মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা, উন্নয়ন, অগ্রগতি, ধৈয্যের চাকায় পৃষ্ট করে----অশুভ শক্তির চক্রান্তের জবাব দিতে চান------ _______________________________ তারেক জিয়ার গোপন রাজনৈতিক আশ্রয়, ২৮বছর পর "রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম" বাতিল রিট শুনানীর জন্য উত্থাপন, শেখ হাসিনা বিহীন নির্বাচনের হুমকি সবকিছুই শক্তিধর রাষ্ট্রের গোপন ষড়যন্ত্রের অংশ। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ অন্যান্য ১৩টি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হওয়ায় গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলকে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। ওই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোল সচিবালয় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দলিলাদি বিশ্লেষণের পর রেড নোটিশ জারি করেছিল। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে জারি করা রেড নোটিশ প্রত্যাহার করেছে ইন্টারপোল।বিষয়টি অত্যান্ত সংগোপনেই করা হয়েছে।এই ধরনের নোটিশ প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশকে জানানোর বিধান থাকলেও সংস্থাটি তা জানায়নি। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ইন্টারপোল জানায় তারেক প্রটেকটিব স্ট্যাটাসে আছে। রাজনৈতিক আশ্রয়ের মতোই প্রটেকটিভ স্ট্যাটাসও বিদেশে আশ্রয় গ্রহণের অন্য একটি উপায়, হয়তোবা হতে পারে। কোনো তদন্তাধীন ফৌজদারি মামলায় বা বিচাধীন মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার বিধান ও দৃষ্টান্ত আছে। তারেক রহমান একাধিক ফৌজদারি মামলার অভিযোগপত্র ভুক্ত আসামি, যা আদালতে বিচারাধীন।এইরুপ ক্ষেত্রে রেড নোটিশ জারি হওয়া কোন ব্যাক্তি কোন দেশের সরকারের অনুমতিতে--সেই দেশে বসবাস করার জন্য বৈধ আশ্রয় নিতে পারে কিনা- বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখছে।এইরুপ আশ্রয়ের ব্যপারটি গোপনীয় হবে কেন? ইন্টারপোলই বা কেন-কোন দেশের প্রটেকটিব স্ট্যাটাস পেয়েছে তারেক--বলতে অপরাগতা প্রকাশ করবে? গত কিছু দিন আগে খালেদা জিয়া প্রকাশ্য তাঁর দলীয় কাউন্সিলে হুমকি দিয়ে বলেছে,বাংলাদেশে নির্বাচন হবে-তবে সেই নির্বাচন হাসিনা মুক্ত হবে। বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বিস্ময় প্রকাশ করে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে গিয়ে প্রধান মন্ত্রী অনেকটা তকদির বাদীর মতই বলতে শুনা গেছে, "আল্লাহর হুকুম না থাকলে কেহ-ই মারতে পারবেনা।" '৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট জাতির জনকের পরিবার, আত্মীয়স্বজন সহ হত্যা করা হয়েছিল-নিশ্চয়ই সবার মৃত্যু আল্লাহর হুকুমে হয়নি,'অনেকের অকাল মৃত্যুও হয়েছে।'সব আল্লাহর হুকুমে সংঘটিত হলে "অকাল " শব্দটি আদৌ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ছিলনা। আল্লহর হুকুম অবশ্যই থাকে,সাথে নীজের অসতর্কতার কারনে অকাল মৃত্যুকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। অপরদিকে গত ৭/৮বছর উচ্চ আদালতের রায়কে বিদ্রুপ করে বহু বিবৃতি বহুজনেই প্রধান করেছেন। রায়ের বিরুদ্ধে হরতালের প্রকাশ্য ঘোষনাও দিয়েছেন- কোন কোন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব প্রাপ্ত মুখপাত্র। অনেক বুদ্ধিজীবিকে আদালতের কাঠ গড়ায় হাজির করলেও শাস্তি কাউকেই পেতে হয়নি।প্রকাশ্য রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দেয়া বক্তব্যের জন্য বা হরতাল ডাকার জন্য আদালত কাউকে সুয়োমটোও দেননি, কারো বিরুদ্ধে রুলও জারি করেননি। বাংলাদেশ সরকারের দুইজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমনতর আদালত অবমাননায় শাস্তি দিতে কার্পন্য করেনি আদালত।একই সময় আদালতে ২৮বছর আগে করা রাষ্ট্র ধর্ম 'ইসলাম' সংযোজনের বিরুদ্ধে করা রিট কোন পক্ষ থেকে শুনানীর আবেদন না করা সত্বেও শুনানীর জন্য উত্থাপন করেছে।খবরটি প্রকাশের পরক্ষনেই মহল বিশেষের পক্ষ হতে বিক্ষোভ সমাবেশ, হরতাল, বিবৃতি ইত্যাদি খুব জোরের সাথেই দেয়া শুরু হয়েছিল।আগের মতই যুক্তি বা প্রসঙ্গ তুলতে গেলেই নাস্তিক, কাফের, মোনাফেক ইত্যাদি বিশেষনের ফুল- জুড়িও যথারীতি শুরু হয়েছিল। ভয়ে দেশের বিশিষ্ট আলেম উলামারা বিষয়টির প্রয়োজন এবং ধর্মের সাথে সম্পর্ক আছে কি নেই--এই সম্পর্কেও ভালমন্দ মুখ খুলতে সাহষ করেনি।এইক্ষেত্রে দেখা গেছে 'আওয়ামী ওলামা লীগ' সবার আগে আগে হাঁটার চেষ্টাও লক্ষনীয়ভাবে ফুটে উঠেছে।এর আগেও তাঁদের কিছু বিতর্কীত ভুমিকা দেশবাসির দৃষ্টিতে সম্যক এসেছে। তবে কি ঘরের মধ্যেও কিছু বীজ '৭৫এর মতই বপন করা আছে ? গতিবিধি, আচার আচরন লক্ষ করলে অনুধাবন করলে বুঝতে কষ্ট হয়না, জাতির জনকের কন্যার দৃষ্টিতে সবকিছুই স্পষ্ট আছে। তিনি ধৈয্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে সব কিছুই একের পর এক মোকাবেলা করে যাচ্ছেন। যথাসময়ে যথার্থ্য সিদ্ধান্তটি তাঁর কাছ থেকে জাতি পাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারিরাও ব্যপারটি বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের বিরুধীতা করতেও দ্বিধা করছেনা। জনগনকে ধারনা দেয়ার আপ্রান চেষ্টা হচ্ছে -প্রধানমন্ত্রীর নিকট একক ক্ষমতা থাকা উচিৎ নয়।খমতা রাষ্ট্রপতির সাথে কিছুটা ভাগাভাগি করা দরকার। তাঁরা যখন খমতায় ছিলেন তখন ব্যপারটি তাঁদের মনেই ছিলনা-এখন মনে হচ্ছে।মনে হওয়ার মুল কারন বিশেষ বিশেষ মহুর্তে আওয়ামী লীগের অনেক দাপুটে নেতা পালিয়ে গেলেও জাতির জনকের কন্যা একাই যুদ্ধের ময়দানে সেনাপতির ভুমিকায় অবতির্ন্ন হচ্ছেন এবং বিজয় চিনিয়ে আনছেন দল ও দেশের জন্য। অশুভ শক্তির পরাজয়ই ঘটছে শুধু। পরাজিত হতে হতে দলের অস্তিত্ব নিয়েই টানাপোড়ন শুরু হয়েছে। সর্বশেষ পরাজয়টি এত সহজে, অল্পসময়ে ঘটবে অশুভ শক্তি বুঝে উঠতে পারেনি। গত দুই বছরের চেষ্টায় দেশীবিদেশী পরিকল্পনায়, মা-ছেলের একাধিক বৈঠকের সিদ্ধান্তে গড়ে উঠা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল "রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম" রিট। প্রধানমন্ত্রী দলের কিংবা আশেপাশের কারো সাথে কোন পরামর্শ না করে ঠান্ডা মেজাজে দুই বছরের ষড়যন্ত্র মাত্র পাঁছমিনিটের শুনানীতে ব্যার্থ্য করে দিলেন। তিনি তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আইনী লড়াই না করার সিদ্ধান্ত দিয়ে- ষড়যন্ত্রের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিলেন। জাতির জনকের কন্যা সম্যক বুঝতে পেরেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সাম্প্রদায়িক সংকট, উগ্র জঙ্গীবাদের উত্থান, সামরিক অভ্যুত্থান, মৌলবাদের উত্থান ইত্যাদি অশুভ শক্তির চক্রান্ত আইন করে বা পুলিশী শাষন দিয়ে নির্মুল করা যাবে না। জাতিকে শিক্ষা,সংস্কৃতি, কৃষ্টিতে এগিয়ে নিতে হবে।শিক্ষার আলো প্রতিটি ঘরে ঘরে জ্বালাতে হবে। শিক্ষাকে প্রযুক্তির শিক্ষায় রুপান্তরীত করে বিজ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গড়ে দেশকে আলোকীত করতে হবে। স্বল্প সময়ে দারিদ্রতা দূর করতে হবে।কৃষি নির্ভর অর্থিনীতির সাথে শিল্পকে সম্পৃত্ত করে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ-স্বাবলম্ভী করে তুলতে হবে। দেশ ও জাতি সমৃদ্ধশালী হলে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই সমাজের বিদ্যমান কুসংস্কার দূর হয়ে যাবে।সুদুরপ্রসারী চিন্তাচেতনার বাস্তবায়ন ঘটাতে তিনি দেশি বিদেশি বর্তমানের চক্রান্ত সমুহ সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন-প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে তাঁদের খমতার স্বপ্ন-স্বপ্নই থেকে যাবে। মা-ছেলেকে সারা জীবন জেলে রাখার উপকরন সরকারের হাতের মূঠোয়তো আছেই।বাংলাদেশ তাঁর কাংখিত উন্নয়ন অগ্রগতির সোপানে পৌছে গেলে বৃহৎ রাষ্ট্র সমুহের খবরদারিই বা কোথায় থাকবে? এমনিতে বিশেষ ব্যাক্তি ও কয়েক জোটে অংশ না নিতে বিশেষ দুত ও টেলিফোনে অনুরুধ প্রত্যাখ্যাত হয়ে মোড়লগীরি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে হয়েছে। উন্নতি অগ্রগতির রেলগাড়ী যে গতিতে চলা শুরু করেছে, একই গতিতে ষড়যন্ত্রের গাড়ী চালাতে না পারাও বিরুধী দলের ব্যর্থতা মনে করে মোড়ল রাষ্ট্র। ফলে মধ্যবর্তি নির্বাচনের জন্য কান্নাকাটিও কানে নিচ্ছেনা আগের মত।তাঁরা চায় শেখ হাসিনাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া ছাড়া বর্তমান অগ্রগতির চাকা থামানো যাবেনা। সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বিপুল সংখ্যা গরিষ্টতা পাবে আওয়ামী লীগ। জনগনের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আর কোন খবরদারীই মেনে নিবেনা দেশরত্ম শেখ হাসিনা। তারচেয়ে বর্তমান অবস্থায় ইস্যু সৃষ্টি করে অরাজগতা, নাশকতা সৃষ্টি করে জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামানোই হবে একমাত্র লক্ষ। পরিকল্পনার প্রথম ধাপ কায্যকর সম্ভব হলে দ্বিতীয় ধাপ তাঁদের-হত্যা মিশনের দিকেও দাবিত করা যাবে- তাঁদের পেইড এজেন্টদের। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ষড়যন্ত্র জাতির জনকের কন্যা কৌশলে এড়িয়ে দেশ ও জাতিকে স্বস্তি দিতে পেরেছেন।সাধারন মানুষের প্রচুর প্রসংশায় মুখরীত সারা বাংলাদেশ। __________________________ জয়বাংলা বলে আগে বাড়ো জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয়তু জাতির জনকের কন্যা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন