২৭শে মার্চ সাম্প্রদায়িক চেতনার দ্বিতীয়বার কবর রচিত হবে ---জাতি আশায় বুক বেঁধেছে--- ♥~~~~~~~~~~~~~♥ বাংলাদেশের সংবিধান সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম লিখিত একটি দলিল আকারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।দেশ বিদেশের অভিজ্ঞ সংবিধান বিশারদেরা এই সংবিধানের ভুয়সি প্রসংশা করে একাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছিলেন তৎসময়ে।জাতির জনকের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের আলোকে জনমানুষের চাহিদার প্রতি সম্যক যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন, তাঁর সবটুকু উজাড় করে এই সংবিধান সৃজনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তরুন কিন্তু অভিজ্ঞ কিছু আইনজ্ঞ ও পোড় খাওয়া কয়েক রাজনীতিবিদের হাতে।তাঁর নির্দেশ ও পরামর্শ নিয়ে তাঁরা স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রনয়ন করে ছিলেন তৎসময়ের গনতান্ত্রিক বিশ্বের সেরা সুলিখিত সংবিধান,- "গনপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার" শিরোনামের বিখ্যাত রাষ্ট্র পরিচালনার দলিলটি। পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে আজকে সেই সংবিধানের চিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই।যা আছে তা পোষ্ট মর্টেম করা পঁচাগন্ধযুক্ত লাশ।তাই বলছিলাম ১৯৭২-এর সংবিধান নেই। কমপক্ষে পনের বার অপারেশনের পর এখন যা আছে, তা ১৯৭২এর ধ্বংসাবশেষ মাত্র। মর্মর অবস্থায় কোন ররকমে নি:শ্বাসটা বের হয়ে জানান দিচ্ছে আমাকে তোমরা চিকিৎসা কর,আমি ভাল হয়ে যাব। বর্তমান সরকার বড় রকমের সুযোগ পেয়েও ১৯৭২-এ ফিরে যায়নি। আমাদের সংবিধানের উপর স্বৈরাচারী সরকার সমুহ অনেক আঘাত করেছেন। জিয়া-এরশাদ তালিকার শীর্ষে। ক্ষমতায় থাকার জন্য দুজননেই সংবিধানকে তাদের বাপদাদার সম্পত্তির মতো করে একবার পুকুর কেটেছে,একবার দিঘি কেটেছে। ইচ্ছামত অপারেসন করে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছেন। সবচেয়ে বড় অপারেশনটি করেছে কুখ্যাত খুনী মেজর জিয়া ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে।সংবিধানের হাত,পা মাথা যা ছিল সব কেটে ফেলে দিয়েছেন। স্বৈরাচার এরশাদ ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে অস্থিমর্জ্যাই বের করে ফেলে দিয়েছেন,সেখানে স্থাপন করেছে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টির চেতনার ক্যাপসোল। সেনা শাষকদ্বয়ের দুটি সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ পুনরায় পাকিস্তানের মতো একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হল। আদালতের রায়ের বর্ননানুসারে অবশ্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ১৯৭২এর সংবিধানে ফিরে আসতে পারত।রায়ের ব্যাখ্যায় বর্ননায় যা পাওয়া যায় তাতেই ৭২ এর সংবিধান পুন:জ্জিবিত কোন সন্দেহ নেই। সরকার শুধু ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল’ অংশটুকু গ্রহণ করেছেন। রায়ের বাকি অংশ দীর্ঘ দিন ধর্মব্যবসায়ীদের শাষনে অদৃষ্টবাদিদের যে উত্থান ঘটেছে তাঁদের এবং নব জম্মনেয়া উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদীদের সন্তুষ্ট করতে বাদবাকি রায় এড়িয়ে গেছেন। লাভ কি হল? সরকার কি তাঁদের কালোথাবা থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে রক্ষা করতে পেরেছেন? নাকি তাঁদের হত্যা তালিকা থেকে জাতির জনকের কন্যার নাম বাদ দিতে পেরেছেন? নবী করিম (স:)এর বিশ্বস্ত সাহাবী খোলাফায়ে রাসাদীনের তিন খলিফাও তাঁদের বিষাক্ত ছোঁবল থেকে রক্ষা পায়নি, জাতির জনকের কন্যা কিভাবে পাবেন আশা করেন? যাইহোক রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে ২৮ বছর আগে দায়ের করা রিট-পিটিশনের উপর পুনরায় শুনানি শুরু হচ্ছে ২৭ মার্চ ২০১৬ইং তারিখে।যেহেতু পুর্ববতী রায়ে ৫ম ও ৮ম সংশোধনী বাতিল করেছে, মেজরদ্বয়ের শাষন অবৈধ ঘোষনা করেছে,সেহেতু২৭শে মার্চের রাষ্ট্র ধর্মের উপর শুনানীতে "রাষ্ট্র ধর্ম" বাতিল হচ্ছে ইহা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই রীট যারা করেছিলেন সেই স্বনাম ধন্য ব্যাক্তিবর্গ এত দিন জীবিত থাকার কথা নয়। তাঁদেরকে মরনোত্তর অভিনন্দন জানাই।যারা জীবিত আছেন তাঁদের প্রতিও রইল অগ্রিম প্রানঢালা ভালবাসা। হাইকোর্টের দেরিতে হলেও হুঁশ হয়েছে রিটটির মীমাংসা হওয়ার দরকার, তাই কায্য তালিকার অন্তভুক্ত হয়েছে।দেশবাসী বিশেষকরে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মানুষ চায় তাঁদের সংগ্রামের, যুদ্ধের অঙ্গিকার বাস্তবায়ন হোক। জনগন এটাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত, মামলার রায় যাই হোক, স্বাগত জানাবেই। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আশা করে সরকার রায় যথাযথ বাস্তবায়ন করবেন। এ কথাটি বলার কারণ এই যে, বহু মামলার রায়ের কথা আমরা জানি, রায় অবজ্ঞা করেনি সত্য,বাস্তবায়নও করেনি সরকার। ভারতের মত পরমতসহিঞ্চু দেশেও রাজীব গান্ধী সরকার মৌলবাদীদের খুশি করতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে লোকসভায় "শাবনুর" মামলার রায় উল্টে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশেও বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে আমরা চাই না তদ্রুপ কোন নজির স্থাপিত হোক। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এখন যে কোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশি স্বাধীন।গনমানুষের যথেষ্ট আস্থা ফিরে এসেছে।জাতিয় ও আন্তজাতিক চাপ উপেক্ষা করে কোটি কোটি ডলারের লোভ সংবরন করে বেশ কিছু রায় ইতিমধ্যে বহাল রেখে জন আস্থার শিখরে আদালতকে নিয়ে যেতে পেরেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মহামান্য প্রধান বিচারপতির কিছু পদক্ষেপ ও কথাবার্তায় জনগন আন্তরিকভাবে গ্রহন করেছে।যদিও বিচারপতি মহোদয় সম্পর্কে একাধিক ঘটনা বাজারে চড়িয়ে চিটিয়ে আছে- তিনি যে সাক্ষ-প্রমানকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন ইতিমধ্যেই তা প্রমান করতে পেরেছেন। সবচাইতে মজার ব্যপারটি হল দুই মন্ত্রীকে আদালতে তলব করে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ও উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন । একটি দেশের সাধারণ মানুষের সর্বশেষ আস্থার স্থল হচ্ছে আদালত।যে দেশের আদালত যতটা স্বাধীন সেই দেশের গণতন্ত্র ততটাই মজবুত। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা সদ্য দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলেছেন - ‘দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের বক্তব্য নয়’- আওয়ামী লীগের বক্তব্যও নয়। প্রধান মন্ত্রী বিচক্ষনতার সঙ্গে জবাব দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সরকার এবং সরকারের বর্তমান প্রশাসন আদালতকে সমীহ করে। আমি সর্বান্তকরনে মনে করি জাতির জনকের কন্যা একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা দিতে পেরেছেন, "বর্তমান সরকার এবং সরকারের প্রশাসন চায় আদালত স্বাধীন ও বলিষ্ঠভাবে কাজ করুক।দেশে আইনের শাষন,আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ফিরে আসুক।বিচার হীনতার সংস্কৃতির অবসান হোক।সে যেই হোকনা কেন আইনের চোখে সবাই সমান।অপরাধ করে কেউ যেন রক্ষা না পায়, এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হোক। পরিশেষে বলতে চাই, ২৩বছরের শাষন শোষন বঞ্চনার হাত থেকে মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিব জাতিকে মুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিকের মার্য্যদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাঙ্গালী জাতিকে একটি দেশ উপহার দিয়েছেন। অধিকারি করেছেন লাল সবুজের পতাকার, দিয়েছেন নীজেরা নীজেদের শাষন করার দলিল।সব কিছুই অবিকল ফেরৎ আনার আপ্রান চেষ্টারত: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার। আবেদন থাকবে '৭২ এর দলিলখানাও যেন ২৭শে মার্চ অপারেশন শেষে হাসপতাল থেকে আসার পর আপনার হাতে সুশ্রুষা পেয়ে যথামার্য্যদায় অবিকলকারে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সহ সর্বস্তরে প্রতিস্থাপিত হতে পারে তাঁর উদ্যোগ গ্রহন করবেন। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনা

'৭২ এর সংবিধান অবিকল পুন:প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রাম জিয়ার সংশোধনীর পর থেকেই শুরু হয়।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার পুন:প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার ২০০৮ইং সালের নির্বাচনী ইসতেহারে সংযোজন করে। বিপুল গনরায় নিয়ে সরকার গঠন করার পর আইনী জটিলতার কারনে সংবিধান পুন:প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার থেকে সরে আসে।প্রখ্যাত মাজদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলায় ৫ম ও ৮ম সংশোধনী বাতিল হলে বিষয়টি আবার সামনে আসে।রায়ের কিয়দাংশ কায্যকর করে বাদবাকী অংশ আদালতে মামলার কারনে বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দেয়। এমত:বস্থায় আগামী ২৭শে মার্চ "রাষ্ট্র ধর্ম" এর উপর শুনানীর দিন ধায্য করে আদালত।আশা করা যায় রায় গনমানুষের আশা আখাংকার প্রতিফলন ঘটবে।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন