সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কঠোরতায়-সরকারি কর্মচারিরা বলির পাঠায় পরিনত:--- ♥__________________________________♥ এই প্রথম কোন স্থানীয় নির্বাচনে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারী কর্মকর্তা /কর্মচারিদের চাকুরী গড়ে হারানো ও জেল জরিমানার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে।এর আগে বিচ্ছিন্ন দু একটি উদাহরন থাকলেও গড়পড়তা ছিলনা। কমিশন সুত্র ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এলাকার জগনের মতামতের ভিত্তিতে জানা যায় -- নির্বাচনে পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন স্ব-স্ব এলাকার জনগনও সন্তুষ্ট। অনিয়মের কারণে প্রথমধাপে ৬৫টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে এগুলোতে ভোটগ্রহণ করা হবে। সাতক্ষীরায় ১৪টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টিতে ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা হয়েছিল বলে জানা গেছে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাতক্ষীরার যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে সেখানে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ও যেসব উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে সেসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কমিশনে এসে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। অন্য যেসব জায়গায় ভোট বন্ধ করা হয়েছে সেগুলোতেও তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানা গেছে। গতকাল সন্ধায় আবদুল্ল্যা আল নোমানের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন কায্যালয়ে বিএনপির একটি প্রতিনীধি দল নির্বাচন কমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করে ৫০ টি ইউপির ভোট পুর্ননির্বাচনের দাবি করেন।যে সমস্ত ইউপির সম্মন্ধে বিএনপি অভিযোগ উত্থাপন করেনি ঐ সমস্ত ইউপির নির্বাচনও বাতিল করেছেন নির্বাচন কমিশনার। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার বলে রাখতে চাই, বিএনপিকে মাঠে ময়দানে, রাজনীতি এবং নির্বাচনে সংগঠিত ভাবে রাখার জন্য সরকারের অভ্যন্তরে এক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে নি:সন্দেহে বলা যায়। তবে ইহা একান্ত বাস্তব সত্য যে স্বতন্ত্র এবং বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ না নিলে কোন কেন্দ্রেই এজেন্ট পেতনা বিএনপি। আওয়ামী লীগ /বিএনপি থেকে যারা সুষ্ঠ নির্বাচনে জনগনের মতের প্রতিফলনে নির্বাচিত হয়েছেন আমি তাঁদের অভিন্দন জানাই -"তাঁরাই সত্যিকারের রাজনীতিবীদ।" বিএনপিকে রাজনীতি, নির্বাচনে ধরে রাখার জন্য সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারিদের এবং আওয়ামী লীগ তাদের নেতাকর্মিদের অকাতরে বলি দিতেও কুন্ঠাবোধ করছেনা। ইতিমধ্যে শতাধিক পুলিশ চাকুরি হারাবার সীমানায় অবস্থান করছেন।প্রিজাইডিং অফিসারদের মধ্যে শিক্ষকের সংখ্যা অত্যাধিক। তাঁদের অনেকেই চাকুরী হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।অনেকআওয়ামী নেতা জেলে বন্দি রয়েছেন।অনেকের জীবনহানী এবং অনেকে পঙ্গুত্ব বরনের পয্যায় রয়েছে। একশ্রেনীর মাস্তানদের দল নমিনেশন দিয়ে, কতগুলি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারির জীবন জীবিকার উপর আঘাত আসছে তা কি কোন রাজনীতিবিদ বা দল চিন্তা করছে? যেই সমস্ত প্রার্থী সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ব্যাখ্যা দিয়ে জনগন থেকে ভোট আদায় করে নিয়ে আসতে পারবেনা ধারনা করেছে তাঁরা কি আদৌ দলের মঙ্গল কামনা করে? নৌকা বা ধানের শীষ কি তাঁর নীজের মার্কা? যে ব্যাক্তির দলের সমর্থনের উপর আস্থা নেই, সরকারের এত উন্নয়ন কর্মকান্ডের উপর আস্থা নেই, তাঁর নীজের ব্যাক্তিত্বের উপর আস্থা নেই -সেই ব্যাক্তি ভোটে নমিনেশন চাইবে কেন? আওয়ামী লীগ বিতর্কিত পঞ্চাশটি ইউপি না ফেলে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বা দলের অভ্যন্তরে এমন কি কম্পনের সৃষ্টি হত? পুর্ননির্বাচন ঘোষিত ৬৫ টি এককভাবে বিএনপিকে বা অন্য আর কোন দলকে বিনাভোটে দিয়ে দিলেও এক- তৃতীয়াংশ ইউপিতে তাঁদের বিজয় সম্ভব হতনা। তবে কেন সাতক্ষিরা সহ অন্য আরো দুই একটি জায়গায় ভোট কারচুপি করার সুযোগ দিয়ে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করা হল? এইক্ষেত্রে বিএনপির আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত কোন কর্মকর্তার কারনেও ভোটে কারচুপি হতে পারে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্রের অংশও হতে পারে। দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাঝে যদি এইরুপ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার অভিযোগ থাকে- তবে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। এই কথাটি বলছি এই কারনে-বিভিন্ন থানায় দেখা যায় কিছু অফিসার ছাত্রদল/শিবিরের ক্যাডার ছিল। ব্যাক্তি গত ভাবে আমি তাঁদের জানি এবং চিনি।তাঁরা আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার হয়ে দল ও সরকারের বারটা বাজিয়ে দিচ্ছে-সুযোগ সন্ধানী আওয়ামী নেতাদের কারনে। বিএনপি এবং নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী বাদবাকি ৫৪৭ ইউপি সম্পর্কে তাঁদের কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ না থাকলেও মিডিয়ায় বার বার ১৫/ ১৬ ইউপির ভোট কারচুপির সচিত্র প্রতিবেদন ফলাও করে দেখানোর ফলে জনমনে সুষ্ঠ নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যাপারে নেতিবাচক ধারনার জম্ম হওয়া কি অস্বাভাবিক? আওয়ামী লীগ বা অন্যকোন দলের প্রার্থী জিততেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা তাঁদেরকে দলের পক্ষ থেকে কি দেয়া হয়েছিল? ঘুষের বিনিময়ে উক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ভোট কারচুপিতে প্রলুব্ধ করা হয়েছিল কিনা আগে তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এইরুপ কর্মে তাঁদের বরখাস্তাদেশ মেনে নেয়া যায়। যদি তাই না হয়, সরকারি দল বা অন্য কোন দলের প্রভাবের কারনে কারচুপি সংগঠিত হয় তাহলে সরকারি কর্মচারিদের চাকুরি বরখাস্তের আগেই সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষমতাধর নেতার বহিস্কার হওয়া প্রয়োজন। যিনি নমিনেশন প্রদানে মুর্খ্য ভুমিকা পালন করেছেন, তাঁর সহযোগি যারা ছিলেন, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদেরকে স্ব-স্ব দল থেকে বহি:স্কার করা উচিৎ। তাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তির কারনেই চাকুরির উপর নির্ভরশীল বেশ কিছু পুলিশ অফিসার, সাধারন গরিব পুলিশ, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারির জীবন জীবিকার উপর অসহনীয় দুর্ভোগ নেমে আসবে দিব্যি চোখেই দেখা যাচ্ছে। কঠোরতা যদি সবমহল থেকে করা হবে-তবে প্রার্থী নির্বাচন তৃনমুল থেকেই করা উচিৎ ছিল।,তাহলে আজকের এই মড়ার ফাঁদে কাউকেই পড়তে হতনা।দল এবং সরকারের ভাবমুর্তির উপরেও আঁছড় পড়ার কোন সম্ভাবনা ছিলনা। প্রথম ধাপের নির্বাচনের কঠোরতার কারনে অন্যধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিএনপির পরামর্শের উপর নির্ভর করে তদন্ত ছাড়াই বরখাস্তের আদেশ কতটুকু আইন সিদ্ধ তাও ভেবে দেখা দরকার সংশ্লিষ্ট মহলের। নির্বিচারে গুলি করে হত্যার মত কারন সৃষ্টি হয়েছিল কিনা তাও তদন্ত করার দরকার।নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্রেকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না। পরিশেষে বলতে চাই,নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দর হোক দেশবাসি কামনা করে।অযথা কোন মহলকে সুযোগ দিতে যেন কাউকে বলি দেয়া না হয় সেই দিকেও নজর রাখা দরকার সংশ্লিষ্ট সব মহলের। ___________________________ জয়বাংলা বলে আগে বাড়ো জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম ♥প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা♥

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন