ধর্ম রাষ্ট্র ও জামায়াতের রাজনীতি--আওয়ামী ধারার রাজনীতিবীদদের চিন্তা-চেতনা----+ ♥~~~~`~~~~~~ ♥ গত ১৩-৩-২০১৬ বিশিষ্ট তথ্য ও প্রযুক্তিবীদ,লেখক, কলামিষ্ট জনাব আবদুল জব্বার সাহেবের একটি নিবন্ধ চাপা হয়েছিল আজকের কাগজ পত্রিকায়।নিবন্ধটির শিরোনাম ছিল --"ধর্মরাষ্ট্র ও জামায়াতের রাজনীতি"। তিনি যে তথ্য নিবন্ধটিতে তুলে ধরেছেন বলতে গেলে ভয়াবহ। ভয়াবহ বলছি এই কারনে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জানেনা জামায়াতে ইসলামী দলটির ধর্মীয় মুল্যবোধ এবং চেতনার উৎসস্থল সম্মন্ধে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি নীজেও সন্দিহান ছিলাম মুলত: দলটি ইসলামের কোন ধারাটি অনুসরন করে।তিনি লিখেছেন-- জামায়াতের রাজনৈতিক ইতিহাসে পাকিস্তানের একটি রাজ্য দখল করা ছাড়াও বাংলাদেশের সরকারের অংশীদার হতে পারা তাদের দু’টি বিশাল সাফল্য। বাংলাদেশে ২০০৫-২০০৬ সময়কালে ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশপন্থী (যাদের আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলি) রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তৎকালীন সরকার ও সরকারি দলকে অত্যন্ত সফলভাবে ব্যবহার করার জন্যও তারা কৃতিত্বের দাবি করতে পারে। দেশটিকে একটি ধর্মরাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য জামায়াতবিরোধী ধর্মীয় গোষ্ঠী গুলোকেও জামায়াত অত্যন্ত সতর্কতায় তাদের সঙ্গে রাখতে পেরেছে। এর আগে মোল্লারাই জামায়াতের বিরোধিতা করত। জামায়াতের 'ওহাবি ভাবধারার ধর্মচিন্তা 'এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ মানে না। বিশ্ব তবলিগ আন্দোলনেরও জামায়াত বিরোধিতা করে। কিন্তু ২০০১-এর নির্বাচনে জামায়াতসহ সব ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যাওয়া থেকে বাধা দেয়ার জন্য একযোগে চারদলীয় জোটকে সমর্থন করে। পাকি জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার তুলনা করে তিনি লিখেছেন- বাংলাদেশের জামায়াত চতুরতায় হুসেইন আহমেদের পাকিস্তানি জামায়াতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। পাকি জামায়াত-আমেরিকা, ব্রিটেন ও পশ্চিমা দুনিয়ার কট্টর সমালোচক এবং লাদেনের সহযোগী হওয়া সত্ত্বেও আফগানিস্তান নিয়ে বাংলাদেশের জামায়াত একটি কথাও বলেনি। ইরাক নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি। গুয়েন্তানামায় মার্কিনিদের হাতে পবিত্র কুরআনের অবমাননা হওয়া সত্ত্বেও তারা টুঁ শব্দটি করেনি। বরং জনৈক জামায়াত নেতা ওয়াশিংটন সফর করে আমেরিকাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছে যে, তারা ‘আমেরিকাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।’ জঙ্গি হামলার পর থেকে জামায়াতে চারিত্রিক পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে তিনি লিখেছেন--'১৭ আগস্টে বোমা হামলার পর সম্ভবত তাদের কথা এখন আর পশ্চিমারা বিশ্বাস করতে পারছে না। সেজন্য জামায়াতের বক্তব্যে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। পাক-জামায়াতের মতোই তারা "ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোশাদ "এবং ' ভারতকে' সরাসরি আক্রমণ করেছে। রাজনৈতিক শক্তি বা জনসমর্থনের তুলনামুলক আলোচনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন-- পাকিস্তানে জামায়াত যথেষ্ট শক্তিশালী। কিছুটা জনসমর্থনও তাদের আছে। কারণ ভারত থেকে পাকিস্তানে যাওয়া মুসলমান মোহাজের, অনুন্নত ধর্মান্ধ উপজাতীয় এবং অশিক্ষিত-অল্পশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত পাকিস্তানিদের মধ্যে ধর্মরাষ্ট্র ও ভারত বিরোধিতার প্রভাব অনেক। পাকিস্তানের অর্ধেক মানুষ ওসামা বিন লাদেনকে সমর্থন করে। সম্ভবত এই কারণেই ওসামা বিন লাদেনকে আমেরিকানরা ধরতে পারছিল না। পাকিস্তানের ভেতরে ওসামাকে হত্যা করে আমেরিকা সেই সত্যটি প্রমাণ করেছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে মৌলবাদ তথা ধর্মরাষ্ট্র তেমন প্রবল নয়। তবে ভারত খুব কাছের ও প্রভাবশালী প্রতিবেশী হওয়ায় ভারত বিরোধিতার জুজুটি পাকিস্তান আমল থেকেই এদেশে কার্যকর ও অব্যাহতভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তারা অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গেই পা ফেলে। বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বা তালেবান রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা তাদের আজকের নয়। একাত্তর পূর্ববর্তী জামায়াত পুরো পাকিস্তানকেই ধর্মরাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যুদয় তাদের সেই পরিকল্পনায় বাধ সাধে। বর্তমান জামায়াতের পরিকল্পনা সম্পর্কে বর্ননা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন--এখন তারা একটি নয়, এই উপমহাদেশে কমপক্ষে দু’টি ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। "আমার নিকট মনে হচ্ছিল এই একটি কারনেই বাংলাদেশের যুদ্ধ অপরাধীর বিচার এবং সর্বোচ্ছ আদালতের রায়ের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ না রেখে তিব্র বাসায় পাকিস্তান উৎকন্ঠা জানায়,বাংলাদেশের জামায়াত রায়ের পরেই হরতাল দেয়ার সাহষ দেখায়।" জঙ্গি হামলা ও জঙ্গি কানেকসান সম্মন্ধে তিনি লিখেছেন-- তারা মায়ানমার-থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া ও ভারতসহ এশীয় দেশগুলোর মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলোর পৃষ্ঠপোষকতাও করে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং আমেরিকার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গেও তাদের সখ্য ও সম্পৃক্ততা আছে। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে ওসামা বিন লাদেনের দুই সহযোগী গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর জাতিসংঘ ১২৬ নং কমিটি গঠন করে। জাতি সংঘ কতৃক কমিটি গঠনকে তিনি বড় আগাত বলে বর্ননা দিয়ে লিখেছেন-- জামায়াতের জন্য এটি সম্ভবত একটি বড় ধরনের আঘাত। এটি জামায়াতের জন্য একটি বড়রকমের সেটব্যাক। এই প্রসংগে বাংলাদেশের জামায়াতের রাজনৈতিক দুরদর্শিতার পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি লিখেছেন--বাংলাদেশের জামায়াত এই বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। ফলে তারা হুসেইন আহমেদের সঙ্গে একসঙ্গে প্রকাশ্যে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করেনি। জামায়াতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বর্ননা ফিতে গিয়ে কলামিষ্ট আবদুল গাফফার সাহের লিখা থেকে উদ্ধৃতি তোলে ধরে লিখেছেন-- জামায়াত যে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তাদের পথে পা ফেলছে তা ২০০৫ সালে ১৪ আগস্টে জনকণ্ঠে প্রকাশিত আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের জামায়াতীরা এখন লন্ডনের পূর্ব লন্ডন এলাকাটি প্রায় দখল করে ফেলেছে। বাংলাদেশেও ব্যাংক, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, মিডিয়া ইত্যাদি সমন্বিত কার্যক্রমের সাহায্যে জামায়াত বাংলাদেশকে একটি ধর্মরাষ্ট্র বানানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। মাদ্রাসার শিশু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, বস্তি থেকে গুলশান-বারিধারা, কেরানি থেকে সচিব, ফেরিওয়ালা থেকে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর; সবকিছুতেই জামায়াত পরিকল্পিতভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশের আর কোনো রাজনৈতিক সংগঠন এই সুপরিকল্পিত পথে পা বাড়ায়নি। মুক্তিযুদ্ধে চরম পরাজয়ের পর আবার গাঝাড়া দিয়ে উঠে আসার ও কিঞ্চিত বর্ননা লিখাটিতে পাওয়া যায়।তিনি লিখেছেন--একাত্তরে স্রোতের বিপরীতে থেকে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত হয়ে-মাত্র ৩৪ বছরে জামায়াত যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেছে সেটি তাদের এইসব পরিকল্পিত কর্মকাণ্ডেরই ফসল। পক্ষান্তরে জামায়াতীদের যাদের মোকাবেলা করার কথা, তাদের কেউ কে' ১৯৭৫এর পর জামায়াতের সহযোগী হয়েছে। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে জামায়াত বাংলাদেশপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির পাশে এসেও দাঁড়াতে পেরেছিল। এরপর তারা দেশের আওয়ামী বিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় যায়। বাংলাদেশের পতাকাবাহী গাড়িতে চড়ে তারাই দেশের সমাজকল্যাণ আর শ্রম বিষয়ে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা হাতে পায়। তাঁদের মতবাদের আলোচনায় তিনি অন্তত:আমার নিকট নতুন একটি তথ্য তুলে ধরেছেন,যাহা আমার মত অনেকেই হয়ত জানে না।তিনি লিখেছেন--জামায়াতের দুর্ভাগ্য তারা"ওহাবি মতবাদের অনুসারী।" আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ইসলামের মূূূূল বৈশিষ্ট্যে বিশ্বাস করে, কিন্তু ওহাবি মতবাদকে গ্রহণ করে না। সেজন্যই প্রায় শতবর্ষেও জামায়াতীরা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। তারাও জানে, বিশ্বের কোনো দেশেই ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ফলে অগণতান্ত্রিক পথ তাদের বেছে নিতেই হচ্ছে। তিনি তাঁদের দমনের ব্যপারে অনেকটা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এই জন্য যে তাঁদের আরো অনেক গুলী শাখা সংগঠন আছে যাদের খবর সাধারন মানুষ এবং কি সরকারও জানেনা।তিনি লিখেছেন-- জামায়াত রাজনৈতিক সংগঠন নয়,-" তারা ওহাবি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি পরিবার।"জামায়াত এই পরিবারের প্রকাশ্য সংগঠন- এমন আরো ডজন ডজন প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো তাদের গোপন সশস্ত্র সংগঠন। ফলে এদেশে ওহাবি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জামায়াতী স্বপ্নকে প্রতিহত করতে হলে কেবলমাত্র জামায়াতের কথা ভাবলেই হবে না- তাদের শিকড় থেকে ডালপালা পর্যন্ত উপড়ে ফেলতে হবে। কিন্তু সেই কাজটি আমরা সঠিকভাবে করছি না। বিএনপির ছত্রছায়াতেই কেবল নয়, বিপুল আর্থিক ক্ষমতা নিয়ে ২০১৬ সালেও তারা ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে। আমাদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চাপে থাকার পরও জামায়াত দুর্বল হচ্ছে না। তিনি তার লিখায় প্রতিকারেরও সুন্দর একটা ইঙ্গিত দিতে পেরেছেন বলে আমি মনে করি। তিনি প্রসঙ্গটিতে লিখেছেন--আমার নিজের বিশ্বাস এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আমরা যারা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নির্ভর বাংলাদেশটা গড়ে তুলেছি তারা সাংস্কৃতিক আন্দোলনটা করিনি। যতক্ষণ অবধি আমরা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে দেশের সব মানুষের আত্মা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি তবে জামায়াতের সঙ্গে পেরে উঠব না। আজকের ডিজিটাল যুগে এই লড়াইটা সবার আগে ডিজিটাল পদ্ধতির হওয়া উচিত। আমরা সেটিও খুব ভালোভাবে করছি না। আশাবাদটা এখানেই যে, আমাদের নতুন প্রজন্ম ইতিহাসের সত্যকে আবিষ্কারের দিকে দিনে দিনে অনেক বেশি মনোযোগী হচ্ছে। এজন্যই ওদের হাতে জামায়াত পরাজিত হবে। উপসংহারে বলতে চাই, যে সমস্ত বন্ধুরা মনে করেন ৫০/১০০ মানবতা বিরোধীর বিচার করে দিলে তাঁরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা। অনেক বুদ্ধিজীবি, লেখক, সাহিত্যিক জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে দিলেই শেষ, আর অস্তিত্ব থাকবেনা-আমি তাঁদের সাথে একমত নই। একমত নই এই কারনে, যে দুষ্ট চক্রটি মুক্তিযুদ্ধে এত বড় পরাজয়ের প্রতিশোধ মাত্র সাড়ে তিন বছরে নিতে পেরেছে, যে অশুভ চক্রটি মাত্র২০ /২৫ বছরের মধ্যে তাঁদের শিকড় পল্লিবধুর রন্ধন শালায় নিয়ে যেতে পেরেছে, যে শক্তির একটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করা যায়নি, একটি কিন্ডার গার্টেন বন্ধ করা যায়নি- তাঁদেরকে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বা দুই একজনকে ফাঁসি দিয়ে তৎপরতা বন্ধ করা যাবে বিশ্বাস করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা সমান কথা আমি মনে করি। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন