২৭শে মার্চ সাম্প্রদায়িক চেতনার দ্বিতীয়বার কবর রচিত হবে ---জাতি আশায় বুক বেঁধেছে--- ♥~~~~~~~~~~~~~♥ বাংলাদেশের সংবিধান সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম লিখিত একটি দলিল আকারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।দেশ বিদেশের অভিজ্ঞ সংবিধান বিশারদেরা এই সংবিধানের ভুয়সি প্রসংশা করে একাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছিলেন তৎসময়ে।জাতির জনকের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের আলোকে জনমানুষের চাহিদার প্রতি সম্যক যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন, তাঁর সবটুকু উজাড় করে এই সংবিধান সৃজনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তরুন কিন্তু অভিজ্ঞ কিছু আইনজ্ঞ ও পোড় খাওয়া কয়েক রাজনীতিবিদের হাতে।তাঁর নির্দেশ ও পরামর্শ নিয়ে তাঁরা স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রনয়ন করে ছিলেন তৎসময়ের গনতান্ত্রিক বিশ্বের সেরা সুলিখিত সংবিধান,- "গনপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার" শিরোনামের বিখ্যাত রাষ্ট্র পরিচালনার দলিলটি। পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে আজকে সেই সংবিধানের চিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই।যা আছে তা পোষ্ট মর্টেম করা পঁচাগন্ধযুক্ত লাশ।তাই বলছিলাম ১৯৭২-এর সংবিধান নেই। কমপক্ষে পনের বার অপারেশনের পর এখন যা আছে, তা ১৯৭২এর ধ্বংসাবশেষ মাত্র। মর্মর অবস্থায় কোন ররকমে নি:শ্বাসটা বের হয়ে জানান দিচ্ছে আমাকে তোমরা চিকিৎসা কর,আমি ভাল হয়ে যাব। বর্তমান সরকার বড় রকমের সুযোগ পেয়েও ১৯৭২-এ ফিরে যায়নি। আমাদের সংবিধানের উপর স্বৈরাচারী সরকার সমুহ অনেক আঘাত করেছেন। জিয়া-এরশাদ তালিকার শীর্ষে। ক্ষমতায় থাকার জন্য দুজননেই সংবিধানকে তাদের বাপদাদার সম্পত্তির মতো করে একবার পুকুর কেটেছে,একবার দিঘি কেটেছে। ইচ্ছামত অপারেসন করে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছেন। সবচেয়ে বড় অপারেশনটি করেছে কুখ্যাত খুনী মেজর জিয়া ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে।সংবিধানের হাত,পা মাথা যা ছিল সব কেটে ফেলে দিয়েছেন। স্বৈরাচার এরশাদ ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে অস্থিমর্জ্যাই বের করে ফেলে দিয়েছেন,সেখানে স্থাপন করেছে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টির চেতনার ক্যাপসোল। সেনা শাষকদ্বয়ের দুটি সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ পুনরায় পাকিস্তানের মতো একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হল। আদালতের রায়ের বর্ননানুসারে অবশ্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ১৯৭২এর সংবিধানে ফিরে আসতে পারত।রায়ের ব্যাখ্যায় বর্ননায় যা পাওয়া যায় তাতেই ৭২ এর সংবিধান পুন:জ্জিবিত কোন সন্দেহ নেই। সরকার শুধু ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল’ অংশটুকু গ্রহণ করেছেন। রায়ের বাকি অংশ দীর্ঘ দিন ধর্মব্যবসায়ীদের শাষনে অদৃষ্টবাদিদের যে উত্থান ঘটেছে তাঁদের এবং নব জম্মনেয়া উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদীদের সন্তুষ্ট করতে বাদবাকি রায় এড়িয়ে গেছেন। লাভ কি হল? সরকার কি তাঁদের কালোথাবা থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে রক্ষা করতে পেরেছেন? নাকি তাঁদের হত্যা তালিকা থেকে জাতির জনকের কন্যার নাম বাদ দিতে পেরেছেন? নবী করিম (স:)এর বিশ্বস্ত সাহাবী খোলাফায়ে রাসাদীনের তিন খলিফাও তাঁদের বিষাক্ত ছোঁবল থেকে রক্ষা পায়নি, জাতির জনকের কন্যা কিভাবে পাবেন আশা করেন? যাইহোক রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে ২৮ বছর আগে দায়ের করা রিট-পিটিশনের উপর পুনরায় শুনানি শুরু হচ্ছে ২৭ মার্চ ২০১৬ইং তারিখে।যেহেতু পুর্ববতী রায়ে ৫ম ও ৮ম সংশোধনী বাতিল করেছে, মেজরদ্বয়ের শাষন অবৈধ ঘোষনা করেছে,সেহেতু২৭শে মার্চের রাষ্ট্র ধর্মের উপর শুনানীতে "রাষ্ট্র ধর্ম" বাতিল হচ্ছে ইহা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই রীট যারা করেছিলেন সেই স্বনাম ধন্য ব্যাক্তিবর্গ এত দিন জীবিত থাকার কথা নয়। তাঁদেরকে মরনোত্তর অভিনন্দন জানাই।যারা জীবিত আছেন তাঁদের প্রতিও রইল অগ্রিম প্রানঢালা ভালবাসা। হাইকোর্টের দেরিতে হলেও হুঁশ হয়েছে রিটটির মীমাংসা হওয়ার দরকার, তাই কায্য তালিকার অন্তভুক্ত হয়েছে।দেশবাসী বিশেষকরে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মানুষ চায় তাঁদের সংগ্রামের, যুদ্ধের অঙ্গিকার বাস্তবায়ন হোক। জনগন এটাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত, মামলার রায় যাই হোক, স্বাগত জানাবেই। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আশা করে সরকার রায় যথাযথ বাস্তবায়ন করবেন। এ কথাটি বলার কারণ এই যে, বহু মামলার রায়ের কথা আমরা জানি, রায় অবজ্ঞা করেনি সত্য,বাস্তবায়নও করেনি সরকার। ভারতের মত পরমতসহিঞ্চু দেশেও রাজীব গান্ধী সরকার মৌলবাদীদের খুশি করতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে লোকসভায় "শাবনুর" মামলার রায় উল্টে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশেও বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে আমরা চাই না তদ্রুপ কোন নজির স্থাপিত হোক। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এখন যে কোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশি স্বাধীন।গনমানুষের যথেষ্ট আস্থা ফিরে এসেছে।জাতিয় ও আন্তজাতিক চাপ উপেক্ষা করে কোটি কোটি ডলারের লোভ সংবরন করে বেশ কিছু রায় ইতিমধ্যে বহাল রেখে জন আস্থার শিখরে আদালতকে নিয়ে যেতে পেরেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মহামান্য প্রধান বিচারপতির কিছু পদক্ষেপ ও কথাবার্তায় জনগন আন্তরিকভাবে গ্রহন করেছে।যদিও বিচারপতি মহোদয় সম্পর্কে একাধিক ঘটনা বাজারে চড়িয়ে চিটিয়ে আছে- তিনি যে সাক্ষ-প্রমানকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন ইতিমধ্যেই তা প্রমান করতে পেরেছেন। সবচাইতে মজার ব্যপারটি হল দুই মন্ত্রীকে আদালতে তলব করে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ও উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন । একটি দেশের সাধারণ মানুষের সর্বশেষ আস্থার স্থল হচ্ছে আদালত।যে দেশের আদালত যতটা স্বাধীন সেই দেশের গণতন্ত্র ততটাই মজবুত। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা সদ্য দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলেছেন - ‘দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের বক্তব্য নয়’- আওয়ামী লীগের বক্তব্যও নয়। প্রধান মন্ত্রী বিচক্ষনতার সঙ্গে জবাব দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সরকার এবং সরকারের বর্তমান প্রশাসন আদালতকে সমীহ করে। আমি সর্বান্তকরনে মনে করি জাতির জনকের কন্যা একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা দিতে পেরেছেন, "বর্তমান সরকার এবং সরকারের প্রশাসন চায় আদালত স্বাধীন ও বলিষ্ঠভাবে কাজ করুক।দেশে আইনের শাষন,আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ফিরে আসুক।বিচার হীনতার সংস্কৃতির অবসান হোক।সে যেই হোকনা কেন আইনের চোখে সবাই সমান।অপরাধ করে কেউ যেন রক্ষা না পায়, এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হোক। পরিশেষে বলতে চাই, ২৩বছরের শাষন শোষন বঞ্চনার হাত থেকে মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিব জাতিকে মুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিকের মার্য্যদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাঙ্গালী জাতিকে একটি দেশ উপহার দিয়েছেন। অধিকারি করেছেন লাল সবুজের পতাকার, দিয়েছেন নীজেরা নীজেদের শাষন করার দলিল।সব কিছুই অবিকল ফেরৎ আনার আপ্রান চেষ্টারত: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার। আবেদন থাকবে '৭২ এর দলিলখানাও যেন ২৭শে মার্চ অপারেশন শেষে হাসপতাল থেকে আসার পর আপনার হাতে সুশ্রুষা পেয়ে যথামার্য্যদায় অবিকলকারে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সহ সর্বস্তরে প্রতিস্থাপিত হতে পারে তাঁর উদ্যোগ গ্রহন করবেন। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনা
'৭২ এর সংবিধান অবিকল পুন:প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রাম জিয়ার সংশোধনীর পর থেকেই শুরু হয়।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার পুন:প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার ২০০৮ইং সালের নির্বাচনী ইসতেহারে সংযোজন করে। বিপুল গনরায় নিয়ে সরকার গঠন করার পর আইনী জটিলতার কারনে সংবিধান পুন:প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার থেকে সরে আসে।প্রখ্যাত মাজদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলায় ৫ম ও ৮ম সংশোধনী বাতিল হলে বিষয়টি আবার সামনে আসে।রায়ের কিয়দাংশ কায্যকর করে বাদবাকী অংশ আদালতে মামলার কারনে বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দেয়। এমত:বস্থায় আগামী ২৭শে মার্চ "রাষ্ট্র ধর্ম" এর উপর শুনানীর দিন ধায্য করে আদালত।আশা করা যায় রায় গনমানুষের আশা আখাংকার প্রতিফলন ঘটবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন