আমরা মুজিবাদর্শের লড়াকু সৈনিক:--- আদর্শ বিসর্জনে মহাখুশী--------------!! _____________________________ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যে আদর্শ, দর্শন শিক্ষায় শিক্ষিত, দলের অনুগত নেতাকর্মীর-অভাব প্রচন্ডভাবে অনুভুত হচ্ছে।অতীতে জাতির জনকের আদর্শ ধারন করে এমন অনেক নেতা কর্মী দেখা মিলতো, যারা নীজের জীবন যৌবন কখন হারিয়ে বৃদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছেন নীজেই জানতেন না। হাজার হাজার নেতাকর্মী চিরকুমারত্বকে সঙ্গে নিয়ে পরপারে চলে গেছেন- অনেক আগেই। উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আদর্শকে রাষ্ট্রীয় পয্যায়ে বাস্তবায়ন করে বাঙ্গালী জাতির মধ্যে ধর্মীয় বিভাজনের যে হিংসা বিদ্বেষ প্রোথিত করে দিয়েছিল স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর মুল ঊৎপাটন। ভাষা শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ কে আলীঙ্গন। বাঙ্গালীর হাজার বছরের লালিত সংস্কৃতি ও কৃষ্টির মহিমায় গড়ে উঠা জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সোনার বাংলা গঠন। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ধারণা উপমহাদেশে ভুল প্রমানীত হয়েছে,জাতিকে হিংসার চরমে নিয়ে গেছে। শতশত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তাঁর প্রকৃষ্ট প্রমান।আরবের জাতিয়তাবাদও গড়ে উঠেছে ভাষার ভিত্তিতে। ইসলাম ধর্মের বধ্যভুমি হওয়া সত্বেও তাঁরা ধর্মভিত্তিক জাতিয়তাকে প্রশ্রয় দেয়নি।তাঁদের ভাষার জন্য এবং আরবে জম্ম গ্রহন করায় নীজেদের ধন্য মনে করে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে উঠা জাতীয়তা বোধের উম্মেষের পরিনতি মুক্তিযুদ্ধ।ভাষা আন্দো -লনের মুল চেতনাই ছিল অসাম্প্রদায়িক। মুক্তিযুদ্ধকে মনেপ্রানে ধারন করলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে এসে যায় অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা তথা ধর্মনিরপেক্ষতা। রাষ্ট্র ভাষা ও সংস্কৃতিক আন্দোলন ভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে আলিঙ্গন , বিভাজনমূলক রাজনীতিকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ এবং ঐক্যবদ্ধতামূলক দর্শনকে ধারণ করা ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গিকার। আর তাই বঙ্গবন্ধু মুজিব ১৯৭২ এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সন্নিবেশিত করেন।'৭২ এর সংবিধানই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের পুর্ণ প্রতিফলন। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির লক্ষ্য হল- রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে বিনষ্ট করা এবং ধর্মভিত্তিক বিভাজনকে উস্কে দেয়া। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা স্পষ্টতই আমাদের স্বাধীনতার মূল্যবোধের পরিপন্থি। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল সংক্রান্ত রিট খারিজের পর মুজিব সেনাদের উল্লাস দেখে আশ্চায্যই হলাম। আওয়ামী লীগের রাজনীতির মুল চালিকাশক্তি 'দর্শন ও 'আদর্শ' বাদ দিয়ে কিসের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে দল? আদর্শ, দর্শনের মৃত্যু হলে দলের কি মৃত্যু হয়না? আওয়ামী লীগের মৃত্যু কি অনিবায্য? জাতির জনকের কন্যা জাতির জনকের আদর্শকে নীজ হাতে হত্যা করবেন? আমাদের নেতাকর্মীরা কিভাবে ভাবেন? আওয়ামী লীগ বর্তমান সময় পয্যন্ত-জাতির জনকের আদর্শের বাহিরে এককদম দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করেনি। প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধুর কথা বলেই জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসছে।প্রধান মন্ত্রী নীজেও এখন পয্যন্ত জাতির জনককে স্বরন ব্যতিত তাঁর বক্তব্য শুরু করতে আমি দেখিনি। যে কিংবদন্তি নেতার গুনগান গেয়ে ২১বছর পরেও ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে দল- তাঁর আদর্শকে বর্জন করবে আওয়ামী লীগ? কি করে সম্ভব? কখনও হতে পারেনা! কখনও নয়, আমি বিশ্বাস করিনা। পাকিস্তানের প্রভাবশালী মুসলিম লীগ দলের মৃত্যু হয়েছে ভুল দর্শন গ্রহনের কারনে,পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উদ্ভব হল ঠিক একই কারনে।আরও বহুধাবিভক্ত হওয়ার প্রহর গুনছে কম করে হলেও তিনটি প্রদেশ। চোখের সামনে একাধিক উদাহরন থাকার পরও মুজিব সৈনিকেরা কি করে উল্লাস করতে পারেন? বর্তমান আওয়ামী লীগ মুজিব আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে?আওয়ামী লীগ এবং মুজিব আদর্শের আওয়ামী লীগের মধ্যে আদর্শগত ও দর্শন ধারনগত মতাদর্শে বড় রকমের শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে এই শুন্যতা দুরীকরনে অচিরেই পদক্ষেপ না নিলে চরম মুল্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে এই শুন্যতা পুরন করতে হবে। নেতাকর্মীদের মধ্যে রাজনৈতিক "জ্ঞানের পরিধি" শুন্যতার পিছনে আমি 'ঘুরে ফিরে' একটি কারনই উৎঘাটন করতে পেরেছি। আর তা হল,--" জ্ঞানের অভাব,লেখাপড়া না করা,নেতার স্তুতিতে সর্বক্ষন ব্যয়, নেতাদের আমিত্বের অহংবোধ,কর্মিদের ব্যক্তিগতকাজে ব্যবহার, নতুন নেতৃত্ব বিকাশে সর্বক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি।" মহামান্য আদালত 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের' রিট খারিজ করেছে।খারিজের অর্থ কি পুর্নবহাল?পঞ্চম সংশোধনী সর্ব উচ্চ আদালত বাতিল করেছে।অষ্টম সংশোধনীও বাতিল করেছে।দুই সামরিক সরকারের করা আইন বিধি শাষন বাতিল বলে রায় দিয়েছে।রিট পিটিশন বাতিল হলে রাষ্ট্র ধর্ম বহাল হবে কোথায়? আদালত পঞ্চম সংশোধনী বাতিল রায় আবার বাতিল করেছে?সংশোধনী থাকলেইতো বহাল হবে,না থাকলে কোথায় হবে? এইখানেই বিষয়টি মহত্ব নিহীত আছে,"আদালত কতৃক ৫ম/৮ম সংশোধনী রায়ের আংশিক কায্যকর করেছে সরকার, "বাদবাকী অংশ গ্রহন বর্জন কিছুই করেনি" -আগামী প্রজম্মের জন্য তুলে রেখেছেন জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী" ২০৪১ সালে রুপকল্প" বাস্তবায়িত হয়ে উন্নত,সমৃদ্ধ শিক্ষিত জ্ঞানভিত্তিক জাতিগঠন করে তাঁদের নিকট থেকে রায় নিয়ে বাস্তবায়ন করবে নতুন প্রজম্মের তেজস্বী কোন একনেতা। তাঁর আগে উন্নত,শিল্প সমৃদ্ধ দেশ গঠন করার জন্য যত টুকু ছাড় প্রয়োজন দিয়ে যেতে রাজী আছেন দেশরত্ম। সেই পয্যন্ত মহাখুশী থাকুন মুজিব আদর্শের লড়াকু সৈনীক বন্ধুরা। রাজনীতি শেখার জানার বুঝার সময় এখন কোথায়, ডিজিটাল যুগের ছেলে মেয়েরা এনালগের ইয়া বড় পুস্তক পড়বেইবা কেন? মাঠে ঘাঠে নেতা জনগনের মাঝে বিচরন করে তাদের মনের ভাষা স্লোগানে শ্লোগানে দাবিতে রুপান্তর করতেন। রুপান্তরীত দাবী নেতার মুখে প্রকাশ পেত চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে।বর্তমানের রাজনীতিতে নেতার নির্দেশ তৃনমুলে বাস্তবায়ন করার নিমিত্তে গড়ে তোলা হয় একাধিক সিন্ডিকেট । নিয়ন্ত্রন করা হয় দল ও সরকার। ভাইয়ের জায়গা দখল করেছে বস-নির্দেশনা দাতার পরিচিতি বেড়ে হয়েছে হাই কমান্ড।জনগনের নেতা নিয়ন্ত্রনের ভার -চলে এসেছে নেতায় কর্মী নিয়ন্ত্রনে। ""হতেও পারি আদর্শচ্যুত""------------ _______________________________ জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন