নারী স্বাধীনতায় দৃশ্যমান অর্জনের ক্ষেত্রে নারী সংগঠন গুলীর কোন কৃতিত্ব চোখে পড়ে না।
(রুহুল আমিন মজুমদার)
আজকের লেখার প্রারম্ভিকতা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার কয়টি চরন উল্লেখ করে শুরু করতে চাই।কবির জীবিতবস্থায় বঙ্গের নারীদের বঞ্চনা এবং বর্তমান আধুনিক সভ্যসমাজের অন্তভুক্ত বঙ্গ সমাজের নারীদের বঞ্চনার মধ্যে গুনগত, ,প্রথাগত, আচরগত পার্থক্য অনুধাবনে পাঠকদের কিছুটা হলেও সহায়ক হবে।
দেবতাগো জিজ্ঞাসি দেড়শত কোটি সন্তান এই বিশ্বের অধিবাসি,
কয়জন পিতামাতা ইহাদের হয়ে নিস্কাম ব্রতি?
পুত্রকন্যা কামনা করিল কয়জন সৎ-সতী,
কয়জন করিল তপস্যা ভাইরে-সন্তান লাভ তরে?
কার পাঁপে কুটি দুধের বাচ্ছা আতুড়ে জম্মে মরে?
স্রেফ পশু ক্ষুদা নিয়ে হেতা মিলে নরনারি যত,
সে কামনার সন্তান মোরা তবুও গর্ব কত।
শুন ধর্মের ছাঁই জারজ কামজ সন্তানের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই।
অসতি মাতার সন্তান যদি জারজ সন্তান হয়,
অসৎ পিতার সন্তানও নিশ্চয়ই জারজ সন্তান হয়।
(কাজী নজরুল ইসলাম)
কবিতায় হয়ত বা কিছু ভুল থাকতে পারে, অনেক দিন আগের পড়া-স্মৃতি থেকে নেয়া। তবে প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পুর্ণ সঠিক রয়েছে। বিশ্বব্যাপি দেড়শ কোটি মানব সন্তানের বসবাসের সময়কার কবিতায় কবির তখনকার সমাজ ভাবনা, নারীদের প্রতি পুরুষদের অবহেলা, নারীদের উপর পুরুষদের আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে অবলা, অসহায়, নির্ভরশীল করে রাখার বিরুদ্ধে কবি তাঁর স্বভাবজাত ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন।তুলনামূলক সেই যুগের স্বল্প সংখ্যক মানব মানবী-- বিশাল বিশ্বে বসবাস সত্বেও, গৃহকোনে আবদ্ধ নারীদের উপর বৈশম্যমূলক আচরন কবির দৃষ্টি এড়াতে পারেনি। তিনি তাঁর কবিতায় সুন্দর ভাবে তাঁর সচেতন মনোভাব তুলে ধরেছেন সেই যুগেও।
অবরুদ্ধ যুগের অন্দর মহলে বসবাস করা সত্বেও বেগম রোকেয়া নারী জাগরনে অসামান্য অবদান রেখে নারী সমাজের মুক্তির অগ্রদুত হিসেবে নীজকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।নারীদের পক্ষে তাঁদের অত্যাচার, অনাচার প্রতিরোধের লক্ষে তাঁদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের পথে অন্তরায় দূর করার নিমিত্তে তাঁর লেখনি অত্র ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ করে বাঙ্গালী নারী সমাজের মননে,চিন্তায়, চেতনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছিল। মহিয়ষী নারী বেগম রোকেয়ার নির্দেশীত পথে নিয়ন্তর সংগ্রাম অব্যাহত থাকা সত্বেও কাঙ্ক্ষিত মায্যদা বা অগ্রগতি আজও লাভ করতে পারেনি নারী সমাজ?
এক্ষেত্রে পুরুষদের দাবিয়ে রাখার মানষিকতা অন্যদিকে নারীদের মুক্তির আক্ষাংকা--দুইয়ের মাঝে নারীদের কাঙ্ক্ষিত মায্যদা লাভে প্রকৃতিগত এবং তাঁদের নীজেদের নেতিবাচক কিছু দৃষ্টিভঙ্গিও দায়ী। শিশুবস্থায় যেমন নারীশিশু চরিত্রে সাজসজ্জার প্রতি প্রকৃতিগত আগ্রহ লক্ষনীয় ভাবে পরিলক্ষিত হয় তেমনি বয়:সন্ধিকাল পরবর্তি প্রত্যেক নারী নীজকে লোভনীয়, আকর্ষনীয় ভাবে তোলে ধরার প্রয়াসও সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। একশ্রেনীর নারী তো রয়েছেই নিজেদের প্রকৃতি প্রদত্ত সৌন্দয্যকে পণ্যে পরিণত করে বিলাসী জীবনযাপনের অদম্য আক্ষাংকা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায়। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, স্বাবলম্বি নারীও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সৌন্দয্য প্রদর্শনের নিমিত্তে সুপ্তবাসনা প্রকাশে পিছিয়ে থাকেনা। পুরুষদের নজরে আসার প্রানান্তকর এই চেষ্টাও অনেক ক্ষেত্রে নারীদেরকে যথার্থ মায্যদা পাওয়ায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। নারী এবং পূরুষ একে অপরের পরিপূরক ভাবনাটি তাঁদের মধ্যে তীরোহিত হয়ে পুরুষের বিলাসি পণ্যে রুপান্তরের ভাবনাটি তখন তাঁদের অনেকের মননে প্রধান্য পেতে থাকে।
বর্তমান জনবহুল বিশ্বের আধুনিক সভ্য সমাজ ব্যবস্থায় বৃহদাংশ নারী ঘর থেকে বেরিয়ে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিয়ন্তর সংগ্রাম অব্যাহত রাখা সত্বেও তাঁদের উপর বলদর্পি পরুষতন্ত্রের আধিপত্যের মাত্রা আদৌ কমাতে পারেনি। সভ্যতার জোয়ারে সংখ্যাতত্বের হিসেবে আপাত: দৃষ্টে যদিও মনে হয় অনেকটাই কমেছে কিন্তু শিক্ষা, বিজ্ঞান, সমাজ সচেতনতা, বহি:বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ, অর্থনৈতিক উন্নতি, পারিবারিক জীবন যাপন, অর্থনৈতিক স্বাবলম্ভিতা, নীজ নীজ ক্ষেত্রে নারীদের সফলতার ধারাবাহিক উন্নতি বিবেচনায় দেখা যায়--" পূরুষের ধ্যান ধারনায় নারীর মায্যদা প্রাগ ঐতিহাসিক যুগের সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।"
প্রায় প্রত্যেক নারী স্বভাবজাত ভাবে চিন্তা করে, পুরুষই তাঁদের জীবন জীবিকা এবং চলার পথে একমাত্র অবলম্বন। কথাটার বিপরীত চিন্তা কি অ-গ্রহন যোগ্য? নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের যেমন প্রয়োজনীয়তা অবশ্যাম্ভাবী পুরুষের ক্ষেত্রে নারীও তদ্রুপ। নারী এবং পূরুষের অর্থনৈতিক বৈসম্য দূর হলে অনেকেই মনে করেন--"নারী নিয্যাতন, নারীদের প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমে আসবে।" কথাটা অ-গ্রহনযোগ্য নয় তবে সামগ্রিক মুক্তি আসবে বলা যায়না। আমি মনে করি--'নারীরা যতদিন পুরুষনির্ভর মানষিকতা পরিহার করতে পারবেনা, মানব কূলের অন্যতম অপরিহায্য অংশ ভাবতে পারবেনা ততদিন সার্বিক নারীমুক্তি আশা করা যায়না'।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ--নারী তাঁর স্বাভাবিক জীবনাচার, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, সম্পদ অর্জন, রাজনীতি, সামাজিকতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রগামীতাকে কখনও মেনে নিতে পারেনি, ভবিষ্যতেও মেনে নেয়ার কোন লক্ষন নেই।যে কয়জন নারী তাঁদের সার্বিক মুক্তির সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে, অধিকার দাবি করেছে, অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে বিদ্রোহ করেছে---"সেই কয়জন নারী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধারাবাহিক সামাজিক বঞ্চনার শিকারে পরিণত হয়ে নষ্টা, ভ্রষ্টা ইত্যাদি অসম্মান সূচক অপবাদের তীরে বিদ্ধ হয়ে মানষিক পীড়ায় জর্জরীত হয়েছে।" বিপরীতে নারীরা পুরুষের চক্রান্তের সেই নষ্টা, ভ্রষ্টার পক্ষ না নিয়ে পুরুষদের পক্ষে সুর মিলিয়ে তাঁর বঞ্চনার গতি দ্বিগুন বাড়িয়ে দিতে দেখা গেছে। নারীরা কখনই অনিষ্টকারি পুরুষের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।অনিষ্টকারি সেই বলদর্পি পূরুষ ঠিকই সমাজে মাথা উঁচু করে দ্বিগুনশক্তির সমাহার ঘটিয়ে প্রত্যহ নারী নিয়ন্ত্রনের নিত্যনতুন সামাজিক রীতিনীতি প্রনয়ন ও প্রয়োগে সচেষ্ট রয়েছন।
নারী সুরক্ষায় এযাবত যতটুকুই অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তাঁর কৃতিত্ব উচ্চপয্যায়ের নেতৃত্বে দীর্ঘবছর নারীনেতৃত্বের শক্তিশালী অবস্থানের কারনে----সুদীর্ঘকাল নারী মুক্তি আন্দোলনের কারনে নয়। নারীরা এযাবৎ এমন কোন আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারেনি--"যার ফলশ্রুতিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাঁদের ন্যায্য দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে"। ফলে উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া নারীদের প্রতি সরকারের বদন্যতা পুরুষের মানষিক পরিবর্তন, মুল্যবোধ, চিন্তাচেতনায় কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক ধারনায় কোন প্রকার উন্নতি সাধিত হয়নি।
আবহমানকাল থেকে গড়ে উঠা আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থায়--'যে পুরুষটি নারী স্বাধীনতার জন্যে আন্দোলনরত:, মিছিল মিটিং, সভা সমাবেশে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করে, তাঁর পারিবারিক ক্ষেত্রেও নারীরা সমমায্যদায় অনেকটা পিছিয়ে। সেখানেও নারী তাঁর ইচ্ছানুযায়ী কর্ম সম্পাদন করতে পারেনা, ইচ্ছা পূরণে সর্বদা পূরুষ সদস্যদের দ্বারা বাঁধাগ্রস্ত হয়। এইরুপ বাঁধা কিন্তু ঐ পরিবারের পুরুষ ব্যাক্তিটির ইচ্ছায় নয়---আবহমান কালের পুরুষ নিয়ন্ত্রিত তাঁদের প্রয়োজনে এবং চাহিদা অনুযায়ী গড়ে উঠা এবং স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক রীতিনীতির কারনে।
যতই আইন প্রনয়ন করা হোক-কায্যক্ষেত্রে সেই আইন নারী সুরক্ষায় কোন কাজে আসেনা। নারীনিয্যাতন বন্ধ, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, সর্বক্ষেত্রে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রনিত আইন প্রায়োগিক ক্ষেত্রে পুরুষদের চরিত্রগত পৌরষত্বে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর নারীসমাজ অবাধ সুযোগ পাওয়া সত্বেও যুগের পর যুগ পুরুষ শাষনে নিগৃহিত, নিস্পেষিত, অবহেলীত, সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত এবং পূরুষদের ভোগের সামগ্রি মানষিকতার কারনে সর্বক্ষেত্রে নারীর অবস্থান, অস্তিত্ব শুন্যের ঘর পার হতে পারে না।
বিধাতার কৃপায় মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বিশেষ করে উচ্চ পয্যায়ে নারী নেতৃত্বের বিগত দুই যুগেরও অধিক সময় শুন্য থেকে গানিতিক হারে উন্নতি ও অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। ধর্মান্ধতার কাল আবরন উপেক্ষা করে চিরায়ত সামাজিক কাঠামোকে তোয়াক্কা না করে সরকার ধারাবাহিক চেষ্টার বিনিময়ে কতিপয় আইন প্রনয়ন, অনেকক্ষেত্রে একতরফা আইন সৃজন করে নারীদের উন্নতি, সার্বিক অগ্রগতির সূচনা করেছেন। নারীকুলের সার্বিক অংশগ্রহনের অপ্রতুলতা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ অর্জন সুদুর পরাহতই থেকে যাচ্ছে। বলতে গেলে ভাগ্য গুনে পাওয়া 'নারী নেতৃত্ব' আন্তরিক চেষ্টা অব্যাহত রাখা সত্বেও কায্যকরন ক্ষেত্র পয্যন্ত নারীদের পৌঁছাতে ব্যার্থ্যই হচ্ছে।
অদ্যাবদি অব্যাহত চেষ্টার পরেও প্রশাসনের উচ্চস্তরে নারী প্রশাসক হাতে গুনে বলে দেয়া সম্ভব। সরকারের নীতি নির্ধারনী পয্যায় যারা উঠে আসতে পেরেছেন তাঁদের সংখ্যা এত কম যে--'সারা দেশের মানুষ তাদের নাম জানে'।স্থানীয় সরকার, সংসদ, মন্ত্রী সভা, চাকুরী সর্বত্র সংরক্ষিত এবং কোটা নির্ধারন করেও তাঁদের কাঙ্ক্ষিত অগ্রসরতায় গতি আনতে পারছেনা। উচ্চশিক্ষা, আধুনিকতা, বিজ্ঞানের অগ্রসরতায় নারীদের চিন্তা, চেতনা, মানষিকতায় যতটুকু পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল ততটুকু পরিবর্তন আসেনি। শুধুমাত্র প্রথাগত অভ্যস্ততা পরিহারে নারীদের অনিহা এবং প্রয়োজনীয় মহুর্তে সাহষিকতার অভাবে।
তৃনমূল ইউনিয়ন পরিষদে 'সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচন--"নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক নেতৃত্বে নারীর অবস্থান সুনিশ্চিত করার লক্ষে নেয়া সরকারের সাহষি পদক্ষেপ।" এখানেও বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলদর্পি অধিকতর সচেতন পিতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রধান পূরুষ। অধিকতর শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিসম্পন্ন, তুলনামূলক সচ্ছল পরিবারের নারীগন--"কৌশলি নারী নেতৃত্ব বিদ্বেসী পরিবার প্রধান পুরুষ সদস্যেদের বাঁধার মুখে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারছেন না। প্রথাগত অভ্যস্ততাহেতু 'মহিলারাও পূরুষ নির্ভরতার কারনে পিতৃতান্ত্রিক বাঁধা উপেক্ষা করার সাহষ দেখাতে পারছেনা। তদস্থলে নিরিহ গরীব, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবা মহিলাগন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাঁরা কর্মস্থলে সংখাধিক্য পুরুষ সদস্য নিয়ন্ত্রিত ইউনিয়ন পরিষদ এবং বাসস্থল নীজ সমাজে অধিকতর প্রভাবশালী পিতৃতান্ত্রিক পরিবারগুলির উপর কোনরুপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারছেনা।
তৃনমূলে নারীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক নেতৃত্বে নারীদের অবস্থান নিশ্চিত" করার প্রয়াস "শিক্ষিত পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের সদস্যদের "পৌরষত্বের অহমিকায় বড় ধাক্কা"। নারীমুক্তি, নারী স্বাধীনতা এবং নারী জাগরনের ক্ষেত্রে "নীরব সামাজিক বিপ্লব"। নারীদের সচেতনতার অভাবে পূরুষগন তাঁদেরকে কৌশলে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে কাংক্ষিত স্বাধীনতা, সার্বিক মুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুফল ভোগে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে।--"নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক নেতৃত্বে নারীর অবস্থান নিশ্চিতে "নীরব বিপ্লবের" বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেছে নারীর স্ব-গৃহের পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের বলদর্পি পূরুষ।"
শহরকেন্দ্রিক নারী আন্দোলন বা নারী জাগরন গ্রামে বসবাসরত: : কোটি নারীর মনে রেখাপাত করতে পারেনি।নারী আন্দোলনের হাওয়া গ্রামে পৌছাতে ব্যার্থতা নারী জাগরনে কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য বাস্তবের মুখ দেখেনি। নারীদের শহরকেন্দ্রিক আন্দোলনে সর্বশ্রেনীর নারীর অংশগ্রহনের শূন্যতা সার্বিক আন্দোলনের আবহ সৃষ্টিতে সক্ষম না হওয়াও অন্যতম কারন বটে।নারীর অগ্রগামীতায় যতটুকুই অগ্রসরতা অর্জিত হয়েছে তাও পূরুষের বদন্যতার ফসল। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ বছর উচ্চস্তরে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে নারীর লাগাতার অবস্থানের বদন্যতার ফসল বর্তমানের যৎকিঞ্চিত প্রাপ্তি---কোন অবস্থায় নারী সমাজের আন্দোলনের ফসল নয়।
বর্তমানের যৎকিঞ্চিত অর্জনকে সংরক্ষন করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পুর্বশর্ত নারী সমাজের ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক ভিত্তিতে আন্দোলন ব্যাতিরেকে সম্ভব নয়। দাবি আদায়, সংরক্ষন, বাস্তবায়ন, নারীমুক্তি, সহিংসতারোধ যাহাই বলিনা কেন তৃনমূল পয্যন্ত আন্দোলনের বিস্তৃতির প্রয়োজনে সাংগঠনিক শক্তিকে ইউনিয়ন, গ্রাম পয্যন্ত বিস্তৃত করার প্রয়োজনীয়তার কোন বিকল্প নেই। শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষন, হত্যা, গুমের বিরুদ্ধে শহরকেন্দ্রিক সাময়িক প্রতিবাদী ভুমিকা সামগ্রিক নারী সচেতনতা বা নারী আন্দোলনে কোন ভুমিকা বা প্রভাব রাখা সম্ভব নয়।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
(রুহুল আমিন মজুমদার)
আজকের লেখার প্রারম্ভিকতা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার কয়টি চরন উল্লেখ করে শুরু করতে চাই।কবির জীবিতবস্থায় বঙ্গের নারীদের বঞ্চনা এবং বর্তমান আধুনিক সভ্যসমাজের অন্তভুক্ত বঙ্গ সমাজের নারীদের বঞ্চনার মধ্যে গুনগত, ,প্রথাগত, আচরগত পার্থক্য অনুধাবনে পাঠকদের কিছুটা হলেও সহায়ক হবে।
দেবতাগো জিজ্ঞাসি দেড়শত কোটি সন্তান এই বিশ্বের অধিবাসি,
কয়জন পিতামাতা ইহাদের হয়ে নিস্কাম ব্রতি?
পুত্রকন্যা কামনা করিল কয়জন সৎ-সতী,
কয়জন করিল তপস্যা ভাইরে-সন্তান লাভ তরে?
কার পাঁপে কুটি দুধের বাচ্ছা আতুড়ে জম্মে মরে?
স্রেফ পশু ক্ষুদা নিয়ে হেতা মিলে নরনারি যত,
সে কামনার সন্তান মোরা তবুও গর্ব কত।
শুন ধর্মের ছাঁই জারজ কামজ সন্তানের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই।
অসতি মাতার সন্তান যদি জারজ সন্তান হয়,
অসৎ পিতার সন্তানও নিশ্চয়ই জারজ সন্তান হয়।
(কাজী নজরুল ইসলাম)
কবিতায় হয়ত বা কিছু ভুল থাকতে পারে, অনেক দিন আগের পড়া-স্মৃতি থেকে নেয়া। তবে প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পুর্ণ সঠিক রয়েছে। বিশ্বব্যাপি দেড়শ কোটি মানব সন্তানের বসবাসের সময়কার কবিতায় কবির তখনকার সমাজ ভাবনা, নারীদের প্রতি পুরুষদের অবহেলা, নারীদের উপর পুরুষদের আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে অবলা, অসহায়, নির্ভরশীল করে রাখার বিরুদ্ধে কবি তাঁর স্বভাবজাত ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন।তুলনামূলক সেই যুগের স্বল্প সংখ্যক মানব মানবী-- বিশাল বিশ্বে বসবাস সত্বেও, গৃহকোনে আবদ্ধ নারীদের উপর বৈশম্যমূলক আচরন কবির দৃষ্টি এড়াতে পারেনি। তিনি তাঁর কবিতায় সুন্দর ভাবে তাঁর সচেতন মনোভাব তুলে ধরেছেন সেই যুগেও।
অবরুদ্ধ যুগের অন্দর মহলে বসবাস করা সত্বেও বেগম রোকেয়া নারী জাগরনে অসামান্য অবদান রেখে নারী সমাজের মুক্তির অগ্রদুত হিসেবে নীজকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।নারীদের পক্ষে তাঁদের অত্যাচার, অনাচার প্রতিরোধের লক্ষে তাঁদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের পথে অন্তরায় দূর করার নিমিত্তে তাঁর লেখনি অত্র ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ করে বাঙ্গালী নারী সমাজের মননে,চিন্তায়, চেতনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছিল। মহিয়ষী নারী বেগম রোকেয়ার নির্দেশীত পথে নিয়ন্তর সংগ্রাম অব্যাহত থাকা সত্বেও কাঙ্ক্ষিত মায্যদা বা অগ্রগতি আজও লাভ করতে পারেনি নারী সমাজ?
এক্ষেত্রে পুরুষদের দাবিয়ে রাখার মানষিকতা অন্যদিকে নারীদের মুক্তির আক্ষাংকা--দুইয়ের মাঝে নারীদের কাঙ্ক্ষিত মায্যদা লাভে প্রকৃতিগত এবং তাঁদের নীজেদের নেতিবাচক কিছু দৃষ্টিভঙ্গিও দায়ী। শিশুবস্থায় যেমন নারীশিশু চরিত্রে সাজসজ্জার প্রতি প্রকৃতিগত আগ্রহ লক্ষনীয় ভাবে পরিলক্ষিত হয় তেমনি বয়:সন্ধিকাল পরবর্তি প্রত্যেক নারী নীজকে লোভনীয়, আকর্ষনীয় ভাবে তোলে ধরার প্রয়াসও সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। একশ্রেনীর নারী তো রয়েছেই নিজেদের প্রকৃতি প্রদত্ত সৌন্দয্যকে পণ্যে পরিণত করে বিলাসী জীবনযাপনের অদম্য আক্ষাংকা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায়। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, স্বাবলম্বি নারীও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সৌন্দয্য প্রদর্শনের নিমিত্তে সুপ্তবাসনা প্রকাশে পিছিয়ে থাকেনা। পুরুষদের নজরে আসার প্রানান্তকর এই চেষ্টাও অনেক ক্ষেত্রে নারীদেরকে যথার্থ মায্যদা পাওয়ায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। নারী এবং পূরুষ একে অপরের পরিপূরক ভাবনাটি তাঁদের মধ্যে তীরোহিত হয়ে পুরুষের বিলাসি পণ্যে রুপান্তরের ভাবনাটি তখন তাঁদের অনেকের মননে প্রধান্য পেতে থাকে।
বর্তমান জনবহুল বিশ্বের আধুনিক সভ্য সমাজ ব্যবস্থায় বৃহদাংশ নারী ঘর থেকে বেরিয়ে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিয়ন্তর সংগ্রাম অব্যাহত রাখা সত্বেও তাঁদের উপর বলদর্পি পরুষতন্ত্রের আধিপত্যের মাত্রা আদৌ কমাতে পারেনি। সভ্যতার জোয়ারে সংখ্যাতত্বের হিসেবে আপাত: দৃষ্টে যদিও মনে হয় অনেকটাই কমেছে কিন্তু শিক্ষা, বিজ্ঞান, সমাজ সচেতনতা, বহি:বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ, অর্থনৈতিক উন্নতি, পারিবারিক জীবন যাপন, অর্থনৈতিক স্বাবলম্ভিতা, নীজ নীজ ক্ষেত্রে নারীদের সফলতার ধারাবাহিক উন্নতি বিবেচনায় দেখা যায়--" পূরুষের ধ্যান ধারনায় নারীর মায্যদা প্রাগ ঐতিহাসিক যুগের সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।"
প্রায় প্রত্যেক নারী স্বভাবজাত ভাবে চিন্তা করে, পুরুষই তাঁদের জীবন জীবিকা এবং চলার পথে একমাত্র অবলম্বন। কথাটার বিপরীত চিন্তা কি অ-গ্রহন যোগ্য? নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের যেমন প্রয়োজনীয়তা অবশ্যাম্ভাবী পুরুষের ক্ষেত্রে নারীও তদ্রুপ। নারী এবং পূরুষের অর্থনৈতিক বৈসম্য দূর হলে অনেকেই মনে করেন--"নারী নিয্যাতন, নারীদের প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমে আসবে।" কথাটা অ-গ্রহনযোগ্য নয় তবে সামগ্রিক মুক্তি আসবে বলা যায়না। আমি মনে করি--'নারীরা যতদিন পুরুষনির্ভর মানষিকতা পরিহার করতে পারবেনা, মানব কূলের অন্যতম অপরিহায্য অংশ ভাবতে পারবেনা ততদিন সার্বিক নারীমুক্তি আশা করা যায়না'।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ--নারী তাঁর স্বাভাবিক জীবনাচার, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, সম্পদ অর্জন, রাজনীতি, সামাজিকতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রগামীতাকে কখনও মেনে নিতে পারেনি, ভবিষ্যতেও মেনে নেয়ার কোন লক্ষন নেই।যে কয়জন নারী তাঁদের সার্বিক মুক্তির সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে, অধিকার দাবি করেছে, অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে বিদ্রোহ করেছে---"সেই কয়জন নারী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধারাবাহিক সামাজিক বঞ্চনার শিকারে পরিণত হয়ে নষ্টা, ভ্রষ্টা ইত্যাদি অসম্মান সূচক অপবাদের তীরে বিদ্ধ হয়ে মানষিক পীড়ায় জর্জরীত হয়েছে।" বিপরীতে নারীরা পুরুষের চক্রান্তের সেই নষ্টা, ভ্রষ্টার পক্ষ না নিয়ে পুরুষদের পক্ষে সুর মিলিয়ে তাঁর বঞ্চনার গতি দ্বিগুন বাড়িয়ে দিতে দেখা গেছে। নারীরা কখনই অনিষ্টকারি পুরুষের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।অনিষ্টকারি সেই বলদর্পি পূরুষ ঠিকই সমাজে মাথা উঁচু করে দ্বিগুনশক্তির সমাহার ঘটিয়ে প্রত্যহ নারী নিয়ন্ত্রনের নিত্যনতুন সামাজিক রীতিনীতি প্রনয়ন ও প্রয়োগে সচেষ্ট রয়েছন।
নারী সুরক্ষায় এযাবত যতটুকুই অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তাঁর কৃতিত্ব উচ্চপয্যায়ের নেতৃত্বে দীর্ঘবছর নারীনেতৃত্বের শক্তিশালী অবস্থানের কারনে----সুদীর্ঘকাল নারী মুক্তি আন্দোলনের কারনে নয়। নারীরা এযাবৎ এমন কোন আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারেনি--"যার ফলশ্রুতিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাঁদের ন্যায্য দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে"। ফলে উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া নারীদের প্রতি সরকারের বদন্যতা পুরুষের মানষিক পরিবর্তন, মুল্যবোধ, চিন্তাচেতনায় কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক ধারনায় কোন প্রকার উন্নতি সাধিত হয়নি।
আবহমানকাল থেকে গড়ে উঠা আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থায়--'যে পুরুষটি নারী স্বাধীনতার জন্যে আন্দোলনরত:, মিছিল মিটিং, সভা সমাবেশে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করে, তাঁর পারিবারিক ক্ষেত্রেও নারীরা সমমায্যদায় অনেকটা পিছিয়ে। সেখানেও নারী তাঁর ইচ্ছানুযায়ী কর্ম সম্পাদন করতে পারেনা, ইচ্ছা পূরণে সর্বদা পূরুষ সদস্যদের দ্বারা বাঁধাগ্রস্ত হয়। এইরুপ বাঁধা কিন্তু ঐ পরিবারের পুরুষ ব্যাক্তিটির ইচ্ছায় নয়---আবহমান কালের পুরুষ নিয়ন্ত্রিত তাঁদের প্রয়োজনে এবং চাহিদা অনুযায়ী গড়ে উঠা এবং স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক রীতিনীতির কারনে।
যতই আইন প্রনয়ন করা হোক-কায্যক্ষেত্রে সেই আইন নারী সুরক্ষায় কোন কাজে আসেনা। নারীনিয্যাতন বন্ধ, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, সর্বক্ষেত্রে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রনিত আইন প্রায়োগিক ক্ষেত্রে পুরুষদের চরিত্রগত পৌরষত্বে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর নারীসমাজ অবাধ সুযোগ পাওয়া সত্বেও যুগের পর যুগ পুরুষ শাষনে নিগৃহিত, নিস্পেষিত, অবহেলীত, সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত এবং পূরুষদের ভোগের সামগ্রি মানষিকতার কারনে সর্বক্ষেত্রে নারীর অবস্থান, অস্তিত্ব শুন্যের ঘর পার হতে পারে না।
বিধাতার কৃপায় মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বিশেষ করে উচ্চ পয্যায়ে নারী নেতৃত্বের বিগত দুই যুগেরও অধিক সময় শুন্য থেকে গানিতিক হারে উন্নতি ও অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। ধর্মান্ধতার কাল আবরন উপেক্ষা করে চিরায়ত সামাজিক কাঠামোকে তোয়াক্কা না করে সরকার ধারাবাহিক চেষ্টার বিনিময়ে কতিপয় আইন প্রনয়ন, অনেকক্ষেত্রে একতরফা আইন সৃজন করে নারীদের উন্নতি, সার্বিক অগ্রগতির সূচনা করেছেন। নারীকুলের সার্বিক অংশগ্রহনের অপ্রতুলতা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ অর্জন সুদুর পরাহতই থেকে যাচ্ছে। বলতে গেলে ভাগ্য গুনে পাওয়া 'নারী নেতৃত্ব' আন্তরিক চেষ্টা অব্যাহত রাখা সত্বেও কায্যকরন ক্ষেত্র পয্যন্ত নারীদের পৌঁছাতে ব্যার্থ্যই হচ্ছে।
অদ্যাবদি অব্যাহত চেষ্টার পরেও প্রশাসনের উচ্চস্তরে নারী প্রশাসক হাতে গুনে বলে দেয়া সম্ভব। সরকারের নীতি নির্ধারনী পয্যায় যারা উঠে আসতে পেরেছেন তাঁদের সংখ্যা এত কম যে--'সারা দেশের মানুষ তাদের নাম জানে'।স্থানীয় সরকার, সংসদ, মন্ত্রী সভা, চাকুরী সর্বত্র সংরক্ষিত এবং কোটা নির্ধারন করেও তাঁদের কাঙ্ক্ষিত অগ্রসরতায় গতি আনতে পারছেনা। উচ্চশিক্ষা, আধুনিকতা, বিজ্ঞানের অগ্রসরতায় নারীদের চিন্তা, চেতনা, মানষিকতায় যতটুকু পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল ততটুকু পরিবর্তন আসেনি। শুধুমাত্র প্রথাগত অভ্যস্ততা পরিহারে নারীদের অনিহা এবং প্রয়োজনীয় মহুর্তে সাহষিকতার অভাবে।
তৃনমূল ইউনিয়ন পরিষদে 'সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচন--"নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক নেতৃত্বে নারীর অবস্থান সুনিশ্চিত করার লক্ষে নেয়া সরকারের সাহষি পদক্ষেপ।" এখানেও বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলদর্পি অধিকতর সচেতন পিতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রধান পূরুষ। অধিকতর শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিসম্পন্ন, তুলনামূলক সচ্ছল পরিবারের নারীগন--"কৌশলি নারী নেতৃত্ব বিদ্বেসী পরিবার প্রধান পুরুষ সদস্যেদের বাঁধার মুখে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারছেন না। প্রথাগত অভ্যস্ততাহেতু 'মহিলারাও পূরুষ নির্ভরতার কারনে পিতৃতান্ত্রিক বাঁধা উপেক্ষা করার সাহষ দেখাতে পারছেনা। তদস্থলে নিরিহ গরীব, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবা মহিলাগন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাঁরা কর্মস্থলে সংখাধিক্য পুরুষ সদস্য নিয়ন্ত্রিত ইউনিয়ন পরিষদ এবং বাসস্থল নীজ সমাজে অধিকতর প্রভাবশালী পিতৃতান্ত্রিক পরিবারগুলির উপর কোনরুপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারছেনা।
তৃনমূলে নারীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক নেতৃত্বে নারীদের অবস্থান নিশ্চিত" করার প্রয়াস "শিক্ষিত পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের সদস্যদের "পৌরষত্বের অহমিকায় বড় ধাক্কা"। নারীমুক্তি, নারী স্বাধীনতা এবং নারী জাগরনের ক্ষেত্রে "নীরব সামাজিক বিপ্লব"। নারীদের সচেতনতার অভাবে পূরুষগন তাঁদেরকে কৌশলে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে কাংক্ষিত স্বাধীনতা, সার্বিক মুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুফল ভোগে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে।--"নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক নেতৃত্বে নারীর অবস্থান নিশ্চিতে "নীরব বিপ্লবের" বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেছে নারীর স্ব-গৃহের পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের বলদর্পি পূরুষ।"
শহরকেন্দ্রিক নারী আন্দোলন বা নারী জাগরন গ্রামে বসবাসরত: : কোটি নারীর মনে রেখাপাত করতে পারেনি।নারী আন্দোলনের হাওয়া গ্রামে পৌছাতে ব্যার্থতা নারী জাগরনে কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য বাস্তবের মুখ দেখেনি। নারীদের শহরকেন্দ্রিক আন্দোলনে সর্বশ্রেনীর নারীর অংশগ্রহনের শূন্যতা সার্বিক আন্দোলনের আবহ সৃষ্টিতে সক্ষম না হওয়াও অন্যতম কারন বটে।নারীর অগ্রগামীতায় যতটুকুই অগ্রসরতা অর্জিত হয়েছে তাও পূরুষের বদন্যতার ফসল। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ বছর উচ্চস্তরে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে নারীর লাগাতার অবস্থানের বদন্যতার ফসল বর্তমানের যৎকিঞ্চিত প্রাপ্তি---কোন অবস্থায় নারী সমাজের আন্দোলনের ফসল নয়।
বর্তমানের যৎকিঞ্চিত অর্জনকে সংরক্ষন করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পুর্বশর্ত নারী সমাজের ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক ভিত্তিতে আন্দোলন ব্যাতিরেকে সম্ভব নয়। দাবি আদায়, সংরক্ষন, বাস্তবায়ন, নারীমুক্তি, সহিংসতারোধ যাহাই বলিনা কেন তৃনমূল পয্যন্ত আন্দোলনের বিস্তৃতির প্রয়োজনে সাংগঠনিক শক্তিকে ইউনিয়ন, গ্রাম পয্যন্ত বিস্তৃত করার প্রয়োজনীয়তার কোন বিকল্প নেই। শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষন, হত্যা, গুমের বিরুদ্ধে শহরকেন্দ্রিক সাময়িক প্রতিবাদী ভুমিকা সামগ্রিক নারী সচেতনতা বা নারী আন্দোলনে কোন ভুমিকা বা প্রভাব রাখা সম্ভব নয়।
ruhulaminmujumder27@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন