সাধারণ ছেলেটির চলনবিল থেকে বিশ্বজয়ের অসাধারণ গল্প’_____________ প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০১৬(কপি পেষ্ট বিবার্তা) খোন্দকার আল আনিম পরশ :রচয়িতা _________________________________ জুনাইদ আহমেদ পলক। বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষিত ও সচেতন তরুণদের কেউ তার কথা জানেন না বা শোনেননি অথবা চেনেন না এমন কাউকে পাওয়া যাবে কিনা সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট। পাঁচ ভাই-বোনের প্রত্যেকেরই নাম চোখের প্রতিশব্দ দিয়ে, যেমন- নয়ন, মণি, আঁখি, দৃষ্টি ও পলক। বাবা মরহুম ফয়েজ উদ্দীন ছিলেন একজন কৃষক। পাশাপাশি ছিলেন মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন নাটোরের সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মা জামিলা ফয়েজ একজন গৃহিনী। ১৯৮০ সালের ১৭ই মে নাটোর জেলার চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় জন্মগ্রহন করেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন সিংড়া দমদমা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়েই গড়ে তুললেন দূর্দম ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান। এখান থেকেই মূলত শুরু হয় তার সংগঠন কেন্দ্রিক পথচলা। এলকার সকল কিশোরদের সংগঠিত করে খেলার মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট আর ভলিবল আয়োজন করা ছিল তার প্রায়শই কর্মকাণ্ড। শৈশব-কৈশোরে তিনি বেড়ে উঠেছেন ঘুড়ি উড়িয়ে, কখনো মাছ ধরে আবার কখনো বা চলনবিলে সাঁতার কেটে। মাটি ও মানুষের সাথে তার নাড়ির সম্পর্কটা খুব ছোটবেলা থেকেই। বাবা মরহুম ফয়েজ উদ্দিনকে দেখেছেন; কিভাবে তিনি মিশে যেতেন সাধারণ মানুষের মাঝে, কিভাবে মানুষের সমস্যা সমাধানে উজাড় করে দিতেন নিজেকে। বাবার কাছে গল্প শুনে খুব অল্প বয়সেই বঙ্গবন্ধুকে নিজের মধ্যে ধারণ করে ফেললেন তিনি। যেন বঙ্গবন্ধু তার কাছে রুপকথার গল্পের মতো। ছাত্রজীবন থেকেই তুখোড় মেধাবী পলক বিতর্ক, আবৃত্তি ও উপস্থিত বক্তৃতা করতেন। সম্পৃক্ত ছিলেন রোভার স্কাউটের সাথে। ১৯৯৪ সালে বয়েজ স্কাউট নাটোর জেলা দলের নেতৃত্ব দেন পলক। ১৯৯৫ সালে সিংড়া দমদমা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাঁচ বিষয়ে লেটার নম্বরসহ স্টার মার্ক নিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৭ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন পলক। এরই মধ্যে তার বাবা ইন্তেকাল করেন কিন্তু থেমে থাকেননি পলক। বাবাকে হারিয়ে কঠিন জীবন সংগ্রামে বাস্তবতাকে সঙ্গী করে শুধুমাত্র স্থানীয় রাজনীতির প্রতি প্রবল ঝোক থাকার কারণে ও মা এবং এলাকার মানুষের পাশে থাকার কথা চিন্তা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে এলাকায় ফিরে এসে ভর্তি হন বাড়ীর পাশের গোল-ই-আফরোজ সরকারি কলেজে। মূলত সেখান থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে জোড়ালো উত্থান শুরু হয় পলকের। ১৯৯৯ সালে কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে ভিপি নির্বাচিত হন। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন মহান জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন। ছাত্র জীবনে যখন ঢাকায় যেতেন তখন শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবনের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকতেন। নানা চড়াই-উৎড়াই পার করে একে একে উপজেলা ও জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিজের শক্ত অবস্থান করে নেন পলক। যার পেছনে বিরাট অবদান ছিল তার এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের। তিনি ২০০১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এমএসএস এবং ২০০৩ সালে ঢাকা ন্যাশনাল ল কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করে প্রথমে নাটোর জর্জ কোর্টে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবি হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ছাত্ররাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে গণরাজনীতিতে পদার্পন করেন তিনি। এরই মধ্যে, ২০০২ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দলে সারাদেশের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ২৮ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভ করে দীর্ঘ ৩৭ বছর পর সিংড়া আসনে নৌকা প্রতীককে অর্ধলক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন পলক। মেধা, সততা, নিষ্ঠা, কর্মশক্তি ও সুন্দর বচন ভঙ্গির মাধ্যমে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে প্রকৃত অর্থে জনকল্যাণমুখী রাজনীতির প্রয়াস উপস্থাপিত করে দেশবাসীর নজন কাড়েন পলক। সুন্দর, মার্জিত, ভদ্র ও সাবলীল ভাষায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে তথ্যবহুল এবং যৌক্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করে টকশো’তে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। পাশাপাশি আস্থা অর্জন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতি-নির্ধারকদের। যার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে স্থান পান পলক। নিজ নির্বাচনী এলকায় প্রচুর পরিমাণ বৃক্ষ রোপনের স্বীকৃতি স্বরূপ একই বছর তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় সম্মাননা হিসাবে ১ম পুরস্কার গ্রহণ করেন। তার এই পথচলায় অন্যতম অনুপ্রেরণার উত্‍স হচ্ছেন তার মা জামিলা ফয়েজ ও স্ত্রী কলেজ শিক্ষিকা আরিফা জেসমিন কনিকা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি অনুভব করতেন প্রকৃত অর্থে দেশপ্রেমিক ও মেধাবীরা যদি ছাত্ররাজনীতিতে না আসে; তাহলে আমাদের ৫২ বা ৭১ এর যে চেতনা সেটার বাস্তবায়ন কোনো ক্রমেই সম্ভব হবে না। ছোটবেলা থেকে মানুষের জন্য কিছু একটা করার তীব্র তাগিদ অনুভব করতেন তিনি। রাজনীতি ও তার পরিবার কখনোই বিচ্ছিন্ন কোনো অংশ নয়। পরিবারের প্রতিটি সদস্যই কোনো না কোনোভাবে তার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। দেখা যায়, কখনো আওয়ামী লীগের কোন সম্মেলনে অতিথিদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে তার শিশু সন্তান অপূর্ব, অর্জন আর অনির্বাণ। রাজনীতিকে কখনোই তিনি নেশা বা পেশা হিসাবে নেননি। রাজনীতি হচ্ছে তার সাধণা যার মাধ্যমে তিনি জাতি ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। রাজনীতির কারণে কখনোই তাকে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়নি। সারাদিনের প্রচন্ড কর্মব্যস্ততার মাঝেও রাতে পরিবারের সদস্যদের সময় দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমন কি, মানুষের সাথে সার্বক্ষণিক সংযুক্ত থাকার মাধ্যম হিসাবে প্রযুক্তিকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। তার প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যে কেউই অবগত হতে পারেন; সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে। শত ব্যাস্ততার মাঝেও ফেসবুকে আপডেট ও নিয়মিত মেইল চেক করা তার প্রতি মূহুর্তের অভ্যাস। যখন বর্ষায় চলনবিল পানিতে ভাসে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে, ঘূর্ণিঝড়ে কৃষকের পাকা ধান আর ঘর-বাড়ী বিনষ্ট হয়ে যায়, তখনও দলীয় নেতা-কর্মী আর প্রশাসনকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘আমি এলাকায় আছি, সার্বক্ষণিক যে কোনো সমস্যায় সরাসরি যোগাযোগ করুন। আমি সমস্যা সমাধানে সর্বাত্বক চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।’ ২০১৩ সালের শেষের দিকে গুটিকয়েক সংসদ সদস্যের অশালীন, অসত্য ও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারে মহান জাতীয় সংসদ যখন তার পবিত্রতা হারাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহুর্তে সংসদে সাহসী ও সময়োপযোগী বক্তব্য প্রদান করে সারাদেশের মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন। বিএনপি-জামাতের আগুন সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে ৭০হাজারেরও বেশী ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১২ জানুয়ারি বর্তমান মন্ত্রীসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপরই শুরু হয় তার নতুন পথচলা। একদিন বলেই বসলেন, ‘আমাকে যে কোনো মূল্যে সফল হতেই হবে। বয়স কম হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে অনেক বড় দ্বায়িত্ব দিয়েছেন। আমি ব্যার্থ হলে ভবিষ্যতে আর কেউ তরুণদের সামনে আনবে না, বড় কোন দ্বায়িত্ব দিবে না।’ মেধা ও প্রযুক্তি নির্ভর জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে বেরাচ্ছেন পলক। প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি দেশের সর্ববৃহত্ত কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে হাইকোর্ট। তার হাত ধরেই বিআরটিসি বাস কখনো বা টিএসসি কখনো বা মধুর ক্যান্টিনে ফ্রী হয়েছে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক। চলনবিলের প্রত্যন্ত এলকায় জন্ম নেওয়া প্রতিভাবান এই ছেলেটি আজ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক ‘ইয়াং গ্লোবাল লিডার ২০১৬’ নির্বাচিত হয়ে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও অগ্রযাত্রাকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। পথচলা এখনো অনেক বাঁকি। আমাদের প্রত্যাশা বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে সামনে রেখে তিনি এগিয়ে যাবেন বহুদূর।_ ___________________________ জয়বাংলা বলে আগে বাড় জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা ♥ দেশরত্ম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা♥ অভিন্দন মাননীয় মন্ত্রী পলক।আরও কম বয়সে ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক এবং থানার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব অনেক বছর পালন করেও অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্বেও জনসেবা করার সুযোগ কোন দিন পাইনি।মানুষের সেবা করায় আল্লাহর হুকুম থাকা অবশ্যক।সবার ভাগ্যে জোটেনা।আপনার প্রতি নিয়ন্তর শুভকামনা থাকবে। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন