেন ফখরুল। সেখানেই তিনি নিন্দা জানিয়েছিলেন এবং কঠোর আন্দোলনের কর্মসুচি দিবেন ঢাকায় ফিরে বলেছিলেন। ঢাকায় ফিরে রোববার দলের নেতাদের নিয়ে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে শফিক রেহমানের বাড়িতে যান বিএনপির মহাসচিব। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সবসময় যেটা চাইব, ন্যায়বিচার ও ইনসাফ। জনাব শফিক রেহমান এদেশের একজন প্রতিথযশা, প্রবীণতম সাংবাদিক। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন বড় মাপের সাংবাদিক। তিনি বিবিসিতে দীর্ঘকাল কাজ করেছেন। তিনি একজন লেখক, তার লেখা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।” জনাব ফখরুল ঠাঁকুর গাঁও থেকে আন্দোলনের হুমকি দিলেও ঢাকায় এসে ইনসাফ চাইলেন কেন? বড় সাংবাদিক, বড় রাজনীতিক হলে কি রাষ্ট্র ইনসাফ করতে হবে-সাধারন নাগরিক হলে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে? সর্বশেষ খবর হচ্ছে বিএনপির তরুন প্রজর্ম্মের ১২থেকে ১৬ জন নেতা জয় হত্যায় জড়িত হয়ে যাচ্ছে।বিএনপির অন্দর মহলে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।ভারতের বর্ডার নিয়ে খোঁজ খবর শুরু হয়েছে।সরকারের এই মহুর্তে বর্ডার সীল করা উচিৎ। তাঁরা পরিকল্পিত ভাবে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে যে, সাগর-রুনি এবং তনু হত্যার বিচারে সরকার অনিহা দেখাচ্ছে কিন্তু জয়কে পরিকপ্লনা করেছে হত্যার এতেই এত তোড়জোড়ের প্রয়োজন কি?আহম্মকের দল নিশ্চিত ষড়যন্ত্রের সাথে অন্য হত্যার তুলনা করে জয়ের হত্যা পরিকল্পনাকে খাটো করতে চায়।এই সামান্য রাজনৈতিক বিষয়টি বুঝতে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে জয়ের মৃত্যুর সাথে আগামীর বাংলাদেশের স্বার্থ্য জড়িত।জাতির জনকের কন্যাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে দুইবারের মানব ঢালে কমপক্ষে ৭০/৭৫ জন নেতাকর্মী বুকের তাজারক্ত ঢেলে দিয়েছিল।নীজের জীবন বিপন্ন করে জাতির জনকের কন্যার প্রান রক্ষা করার কারনে আজকে জাতি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাচ্ছে।দেশে বিদেশে মাথা উঁচু করে বলতে পারছে আমি বাংলাদেশের গর্বিত নাগরীক বাঙ্গালী। জাতির জনকের গর্বিত পুত্র সজিবের জীবন রক্ষা করে জাতি পাবে আত্ম নির্ভরশীল তথ্য ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ। বাঙ্গালী নীজেদের স্বার্থের কারনেই জয়কে হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত ব্যাক্তিদের ছাড় দিতে রাজী নয়।১৬কোটি মানুষের মধ্যে কাউকে হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে খুনীরা রক্তের নেশা নিবারন না করে জয়কে হত্যা করার পরিকল্পনা যে কারনেই করেছে--তাঁর বিপরীত কর্মের জন্য বাঙ্গালী জয়কে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে চেষ্টা করে যাবে জাতির জনকের প্রতিটি সদস্যের জীবন রক্ষা করতে। জাতির জনকের পরিবার এই দেশকে ভালবেসে,বাঙ্গালী জাতিকে ভাল বেসে স্বপরিবারে আত্মাহুতি দিয়ে প্রমান রেখে গেছেন- তাঁদের চেয়ে বাঙ্গালী জাতিকে আর কোন নেতা ভালবাসতেন না। -আগামী যুগ-যুগান্তরেও এমন ভালবাসার নেতা জাতির ভাগ্যে উদয় হবেনা, এত ভালবাসা উজাড় করে দিয়ে ভালবাসবেন না। তাই বাঙ্গালী জাতি-জাতির জনকের পরিবারের সাথে কাউকে তুলনা করে বক্তব্য দেয়াকে কোন অবস্থায় মেনে নিতে রাজি নয়,মেনে নিবেনা। যারাই তুলনা করার চেষ্টা করবে তাঁদেরকেই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত করবে বাঙ্গালী জাতি। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা বঙ্গরত্ম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন