বর্তমান যুগে একমাত্র নিয়ন্তর গনতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে "বিশ্বমানবতার মুক্তির ধর্ম ইসলাম" প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
   (রুহুল আমিন মজুমদার)

    গনতন্ত্র আসলে কি? বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক থেকে দার্শনিক, মনীষিরা গনতন্ত্রের সংজ্ঞা যেভাবে দিয়েছেন ঐ সংজ্ঞাও যদি বিশ্লেষন করি তাহলেও গনতন্ত্রের আগে পরে কোন বিশেষনের প্রয়োজন হয়না।জনকল্যান মূখি রাষ্ট্রব্যাবস্থা গঠনকল্পে গনতন্ত্রে নেই এমন কোন  নীতি অবশিষ্ট নেই।যতসব ভাল,উন্নত, সমৃদ্ধ গুনাবলি সব ভাল গুনাবলি গনতন্ত্রে উপস্থিত।শুধুমাত্র একটা দিক খারাপ বলা যেতে পারে, গনতন্ত্রের অন্যতম একটি বাহন জনগনের সরাসরি মতামতে বা ভোটে নেতা নির্বাচনে অনেক সময় খারাপ লোকও নির্বাচিত হয়ে যেতে পারে।
    জনগনের সরাসরি ভোটে বলতে কি উপস্থিত সকলের? না, সকলের নয়- ম্যাজরিটির বা বেশীর ভাগ উপস্থিতির। ম্যাজরিটির মতামতকে মাইনোরিটি মেনে নিতে হয়। বৃহদাংশের মত ক্ষুদ্র অংশের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে  বলা হলেও গনতন্ত্র অর্থহীন।সকলের মত কোন অবস্থায় এক হয়না,একক যেহেতু হয়না গ্রহন করার প্রশ্নই উঠেনা। সকলের ভিন্ন ভিন্ন অভিমত  গ্রহন করতে গেলে শৃংখলাই থাকেনা।বৃহদাংশের মতামতকে মেনে নিতে শৃংখলিত করার রীতিকেই বলে 'গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা'।'গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা' সফল করার নিমিত্তে প্রথমেই প্রয়োজন সহনশীলতা। সহনশীলতা সাধারনত: ব্যাক্তির চরিত্রে একদিনে বা একাধিক বছরেও অর্জিত হয়না,  ব্যাক্তির চরিত্রে ধারন করার জন্যেও প্রয়োজন হয় নিবিড় চর্চার।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ বিশ্বব্যাপি তরুন সমাজকে নাড়া দিতে পেরেছিল। বিশ শতকের মধ্যভাগে ‘সমাজতন্ত্রের’ জনপ্রিয়তা আকাশচুম্ভি আকার ধারন করেছিল।এমনও ভাবা হ'ত প্রকৃত সমাজতন্ত্র হচ্ছে গণতন্ত্রের উচ্চতর রূপ। কোন কোন দেশে অতি গনতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক বুঝানোর অর্থে গনতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রের আগে পরে যুৎসই অন্য একটা শব্দ যোগ করে দিতেন।পরবর্তীতে দেখা গেছে গনতন্ত্রের উচ্চরুপ সমাজতন্ত্রতো নহেই গনতন্ত্রের ধারে কাছেও নেই।উক্ত বিশেষন সম্পুর্ণ ফ্যাসিষ্ট শাষনকেও হার মানায়। উদাহরণ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার কথা বলা যায়। দেশটির মুলত: নাম "ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া।" উত্তর কোরিয়ায় কেমন ডেমোক্রেসি আছে বা কয় জন পিপল রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে অংশ নিতে পারে, কমবেশি আমরা সবাই জানি।  গালভরা বুলি কপচে যতই তন্ত্রমন্ত্রের গুণগান করা হোক না কেন, তা যে আসলেই কত ঠুনকো, অন্তঃসারশূন্য, তা এ ধরনের দেশের হালচাল দেখলেই বোঝা যায়।

  আমাদের অত্যান্ত নিকটের দেশ শ্রীলঙ্কা।সাংবিধানিক  নাম "ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক অব শ্রীলঙ্কা।" বাইরে থেকে আমরা অনেকেই ওই দেশের ভেতরের খবর জানি না বা রাখি না। ওই দেশের অনেক নাগরিক মনে করেন ওখানে গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও নেই। সমাজতন্ত্র তো নির্বাসনে গেছে অনেক আগেই। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মানবাধিকারের রেকর্ড তলানিতে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কাই সবার আগে বিদেশি পুঁজির জন্য দরজা খুলে দিয়েছিল। শাষনব্যবস্থার ভুলের কারনে বিদেশী ঋণের ভারে দেশটির অর্থনীতি অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।

       একসময় বিশ্বের দেশে দেশে রাজা-রানিদের শাসন ছিল। এখন অবশ্য বিশ্বব্যাপি না থাকলেও অঞ্চলভেদে দেখা যায়। আরব দেশগুলোতে এখনো রাজা-বাদশাহরা দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোতে রাজা-রানিরা সংবিধানের আলোকে অলংকারমাত্র, কিন্তু প্রজা সাধারন যথেষ্ট সম্মান ভক্তি বজায় রেখেছে। প্রজাতন্ত্র হলেই যে প্রজাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রজাতন্ত্রের নামের আড়ালেও স্বৈরশাসন থাকতে পারে, বাংলাদেশ তাঁর যুৎসই উদাহরন হতে পারে।বিগত চল্লিশ বছরে দুই সরকারের দাপুটে মন্ত্রী ব্যারিষ্টার মওদূদ নীজেই স্বিকার করে বলেছেন --বাংলাদেশে গত চল্লিশবছর গনতন্ত্র এবং সুশাষন ছিলনা।উল্লেখ্য কথিত চল্লিশ বছরের মধ্যে তাঁর শাষিত  দল বিএনপি, জাতিয় পার্টির শাষনই ছিল ত্রিশ বছরের অধিক।

  আমরা আলংকারিক শব্দ বা বিশেষন যুক্ত শব্দসমষ্টি ভালবাসি। সংবিধানে কোন শব্দটি আছে বা নেই, কোনটা ঢুকল বা বাদ পড়ল, তা নিয়ে আমরা তুলকালাম করি। ১৯৭২ সালে আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'পরম' 'পবিত্র' খাঁটি মসুলমানি শব্দরাজির ব্যবহার ছিল। ‘রাষ্ট্রীয় মূলনীতি’ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর জাতীয়তাবাদ ছিল। এখনও আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ এই শব্দগুলোর অর্থ বোঝেন কি না বা ব্যাখ্যা জানেন কি না, তা নিয়ে আমার মনে ঘোরতর সন্দেহ আছে। তারপরও আমরা এই শব্দগুলো নিয়ে কতই-না হইচই করি, হাঙ্গামা বাধাই।

     গনতন্ত্র একটি সম্পুর্ণ শাষন ব্যবস্থা আগেই বলেছি। পরবর্তিতে সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতার কি প্রয়োজন ছিল? গনতন্ত্রের উচ্ছতর রুপ সমাজতন্ত্র মেনে নিলে সমাজতন্ত্রের কোন প্রয়োজনীয়তা থাকেনা।তেমনি ধর্ম, বর্ণ, গোষ্টি, লিঙ্গ, জাতিভেদ যেহেতু গনতন্ত্রে কোন স্থান নেই ধর্মনিরপেক্ষতার কি প্রয়োজন থাকতে পারে? জাতীয়তার ব্যাপারটি স্বতন্ত্র জাতি সত্বার উম্মেষ এবং কখনই এই জাতির শাষন ক্ষমতা, স্বাধীনসত্বা ছিলনা বুঝাতে প্রয়োজন ছিল কিন্তু সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োজন ছিলনা--'তথাপি সংযোজিত হয়েছিল'।

   বর্তমানে একদল মানুষ গনতন্ত্র পুর্ণোদ্ধারের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন।তাঁরা সকলেই '৭২এর পবিত্র সংবিধানে 'রাষ্ট্রধর্ম এবং বিসমিল্লাহ সংযোজনকারি।' রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বহাল রাখার জন্যে শহিদ হতেও প্রস্তুত কিন্তু গনতন্ত্র পুণো:দ্ধারের সংগ্রামও চালিয়ে যাচ্ছেন। গনতন্ত্রের সংজ্ঞায় বা গনতন্ত্রে ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ ভেদাবেদ সমর্থন করে? নিজেদেরকে  বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবক্তা কেন বলেন? গনতন্ত্র কি একদলীয়?

      একদল মৌলভি নতুন করে বের হয়েছেন--তাঁদের জম্ম ১৯৭১ ইং সালে।- বাঙ্গালী জাতি যখন তাঁদের স্বাধীকারের লড়াইয়ে, মুক্তির লড়াইয়ে পাকিস্তানি উপনিবেশিক শাষক শোষকের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াইরত: ছিল; তখন চুপিসারে চট্রগ্রামের পটিয়ায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। উক্ত মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও নানাহ কাহিনী উক্ত জনপদে প্রচলিত আছে। আমি সেদিকে যেতে চাইনা---"তাঁরাও গনতন্ত্র চান, আবার ভাস্কায্য সরানোর আন্দোলনও করেন"।

      গনতন্ত্রের শিক্ষাই হচ্ছে সৃজনশীল কাজের উৎসাহ প্রদান, শিল্প, সংস্কৃতির লালন।গনতন্ত্র চাইলে ভাস্কায্য কেন সরাতে হবে? গনতন্ত্রই যদি চান নারী কেন হিজাব পড়বে, ভাইয়ের সমান সম্পত্তি বোন পাবে না কেন বা নারী তাঁর অর্জিত সম্পদের মালিক হতে পারবে না কেন? এককথায় ইসলাম সমর্থন করেনা--এই তো?

     সমর্থন করেনা বলেই তো ইসলাম গনতন্ত্র চর্চা করাকেও হারাম বলে। আপনি কেন গনতন্ত্র মেনে আন্দোলন সংগ্রাম, বক্তৃতা, বিবৃতি দেন? আপনি কি ইসলাম ধর্মের মধ্যে আছেন?বলতে পারেন গনতন্ত্র মানিনা--"গনতন্ত্র যদি নাইবা মানেন বিবৃতি প্রকাশ করেন কোন শাষনাধীনে, কিভাবে? কোন শাষনাধীনে, কিভাবে গনতন্ত্রকে অনুসরন করে মিছিল মিটিং, সভা, সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট করেন? আপনারাই-তো বলেন--"ইসলাম ধর্মে  গনতন্ত্র অনুসরন, অনুকরন, বিশ্বাস, লালন সম্পূর্ণ হারাম"। তাহলে আমরা বলতে পারি--"আপনারা নিশ্চয়ই ইসলাম ধর্মভিত্তিক কোরানের আলোকে, নবী প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে পরিচালিত করছেন না।"

      সৌদি আরব ইসলাম ধর্মের তীর্থভূমি।সৌদি বাদশাহ'র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় ভাস্কায্য উম্মোচিত হতে পারলে বাংলাদেশে কেন সরাতে হবে? বাংলাদেশে কি কোরানের শাষন কায়েম করা হয়েছে? সরকার বলে গনতান্ত্রিক শাষন কায়েম করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি- আপনারা চাইতেছেন গনতন্ত্র পুর্ণোদ্ধার, মৌলবি সাহেবেরা গনতা। সকল পক্ষ যেহেতু গনতন্ত্রের পূজারি--সেহেতু ভাস্কায্য পেতে পারে সকল পক্ষের সম্মান, আন্দোলন হতে পারে তাঁর ভাবগাম্ভিয্য রক্ষার--তাই নয় কি?

   গ্রেট বৃটেনকে গনতন্ত্রের রাজা-রাণীর দেশ বলা হয়,শতববছর গনতন্ত্র চর্চা অব্যাহত রেখেছে বৃটেন।সেখানে গনতন্ত্রের বিধিবিধান অনুসরনের জন্যে লিখিত সংবিধানের প্রয়োজন হয়নি তাঁদের। দীর্ঘ দিনের প্রচলিত রীতিনীতিই তাঁদের জনগনের মনে স্থায়ি প্রভাব সৃষ্টি করে--অলঙ্ঘনীয় সংবিধানে পরিণত করেছে। কোনপক্ষ কতৃক প্রচলিত প্রথা বা রীতিনীতি ভঙ্গ করার উদাহরনও দেখা যায়না। সেখানে তাঁদের বিশ্ব শাষন করার ঐতিহ্য রাজপরিবারকে যথাযথ মায্যদায় লালন করে, রাজপরিবারের শাষনতান্ত্রিক ক্ষমতা উহ্য।গনতন্ত্র চর্চায় রাজ পরিবার বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।

     "গনতন্ত্র" মানব সৃষ্ট এমন একটি শাষন ব্যবস্থা-"যে শাষন ব্যবস্থা মানব কল্যানে তাঁর অন্তনিহিত সকল শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কল্যান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিয়ন্তর চেষ্টা অব্যাহত রাখে। গনতন্ত্র ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধনি, গরিব, কাল, সাদা ইত্যাদি সকল বিষয়ে অন্ধ।কোন একটি বিষয় তাঁর উপর প্রভাব বিস্তারের অধিকার রাখেনা। গনতন্ত্রের কোন বিশেষন নেই, কোন অলংকার নেই, রঙ, রুপ, গন্ধ কিছুই নেই। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো, হিন্দুকে হিন্দু, মুসলিমকে মুসলিম মেনে নিয়ে সকলের জন্যে সমমায্যদা রক্ষা করে নিজের ধর্ম সৃষ্টি করেছে "মানবধর্ম।" সুয্য যেমন তাঁর আলোতে পৃথিবীর সব কিছুতে সমভাবে আলো বিকিরণ করে; গনতন্ত্র তাঁর নিজের আলো "বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে মানবসেবার" উজ্বল আলোকরস্মির দ্বারা সবাইকে সমভাবে আলোকিত করে।
   সুতারাং মহান সৃষ্টিকর্তা ঘোষিত যুগের সাথে তালমিলিয়ে সকল জটিলতার মিমাংসা পূর্বক ইসলামকে আধুনিকায়ন ও যুগ উপযোগী করার লক্ষে কোরান ও হাদিসের আলোকে এগিয়ে নেয়াই হবে ধর্মীয় ব্যাক্তিত্বদের সময়ের দাবী পূরনের অন্যতম দুরদর্শিতার পরিচায়ক।
         ruhulaminmujumder@gmail.com


 

   

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন