প্রচলিত শিষ্টাচারের সম্মান দিতে রাজনীতি বিসর্জনের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপিত।
(রুহুল আমিন
মজুমদার)

         বাংলাদেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কাউট প্রতিষ্ঠা বাধ্যতামূলক হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনও তা গড়ে উঠেনি।যদিও প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ নিয়মিত প্রত্যেক বছরই একবার স্কাউটিং ফি ছাত্র ছাত্রী ভর্তির সময়েই আদায় করে নিয়ে যায়।স্কাউটিং বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পয্যায়ে একটি কল্যানমূলক, মানষিক, শারিরীক, আত্মপ্রত্যয়ী, শৃংখলাবদ্ধ, অধ্যবাসায়ি, মানবিক প্রশিক্ষন  প্রতিষ্ঠান। স্কাউটিং ছাত্রাবস্থায় নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, কায়িকশ্রম, প্রাকৃতিক দুযোগ মোকাবেলা, মানবসৃষ্ট দুয্যোগ মোকাবেলা সহ শহর বন্দরে ট্রাপিক নিয়ন্ত্রন, শীতবস্ত্র বিতরন, জনদুর্ভোগ লাগব সহ সকল সেবাধর্মী কাজের প্রশিক্ষন আয়ত্ব করার শিক্ষালয় বটে।
      আইনশৃংখলা বাহিনী সহ দেশরক্ষায় নিয়োজিত নিয়মিত বাহিনীর অনুসরনে এখানেও সকল ধরনের প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা আবহমান কাল থেকে প্রচলিত রয়েছে। মানব তৌরন, মৃত্যুকূপ, মিশরের পিরামিড, ভয়াবহ ঝাম্পিং, অগ্নিনির্বাপন সহ অমানবিক বহু প্রশিক্ষনই দেয়া হয়ে থাকে আবহমান কাল থেকে।রোভার স্কাউটিংয়ে মেয়েদের সংখ্যাধিক্য লক্ষনীয় ছিল প্রশিক্ষনের সহজতায় কিন্ত্যু B. N. C. C. প্রশিক্ষন সেনা প্রশিক্ষনের ন্যায় কঠোর নিয়মানুবর্তিতা অনুসরন করেই দেয়া হয়ে থাকে।
স্কাউটিং এর স্তর বিন্যাস রয়েছে। স্কুল পয্যায়ে যে প্রকারের প্রশিক্ষন দেয়া হয় কলেজ পয্যায় বিভাগ অনুযায়ী আরো উন্নততর  প্রশিক্ষন  দেয়া হয়। ইহা অনস্বিকায্য নয় যে--'স্কুল কলেজের প্রত্যেক ছাত্র/ ছাত্রী স্কাউটিংয়ে অংশ গ্রহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।' এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই--'স্কাউটিং করার জন্য শারিরীক যোগ্যতা একটি অন্যতম অনুসঙ্গ'। এমন  অনেক ছাত্র /ছাত্রী আছে-তাঁরা অনেকে জানেও না তাঁদের স্কুল বা কলেজে স্কাউটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। স্কুল কলেজের শ্রেনী কায্যক্রম শুরু করার অনেক আগেই তাঁদের প্রশিক্ষনের কায্যাদি শেষ করা হয় অথবা স্কুল,কলেজ ছুটির পর কায্যক্রম শুরু হতে দেখা যায়।শিক্ষাক্রম বহিভুত নিয়োগকৃত প্রশিক্ষক স্কাউটিংয়ের প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠানে স্কাউটিংয়ের জন্যে আলাদা ভবনের ব্যবস্থাও চোখে পড়ে।
 স্কাউটিং ছেলে মেয়েদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতায় কমিশন কর্মকর্তায় উন্নতি ভর্তি পরবর্তি প্রশিক্ষন ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক ভুমিকা পালন করে। ইন্টারমেডিয়েট পাস করার আগে বা পরে সরাসরি সেনাকর্মকর্তা  ভর্তির জন্যে শারিরীক যোগ্যতা সম্পন্ন স্কাউটিং ছেলে মেয়েরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। এখানে আমার প্রশ্ন 'শারিরীক যোগ্যতা সম্পন্ন মাধ্যমিক স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা কি আদৌ শিশু'? কোন কোন পত্রিকা "স্কুল পড়ুয়া শিশুদের দ্বারা মানব নির্মিত "পদ্মা সেতু"র উপর দিয়ে আওয়ামীলীগ নেতার হেঁটে যাওয়াকে  অমানবিক আখ্যায়িত করার প্রয়াস লক্ষনীয় ভাবে তুলে ধরেছে!!  পদ্মা সেতুর গুরুত্বের প্রতি জনমনে বিরুপ ধারনা তৈরির এহেন প্রয়াস অবশ্যই নিন্দনীয়, হুলুদ সাংবাদিকতার উৎকৃষ্ট প্রমান--'আমি মনে করি'। ঐ সমস্ত পত্রিকা কি জানেনা স্কাউটিং কখন, কিভাবে, এবং ইহার আদর্শ উদ্দেশ্য কি?
মুলত: স্কাউটিং চালু হওয়ার প্রাক্কালে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা দুরের কথা ভারতীয় উপমহাদেশ ব্যাপি কোন বড় সেতুও নির্মিত হয়নি।বাঁশের সাঁকো অথবা নৌকাই নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ ই মার্চ কাল রাতে পাক সেনা কতৃক আক্রান্ত হলে রোভার স্কাউট এবং 'বি, এন সি, সি'র ছেলেমেয়েরাই প্রশিক্ষনের জন্যে রক্ষিত গাঁদা বন্দুকের সাহায্যে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তাঁদের প্রশিক্ষন এতই যদি হালকা হ'ত ঐদিনের  প্রতিরোধ যুদ্ধ কি  আদৌ সম্ভব হ'ত?
উল্লেখিত মানব সেতু, মিশরের পিরামিড, মানব তৌরন প্রশিক্ষনের ক্ষেত্রে নতুন আবিস্কার নয় এবং কি আওয়ামী লীগ নেতার জন্যে আলাদা আবিস্কৃত কোন নতুন ইভেন্টও নয়। আবহমান কাল থেকে স্কাউটিং, সেনা, নৌ, বিমান, বিজেপি,পুলিশ বাহিনীতে এইরুপ অমানবিক, কষ্টদায়ক বহু বিকৃত প্রশিক্ষন ও শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।ঐ সমস্ত প্রশিক্ষন ও শাস্তি লোক চক্ষুর অন্তরালে সংঘটিত হওয়ার কারনে  আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়নি।
বন্দুকের ম্যাগাজিন লোড, ট্রিগারের উপর চাপ দেয়া শিখলেও যুদ্ধ করা সম্ভব। অযথা দেশে বিদেশে লাগাতার অমানবিক প্রশিক্ষনের কি আদৌ প্রয়োজন আছে? ১৭/১৮ বছরের তরুনেরা কেন শীতের মধ্যে ব্যারাকে না থেকে শীতকালিন মহড়ার নামে কাঁদাপানিতে ছোটাছুটি করবে? অযথা কেন ২০০/২৫০ কেজি ওজনের ভর নিয়ে মাইলের পর মেইল হামাগুড়ি দিতে হবে।গুলি বর্ষনের ক্ষেত্রে আদৌ কি উক্ত ওজন বহন করার প্রয়োজন হয় কখনও ? দাদা, বাবা ছেলে, ছেলের নাতি-পুতি  অবসরের পরেও যুদ্ধ করার প্রয়োজন নাও হতে পারে-অযথা কেন কষ্ট দেয়া, ভুলের কারনে অমানবিক শাস্তি মেনে নেয়া, আদরের শিক্ষিত মেধাবি ছেলেটির--! কার হাতে শাস্তি ভোগ করে জানেন? -অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত হাবিলদার বা সুবেদারের ! তিনিই সেনা কর্মকর্তা সাহেবের প্রশিক্ষক--! ইহা কি অমানবিক, অযাচিত, ভারসাম্যহীন নয়? ঐ ছেলেতো বাবার একটা গরুও নেড়েছেড়ে দেখেনি কোনদিন।
মিশরের পিরামিড তৈরীতে এক বা একাধিক ছেলের উপর কয়জন ছেলের ভর উঠে--'কেউ কি জানেন?  তৌরন নির্মানে অ-প্রশিক্ষন প্রাপ্ত এক বা একাধিক ছেলের উপর কয়জন ছেলের ভর উঠে কেউ কি দেখেছেন ?  সামান্য ভুলের কারনে নিয়মিত বাহিনীর তরুন প্রশিক্ষন গ্রহনকারি ভাইটি কিরুপ শাস্তিভোগ করে,--বলতে পারেন? প্রশিক্ষনকালে  কি ধরনের বিকৃত, অমানবিক, অমানষিক শাস্তির অ-লিখিত অনুমোদন প্রাপ্ত হন প্রশিক্ষক--'কেউ বলতে পারেন?'  ঐ তুলনায় অনেকের উপর পায়ে পায়ে একজনের হেঁটে যাওয়া প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ঐ ষড়যন্ত্রকারি পত্রিকার ভাষ্যনুযায়ী কথিত শিশুদের জন্যে একেবারেই নস্যি--"কারো বুঝার বাকি থাকার কথা নয়"।
বিদ্যালয় কতৃপক্ষ, এলাকাবাসি তাঁদের বক্তব্যে স্বীকার করেছেন এইরুপ মানব সেতু বহু আগ থেকেই তাঁদের বিদ্যালয়ে প্রচলিত আছে। প্রধান শিক্ষক নীজেই বলেছেন আমার আগের প্রধান শিক্ষক উক্ত সেতুর উপর দিয়ে হেঁটেছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কাউটিং করা বহু স্কুল কলেজে আরো ভয়াবহ ইভেন্টের উপস্থীতি বহুকাল আগে থেকেই রয়েছে, ইহা কারো অজানা নয়।
মুজিব সেনাদের উপলব্দিতে থাকা উচিৎ- সরকারের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা হওয়ার জন্যে ইউনিভারসিটির সর্বশেষ ডিগ্রির প্রয়োজন, নিদেনপক্ষে দেশে বিদেশে বেতন ভাতাসহ প্রশিক্ষনের প্রয়োজন হয়।সফল ব্যাবসায়ী হ'তে কিছু পুজি এবং অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। সাহিত্যিক, কলামিষ্ট, বুদ্ধিজীবি হতে প্রয়োজন সাধনা এবং জ্ঞান। কিন্তু একজন কর্মীকে নেতায় রুপান্তরে বহুকর্মীর ত্যাগ, জীবনহানী, সম্পদহানী, পরিবার পরিজন এবং কি অনেকক্ষেত্রে অনেক কর্মীর জৈবিক তাড়নাও বিসর্জনের দিতে হয়েছে।প্রতিষ্ঠিত নেতাও তাঁর জীবনের স্বর্ণময় সময়গুলী দল, দেশ এবং রাজনীতির জন্যে ব্যয় করেছেন। নেতা অনেকক্ষেত্রে সংসারধর্ম পালন করতেও পারেননি।আজীবন চিরকুমারব্রত  পালন করার উদাহরন আমাদের চারপাশেই আছে।  সময়ে নেতা কেরানী পদে চাকুরি নিলেও অফিসার হয়ে অবসর নিয়ে পরিবারের সুখ শান্তির মধ্যমনি হতে পারতেন--"কিন্তু তিনি সেই পথে যাননি একমাত্র--কর্মী, দল, রাজনীতির মোহে-ই।" এক্ষেত্রে হয়তবা কদাচিৎ ব্যতিক্রম থাকতে পারে-- তবে সর্বাংশে নয়।
      আমি বহুবার তথ্য প্রমান দিয়ে বলতে চেয়েছি- বর্তমান সময়ে অপ-লাইনের পত্র পত্রিকা, ইলেকট্রোনিক মিডিয়া, সরকারের গোয়েন্দাবাহিনী সহ অপরাপর মাধ্যমগুলীর চাইতে অনেক গুন বেশী শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে আবিভুত হয়েছে "সামাজিক মাধ্যম পেইজ বুকিং।"অদ্য পয্যন্ত এই মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টিকারি কোন ঘটনাই কতৃপক্ষের নজর এড়িয়ে যায়নি। যথাযথ ব্যবস্থা গৃহিত হওয়ার বহু উদাহরন তুলে ধরে বলার চেষ্টা করেছি এবং বলেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আত্মীয়ও এক্ষেত্রে বাদ যায়নি।সুতারাং এই মাধ্যমটিতে সার্বক্ষনিক কাজ করা প্রত্যেক ইউজার বন্ধুদের আরো দায়িত্বশীল, বিষয়বস্তুর সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভ, ঘটনার উৎপত্তি, কারন ইত্যাদি সম্পর্কে আগেভাগে সম্যক জ্ঞান নেয়া প্রয়োজন মনে করি। হুজুগে অন্তত: মুজিব সেনারা জড়িয়ে পড়া উচিৎ নয়। সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার চক্রান্তে গা ভাসিয়ে দিয়ে দল, সরকার, নেতাকর্মী, শুভাকাংক্ষি, শুভানূধ্যায়ীদের সমুহ  বিপদগ্রস্ত করা থেকে বিরত থাকা প্রত্যেকের নৈতিক এবং আদর্শিক দায়িত্ব--"আমি দৃডভাবে ইহা বিশ্বাস করি।"
ruhulaminmujumder27@gmail.com
"জয়বাংলা    জয়বঙ্গবন্ধু"

  লক্ষ করুন স্কাউটের পিঠের উপর আওয়ামীলীগ নেতা কোথাও একবারও বলা হয়নি,বলা হয়েছে ছাত্র / শিশুর পিঠে আওয়ামী নেতা বা উপজেলা চেয়ারম্যান।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন