অবশেষে মানবতা বিরুধী ট্রাইবুনালের ন্যায়নীতি, আদর্শের নিকট দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা মাথা নোয়াতে বাধ্য হল------------- _______________________ বাংলাদেশের মানবতা বিরুধী ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্তের পর থেকেই দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারিরা নড়েচড়ে বসে।সরকার ও একাধিক ফ্রন্ট হাতে নিয়ে কাজ শুরু করে।প্রথম দিকে জনমনে বিচার অনুষ্ঠান করা নিয়ে সন্দেহ দেখা গেলেও ধীরে ধীরে তা কেটে যায়।বলা যায় সরকার তাঁর দৃডতায় মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। ষড়যন্ত্র কারিরা স্বাভাবিক আন্দোলন সংগ্রামে বিচার প্রক্রিয়া বাঞ্চাল করতে না পেরে নাশকতা অরাজগতা, আইন শৃংখলার অবনতি ঘটিয়ে সেনা বাহিনীকে ক্ষমতা দখল করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। তাও ভেস্তে যাওয়ার পর আপাত: রনে ভঙ্গ দিয়ে নিয়মাতান্ত্রিক কর্মসুচি দিয়ে রাজনীতি করবেন এইরুপ ঘোষনা দিয়ে বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। সাধারন মানুষ-যাদের সন্দেহ ছিল বিএনপি যুদ্ধপরাধিদের বাঁচানোর জন্য নাশকতা করেনি তারাও শত ভাগ বিশ্বাসে নিতে পেরেছেন খালেদা জিয়ার কর্মসুচি ছিল নিছক সহিংসতা সৃষ্টি করে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি।দলটির একান্ত ইচ্ছা সত্বেই এই পথে পা বাড়িয়ে শত শত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে দেশের সম্পদ বিনষ্ট করেছে। তাঁদের বিদেশী লবিং অত্যান্ত শৃংখলা বদ্ধ এবং শক্তিশালী, সুদুর প্রসারি ছিল।প্রথমাবস্থায় বিভিন্ন দেশ থেকে আন্তজাতিক সংস্থার ভাড়াটে কিছু কর্মকর্তা এসে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল।সরকারের অনড় অবস্থার কারনে শেষাবদি তাও সফল হয়নি।প্রসিকিউশনের দুর্বলতা নিয়ে নানা সময়ে নানা কথাবার্তা উঠছে।অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করে বলতে চেয়েছে। প্রসিকিউশনের সীমাবদ্ধতা যে একেবারে নেই তা নয়। প্রসিকিউসনের জন্য ভালো কোনো রিসার্চ সেন্টার নেই, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি নেই, দরকারি অনেক বইও নেই। তা সত্ত্বেও প্রসিকিউসন বসে থাকেনি এগিয়ে গেছে। এই ক্ষেত্রে প্রসিকিউসন বিভিন্ন আন্তজাতিক আদালতের মামলা পরিচালনার ধরন, রায়ের দৃষ্টান্ত, সাক্ষিদের বিশ্বাসযোগ্যতা মাপার ধরন ইত্যাদি অনুসরন করে অনেকটা ধারনা লাভ করেছে। ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল যখন কাজ শুরু করে, তাদেরও অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল।বাংলাদেশের এত সমস্যা, নানা প্রতিকূলতা এবং রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছে, এটা দেশবাসির বিবেচনায় গোটা পৃথিবীর জন্য একটা বিরাট ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক মান নিয়ে প্রথমদিকে যতটা সমালোচনা হয়েছে, এখন কিন্তু তা নেই। সেই সমালোচকদের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালিন বিভিন্ন দেশের সিনেট সদস্য, নীতিনির্ধারক, বিশেষ দুত বাংলাদেশ সফর করেছেন।তাঁরা তাঁদের অভিমত খোলাখোলিভাবে সংবাদ মাধ্যমকে দিয়েছেন।সব মহলের সার্বিক অভিমত পয্যালোচনায় দেখা যায় বিচার অত্যান্ত সুষ্ঠ, আইন নীতি রীতি অনুসরন করেই হচ্ছে। "যুদ্ধাপরাধ-বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত স্টিফেন যে য্যাবও ঢাকায় এসে বলেছেন, "আমাদের বিচার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। " বিচারকরা অনেক ভালো কাজ করছেন।"সবচেয়ে বড় কথা, সত্য আমাদের পক্ষে। বিদেশীরা যে বিষয় গুলীর প্রতি বেশী আগ্রহশীল এবং আস্থাম্বিত হয়েছেন তাঁর মধ্যে অন্যতম বিষয় হচ্ছে,"ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল থেকে শুরু করে হেগের জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনাল ইত্যাদির চেয়ে বাংলাদেশের গঠিত ট্রাইব্যুনালের আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। ওই সব আদালতের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালের কাঠামোগত পার্থক্য হল, বাংলাদেশ নীজের আইনে অর্থাৎ ডমেস্টিক, দেশীয় আইনে বিচার হচ্ছে। বাংলাদেশের বিচারিক প্রক্রিয়া অন্য যে কোনো যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচারের চেয়ে অনেক মানসম্পন্ন। প্রথমত, বিচার শুরু হয়েছে অপরাধ সংঘটনের চল্লিশ বছর পর। সুতরাং এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য-উপাত্ত হারিয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া অনেক দুষ্কর। সে সব কারণে এই বিচার অসম্ভব সম্ভব করে তোলার মতো ব্যাপার। নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও বাংলাদেশের মানবতা বিরুধী বিচার ট্রাইবুনাল বিচার কায্য চালিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্ন দেশের অনেক আদালতই কিন্তু সেভাবে বিচারকাজ এগিয়ে নিতে পারছে না। কম্বোডিয়া, সিয়েরালিয়ন ইত্যাদি দেশের বিচার শুরু হতেই বছরের পর বছর সময় লেগেছে। যেখানে কম্বোডিয়ার প্রথম মামলার কাজ শুরু করতে ১০ বছর লেগেছে, বাংলাদেশ ছয় বছরে ২০টি মামলার রায় দিয়েছে। সে দিক থেকেও বাংলাদেশের অর্জন অনেক বড়। অবশ্য বিশ্বের অন্য কোন দেশের বিচারিক কায্যক্রম নিয়ে ষড়যন্ত্র নেই,অপরাধ সংঘনের বিষয় সবাই একমত এবং বিচারিক বিষয় নিয়েও একমত।বাংলাদেশের এই প্রেক্ষাপটে ভিন্নতা আছে।এক শ্রেনী চায়না মুক্তিযুদ্ধের সংঘটিত মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচার হোক। বিভিন্ন উপায়ে মহলটি শুরু থেকেই বাধা দিয়ে আসছিল।যুদ্ধপরাধীদের বাঁচাতে মহলটি আন্তজাতিক ভাবেও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে প্রথম থেকেই।'৭৫এর পট পরিবর্তনের পর ট্রাইবুনাল ভেঙ্গে দিয়ে মানবতা বিরুদীদের জেল মুক্ত করে দিয়েছিল মহলটি। বিশ্বের কোথাও যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামিন দেওয়া হয় না কিন্তু বাংলাদেশে বয়সের বিবেচনায় জামিন দিচ্ছে। ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে কিন্তু আপিলের সুযোগ ছিল না। আমাদের এখানে আছে। আছে শুধু নয়, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ আছে; এমনকি আপিল বিভাগের রায় রিভিউয়েরও সুযোগ রাখা হয়েছে।গোলাম আযমের মৃত্যুদণ্ড তুল্য অপরাধ ছিল। আদালত তার বয়স এবং স্বাস্থ্য বিবেচনায় যাবজ্জীবন দিয়েছেন।এক্ষেত্রে মানবিক দিকটিও বাংলাদেশের আদালতে গ্রহন যোগ্যতা পাচ্ছে,যাহা কোন দেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারে বিচার্য্য বিষয়ের মধ্যে আনার প্রয়োজনীয়তা আছে বলেও মনে করেনা। যেসব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী পলাতক রয়েছে, দেশের বাইরে রয়েছে, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বিষয়টি সরকার সময়ে সময়ে বলছে কিন্তু কায্যকর হচ্ছে বলে মনে হয়না। কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ শুরু করলে এর একটা সুরাহা সহজে হতে পারে। যে সমস্ত দেশ মৃত্যুদন্ডের বিরুধী সেই সমস্ত দেশে পালিয়ে থাকা অপরাধীদের ফিরিয়ে আনা বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলার রায় হয়েছে। কয়েকটির রায় কার্যকর হয়েছে। অনেকগুলোর বিচারকাজ চলছে। এতে অনেকের জীবন বিপন্ন হয়েছে সত্য বিচার কাজ বন্ধ হয়নি। সরকার এই বিচারকাজ চালিয়ে প্রমান করতে পেরেছেন-মুক্তিযোদ্ধারা মারা যেতে পারে কিন্তু তাঁদের যে চেতনায় যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন সেই চেতনার মৃত্যু হতে পারেনা।চল্লিশ বছর পরে হলেও সেই সত্যই প্রতিষ্ঠিত হল। মৃত্যু মানে কি চেতনারও মৃত্যু? আদর্শের ও মৃত্যু? অবশ্যই নয়। সময়ের ব্যবধানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে, অন্যায়ের পক্ষে যত শক্তিধরের অবস্থানই থাকুকনা কেন--- রনে ভঙ্গ দিয়ে গর্তে লুকাতেই হয়।বর্তমানে আর মানবতা বিরুধী বিচার নিয়ে বিদেশীরাও মুখ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরেও মেরুকরন ঘটেছে। হম্বিতম্ভি ছেড়ে অনেকেই বিতর্কীত বক্তব্য দিয়ে পানি ঘোলা করতেও চেয়েছেন। জনগনের বিচারের পক্ষে অনড়তায়- মুখে কুলুপ এটে স্বাভাবিক রাজনীতির অংশ, স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে খেই হারিয়ে, বিভ্রান্তকর অবস্থায় কোন রকম অস্তিত্বের জানান দিয়ে টিকে আছে। বর্তমানে ছয়ধাপের ইউপি নির্বাচনের দুই ধাপের ফলাফলে স্বতন্ত্রের চেয়ে চার গুন পিছনে অবস্থান নিয়ে -- শক্তিশালী বিরুদী দলের খেতাব থেকেও বঞ্চিত হওয়ার আশংকার জম্ম দিয়েছে। ষড়যন্ত্রের রাজনীতির এই দশাই হয়। মুসলিম লীগের পতনের থেকে শিক্ষা না নিয়ে দলটি অস্তিত্ব সংকটের ভীতিতে গর্তেই লুকিয়ে গেছে। ____________________________ জয়বাঙ্গলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা বঙ্গরত্ম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন