রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম---জামায়াত থেকে হেফাজত--আন্দোলনের নেতৃত্ব হাইজ্যাক------ ___________________________ ____________________________ অখন্ড ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের উৎপত্তি ধর্মীয় চেতনা "দ্বিজাতি তত্বের" ভিত্তিতে হয়েছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাক্কালে এই ব-দ্বিপের বা পুর্ব পাকিস্তানের ধর্মীয় নেতাদের উল্লেখ যোগ্য কোন ভুমিকা ছিলনা। বরঞ্চ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সহ বেশ কিছু আলেম ওলেমা অখন্ড ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা মহত্মা গান্ধীজির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিলেন। বৃটিশদের শাষনকাল পুরোটাই বিচ্ছিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম ,বিদ্রোহ হলেও কায্যত: সফলতার ধারেকাছেও উপমহাদেশের আন্দোলনকারিরা বা বিদ্রোহকারিরা যেতে পারেনি। বিশ্বযুদ্ধই শেষ পয্যন্ত ইংরেজদের এদেশ ছাড়তে বাধ্য করে। বিলেতে লেখাপড়া করা জিন্নাহ বিনা আন্দোলন, বিনা রক্তপাতে পাকিস্তানের নেতায় রুপান্তরিত হন এবং নেতৃত্ব প্রদান করেন।বৃটিশ রাজত্বের পুরো সময়কাল ব্যাপি মাওলানা-মৌলবিদের স্বাধীনতার প্রশ্নে উল্লেখ্যোগ্য অবদানের বিষয় ইতিহাসে তেমন খুঁজে পাওয়া যায়না।অসংগঠিত-বিচ্ছিন্ন, অপরিকল্পিত কিছু আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টার- -ব্যাক্তি বিশেষ পাওয়া যায়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর অখন্ড পাকিস্তানের ৫৬শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বললেও বাংলাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার পরিকল্পনায় পুর্ব পাকিস্তানে গড়ে উঠা ভাষা রক্ষার লড়াইয়ে কোন আলেম ওলামাকে দেখা যায়নি।এক্ষেত্রেও অনেকেই বাংলা 'বিজাতীয় ভাষা', বাঙ্গলা 'বাঙালী হিন্দুদের' ভাষা অজুহাত দাঁড় করে শাষক শ্রেনীর পক্ষ অবলম্বন করেছিল। অথছ উর্দু পশ্চিম পাকিস্তানের আপামর জনগনের ভাষাও ছিলনা। মাত্র পাকিস্তানের ৫শতাংশ মানুষ কথা বলতেন উর্দুতে। তাঁরা কিন্তু সামরিক, বেসামরিক সরকারের সকল অবস্থায় পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা--তাঁদেরই নিয়ন্ত্রনে ছিল। পবিত্র কোরানে স্বয়ং আল্লাহ বার বার প্রত্যেক জাতি গোষ্টির ভাষাকে তাঁদের জাতির জন্য নেয়ামত বলে ঘোষনা করেছেন। তিনি পৃথিবীতে যত আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন সব গুলি কিতাবই ভীন্ন ভীন্ন জাতি গোষ্টির নিকট প্রেরন করেছেন এবং তদীয় নবীর ভাষাতেই প্রেরন করেছেন। আমাদের নবী করিম (স:) আরবের সম্ভ্রান্ত কোরাইশ বংশে জম্ম গ্রহন করেছিলেন। তাঁদের ভাষা শুদ্ধ আরবী ভাষা ছিল বিধায় কোরান ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য আরবী ভাষায় প্রেরীত হয়েছে। আল্লাহ নীজেই তাঁর পবিত্র কোরানে আরবী ভাষায় কোরা'আন নাজেল করার এই কারনটি ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁরপরও আমাদের আলেম-ওলামাদের বৃহদাংশ ভাষা আন্দোলনে শরিক হতে পারেননি। শুধু বৃহদাংশ নয়-বলতে গেলে এক শতাংশও ভাষার দাবীতে সোচ্ছার হতে পারেননি। পাকিস্তান সৃষ্টির পর-গনতান্ত্রিক আন্দোলনের বিপক্ষে তো ছিলেনই বরং জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন "ছাত্র সংঘ" সৃষ্টি করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন সমুহকে নিধনের প্রক্রিয়া গ্রহন করে। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে "ছাত্র লীগ" গঠিত হলে অংকুরেই এই সংগঠনকে ধ্বংসের জন্য এমন কোন হীন কাজ নেই যা তাঁরা করেনি।কত মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল, কত মেধাবী ছাত্র পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল তার কোন ইয়ত্তা নেই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ব বিদ্যালয়ে প্রভাবশালী সংগঠন ছিল "ছাত্র সংঘ"। বর্তমানে আমরা যেই সংগঠনটি "ছাত্র শিবির" হিসেবে চিনি-জানি। শাষক দল মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন "এনএসএফ" এর সাথে জোট গঠন করেই তাঁরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে "শ্বেত সন্ত্রাসের" রাজত্ব কায়েম করেছিল। পাকিস্তানের ২৩বছরের শাষনামল সম্পুর্ন সময়কালটাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের "ছাত্রসংসদ" তাঁদেরই নিয়ন্ত্রনে ছিল--হাতে গোনা কয়টি "ছাত্র ইউনিয়নের" নেতৃত্বে প্রগতিশীল ছাত্রদের হাতে ছিল। ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক প্রভাব থাকলেও জনগনের মাঝে জামায়াতের বা অন্য ইসলামী দলগুলীর তেমন প্রভাব ছিলনা। তবে বর্তমানের মতই সাংগঠনিক ভাবে সুশৃংখল- শক্তি সামর্থ ছিল। পাকিস্তানের প্রথম পয্যায়ে "কোরান হাদিসের অপব্যাখ্যার" কারনে দলটির নেতা "মাওলানা মওদুদীর মৃত্যু দন্ডের রায়" হওয়ার কারনে পাকিস্তানের পুরো সময়কালটাই জামায়াতের জন্য কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল। সৌদী "বাদশাহর" অনুরুধে পাকিস্তান সরকার আদালতের রায় মওদুদীর উপর বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকে। শেখ মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিকল্পিত রাজনৈতিক কর্মসুচি প্রনয়ন, নিখুঁতভাবে কর্মসুচি বাস্তবায়নের কারনে দিন দিন তাঁর গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পেতে থাকলে তথাকথিত "ইসলামী দলগুলী " পাকিস্তানের "শাষক গোষ্টির" সাথে গলা মিলিয়ে "ভারতের দালাল, ভারতের চর, ভারতের নিকট দেশ বিক্রির পায়তারা" ইত্যাদি নানাহ অপ্প্রচারের অপকৌশল গ্রহন করে। শেখ মজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মসুচি সমুহ জনগনের নিত্যদিনের সমস্যা-সংকট নিয়ে প্রনীত হওয়ার কারনে এবং প্রনীত কর্মসুচি জনগনের মাঝে ব্যাপক প্রচারের উদ্দেশ্যে তাঁর নিরলস পরিশ্রম,একাগ্রতা, যথাসাধ্য জনসংযোগ, কর্মসুচি বুঝিয়ে বলার পারঙ্গমতা ইত্যাদি কারনে দিনদিন ব্যাপক জনসম্পৃতা গড়ে উঠতে থাকে।ফলত: ষড়যন্ত্র হয়েছে সত্য শেষ পয্যন্ত কোন ষড়যন্ত্রই কায্যকর হয়নি।সংগত কারনে শেখ মজিবুর রহমানের সুপ্ত বাসনা বাঙ্গালী জাতির স্বাতন্ত্রতার দিকে ধীরে ধীরে জাতিকে তিনি নিয়ে যেতে থাকেন,এবং সফলতায় রুপ দিতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের মনের সুপ্ত বাসনার বহি:প্রকাশের এক পয্যায়ে পরিকল্পিত পরিকল্পনায় মহান মুক্তিযুদ্ধের অনিবায্যতা ফুটে উঠে।শেষাবদি মুক্তিযুদ্ধের অনিবায্যতা দেখা দেয়ার প্রাক্কালেও এই সমস্ত সম্মানীত মাওলানা মৌলবিদের একশতাংশও ৬৯এর গন অভ্যুত্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্ররম্বিকতায় সম্পৃত্ত হতে পারেননি।বরঞ্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে মুক্তি যুদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়েছিল। জামায়তে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের বিরুধীতা ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেছিল। অখন্ড ভারতীয় উপমহাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সকল জনসম্পৃত্ত আন্দোলন সংগ্রামে মাওলানা সাহেবদের বিরুধীতার কারনে সম্প্রদায়টি সম্পুর্ন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের জনগনের কোন কল্যানকর, জনহীতকর, রাজনীতি, দেশ শাষন ইত্যাদি কোন কাজেই ভুমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। ফলত: দেখা গেছে অখন্ড পাকিস্তানের স্বাধীনতা ধর্মীয় চেতনায় সংঘঠিত হলেও কোন ধর্মীয় মাওলানার উপস্থিতি নিশ্চিত না হয়ে, পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত আইন বিষয়ে লেখাপড়া করা ব্যরিষ্টার "মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ" সাহেবের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়। ফলত: তিনি পাকিস্তানের জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি পান, এবং "কায়েদে আজম" উপাধিতেও ভুষিত হন। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও একই অবস্থা বিরাজমান। মাওলানা-মৌলবি সাহেবরা সমাজের সম্মানীত এবং শ্রদ্ধার পাত্র হওয়া সত্বেও রাজনীতিতে জনগনের সম্পৃত্ততা শুন্যের কোঠায়।তাঁদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাংলায় উচ্চশিক্ষিত গোলাম আজমের নেতৃত্বে "জামায়াতে ইসলাম" -"ইসলাম ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা করেও শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়। দলটির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে অদ্যাবদি কোন উচ্চপয্যায়ের ধর্মীয় মাওলানার সমর্থন সংগ্রহ করতে পারেনি।দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও কোন মাওলানা বা আরবী শিক্ষায় শিক্ষিত পন্ডিত ব্যক্তির উপস্থীতি দেখা যায়না। শেষ পয্যায়ে সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয়ের পর "মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে" সামনের কাতারে নিয়ে আসেন এবং ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্ট্রির অপ-কৌশল গ্রহন করে। একই অবস্থা দেখা যায়১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর মেজর ডালিমের কণ্ঠে রাষ্ট্রীয় বেতারে যে ঘোষণাটি প্রচার করা হয় তাতে বলা হয়েছিল, ‘স্বৈরাচারী মুজিবের পতন ঘটানো হয়েছে--"এখন বাংলাদেশ একটি "ইসলামী রাষ্ট্র" হবে।’খমতার মসনদে "খোন্দকার মোসতাক"কে দেখা যায় "জিন্নাহ টুপি" পরিহিত অবস্থায়।ফারুক ডালিম গং "সেনাবাহিনীর বিপদ গামী সদস্য"-"খোন্দকার মোস্তাক" জাতির জনকের মন্ত্রী সভার "প্রভাব শালী মন্ত্রী।"মোস্তাকের সাথে যারা "মিরজাফরী"তে সংযুক্ত ছিলেন তাঁরাও বেশির ভাগ "আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী অথবা প্রভাশালী" নেতা ছিলেন। উনারা সবাই ছিলেন সামনের সারিতে-- -তখনও "নেপথ্যের নায়ক"দের দেখা মিলে নাই। পরবর্তিতে দেখা যায় সামনের অথবা নেপথ্যের মধ্যে যারাই জড়িত ছিলেন তাঁরা কেউই "ইসলামী জ্ঞান সমৃদ্ধ" ছিলেন না। অথছ "গনপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ" কে "ইসলামী প্রজাতন্ত্র" বানিয়ে রাষ্ট্রীয় উচ্চ পয্যায়ের অনুমোদনে "মুখপাত্র ডালিম" ঘোষনা করে দিয়েছেন। এইক্ষেত্রেও ইসলামকে সুচারুভাবে ব্যবহার করে ন্যাক্কারজনক হত্যাকে ইসলাম রক্ষার নামে চালিয়ে দেয়া হল। অর্থাৎ বাংলাদেশকে একটি "ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর জন্য এবং ইসলাম কায়েম" করার জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে, এমন ধারণাই তুলে ধরা হয়েছিল জাতির সামনে। এই ন্যক্কার জনক হত্যাকে ইসলামের নামে চালিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধেও মাওলানা মৌলবি সাহেবেরা টু-শব্দটি পয্যন্ত করেননি। এরপর রেডিও টিভিতে ইসলামী গজল,আরবী সুরা কেরাত জোরেসোরেই প্রচার করা শুরু করেছিলেন। ইসলাম রক্ষার ধুয়া বেশ জোরেশোরেই চালানো হয়েছিল। এই হত্যাকারিদের মধ্যে কেহই মাওলানা-মৌলবী ছিলেন না। অথছ ইসলাম রক্ষা করার মহান দায়িত্ব পালন করার জন্য জাতির জনকের পরিবার সহ হত্যা করে ফেলেছেন। এক্ষেত্রে আমাদের সম্মানীত মাওলানারা খুনীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে খুঁনীদের তাঁবেদার হিসেবে নীজেদের উপস্থাপন করলেন। ঘৃনা প্রকাশ না করে তাঁদেরকে প্রকাশ্য সহযোগিতা করার উদ্যোগ নিলেন। তাঁরা কি "ইসলামী প্রজাতন্ত্র" করেছিল? নাকি জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য ইসলামকে ব্যবহার করা হল? ইসলাম ধর্ম কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা উপলব্ধি করার বা মুল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তাও মাওলানা সাহেবেরা করেছেন বলে মনে হয়না। জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য ইসলাম ধর্মের অপব্যবহার করা হলো, এর খেসারৎ দিতে হল জাতিকে ৪০ বছর। এই পয্যায় পয্যন্ত কিন্তু আজকের হেফাজতিদের উত্থান ঘটেনি। জামায়াতের ধর্ম এবং দেশ বিরুধী কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদি আজকের হেফাজতিরা। মুক্তিযুদ্ধের আগে তাঁদের অস্তিত্ব ছিলনা। মুক্তিযুদ্ধের পর ক্রমশ তাঁরা বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা শুরু করে। একপয্যায়ে আলিয়া মাদ্রাসা সমুহ এবং জামায়াত কতৃক বাধাপ্রাপ্ত হলেও তাঁদের আচার- আচরন, আমল - আ'কীদা গুনে সাধারন মসুলমানদের মন জয় করতে তাঁরা সমর্থ হয়। স্বল্প সময়ে ব্যাপক প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে, 'জামায়াতের যুদ্ধপরাধের কারনে রাজনৈতিক কোনঠাসার সুযোগ নিতে "বিভিন্ন আকীদায় বিশ্বাসী " -সবাই মিলে গঠন করে "হেফাজতে ইসলাম"। গঠনের প্রারম্ভেই "অরাজনৈতিক" ব্যাক্তি হওয়ায় রাজনৈতিক অদুরদর্শিতার কারনে বড় রাজনৈতিক দলের প্রলোভনের স্বীকার হয়ে "হঠকারি রাজনৈতিক" সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। মিথ্যা অজুহাতে সরকার উৎখাতের উদ্দেশ্যে প্রতারনার কৌশল গ্রহন করে। সন্ধ্যা পয্যন্ত "শাপলা চত্বরে" অবস্থানের সরকারি অনুমতি গ্রহন করে লাগাতার অবস্থানের ঘোষনা দিয়ে ঢাকা অচল করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তার পরবর্তি দৃশ্য সবার জানা। ২০১৪--১৫ ইং সালে তাঁদের সম্পুন্ন মুখোশ দেখা গেছে শাফলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে ধর্ম রক্ষার নিমিত্তে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, পবিত্র কোরানে আগুন ইত্যাদি অপকর্ম নির্দিদ্বায় চালাতে দেখে।এক্ষেত্রেও নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলেন যে নারী সঠিকভাবে "বিসমিল্লাহ " উচ্চারন করতে পারেননা "বেগম খালেদা জিয়ার।" সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে অবস্থান প্রত্যাহার করে ফিরে যাবেন ওয়াদা করে লাগাতার অবস্থানের ঘোষনা দিয়ে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠলেন। এক্ষেত্রে তাঁদের প্রতারনা, কুপরী সর্বযুগের ইসলামী আন্দোলনকে শুধু কুলসিতই করেনি-সম্মানীত মাওলানাদের উপর সাধারন মানুষের--যে "আস্থা বিশ্বাস ছিল তাঁর মুলেও কুঠারাগাত করেছে।" ভারতীয় উপমহাদেশের পুর্বাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্বেও ইসলামী দল কোনকালে শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি শুধুমাত্র তাঁদের গোড়ামীর কারনে। তাছাড়া ইসলামের বহুমত ও পথের পার্থক্য তাঁদের শক্তিশালী দলে আত্ব প্রকাশে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই অঞ্চলের শতকরা ৯৫শতাংশ মানুষ জাতিগত ভাবে বাঙ্গালী, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে "ইসলাম ধর্মের অনুসারী" এইটুকু সহজ কথাও তারা বুঝতে চেষ্টা করেনা। আমাদের সম্মানীত ধর্মীয় মাওলানা সাহেবেরা ইসলামের প্রথম যুগের "চার খলিফার শাষন" কালের প্রতিও দৃষ্টি দিতে রাজী নয়। "নবী করিম (স:) এর স্বল্প সময়ের শাষন, বিদায়ী হজ্বের ভাষন, হুদায়বিয়ার সন্ধি, মদিনা সনদের" প্রতিও দৃষ্টি নিবন্ধ করতে চায়না। নবী করীম (স:)এর প্রীয় সাহাবিদের যে শাষন ছিল তাঁকে "খোলাফায়ে রাশেদীনের" শাষন বলে অভিহীত করা হয়।"খোলাফায়ে রাসেদী"নের চার খলিফার মধ্যে তিনজনকেই উগ্র ইসলামী জঙ্গীবাদীরা হত্যা করেছিল। তাঁরা কারা তাও আমাদের দেশের মাওলানা-মৌলবীরা চিহ্নিত করতে রাজী নয়। তাঁরা যে রীতিতে শাষন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন.,তাঁর ধারেকাছেও যেতে রাজী নয়-আমাদের দেশের ইসলামী দলের ধারক বাহকেরা। ইসলামের আদিভুমি সৌদী আরব, আরবেই ইসলাম ধর্মের জন্য মনোনীত হন আল্লাহর রাসুল হযরত মোহাম্মদ (স:)। তাঁর নিকটই প্রেরন করেন আল্লাহ তাঁর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরান। তাঁরা যদি ইসলাম ধর্মের বাইরে তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতি কৃষ্টি লালন করতে পারেন, আমরা বাঙ্গালী মসুলমানেরা বাঙ্গালী সংস্কৃতি কৃষ্টি লালন করতে গেলে নাস্তিক হব কেন? তাঁরা তাঁদের উৎসবে-পার্বনে উলুধ্বনি দিয়ে, ঢাকঢোল-বাজনা বাজিয়ে উৎসব করেন.।আমরা ভাষা শহিদের বিরত্বগাঁথা স্বরনে ফুল দিলে বেদা'আত হবে কেন? যতদিন ইসলামী আন্দোলন বাঙ্গালী সংস্কৃতি-কৃষ্টির সাথে সঙ্গতিপুর্ন হবেনা ততদিন জিয়া-মোস্তাকের মত খুনীরা ইসলামের দোহাই দিয়ে সরল প্রান বাঙ্গালী মসুলমানদের বিভ্রান্ত করতে থাকবে। আমাদের মাওলানা সাহেবেরা তাঁদেরই তাবেদারি করতে থাকবেন। তাঁর কিছু দৃশ্য ইতিমধ্যে আবার দৃশ্যমান হওয়া শুরু হয়েছে। আজকেই ২৭/০৩ ইং "রাষ্ট্রধর্ম" ইসলামের বিরুদ্ধে ২৮ বছর আগে দায়ের করা এক রিট পিটিশনের শুনানী শুরু হওয়ার কথা।এই রিট পিটিশনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে মিথ্যের বেসাতি। রাষ্ট্র ধর্ম ছিল-আছে থাকবে। "ছিল"মানে কখন থেকে ছিল?কতবড় মিথ্যার আশ্রয় তাঁরা নিল।মুলত:রাষ্ট্র ধর্ম ১৯৮৮ইং এর আগে কখনই ছিলনা। ১৯৮৮ইং হতে এরশাদ "রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম" সংবিধানে সংযোজনকারি। আদালতের সিদ্ধান্ত কি হবে-উকিলের শুনানী বর্তমান সংবিধানের সাথে "রাষ্ট্রধর্ম" কতটুকু সামঞ্জস্য তাঁর উপর রায় নির্ভর করবে। মাঝখানে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে যারা গুনাহর সাগরে ডুবে যাচ্ছেন-তাঁদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী গতবছরই ঘোষনা দিয়ে রেখেছেন।তাঁরা চাইলেই তিনি "খেলাফতের শাষন" প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতেও রাজি আছেন। তারপরেও যেন ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, ষড়যন্ত্র করে নবী-রাসুল এবং পবিত্রধর্ম ইসলামকে কোন মহল অপব্যাখ্যা না করেন-অপমান না করেন। একবছর গত হয়ে গেছে আমাদের মৌলবী সাহেবেরা কেউই সাড়া দেননি প্রধানমন্ত্রীর আহব্বানে। রাষ্ট্রীয় আইন কোরান ও সুন্নাহ ভিত্তিক করার বিধান কোরান হাদিছে উল্লেখ আছে।সেই মোতাবেক শাষন কালও আমাদের সামনে উদাহরন হয়ে আছে,"খোলাফায়ে রাশেদীনের শাষন কাল। -"রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম" থাকতে হবে এমন কিছু কি কোরানে বা হাদিছে আছে? সাহাবি কতৃক শাষন করা এমন কোন দেশ বা শাষনামলের উদাহরন কেউ কি দিতে পারবে? অত্যান্ত দু:খ্যজনক হলেও সত্য আপাত: জামায়াতের ওয়াহাবি আস্পালন থেকে নিস্তার পেলেও ইয়াজিদের অনুসারীদের কবল থেকে জাতি রক্ষা পাবে কিনা মহান আল্লাহপাকই ভাল জানেন। ______________________________ জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা ♥দেশরত্ম শেখ হাসিনা♥

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন