স্থানীয় সরকার নির্বাচন,দলীয় মনোনয়নে,গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেয়ার সাহষী উদ্যোগ।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় মনোনয়নে-বর্তমান সরকারের গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর সাহষি উদ্যোগ।

>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>


সরকার স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচন নির্দলীয় পদ্ধতিতে হওয়ার নিয়ম বাতিল করেছে। স্থানীয় নির্বাচন পদ্ধতির নতুন আইন তৈরি করেছে। সেই প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকারের আইনের সংশোধন করেছে মন্ত্রী সভা। মন্ত্রী সভায় সংশোধিত আইন সংসদে পাস হলে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীরা নিজ নিজ রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত দলীয় প্রতীকও মনোনীত প্রার্থীরা ব্যবহার করবেন। এ ধরনের আইনের সংশোধনের বিষয়টি মন্ত্রী সভায় অনুমোদনের পর পরই নানা আলোচনা সমালোচনায় মুখর রাজনৈতিক অঙ্গনের ব্যক্তিরা এবং বিশ্লেষকরা।রাজনৈতিক দল সমুহ বহু অভিধায় ভুষিত করার চেষ্টা করছেন ক্ষমতাসীন দলকে। দুই প্রধান শাসক দল বিষয়টি দেখছে নিজেদের দলীয় স্বার্থের লাভ-লোকসানের দিক বিবেচনার দিক বিবেচনায় নিয়ে। দলীয় নির্বাচনের পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে সর্বজনীনভাবে গণতন্ত্র এর কতটুকু লাভ বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা কিন্তু রাজনৈতিক দল গুলী মোটেই জনগনকে বিশ্লেশন করে বলছেন না।যদিও দল গুলীর নৈতিক দায়ত্ব জন্সম্পৃত্ত বিষয়াদি নিয়ে যখনি কোন প্রশ্নের উদ্রেক হয় তখনি ইহার ভাল মন্দ বিশ্লেষন পুর্বক জনগনকে ধারনা দেয়া।যেহেতু দেশের মানুষ পুর্বাপর দলগুলীর উপরই ভাল মন্দের দিকনির্দেশনার আশায় থাকে। ক্ষমতার বাইরে থাকা এক সময়ের শাসক দল যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছে তাতে বোঝায় যায়, সংশোধনীটি কায়েমী স্বার্থে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যেই সরকার তৈরি করেছে। এ ছাড়া তাদের বক্তব্যে এটা বোঝা যায় যে, তারা বিরোধী দলে থাকার কারণে সংশোধনীর সুফল ভোগ করতে পারবে না। বর্তমানে এই আলোচ্য বিষয়টি স্থান পেয়েছে কথিত সুশীলদের টকশোগুলোতে। ২০ দলীয় জোট বলছে, এটা নাকি বাকশাল কায়েমের একটি ব্যবস্থা। তবে ২০ দল বাকশাল সম্পর্কে যা বলছে তা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যে কোন মানুষই তা অনুধাবন করতে পারবে।আর যদি সত্য সরকার বাকশাল কায়েমের উদ্যোগের জন্যই এটা করে থাকে তাহলে বলবো সোনায় সোহাগা।বাকশাল শাষনে যদি দারিদ্রতা কাটিয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া যায় তবে  বিরুদীতাকারীরাই দেশ ও জনগনের শত্রু নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।দেশ বিদেশের সবাই জানে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক নিয়মনীতির সঙ্গে বাকশালের কোন অংশের কোন মিল নেই।
তাই যারা আজকের সরকারের নির্বাচনসহ রাজনৈতিক গৃহীত কৌশলকে বাকশাল বলছেন তারা বাকশালের সংজ্ঞাই জানেন না। কারণ বাকশাল ছিল একটি সর্বজনীন মৌলিক গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে বাকশাল গঠিত হয়েছিল।দেশের সীমীত সম্পদকে সর্বচ্ছ কাজে লাগিয়ে দ্রুত স্বাবলম্ভি হওয়ার নয়া এক বিজ্ঞান ভিত্তিক কৌশল। তাই কোন একনায়ক বা স্বৈরপদ্ধতির সরকারকে যারা বাকশাল বলেন তারা আগে বাকশালের সংজ্ঞা জেনে নেয়া উচিৎ।জাতির জনকের সর্বশেষ কয়েকটি ভাষন এবং তাঁর সময়ের উদ্যোগ গুলী সম্পর্কে জেনে  নেয়া উচিত। এখানে বাকশালের বিষয়টি আলোচ্য বিষয় নয়, তবে যারা ধান ভানতে শিবের গীত গান তাদেরকে উদ্দেশ্য করে উপরোক্ত কথাটি সামান্য ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন মনে করে উল্লেখ করলাম মাত্র। আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এতে যে রাষ্ট্রীয় ভাবে এবং জাতিগত ভাবে শঠতা,মিথ্যা আর দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল হিসেবে নির্দলীয় শব্দটি ব্যাবহার করেছেন এযাবৎ আমাদের চতুর রাজনৈতিক দল সমুহ, তা আমার একাদিক লিখায় উল্লেখ করেছি ইতিপুর্বে।এই যাবৎ অতীতে নির্বাচনে অংশ নেয়া একজনও প্রার্থীও পাওয়া যায়নি যাঁর রাজনৈতিক পরিচিতি নেই।আরো আক্ষেপের বিষয়টি হচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকে এই পয্যন্ত কোন স্থানীয় নির্বাচনে ভোট ডাকাতি,মানূষ খুন,ব্যালট চিনতাইয়ের মত একটা নেতিবাচক ঘটনার দায় দলগত ভাবে কাঁধে তুলে নিয়েছেন।ভাল যা কিছু তা ক্ষমতাসীন দলের-মন্দ যা কিছু সব নির্বাচন কমিশনের অথবা সরকারের।এই রীতি নীতিই  চলে আসছিল আঘোষিত ভাবে প্রত্যেক সকারের সময়ে।একটা নির্বাচনের খবর কেউওই দিতে পারবেন না, যে নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা অযোগ্যতার চাইতে রাজনৈতিক পরিচিতি প্রাধান্য পায়নি।প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয়টা ভোটারদের কাছে যোগ্যতার মাপকাঠির বিষয় হিসাবে উপস্থাপিত হয়েছে প্রতিটি নির্বাচনে। তাই এই নির্বাচনটা দলীয় ভিত্তিতে করাটাই যৌক্তিক হবে আমি মনে করি। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরের প্রতিনিধি নির্বাচন দলীয় ভিত্তিক অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের স্থানীয় সরকারের কর্মপরিধি এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার যতটুকু ক্ষমতা আছে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারগুলোর তা নেই।
 বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বলি আর কেন্দ্রিয় সরকার বলি সব সরকারই আমলাদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে এযাবৎ কাল।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোন সরকার এই গুনে ধরা সমাজকে ভেঙ্গে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়নি।বৃটিশদের রেখে যাওয়া পরাধিনতার গ্লানির আইন দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ চলতে পারে না।আগেকার লেখাপড়া ছিল কেরানী সৃষ্টির শিক্ষা,তা কি পরবর্তিত হয়ে ধীরে ধীরে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় রুপান্তরীত করা হচ্ছে না। যাঁরা এই পরিবর্তনে বাধা দিয়ে সমাজকে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে চায় তাঁরাই কায়েমী স্বার্থবাজ।তাঁরা কখনই চাইবে না এই জাতি সর্বক্ষেত্রে অগ্রসর হয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। আমলারা সর্বসময়ে তাঁদের  দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়,আমলাদেরও সুবিধা তাঁদের নিয়ন্ত্রন করা।আমি তাঁদের সবিনয়ে জিজ্ঞাসা কতে চাই গনতন্ত্রে কি আমলাতন্ত্রের স্থান আছে।আমলারাই যদি দেশ পরিচালনা করতে পারতেন তবে এত রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন কি,এত সম্পদ হানিরই বা প্রয়োজন কি?
 বর্তমানের স্থানীয় সরকারের যে সমস্ত বিধিবিধান বলবৎ আছে তা সম্পুর্ন আমলা নির্ভর।নির্বাচিত প্রতিনীধিদের পরিষদের তহবিল থেকে একটা কালভার্ট নির্মানের কোন ক্ষমতা নেই।
  স্থানীয় পরিষদের ক্ষমতা কি ভাবে বাড়ানো যায়,কোন পদ্ধতি অবলম্ভন করে স্বশাষিত করা যায় এই নিয়ে কোন কথা না বলে অধিকতর গনতান্ত্রিকতার দিকে ধাবিত কোন বিষয়ে নিয়ে পানি ঘোলা করার কারন কি তা উদ্ভুদ দেশের জনগন সবাই না জানলেও অনেকের বোধগম্যতার মধ্যেই আছে।নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ফর্মুলা না দিয়ে এবং এই বিষয়ে যথাযথ আইন পাশ করার আন্দোলন না করে পারিবার রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে দলের অস্তিত্ব রক্ষা করাই দায় হয়ে দেখা দিয়েছে।সব বিষয় না না বলার ব্যাতিক পরিহার করা এখন সময়ের দাবী, এই সামান্য বিষয়টুকু যে দেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে নেই, দুর্ভাগ্য জাতির-- তাঁদের দ্বারাই এ দেশ বরাবরই শাষিত হয়ে আসছে।



 

সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ এই প্রতিটি স্তরের স্বউদ্যোগে স্থানীয় সরকারের কাজ করার তেমন কোন ক্ষমতা নেই। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট বরাদ্দ এবং অর্থ ব্যায়ের বিষয়টি নিয়েও  মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। নির্দেশনা প্রদানের ক্ষেত্রে আমলারা বড় ভূমিকা পালন করেন।এই বিষয়গুলী জনসমক্ষে তুলে ধরা বিরুধি দলের নৈতিক দায়িত্ব।জনগন সব সময়ে চায় তাঁদের স্বার্থ নিয়ে রাজনৈতিক দল সমুহ কথা বলুক।তা না করে বাকশালের গন্ধ খুঁজে বেড়ান তাঁরা।বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার মত মেধা সম্পর্ন্ন নেতা বাংলা দেশে হাজার বছরেও আর জম্মাবে কিনা জানিনা।ইংরেজ আর পাকিদের শোষনের আইন পরিবর্তন করে স্বাধীন দেশের উপযোগী আইন তৈয়ার করার সাহষ যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেই তাঁরা বাকশালের সমালোচনা করে।ঘৃনা আর দুখ্য প্রকাশ করা ছাড়া আর কি বলার আছে বলুন।
 স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করে সকল স্তরে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনের অনুমোদিত খসড়ায়। প্রশাসক যদি জন প্রতিনিধিত্বমূলক স্থানীয় সরকার চালাতে পারে তাহলে দেশ শাষন সেই প্রসাশকেরাই করুক।গনতন্ত্রের সজ্ঞার সাথে এবং ৭২এর সংবিধানের পরিপন্থি বিধানটি হতে পারেনা,যদি আওয়ামী লীগ সত্যিকারের গনতান্ত্রিক শাষন জাতিকে উপহার দিতে চান তবে বিধানটি অবশ্যই বাতিল করা প্রয়োজন।
স্থানীয় সরকারের আইনটি পূর্ণ গণতান্ত্রিকভাবে এখনি অনুমোদন করে রাখা দরকার। এই পদ্ধতির ফলে গণতান্ত্রিক রাজনীতির অনুশীলন দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পৌছে যাবে, আর তৃণমূলের অনুশীলিত রাজনীতির প্রতিফলন ঘটবে জাতীয় স্তরে। তাই তৃণমূলের এই গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং আমলাতান্ত্রিকতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করার এখনি সময়।
স্থানীয় সরকার নিয়ে ভোট কারচুপির আশঙ্কা অনেকের।  দেশের ইউপিসহ সকল স্থানীয় সরকার আমলাদের কব্জায় আগেই উল্লেখ করেছি। প্রশাসনিক রশিটাও থাকে আমলাদের হাতে যে কোন সময় টান দিলে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা তৎক্ষনাৎ কপোকাত। বর্তমানে আমলরা রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিতে সিদ্ধহস্ত তারাও ভালো করে জানে ক্ষমতাসীন দলের চাটুকারিতা না করলে ওএসডি হতে হবে, তাই আমলারা রাজনৈতিক কর্মীর চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনীতির বন্দনা গেয়ে থাকেন।মনের ভিতরে যাহাই থাকুক না কেন বাধ্যগত রুপ ধারন করতে তাঁদের সময় লাগেনা।
আমলাদের বন্দনার প্রভাব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পড়তে পারে সেই আশঙ্কায় এখন ভুগছে রাজনৈতিক দলসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচন ব্যবস্থাটা নিয়ন্ত্রণ করবে প্রশাসন আর এই প্রশাসনে কর্মরত আমলারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের বন্দনায় লিপ্ত। তাই ক্ষমতাসীন নেতারা যাদের মনোনয়ন দিবেন স্থানীয় সরকারের প্রার্থী হিসাবে তখন আমলরা ঐ মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে যে কোন পন্থা অবলম্ববন করতে পারেন। এই যদি মনের ভিতর থাকে আমলা নির্ভরতা কমানোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়ে রাজ পথে না থেকে, সংবাদ সম্মেলন করা কেন?কোন দেশের সকারকে সমালোচনা করে, বিবৃতি দিয়ে, সেমিনার করে, সংবাদ সম্মেলন করে দাবি মানানোর উদাহরন আছে বলতে পারবেন আমাদের বিরুদি রাজনৈতিক দল?

এখানে প্রশ্ন আসতে পারে ভারতেও আমলা রয়েছে সেখানেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় তাদের বেলায় তো এরকম ঘটনা ঘটে না। ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা এবং একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা প্রশাসনের কাছে দায়বদ্ধ নয় বরং নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রশাসন এই সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রশাসনকে কাজে লাগাতে পারে তবে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনের সময়ও কর্তৃত্বটা প্রশাসনের হাতে থেকে যায়। তাই নির্বাচনের স্বচ্ছতা অবাধ নিরপেক্ষতা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠে। দেশের নির্বাচনগুলোতে প্রশাসনের কর্মকর্তারাই রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সেই দায়িত্ব দেয়া হয় না। সরকার পরিচালনার জন্য প্রশাসনকে অবশ্যই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্যই নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে হবে। রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ প্রশাসনের আমলারা বাস্তবায়ন করে থাকে। স্থানীয় সরকারসহ যে কোন নির্বাচন চলাকালীন সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত করার প্রয়োজন। নির্বাচনের সময় সংশ্লিষ্ট সবাই তাদের কাজের জন্য কমিশনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে ২০ দলীয় জোট হরতাল অবরোধ করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ এবং কয়েকশ' মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, দেশের প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে সম্ভব নয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন স্বাধীন এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের। বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন চলাকালীন সময়ের জন্য নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। মুলত আজ হোক বা কাল হোক নির্বাচন কমিশনকে ভারতের আদলে বা বৃটেনের আদলে সম্পুর্ন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।তবে এই কাজ অত্যান্ত দুরহ,আমলা নির্ভর দেশে সাহষি নেতা ছাড়া কেউ এই ঝুঁকি নিতে চাইবে না।দেশরত্ম আশা করি ধীরে হলেও সেই দিকেই আস্তে আস্তে ধাবিত হচ্ছেন ধরন দেখেই বুঝে নিতে বিজ্ঞ রাজনীতিবীদদের অসুবিধা হয়নি।
 বর্তমানে দেশের রাজনীতি মহল বিশেষের হাতে চলে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। দেশের সুশীল সমাজসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কাছে যখন রাজনীতি চলে যাবে তখন আর জনকল্যাণ বলে কিছু থাকবে না, তা ব্যক্তির লাভেই ব্যবহৃত হবে। রাজনীতি থেকে লাভ পেতে তখন ব্যবসায়ীরা ছুটে আসবে। বর্তমানে এ ধরনের লক্ষণ প্রতীয়মান হচ্ছে। দশম জাতীয় সংসদের শতকরা ৭০ ভাগ সাংসদই ব্যবসায়ী। তাই অনেকেই শঙ্কায় আছেন দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচন হলে সেখানেও ব্যবসায়ীরা ঢুকে যাবে। জাতীয় নির্বাচনের সময় দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পেতে তদবির টাকা-পয়সা দেয়া-নেয়াসহ নানা কথা শোনা যায়। গণমাধ্যমগুলোতেও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় মনোনয়ন বাণিজ্যর কথা। দেশের ভোটারদের কাছে মূলত দুটি প্রতীকই ব্যাপকভাবে পরিচিত। তাই জাতীয় নির্বাচনে ব্যক্তির চেয়ে প্রতীক অধিক গুরুত্ব বহন করে। এই কারণে দেখা যায় ভিন্ন পথে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী অর্থাৎ যারা কোনদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না তারা মনোনীত হয়ে যান। আর বিকল্প পথে মনোনীত হওয়ার পরও দেখা যায় প্রতীক পরিচিতির কারণে বিজয়ীও হয়ে যান। ফলে দেখা যায়, প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন পেতে অর্থ ব্যয় করতে ব্যবসায়ীরা ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা দ্বিধাবোধ করেন না। স্থানীয় সরকারের মনোনয়নের বেলায়ও অনুরূপ ঘটনাটি ঘটবে। কারণ যারা অর্থ ব্যয়ে জাতীয় স্তরের জন্য মনোনীত হয়েছেন এবং প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের হাতেই থাকবে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি মনোয়ন দেয়ার ক্ষমতা, তখন তারা স্থানীয় স্তরে মনোনয়ন প্রদান করে নিজেদের অর্থ ব্যয় পুষিয়ে নিয়ে আগামীর মনোনয়ন প্রাপ্তির অর্থ জমা করবেন। এ ধরনের আশঙ্কা করছেন দেশের অনেক মহল। তাই এই আশঙ্কাকে একেবারেই অমূলক বলে উড়িয়ে দেয়া ঠিক না। জাতীয় স্তরের মনোনয়ন পদ্ধতির প্রভাব পড়বে স্থানীয় স্তরে এটাই স্বাভাবিক। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে এখনো গণতন্ত্রের চর্চা যথাযথ ভাবে নেই। আগামী স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃনমুল থেকে গনতান্ত্রিক চর্চায় নেতা কর্মীদের অভ্যস্থ করার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিজ্ঞরা মনে করেন।এই ধারাকে সাফল্যজনক ভাবে সামনে এগিয়ে নিতে হলে সকল দলের আনন্দঘন অংশ গ্রহন পুর্বশর্তাধীন  বলে আমি মনে করি।
 যেহেতু দলগুলোর নেতৃত্ব বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির কাছে কুক্ষিগত তাই প্রতীকগুলোও তারা নিয়ন্ত্রণ করেন_,যেমনি করেন টেন্ডার বাজির মত আরো অনেক কিছুই।নির্বাচক মন্ডলীর হাতে প্রার্থী বাছাইয়ের অধিকার না দিলে মনোনয়ন বানিজ্য হবে সমালোচনা করার জন্য বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নাই।নীজ নীজ দলের অভ্যন্তরীন প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া যে দল  যত স্বচ্ছ ভাবে করবে,  সেই দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেও ধারা অব্যাহত রাখবে,এই বিশ্বাস জনগন স্থাপন করবে আশা করা যায়। তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিকাশ ঘটাতে পারলে দলগুলোর নেতৃত্ব ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না।দলীয় আদর্শের বিস্তৃতি ঘটবে দ্রুত আর দলীয় আদর্শের বিস্তৃতির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র এর চর্চার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে স্বাভাবিক গতিধারায়। বর্তমানে সকল রাজনৈতিক দলে ব্যক্তির স্তূতি প্রচারিত হয় দলের আদর্শটা এখানে মুখ্য থাকে না। তাই ব্যক্তির পছন্দের নির্ভরতায় গড়ে ওঠে জেলা উপজেলা ইউনিয়ন ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ের নেতৃত্ব। এ ধরনের রাজনৈতিক চর্চা রোধ করতে হলে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় আদর্শের রাজনীতির বিকাশ ঘটাতে হবে।স্থানীয় সরকারের নির্বাচন খুলে দিতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক গনতন্ত্রের ভিত্তি রচনার বন্ধ দরজা।
সকল রাজনৈতিক দল সকল সময়ে বলে থাকে,প্রাতিষ্ঠানিক গনতন্ত্রের বিষয়টি।প্রত্যেক দলের গঠন্তন্ত্রেও বিষয়টির উল্লেখ আছে যথারীতি।বহুদলীয় গনিতন্ত্রের কথাও বলা হয় জোর গলায়।স্থানীয় সরকার কি প্রতিষ্ঠান নহে?দল ভিত্তিক নির্বাচন কি বহু দলীয় গনতন্ত্রের সংজ্ঞায় পড়েনা?অনেক সমালোচকের বলতে শুনা যায় বা লেখনিতে প্রকাশ পায়,এখনও বাংলাদেশে স্থানীয় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করার সময় হয়নি।তাঁদের প্রতি আমার সবিনয় জিজ্ঞাসা কত বছর বয়স হলে দেশের গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার কথা গনতন্ত্রে আছে।দেশের বাল্যকাল পেরিয়ে যুবকত্ব ও শেষ হয়ে এখন মধ্যবয়স পার করছে,তাঁরপরও গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রতিস্থাপন করার সময় হয়নি।আপনারা পারেননি বলে আর কেউ সাহষ করবে না? এই সমস্ত মৌলিক পরিবর্তন করার জন্য বিচক্ষন সাহষি নেতৃত্বের প্রয়োজন,আপনাদের নেই বলে আর কেউ সাহষ করে করতে পারবে না?
মুক্তবাজার অর্থনীতির জন্য সারা পৃথিবী একযোগে আমেরীকার প্ররোচনায় সংগ্রাম করেছেন।মুক্তবাজারের বিরুদ্ধে কথা বললেই কমিউনিষ্ট বলে গালি দিয়েছেন।মুক্ত বাজারের সুফল তড়িৎ গতিতে পুজিপতি সৃষ্টি,তাও কি জানা ছিল না?বাড়ীর পাশের আবুলের ছেলে রাতারাতি টাকার মালিক হয়ে গাড়ী হাঁকিয়ে বাড়ী আসে, তা এখন সহ্য হয়না।মুক্তবাজারের সুফল ভোগ করার জন্যইতো জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যা করলেন।এখন ব্যাবসায়ীরা রাজনীতি করা কেন সহ্য করবেন না।মুক্ত বাজার অর্থনীতির ধারাইতো নব্য কোটিপতি সৃষ্টি হওয়া,পুজিপতি সৃষ্টি হওয়া।ব্যাবসায়ীরা শুধু রাজনীতি কেন,গোটা দেশ গিলে খাওয়ার সময় আর বেশি দেরী নেই।বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থায় টাকা যার ক্ষমতা তার।সুতারাং হায় হুতাশ করে লাভ নেই,চলমান পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার জন্য সকলে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করাই হবে উত্তম।স্থানীয় সরকার ব্যাবস্থাকে আমলা মুক্ত করে, সার্বভৌম করার জন্য আন্দোলন করাই হবে জনগনের পক্ষে রাজনীতি করার কৌশল।নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন,স্বক্ষমতাবান,সর্বময় কতৃত্বের অধিকারি করার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করার প্রস্তুতি নেয়াই হবে আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসুচি।তবেই জনগন আপনাদের গ্রহন করার চিন্তা করবে,নচেৎ নেতৃত্বতো যাবেই,জনরোষের মুখে পড়ে কখন জীবন হানী ঘটার মত পরিস্থিতির উদ্ভব হয় বলা যায়না।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন