বিষ হজমকারিনী নীলকন্ঠি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা----
(রুহুল আমিন মজুমদার)

      জাতির জনকের কন্যা কি পরিমাণ বিষ গলাধ: করন করে নিশ্চিন্তে হজম করে রাখতে পারেন---"কেবলমাত্র মহান আল্লাহ-ই জানেন"। তিনি এমন কতক উদাহরন রেখে যাচ্ছেন যা থেকে বাঙ্গালী জাতি, বাংলাদেশ--"প্রজম্মান্তরে অনন্তকাল গর্ব করার উপকরন খুঁজে পাবে।ধৈয্য, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, অনুভূতি, সহানূভূতির জীবন্ত কিংবদন্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সমূহ প্রত্যহিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমুহের প্রতিকার, প্রতিরোধ, এড়িয়ে চলা, মোকাবেলা, অর্জন, বর্জনের মাধ্যমে সাঁজিয়ে রেখে যাচ্ছেন। তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্যসুত্রে প্রাপ্ত, কঠিন মুল্য পরিশোধে অর্জিত সব অভিজ্ঞতা এবং গুনাবলী সমূহ নিংড়ে বাঙ্গালী জাতির শুন্য ভাণ্ডার সমূহ  পরিপূর্ণ, টইটুম্বুর করে দিয়ে যাচ্ছেন-- "প্রজম্মান্তরে অনুকরন, অনুসরন করে জাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে নিত্য উপবিষ্ট রাখার নিমিত্তে। নিম্নে সাম্প্রতিক দুটি এমনই গুনের কথা তুলে ধরতে চাই---

      সর্বক্ষেত্রে অ-সফল ব্যাক্তিদের "নয়া সংগঠন 'শুসিল' কৌকিলেরা রাতের আধাঁরে 'ডিজিটাল বাংলাদেশে'র সেবা গ্রহন করে, একের পর এক মিথ্যা অপ-প্রচারের মাধ্যমে, 'শেখ হাছিনা পরিবারের' ভাবমূর্তি ছিন্নভিন্ন করে, খালেদা পরিবারের সমমানে নিয়ে আসতে, 'সজীব ওয়াজেদ জয়ে'র "প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা'' পদের বেতনভাতা "আমেরিকার প্রেসিডেন্টে"র চেয়েও "দ্বিগুন-তিনগুন" বলে প্রচার করে অহরাত্রি 'টিভি দর্শক'দের ঘুম হারাম করে দিচ্ছিল, তখন পয্যন্ত সরকারের কেউ-ই জানতে পারেননি--যোগ্য মায়ের যোগ্য পুত্র "সজিব ওয়াজেদ (জয়) সাহেব" সম্পূর্ণ 'অ-বৈতনিক উপদেষ্টা' হিসেবে ''বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার" অঙ্গিকার 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর নানা "জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের" আরধ্য সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, বিজ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে দেশে-বিদেশে অর্জিত জ্ঞানের ভাণ্ডার উজাড় করে ঢেলে দিচ্ছেন।

       কুচক্রি মহলের ষড়যন্ত্রের জাল "হাসিনা পরিবার"কে গিলে খাওয়ার উদ্দেশ্যে যখন আরো বিস্তৃত করে বলা হচ্ছিল--"আমেরিকান ফেডারেল ব্যাংকে "সজিব ওয়াজেদ (জয়) ত্রিশ বিলিয়ন ডলার তাঁর একাউন্টে জমা রেখেছেন--তখনই কেবল "মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর" একান্ত সচিব প্রকাশ করলেন "প্রধানমন্ত্রীর আই টি উপদেষ্টা "জনাব সজিব ওয়াজেদ (জয়)" "প্রধানমন্ত্রী" কতৃক সম্পূর্ণ অ-বৈতনিক নিয়োগ প্রাপ্ত আইটি উপদেষ্টা।"
    অথছ আমেরিকার কোন ব্যাংকেই অলস টাকা জমা রাখার সেই দেশের নাগরিকদেরও কোন বিধান নেই।যদি তদ্রুপ টাকা কেউ জমা রখার প্রয়োজন অনুভব করে তাঁর সাংবাৎসরিক আয়-ব্যায়ের হিসেব এবং উক্ত টাকার উৎস ব্যাংকে জমা দিয়ে রাখতে হয়।
   
       এবার তিনি দেশে বিদেশে আলোচিত-সমালোচিত, "বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আর্থিক কেলেংকারির ঘটনা সরকারের মেঘাপ্রকল্প "পদ্মাসেতু" নির্মানে বিশ্বব্যাংকের অর্থপ্রত্যাহার ও দুর্নীতির কল্পকাহিনীর বীজ উৎগমের তথ্য প্রকাশ করলেন। তথ্যটি তিনি এমন সময় প্রকাশ করেছেন---"কানাডা ভিত্তিক আদালত কতৃক জড়িত ভুক্তভোগি সকল পক্ষকে মুক্তি দিয়ে যখন বলা হল--"কথিত পদ্মাসেতু দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ গুজব, ভিত্তিহীন।"

      তৎপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সর্ব উচ্চ আদালত স্ব-প্রণোদিত ভাবে সরকারের উপর রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন--"পদ্মাসেতু" গুজবে জড়িতদের 'রাষ্ট্র' কেন খুঁজে বের করবে না" ; তাঁর জবাব দিতে বলা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বময় আলোচনার বিষয়বস্তু বাংলাদেশের পদ্মাসেতুর কথিত দুর্নীতির অভিযোগ এবং প্রমান ছাড়াই বিশ্বব্যাংক কতৃক অর্থপ্রত্যাহার বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।

      যখন উক্ত রায় নিয়ে দেশে বিদেশে আলোচনার ঝড় উঠেছে, ঠিক তখনই "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী" বললেন--তাঁর পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় তিন তিনবার ডেকে পাঠিয়ে বলেছিল ড. ইউনূসকে 'গ্রামীন ব্যাংক' এমডি পদ থেকে না সরানোর জন্যে, সে যেন তাঁর মা 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'কে উক্ত কাজ থেকে বিরত রাখতে ভুমিকা রাখে। এবং কি প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে আরো বলা হয়েছিল--"ব্যার্থ্যতায় "বিশ্বব্যাংক" বাংলাদেশের চলমান মেঘাপ্রকল্প "পদ্মাসেতুর" অর্থ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে"।উল্লেখ্য তখন "আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে"র দায়িত্বে ছিলেন "বিল ক্লিনটন'' পত্মি হিলারি ক্লিন্টন।

       ড. ইউনুস "নবগঠিত বাংলাদেশ বিরোধী শুসিল সংগঠনে"র মুরুব্বি নেতাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বহুবছর যাবৎ "ক্ষুদ্র ঋনের মাধ্যমে দারিদ্র মুক্তি" নামক উচ্চহারে টেবিল চেয়ারে বসে "সুদের ব্যাবসা" করার রীতির প্রবর্তকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের বাহারি নাম "গ্রামিন ব্যাংক"।যদিও অদ্যাবদি একজন গরীবও গ্রামীন ব্যাংকের ঋন গ্রহন করে স্বাবলম্ভি হওয়ার উদাহরন নজির হয়ে দেখা দেয়নি। বরঞ্চ হাজার হাজার পরিবারকে ভিটেমাটি ছাড়া করার শতশত নজির চোখের সামনেই রয়েছে।

          বাংলাদেশের বাঙ্গালী ফকির, মিসকিন, গরীব, দু:খ্যীদের "হাড় কাঁছানো, রক্তচোষা" টাকা আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ব্যাক্তিগত তহবিলে প্রত্যেক বছর অনুদান দিয়ে থাকেন। বিগত চার পাঁছ বছরে ব্যাক্তিগত তহবিলে "চাঁদার অংকের বিশালতায় জনাবা হিলারি 'ক্লিনটনকে ব্যাক্তিগত গার্লফ্রেন্ডও বানাতে পেরেছেন তিনি। প্রায়শ: গ্রামীন ব্যাংকের উজ্জল ভবিষ্যত সম্পর্কীত প্রবন্ধ নিবন্ধে দুইজনের হাস্যোজ্জল ছবি পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়। উক্ত চাঁদার গুনে তিনি আবার "বিশ্বশান্তি" পুরস্কার "নোবেল"ও কিনতে পেরেছেন।

    একজন নোবেল জয়ী বিশ্বমানের ব্যাক্তিত্ব ব্যাক্তিগত ক্ষোভের কারনে দেশ ও জনগনের চরম ক্ষতি করতে পারে এবং একজন বিদেশী নাগরিকের চাকুরী ফেরৎ দেয়ার জন্যে আমেরিকার ন্যায় বিশ্বশাষক সরকার তৃতীয় বিশ্বের একজন দরিদ্র দেশের সরকার প্রধানকে অনুরুধ করতে পারে ভাবাই যায়না। তাও আবার সরকারি চাকুরি বয়সসীমা অতিক্রান্তের তিনবছরের অধিক পার হয়ে যাওয়ার পরও!! উভয় ঘটনাই বাংলাদেশসহ বিশ্ববিবেকে দারুন নাড়া দিয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সর্বত্র আওয়াজ উঠেছে--"দেশ ও জনগনের শত্রু চিহ্নিত করে অবিলম্বে রাষ্ট্র উক্ত দুবৃত্তদের বিচারের আওতায় নিতে হবে"। মুখোস পরিহিত জাতিয় ও আন্তজাতিক শত্রুদের মুখোস খুলে দিতে হবে। দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতিকে নিয়ে যে বা যারাই ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করে উক্ত ষড়যন্ত্রকারিদের বাঙ্গালী জাতি ভয় করেনা, ছেড়েও দেয়না, যেমন দেয়নি '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে।
            "জয়বাংলা     জয়বঙ্গবন্ধু"
        masterruhulamin@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মুখস্ত বিদ্যার অর্থই হল, জোর করে গেলানো---- লিখেছেন--Nipa Das ________________________________________________ দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে প্রমথ চৌধুরীর " বই পড়া " নামক একটা প্রবন্ধ রয়েছে ! প্রবন্ধ টিতে মুখস্থ বিদ্যার কুফল তুলে ধরা হয়েছিল , সেখানে বলা হয়েছিল , পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , পাঠ্যবই মুখস্থ করে পাস করে শিক্ষিত হওয়া যায় না , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে ! আমি সবসময় এই প্রবন্ধটা পড়তাম ! এই প্রবন্ধটি আমার প্রিয় ছিল কারণ এতে আমার মনের কথাগুলো উল্লেখ করা ছিল ! মুখস্থ বিদ্যা সম্পর্কে আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই -- মুখস্থ বিদ্যা মানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয় , তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না পারুক ! এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণ শক্তি হীন হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে ! উদাহরণ :: আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যারা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বলবৃদ্ধির উপায় মনে করেন ! কিন্তু দুধের উপকারিতা যে ভোক্তার হজম করবার শক্তির ওপর নির্ভর করে তা মা জননীরা বুঝতে নারাজ ! তাদের বিশ্বাস দুধ পেটে গেলেই উপকার হবে ! তা হজম হোক আর না হোক ! আর যদি শিশু দুধ গিলতে আপত্তি করে তাহলে ঐ শিশু বেয়াদব , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ! আমাদের স্কুল - কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাও ঠিক এরকম , শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যা হজম করতে পারুক আর না পারুক , কিন্তু শিক্ষক তা গেলাবেই ! তবে মাতা এবং শিক্ষক দুজনের উদ্দেশ্যেই কিন্তু সাধু , সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ! সবাই ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা দিতে ব্যস্ত , পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শেখার অনেক কিছু আছে তা জেনেও , শিক্ষার্থীদের তা অর্জনে উৎসাহিত করে না , কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা অর্থ অর্জনে সাহায্য করে না , তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষার গুরুত্ব নেই ! শুধু পাঠ্যবই পড়ে কেবল একের পর এক ক্লাস পাস করে যাওয়াই শিক্ষা না ! আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাশ হচ্ছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে ! পাশ করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় , এ সত্য স্বীকার করতে আমরা কুণ্ঠিত হই ! বিঃদ্রঃ মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিকের জিপিএ ফাইভ নিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আমার পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই ! http://maguratimes.com/wp-content/uploads/2016/02/12743837_831291133666492_4253143191499283089_n-600x330.jpg

ছবি

বেয়োনেটের খোঁচায় জিয়াই শুরু করেন রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতপন বিশ্বাসদৈনিক জনকন্ঠ(মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০)পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর অন্য কোন সরকার আর এই বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেনি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে আবারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে।স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে নানান মিথ্যাচার করে চলেছে। ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ২৬ হাজারকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ক্ষমার আওতামুক্তরয়ে যায়। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল(অব) জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত ২০, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬২ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ৭৫২ সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারকে মুক্ত করে দেন। এর পরই শুরু হয় এ দেশে রাজাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।রাজাকার পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। দ্বিতীয় সামরিক ফরমান দিয়েসংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় রাজনীতি তথা রাজাকারদের প্রকাশ্য রাজনীতির পথ উন্মুক্তকরেন। ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দল প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে।১৯৭৫ সালের এই দিনে (৩১ ডিসেম্বর) বিচারপতি সায়েম এক সামরিক ফরমান বলে ‘দালাল আইন, ১৯৭২’ বাতিল করেন। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত সারাদেশের ৬৩টি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা হয়। একই সামরিক ফরমানে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এই দালাল আইন বাতিলের ফলেট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সহস্রাধিক মামলা বাতিল হয়ে যায় এবং এ সকল মামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার দালাল, রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুক্তি পেয়ে যায়। এর মধ্যে ২০ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ৬২ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীও মুক্তি পেয়ে যায় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা বীরদর্পে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।প্রকৃতপক্ষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতা বহির্ভূত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সরকারী যে ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছিল তার মুখবন্ধে এবং উক্ত ঘোষণার ৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “যারা বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন, ১৮৬০ এর অধীন নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা এ আদেশ দ্বারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় পড়বেন না। এগুলো হলো- ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো); ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র); ১২৪ক (রাষ্ট্রদোহিতা); ৩০২ (হত্যা); ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা); ৩৬৩ (অপহরণ); ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ); ৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা); ৩৭৬ (ধর্ষণ); ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি); ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তির কালে আঘাত); ৩৯৫ (ডাকাতি); ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি); ৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি); ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন); ৪৩৬ (বাড়ি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার) এবং ৪৩৭ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে যে কোন জলযানের ক্ষতি সাধন অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান, পৃষ্ঠপোষকতা বা নেতৃত্ব দেয়া বা প্ররোচিত করা)।সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার অভিযুক্ত দালাল আইন, ১৯৭২ সালে বাতিল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে রয়ে যাওয়া আরেকটি শক্তিশালী আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এ দুর্বল ভাষার ব্যবহার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিলম্বের একটি কারণ। আইনটির ৬ ধারায় বলা হয়েছে “দ্য গবর্নমেন্ট মে, বাই নোটিফিকেশন ইন দ্য অফিসিয়াল গেজেট, সেট আপ ওয়ান অর মোর ট্রাইব্যুনালস” অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এই আইনের কার্যকারিতা। সরকার ইচ্ছা করলে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কিন্তু এই ধরনের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইন শর্তসাপেক্ষে প্রণয়ন করারফলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হয়। যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো তা হলে এটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব বাড়ত। আইনটি কার্যকর বা বলবত করতে তারিখ দিয়ে যে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদের আগে তা করা হয়নি।১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক সরকারের সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে দালাল আইন, ১৯৭২ বাতিল করা হয়। এতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও দালাল আইনে আটক প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে পূর্বেই বেকসুর খালাসপেলেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতার বাইরে থাকা পূর্বোল্লিখিত গুরুতর কয়েকটি অপরাধে অভিযুক্ত ও আটকঅবশিষ্ট প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদেরও জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ঘটে। সে সময় এদের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী বিচারের রায়ে ইতোমধ্যে সাজা ভোগ করেছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর পরবর্তী কোন কোন সরকারের শাসনকালে রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছে, যারা বাংলাদেশ নামে কোন ভূখন্ডই চায়নি।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার ‘বাংলাদেশ দালাল আইন, ১৯৭২” প্রণয়ন করে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পূর্বে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দালাল আইনে অভিযুক্ত ও আটক মোট ৩৭ হাজার ৪৭১ অপরাধীর মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দণ্ড প্রাপ্তহয়েছিল ৭৫২ অপরাধী। বাকি ২ হাজার ৯৬ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পায়। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০ রাজাকারকে। পরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং দালালির দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কিংবা তাদের বিচার বা শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে ধামাচাপা পড়ে যায়। ২০০৯ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারের আর কোন ঘটনা বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ঘটেন