শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ পাকিস্তানের নিকট প্রাপ্য সম্পদ আদায়ে আন্তজাতিক আদালতের শরনাপন্ন হওয়া সময়ের দাবি--- ===============পুন:প্রকাশ========== 1971 ইং সালে পাকিস্তানের সুসজ্জিত ৯৩ হাজার সৈন্য বাঙ্গালী প্রশিক্ষনহীন,স্বল্প প্রশিক্ষিত মুক্তিযুদ্ধাদের নিকট চরম পরাজয়ের গ্লানি আজও ভুলতে পারেনি। ভুলার কথাও নয়,উর্বর ভুমি হাত ছাড়া হলে সবাই কিছুনা কিছু গ্নানিতে ভোগে।তবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও গ্লানিকর এইজন্য যে জাতির জনকের আকাশসম ব্যাক্তিত্বের নিকট দ্বিতীয় পরাজয়। পরাজয়টি ঘটেছিল দ্বিতীয় আন্তজাতিক ইসলামি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্রকরে।স্বাধীনতার পর প্রথম ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে পাকিস্তানের বিরুদীতা সত্বেও বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগদান করে ইসলামী উম্মাহ সদস্য পদ গ্রহন করেন।দ্বিতীয় সম্মেলন ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোর অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিচক্ষনতা এবং দক্ষ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের যোগ্য কূটনীতি পরিচালনার কারনে মুসলিম বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রকে নিমন্ত্রন পুর্বক স্বীকৃতি আদায় করে শক্ত অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানকে একঘরে করে দিতে সক্ষম হন। সম্মেলন কে ঘিরে আন্তজাতিক রাজনীতির কুটচালে বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশম্যটিক রাজনীতির নিকট পাকিস্তান সরকারের চরম পরাজয় ঘটানোর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেষ পেরাগ তাঁদের ঘাড়ের মাঝ বরাবর ঠুকে দেন। বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগদানের প্রশ্নে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ স্বীকার পুর্বক পাকিস্তানের স্বীকৃতি দাবি করে বলেন, "যে দেশ আমার দেশকে মেনে নেয় নাই,বাংলাদেশের বাস্তবতা মানতে পারেননি--"সেই দেশে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আমার বাংলাদেশ অংশ গ্রহন করতে পারেনা।" ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রিত অন্য মুসলিম দেশ গুলীও সম্মেলন অনুষ্ঠানে সংশয় প্রকাশ করে বিবৃতির ঝড় উঠলে পাকিস্তান বাংলাদেশক" স্বাধীন সার্বভৌম দেশ" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রন পত্র পাঠাতে বাধ্য হন। ২৩বছরের পাকিস্তানের সময়টিতে দেশটির সামরিক ও সামন্ততান্ত্রিক নেতৃত্ব তৎকালিন পুর্ব পাকিস্তানকে শোষন করার মানষে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। তখনকার মানসিকতা থেকে পাকিস্তান আজও বের হয়ে আসতে পারেনি। বলা যায় সম্পর্ক উন্নত করায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার দিকেই তাঁদের জোঁক।তাঁর একমাত্র কারন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যখনি আওয়ামী লীগ আসে তখনি পুরাতন বকেয়া নিয়ে কুটনৈতিক ভাবে কথাবার্তা শুরু করে।আওয়ামী লীগ মনে করে উক্ত পাওনা সম্পদ নৈতিকভাবে এবং হিস্যা অনুসারে বাংলাদেশ প্রাপ্য। এই পাওনা আদায় করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা সব সময়ই করে আসছে। বাংলাদেশ কখনও পাকিস্তানকে অমর্যাদা করে এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় কোন বিবৃতি বা অনৈতিক হস্তক্ষেপ করেনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে হত্যা, নারী নির্যাতন, মানবাধিকার লংঙনের অভি- যোগে '১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা আটক' অবস্থায় বিচারের পদক্ষেপ নিলে তৎকালিন পাকিস্তানের ভূট্রো সরকার জনগনের নিকট চরম ভাবে জবাবদিহীতার সম্মুখীন হয়। তাঁদের সেনা অফিসারদের বিচারের উদ্যোগ নিলে পাকিস্তানের জনগন এবং সরকারে আতংকের সৃষ্টি করে। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো অভ্যন্তরীন ভাবে চাপের সম্মুখীন হন।বঙ্গবন্ধুর চিন্তা চেতনায় তখন প্রায় আড়াই লাখ বাঙালি পাকিস্তানে অবস্থানরত ছিল-- তাঁদের ফেরৎ আনার বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছিল।তাঁদের মা বাবা আত্মীয়স্বজনও বাংলাদেশে তাঁদের ভাগ্য নিয়ে চিন্তায় অস্থির ছিলেন।একসময় বড় সংকট হয়ে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করবে এটা নিশ্চিত বুঝতে পেরেছিলেন জাতির জনক। তাদের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের প্রশ্নেও পাকিস্তান জটিলতা সৃষ্টি করে রেখেছিল।সেনা অফিসার ছাড়াও বাংলাদেশের মাটিতে আত্মসমর্পণকারী ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা তখন বঙ্গবন্ধুর শক্তি। বাংলাদেশের অধিবাসিদের ফেরত আনার বড় হাতিয়ার। তাঁদেরকে নিয়ে ভুট্টো কম বিপদে পড়েছিলেন বললে ভুল হবে রীতিমত বিভ্রান্ত ছিলেন।ভূট্রোর হাতেও বাংলাদেশি নাগরিক গন ৯৩ হাজার সেন্য ফেরৎ নেয়ার বড় হাতিয়ার।এর বাইরে বাংলাদেশ শর্ত দিয়ে দাবি করেছিল পাকিস্তানের স্বীকৃতি। অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করেছিল ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীসহ ৯৩ হাজার সেনাসদস্যের নিঃশর্ত মুক্তির। ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্ট ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে পাকিস্তান যুদ্ধপরাধি সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করবে মর্মে, বাংলাদেশ পাকিস্তানি সৈন্যদের বিচারের দাবি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল, তার অবসান ঘটেছিল। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেসব ব্যক্তি মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচার করা যাবে না- এ ধরনের কোনো শর্তই চুক্তিতে ছিল না। জাতির জনক ঘোষনা দিয়েছিলেন যাঁরা মানবতা বিরুধি অপরাধে জড়িত ছিলেন না, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজাকার আলবদর, আলসামস হয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের বিরুদ্ধে তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে অস্ত্র ধরেছিলেন তাঁদেরকে সাধারন ক্ষমা করে দিয়ে বলেছিলেন দেশ উন্নয়নে কাজ করার জন্য।যাঁরা হত্যা, লুন্ঠন,নারি দর্শন,অগ্নিসংযোগের মত মানবতা বিরুধি অপরাধে জড়িত ছিলেন তাঁদের জাতির জনক ক্ষমা করেননি।তাঁদের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছিল,কারো কারো বিচার শেষে জেল জরিমানা হয়েছিল এবং অনেকেই জেলে ছিলেন। পাকিস্তান বার বার যে চুক্তির কথা তাঁদের প্রতিবাদে এবং বিবৃতিতে উল্লেখ করে বলতে চায় তা হচ্ছে ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিলে সম্পাদিত চুক্তি।তাতেও মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচার করা যাবে না- এমন সুনির্দিষ্ট কোন শর্ত উল্লেখ করা নেই। তারপরও বার বার চুক্তিটির উল্লেখ করে পাকিস্তান বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।তাই বলা যায় তাঁরা বর্তমান বাংলাদেশের বাস্তবতা এখন পয্যন্ত মেনে নিতে পারেননি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের ভুমিকায় পরিষ্কার অনুধাবন করা যাচ্ছে,'১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রয়ারি লাহোরে দ্বিতীয় ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর আগে, যে স্বীকৃতি বাংলাদেশকে দিয়েছিল তা তাদের অন্তর থেকে দেয়নি বাধ্য হয়েই দিয়েছিল। ১৯৭৪ থেকে ২০১৫ সময়টা অনেক দীর্ঘ। এত দীর্ঘ সময়েও দুদেশের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক সমস্যা অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রাপ্যতার বিষয়টি সমাধান হয়নি।১৯৭৫ ইংরেজী সালে বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর নামে বেনামে পাকিস্তানিরাই দেশ শাষন করেছিল। ফলে তাঁরা বাংলাদেশের পাওনা সম্পদ ফেরৎ দেয়ার বিষয় নিয়ে একরকম স্বস্তিতেই ছিল।দীর্ঘ ২১ বছর এই নিয়ে কোন কূটনৈতিক তৎপরতা তাঁদের মোকাবেলা করার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু এবার বিধিবাম, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির যেভাবে উম্মেষ ঘটেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে, তাঁদের তল্পিবাহকেরা আবার ক্ষমতায় আসতে আদৌ পারবে কিনা বা আসলেও অনেক সময়ের প্রয়োজন হতেপারে, এমনটি চিন্তা চেতনার উদ্রেক হওয়ায় পাকিস্তানের সর্বস্তরের রাজনীতিক, চিন্তাবীদ, শুশীলদের মনে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ফলশ্রতিতে আগের বিচারের রায় গুলীতে কিছু রাজনৈতিক দল,সামাজিক সংগঠন,ব্যাক্তি বিশেষ কোন প্রতিক্রিয়া না জানালেও এবার সাকা-মোজাহীদ প্রশ্নে একে অপরের প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন রাজনৈতিক দল গুলিও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে একহাট্রা হয়েছে। আগবাড়িয়ে কিঞ্চিত বর্তমানের কূটনৈতিক সম্পর্ককেও ধংস করার মানষে সব রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে বাংলাদেশের মানবতা বিরুধীদের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহন করেছে। পাকিস্তানের কাছে পাওনা সম্পদ ফেরত, বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিক বিহারীদের পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন, বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে, আগে থেকেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল দেশটি। পাকিস্তানের কাছে পাওনা সম্পদের বিষয়টি একাদিকবার বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হলেও পাকিস্তান তেমন সাড়া আদৌ দেয়া প্রয়োজন আছে- তেমনটিও মনে করেনি। বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে ১৯৭৪ সালে প্লানিং কমিশন ২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা পাওনা দাবি করে একটি রিপোর্ট প্রণয়ন করেছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের সম্পত্তি, জনসংখ্যা, সংখ্যাসাম্য নীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও সম্পদের পরিমাণ হিসাব করে ওই পাওনা টাকার দাবি বিভিন্ন পয্যায়ে উত্থাপন করে আসছে বাংলাদেশ। "গত ৪০ বছরে এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় বর্তমান বিশ্ববাজারের তুলনামুলক মুল্য নির্ধারন করে আন্তজাতিক আদালতে শরনাপন্ন হওয়া যায় কিনা এই বিষয়টি যখন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার খতিয়ে দেখছে, তখনি দেশটির কাঁপুনি এসেছে,যে কোন ভাবে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার মানষেই তাঁরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করছিল। এমনি মহুর্তে দুই জনের ফাঁসির আদেশকে তাঁরা ইস্যু হিসেবে নিয়ে বর্তমানের যৎকিঞ্চিত সম্পর্ক আছে তাও বৈরী করার ষড়যন্ত্র করছে। পাকিস্তান বাংলাদেশ বিমানকে একটি পুরনো টাইপের বোয়িং বিমান ফেরৎ দিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্যতাকে আগেই নৈতিক স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে--যা একত্রিত পাকিস্তানের সম্পদের উপর আমাদের প্রাপ্যতার তুলনায় কিছুই নয়। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় পাকিস্তান নীতিগত ভাবে বাংলাদেশের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে একটি কাউন্সিল গঠন করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সরকারে পরিবর্তন আসাতে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তিতে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি বিহারীদের পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে বহু দেনদরবার হলেও কোনো অগ্রগতি অদ্যাবদি পরিলক্ষিত হয়নি। এসব পাকিস্তানি নাগরিক এখনও মনমানষিকতায়, চেতনায় পাকিস্তানি ভাবাদর্শ বহন করে এবং তাঁরা পাকিস্তানের নাগরিক দাবি করে-সেখানে যেতেও চায়। অনেকে বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে চলেও গেছে। প্রায় ২ লাখ পাকিস্তানি এখনও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে। যাহা বাংলাদেশের জন্য বিরাট এক বোঝা। ১৯৮৫ইং সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক এদের নিতে রাজি হয়েছিলেন,এবং ঘোষনাও দিয়েছিলেন। জনাব ভূট্রোর মেয়ে পাকিস্তানের পিপলস পার্টি নেতা বেনজির ভুট্টোর বিরোধিতায় জিয়াউল হক মাঝপথে প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। ভুট্টো যেমন এদের পাকিস্তানি বলে স্বীকৃতি দেননি তাঁর মেয়েও সেই পথ অনুসরন করে বিহারীদের পাকিস্তানি বলতেও রাজি হলেন না। এখানে উল্লেখ করতে চাই যে কারনটি পাকিস্তানিদের খুব বেশি ভাবিয়ে তুলেছে তা হল দল হিসেবে কংগ্রেস এবং দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু, এটা আন্তজাতিক সম্প্রদায়ও অনেকটা তাই মনে করে।সেই কংগ্রেস ভারতের সরকারে থাকাকালিন সমুদ্র সীমানা নির্ধারনের পুরাতন অমিমাংশিত বিষয়টি শেখ হাসিনার সরকার আন্তজাতিক আদালতে উত্থাপন করে রায় নিয়ে এসেছে।ভারত সরকার আন্তজাতিক পয্যায় সবিশেষ বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করে,আরও হেনস্তা হওয়ার ভয়ে বিষটি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করার চেষ্টাও করেনি। দ্বিপক্ষিয় আলোচনার মাধ্যমে মিমাংসার প্রস্তাব দিলেও তা শেখ হাসিনার সরকার প্রত্যাখ্যান করে আন্তজাতিক আদালতে চলে যায়।মিয়ানমারের সাথে তাঁর আগেই আন্তজাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্রের হিস্যা জয়ী হয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ শতভাগ নিশ্চিত করেছে।শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের স্বার্থের প্রশ্নে কোন বন্ধু রাষ্ট্রকে ছাড় দিয়ে আপোষ করার উদাহরন এই পয্যন্ত তাঁদের দৃষ্টিতে আসেনি।পাকিস্তানকেও যে প্রাপ্যতার প্রশ্নে ছাড় দিবেনা তা অংক করে বুঝিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই।সুতারাং সম্পর্কের বৈরীতায় প্রাপ্য অংশ নিয়ে তালবাহানা করার জন্য অনেক আগে থেকেই বৈশম্য সৃষ্টি করে রাখার দিকেই তাঁদের জোঁক পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তাঁর কিঞ্চিত উদাহরন দেয়ার চেষ্টা করছি। পত্রপত্রিকার তথ্যানুসারে এবং বাংলাদেশ সরকারের আমদানী ও রপ্তানী ব্যুরুর তথ্যানুসারে দেখা যায়, বাংলাদেশে পাকিস্তানের রফতানির পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ২৭ দশমিক ৬ ভাগ হারে। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের আমদানি বেড়েছে মাত্র ৯ দশমিক ২ ভাগ হারে। ২০১০-১১ সময়সীমায় বাণিজ্যের পরিমাণ যেখানে ছিল ৯৮৩ মিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ৩৪০ মিলিয়ন ডলারে। এছাড়াও বর্তমানের বিশ্ব অস্থিরতার মুল ইস্যুর দিকে নজর দিলে দেখা যায়,পাকিস্তানি নাগরিক, এমনকি ঢাকাস্থ দূতাবাসের কর্মচারীরা ইতিমধ্যে নানা অপকর্মে নিজেদের জড়িত করেছেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে দেখা যায়, বেশকিছু পাকিস্তানি নাগরিক বাংলাদেশে ভারতীয় জাল নোটের অবৈধ ব্যবসা তথা পাচারের সঙ্গে জড়িত। এই সমস্ত টাকা অধিকাংশ জঙ্গি প্রতিপালনের খরছ যোগায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।এদের মধ্যে বেশ কজন ইতিমধ্যে গ্রেফতারও হয়েছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জনৈক মাজহার খান (যিনি ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত ছিলেন) অকূটনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ তাকে বহিষ্কার করেছে। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বিস্তারে কোনো কোনো পাকিস্তানি নাগরিক সরাসরি জড়িত,অনেকেই ইতিমধ্যে গ্রেপতার হয়েছেন, কিছু কিছু গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে, অনেকেই পালিয়ে বেঁচে গেছেন। মাদক ব্যাবসায় জড়িত- অনেকে গ্রেফতার হয়েছে,অনেকে গ্রেফতার এড়িয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।পাকিস্তান দুতাবাসের আশ্রয় প্রশ্রয়ে অনৈতিক কাজে উৎসাহ পাচ্ছে এমন অভিযোগও আছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সার্ক, কমনওয়েলথ, ডি-৮, ওআইসিসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য। এক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় থাকার কথা ছিল।পরিবেশ পরিস্থীতি অনুকুলে থাকলেও তা হয়নি। বরঞ্চ দিন দিন নিম্নমুখিতাই প্রকাশ পাচ্ছে।এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় পাকিস্তান যখন হস্তক্ষেপ করে, তখন দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও অবনতি হতে বাধ্য। বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানিদের নেতিবাচক প্রচারণাকে সহ্য করবে না। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে পাকিস্তান বিরোধী মনোভাব যা আছে এতে আরও শক্তিশালী হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি সামাজিক সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। আর্থিক ভিত্তি, নারীশিক্ষা, বৈদেশিক রিজার্ভ, মুদ্রামান, সাস্থ্যসেবা, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, রেমিটেন্স ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। পাকিস্তান বর্তমান বিশ্বের কোন রাষ্ট্রের জন্য কোনো ক্ষেত্রেই কোনো মডেল নয়। বাংলাদেশ বহু ক্ষেত্রেই বিশ্বের বহু রাষ্ট্রের অনুকরনীয় অনুস্বরনীয় দৃষ্টান্ত।শেখ হাসিনা বিভিন্ন পয্যায়ে যেভাবে বিশ্ব নেতৃত্বে আসীন হচ্ছেন--, পাকিস্তান তাঁর ধারে কাছেও অবস্থান নিতে পারছেনা।৪৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে রুপান্তরীত হলেও ৭০ বছরের পাকিস্তানের অবস্থান বহু দেশের নিম্নেই রয়ে গেছে।এই সমস্ত বিষয় গুলিও তাঁদের নেতৃত্বকে মর্মপীড়া দেয়।তাই বর্তমান সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে চাপে রাখতেও এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আমি মনে করি। সার্কে উভয় দেশই আছে বটে, কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দেখা যায়, পাকিস্তান মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ককে যতটুকু গুরুত্ব দেয়, সার্কের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে এখন আর তত গুরুত্ব দেয় না। পাকিস্তান যদি বাংলাদেশের ব্যাপারে তার পুরাতন ধ্যান ধারনায়, মন মানসিকতায় পরিবর্তন না আনে, তাহলে দুদেশের সম্পর্কের অবনতিতো হবেই,পাকি সমর্থক এখনও যে সমস্ত বেজম্মা আড়ালে-আবড়ালে মুখ ঢেকে দালালি করে তাঁদের দুর্দশা বাড়বে বৈ কমবেনা। সম্পর্ক চিন্নতো হবেই ন্যাক্কার জনক অপদস্ত হয়ে আন্তজাতিক ভাবে বাংলাদেশের সম্পদ ফেরৎ দিতে বাধ্য হবে। বাংলাদেশের জনগন এখনও আশা করে পাকিস্তান তার শাষককের মানসিকতায় পরিবর্তন আনবে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না, এটাই নতুন প্রজম্ম প্রত্যাশা করে। সর্ব শেষে বলতে চাই, পাকিস্তানের নিকট একত্রিত থাকা অবস্থায় আমাদের প্রাপ্য সম্পদের বর্তমান বিশ্ববাজারের মুল্যে- মুল্য নির্ধারন করে আদায়ের জন্য আন্তজাতিক শালিসি ব্যাবস্থাপনার আয়োজন করা বর্তমানে সময়ের দাবি। পাকিস্তানের প্রতি যতই অনুরাগ, আবেগ প্রদর্শন করা হোকনা কেন কখনই তাঁরা বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করে নিবেনা।জাতির জনকের নির্মম হত্যায় পাকিস্তানের সরাসরি হাত ছিল ইহা পরিষ্কারভাবে আন্তজাতিক মহলের বিবেচনায় রয়েছে।তাঁদেরও সম্যক উপলব্দি আছে।সুতারাং জাতির জনককে হত্যার পাপ তাদের সর্বসময়ে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ইচ্ছা থাকলেও ভাগ্য তাঁদের প্রলম্বিত করবেই।অযথা সময়ক্ষেপন না করে সকল সম্পর্ক চিন্ন করে অযাচিত ষড়যন্ত্রের চোবল থেকে আগামি প্রজম্মকে রক্ষা করার জন্য জাতির পিতার কন্যা বর্তমান বিশ্বের অন্যতম নেতা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনার নিকট আবেদন জানাচ্ছি। ♥জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু♥ জয়তু দেশরত্ম শেখ হাসিনা **প্রাপ্য সম্পদ আদায়ে গড়িমসি করে কোন লাভ হবেনা,পাকিস্তান কখনই বাংলাদেশের বন্ধু হবেনা। কারন তাঁদের পাঁপ তাঁদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, পথের কাঁটা হয়ে সম্পর্ক প্রলম্বিত করছে।** ♥ আজকে১২/০৩/২০১৬ইং পত্রিকার পাতায় খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ অখন্ড পাকিস্তানের সম্পদের হিস্যা আদায়ে আন্তজাতিক আদালতে মামলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।♥ **************-******** জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো ♥জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু♥ জয়তু জাতির জনকের কন্যা ♥মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা♥

  বৃহৎ প্রতিবেশী একান্ত বন্ধু রাষ্ট্র,মুক্তিযুদ্ধের মিত্রশক্তি,ভারতের বিরুদ্ধে আন্তজাতিক আদালতে শালিশি বৈঠকে সমুদ্রসীমানার বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন মহাজোট সরকার।পাকিস্তানের নিকট প্রাপ্য সম্পদ ছিনিয়ে আনায় গাফেলতি কোন অবস্থায় ঠিক হচ্ছেনা।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন